#প্রিয়_চন্দ্রিমা
Sumon Al-Farabi
#৬ষ্ঠ_পর্ব
– অবন্তী তুমি কি জানো আব্বু আর আমার আম্মু আলাদা কেন হয়েছিল!
অবন্তী কিছু সময় একটু ভাবলো। হয়তো মনে করার চেষ্টা করলো।
– আব্বুকে অনেক বার জিজ্ঞেস করেছিলাম তাদের বিচ্ছেদ কেন হলো কিন্তু আব্বু বলেনি। বার বার শুধু বলতো আমার ভাগ্যে ছিলো না তাই বিচ্ছেদ হয়েছে।
– ওহ আচ্ছা।
– কিন্তু তুমি হঠাৎ এই প্রশ্ন করছো কেন ভাইয়া!
– এই বাড়িতে এতো সুন্দর একটা পরিবারের সাথে আমার আম্মুর কেন থাকা হলো না সেই কারণটা ভীষণ জানতে ইচ্ছে করে।
– আমার খুব ইচ্ছে ছিলো বড় মা’র কাছে গিয়ে কিছু দিন থাকতে। আচ্ছা ভাইয়া বড় মা ও কি আমার সাথে এমন কিছু করতো যেমনটা আমার আম্মু তোমার সাথে করে।
– না রে পাগলী। আম্মু একটু ভিন্ন রকম ছিলো। একবার গেলেই বুঝতে। এখন রেডি হয়ে নাও আমরা সবাই বাইরে যাবো।
কলেজ গেইটের একটা ফুচকার দোকানে বসে আছি। সেই সময় কয়েকজন পুলিশ এসে ওদের থেকে একটু দূরে আমায় ডেকে নিয়ে গেলো। সেখানে গিয়ে পুলিশ অফিসারের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে আবার চলে আসলাম।
– কি হলো তোমরা এখনো খাওয়া শুরু করোনি যে!
– তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।
– আমি খাবো না তো। আমি এসব কখনো খাই নি।
রাদিয়া বললো- এই জন্যই তোমার খাওয়া দরকার। এতোদিন কি মিস করছো সেটা জানার জন্য।
একটা ফুচকা তুলে মুখে দিতে দিতে অবন্তী কে জিজ্ঞেস করলাম- এখানে কেউ ফুপির মেয়ে কেউ চাচ্চুর কিন্তু চান্দ্রিমা কার মেয়ে!
অবন্তী হেঁসে বললো- ও আমার মামার মেয়ে। তোমার সামনে ভদ্র সাজার ভান করছে।
– সব সময় বেশি বেশি বলো তুমি। আমি সব সময় ভদ্র।
– সেটা তো প্রথম দিনেই দেখেছিলাম।
ফুচকা খাওয়া শেষে সবাই মিলে ক্যাম্পাসে হাঁটতে গেলাম। সবাই সামনে সামনে হাঁটছে আমি তাঁদের পিছনে পিছনে। অবন্তী আমার কাছে এসে জানতে চাইলো ” পুলিশ আমার কাছে কেন এসেছিলো। ”
– একটা ঠিকানা জানতে এসেছিলো।
– ভাইয়া আমি ছোট না। উনি এসে তোমার নাম ধরে ডেকেছিলো। তার মানে তোমরা পূর্ব পরিচিত।
– হয়েছে আর গোয়েন্দাগিরি করতে হবে না।
বাসায় ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। অবন্তী রাদিয়া, সবাই আগে আগেই বাসায় ঢুকলো আমি তাদের পিছনে পিছনে ছিলাম। দাদু সবাইকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করছে কোথায় গিয়েছিল। দাদুর প্রশ্নে সাবাই ভয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কেউ একটি শব্দ উচ্চারণ করছে না। তখন পিছনপ থেকে এসে বললাম- তোমরা সবাই এমন মূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে আছো কেন! রুমে যাও। আর রাদিয়া ফ্রেশ হয়ে আমার রুমে এসো একবার।
– আচ্ছা ভাইয়া।
সবাই চলে যাওয়ার পর দাদু আমার দিকে না তাকিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে বললো- তুমি আমাদের বাড়ির মেয়েদের নিয়ে এসব করা বন্ধ করো। নয়তো ভালো হবে না।
– আপনার বাড়ির মেয়ে হলেও তারা আমার বোন। তাদের আনন্দের বিষয়টা খেয়াল রাখা ভাই হিসাবে আমার দায়িত্ব।
ছোট চাচ্চু আমায় সাপোর্ট করে বললো- বাবা এসব কথা বাদ দিন। দুপুর থেকে সবাই কেমন মন মরা হয়ে ছিলো। সুমন সবাইকে বাইরে থেকে আসার পর সবাই হাসছিলো মনে হচ্ছিল পুরো বাড়িটা আবার প্রাণ ফিরে পেলো।
– বাহ্। তোদের ও দেখি পাখা গজিয়েছে। একটা হাঁটুর বয়সের ছেলের পক্ষ নিয়ে বাবার মুখের উপর কথা বলছিস।
বৃদ্ধ ভদ্রলোক নিজের মনে মনে কিসব বলতে বলতে বাড়ির বাইরে গেলো।
– আচ্ছা ছোট চাচ্চু উনাকে বাসার সবাই এমন ভয় পায় কেন?
– উনি কারো সাথেই ফ্রেন্ডলি মিশেন না আর সব সময় গম্ভীর একটা ভাব থাকে।
মেজো চাচ্চু আমার কাছে এসে বললো- রাদিয়ার মন ভালো হয়েছে!
– আমার যতদূর সম্ভব চেষ্টা করেছি বাকীটা আপনার উপর, গিয়ে একটু কথা বলুন আপনার ও ভালো লাগবে রাদিয়ার ও মন ভালো হয়ে যাবে।
ঠিক খানিকটা সময় পরে দরজায় রাদিয়া দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু কোনো কথা বলছে না।
– কি হলো এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন!
– তুমি ফোন চাপছো তাই ভাবছিলাম ভিতরে আসবো কি না।
– তুমি আসবে জন্য দরজা খুলে রেখেছিলাম। ভিতরে আসো।
রাদিয়া এসে আমার সাথে দাঁড়ালো- কি বলবে ভাইয়া!
আমি রাদিয়ার দিকে তাকালাম। প্রচন্ড সিরিয়াস একটা ফেস আমার দিকে তাকিয়ে আছে। রাদিয়ার এমন চাহনি দেখে ফিক করে হেসে দিলাম। – তুমি এতো ভয় পাচ্ছো কেন! তোমায় বকার জন্য ডাকিনি। এমনি একটু কথা বলবো জন্য ডাকলাম। চেয়ারটা টেনে বসো। আমি শুধু একটা মেইল করে নেই।
মেইল সেন্ড করে রাদিয়ার দিকে তাকালাম – তো, মন ভালো হয়েছে!
– হুম ।
– বাবার উপর রাগ কমেছে!
– হ্যাঁ। বাবা একটু আগে রুমে এসে আদর করে গেছে।
– কত্তো ভালোবাসা।
– অনেক।
– রাদিয়া একটা কথা জিজ্ঞেস করবো বন্ধুর মতো মনে করে সত্যিটাই বলবা। যদি সত্যি বলো তবে তোমার জন্যই ভালো হবে।
– কি কথা ভাইয়া!
– তুমি বিয়ে করতে চাচ্ছো না কেন! কাউকে ভালোবাসো?
রাদিয়া নিচের দিকে তাকিয়ে আছে কোনো উত্তর দিচ্ছে না। রাদিয়ার উত্তরের জন্য আমি চাতকের মতো অপেক্ষা করছি। রাদিয়ার নিরবতা কি তবে আমার কথায় সম্মতি দিচ্ছে! সে কি আসলেই কাউকে ভালোবাসে?
To be continue…