প্রিয় চন্দ্রিমা পর্ব-০৫

0
510

#প্রিয়_চন্দ্রিমা
Sumon Al-Farabi
#৫ম_পর্ব
মেজো চাচী রুমে এসে আমার মুখে একটা মিষ্টি ভরে দিয়ে বললো- ছেলের বাড়ি থেকে কল করেছিল, উনারা বিয়েতে রাজি।
– আমি একটু আগেই তো বললাম আপনারা সবাই বিয়ের কার্যক্রম শুরু করুন বিয়ে হবে।
– তুমি না থাকলে হয়তো বিয়েটাই হতো না। আমার মেয়ের জীবনে একটা ঝড় বয়ে যেতো।
– আমি কিছুই করিনি। আসলে আপনারা সবাই মিলে এতো ভালো একটা ছেলে খুঁজে এনেছেন যে, চাইলেও কেউ বিয়ে ভাঙ্গতে পারবে না।
– আচ্ছা এসব নিয়ে পরে কথা বলবো তুমি তাড়াতাড়ি বাইরে আসো দুপুরের খাবার সময় হয়ে গেছে।
– আমি এখন কিছু খাবো না চাচী। আপনারা খেয়ে নেন। আমি এখন একটু ঘুমাবো।
বাইরে কারো চিৎকার করে ধমক দেওয়ার শব্দ রুমে আসছে। চাচীর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম- বাইরে কি হয়েছে! এতো জোরে জোরে কে কথা বলছে!
– এটা তো তোমার মেজো চাচ্চুর কন্ঠস্বর। কিন্তু উনি তো কোনো কারণ ছাড়া এতো জোরে কথা বলে না।
কথাটা শেষ হতে না হতেই চাচী দৌড়ে বাইরে চলে গেলো। চাচীর পিছনে পিছনে আমিও দৌড়ে বের হলাম।
বের হতেই দেখলাম বাসার সবার সামনে মেজো চাচ্চু রাদিয়ার গালে সজোরে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলেন। দৌড়ে তাদের সামনে গেলাম – আপনি এতো বড় মেয়েকে মারছেন কেন! সেটা আবার এতো মানুষের সামনে।
রাদিয়া এতক্ষণে দৌড়ে রুমে চলে গেছে।
– অবন্তী তুমি রাদিয়ার কাছে যাও। এখানে দাঁড়িয়ে কি দেখছো তোমরা যাও সবাই ওর কাছে।
আমার ধমকে রাফছি, চন্দ্রিমা, অধরা সবাই অবন্তীর সাথে রাদিয়ার রুমে গেলো।
সকলের মুখের মাঝে ক্রোধের উজ্জ্বল শিখা জ্বলজ্বল করছে।
আব্বুকে জিজ্ঞেস করলাম- কি কারণে ওকে মারলো! এতো বড় মেয়েকে কেউ মারে! আপনারা কেউ ওকে সেইফ করলেন না!
দাদু পাশে বসা- ঠিক করেছে। যে মেয়ে বড়দের কথার অমান্য করে বড়দের মুখে মুখে তর্ক করে তাকে তো কেটে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া উচিত।
– কিন্তু কি এমন করছে!
বড় ফুপি বললো- সবাই মিলে এতো কষ্ট করে বিয়েটা আবার জুড়ে দিচ্ছে কিন্তু ও এসে বললো ও বিয়ে করবে না। ছেলে নাকি ওর পছন্দ হয় নি।
– এইটুকু কারণ! ( এতটুকু বলে দাদুর চোখে চোখ পড়লো। অগ্নি দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।) সরি সরি। এতো বড় কারণ! আপনারা এখনো ওকে জীবিত রেখেছেন! দা, কাঁচি যা আছে সব নিয়ে চলে আসুন কেটে নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে আসি। গতকাল ও আমার আফসোস হতো যে আমার এতো বড় একটা পরিবার থাকতেও আমি অসহায়ের মতো একা ছিলাম। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে যে বাড়িতে নিজের পছন্দ অপছন্দের কথা সবার সামনে দাঁড়িয়ে বলা যায় না সে বাড়িতে না থাকাই আমার জন্য আনন্দের ছিলো।
– তো থাকতে কে বলেছে তোমায়! চলে যাও। এটা আমাদের বাড়ি, আর আমাদের বাড়ির মেয়েকে আমরা মারবো না কি করবো সেটা আমাদের ব্যাপার।
এবার একটু চিৎকার করে বললাম- আমি এই বাড়ির ছেলে। যতদিন ছিলাম না ততদিন কিছু বলিনি এখন আছি তাই কথা বলবো। রাদিয়া আপনার বাড়ির মেয়ে হলেও আমার বোন। আমার তো মনে হচ্ছে মেজো চাচ্চু রাদিয়ার গালে থাপ্পড় দেয় নি সেটা আপনি উনাকে দিয়ে করিয়েছেন।
– তোমার মা’কে না আমরা দেখেছি আর না তোমার জন্মের ইতিহাস আমরা জানি উড়ে এসে জুড়ে বসা একজন তুমি। তাই নিজেকে আমাদের পরিবারের ছেলে ভাবা বাদ দাও।
এতক্ষণ আব্বু চুপচাপ থাকলেও এবার উনি নিজের বাবার বিরুদ্ধে গিয়ে মুখ খুললেন- এতক্ষণে আপনি সুমনকে যা খুশি বলে ছিলেন সেখানে আমি কোনো কথা বলি নি। কিন্তু ওর মা’কে নিয়ে বিন্দু মাত্র কথা আমি শুনতে চাই না। সুমন এই বাড়ির ছেলে এবং সব থেকে বড় ছেলে সেটা কেউ মানলো বা না মানলো আমার যায় আসে না। আমি যদি সেদিন আপনাদের ইমোশনাল ব্লাকমেইলের শিকার না হতাম তাহলে হয়তো এই কথা বলার মতো সুযোগ আপনি কোনো দিন ও পেতেন না।
লোকটার কথায়, চাহনিতে আম্মুর প্রতি এক অদ্ভুত ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠে। তবে কেন উনি আলাদা হয়ে গেলো! কি জন্যই বা ছিলো সেই ব্লাকমেইল!
– সুমন, এই বিয়েতে আমাদের পরিবারের সম্মান জড়িয়ে আছে। আমি চাই না বাবা আমাদের পরিবারের এতো দিনের অর্জিত সম্মান এভাবে শেষ হয়ে যাক। আমি জানি সেটা তুমি হতে দিবে না।
আব্বু আমার ঘাড়ে হাত রেখে কথাগুলো বলে ধীর পায়ে রুমের দিকে এগিয়ে গেলেন।
– সবাই এখন উড়ে এসে জুড়ে বসা এক ছেলের ভরসায় বসে থাকো।
দাদুর সামনে গিয়ে তার চোখে চোখ রেখে বললাম – পৃথিবীর কোনো ছেলেই তার মা’র ব্যাপারে বিন্দু মাত্র বাজে কথা সহ্য করতে পারে না। তাই পরবর্তীতে এমন কিছু বলার আগে একবার হলেও ভেবে নিবেন। নয়তো আমি আমাদের মধ্যকার সম্পর্কের কথা ভুলে যাবো।

দাদু আর কিছু না বলে উনিও উঠে চলে গেলো। একে একে সবাই নিজের কাজে চলে গেলো। শুধু মেজো চাচ্চু আর ছোট চাচ্চু বসে রইলো। এতক্ষণ এখানে এতো কিছু হয়ে গেলো কিন্তু মেজো চাচ্চু একটি বারের জন্য মুখ খোলেনি। দূরে দাঁড়িয়ে মেজো চাচী নিরব দৃষ্টিতে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে।

মেজো চাচ্চুর পাশে বসে ওনার কাঁধে হাত রাখলাম- কি এতো ভাবছেন!
উনি আমার দিকে তাকালো। দুচোখে পানি টলমল করছে – আমি কখনো রাদিয়ার উপর জোর গলায় একটা কথা পর্যন্ত বলিনি। আজ ওকে মারলাম।
ভদ্রলোক নিজের চোখের পানি আটকাতে ব্যার্থ চেষ্টা করছে। মেয়েদের প্রতি বাবাদের ভালোবাসা একটু ভিন্ন ধরনের হয়। উনারা মেয়েকে ঠিক ফুটন্ত ফুলের মতোই ভালোবাসে। না তো তীব্র রোদ লাগতে দেয় ঝড়ে যাওয়ার ভয়ে আর না প্রবল বাতাস লাগতে দেয় ছিঁড়ে যাওয়ার ভয়ে।
তাদেরকে আশ্বস্ত করলাম, যেভাবেই হোক এই বিয়ে হবে। তবে মনে মনে একটা তীব্র প্রতিজ্ঞা করলাম। এখানে থেকে চলে যাওয়ার আগে বৃদ্ধ কে ভালো একটা চমক দেখিয়ে যাবো। কারণ এতক্ষণ বুঝতে পারছি এই বাড়িতে আমার বেড়ে ওঠার সব থেকে বড় বাধা সেই বৃদ্ধ ভদ্রলোক ছিলেন।
চাচীর থেকে রাদিয়ার রুমটা দেখিয়ে নিলাম।
দরজায় নক করার পর ভিতরে থেকে কেউ একজন জিজ্ঞেস করলো- কে!
– আমি, দরজা খোলো।
চন্দ্রিমা দরজা খুলে দিলো।
– রাদিয়ার কি অবস্থা!
– ভিতরে এসে দেখুন।
রাদিয়া তখনও চোখ মুচছে- বাহ্ মেয়ে থাপ্পড় খেয়ে রুমে বসে কান্না করছে আর বাবা থাপ্পড় দিয়ে ওখানে বসে কান্না করছে।
আমার কথায় রাদিয়ার কান্না তৎক্ষনাৎ উধাও – বাবার কি হয়েছে?
– তেমন কিছু না। তোমার গায়ে হাত তুলেছে তাই গিল্টি হচ্ছে।
– জানো ভাইয়া আব্বু কখনো আমায় বকা ও দেয় নি। কিন্তু আজ দাদুর কথায় আমায় মারলো।
রাফছি পাশে থেকে বললো- ভাইয়া দাদুকে আচ্ছা করে বকে দিছে আপু।
– তুমি কিভাবে জানলে?
– আমি সব দেখেছি।
– আচ্ছা ঠিক আছে এসব নিয়ে পরে আমরা কথা বলবো আগে বলো রাদিয়ার প্রিয় খাবার কি!
পাশে থেকে রাফছি বললো- আমি জানি ভাইয়া। ফুচকা।
– আশেপাশে কোথাও ভালো ফুচকা পাওয়া যায়!
– আমার পাড়ার মোড়ে কলেজ গেইটে।
– আচ্ছা তাহলে আজ আমরা সবাই বজ ফুচকা খেতে যাবো। সবাই দ্রুত রেডি হয়ে নাও।
– দাদু যেতে দিবে না।
– দাদু ভাইয়ার উপর কোনো কথা বলবে না। আমি জানি।
– অবন্তী আমার সাথে এসো তুমি।

অবন্তীকে নিয়ে আমার রুমে আসলাম। এখন অবন্তীর থেকেই জেনে নিতে হবে আব্বু আম্মুর আলাদা হয়ে যাওয়ার কারণ আর কি ছিলো সেই ব্লাকমেইল যার কথা আব্বু আজ অশ্রু সিক্ত চোখে সকলের সামনে বললো।

To be continue…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে