প্রিয় আসক্তি পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব

0
1984

#প্রিয়_আসক্তি
পর্বঃ১৭[অন্তিম পর্ব]
#মাহমুদা_আক্তার_তাহিনা

তাহির ঘুমন্ত অবস্থায় থাকা নিষ্পাপ মুখের দিকে চেয়ে আছে নিষ্প্রভ। মুখের সামনে পড়া চুল গুলো কানে গুঁজে দিচ্ছে। তার এখনো বিশ্বাসই হচ্ছেনা তার পাখি তার বউ হয়ে গেছে। হ্যা নিষ্প্রভ ও তাহির বিয়ে হয়ে গেছে। কয়েক ঘন্টা আগে খাওয়া দাওয়া শেষ করে নাইম হাসান তাহিকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। যদিও তাহির এখন বিয়ে করার কোনো ইচ্ছে ছিলো না। কিন্তু একবার না একবার তো বিয়ের সময়টা আসতোই। তাহি ছোট বেলায় মা বাবা হারিয়েছে, নিষ্প্রভের মা বাবাকে নিজের বাবা মা’র মতোই সম্মান করে। তাই সে নাইম হাসানের কথা ফেলতে পারে নি। তাহির সম্মতি পেয়ে নাইম হাসান কয়েক ঘন্টার ভিতরে কিছু আত্নীয় ও কাজী ডেকে বিয়ে পড়িয়ে দেন। দীবার বৌভাত শেষ হলে তারপর ধুমধাম করে বিয়ে হবে ওদের।

হঠাৎ তাহি নড়েচড়ে উঠায়, ধ্যান ভাঙে নিষ্প্রভের। তাহি পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায়। সারাদিনের ক্লান্তি তে ঘুম কাবু করেছিলো তাহিকে, তাই নিষ্প্রভের ঘরে তাকে দেওয়া মাত্রই, নিষ্প্রভের অপেক্ষা না করে ঘুমিয়ে গেছে।

-এমন করে তাকিয়ে কি দেখছেন মিস্টার হাসবেন্ড?

– দেখছিলাম, আজ আমার নতুন বিয়ে করা বউ, স্বামী ঘরে ঢুকেনি, তার আগেই ঘুমে কাবু হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।

-তো কি করবো, আমার খুব বেশিই ঘুম পেয়েছিলো, আর আমি এমনিতেই প্রচুর ক্লান্ত ছিলাম। আরো ক্লান্ত হয়ে গেছি শাড়ি পড়ে। তাই তো আপনার ঘরে ঢুকেই আগে শাড়ি চেঞ্জ করে তারপর ঘুমিয়েছি।

– ঘুম শেষ?

– হুম, আপাতত শেষ। কয়টা বাজে?

– সাড়ে ১২টার কাছাকাছি।

– চলুন ছাঁদে যাই।

– চলুন ম্যাম। তবে আমার শর্ত আছে,

– কি শর্ত?

-আমার কোলে করে যেতে হবে। নাহলে যাবো না!

মুচকি হেসে তাহি, নিষ্প্রভের গলা জড়িয়ে ধরে টুপ করে কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয়। নিষ্প্রভ ও বিনিময়ে ঠোঁট প্রসারিত করে তাহিকে কোলে নিয়ে ছাঁদের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়।

.
কেটে গেছে ৫বছর। সময় কারো জন্য থেমে নেই। সে তার নিজস্ব গতিতে চলে।

বিকাল সাড়ে চারটার কাছাকাছি সময়, হালকা বাদামী রঙের সিল্কের শাড়ি পড়ে রেডি হয়ে, নিজের তিন বছরের মেয়েকেও জামা পড়িয়ে তৈরি করিয়ে, কোলে নিয়ে, বসার ঘরে আসে দীবা। তীব্র সেখানেই বসেছিলো। হাত বাড়িয়ে তার মেয়েকে কোলে নেয়। মেয়েটির নাম তিতিয়া। তীব্র মেয়েকে নিয়ে বেড়িয়ে যায়, পিছে পিছে দীবাও। আজ তারা সবাই মিট করবে, একসাথে ঘুরাঘুরি করবে।

একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে তীব্র ও দীবা, সাথে তাদের তিন বছরের মেয়ে তিতিয়া। তীব্র তিতিয়ার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দীবার কপালেও ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয়। দীবা তাতে কিছু বলেনা, মুচকি হেসে তীব্রর হাত জড়িয়ে ধরে বসে থাকে, বাকি সবার অপেক্ষায়।

কিছুক্ষণের মধ্যেই রেস্টুরেন্টে উপস্থিত হলো, উর্মিলা ও আয়াত। উর্মিলা সাত মাসের প্রেগন্যান্ট। আয়াত আসতে রাজি ছিলোনা। কিন্তু উর্মিলার জিদের কাছে হার মেনে আসতে হয়েছে।
দীবাও তীব্রের সাথে টুকটাক কথা বলে তারাও আবার অপেক্ষা করতে লাগলো বাকি দুইজনের জন্য।

নিষ্প্রভের পড়োনে সাদা শার্ট কালো প্যান্ট, চোখে চশমা, হাতে ডাক্তারের এপ্রোন নিয়ে, এগিয়ে আসে তীব্রদের দিকে। হঠাৎ করেই থেমে যায়,পিছু ফিরে একটা হাতকে জড়িয়ে ধরে। হ্যা এটা তাহি, তাহির হাত জড়িয়ে ধরেই তীব্রদের সামনে এসে চেয়ারে বসে নিষ্প্রভ। তাহির পড়োনেও তার সিআইডির কোর্ট, তবে সেটা হাতে নিয়ে আছে।

টুকটাক কথা বলে সবাই। খাওয়া দাওয়া করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। সবাই লেকের পাড়ে আসার উদ্দেশ্যে আবারো রওনা দেয়।

লেকের সচ্ছ পানিতে চাঁদ দেখা যাচ্ছে। আর সেদিকেই তাকিয়ে আছে তিন জোড়া কপোত-কপোতী। একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আছে উষ্ণ আলিঙ্গনে।

তীব্র দীবাকে একহাতে জড়িয়ে ধরে আছে। আরেক হাত দিয়ে তিতিয়া কে কোলে শক্ত করে ধরে রেখেছে। দীবা তীব্রের হাত জড়িয়ে কাঁধে মাথা রেখে চাঁদ দেখছে। হঠাৎই তিতিয়া শব্দ করে কেঁদে উঠে। ওর কান্নার শব্দে ভড়কে যায় সবাই। সকলে এগিয়ে এসে তিতিয়াকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু ওর কান্না থামছে না। দীবার মনে কিছু একটা আসতেই চট করে তীব্রের দিকে তাকিয়ে বলে- তোমার মেয়ে মেবি সুসু করেছে, তাই এমন করছে। গাড়িতে তো ওর পেমপাস রাখা আছে। যাও ওকে নতুন পেমপাস পড়িয়ে নিয়ে আসো।

তীব্র হতবিহ্বল, বাসায় নাহয় সে চেঞ্জ করে দেয়, তাই বলে এখানে সবার সামনে তাকে এমন করে বলবে? তীব্রের মুখটা দেখার মতো হয়েছে, যা দেখে সবাই মিটমিটিয়ে হাসছে।

তীব্র তিতিয়া কে নিয়ে গাড়ির কাছে গেলো, নতুন পেমপাস পড়াতেই তার কান্না বন্ধ হলো। মেয়েকে আবারো কোলে নিয়ে সবার সাথে যোগ দিলো তীব্র।

.
চারিদিকে নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে, কালো আঁধারে কে কি করছে তা স্পষ্ট নয়। লেকের পাড়ের বেঞ্চটিতে বসে আছে তিনজোড়া কপোত-কপোতী। সবাই একসাথে প্রিয় মানুষকে নিয়ে জোছনা বিলাস করছে।

তীব্র দীবার কোমড় জড়িয়ে ধরে কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয়,- ভালোবাসি আমার তিতিয়ার আম্মুকে।

-আমিও ভালোবাসি আমার ইন্জিনিয়ার সাহেবকে, আমার মেয়ের আব্বুকে।

.
আয়াতের কাঁধে মাথা রেখে চাঁদ দেখছে উর্মিলা, আয়াত ও উর্মিলা কে জড়িয়ে ধরে একই কাজ করছে। উর্মিলার কপালে ও ঠোঁটে উষ্ণ স্পর্শে নিজের ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয় আয়াত। উর্মিলাও পরিবর্তে একই কাজ করে। আবারো কাঁধে মাথা রেখে চাঁদ দেখতে ব্যস্ত হয় তারা।

.

একইভাবে একে অপরে মত্ত নিষ্প্রভ ও তাহি। দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে জোছনা বিলাস করছে। নিষ্প্রভের মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে তাহি একটা কার্ড বাড়িয়ে দেয়। নিষ্প্রভ ভ্রু কুঁচকে তাকায়। তাহি ইশারা করে দেখতে। নিষ্প্রভ কার্ডটা ভালো করে দেখে। অবাক হয়ে তাহির দিকে তাকায়, তখনই তাহি বলে উঠে- অভিনন্দন ডাক্তার সাহেব! আপনি বাবা হতে চলেছেন।

নিষ্প্রভ খুশিতে কি করবে ভেবে ফেলো না, তাহিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।- ভালোবাসি পাখি, অনেক অনেক ভালোবাসি।

– আমিও ভালোবাসি আমার শুদ্ধতম পুরুষকে। আমার ডাক্তার সাহেবকে। আমার বাচ্চার বাবাকে।

দূর আকাশের চাঁদ, রাত, নিস্তব্ধতা, লেকের পানি, গাছপালা, সাক্ষী রইলো তিনজোড়া কপোত-কপোতীর ভালোবাসার। ভালোবাসা সুন্দর, তবে সেটা সবার ক্ষেত্রে নেয়। এমন একজনকে ভালোবাসুন, যে আপনাকে তার সবটুকু দিয়ে আগলে রাখতে পারবে। বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও যে ভালোবাসা পুরোনো হয় না, অনুভূতি একই থাকে, সেটাই ভালোবাসা। ভালোবাসা মানে প্রতিদিন একে অপরের সাথে চব্বিশ ঘণ্টা কথা বলা নয়। ভালোবাসা মানে সারাদিনের ব্যস্ততার মাঝে একটু সময় বের করে প্রিয় মানুষকে নিজের অনুভুতি ব্যাক্ত করা।

দিনশেষে সবাই ভালো থাকুক, পূর্ণতা পাক সবার শুদ্ধতম ভালোবাসা।

(সমাপ্ত)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে