#প্রিয়_আসক্তি
#পর্বঃ১৪
#মাহমুদা_আক্তার_তাহিনা
নদীর পাড়ে দুইটা ট্রলার পাশাপাশি অবস্থান করছে। হাক ছাড়লেন আরিয়ান মির্জা, ছেলেপেলে দের দিকে তাকিয়ে বললেন- যে ছেলে মেয়ে গুলোকে কিডন্যাপ করা হয়েছে তাদের একটা ট্রলারে তুলো, আর ড্রাগস, ইয়াবা, অস্ত্র সবকিছু আরেকটাতে তুলো।
মাথা নাড়িয়ে সবাই কাজ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। আরিয়ান মির্জা নিজের ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন- কি মনে হয় আরাফ, সব ঠিকঠাক?
– ঠিকঠাকই তো লাগছে বাবা, তবুও সবাইকে সাবধানে কাজ করতে বলো। মির্জাপুরের কেসটা নতুন একজন অফিসার তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছে, শুনেছি সে নাকি খুবই ডেঞ্জারাস, এখন পর্যন্ত যতোটা কেস এ জড়িয়েছে, সব সমাধান করেছে।(আরাফ মির্জা)
– নাম কি সেই অফিসারের?
– তাহি মাহমুদ! একজন সিআইডি অফিসার।
– মেয়ে?
– হুম,
– হোয়াট! তুমি একটা মেয়েকে ভয় পাচ্ছো, এতো ভীতুরডিম কবে হলে?(আরিয়ান মির্জা)
– নো ডেড, আমি ভয় পাচ্ছিনা, তাহি মাহমুদের সম্পর্কে সব কিছু জেনেছি, লেডি খুবই সাহসী। মেয়ে হয়েও সাহস ও কাজের তুলনায় সব সিনিয়র ম্যান অফিসারদের ছাড়িয়ে যাচ্ছে।(আরাফ মির্জা)
– তো ছাড়িয়ে যাক, সমস্যা কি? আমাদের সাথে না লাগলেই হলো। যদি আমাদের কাজের মধ্যে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করে তো সোজা উপরে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে।
-ডেড আমি একটা সত্যি কথা জানতে পেরেছি।
– কি কথা?
– তোমার জয়নাল মাহমুদের কথা মনে আছে?
– হুম আছে, কেনো?
– জয়নাল মাহমুদের এক মেয়ে ছিলো জানো?
– হুম জানি, বাট যেদিন ওদের বাড়িতে গিয়েছিলাম, সেদিন তো ওর মেয়েটি ছিলো না, শুধু ও আর ওর স্ত্রী ছিলো।
– জয়নাল মাহমুদের মেয়ে তাহি মাহমুদ।
– হোয়াট!
– ইয়েস ডেড ইয়েস। পনেরো বছর আগে যাকে তুমি নিজ হাতে খুন করেছিলে, সেই জয়নাল মাহমুদের মেয়ে তাহি মাহমুদ।
– কিন্তু! তুমি এতোকিছু কিভাবে জানলে?
– আমি সিআইডি অফিসার তাহির সব ডিটেইলস জানতে গিয়ে এসব জানতে পেরেছি ডেড।
–
–
আড়াল থেকে এতোক্ষণ সবকিছু শুনছিলো তাহি ও ওর টিমের সবাই। তাহি স্তব্ধ হয়ে গেছে। সে তো জানতো তার বাবা হার্টের সমস্যার কারণে মারা গেছে, স্বামীর মৃত্যু সহ্য করতে না পেরে তার মা তারিন মাহমুদ ও স্টোক করেছিলেন। তার মনে এতোদিন সে মিথ্যা জানতো সব। তার বাবা মা কে খুন করা হয়েছে।
–
কানে ব্লুটুথে চাপ দিয়ে ফিসফিস করে তাহি বললো- আক্রমণ করো।
–
মুহুর্তের মধ্যেই চারিদিক থেকে বেরিয়ে আসলো তাহির টিমের সব অফিসার রা। শুরু হলো গুলাগুলি। আরিয়ান মির্জার লোকরা সবাই কাজে ব্যস্ত ছিলো বিধায় কেউ তেমন বিপরীত আক্রমণ করতে পারেনি। আর আরিয়ান মির্জা ও আরাফ মির্জা কথা বলতে এতোই ব্যস্ত ছিলো যে তাদের চারিদিকে কি হয়েছে তা বুঝতে ২০ সেকেন্ডের মতো সময় লেগেছে। কিন্তু ততোক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে, তাহি পিস্তল তাক করে আছে আরিয়ান মির্জা ও আরাফ মির্জার দিকে। তাহি টিমের অফিসারদের ইশারা করলো আরিয়ান মির্জার লোকদের এরেস্ট করে গাড়িতে তুলতে। ওরা সাথে আরো গাড়ি এনেছিলো, তার মধ্যে একটাতে কয়েকজন অফিসার দিয়ে আরিযান মির্জার লোকদের লোকাপে পাঠিয়ে দিলো। যে ট্রলারে কিডন্যাপ করা মানুষ গুলোকে রাখা হয়েছে, সেই ট্রলারে কিছু অফিসার ঢুকে সবাইকে বের করে আনলো। কয়েকজন অল্প বয়সী মেয়ে, কয়েকজন অল্প বয়সী ছেলে, ও কয়েকজন মধ্যবয়সী নারী পুরুষ রয়েছে। তাদের আরেকটা গাড়িতে করে নিয়ে চলে গেলো কিছু অফিসার রা।
আরিয়ান মির্জা ও আরাফের দিকে এখনো পিস্তল তাক করে আছে তাহি, চারিদিক থেকে সবাই ঘিরে দাড়িয়েছে,
-তোদের সব কিছু শেষ, একটু আগে যা যা বলেছিস, সব রেকর্ড হয়ে গেছে, তোদের কুকর্মের সব প্রমাণ পেয়ে গেছি। বলেই তাহি দুইজন অফিসার কে ইশারায় হাত কড়া পড়াতে বললো। দুইজন অফিসার আরিয়ান মির্জা ও আরাফ মির্জাকে টেনে গাড়িতে তুললো। তাহি, আনান ও আলিশা আরো কিছু অফিসার এগিয়ে গেলো আরেকটা ট্রলারের দিকে, যেটাতে রয়েছে সব অবৈধ মালামাল ও অস্ত্র।
হাতে হেন্ড গ্লাভস্ পড়তে পড়তে ট্রলারের ভিতরে ঢুকলো তাহি। সামনে তাকিয়েই তাহি স্তব্ধ হয়ে গেছে। আলিশা হুরমুর করে বমি করে দিয়েছে। আরেকজন লেডি অফিসার জেসি ওকে ধরে রেখেছে।
– জেসি আলিশাকে নিয়ে যাও, আর সবাই মাক্স পড়ে নাও। ফলো মি বলে তাহি সামনে রাখা বক্সের দিকে এগিয়ে গেলো।
ড্রাগস, ইয়াবা, অবৈধ অস্ত্র, একসাইডে ও কিডনি চোখ প্যাকেটের মতো করে রাখা। যার গন্ধেই মূলত আলিশা বমি করে দিয়েছে। পুলিশ ফোর্স কে কল করলো তাহি। তারা কিছু পুলিশ নিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই উপস্থিত হলো। তাদের ট্রলাদের সবকিছু নিয়ে আসতে বলে, তাহি ওর টিমের মেম্বারদের নিয়ে গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো। যে গাড়িতে আরিয়ান মির্জা ও আরাফ মির্জাকে তুলা হয়েছে সেই গাড়িতে তাহি ও তার টিমের বাকি অফিসার গুলো উঠে বসলো। গাড়ি কিছুদূর যেতেই পাশে বসা অফিসারের হাত থেকে পিস্তল কেড়ে নেয় আরাফ। তা দেখে ড্রাইভিং করা অফিসার গাড়ি থামায়। সবাই গাড়ি থেকে নেমে বের হয়ে আসে। ওই অফিসারকে নিজের হাতে জিম্মি করে গাড়ি থেকে বের হয়ে আসে আরাফ। পালানোর চেষ্টা করে দৌড় দেয়। কিন্তু বেশিদূর যেতে পারেনি, তার আগেই আবারো তাহির টিম ও তাহি ওকে ঘিরে ধরে। পার্থক্য শুধু একটাই আগে আরাফের হাতে পিস্তল ছিলো না, এখন পিস্তল আছে। আর সেটা সামনে তাহির দিকে তাক করে রেখেছে আরাফ।
–
-তারপর? উৎসুক হয়ে প্রশ্ন করে নিষ্প্রভ।
– গলা শুকিয়ে গেছে স্যার, আগে একটু পানি খেয়ে নেই। বলেই আনান পাশের টেবিল থেকে গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে পানি পান করলো। আবারো বলতে শুরু করলো—
–
-অস্ত্র নামাও অফিসার, তোমার অফিসারদের অস্ত্র নামাতে বলো। নাহলে আমি কিন্তু তোমাকে শুট করে দিবো (আরাফ)
– কেউ অস্ত্র নামাবে না, তুই অস্ত্র নামা, নাহলে,,(তাহি)
– নাহলে কি,,(আরাফ)
কিছু বললো না তাহি, পিস্তল তাক করে আরাফের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। আরাফ সামনে থেকে বার বার বলছে ‘সামনে আসবে না অফিসার আমি কিন্তু শুট করে দিবো’ কিন্তু তাহি সেসব উপেক্ষা করে আরাফের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। এক পর্যায়ে আরাফ শুট করে দেয়, যা তাহির বুকে গিয়ে লাগে। ঠিক তখনই আনান পিছন থেকে আরাফের পিস্তল কেড়ে নেয়। কিন্তু ততোক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গেছে। আনান আরাফকে কয়েকটা ঘুষি দিয়ে বাকি অফিসারদের বলে আরাফকে গাড়িতে তুলতে। আনান তাহির দিকে এগিয়ে যায়, আনান কে কিছু কথা বলেই অজ্ঞান হয় তাহি। তারপরই দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সে কল করে তাহিকে নিয়ে ও কিছু অফিসারকে নিয়ে হাসপাতালে আসে আনান। ততক্ষণে মিডিয়া খবর পেয়ে গেছিলো। তাই সবাই ঘটনাটা জেনে যায়।
–
– আর পরে কি হয়েছে আপনি তো জানেনই স্যার।(আনান)
স্যার তাহি ম্যামের জ্ঞান ফিরেছে। নার্সের কথা শুনে একমুহূর্ত ও দেরি করলো না নিষ্প্রভ। তাহির কেবিনের দিকে দৌড় লাগায়। কেবিনের সামনে এসে হাপাতে থাকে। জোরে শ্বাস নিয়ে দরজা ঠেলে ভিতরে ডুকে। আজ ৭২ ঘন্টা পর তাহির জ্ঞান ফিরেছে। বেডের সামনে টুলে বসে নিষ্প্রভ। তাহির মাথায় হাত ভুলিয়ে দিয়ে ডাকে- পাখি,
চোখ বন্ধ করেছিলো তাহি, নিষ্প্রভের ডাকে চোখ খুলে তাকায়। অসুস্থতার মধ্যেও হাসার চেষ্টা করে। তা দেখে নিষ্প্রভ নিজেও হাসে। তাহির মাথায় হাত ভুলিয়ে দিয়ে নিষ্প্রভ বলে- ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে পাখি, তোমার কিছু হলে আমার কি হতো?
আস্তে করে তাহি বলে- কি আবার হতো, আপনি আমায় ভুলে অন্য কাউকে ভালোবাসতেন।
চলবে, ইনশাআল্লাহ
#প্রিয়_আসক্তি
#পর্বঃ১৫
#মাহমুদা_আক্তার_তাহিনা
সময় কারো জন্য থেমে থাকে না। সে তার নিজস্ব গতিতে চলে। কেটে গেছে এক মাস। সবার জীবনেরই মোড় ঘুরেছে। তাহি সুস্থ হয়ে আবার তার কাজের জীবনে ফিরে এসেছে। কয়েকদিন আগে সরকার থেকে পুরস্কার ও পেয়েছে। তীব্র ও দীবার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। যখন তীব্রের মা বাবা নিষ্প্রভদের বাড়িতে আসেন বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে তখন তাদের অবাক করে দিয়ে দীবার মা বাবা সব হাসি মুখে মেনে নেন। তীব্র তখন শুধু অবাক হয়ে নিষ্প্রভের দিকে তাকিয়ে ছিলো। নিষ্প্রভ তীব্রের কাঁধ চাপড়ে বলেছিলো- আমার বোনের সাথে প্রেম করবি, আর আমি ভাই হয়ে বোন কি করে জানবো না?, আমি সবই জানি, মা বাবাকেও বলে রেখেছি। আমি জানতাম তুই আন্টি আঙ্কেল কে নিয়ে কোনো একদিন চলে আসবি। তাই কেউ অবাক হয়নি। বরং তুই অবাক হয়ে গেছিস।
সেদিন তীব্র নিষ্প্রভকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলো- আমি তো ভেবেছিলাম, তুই জানতে পারলে আমাকে ভুল বুঝবি।
নিষ্প্রভ মুচকি হেসে বলেছিলো- ভুল বুঝতে যাবো কেনো? আমি তো জানি তুই কেমন। তোর উপরে আমার বিশ্বাস আছে, তুই আমার বোনকে সুখে রাখবি, নিজের সবটুকু দিয়ে আগলে রাখবি।
অভয় দিয়ে তীব্র বলেছিলো- তুই আমাকে বিশ্বাস করে তোর বোনের দায়িত্ব দিচ্ছিস, এটাই আমার জন্য অনেক, বিয়ের পরে দীবাকে আমি আমার সবটুকু দিয়ে আগলে রাখবো, প্রমিস দোস্ত।
–
–
–
দেখতে দেখতে গায়ে হলুদ চলে এলো, সন্ধ্যা ৬টার উপরে সময়। দীবাকে গায়ে হলুদের লেহেঙ্গা পড়ানো হয়েছে। ইতিমধ্যে হলুদ লাগানো ও শুরু হয়ে গেছে। নিষ্প্রভ গেটের দিকে তাকিয়ে আছে। পড়োনে হলুদ পাঞ্জাবি। মূলত তাহির আসার অপেক্ষায় আছে। তার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে তাহি বাইক নিয়ে গেইট দিয়ে ঢুকলো। বাইক সাইট করে রেখে নিষ্প্রভের দিকে এগিয়ে এলো। ঠোঁটে হাসি নিয়ে বললো- কি ব্যবহার ডাক্তার সাহেব, গেইটের কাছে দাড়িয়ে কি করছেন? ওদিকে তো আপনার বোনের হলুদ অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে মেবি।
তাহির উপর থেকে নিচ পর্যবেক্ষণ করলো নিষ্প্রভ। হলুদ শার্ট ও হলুদ জিন্স পড়া, পায়ে হলুদ কেডস। কম সুন্দর লাগছেনা৷ বরং শ্যামাঙ্গিনী কে হলুদ রঙে আরো মায়াময়ী করে তুলেছে।পর্যবেক্ষণ করা শেষ করে নিষ্প্রভ বলে- আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম ম্যাম, অবশেষে আপনি আসলেন। চলুন আপনার একমাত্র ননদ আপনি এখনো আসেন নি বলে মুখ ফুলিয়ে রেখেছে।
হালকা হেসে নিষ্প্রভের সাথে ছাদের দিকে এগিয়ে গেলো তাহি। ছাদের মধ্যে স্ট্রেজ বাধা হয়েছে। তাহিকে দেখে মুখটা আরো একটু ফুলালো দীবা, হালকা হেসে নিষ্প্রভ ও তাহি দুইজন একসাথে দীবাকে হলুদ ছোয়ালো। তাহি দীবার দিকে একটা বক্স এগিয়ে দিলো। ইশারা করে বললো তোর গিফট। তবুও দীবার অভিমান ভাঙলো না। তাহি ও নিষ্প্রভ সরে গেলো, সবাই আবারো দীবাকে একে একে হলুদ লাগাতে লাগলো।
‘
‘
‘
বিদায় ঘন্টা বেজে গেছে। হ্যা দীবার বিয়ে হয়ে গেছে। তার ভালোবাসার মানুষের সাথেই। গাড়ির কাছে দাড়িয়ে আছে তীব্র, সে করুন চোখে দীবাকে দেখছে। মেয়েটার কান্না তার ভালো লাগছে না। দীবা একবার নিষ্প্রভ তো একবার নিজের মা বাবা কে জড়িয়ে ধরে চোখের পানি ফেলছে। তখনই বাইক নিয়ে গেইটের পাশে আসলো তাহি। সবার দৃষ্টি তার দিকেই স্থির হলো। তাহি মলিন হেসে এগিয়ে এলো দীবার দিকে। বিয়েতে আসতে পারেনি, কারণ তাহির জরুরি কাজ পড়ে গিয়েছিলো। পড়োনে কালো জিন্স ও সাদা শার্ট, উপরে সিআইডির লেগিন্স কোর্ট পড়া। বোঝাই যাচ্ছে তারাহুরো করে এসেছে। তাহির মুখেও ক্লান্তি ভাব ফুটে উঠেছে। এগিয়ে এসে তাহি দীবার সামনে দাড়িয়ে জড়িয়ে ধরবে, তার আগেই দীবা সরে গেলো। তাহি বুঝতে পারছে দীবা তার সাথে অভিমান করেছে, আর কষ্ট ও পেয়েছে। কিন্তু তাহির ই বা কি করার ছিলো, হঠাৎ করেই কাজ পড়ে গেছে। দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো তাহি। দীবার সামনে গিয়ে দুই কান ধরে ধারালো। উপস্থিত সবাই হতবিহ্বল চোখে তাকিয়ে আছে তাদের দিকেই। সবার চোখেই বিস্ময়। নিষ্প্রভের চোখেও বিস্ময়, তাহি কান ধরেছে, তাও সবার সামনে। যে মেয়ের কি না প্রখর আত্মসম্মান বোধ সে মেয়ে বান্ধবীর অভিমান ভাঙানোর জন্য সবার সামনে কান ধরে দাড়িয়ে আছে। দীবা নিজেও বিস্মিত হয়েছে। সাথে মনে মনে খুশি ও হয়েছে, তাহির মতো বেস্ট ফেন্ড পেয়েছে বলে, যার কাছে দীবার অভিমান কে ভাঙানোর জন্য এতো ব্যাকুলতা। দীবা এগিয়ে গিয়ে তাহিকে জড়িয়ে ধরলো। তাহি ও কান থেকে হাত নামিয়ে দুই হাত দিয়ে দীবাকে জড়িয়ে ধরলো।
‘
‘
দীবা চলে গেলো, নিজের নতুন জীবনের যাত্রা পথে। তীব্রদের গাড়ি চোখের আড়াল না হওয়া পর্যন্ত সেদিকে তাকিয়ে রইলো সবাই। তারপর সবাই আস্তে আস্তে বাড়ির ভেতর ঢুকে গেলো। তাহি নিষ্প্রভের দিকে তাকালো, নিষ্প্রভের চোখ ছলছল করছে। তাহি এগিয়ে গিয়ে নিষ্প্রভকে জড়িয়ে ধরলো- আপনি প্লিজ মন খারাপ করবেন না ডাক্তার সাহেব, এটাতো হওয়ারই ছিলো। বিয়ের পরে সব মেয়েকে এভাবেই চলে যেতে হবে।
নিষ্প্রভ তাহির মাথায় হাত রাখলো, আদুরে কণ্ঠে বললো – তুমি তো কাজ থেকে ডাইরেক্ট এখানে এসেছো, চলো ফ্রেশ হয়ে নিবে। তারপর দুজনে একসাথে খাবো।
মাথা নাড়িয়ে নিষ্প্রভের সাথে বাড়ির ভিতরে ঢুকলো তাহি। খাওয়া দাওয়া শেষ করে তাহি চলে যায়। যদিও নিষ্প্রভের মা বাবা যেতে দিতে চান নি, কিন্তু তাহি জোর করে চলে গেছে।
‘
‘
‘
তীব্রের বুকে মাথা রেখে পরম শান্তিতে ঘুমাচ্ছে দীবা। তীব্র দীবার মাথায় হাত ভুলিয়ে দিচ্ছে। সারাদিনের ক্লান্তি তে তারও ঘুম পাচ্ছে ভীষণ। তীব্রও পাড়ি দিলো ঘুমের রাজ্যে।
‘
‘
দীবা ও তীব্রের বিয়েতে আয়াত ও উর্মিলা উপস্থিত ছিলো। বর্তমানে লেকের পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে দুজন। অনেকক্ষণ নিশ্চুপ থাকার পর আয়াত উর্মিলার দিকে তাকিয়ে বলে- আমাকে বিয়ে করবেন মিলা?
উর্মিলা প্রথম দেখাতেই আয়াতকে পছন্দ করতো। আয়াতের কথা শুনে মাথা নিচু করে বললো- আপনার মা বাবাকে নিয়ে বাসায় আসবেন, আমি চাই পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে করতে।
আয়াত কিছু বললো না, প্রাপ্তির হাসি ফুটিয়ে উর্মিলার হাত ধরে হাটতে শুরু করলো। নিস্তব্ধ রাত দুজন কপোত কোপতী হাত ধরে হাটতে।
‘
‘
বিছানায় বসে প্রয়োজনীয় কিছু ফাইল দেখতে ব্যস্ত তাহি। তখনই তার ফোন বেজে উঠে। ফোন হাতে নিয়ে মুচকি হেসে কোল রিসিভ করে।
– কি ব্যাপার ডাক্তার সাহেব, আপনি ঘুমান নি এখনো?
– ঘুম আসছে না, একা একা আর কতো ঘুমাবো। কবে যে আমারো একটা বউ হবে,
– আপনার মা বাবাকে বলুন মেয়ে দেখতে। তারপর তাদের পছন্দে বিয়ে করে নিন।
– এই কি বললে তুমি, আমি অন্য মেয়েকে বিয়ে করবো কেনো? আমার তো তুমি আছো, তোমাকেই বিয়ে করবো।
– যদি আপনার ফ্যামিলি আমাকে না মানে?
– মানবে না কেনো?
– আমি তো একা ডাক্তার সাহেব, ছোট থেকে একা বড় হয়েছি। মা বাবা নেই। আপনার পরিবার কি আমাকে মেনে নিবে?
ওপাশ থেকে নিষ্প্রভ কিছুক্ষণ চুপ থাকলো, তারপর বললো- মানবে না কেনো? মানতে হবে। আমি আমার মা বাবাকে চিনি। আর তা ছাড়া আমি চাই তোমাকে মা বাবা উপহার দিতে৷ আমার মা বাবাকে দিয়ে তোমাকে একটু হলেও মা বাবার আদর বুঝিয়ে দিতে। যাতে কখনো বলতে না পারো, কখনো মা বাবার আদর পাইনি।
ওপাশ থেকে তাহি কিছুক্ষণ চুপ থাকলো।
নিরবতায় ভেঙে নিষ্প্রভই বললো- পাখি একটা গান শুনাও।
সবকিছু ছেড়ে গিটার ও ফোন নিয়ে বারান্দায় ছুটলো তাহি৷ ফোনের স্পিকার বাড়িয়ে দিলো। নিকষ কালো আকাশের দিকে তাকিয়ে গান গাইতে লাগলো–
ওপাশ থেকে নিষ্প্রভও তাহির গানের সাথে তাল মিলিয়ে গাইছে।
চলবে,ইনশাআল্লাহ