#প্রিয়_আসক্তি
#পর্বঃ১০
#মাহমুদা_আক্তার_তাহিনা
নিষ্প্রভের দিকে কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো তাহি। বাইকের কাছে গিয়ে হেলমেট হাতে নিয়ে পড়ে নিলো। এর কারণটা কেউ বুঝেনি, তবে নিষ্প্রভ বুঝেছে। তাহি কাউকে চোখের পানি দেখাতে চায়না। এই মেয়েটা এতো স্ট্রং। নিজের অনুভুতি কষ্ট লুকিয়ে রাখতে পছন্দ করে৷ আর সে কি না নিজেই তার পাখিটাকে কষ্ট দিলো। নিজেকে নিজের খুন করতে ইচ্ছে করছে নিষ্প্রভের।
-চলো সবাই রেস্টুরেন্টের ভিতরে, হালকা নাস্তা করে রওনা দিতে হবে তো। আয়াতের কথায় সবাই রেস্টুরেন্টের ভিতরে ডুকে যায়।
তাহি গিয়ে এক কোণায় বসে পড়ে, ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরে। নিষ্প্রভ অসহায় দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে তাহির দিকে। সবাই হালকা নাস্তা করে বেড়িয়ে আসে রেস্টুরেন্ট থেকে।
কে কার বাইক দিয়ে যাবে সেটা সবাই ভাবছে। সুযোগ বুঝে নিষ্প্রভ বলে- শুন আয়াত তুই উর্মিলা কে নিয়ে আমার বাইক এ, আর তীব্র তুই দীবা কে নিয়ে তোর বাইক দিয়ে আয়।
আর তুই কিসে আসবি?
তীব্রের কথায় নিষ্প্রভ হালকা হেসে বলে- তাহির বাইক দিয়ে তাহির সাথে যাবো।
আয়াত আর উর্মিলা, সবার আগে চলে যায়। তারপর তীব্রের বাইক উঠে বসে দীবা, দুহাত দিয়ে তীব্রকে জড়িয়ে ধরে। হালকা হেসে তীব্র বাইক স্টার্ট দিয়ে আয়াতকে ফলো করে চলে যায়। অবশেষে নিষ্প্রভ গিয়ে তাহির বাইকে তাহির পিছনে বসে পড়ে। পিছন থেকে তাহির কোমড় জড়িয়ে ধরে।
– ছাড়ুন,
– না, ছাড়বো না।
– দেখুন,
– দেখাও,
কটমট করে তাহি পিছন ফিরে নিষ্প্রভের দিকে তাকায়।
সেই সুযোগে নিষ্প্রভ তাহির দুই গাল ধরে বলে- ক্ষমা করে দাও জান, আ’ম স্যরি। আমি তোমাকে তখন চড় মারতে চাই নি। তুমি ধাক্কা দেওয়ায় আমি উর্মিলার উপর পড়ে যেতাম। তাই আমার রাগ উঠেছিলো। প্লিজ পাখিটা রাগ করে থেকো না, এই দেখো কান ধরছি। আর কখনো কোনো মেয়ের প্রশংসা করবো না।
-কোনো কথা না বলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে তাহি।
নিষ্প্রভ আবার বলে- প্লিজ সোনা, কথা বলো। এভাবে মুখ ফিরিয়ে নিও না।
– একটা কথা কি জানেন ডাক্তার সাহেব?কিছু কাঙ্ক্ষিত জিনিস পেয়ে গেলে সবাই ভাবে সেই জিনিসটা তো আমারই থাকবে, যাই হয়ে যাক না কেনো, সেটা আমার আমারই থাকবে। তবে কেউ এটা চিন্তা করে না, সব কিছুরই মেয়াদ আছে। যেমন একটা মানুষের ও সহ্যশক্তি, কষ্ট আছে।
নিষ্প্রভ খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে, সে কতোটা কষ্ট দিয়েছে তাহি কে। কোনে কিছু না ভেবেই তাহিকে দুহাত দিয়ে ঝাপটে ধরে নিষ্প্রভ।
– প্লিজ পাখি, তুমি কষ্ট পেও না।আমি খুবই স্যরি। আর কখনো এমন হবে না।
– আমি চড় মারাতে কষ্ট পাইনি ডাক্তার সাহেব, আপনি আমার সামনে অন্য কারো প্রশংসা করেছেন। সেটা আমার কলিজায় গিয়ে লেগেছে।
– আর হবে না সোনা। প্লিজ স্যরি তো। আর হবে না। তোমাকে আমি কখনো তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে কোনো কিছু পড়তে বলবো না। তোমার যেটাতে কমফোর্ট ফিল হয়, সেটা পড়ো।
তাহি আর কিছু না বলে বাইক স্টার্ট দেয়। নিষ্প্রভ বুঝতে পারে, তার পাখির অভিমান কমেনি এখনো।
‘
‘
‘
জঙ্গলের মতো জায়গাটা, একসাইটে পাহাড়। সেই পাহারেই উঠছে সবাই। পাহারের উপরে উঠে সূয্যিমামার ডুবে যাওয়া দেখছে সবাই। কি সুন্দর সেই দৃশ্য। ইতিমধ্যেই দীবা অনেক পিক তুলে ফেলেছে, সাথে তীব্রর সাথেও কাঁপল পিক তো আছেই। দীবার হাসি মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে তীব্র। এই মেয়েটাকে একসময় কতো কষ্ট দিয়েছে সে, কতো অবহেলা করেছে। আচমকা দীবাকে হেঁচকা টানে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় তীব্র। হকচকিয়ে তাকায় দীবা। ফিসফিস করে বলে- আরে কি করছেন, সবাই আছে তো, দেখে ফেললে কি ভাববে?
– যাই ভাবুক, আমার এখন প্রেম পাচ্ছে, আমি এখন তোমার সাথে প্রেম করবো।
– কিহ! তাই বলে এখন? আরে এখানে আমার নিজের বড় ভাই আছে। মান সম্মান কিছু থাকবে না।
জোর করে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয় দীবা। মুখ গোমড়া করে তাকিয়ে রয় তীব্র। সে বুঝতে পারছে, তাকে খুব শীঘ্রই বিয়ে করতে হবে। এভাবে আর কতোদিন লুকিয়ে প্রেম করবে। দীবা ঠিকই বলেছে নিষ্প্রভ দেখলে মান সম্মান থাকবে না। আর তীব্রই বা কি জবাব দিবে। বন্ধুর বোনের সাথে যেহেতু প্রেম করছে, খুব তারাতারি বিয়ে করতেই হবে। নাহলে পাছে নিষ্প্রভ জেনে গেলে ভুল বুঝবে। এতে বন্ধুত্বের সম্পর্কে ফাটল ধরতে পারে।
আচমকা দীবা হাত ধরে টানায় ভাবনা থেকে বের হয় তীব্র। হালকা হেসে আবারো দীবাকে পিক তুলে দিতে থাকে। তার হবু বউ এখন তাকে ক্যামেরা ম্যান বানিয়েছে।
এক দৃষ্টিতে সন্ধ্যার আকাশ দেখতে ব্যস্ত ছিলো উর্মিলা, তখনই আয়াত তার পাশে এসে বলে- মিস উর্মিলা, আপনি চাইলে আমি আপনার ক্যামেরা ম্যান হতে পারি।
-ধন্যবাদ, দিয়ে নিজের ফোন আয়াতের দিকে এগিয়ে দেয় উর্মিলা, তারাও ব্যস্ত হয়ে পড়ে ছবি তুলতে।
দুহাত পকেটে গুজে দাড়িয়ে আকাশের দিকে একদৃষ্টিতে ছেয়ে আছে তাহি।
নিস্প্রভ তার পিছনেই দাড়িয়ে আছে। মূলত অভিমান ভাঙানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু তাহি তো তাহিই। আচমকা নিষ্প্রভ তাহির হাত দুটো প্যাকেট থেকে টান দিয়ে বের করে মেলে ধরে। সাথে নিজের হাত ও। পিছন থেকে তাহির সাথে একেবারে মিশে হাত মেলে দাড়িয়ে থাকে। ছবি তুলতে থাকা আয়াতকে ইশারা দিয়ে বুঝায় তাদের এই মুহুর্তের ছবি তুলতে। আয়াত ও বন্ধুর ইশারা বুঝতে পেরে ছবি তুলে নেয়।
-, আর কতো অভিমান করে থাকবে, আমার দস্যি রানী।
– আমি অভিমান করে নেই, ছাড়ুন আমাকে সবাই দেখছে।
– দেখুক, তুমি যদি এবার না হাসো তো আমি সবার সামনে তোমাকে কিস করবো। তাও আমাদের ফাস্ট কিস হবে এটা।
চোখ বড়ো বড়ো করে থাকায় তাহি। কটমট করে বলে- চুপ করুন অসভ্য ডাক্তার। মুখে লাগাম টানুন।
– না আমি চুপ করবো না, তুমি যদি না হাসো, তাহলে আমি সত্যিই কিস করবো।
‘
কি হলো হাসবে না তো? ঠিক আছে আমি তোমাকে এখন সবার সামনে কিস করবো। তাও আমাদের ফাস্ট কিস। যদিও আমি চাইনি বিয়ের আগে এসব কিস টিস করতে। বলেই নিষ্প্রভ নিজের মুখ এগিয়ে নিতে থাকে তাহির দিকে,
তৎক্ষনাৎ তাহি নিষ্প্রভকে জড়িয়ে ধরে। প্রাপ্তির হাসি হাসে নিষ্প্রভ।
– কি তোমাকে বলেছি হাসতে, আর তুমি জড়িয়ে ধরেছো। নট ব্যাড, তবে হাসতে ও হবে। দেখি হাসো তো একটু।
ঠোঁট কামড়ে হাসে তাহি, সেই হাসি দেখে নিষ্প্রভ বুকে হাত দিয়ে বলে- হায় মে মার জাওয়া!
এবার ঠোঁট প্রসারিত করে হাসে তাহি। নিষ্প্রভ ও হেসে তাহির হাত নিজের হাতের মুঠোয় নেয়। দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে। যদিও তাদের হাসির শব্দ নেই, যাকে বলে নিঃশব্দের হাসি।
– ভালোবাসি তাহি পাখি।
– হু,
– কি হু?
-হু
– কি হু, তুমি ও বলো,
– কি বলবো?
– ভালোবাসি বলো,
– আপনি আমার সব অপূর্ণতার মাঝে পূর্ণতা ডাক্তার সাহেব, আপনি আমার সব অপ্রাপ্তির মধ্যে সেরা প্রাপ্তি।
– তবুও বলবে না ভালোবাসি?
– ভালোবাসি নিষ্প্রভ! ভালোবাসি ডাক্তার সাহেব, খুব ভালোবাসি।
মুগ্ধ হয় নিষ্প্রভ, তাহির মুখে প্রথম বার নিজের নাম ও ভালোবাসি শুনে। ইশশ নিষ্প্রভের তো ইচ্ছে করছে সব বাধা নিয়ম ভেঙে তাহিকে নিয়ে অজানাতে পাড়ি জমাতে। কোনো দূর অজানায় হারিয়ে যেতে।
চলবে,
#প্রিয়_আসক্তি
#পর্বঃ১১
#মাহমুদা_আক্তার_তাহিনা
অনেকটা সময় কেটে গেছে, সময় তখন রাত আটটা ছুঁইছুঁই। পাহাড় থেকে নেমে জঙ্গলের পাশ দিয়ে নামতে থাকে সবাই। তখনই একটা অদ্ভুত শব্দ সবার কানে আসে। প্রথমে কেউ পাত্তা দেয় নি। কিন্তু হঠাৎ একটি মেয়ের চিৎকারের শব্দ ভেসে আসে। সবাই হকচকিয়ে যায়। শব্দের উৎস খুজতে খুজতে তাহি বলে-
-মনে হচ্ছে জঙ্গলের ভিতর থেকে চিৎকারের আওয়াজ আসছে। কেউ বিপদে পড়েছে। আমি যাচ্ছি,,,,
বলেই তাহি জঙ্গলের ভিতরের দিকে দৌড়ে যেতে থাকে। নিষ্প্রভ ও পিছু পিছু দৌড়ে যায়। বাকিরা ও তাদের পিছে দৌড়ে যেতে থাকে।
‘
‘
‘
জঙ্গলের বেশ ভিতরেই চলে এসেছে সবাই। চারিদিকে অন্ধকার। ফোনের লাইট অন করা সবার। চারিদিকে তাকিয়ে কারো চোখে কিছু পড়ছেনা। কিন্তু কিছুক্ষণ আগেই তো, কারো চিৎকারের আওয়াজ ভেসে আসছিলো।
ভয়ে দীবা তীব্রের হাত খামচে ধরে, সবার দিকে তাকিয়ে বলে- চলো আমরা চলে যাই। নাহলে যেকোনো বিপদ হতে পারে।
চোখ মুখ শক্ত করে তাহি বলে- এভাবে কিকরে যেতে পারি, কেউ অবশ্যই বিপদে পড়েছে, চারিদিকে লাইট মারো, দেখো কিছু দেখা যায় কি না।
সবাই আবারো চারিদিকে লাইট দিয়ে দেখতে থাকে। তাহি চারিদিকে ঘুরে ঘুরে, দেখছে। তখনই ওর কানে ‘উম উম’ শব্দ ভেসে আসে। সাধারণত কেউ মুখ চেপে ধরে রাখলে, এরকম শব্দ বের হয় মুখ থেকে। বিচক্ষণ স্থির হয়ে দাড়িয়ে চারিপাশে চোখ ঘুরিয়ে দেখে নেয়। যেহেতু তাহি একজন সিআইডি অফিসার, তাই সবসময় পিস্তল সাথে থাকে। তবে সেটা কারো চোখে পড়ার মতো নয়। খু্ব সাবধানে পিস্তল বের করে তাহি। সবাই তাহির হাতে পিস্তল দেখে ভড়কে যায়। তাহি ইশারায় চুপ থাকতে বলে, আর ওর পিছনে আসতে বলে। পিস্তল ধরে খুব সাবধানের সহিত জঙ্গলের আরো গভীরে ঢুকতে থাকে তাহি, পিছনে বাকি সবাই।
– তোমরা সবাই এখানে দাড়িয়ে থাকো, আমি আবার যেদিক দিয়ে এখানে এসেছি, মানে পিছনটা আবার ঘুরে আসছি। বলেই কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই পা বাড়ায় তাহি। নিষ্প্রভ ও পিছন পিছন আসে। তাহি সামনের দিকে যাওয়ার সময় কাউকে সরে যেতে দেখেছে। আবারো চারিদিকে চোখ ভোলায় তাহি৷ চারিপাশটা কেমন ভয়ংকর হয়ে উঠেছে, নিস্তব্ধতা গ্রাস করেছে। একটি মোটা গাছের পিছনে, কারো পা দেখতে পায় তাহি। সাবধানের সহিত এগিয়ে যায়। গাছটার সামনে গিয়ে পিস্তল তাক করে, লুকিয়ে থাকা ব্যক্তির উপর। ততক্ষণে নিষ্প্রভ ও চলে এসেছে।
একটি মেয়ের মুখ চেপে ধরে রেখেছে, কোনো ব্যক্তি। অন্ধকারে কারো মুখই স্পষ্ট নয়। পিস্তল তাক করে তাহি বলে- ছাড়ো মেয়েটিকে।
মেয়েটির মুখ ছেড়ে দেয় ব্যক্তিটি। ছাড়া পাওয়া মেয়েটি হাঁপাতে থাকে, জোরে জোরে নিশ্বাস নেয়।
মুখ চেপে ধরা ব্যক্তিটির শার্টের কলার ধরে ঝাকিয়ে তাহি প্রশ্ন করে- হু আর ইউ? আর একটা মেয়েকে এভাবে মুখ চেপে ধরে লুকিয়েই বা কেনো ছিলে?
– বিশ্বাস করুন, আমরা কিছু করিনি। আর আমি মানে আমরা দুজন লুকিয়ে ছিলাম, যাতে কেউ আমাদের দেখতে না পারে। আর আলিশার মুখ চেপে ধরেছিলাম, কারণ ও বেশি কথা বলে। যদি ধরা পড়ে যাই, তাহলে ওরা আমাদের মেরে ফেলতো। বিশ্বাস না হলে আলিশাকেই জিজ্ঞেস করুন।
– হ্যা, আনান ঠিকই বলেছে, আসলে আমরা ওই খারাপ লোক গুলোর থেকে বাঁচার জন্যই এভাবে লুকিয়ে ছিলাম।
সন্দিহান হয়ে প্রশ্ন করে তাহি, – তাহলে চিৎকারের আওয়াজ যে ভেসে আসছিলো, সেটা কার?
– সেটা আমারই, ওরা আমাকে ধরে ফেলেছিলো। তাই চিৎকার করে ছিলাম। পরে আনান আমাকে জোর করে ছাড়িয়ে নিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে গভীরে চলে আসে। আর আমরা এভাবে লুকিয়ে থাকি।
– তোমরা যাদের কথা বলছো কে তারা? আর তোমাদেরই বা কেনো অ্যাটাক করেছিলো?
– আমরা দুইজন গোয়েন্দার ইনভেস্টিগেটর। এখানকার অনেক মানুষই থানায় কমপ্লেইন করতো, এখানের মানুষ উধাও হয়ে যায়। পরে কয়েকদিন পরে লাশ পাওয়া যায়। সব লাশেরই চোখ, কিডনি, হার্ট এগুলো থাকে না। মানে তাদের এগুলো নিয়ে নেয়। (আনান)
– হোয়াট? কতোদিন ধরে এমন ঘটছে?(নিষ্প্রভ)
– অনেকদিন ধরেই,( আলিশা)
– এখানের পুলিশরা কোনো পদক্ষেপ নেয় নি। বা তদন্ত করেনি?(তাহি)
– করেছিলো, তবে কেউই কোনো কিছু বের করতে পারেনি। আমরা তো এই ক্যাইস এর জন্যই আজ এই জঙ্গলে এসেছিলাম। মানে এই জায়গার প্রতিটি জায়গা দেখতে চেয়েছিলাম। তাই জঙ্গলেও ডুকে পড়ি। (আনান)
– বাকি কথা পরে শুনবো, আগে তোমরা চলো।
নিষ্প্রভ গিয়ে বাকি সবাইকে নিয়ে আসে। সবাই একসাথে সাবধানে জঙ্গলের ভিতর থেকে বের হয়। তাহি আনান ও আলিশার ফোন নাম্বার নিয়ে নেয়। কাল তারা দেখা করবে। তারপর বাকিটা জানবে। আপাতত সবাই বাড়ির দিকে রওনা দেয়। সবার মনে একটাই চিন্তা কে বা কারা এমন করতে পারে? তাহির মনে ও একই ভাবনা- কোনো অবৈধ ব্যবসায়ী বা খারাপ কাজের সাথে যুক্ত এমন লোকেরা এসব করছে, তারা হয়তো এগুলো বিক্রি করে।
নিষ্প্রভ দীবাকে নিয়ে বাড়ি চলে যায়, তীব্র ও আয়াত চলে যায়। রয়ে যায় উর্মিলা ও তাহি। তাহি কোনো দ্বিধা ছাড়াই বলে – তুমি চাইলে, আমি তোমাকে লিফট দিতে পারি। বিনাবাক্যে তাহির বাইকে উঠে যায় উর্মিলা। সে ভয় পেয়ে আছে, জঙ্গলের ঘটনাটা নিয়ে।
-্ভয় পাচ্ছো?
তাহির প্রশ্নে উর্মিলা ঢোক গিলে। আমতা আমতা করে বলে- কিছুটা,
-ভয় পেওনা, এরকম অহরহ ঘটনা ঘটে, আমাদের চারিদিকে। তবে সব ঘটনার সঠিক তদন্ত হয়না। আমি এই খানের এই ক্যাইস টার দায়িত্ব নিবো।
– সে তো নিবেই, তুমি তো একজন আইনের রক্ষক। আর তুমি যথেষ্ট সাহসী।
আর কোনো কথা না বলে বাইক স্টার্ট দেয় তাহি, উর্মিলাকে ওর বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে, নিজের বাসার দিকে রওনা হয়।
‘
‘
‘
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে, ল্যাপটপ নিয়ে বসে তাহি। তারা যে জায়গায় গিয়েছিলো, সেই জায়গাটা সাধারণত একটা গ্রাম। গ্রামটির নাম ‘মির্জাপুর'(কাল্পনিক)। মির্জা বংশের জমিদার বাড়ি এখনো রয়েছে সেখানে। আর জঙ্গলটি জমিদার বাড়ির কয়েক রাস্তার পরেই অবস্থান করছে।
–
‘
হালকা খাবার খেয়ে ঘুমানোর প্রস্ততি নেয় তাহি, তখনই তার ফোন বেজে উঠে। স্কিনে ‘ডাক্তার সাহেব’ নামটি জ্বল জ্বল করছে। স্মিত হেসে তাহি কল রিসিভ করে কানে ধরে। ওপাশ থেকে নিষ্প্রভ বলে – কি করছেন মহারানী।
– এই তো ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি, ভীষণ ক্লান্ত লাগছে।
– ক্লান্ত তো লাগবেই, যেভাবে জঙ্গলে দৌড়েছো। বাপরে, আমার দস্যি রানী। কিছুই ভয় পায়না। কতো সাহসী হবে আমার বউ, ভাবতেই গর্ব হয় আমার।
– এতো গর্ব করে লাভ নেই, ঘুমান। ঘুমালে শরীর সুস্থ হবে।
– ঘুম তো আসবে না মহারানী, তোমাকে খুব শীগ্রই আমার করে নিয়ে আসবো। তখন সারাক্ষণ তোমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবো। আমি তো ভেবে রেখেছি বিয়ে করে একসপ্তাহ দরজা জানালা খুলবো না!
– চুপ করুন অসভ্য ডাক্তার। আপনার ঘুম না পেলেও আমার ঘুম পেয়েছে, রাখছি ভালো থাকুন, গুড নাইট, আল্লাহ হাফেজ।
– আরে আরে শুনবে তো আমার কথা,,,,, দূরররর,,,
কল কেটে দিলো। হুহ,,, কি আর করার যাই আমিও ঘুমাই। বিছানায় শুয়ে কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে নিষ্প্রভ। মনে মনে বলে- কবে যে কোলবালিশের জায়গায় তুমি থাকবে বউ,
আচ্ছা আমি কি লুচি হয়ে যাচ্ছি? আগে তো এসব ভাবতাম না, ছিহ ছিহ তাহি ঠিকই বলে ‘ অসভ্য ডাক্তার’ হয়ে যাচ্ছি। আরে তাতে কি আমিতো শুধু তাহির ক্ষেত্রেই একটু এমন করি। আমার বউ আমি যা ইচ্ছে করবো। আরো লুচি – পরোটা হবো। কিন্তু আমার বউ চাই ই চাই। কবে যে মহারানী বুঝবে। এসব ভাবনা চিন্তা করতে করতেই ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে যায় নিষ্প্রভ।
চলবে,,,ইনশাআল্লাহ