#প্রিয়_আসক্তি
#পর্বঃ০৭ [রোমান্টিক পর্ব]
#মাহমুদা_আক্তার_তাহিনা
তাহি’র বাসার সামনে দাড়িয়ে আছে নিষ্প্রভ, যাবে কি যাবে না, ভাবছে। সবকিছু ভেবে শেষে ঠিক করলো, সে যাবে।
নিজের রুমে বসে, কিছু কেইসের ফাইল দেখছিলো তাহি, তখনই কলিং বেল বেজে উঠে। এই সময় কে আসবে ভেবে পায় না তাহি। উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলো। হুরমুড় করে ভিতের ঢুকে গেলো নিষ্প্রভ। তাহির রুমে গিয়ে বিছানায় আরাম করে শুয়ে পড়লো।
এদিকে তাহি বিস্মিত হলেও সেটা প্রকাশ করে না, দরজা লাগিয়ে নিজের রুমের দিকে আসে। নিষ্প্রভ তার বিছানায় শুয়ে আছে।
– আপনি আমার বাসায় কেনো এসেছেন? আর আমার বিছানাতেই বা শুয়ে পড়লেন কেনো?
সারাদিনের ক্লান্তি তে বিছানায় শুতেই নিষ্প্রভের চোখে ঘুম ধরা দিয়েছে, ঘুমঘুম চোখে তাকিয়ে বলে- এমনি এসেছি। আমার খুব ঘুম পাচ্ছে, প্লিজ ডিস্টার্ব করো না।
– মামা বাড়ির আবদার নাকি? একটা অবিবাহিত মেয়ের বাসায় ঢুকে, তারই বেডরুমে শুয়ে আছেন,,
– অবিবাহিত মেয়েটি আমার হবু বউ, আমি আসতেই পারি। আর আমার বউয়ের তো আমি ছাড়া কেউ নেই। তাই আমাকেই তার খেয়াল রাখার জন্য আসতেই হবে।আর তুমি এতো কথা বলছো কেনো? আসো বিয়ের আগে থেকেই বউয়ের দায়িত্ব পালনের প্রেকটিস করো। আমার চুল গুলো টেনে দাও।
-কোনো কথা না বলে তাহি নিষ্প্রভের মাথার কাছে গিয়ে বসলো, সে চাইলে এখন রেস্টুরেন্টের বিষয় নিয়ে ঝগড়া করতে পারে৷ কিন্তু নিষ্প্রভ ক্লান্ত তাই কিছু বললো না। নিশ্চুপ হয়ে বসে নিষ্প্রভের চুল টানতে লাগলো। হঠাৎ করেই নিষ্প্রভ নিজের মাথা তাহির কোলে তুলে কোমড় জড়িয়ে ধরলো।
হঠাৎ এমন হওয়ায় অপ্রস্তুত হলো তাহি, আর তাহির সুড়সুড়ি অনেক বেশি তাই লাফ দিয়ে সরে আসতে চেয়েছিলো, তার আগেই নিষ্প্রভ আরো শক্ত করে কোমড় জড়িয়ে ধরে,
সুড়সুড়ি আর চরম অস্বস্তি নিয়ে কাঁপতে শুরু করে তাহি,
তাহিকে কাঁপতে দেখে বাঁকা হেসে নিষ্প্রভ বলে- যে অফিসার ক্রিমিনালদের বারোটা বাজিয়ে দেয়, সেই কি না সামান্য কোমড় জড়িয়ে ধরায় কাঁপা-কাঁপি শুরু করেছে। ইন্টারেস্টিং!
-, দেখুন,,
-দেখাও,,
– চুপ করুন অসভ্য ডাক্তার, আমার কোমড় ছাড়ুন, আমার অস্যস্তি হচ্ছে।
-, না ছাড়বো না, তার আগে বলো তুমি কি আমাকে ভালোবাসো? সেটা বললে ছেড়ে দিবো।
– পাগল নাকি, আমি আপনার মতো অসভ্য ডাক্তার-কে কোন দুঃখে ভালোবাসতে যাবো?
– স্বীকার করবে না?
– কি স্বীকার করবো?
উঠে বসে নিষ্প্রভ, তাহিকে একটানে নিজের কোলে বসিয়ে দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, যাতে উঠতে না পারে। দুই গাল ধরে বলে- একবার বলো না ভালোবাসো, প্লিজ শুধু একবার আর কখনো জানতে চাইবো না,
নিষ্প্রভের চোখের দিকে তাকালো তাহি, নিষ্প্রভের চোখ ছলছল করছে। এই চোখর দিকে তাকিয়ে তাহি মিথ্যা বলবে কি করে। অতঃপর নিজের দুই হাত দিয়ে নিষ্প্রভের মুখ ধরে আবেগময়ী কন্ঠে বলে উঠে- আপনি আমার প্রতি এতোগুলা বছর ধরে যেই আসক্তি নিয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করছেন, আমিও আপনার সেই প্রিয় আসক্তিতে আসক্ত হয়ে গেছি ডাক্তার সাহেব। কিভাবেই জানিনা, শুধু বলবো আপনাকে অন্য কারো সাথে দেখলে আমার সহ্য হয়না। আপনিও আমার “প্রিয় আসক্তি” হয়ে গেছেন।
চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে নিষ্প্রভের, কতো প্রতিক্ষার পর, আজ এই কথাটি শুনতে পারলো সে। হয়তো তাহি ভালোবাসি বলে নি, কিন্তু এটা না বলেই নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেছে।
নিষ্প্রভের চোখে জল দেখে, কিছু বললো না তাহি, সে জানে এটা তার ডাক্তার সাহেবের খুশির জল। শুধু একটা কথাই বললো- সারাজীবন শুনেছি, গল্পে পড়েছি, খুশিতে আনন্দিত হয়ে মেয়েরা চোখের জল ফেলে, আপনি প্রথম যে প্রেয়সীর মুখে তার অনুভূতি শুনে চোখের জল ফেলছেন।
কোনো উত্তর না দিয়েই শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তাহিকে নিষ্প্রভ। কিছুক্ষণ সময় নিয়ে তাহিও তার ডাক্তার সাহেবের পিঠে হাত রাখলো।
হঠাৎ পেটে ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেয়ে বড়ো বড়ো চোখ করে তাকায় তাহি, নিষ্প্রভ তার দিকেই তাকিয়ে মুচকি হাসছে।
তাহির পোড়নে যেই টি-শার্ট, সেটা একটু শর্ট, তাই একটু উঁচু হলেই পেট দেখা যায়। বাসায় একা থাকায় চেঞ্জ করেনি তাহি, আর সেটাই তার কাল হয়ে দাড়ালো। নিষ্প্রভের চাহনি দেখে লজ্জা ফেলেও প্রকাশ করলো না তাহি। ধাক্কা দিয়ে নিষ্প্রভ কে বিছানায় ফেলে দিয়ে আরেকটা টি-শার্ট নিয়ে ওয়াশরুম ঢুকে গেলো।
চেঞ্জ করে বিছানার কাছে এসে দাড়ালো, নিষ্প্রভ এখনো তার দিকেই তাকিয়ে আছে, চোখ মুখ কুঁচকে তাহি বলে- অসভ্য ডাক্তার, এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?
শব্দ করে হেসে উঠে নিষ্প্রভ, এতে তাহির রাগ হুড়মুড় করে বেড়ে যায়, বিছানায় উঠে নিষ্প্রভের চুল টেনে ধরে ঝাঁকাতে থাকে।
– আয়ায়া, কি করছো তাহি, চুল ছাড়ো ব্যাথা পাচ্ছি তো সোনা।
-ব্যাথা পাওয়ার জন্যই এভাবে ধরেছি, আর আমাকে পচাবেন?
মাথা নাড়িয়ে ইনোসেন্ট নিষ্পাপ বাচ্চাদের মতো করে নিষ্প্রভ বলে- নাহহ,
তাহি ছেড়ে দেয়, সেই সুযোগে নিষ্প্রভ তাহির হাত টেনে ধরে শুইয়ে দেয়, নিজেও উপরে উঠে যায়।
এতো দ্রুত সব ঘটলো যে বুঝতে সময় লাগলো তাহির। বুঝতে পেরেই নিষ্প্রভের দিকে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকালো। তাহির চাহনিতে নিষ্প্রভ কিন্তু না বলেই বাঁকা হাসলো। অর্থাৎ আমার চুল টানার জন্য শাস্তি পেতে হবে তোমায়। তাও আবার রোমান্টিক শাস্তি!
নিষ্প্রভের ইঙ্গিত বুঝতে পেরে, নিজেকে স্বাভাবিক করলো তাহি, নিষ্প্রভ কি করবে তার আগেই সে টেনে নিষ্প্রভের উপরে উঠে যায়।
-কি এবার কি করবেন?
-কি করবো, আমি তো ভালো ছেলে। করবে তো তুমি,,
চুপপপ অসভ্য ডাক্তার, বলেই উঠে যায় তাহি। নিষ্প্রভের দিকে তাকিয়ে বলে- নিজের বাসায় যান,
-তোমাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না তো, থাকিনা কিছুক্ষণ,
ঠিক আছে থাকুন, আমি কিছু ফাইল দেখবো। আমাকে ডিস্টার্ব করবেন না
মাথা নাড়ালো নিষ্প্রভ, মানে সে করবে না।
********
সকাল সাড়ে ১০টা, হসপিটালে নিজের চেম্বারের ভিতরে ডুকতে গিয়ে দরজার দিকে চোখ পড়তেই চোখ বড়ো বড়ো হয়ে যায় নিষ্প্রভের,, দরজার মধ্যে সাদা একটা কাগজ আটা দিয়ে লাগানো। তার মধ্যে বড় বড় করে লেখা – “ অবিবাহিত মেয়েদের প্রবেশ নিষেধ”
আশে পাশে তাকালো নিষ্প্রাণ, তখনি তার সামনের দিকে তাহিকে তার দিকেই আসতে দেখে। চোখে চোখ পড়তেই চোখ মাড়ে তাহি।
একের পর এক বিস্ময় ঘটনা ঘটছে। যা নিষ্প্রভের হজম করতে কষ্ট হচ্ছে।
তাহি নিষ্প্রভের সামনে এসে বললো – কি হলো এখানেই দাড়িয়ে থাকবেন? আপনার চেম্বারে প্রথম এলাম। বসতে বলবেন না আমায়?
মাথা নাড়িয়ে নিষ্প্রভ চেম্বারের ভিতরে ঢুকে হাই পাওয়ার দিয়ে এসি ছেড়ে চেয়ারে বসলো। শীতের মধ্যে ও তার গরম লাগছে। যার এরকম একটা দস্যি রানী আছে তার এমনই হবে।
নিজেকে স্বাভাবিক করে নিষ্প্রভ বলে- বাইরে দরজায় কি লিখেছো এসব?
-কেনো দেখতে পান নি নাকি?
– দেখতে পেয়েছি, কিন্তু,,
-কিন্তু কি? আমি যা বলেছি তাই হবে, নো অবিবাহিত মহিলাগণ, আপনি কোনো অবিবাহিত মেয়েদের দেখতে পারবেন না। এমনে চিকিৎসা করুন সমস্যা না। কিন্তু চেম্বারের ভিতরে আসতে পারবে না।
-আচ্ছা ঠিক আছে ম্যাম, কিন্তু গার্ডিয়ান নিয়ে তো ঢুকতে পারবে?
– হুম সেটা করতে পারেন, কিন্তু খবরদার কোনো মেয়ের দিকে তাকিয়েছেন তো। আমি ছাড়া সব মেয়ে আপনার বোন হয় মনে রাখবেন।
টান দিয়ে তাহিকে নিজের কোলে বসিয়ে বললো- এরকমই তো চেয়েছিলাম। তুমিও আমার প্রতি আসক্ত হয়ে গেলে শ্যামা পাখি। এই আসক্তি থেকে তোমার মুক্তি নেই।
-আমি মুক্তি পেতেও চাইনা ডাক্তার সাহেব,
চলবে,,