#প্রিয়_আসক্তি
#পর্বঃ০৬
#মাহমুদা_আক্তার_তাহিনা
প্রচন্ড বাতাস বইছে, সাথে এক রমণীর অবাধ্য চুল গুলো উড়ছে। প্রচন্ড ঠান্ডায় সবার জমে যাওয়ার অবস্থা কিন্তু তার সেদিকে হুস নেই৷ সে তো তার জীবনের সমীকরণ মিলাতে ব্যস্ত।
– আজ পাঁচ বছর হয়ে গেছে। আমি আপনার আমার শহর ছেড়ে সুদূর প্রবাসে, সুইজারল্যান্ডে পাড়ি জমিয়েছিলাম। কতোদিন আপনাকে সামনাসামনি দেখিনা ইন্জিনিয়ার সাহেব। আপনাকে না পাওয়ার দহন আমাকে প্রতিটা মুহুর্তেই পোড়ায়। আরো কয়েকটা দিন তারপরই আমি আবারো আসছি, আপনার আমার সেই শহরে। যে শহরে আপনার প্রেমে আসক্ত হয়েছিলাম। জানেন ইন্জিনিয়ার সাহবে, আমি না আর কাউকে ভালোবাসতে পারিনি। ভিনদেশে এসে অনেক প্রপোজ পেয়েছি, কিন্তু কাউকে ভালো লাগেনি। আমি তো এক আপনিতে আসক্ত। অন্য কাউকে ভালো লাগবে কি করে বলুন। অথচ আপনি আমার ভালোবাসাকে আবেগের বয়সের ভুল মনে করে পায়ে ঠেলে দিলেন। কি হতো একটু ভালোবাসলে, কেনো আমাকে ভালোবাসলেন না আপনি কেনো? কেনো? কেনো ইন্জিনিয়ার সাহেব,,,
চিৎকার করে কাঁদছে দীবা, চোখের পানি মুছে দেওয়ার মতো কেউ নেই।
_____
ইন বাংলাদেশ,
অন্ধকার ঘরে বসে একদৃষ্টিতে একটি ফটো প্রেমের দিকে তাকিয়ে আছে তীব্র। ছবিটি তার প্রেয়সীর, যাকে সে না বুঝে নিজের ইচ্ছেতে দূরে ঠেলে দিয়েছে, যার ভালোবাসা বুঝতে তার অনেক দেরি হয়েছিলো বলে তার থেকে দূরে অনেক দূরে, তার প্রেয়সী অবস্থান করছে।
– আমাকে আরো কিছুদিন সুযোগ দিতে দীবা, তাহলে তো আমাদের এভাবে আলাদা হতে হতো না। আমি মানছি আমি ভুল করেছিলাম, তোমার ভালোবাসা বুঝতে পারিনি। তাই বলে তুমি এমন শাস্তি দিবে আমায়। শাস্তি যখন দিবেই কাছে থেকে শাস্তি দিতে, কিন্তু তুমি তো আমার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে চলে গেলে। আমি যে তোমার অপেক্ষায় আছি দীবা। কবে আসবে তুমি। কবে আমার অপেক্ষার অবসান ঘটবে।তোমার ইন্জিনিয়ার সাহেব তোমার অপেক্ষায় জান পাখি, প্লিজ তারাতারি চলে আসো!
মোবাইলের শব্দে ধ্যান ভাঙে তীব্রের, চোখের পানি মুছে ফোন হাতে তুলে নেয়, স্কিনে জ্বলজ্বল করছে “আয়াত মাহমুদ”, নিজেকে স্বাভাবিক করে ফোন রিসিভ করে কানে তুলে নেয় তীব্র,,
ওপাশ থেকে আয়াত আনন্দসহিত বলে- কেমন আছিস দুস্ত, তোর আর নিষ্প্রভের খবর কি রে, শুন তোকে একটা গুড নিউজ দিতে কল দিয়েছি। আমি কয়েকদিনের ভিতরে সুইজারল্যান্ড থেকে বাংলাদেশ ব্রেক করছি,
– ওহ আচ্ছা, ভালো তো।
– তুই কি খুশি হোস নি, আমার আসার কথা শুনে?
– খুশি হবো না কেনো, কতোদিন পরে তোকে সামনাসামনি দেখবো, সেই যে কলেজ শেষ করে প্রবাসে পাড়ি জমালি, আর কতোদিন বাদে তোকে দেখবো, আমি তো সো এক্সাইটেড।
– তোর জন্য সারপ্রাইজ আছে দুস্ত,
– কি সারপ্রাইজ?
– বলা যাবে না, তবে নিষ্প্রভ জানে, বাট তোকে বলতে নিষেধ করেছি। তুই সেইটা শুনলে খুব খুশি হবি।
– কি বলবি তো,
– না রে বলা যাবে না, আমি বাংলাদেশ ব্রেক করলেই সারপ্রাইজ পাবি।
– আচ্ছা ঠিক আছে,
– ওকে দুস্ত ভালো থাক, আল্লাহ হাফেজ।
– আল্লাহ হাফেজ।
ফোন কেটে তীব্র আবারো তার প্রেয়সীর ছবি নিয়ে অভিযোগ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
****
বিকাল ৪টা,
শহরের একটি রেস্টুরেন্টে বসে আছে নিষ্প্রভ, সাথে তার একজন সহযোগী ডাক্তার “উর্মিলা শেখ”, দুজনেই খাওয়া দাওয়া করতে এসেছে। গুরুত্বপূর্ণ ডিউটি থাকায় দুজনই বিজি ছিলো, তাই কারো রি দুপুরে খাওয়া হয়নি।যদিও নিষ্প্রভ আসতে চায়নি, কিন্তু উর্মিলার জোড়াজোড়িতে আসতে বাধ্য হয়েছে।
ইতি মধ্যে খাবার এসে গেছে, দুজনই হালকা কথা বলছে আর খাবার খাচ্ছে।
এদিকে,
সারাদিন একটা বিষয়ের ক্যাস তদন্তের জন্য ছোটাছুটি করতে হয়েছে তাহি কে। তাই তারও খাওয়া হয়নি। সেও একই রেস্টুরেন্টে খাওয়ার জন্য এসেছে। খাবার অর্ডার দিয়ে বসে চারিদিকে চোখ ভুলাচ্ছিলো। তখনই তার চোখ পড়ে একটা টেবিলে খেতে বসা নিষ্প্রভের দিকে, চোখ ফিরিয়ে নিতে চেয়েছিলো কিন্তু তখনই আবার চোখ পড়ে নিষ্প্রভের সাথে বসা রমণীর দিকে।
খাবার খেতে খেতে উর্মিলার ঠোটের পাশে খাবার লেগে গিয়েছিলো, নিষ্প্রভ ইশারা করে বুঝাচ্ছিলো কিন্তু বুঝছিলো না উর্মিলা। তাই নিষ্প্রভ নিজেই টিসু নিয়ে ঠোটের কোণা মুছে দেয়।
এমন দৃশ্য দেখে সহ্য হলো না তাহির, কেউ যেনো তার মাথায় আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। বড় বড় পায়ে নিষ্প্রভদের দিকে তেড়ে এলো। এসেই নিষ্প্রভের শার্টের কলার ধরে টেনে তুললো।
আকস্মিক তাহির আগমনে চমকে যায় নিষ্প্রভ, সেই সাথে তার কলার ধরে টেনে তুলায়, রাগান্নিত ও বিস্মিত দৃষ্টিতে তাহির দিক তাকায়। কিছু বলবে তার আগেই তাহি কলার জাঁকিয়ে প্রশ্ন করে– কে এই মেয়ে, কি সম্পর্ক আপনাদের?
কলার ধরার জন্য এমনিতেই রেগে ছিলো নিষ্প্রভ, তার
উপর তাহির প্রশ্নে রাগটা যেনো বেড়ে গেলো, কোনো কিছু না ভেবেই বললো- যেই হোক তোমার কি? কে তুমি? আর তোমার সাহস কি করে হলো আমার কলার দড়ার?
দ্বিগুণ রেগে তাহি বললো- যেই হোক মানে কি, আমি যেটা জিজ্ঞেস করেছি সেটার উত্তর দিন। আপনি এই মেয়ে কে নিয়ে রেস্টুরেন্টে একসাথে কি করছেন?
– যাই করি তোমার তাতে কি? আর আমি তোমাকে উত্তর দিতে বাধ্য নই, কোন অধিকারে তুমি আমাকে প্রশ্ন করছো?
ততোক্ষণে নিষ্প্রভের কলার ছেড়ে দিয়েছে তাহি, নিষ্প্রভের কথা শেষ হতেই স্মিত হেসে বলে- সত্যিই তো আমি আপনারা কে? আমিও না পাগল হয়ে গেছি। কি করছি নিজেও জানিনা। স্যরি ডাক্তার সাহেব, আমি শুধু শুধু আপনাদের ডিস্টার্ব করলাম, আ’ম এক্সস্টেমলি স্যরি! বলেই দ্রুত রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গেলো তাহি।
এতোক্ষণ ধরে উর্মিলা নিরব দর্শকের মতো সব দেখছিলো। নিষ্প্রভের দিকে তাকিয়ে অপরাধী সুরে বললো- স্যরি স্যার, আমার জন্য আপনার আর ম্যামের মধ্যে জামেলা হলো, আর আপনিই বা কেনো ম্যামকে কথা শুনালেন। নিজের ভালোবাসার মানুষের সাথে কোনো অন্য ব্যক্তিকে কখনোই কেউ সহ্য করেনা।
তাছ্যিল হেসে নিষ্প্রভ বলে- ভালোবাসার মানুষ?, ভুল উর্মিলা, আমি ওর ভালোবাসার মানুষ নই। আমিই শুধু ওকে এতোদিন ধরে ভালোবেসে এসেছি, ও কখনোই আমাকে ভালোবাসে নি। আর না কখনো বাসবে। ও হলো পাথর দিয়ে তৈরি, তাই তো এতো বছর ধরে ওর পিছে ঘুরে ও ওর মনে নিজের জন্য অনুভুতি জন্মাতে পারিনি।
– কে বললো পারেন নি? আপনি পেরেছেন উনার মনে ভালোবাসা জন্মাতে।
– না উর্মিলা, সেটা যদি হতো তাহলে এই পৃথিবীতে আমার চেয়ে খুশি কেউ হতো না।
– আমি ঠিকই বলছি স্যার, আপনি সত্যিই উনার মনে ভালোবাসা জন্মাতে পেরেছেন। তা নাহলে ভাবুন আপনাকে আমার সাথে দেখে কিরকম রিয়েক্ট করেছেন। মানে তিনি জেলাস ফিল করেছেন।
– জেলাস আর তাহি? এটা আমার বিশ্বাস হয়না। হয়তো কোনো কারণে এমন করেছে। আর ওতো আমাকে দেখতেই পারেনা,
– না স্যার, তাহি ম্যাম, সত্যিই আপনাতে আসক্ত, সেটা আমি উনার চোখে দেখেছি। একটা মেয়ে কখনো বিনা কারণে চোখের জল ফেলে না।
-, চোখের জল?
-, হ্যা স্যার, আপনি হয়তো খেয়াল করেন নি। তবে আমি খেয়াল করেছি, রেস্টুরেন্টে থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় ম্যাম আঙ্গুল দিয়ে চোখের কোণা মুছেছেন।
– কি? তার মানে তাহি ও আমায়!
– হ্যা স্যার, আপনি জলদি যান, ম্যাম হয়তো খুব কষ্ট পেয়েছেন।
নিষ্প্রভের ঠোঁটের কোণে হাসি লেগে আছে, তার শ্যামা পাখিও তাকে ভালোবাসে? এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না। তবে তাকে সিওর হতে হবে। তাই তারাতাড়ি বিল মিটিয়ে উর্মিলার থেকে বিদায় নিয়ে তাহির বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো৷
চলবে