#প্রিয়_আসক্তি
#পর্বঃ০৫ [বোনাস পর্ব]
#মাহমুদা_আক্তার_তাহিনা
দুইটা কালো টি-শার্ট, দুইটা কালো প্যান্ট, একটা সাদা ও একটা কালো শার্ট, কালো ক্যাডস, এগুলোই তাহি’র শপিং। নিষ্প্রভ তাহি’র দিকে এগিয়ে গেলো, বললো- কখনো তো শাড়ি টাড়ি ও পছন্দ করতে পারো,
নিষ্প্রভের দিকে না তাকিয়ে তাহি জবাব দিলো- আমার যা ইচ্ছে তা পড়বো, আপনার সমস্যা?
-না আমার সমস্যা হবে কেনো, এমনই বললাম। কখনো শাড়ি পড়ো দেখবে তোমাকে খুব সুন্দর লাগবে। কারণ মেয়েদের শাড়িতেই বেশি অসাধারণ লাগে।
– হয়েছে? শেষ আপনার ভাষণ দেওয়া? এতো যখন শাড়ি আপনার পছন্দ তাহলে বিয়ে করে নিজের বউকে সারাদিন রাত শাড়ি পড়িয়ে রাখবেন, কেউ মানা করবে না।
– সে তো রাখবোই, বউ না পড়তে চাইলে জোর করে পড়িয়ে দেবো।
– গুড। তাহলে আপনার এই কথা গুলো আপনার বিয়ে করা বউকে বলবেন, আমাকে বলতে আসবেন না। আমি কি পড়বো আর কি পড়বো না, সেটা আমার ইচ্ছে। গট ইট?
– ইয়াহ! বাট তুমিই তো আমার বউ হবে তাই আরকি, তবে সমস্যা না তোমার যা খুশি পড়ো। বিয়ের পর আমার যখন তোমাকে শাড়িতে দেখতে ইচ্ছে করবে তখনই তুমি শাড়ি পড়বে।
– পাগল আপনি? কিসের বিয়ে? আমি আপনাকে বললাম আপনার বউকে গিয়ে শাড়ি পড়ার কথা বলুন। আর ওমনি আপনি আমাকে আবার বিরক্ত করতে লেগে গেলেন। শুনুন একটা কথা কান দিয়ে ভালো করে ঢুকিয়ে নিন। তাহি না কাউকে কখনো ভালোবেসেছে, আর না কাউকে কখনো বাসবে। তাই আমার পিছু ঘুরা ছেড়ে দিন। সেটা আপনার জন্য মঙ্গল হবে।
– কে কাকে ভালো বাসবে, আর কে কাকে ভালো বাসবে না, সেটাতো সময় বলে দিবে তাহু পাখি। তবে তুমিও আমাকে আমার মতো করে ভালোবাসবে, হয়তো আমার থেকেও বেশি। হয়তো দেরি হবে, কিন্তু তুমি একদিন আমাকে ঠিকই ভালোবাসবে। আমি তোমার শক্ত খোলসে আচ্ছাদিত মনে আমার জন্য ভালোবাসা জন্মিয়ে ছাড়বো। তুমিও আমার মতো পাগল হবে, উন্মাদ হবে। আমার প্রতি আসক্ত হবে। আমি তোমার কাছে খুবই অপ্রিয় একজন ব্যক্তি, তবে একদিন ঠিকই তোমার “প্রিয় আসক্তি’’ হবো। দেখে নিও। বলেই নিষ্প্রভ শপিংমল থেকে বেরিয়ে গেলো।
তাহি’র ও শপিং করা শেষ, তাই দীবাকে নিয়ে সেও বেরিয়ে গেলো শপিংমল থেকে।
শপিংমল থেকে বেরিয়ে দীবা বললো- তাহি চল ফুচকা খেয়ে আসি।
– আচ্ছা চল।
নিষ্প্রভ ও তীব্রের দিকে তাকিয়ে দীবা বলে- ভাইয়া চলো ফুচকা খাবো।
নিষ্প্রভ কোনো কথা না বলেই মাথা নাড়িয়ে সামনের ফুচকার স্টলের দিকে হাটা ধরলো। পিছু পিছু তীব্রও।
ফুচকা খেয়ে সবাই বাইকে চড়ে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিলো। দীবাকে ওর বাসার গেইটের সামনে নামিয়ে দিয়ে তাহি নিজের বাসার দিকে চলে গেলো। আর সেইদিকে তাকিয়ে নিষ্প্রভ দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো। এই মেয়েটা কবে যে তাকে বুঝবে, কবে ভালোবাসবে। রোজ স্বপ্নে কত-শত ভালোবাসাময় মুহুর্ত উপভোগ করে নিষ্প্রভ। তবে তা স্বপ্নে, আদোও বাস্তবে তা পূরণ হবে তো? হবে, হতেই হবে। এসব ভেবে ভেবেই নিষ্প্রভ বাসার ভিতরে ডুকে গেলো।
নিষ্প্রভের বাইক দিয়ে গিয়েছিলো, বিধায় নিজের বাইক নিষ্প্রভদের বাসার গেইটের সামনে রেখে গিয়েছিলো তীব্র। নিজের বাইকে উঠে স্টার্ট করে গেইট দিয়ে বেরুবে তখনই দীবা সামনে এসে দাড়ায়। বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে আছে তীব্র, বলে- কি জন্য এভাবে পথ আটকে দাড়িয়েছো?
– কিছু কথা বলতে,
– কি কথা, যা বলার তারাতারি বলো, তোমাকে সময় দিয়ে আমার মূল্যবান সময় নষ্ট করতে চাই না।
– বেশি সময় নষ্ট করবো না আপনার। যা বলতে চাইছিলাম- আমি আর আপনাকে কখনো বিরক্ত করবো না ইন্জিনিয়ার সাহবে।
– বাহ ভালো তো। আমার তখনকার বলা কথা গুলো তাহলে কাজে লেগেছে। তুমি বুঝতে পেরেছো এটাই অনেক।
– আপনার তখনকার বুঝানোর জন্য নয়। আমি সত্যিই আর কখনো আপনাকে বিরক্ত করবো না। আপনার সামনে আর আসবোনা। আজ থেকে দীবা নামে কেউ আর আপনাকে ভালোবাসি বলে বিরক্ত করবে না। আপনি তখন আমাকে যেই অপমান গুলো করেছেন, সেটা আমার আত্মসম্মানে লেগেছে। আর আমি আমার আত্নসম্মানের জন্য সবকিছু করতে পারি। আপনি আমার আপনার প্রতি দূর্বল হয়ে বেহায়াপনা করা দেখেছেন। এখন থেকে দীবা’র আত্নসম্মান বোধ দেখবেন। দোয়া করি আপনি যেনো আপনার মন মতো কাউকে পান, ভালো থাকবেন, আসি। – বলেই দীবা চলে গেলো।
দীবার যাওয়ার দিকেে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তীব্র, দীবার কথাগুলো কোথাও আঘাত করেছে তার। দীবা আর কখনো তাকে বিরক্ত করবেনা, সেটাতে তো তার খুশি হওয়া উচিত। কিন্তু তীব্র কেনো খুশি হতে পারছেনা, কোথাও চিনচিন ব্যাথা হচ্ছে। নিজের ভাবনাকে পাত্তা না দিয়ে বাইক স্টার্ট দিয়ে বেড়িয়ে যায় তীব্র। যদি পিছনে ফিরে থাকাতো তাহলে দেখতে পেতো, কেউ তার মুখ থেকে কিছু শুনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
চোখের জল মুছে নিলো দীবা, সে ভেবেছিলো তীব্র হয়তো কিছু বলবে, কিন্তু তাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে তীব্র চলে গেলো। একরোখা কন্ঠে দীবা বলে- আপনি একদিন ঠিকই আমাকে ভালোবাসবেন, আমার প্রেমে দিওয়ানা হবেন। পাগল উন্মাদ প্রেমিকের মতো আমার পিছনে ছুটবেন। কিন্তু সেদিন আপনি আমাকে পাবেন না। আপনার আফসোস হবে, আর সেই আফসোসে ভরা মুখটা আমি দেখে তৃপ্তি লাভ করবো।
নিজের ঘরে যাওয়ার আগে মায়ের ঘরে যায় দীবা, সেখানে নিষ্প্রভ ও ছিলো। দীবা গিয়ে তার মাকে বলে- মা ভাইয়া, আমি দেশে থাকবো না, আমি সুইজারল্যান্ড চলে যেতে চাই। বাকি পড়াশোনা সুইজারল্যান্ডেই করবো।
বিস্ময় নিয়ে নিষ্প্রভ বলে- কি বলছিস বোন, তুই সুইজারল্যান্ড যাবি? তুই ঠিক আছিস তো। মাকে ছেড়ে আমাকে ছেড়ে থাকতে পারবি তুই? আর তাহি, ওকে ছাড়া চলতে পারবি?
আমি কিছু জানিনা, আমি কিছু শুনতে চাইনা, আমি সুইজারল্যান্ড পড়াশুনা করবো, এটাই শেষ কথা। তোমরা ব্যবস্থা করো।
– আচ্ছা ঠিক আছে, সুইজারল্যান্ডই পড়াশোনা করিস, কিন্তু এখন না। ইন্টার শেষ কর, তারপর তুই সুইজারল্যান্ড যাস। কেউ আটকাবে না।
– ঠিক আছে, আর মাত্র দুই বছর, তারপরই আমি সুইজারল্যান্ড যাবো। তুমি সব ব্যবস্থা করে রেখো।
-, সে হয়ে যাবে, তুই কোনো চিন্তা করিস না, আমি বাবার সাথে কথা বলবো।
আচ্ছা বলে দীবা নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়।
রাতে,,
নাইম হাসান ও একজন ডাক্তার, তিনি অনেক রাত করে বাড়ি ফিরেন। বাড়ি ফিরে নিজের কন্যার সুইজারল্যান্ড যাওয়ার বিষয় জানতে পারেন। তৎক্ষনাৎ দীবাকে ডেকে পাঠালেন। দীবা এসে বাবার পাশে বসে। নাইম হাসান মেয়ের মাথায় হাত ভুলিয়ে দেন, তারপর বলেন – তোমাকে কেউ কিছু বলেছে মামনী? তুমি হঠাৎ করে সুইজারল্যান্ড পড়ার সিদ্ধান্ত নিলে কেনো?
– আমার কিছু হয়নি আব্বু, আমি সত্যিই সুইজারল্যান্ড পড়তে চাই।
– ঠিক আছে আম্মু, তাই হবে। আমার মামনী সুইজারল্যান্ডই পড়বে। তবে তুমি আগে ইন্টার শেষ করো। ততোদিনে আস্তে আস্তে তোমার ভিসা পাসপোর্ট সব রেডি করে নিবো চিন্তা করো না।
– ঠিক আছে আব্বু। তুমি খুব ভালো, লাভিউ আব্বু।
– তুমি ও আমার লক্ষী মেয়ে, কখনো আব্বুর কাছ থেকে কিছু লুকিয়ো না। আব্বু তো তোমার বন্ধুর মতো তাই না?
– হ্যা তুমি তো আমার বন্ধুই, তুমি ভাইয়া আম্মু। তিনজনই আমার বন্ধু। আর তাহি তো আছেই। বলেই পাশে বসা মা বাবা ও ভাইকে৷ জড়িয়ে ধরলো দীবা।
নিষ্প্রভ হেসে বোনের নাক টেনে দিলো। তারপর বললো- আমার লক্ষী বোনটা!
দীবা নিষ্প্রভের চুল টেনে দিয়ে বললো- আমার সোনা ভাইটা।
চলবে, ইনশাআল্লাহ