#প্রিয়_আসক্তি
#পর্বঃ০২
#মাহমুদা_আক্তার_তাহিনা(লেখিকা)
রাত সাড়ে এগারোটা, ডিনার শেষ করে নিজের রুমের বেলকনিতে গিটার নিয়ে বসে আছে তাহি। পোড়নে ব্লাক জিন্স ও শুভ্র টি-শার্ট, তাহি সমসময়ই জিন্স,শার্ট বা টি-শার্ট এসব পড়ে অব্যস্ত।আকাশের চাঁদের দিকে তাকিয়ে গিটারে টুং টাং আওয়াজ করছে সে। তাহি বরাবরই এমন, একা সময় কাটাতে ভালোবাসে। হঠাৎ ওর মনে হলো বেলকনিতে কিছুর শব্দ হচ্ছে, গিটার রেখে উঠে দাড়িয়ে বাহিরে বেলকনির নিচে তাকাতেই বিস্মিত হয়ে গেলো। বেলকনি দিয়ে মই দিয়ে উঠছে দীবা, নিচে নিষ্প্রভ দাড়িয়ে আছে।
বেলকনির কাছে এসে দীবা বলে- আরে তাকিয়ে কি দেখছিস আমাকে উঠা,বলেই হাত বাড়িয়ে দেয়।
তারাতারি দীবার হাত ধরে টেনে উঠালো তাহি।
কিছু বলবে তার আগেই দীবা বলে- যা বলার পরে বলিস আগে ভাইয়া কে উঠা, বেচারা সব কিছু একা একা নিয়ে উঠতে পারছে না।
আবারো বেলকনির নিচে তাকায় তাহি, ততোক্ষণে নিষ্প্রভ মই দিয়ে উঠে আসছে, তাহির কাছাকাছি এসেই হাতে থাকা ব্যাগ গুলো বাড়িয়ে দিয়ে বলে- এগুলো নাও শ্যামা পাখি, এগুলো রেখে হাত বাড়িয়ে দাও আমি উঠবো।
ব্যাগ গুলো সাইডে রেখে নিষ্প্রভের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয় তাহি,
তাহি’র বাড়ানো হাতের দিকে এক পলক তাকিয়ে মুচকি হেসে নিজের হাত রাখে নিষ্প্রভ, অতঃপর বেলকনিতে উঠে আসে।
নিজের রুমের মধ্যে এক কোণায় দাঁড়িয়ে সামনে তাকিয়ে ভাই-বোনের কান্ডকারখানা দেখছে তাহি। হঠাৎই দীবা ও নিষ্প্রভ একসাথে বলে উঠলো–
ওয়ান, টু, থ্রি, ফোর, ফাইভ____ হেপি বার্থডে তাহি পাখি!
চমকে উঠে সোজা হয়ে দাড়ালো তাহি, মানে আজ তার জন্মদিন ছিলো অথচ তার একদমই মনে ছিলো না। বিস্মিত দৃষ্টিতে সামনে দাঁড়ানো দুই মানব মানবির দিকে তাকিয়ে থাকে।
একে-অপরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে, তাহি’কে টেনে এনে নিজের সামনে দাঁড় করায় দীবা। সাথে নিয়ে আসা ব্যাগ থেকে একটি রেপিং পেপারে প্যাক করা বক্স এগিয়ে দেয়। তারপর জড়িয়ে ধরে বলে- হেপি বার্থডে মাই তাহি পাখি, জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা তোকে। অবশেষে তুই ষোলো বছরে পা রাখলি।
আই এম জাস্ট অবাক ইয়ার, আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম আজ আমার জন্মদিন। আমাকে তো তুই চমকে দিয়েছিস।
আমি না, তোকে চমকে দেওয়ার আইডিয়া টা ভাইয়ার ছিলো। সেই তো এতো রাতে আমাকে কাঁচা ঘুম থেকে উঠিয়ে নিয়ে এসেছে। আমি ভেবেছিলাম তোকে সকালে স্কুলে উইশ করে দিবো।
আড় চোখে নিষ্প্রভের দিকে তাকালো তাহি। নিষ্প্রভ তার দিকেই তাকিয়ে ছিলো। যার কারণে দুজনের চোখাচোখি হয়ে যায়, আর সেই সুযোগটা নিয়েই চোখ মারে নিষ্প্রভ। চোখ বড় বড় হয়ে মুখ হা করে এবার পূর্ণ দৃষ্টিতে নিষ্প্রভের দিকে তাকালো তাহি, আস্তে আস্তে বিড়বিড় করে বললো – “অসভ্য ডাক্তার”,
কিন্তু কথাটা দীবা ও নিষ্প্রভের দুজনেরই কানে এসেছে। দীবা তো ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসছে। আর নিষ্প্রভ সে তো ঠোঁট কামড়ে নিজের হাসি চেপে রেখেছে।
হাতে গিফট নিয়ে তাহি’র সামনে এসে দাড়ালো নিষ্প্রভ, গিফট বক্স বাড়িয়ে দিয়ে পরম আদুরে ভঙ্গিতে বললো- হেপি বার্থডে শ্যামা পাখি, তোমার ষোলো বছর পূর্ণ হয়েছে মানে আমার হওয়ার পথে তুমি এক দাপ এগিয়ে গিয়েছো।
কোনো কিছু না বলে চুপ করে নিষ্প্রভের হাত থেকে গিফট বক্সটি নেয় তাহি।
ততক্ষণে ব্যাগ থেকে কেক বের করে টেবিলে সাজিয়ে রেখেছে দীবা, অতঃপর কেক কাটা শেষ করে, পার্টি স্প্রে হাতে নেয় দীবা ও নিষ্প্রভ। বেচারি তাহি কি জানতো এদের মনে মনে এতো প্যাঁচ? সামনে ফিরবার সুযোগ হয়নি, দুই ভাই -বোন মিলে স্প্রে করে সাদা ভূত বানিয়ে দিয়েছে তাকে। অতঃপর আর তাদের পায় কে দুজনই বেলকনির দিকে ছুটে গেলো, দীবা আস্তে আস্তে নেমে গেছে ততোক্ষণে, নিষ্প্রভ মইয়ে পা রাখবে তখনই তাহি বেলকনিতে উপস্থিত হয়। নিষ্প্রভের দিকে এমন করে তাকিয়ে আছে যেন চোখ দিয়েই ভস্ম করে দিবে।
তাহি’র চাহনি দেখে নিষ্প্রভ মোটেও ভয় পেলোনা, বরং দূরত্ব গুছিয়ে তাহি’র কাছাকাছি এসে দাড়ালো, দু-হাতে তার শ্যাম পাখির মুখ মন্ডল ধরে বললো- আর কয়েকটা বছর, আমি পুরোপুরি ডাক্তার হয়ে যাই, তখন তোমাকে একেবারে নিজের করে নিবো। তুমি না চাইলেও জোর করে তুলে নিয়ে বিয়ে করবো। আসছি, ভালো থেকো, নিজের খেয়াল রেখো।
ক্ষুব্ধ হয়ে নিষ্প্রভের হাতের মাঝ থেকে নিজেকে মুক্ত করলো তাহি। রাগী স্বরে গম্ভীর কন্ঠে বললো- আপনার সাহস কি করে হয় আমাকে টাচ করার? কে হোন আপনি আমার? হুটহাট আমাকে এভাবে স্পর্শ করবেন না, নাহলে সেটা আপনার জন্য খুব খারাপ হবে। আর আপনি তো জানেন আমি কেমন?
হ্যাঁ জানি তুমি কেমন, তুমি রাগী,গম্ভীর, কম কথা বলো, রাস্তা- ঘাটে কোনো ছেলে ডিস্টার্ব করলে পেটানো আরম্ভ করো। তো? তাতে কি আমি তোমাকে ভয় পাই? আমার তো এই দস্যি রানী’কেই চাই। আমি তোমাকে ভালোবাসি, তোমার সবকিছু-কে ভালোবাসি। তুমি শুধু আমার, আমার একান্ত আসক্তি, আমার সবচেয়ে “প্রিয় আসক্তি”-!
আর দাড়ালো না নিষ্প্রভ বেলকনি দিয়ে যেভাবে এসেছিলো সেভাবে নিচে নেমে গেলো।
দুই ভাই বোন মিলে গেইট টপকিয়ে বাইকে চড়ে বাড়ির উদ্দেশ্য চলে গেলো।
রাগে শরীর জ্ব*লছে তাহি’র, একেতো তাকে ভূত বানিয়েছে, তার উপর বড়ো বড়ো ডায়লগ মেরে গেলো। রেগে দেয়ালে ঘুষি দিলো, কিন্তু পরে নিজেই হাতের যন্ত্র*নায় ছটপট করতে করতে অনেক কষ্টে ফ্রেশ হলো, ব্যান্ডেজ করে ব্যাথার ঔষধ খেয়ে, নিষ্প্রভ-কে মনে মনে কয়েকশো টা গালি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
_______
মাঝ রাত হয়ে গেছে, তীব্র বুয়েটের স্টুডেন্ট, ল্যাপটপ এ বেশি ক্লাস করা হয় তার, একটা প্রজেক্টের কাজ করতে করতে মাঝ রাত হয়ে গেছে, সাথে মাথা ব্যাথা ও করছে। সবকিছু গুছিয়ে ফ্রেশ হয়ে পেইন কিলার খেয়ে নিলো। বিছানায় শরীর এলানো মাত্রই চোখে রাজ্যের ঘুম ভর করলো, কিন্তু তার ঘুমের বারোটা বাজাতে বিকট শব্দে ফোন বেজে উঠলো।
বিরক্তি সূচক শব্দ করে ফোন হাতে তুলে নেয় তীব্র, স্কিন জ্বলজ্বল করছে “বন্ধুর বোন মানে আমারো বোন” নামটা দেখেই মনের অজান্তেই হেসে দিলো তীব্র। কল রিসিভ করে কানে ধরলো। কিন্তু কিছু বললো না,
ওপর পাশ থেকেও শুধু শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে, নীরবতা ভেঙে দীবা বললো- কেমন আছেন ইন্জিনিয়ার সাহবে? শরীর মন সব ভালো তো?
এতো রাতে কি এসব বলার জন্য ফোন করেছো? মানে আমাকে বিরক্ত না করলে তোমার ভালো লাগে না তাই না?
না, আপনাকে বিরক্ত না করলে আমার ঘুম আসে না। আর ঘুম না হলে আমি অসুস্থ হয়ে যাবো। নিজের ভালো তো পাগলেও বুঝে, আর আমি তো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ। তাই তো আপনাকে বিরক্ত করে তারপর ঘুমোতে যাই।
বজ্জাত মাইয়া, সামনে পাইলে থাবড়িয়ে সোজা করে দিতাম
আরে ঐ ফকি*ন্নির পোলা, তুই আমারে থাপ্পড় মারবি? একবার সামনে আয় দেইখা নিমু তোরে,
কিহ.! আমি ফকিন্নির পোলা? আচ্ছা তুমি তো বড়লোকের মাইয়া তাহলে তুমি এই ফকিন্নির পোলার সাথে কথা বলো কেনো, খুব তো ভালোবাসি বলে পিছু ঘুরো।
জিহ্ব কেটে তওবা তওবা করে নিজের গালে চড় মারে দীবা, সে এটা কি বললো, অপরাধী গলায় বলে- ইন্জিনিয়ার সাহবে স্যরি, আসলে আপনি তো জানেন আমি বেশি ড্রামা সিরিয়াল দেখি, তাই এমন করে বলেছি। প্লিজ আপনি মাইন্ড কইরেন না।
ফাজিল মেয়ে ফোন রাখো, আর কখনো আমাকে কল দিবে না তুমি। দিলে খুব খারাপ হয়ে যাবে,,
ওপাশ থেকে দীবা নেকা কান্নার অভিনয় করে বলে-
“অন্তরেতে দাগ লাগাইয়া রে বন্ধু আমার হইলানা,
কলিজা পুড়াইয়া গেলা রে ইন্জিনিয়ার সাহেব আমার রইলানা-!
মহা বিরক্তি নিয়ে কল কেটে দিলো তীব্র, মাথার মধ্যে বালিক চেপে ধরে শুয়ে পড়লো। এই মেয়ে তাকে শান্তিতে ঘুমোতে দিবে না।
চলবে,,,,,,
🖤