#সূচনা_পর্ব(১)
#প্রিয়_আসক্তি
#মাহমুদা_আক্তার_তাহিনা(লেখিকা)
“আমাকে ছেড়ে যাবেন না তীব্র ভাই, আমি আপনাকে না দেখে থাকতে পারিনা, আমার দম বন্ধ হয়ে আসে, প্লিজ যাবেন না,,,,
কাঁদতে কাদতে তীব্রের হাত ধরে উপরোক্ত কথাগুলো বললো দীবা।
ঝাড়া মেরে দীবার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো তীব্র। হাত উঠিয়ে দীবার মুখের সামনে আঙ্গুল নাড়িয়ে শাসিয়ে বললো- আর যদি কখনো আমাকে ডিস্টার্ব করার চেষ্টা করো তাহলে আমি নিষ্প্রভে’র কাছে তোমার নামে বিচার দিবো,
বন্ধুর বোন বলে বার বার তোমাকে রেহাই দিয়ে দিবো সেটা ভেবো না, তোমার জায়গায় অন্য কোনো মেয়ে হলে থাবড়িয়ে সোজা করে দিতাম। অসভ্য মেয়ে লজ্জা করেনা নিজের ভাইয়ের বন্ধুর দিকে নজর দাও, আবার দেখতে পেলেই বিরক্ত করো,
তুমি যাতে আমাকে আর বিরক্ত করতে না পারো, তার জন্য আমি চলে যাচ্ছি, অনেক দূরে,,,
কথাগুলো বলতে বলতে অন্ধকারে হারিয়ে যেতে লাগলো তীব্র, সেই দিকে হাত বাড়িয়ে কান্না করতে করতে দীবা বলে উঠলো – আমাকে ছেড়ে যাইয়েন না তীব্র ভাই, আমি শেষ হয়ে যাবো, আমি জীব*ন্ত লা*শ হয়ে যাবো, যাবেন না তীব্র ভাই, যাবেন না প্লিজ,,,! যাবেন না তীব্র ভাইইইই,,,,,
ধর-পড়িয়ে উঠে বসে দীবা, বিছানার পাশের টেবিল থেকে পানির গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে নেয়। বালিশের নিচ থেকে ফোন বের করে তীব্রের নাম্বারে কল দেয়।
______
গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তীব্র, বালিশের নিচ থেকে বিকট শব্দে বেজে উঠে তার ফোন। ঘুম ঘুম চোখে বিরক্তি নিয়ে বালিশের নিচ থেকে ফোন বের করে নাম্বার না দেখেই রিসিভ করে কানে ধরে, বিরক্তি নিয়ে বলে – কে?
ওপাশ থেকে সস্থির নিশ্বাস ছাড়ে দীবা, তীব্রের কন্ঠ শুনে এখন তার শান্তি লাগছে। কোনো কথা না বলেই কল কেটে দেয় সে। তারপর শান্তিতে চোখ বুজে নিয়ে ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে যায়।
এমন মাঝরাতে কে ফোন দিতে পারে ভেবে পাচ্ছে না তীব্র, তার উপর কোনো কথা না বলেই কল কেটে দিয়েছে, আশ্চর্য হয়ে মোবাইলের স্কিনে চোখ ভুলায়, স্কিনে জ্বলজ্বল করছে – “বন্ধুর বোন মানে আমারো বোন”-!
তীব্রের বুঝতে সময় লাগলো না কে কল দিয়েছিলো, কিন্তু সে বুঝতে পারছে না এতো রাতে দীবা তাকে কল দিলো কেনো? আর কল দিয়েছেই যখন কোনো কথা না বলেই আবার কল কেটে দিলো কেনো?
পর মুহূর্তেই নিজের উপর বিরক্ত হয় তীব্র, সে এই বাঁদর মেয়ে কে নিয়ে ভাবতে চায় না, এই মেয়ে যে হারে বজ্জাত, তার ফোনে লুকিয়ে নিজের নাম্বার ‘জানু’ লিখে সেভ করেছিলো দীবানি, দীবানি কে কিছু না বলে নিজেই নাম চেঞ্জ করে ‘বন্ধুর বোন মানে আমারো বোন’ লিখে সেভ করেছে। আর কিছু না ভেবে ফোন জায়গা মতো রেখে দিয়ে গভীর ঘুমে তলিয়ে যায় তীব্র।
___________________
দীবানি হাসান, নাইম হাসান ও দিয়া হাসানের একমাত্র মেয়ে, ভাই নিষ্প্রভ হাসানের আহ্লাদের পরী। সবাই শর্ট করে দীবা বলেই ডাকে।
____________________
“দীবাহহহহ” দীবা উঠ আর কতো ঘুমাবি, স্কুলে যাবি না, সময় তো হয়ে যাচ্ছে–
পাঁচ মিনিট ধরে রান্না ঘরে নাস্তা তৈরি করতে করতে ‘দীবা-কে ডেকে যাচ্ছেন “দিয়া হাসান”, অবশেষে আর না পেরে কু*ন্তি হাতে নিয়ে ছুটলেন নিজের একমাত্র কন্যার ঘরে।
ঘুমের মধ্যে মুখে শীতল কিছু অনুভব করতেই লাফিয়ে উঠে বসলো ‘দীবা’, হাত দিয়ে চোখ কচলিয়ে সারা ঘরে চোখ ভুলিয়ে কাঙ্ক্ষিত কাউকে না দেখে আবারো চোখ বুজে খুলে বিছানার ডান পাশ দিয়ে নামতে যাবে, তখনই কারো আ*গু*ন চাহনির স্বীকার হয়।
মা-কে কু*ন্তি হাতে নিয়ে নিজের সামনে দাড়িয়ে থাকতে দেখে মেকি হাসলো দীবা’ হাসি হাসি ভাব মুখে ফুটিয়ে বললো- কি হয়েছে মা, তুমি এভাবে কু*ন্তি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছো কেন, আর আমার মুখে পানিই বা কেন ঢেলেছো?,
কথাগুলো বলতে বলতেই বিছানা থেকে নেমে গিয়েছে দীবা, অতঃপর তাকে আর পায় কে, একছুটে ওয়াশরুমের ভিতরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো!
দীবার এসবে মুটেও বিস্মিত হলেন না দিয়া হাসান, তিনি জানেন তার মেয়ে এমনই, কিছুক্ষণ বিরবির করে আবার কিচেনে চলে গেলেন দিয়া হাসান।
ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে স্কুল ড্রেস পড়ে রেডি হয়ে নিলো দীবা, তারপর টিভিতে সিরিয়াল দেখায় মগ্ন তার মায়ের দিকে তাকিয়ে ‘আসছি মা’ বলে বেরিয়ে গেলো।
রিকশায় উঠে “তাহি”-কে কল দিয়ে বললো-আমি রিকশাতে আছি, তুই স্কুলের গেইটের সামনে দাড়িয়ে থাক।
_______
রিশকা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে তাহি’র দিকে এগিয়ে গেলো দীবা। গিয়েই জড়িয়ে ধরলো, যেন কতোদিন পরে তাদের দেখা।কিন্তু তাদের প্রতিদিনই দেখা হয়, আর মোবাইলে তো কথা বলা আছেই। স্মিত হেসে তাহি ও দীবা’র পিঠে হাত রাখলো।
কিছুক্ষণ পরে ছাড়িয়ে বললো- কি রে দীবা আজ এতো লেইট করলি কেনো? তুই জানিস তোর জন্য দাড়াতে দাড়াতে আমার পা ব্যথা হয়ে গেছে, এখন আমার পায়ের ব্যাথা সরানোর দায়িত্ব কে নিবে শুনি,
কানে হাত দিয়ে দীবা বললো- সরি আমার তাহি পাখি, আজ ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছে, আর তোর পায়ের ব্যাথা সরানোর জন্য আমি আমার ভাইকে কল করছি, ওয়েট-!
ফ্যাল ফ্যাল করে দীবা’র দিকে তাকিয়ে রয়েছে তাহি, আসলে সে বুঝতে চেষ্টা করছে দীবা ঠিক কি বলেছে। যখনই বুঝতে পারলো তখনই দাঁত কিড়মিড় করে চোখ পাকিয়ে তাকায়,
তাহি’র তাকানো দেখে মেকি হেসে দীবা বলে- আরে দুস্ত আমি তো মজা করেছিলাম, আর কখনো দেরি হবে না প্রমিস।
কোনো কথা না বলে স্কুলের গেইট দিয়ে ডুকে যায় তাহি। দীবা ও তাহি’র পিছনে পিছনে স্কুলে ডুকে।
*****
ক্লাস শেষ করে স্কুলের পাশের একটি ক্যাফেতে গিয়ে বসলো তাহি ও দীবা। তখনই দীবার ফোনে কল আসে, এ সময় কে কল দিয়েছে দেখার জন্য দীবা’র সাথে তাহি ও ফোনের দিকে তাকালো। স্কিনে ভাইয়া নাম দেখে চোখ ফিরিয়ে নেয়।
ভাইয়ের ফোন দেখে তৎক্ষনাৎ কল রিসিভ করে লাউডস্পিকারে দেয় দীবা, তারপর সালাম বিনিময় শেষ করে বলে- এই টাইমে তুই তো কল দিস না ভাই, আজ কি মনে করে এই সময়ে কল দিলি?
ওপাশ থেকে ‘নিষ্প্রভ বলে- আমি তোর স্কুলের সামনে দাড়িয়ে আছি, তোকে নিয়ে বাসায় যাবো, কোথায় তুই?
আরে আমি আর তাহি তো ক্যাফে তে এসেছি মাত্র, ফুচকা না খেয়ে যাবো না, তুই বরং বাসায় চলে যা,
ফুচকা খেতে হবে না আজ, জলদি আয় আমি দাড়িয়ে আছি,
আচ্ছা তুই ওয়েট কর আমি আসছি। কল কেটে দিয়ে তাহির দিকে তাকালো দীবা, ফোন লাউডে থাকাতে সব শুনতে পেয়েছে তাহি, কোনো কিছু না বলেই ক্যাফে থেকে বেরিয়ে যায়। দীবা ও তাহির পেছনে পেছনে যেতে লাগলো।
স্কুল গেইটের সামনে এসে ‘ নিষ্প্রভ’ কে দাড়িয়ে থাকতে দেখে, দীবা’র দিকে তাকিয়ে – আমি আসছি ফোনে কথা হবে- বলে দীবা কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বাড়ির উদ্দেশ্যে হেটে চলে যায় তাহি।
লম্বা শ্বাস ছেড়ে দীবা ভাইয়ের দিকে এগিয়ে যায়,
একটা কল আসায় ফোনে কথা বলতেছিলো নিষ্প্রভ, কথা বলা শেষ হলে নিজের পাশে তাকায়, দীবা’কে একা দেখে দীবা’র পিছনে চোখ ভুলায় ‘নিষ্প্রভ’, কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকে দেখতে না পেয়ে বোনের দিকে তাকায়।
ভাইয়ের তাকানো’র মানে বুঝতে পেরে দীবা বলে- তাহি চলে গেছে।
বোনের কথা শুনে মলিন হাসে নিষ্প্রভ, যাকে একনজর দেখার জন্য ছুটে এলো, সে’ই তার আসার খবর শুনে চলে গেলো।
ভাইয়ের ব্যথিত মুখের দিকে তাকালো দীবা, বললো- চল ভাইয়া, আর কতক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবি।
কিছু না বলে রিকশা দাঁড় করিয়ে বোনকে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হলো নিষ্প্রভ। যেতে যেতেই মনে মনে বলে নিষ্প্রভ- প্রেয়সী যতো ইগনোর করার করো, তবে একদিন এমন সময় আসবে যেদিন তুমিও আমার সাথে কথা বলার জন্য আমার সঙ্গ পাওয়ার জন্য, আমার মতোই ছটপট করবে। আমার প্রতি আসক্ত হবে, আমাকে হারানোর ভয়ে তোমার চোখ ছলছল করবে,
বর্তমানে আমি তোমার কাছে সবচেয়ে অপ্রিয় একজন ব্যক্তি, কিন্তু একদিন ঠিকই আমি তোমার কাছে তোমার “প্রিয় আসক্তি” হবো-!
চলবে,,,,,