প্রিয় অর্ধাঙ্গীনি পর্ব-০৭

0
507

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_৭
,
আকাশে বেশ মেঘ করেছে হয়ত আর কিছুক্ষণ পরেই ঝুম বৃষ্টি নামবে।চারপাশটা কেমন অন্ধকার হয়ে আসছে যেনো এই রাত নেমে আসবে। শশী যতটা পারছে দ্রুত হাঁটছে সমুদ্রের দেওয়া ঔষুধ টা বেশ কাজে দিয়েছে। সকাল হতেই কেমন সুস্থ অনুভব হচ্ছে তবে এখন যদি আবার বৃষ্টিতে ভেজা হয় তাহলে এবার আর রক্ষে নেই। শশী ও পাড়াতে গিয়েছিলো তার সখীর বাড়িতে কিন্তু আসতে আসতে যে মেঘ এমন ভয়ংকর রুপ ধারন করবে কে জানতো। রাস্তা ছেড়ে বাগানের পথ ধরলো শশী এই বাগানটা পেরোলেই তাদের পুকুরঘাট আর পুকুরের ওপাশেই ওদের বাড়ি। পাকা রাস্তা দিয়ে গেলে আরো দেরি হবে ততক্ষণে বৃষ্টি তে ভিজে কাক ভেজা হয়ে যাবে এই জন্য বাগানের পথই বেঁছে নিলো। বাগানের মাঝে ক্লাবঘর এখানে বসে সব ছেলেরা তাস খেলে আড্ডা দেয়। শশী ক্লাবঘর পাড় করে সামনে আসতেই পিছন থেকে কেউ ডাক দিলো। শশী একটু থেমে পিছনে তাকিয়ে দেখে শাহিন দাঁড়িয়ে আছে। পড়নের লুঙ্গি নিচে থেকে তুলে হাঁটুর উপর পযন্ত এনে গিট দিয়ে বাঁধা।

কিরে এই সময় তুই বাগান দিয়া কই যাস?

তোকে বলবো কেনো? তুই শুনে কি করবি আর খবরদার এভাবে আমাকে পিছন থেকে ডাকবি নাহ৷ কথাটা বলে শশী সামনে হাঁটতে গেলে শাহিন দৌড়ে ওর সামনে দাঁড়িয়ে বলল, আরে এতো রাগ করিস কেনো তোর আব্বা কে এতো তেলমারি কিন্তু তোর আব্বা কিছুই বোঝে নাহ। আমার আব্বা স্বয়ং চেয়ারম্যান তোর আব্বা কে আমার লগে তোর বিয়ের প্রস্তাব দিলো কিন্তু তোর আব্বা কি কয় আমার মতো এইট ফেল ছেলের সাথে নাকি তোরে বিয়ে দেবে নাহ।

আব্বা তো ঠিকি কইছে দেখ তোর সাথে এতো কথা বলার সময় নাই আমার রাস্তা ছাড় নয়ত আব্বারে বলে দিমু।

যা বল তোর আব্বা আমার কিছুই করতে পারবে নাহ দেখিস শেষে তোরে আমার সাথেই বিয়ে দিতে হবে।

হ্যাঁ স্বপ্ন দেখেন স্বপ্ন দেখা ভালো মন শরীল সব ভালো থাকে। কিন্তু শুধু রোমান্টিক স্বপ্ন না মাঝে মাঝে একটু মারামারি স্বপ্ন ও দেখিয়েন।

পিছন থেকে আসা পুরুষালী কন্ঠস্বর শুনে শাহিন আর শশী দুজনেই সেদিকে তাকালো। রোদ্র ছাতা হাতে দাঁড়িয়ে আছে, একটু এগিয়ে এসে ছাতাটা শশীর মাথার উপর ধরতেই শাহিন রোদ্রকে বলল, তুমি কেডা? ওইদিনও দেখলাম শশীর লগে মাঠে আবার এখানেও কে তুমি?

কাঁটা।

রোদ্রের কথাশুনে শাহিন কিছু বুঝতে না পেরে বলল, মানে?

মানে হলো আমি হলাম কাঁটা ওই যে গোলাপের গাছের যে কাঁটা থাকে ওটাই আমি তবে এই কাঁটা অন্যসব কাঁটার মতো সাধারন কোনো কাঁটা নয় এই কাঁটা বিষাক্ত তাই সাবধান।

এতো কথা বলার কি আছে বুঝলাম না তোকে বলেছি ওকে নিয়ে সোজা চলে আসবি তা না করে কিসব কথা বলছিস। আর ছাতাটা আমি তোকে দিয়েছি তুই নিজের মাথায় না ধরে ওর মাথায় ধরে রেখেছিস কেনো?

সমুদ্রের কথা শুনে রোদ্র চুপ হয়ে গেলো। ওতো নিজের মনে ছবি আঁকছিলো কিন্তু হঠাৎ করে এমন অসময়ে মেঘ করায় সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে যলদি করে বাড়ি ফিরে আসলো। কেবলি রুমে গিয়ে সবটা রেখে বিছানায় বসতেই তার বড় ভাইয়ের আগমন। সমুদ্র রুমে এসে ফোনের দিকে তাকিয়েই রোদ্রকে বলল, ওই মেয়েটা নাকি এখনো আসেনি মা বলল ওকে গিয়ে নিয়ে আসতে আমার এতো সময় নেই তুই গিয়ে নিয়ে আয়।

কোন মেয়ে ভাই তুমি কার কথা বলছো?

ওই যে সেই বাচ্চা মেয়েটা শশী না কি।

কি বলো ও এখনো বাড়ি আসেনি? কথাটা বলেই রোদ্র দৌড়ে বেরিয়ে গেলো ততক্ষণে বাইরে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। রোদ্র যেতেই সমুদ্র রুমের বাইরে আসতেই শাহানারা রেগে সমুদ্র কে বলল, তুই এখনো যাসনি মেয়েটা কেবল জ্বর থেকে উঠল এখন বৃষ্টি তে ভিজলে তো আবার জ্বর আসবে।

মা আমি রোদ্রকে পাঠিয়েছি ও গেছে চলে আসবে এখনি।

সেকি রোদ্র গিয়েছে ও ছাতা নিয়ে গিয়েছে? ওরতো আবার বৃষ্টির পানি সয্য হয় নাহ। তোরা দুইভাই আর কত আমাকে জ্বালাবি বলতো এখনি ছাতা নিয়ে যা বৃষ্টি জোরে আসবে।

সমুদ্রের এই মুহুর্তে শশীর উপর ভীষণ রাগ হচ্ছে যেনো হাতের কাছে পেলে একটা আছাড় মারলে শান্তি পেতো। মায়ের কাছ থেকে ছাতা নিয়ে বৃষ্টির মধ্যে বেরিয়ে গেলো। খানিক দূর যেতেই রোদ্রের সাথে দেখা ওকে ছাতাটা দিয়ে ফিরে আসতে গেলে কি মনে করে আবার থেমে গেলো একটু সামনে গিয়ে দেখলো সেদিন এর সেই ছেলেটার সাথে রোদ্র কথা বলছে।

ভাই ও শশীকে বিরক্ত করছিলো।

বিরক্ত করার মতো কাজ করলে বিরক্ত তো করবেই। ও জানতো এই সময়ে এখানে কোনো মানুষ থাকবে নাহ তারপরেও ও এই রাস্তা দিয়ে আসলো কেনো। কেউ সেধে বিপদে পড়তে চাইলে বিপদ তো তাকে ধরবেই।

সমুদ্রের এমন বেহুদা কথাশুনে শশীর রাগ উঠে গেলো। এতোক্ষণ শাহিন বিরক্ত করে মারছিলো এখন আসছে আরেকজন শশী রেগে কিছু বলতে যাবে তখনি সমুদ্র বা হাতে শশীর হাত ধরে টেনে ওখান থেকে চলে গেলো। রোদ্রও একবার শাহিন এর দিকে রেগে তাকিয়ে চলে গেলো। এতোটা সময় শাহিন চুপ করে ছিলো তবে সমুদ্র শশীর হাত ধরা দেখে শাহিন একা একা বলল, অনেক হয়েছে অপেক্ষা আর নয়। এখন দেখছি আমাকেই কিছু করতে হবে নয়ত পাখি অন্য বাসায় উড়াল দিবে।
,,,,,,,,,,
শত চেষ্টা করেও শাহানারা সমুদ্র কে আটকাতে পারলো নাহ। আজকে সকাল থেকেই আকাশ মেঘলা কাল থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে থামার কোনো নাম গন্ধ নেই। গ্রামে প্রচলিত একটা বাক্য আছে রবিবারে বৃষ্টি শুরু হলে নাকি তিনদিন ধরে বৃষ্টি হয়। আর মঙ্গলবারে বৃষ্টি শুরু হলে সাতদিন। তাই সবার মতে এই বৃষ্টি তিনদিনের আগে থামবে নাহ। কেবল তো একদিন হয়ছে, ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামছে সমুদ্র বাইরে তখনো গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। উঠানে কাঁদায় মাখামাখি পা দেওয়ার অবস্থা নেই এই জন্য বাড়ির ছেলেরা ইট পেতে দিয়েছে যেনো তার উপর দিয়ে হাঁটা যায়।

আর কয়েকটা দিন থেকে গেলে হতো নাহ বাবা এতো তাড়া কিসের তোর। সেইতো বাসায়ই যাবি এই অসুস্থ শরীলে একা থাকতে পারবি নাহ। আমি কতকরে বললাম আমিও যায় কিন্তু তুই তো তাও শুনলি নাহ।

মা এক কথা আর কতবার বলবে তুমি এখানে বেড়াতে এসেছো তোমার ইচ্ছে মতো তুমি সময় কাটাও। আমার ভালো লাগছে নাহ তাই চলে যাচ্ছি।

কথাটা বলে সমুদ্র সিঁড়ি বেঁয়ে নিচে নেমে এলো। দূরে মাইকে আসরের আযান দিচ্ছে বাইরে মেঘের জন্য মনে হচ্ছে যেনো রাত নেমে এসেছে। সমুদ্র সবাইকে বলে যখনি ইটের উপর পা দিয়ে সামনে আগাবে তখনি জোনাকি দৌড়ে বাড়িতে আসলো হাঁপাতে হাঁপাতে মাকে বলল, মা আপাকে তো কোথাও পাচ্ছি নাহ।

পারভিন উঠানে নেমে এসে জোনাকিকে রেগে বলল, তোকে তো বললামই ও পাশের বাড়ি গিয়েছে বই আনতে। তোকে ডাকতে পাঠালাম আর তুই বলছিস ওকে পাসছিস নাহ।

আমিতো ওই বাড়িতেই গেলাম পরে ওরা বলল আপা নাকি বই নিয়ে সেই কখন চলে গেছে। আমি ভাবলাম হয়ত বাগানের দিকে গেছে তাই আমিও ওদিকটাই খুঁজে এলাম। দেখো না কেমন ভিজে গেছি তবে বাগানে খালি আপার স্যান্ডেল টাই পেলাম আপাকে তো পেলাম নাহ।

ছোটো মেয়ের কথাশুনে পারভিন এর বুকটা কেমন কেঁপে উঠল। উঠানে কাঁদার মধ্যে বসে পড়ল ধপাস করে শাহানারা দৌড়ে পারভিন এর কাছে বসল। পারভিন কোনোমতে মেয়েকে বলল মোড়ের মাথায় ওর আব্বা আছে যেনো ডেকে নিয়ে আসে। বাড়িতে শুধু শশীর ছোটো কাকা ছিলো কথাটা শুনতেই দৌড়ে বেরিয়ে গেলো বাড়ির মেয়েকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে নাহ তার কি এখন বসে থাকার সময় আছে। রোদ্র সেই সকালের দিকে বেরিয়েছে শাহানারা কে বলে গেছে তার খুবি একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে সেটা সারতেই যাচ্ছে। সমুদ্র কিছু সময় দাঁড়িয়ে সবটা দেখেও কিছু বললো নাহ। শুধু মায়ের দিকে তাকালো শাহানারা তখন পারভিন এর মাথায় তেল পানি বসাতে ব্যাস্ত। মাথা ঘুরিয়ে সমুদ্রের দিকে তাকাতেই সমুদ্র ইশারায় বলল সে চলে যাচ্ছে। কথাটা বলেই সমুদ্র টানা পা ফেলে চলে গেলো। ছেলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হতাশ নিশ্বাস ফেললো শাহানারা। তার বড় ছেলে মোটেও এতোটা দায়িত্ব ঙ্গানহীন নয় তাহলে আজকে কি হলো এমন খবর পাওয়া সত্বেও কীভাবে যেতে পারলো।

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে