#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_৩৮
,
কলেজ থেকে এসে গোসল শেষ করে। ব্যালকনিতে বসে বই পড়ছিলাম। তখনি পিছন থেকে কেউ কথাটা বলল। শশী ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখে জয় দাঁড়িয়ে আছে। বইটা বন্ধ করে জয়ের দিকে ঘুরে বসে মিষ্টি হেসে শশী বলল।
“সত্যিতো বড় ভুল হয়ে গেলো। বাড়িতে এমন জোয়ান শক্ত সার্মথ্য একটা ছেলে থাকতে ওনার মতো আধবুড়ো লোককে বিয়ে করা আমার মোটেও ঠিক হয়নি। সত্যিই এখন আফসোস হচ্ছে আমার।
শশীর কথায় জয় বেশ আনন্দিত হলো। ভিতরে ভিতরে ভাব বেড়ে গেলো। বাম হাত সামনে থেকে ছোটো করে কাটা চুলের উপর দিয়ে নিয়ে পিছনে টানলো। অতঃপর ভাব নিয়ে বলল।
” কিন্তু কি আর করা যাবে বলো। বিয়ে তো হয়েই গেছে। এখন তুমি ভাইয়ার বউ হয়ে গেছো। সত্যি আমাকে পেয়েও হারালে। তবে বড় ভাইয়াও অনেক হ্যান্ডসাম যদিও আমার থেকে একটু কম তবে বডি আমার থেকেও বেশি। ভাবছি বড় হলে বড় ভাইয়ার মতো বডি বানাবো। আর মেজো ভাইয়ার মতো ছঁবি আঁকা শিখবো।
“আরেহ বাবা এতোকিছু? তাহলে তো অনেক মেহনত করতে হবে সাথে পড়াশোনা টাও করতে হবে।
শশীর এই কথায় জয় বেশ বিরক্ত হলো। রুমের ভিতর গিয়ে বিছানায় বসে বলল।
” উফফ ভাইয়ার মতো তুমিও শুধু পড়ার কথা বলো। আমি আরো আসলাম তোমার সাথে গল্প করতে।
শশী উঠে দাঁড়িয়ে রুমের মধ্যে গেলো। বইটা টেবিলে রেখে জয়ের পাশে বসে কিছু বলবে তখনি নিচে থেকে শাহানারা শশীকে ডাকলো।
,,,,,,,,,,,,,
গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষ করে সন্ধ্যার আগেই বেরিয়ে পড়ল সমুদ্র। বাড়িতে কাউকে কিছুই জানাইনি শুধু শাহানারাকে ফোন করে বলেছিলো ফিরতে রাত হতে পারে। মাঝ রাস্তায় গিয়ে ইমরান কেউ সাথে নিয়েছিলো। শহরের ইট সিমেন্ট এর দালান পেরিয়ে গ্রামের ভাঙা ভাঙা রাস্তায় আসতেই রাত হয়ে গেলো। রাস্তার একপাশে গাড়ি থামিয়ে ইমরান কে বলল গাড়িতে বসে থাকতে। কথামত ইমরান ও চোখ কান খোলা রেখে গাড়িতে বসে থাকল। সমুদ্র শশীকে ফোন করে বলে দেওয়ার পরে কথামত ক্লাবঘরের দিকে গেলো। তবে গ্রামে ঢুকেই ওরা আগে শাহীন এর খোঁজ নিয়েছে তবে শাহীন কে পাইনি। তারপর সমুদ্র ভাবলো এসেছে যখন শশীর সাথে দেখা করেই যাক। এই মনোভাব নিয়ে ক্লাবঘরের ওখানে যেতেই ভিতর থেকে কারো কথপোকথন শুনতে পেলো। সমুদ্র নিঃশব্দে বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে শুনতে লাগলো ভিতরে কারা কথা বলছে আর কি কথা বলছে।
“আব্বা তুমি এখানে আসছো কেনো এখন?
ছেলের কথায় বেশ বিরক্ত হলো চেয়ারম্যান। রাগ চেপে থেকে দাঁতে দাঁত চেপে বলল।
” তো আসবো নাহ। তুই জানিস সমুদ্র তোকে খুঁজতে এখানে এসেছে। আমার লোক ওর গাড়ি মোড়ের মাথায় দেখেছে। আর তুই এখানে বসে আছিস। মালবিকা আমাদের বলেছে সাবধানে থাকতে আর সমুদ্র যদি একবার জানতে পারে মালবিকার সাথে আমরাও জড়িত তাহলে কি হবে বুঝতে পারছিস?
“আরে আব্বা তুমি চিন্তা করো নাতো। আম্মা আমায় বলেছে এখানে লুকাতে তাইতো আমি এখানে এসেছে। আর তুমি এখন বাড়িত যাও আম্মা যদি জানে তাহলে রেগে যাবে।
” তুই আর তোর ওই আম্মা কি করছিস বলতো। আমারই ভুল হয়েছে ওই মালবিকা কে বিয়ে করে এখন প্রতিটা মিনিটে ভয়ে থাকতে হয়। না জানি কখন পুলিশের কাছে ধরা পড়ে যাই। এখন তো আবার ওই সমুদ্র ও সাথে যোগ হয়েছে। আচ্ছা শোন তুই সাবধানে থাকিস। আমি এখন যাচ্ছি। মালবিকা ফোন দিয়ে বলল গ্রামের রাস্তা দিয়ে নাকি নতুন মাল আসবে। শহরে ঢোকার মুখে পুলিশ পাহারায় এই জন্য আমাকে যেতে হবে। গ্রাম থেকে গাড়ি বের করতে হবে। তুই থাক।
কথাটা শেষ করে গামছাটা মাথার উপর দিয়ে বেরিয়ে গেলো চেয়ারম্যান। ওনার বেরোনোর আভাস পেয়ে সমুদ্র পাশে সরে গেলো। দরজা তখন হালকা ফাঁকা। ফাঁক দিয়ে সাবধানে উঁকি দিতেই সমুদ্র শাহীন কে দেখলো। শাহীন ফোন বের করে কাউকে কল দিলো।
“হ্যাঁ আম্মা সব আপনার কথামতোই হচ্ছে ।
” কি করতে হবে সেটা মনে আছে তো?
“একদম সব মনে আছে আম্মা। সমুদ্রের কাছে আমায় ইচ্ছে করে ধরা দিতে হবে। তারপর সমুদ্র যখন আমায় ধরবে আমি তখন না জানার অভিনয় করবো। আর সমুদ্র আমাকে ছেড়ে দেওয়ার পর আমি আমার মতো নিজের কাজ করবো। আর ও নিশ্চয়ই আমার উপর নজর রাখার জন্য কাউকে বলবে। আমি সমুদ্রের পুরো ধ্যান আমার উপর রাখবো আর আপনি সেই ফাঁকে আপনার কাজ করবেন। তাইতো আম্মা নাকি কোনো ভুল আছে।
” হুম সবি ঠিক আছে। আর তোমাকে এতো কথা কে বলতে বলল জানো না দেওয়াল এর ও কান আছে।
“আরে আম্মা চিন্তা নাই এখন এখানে কেউ আসবে নাহ। আর শুনলাম সমুদ্র নাকি আমারে খোঁজার জন্য গ্রামে আসছে। মোড়ের মাথায় ওর গাড়ি দাঁড় করানো।
” আচ্ছা ঠিক আছে আমি রাখছি।
কথাশেষ করে শাহীন ফোন কেটে দিলো। পুরো কথা শোনার পর সমুদ্র ক্লাবঘর থেকে সরে এলো। ঠোঁটের কোণে তখন বাঁকা হাসি। ঘাড় কাঁত করে বা হাতে ঘাড় ডলতে ডলতে সমুদ্র বলল
“তো এই ব্যাপার আচ্ছা ঠিক আছে। তোমরা তোমাদের কাজ করো আমি যেমন অজানা ছিলাম তেমনি থাকি।
কথাটা বলে সমুদ্র পকেট থেকে নিজের ফোন বের করে ইমরান কে কল দিলো। ধুপধাপ পা ফেলে সামনে যেতে যেতে বেশ জোরে জোরেই বলল।
” হ্যাঁ ইমরান শোনো তুমি চোখ কান খোলা রেখো যে করেই হোক ওই শাহীন কে ধরতে হবে। ওকে ধরলেই ওই মহিলার পরবর্তী প্লানটা কি সেটা জানতে পারবো। আমি শশীর সাথে দেখা করেই আসছি ওকে।
কথা শেষ করে সমুদ্র ফোন কেটে পকেটে রাখল।ও জানে শাহীন ওর সবকথা শুনেছে। শাহীন সমুদ্রের গলার আওয়াজ পেয়ে প্লান মতো ঘরের মধ্যে থেকে কাশির আওয়াজ করে। সমুদ্র ও না জানার অভিনয় করে কে ওখানে। কথাটা বলে ক্লাবঘরের দরজা খোলে ভিতরে যাই তারপর ওখানে শাহীন কে হঠাৎ দেখার মতো চমকানোর ভাব করে ওকে ধরে। শাহীন ও ভয় পাওয়ার অভিনয় করলে সমুদ্র ওকে ওখানেই বেঁধে শশীর সাথে দেখা করতে যায়।
এতোক্ষণ বসে বসে সবটা ভাবছিলো সমুদ্র। খানিক সময় পর নিজে নিজেই বলল।
“ইমরান এর কথা অনুযায়ী ওই মহিলা এখন বাংলাদেশ এ নেই। তাহলে ওনি কোথায় যেতে পারে? আর ওনার পরবর্তী প্ল্যানটাই বা কী? হুম সাবধান থাকতে হবে।
কথাগুলো ভেবে সমুদ্র নিজের ছোট ফোনটা বের করলো অতঃপর কাউকে কল দিয়ে বলল।
” হ্যাঁ আপনাকে একটা কাজ করতে হবে। কালকের মধ্যেই।
,,,,,,,,,,,
“ওসমান ভাই। পাকিস্তান এর সবচেয়ে বড় টেরোরিস্ট। যাকে পুলিশের পুরো টিম আর্মি সবাই খুঁজছে। আর আমি কিনা তারই সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে খুব লাকী মনে হচ্ছে
মালবিকার কথাশুনে সামনের লোকটা বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ওর সামনে এসে দাঁড়ালো। বাঁকা চোখে মালবিকা কে একবার পরোক্ষ করে নিলো। তারপর মালবিকার উদ্দেশ্য বলল।
” বাংলাদেশের মালবিকা মির্জা হঠাৎ আমার আস্তানায়। কি এমন দরকার পড়লো শুনি?
“এতোদিন ফোনেই সবকিছু হচ্ছিল। ভাবলাম এবার সামনাসামনি কিছু কথা বলি। কিন্তু আপনার এখানে আসা তো অনেক কঠিন।
মালবিকার কথাশুনে বিকট শব্দে হাসতে লাগলো ওসমান। পিছনে সরে গিয়ে টেবিলের উপর থেকে একটা ছোট বতল হাতে নিয়ে ডপারে করে তরল জাতীয় কিছু তুলল। অতঃপর বাম চোখের উপর থেকে কালো পট্টিটা সরায়ে গুনে গুনে তিন ফোঁটা ঔষধ সেখানে নিয়ে পুনরায় আগের জায়গায় বতলটা রাখতে রাখতে বলল।
” কি মনে হয় ওসমান এর সন্ধান পাওয়া এতোই সোজা? এই যে আপনি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি চেয়েছি বলেই আপনি এখানে আসতে পেরেছেন।
চোখের উপর থেকে কালো পট্টি টা সরাতেই কাটা চোখটা বেরিয়ে আসলো। সেটা দেখেই গায়ের মধ্যে কেমন একটা করে উঠল মালবিকার তবে সেটা পাত্তা না দিয়ে বলল।
“তাহলে কাজের কথায় আসা যাক?
” হ্যাঁ চলুন তাহলে বসে কথা বলি।
,,,,,,,,,,,,,,,,,
গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে শশী। সমুদ্রের সাথে কথা হয়নি আজকেও মনটা ভীষণই খারাপ তখনি জামশেদ আসলো বলল শশীকে অনেকদিন দেখেনি এই জন্য ওকে নিয়ে যাবে। আর সমুদ্র ও এখানে নেই তাই কয়েকদিন গ্রামে থেকে আসলে ভালো লাগত। কিন্তু শশীর যাওয়ার একদম ইচ্ছে নেই। এখানে সমুদ্র না থাকলেও ওর সৃতি আছে যা সমুদ্রের অভাব পূরণ না করতে পারলেও কিছুটা শান্তি দেয়। আর ওখানে সেটাও নেই। আবার সমুদ্র কে না বলে কীভাবে যাবে ও। কিন্তু বাবা আর শাশুড়ির কথার উপর কোনো কথা বলতে পারলো নাহ। অগত্যা ব্যাগ গুছিয়ে যেতেই হলো। তবে জয় এর পরিক্ষা শেষ হলে শাহানারাও যাবে গিয়ে কয়দিন থেকে শশীকে নিয়ে আবার ফিরে আসবে। এসব ভাবতে ভাবতে শশী ফোন বের করে ওয়েল পেপারে থাকা সমুদ্রের ছবির দিকে তাকিয়ে বলল।
“আপনি কোথায় সমুদ্র। কবে আসবেন। আর কতদিন। এতো দূরত্ব সয্য করা সত্যি বড় কঠিন।
#চলবে?
#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_৩৯
,
“আসলে তুমি করতে চাইছো টা কী? তোমার প্ল্যানটা কি?
“খুব সহজ। একটা নিবিড় পরিকল্পনা। অতঃপর ভূম।
কথাট বলে মালবিকা বাঁকা হাসলো। সাথে ওসমান ও। হাতের মদের গ্লাসটা টি টেবিলের উপর রেখে চেয়ারে হেলান দিয়ে বলল ওসমান।
“এতো পরিকল্পনা কেনো ওর বাপ চাচার মতো ওকেও উড়িয়ে দেও কাহিনি খতম।
“না ওকে এতোটা হালকা করে নিও নাহ। আসলে বাঘের বাচ্চা তো তাই বাপ কাকার থেকেও একটু বেশিই চালাক হয়েছে। চতুর বুদ্ধি ওর আমাদের একটা ভুল পদক্ষেপ পুরো খেলাটা ঘুরিয়ে দিতে পারে।
” হুম তাহলে তুমি আমাকে কী করতে বলছো?
“বলবো সব বলবো তবে এখন নয় সঠিক সময়ে। তোমাকে শুধু সব সময় প্রস্তুত থাকতে হবে।
” সে না হয় থকলাম। কিন্তু বিনিময়ে আমি কি পাবো?
ওসমান এর কথায় মালবিকা বাঁকা হেসে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। চেয়ারের হাতলে দুহাত রেখে কিছুটা ঝুঁকে ওসমান এর দিকে তাকিয়ে বলল।
“তোমার যেটা চাই সেটা তুমি কাজ শেষে ঠিক পেয়ে যাবে।
কথাটা বলে মালবিকা ওসমান এর দিকে তাকালো। ও ঝুঁকে থাকায় ওর বুঁকের খাঁজটা দূশ্যমান। আর সেখানেই তাকিয়ে আছে ওসমান। মালবিকা সেই দৃষ্টি অনুসরণ করে নিজেও তাকালো অতঃপর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল।
” তবে টাকার সাথে সাথে তোমার জন্য আমি আরো একটি স্পেশাল জিনিস রেখেছি।
“কিহ সেটা?
মালবিকা টি টেবিল এর উপর থেকে নিজের ফোনটা তুলে নিলো। কিছুক্ষণ ফোনে কিছু একটা করে পুনরায় ফোনটা টি টেবিলে রেখে ওসমান এর দিকে সরিয়ে দিয়ে বলল।
” এটা তোমার।
ওসমান মালবিকার ফোনটা হাতে তুলে নিয়ে চোখের সামনে ধরতেই চোখমুখ জ্বলজ্বল করে উঠলো। কেমন লোলুপ দৃষ্টিতে ফোনের স্কিনে তাকিয়ে আছে। বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে ফোনের স্কিনটা আলতো করে স্পর্শ করল।সেদিকে তাকিয়ে থেকে মালবিকা কে বলল।
“তোমার ডিল পাক্কা। কিন্তু এটাকে আমার চাই। ফোনেই যদি এতোটা মহনীয় হয় তাহলে সামনাসামনি কতটা সুন্দর।
ওসমান এর হাত থেকে এক টানে ফোনটা নিজের কাছে নিলো মালবিকা। অতঃপর সেও ফোনের দিকে তাকিয়ে বলল।
” শশী সমুদ্রের একমাত্র দুর্বলতা। ওর স্ত্রী। কিন্তু এটাকে পেতে হলে তোমায় আগে সমুদ্র পাড় করতে হবে। আকাশের চাঁদ এর সংস্পর্শ পেতে হলে যেমন তোমাকে হাজার হাজার মাইল, আলোকবর্ষ পাড় করতে হবে। তেমনি এই চাঁদকে পেতেও তোমায় বিশাল এক সমুদ্র পাড় করতে হবে। তরপরেও যদি হয় সমুদ্র টা ভীষণ উত্তাল।
মালবিকার কথাশুনে ওসমান বাঁকা হেসে বলল।
“গোলাপ ছিঁড়তে হলে তো কাঁটাকে আগে উপ্রে ফেলতে হয়। মিষ্টি জিনিস পেতে একটু না হয় ঝাল এর সম্মুখীন হলাম। আর তাছাড়া অনায়াসে কোনো কিছু পেতে আমারও ভালো লাগে নাহ। সমুদ্র যতই উত্তাল আর গহীন হোক না কেনো। সেটা পেরিয়ে এই চাঁদ কে আমি কলুষিত করবোই। কারণ চাঁদ কলংকিত না হলে মানায় নাহ।
,,,,,,,,,,,,,
নিজের কাজ শেষ করে অনেক আগেই রুমে চলে এসেছে রোদ্র। রুমে ঢুকে আলো জ্বালিয়ে ভিতরে গেলো। সামনের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে পাতলা কাপড় টা সরিয়ে দিতেই ভিতর থেকে শশীর ছবিটা বেরিয়ে আসলো। যেটা রোদ্র অনেক ভালোবেসে এঁকেছিলো। বাঁমহাত টা বাড়িয়ে ছবিটা ছুঁতে গিয়ে হাত মুটো করে আবার ফিরিয়ে নিলো। শশীর হাস্যোজ্জ্বল মুখের দিকে তাকিয়ে বলল।
“তোমাকে ছোঁয়ার অধিকার এখন আর আমার নেই। তুমি কত নিষ্ঠুর গো। আমার ভিতরটা জ্বালিয়ে কি সুন্দর করে হাসতেছো। এই তোমার একটুও কষ্ট হয় নাহ? এভাবে আমাকে পুড়িয়ে কি সুখ পাচ্ছো তুমি মেয়ে। সত্যিই মেয়ে তুমি নির্দয়, হৃদয়হীনা।
“এক পাক্ষিক ভালোবাসায় কষ্ট ছাড়া কিছুই পাওয়া যায় নাহ। এতো কষ্ট না পেয়ে কেনো ভুলে যাচ্ছো নাহ তাকে। কেনো এভাবে নিজেকে তিলে তিলে শেষ করছো।
কারো কথার আওয়াজ শুনে রোদ্র পিছনে তাকালো। লিজা দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। রোদ্র বৃদ্ধা আঙুলে নিজের অবাধ্য চোখের পানিটা মুছে নিষ্প্রাণ হাসি দিয়ে লিজার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল।
” আরে তুমি এই সময় কি মনে করে?
“কেনো বন্ধুর বাসায় আসতে পারি না বুঝি?
” পারবে না কেনো অবশ্যই পারো। আর এখানে আসার সবচেয়ে বেশি তোমার অধিকার আছে। প্রথম যখন এখানে এই অচেনা শহরে এসেছিলাম। তখন তো তুমিই বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়ে আমায় তোমার চোখে এই অচেনা শহরের সাথে পরিচয় করিয়েছো।
রোদ্রের কথাশুনে লিজা দরজা ছেড়ে ভিতরে এসে বেডে বসে বলল।
“ওহ প্লিজ এইসব কথা বলো নাহ তো। এসব শুনতে ভালো লাগে নাহ আমার।
” আচ্ছা ঠিক আছে বলবো নাহ। এখন বলো কি খাবে।
“কিচ্ছু খাবো নাহ আমি। এটা বলো জোসেফ এর সাথে তোমার কথা হয়েছে?
লিজার কথায় রোদ্র লিজার দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো। আগের ন্যায় শশীর ছবিটায় পাতলা কাপড়টা দিতে দিতে ভাবলো। ও জানে লিজা জোসেফ কে পছন্দ করে। প্রথম যেদিন জোসেফ এর সাথে লিজাকে পরিচয় করায়ে দিয়েছে সেদিনই লিজার চোখে জোসেফ এর জন্য কিছু একটা দেখেছিলো ও। প্রেমিক তো তাই অন্য কারো মনের কথা চোখের দ্বারা পড়ে ফেলতে পারে। কিন্তু জোসেফ? ওর মনে লিজার জন্য তেমন কিছুই দেখেনি। শুধু সাধারণ আর সবার মতোই নিয়েছে লিজাকে। হয়ত লিজার অবস্থা ও খুব শীঘ্রই তার মতোই হবে। কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো এটাই যে রোদ্র চেয়েও কিছু করতে পারবে নাহ। ও কীভাবে লিজাকে বলবে। লিজা তুমি জোসেফ কে ভালোবাসা বন্ধ করে দেও।
,,,,,,,,,,,
বিছানার উপর শশীর ফোনটা সমানে বেজে চলেছে। কিন্তু ধরার নামগন্ধ নেই। বাজতে বাজতে বন্ধ হয়ে গেলে পুনরায় আবার বেজে উঠছে। জোনাকি কোনো একটা কাজে রুমে এসেছিলো শশীর ফোনটা এভাবে বাজতে দেখে হাতে নিয়ে দৌড়ে নিচে নেমে গেলো। শশী তখন উঠানে পেতে রাখা বাঁশের চড়াট এর উপর বসে পিঠা খেতে ব্যাস্ত। শীতের সকাল। সকাল বললে ভুল হবে বেশ বেলা হয়েছে কিন্তু কুয়াশার কারণে সূর্যের টিকিটাও দেখা যাচ্ছে নাহ। এই জন্য আপাতত রোদের ও কোনো হদিস নাই। রান্নাঘরে পারভীন শাহানারাসহ সবাই গল্প করছে আর পিঠা বানাচ্ছে। শশী নিজের সোয়েটার আরো একটু টেনে গলা ঢেকে সামনে বসা জয় এর টুপিটা টেনে কান ঢাকতে ঢাকতে বলল।
“আরে এভাবে কান বের করে রেখেছো কেনো জয়৷ ঠান্ডা লাগবে তো।
শশীর কথায় জয় এর তেমন হেলদোল দেখা গেলো নাহ। সে এখন পিঠা খেতে ব্যাস্ত। বাঁ হাতে লাল হওয়া ডাকটা ডলে আবার খেতে শুরু করলো। দুইদিন আগেই ও শাহানারার সাথে এখানে এসেছে।শহরের তুলনায় গ্রামে একটু বেশিই শীত এই জন্য আসতে না আসতেই ঠান্ডা লেগে গেছে। শশী জয়ের থেকে সরে একটা পিঠা নিয়ে কাঁমড় দিতেই জোনাকি দৌড়ে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল।
” এই আপা তোর ফোন বাজতেছে সেই কখন থেকে আমি না গেলে তো ঠিকিই পেতাম নাহ।
জোনাকির কথাশুনে শশী তড়িঘড়ি করে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে সমুদ্র কল দিয়েছে। শশী হাতের পিঠাটা রেখে ফোনটা রিসিভ করে কানে চেপে বলল।
“একটু দাঁড়ান।
কথাটা বলে চড়াট থেকে নেমে স্যান্ডেল পায়ে দিয়ে নিজের রুমের দিকেই চলে গেলো। জোনাকি শশীর জায়গায় বসতে বসতে জয়ের দিকে তাকিয়ে বলল।
” এই তোমার নাক এতো লাল কেনো? কেউ ঘুষি মেরেছে বুঝি?
“তুমি সত্যিই বোকা৷ আরে কারো সাহস আছে নাকি আমাকে মারার। আসলে আমার ঠান্ডা লেগেছে তো তাই এমন লাল হয়েছে।
জয়ের কথায় জোনাকি নিজের নাকে হাত রেখে আবার জয়ের দিকে তাকিয়ে বলল।
” ঠান্ডাতো আমারও লাগে কই আমার নাকতো এমন লাল হয় নাহ।
“তোমার নাক লাল হবে কেনো। আসলে তুমি কালো তো এই জন্য তোমার নাক লাল হয় নাহ। আর আমি ফর্সা তো এই জন্য একটু ধরলেই আমার নাক লাল হয়ে যায়।
জয়ের কথায় জোনাকির ভীষণ রাগ হলো। ছেলেটা ওকে কালো বলেছে এই জন্য৷ কই আর সবাইতো ওকে কালো বলে নাহ৷ ওর মাও তো বলে শশী লাল ফর্সা আর জোনাকি উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ। শশীর থেকে সুন্দর৷ শুধু ফর্সা হলেই সুন্দর হয় নাকি। জয় জোনাকির দিকে তাকিয়ে দেখে জোনাকি রাগ করে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। জয় এর মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চাপলো জোনাকির দিকে তাকিয়ে বলল।
” তবে যদি তুমি চাও তাহলে আমি তোমার নাক লাল করে দিতে পারি।
“সত্যি? কিন্তু কীভাবে?
” ম্যাজিক করে।
জয়ের কথায় এবার জোনাকি মুখ বাঁকিয়ে বললো।
“আমাকে বোঁকা পেয়েছো? তুমি বলবে আর আমি বিশ্বাস করে নেবো? ওসব জাদু ফাদু কিছু নাহ। আব্বা আমায় বলেছে ওসব জাদু সত্যি হয় নাহ৷ আসলে ওসব আমাদের চোখের ভুল।
” আমি সত্যি বলছি। আচ্ছা আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে নাতো তোমার? ঠিক আছে আমার দিকে সরে আসো এখনি তেমার নাক লাল করে দিচ্ছি।
জয়ের কথায় জোনাকি সরল মনে জয়ের দিকে গেলো। তবে ও জানে এসব জাদু করে কখনোই নাক লাল করা যায় নাহ। তবুও জয় কি ম্যাজিক দেখাতে চাই সেটা দেখার জন্য গেলো। জোনাকি সরে আসতেই জয় ওকে চোখ বন্ধ করতে বলল। জয়ের কথামত জোনাকি চোখ বন্ধ করতেই। জয় জোনাকি নাকের মাথায় জোরে সরে একটা কাঁমড় দিয়ে পিঠার বাসন নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেলো৷ কাঁমড় দেওয়ার সাথে সাথে জোনাকি চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে নাক ধরে বলল।
“ওমা গো আব্বাগো আমার নাকে কাঁমড় দিয়ে রক্ত বার করে দিলো। জ্বলে গেলো গো।
,,,,,,,,,,,,
” কোথায় থাকো ফোন রেখে? কতবার কল দিয়েছি?
লেপটা পায়ের উপরে টেনে নিয়ে খাটের সাথে হেলান দিয়ে বেশ আরাম করে বসল শশী।
“মা পিঠা বানাচ্ছে বাইরে বসে ওটাই খাচ্ছিলাম।
“কোনো সম্যসা হচ্ছে নাতো?
” নাহ।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে শশী সমুদ্রের উদ্দেশ্য বলল।
“আপনি কবে আসবেন?
শশীর কথায় সমুদ্রের ঠোঁটের কোনে বাঁকা হাসি ফুটে উঠল। দুষ্টুমি ভরা কন্ঠে বলল।
“কেনো রাতে কি শীত বেশি লাগছে?
সমুদ্রের কথার মানে বুঝে পেরে শশীর গাল লাল হয়ে গেলো। লজ্জায় বেশি কিছু বলল নাহ আর। লোকটার মুখ সত্যি বড়ই অবাধ্য। মুখ খুললেই যেনো কথা নয় এক একটা বোম বের হয়।
,,,,,,,,,,
চলে গেছে আরো কয়েকটা মাস। সমুদ্রের যাওয়ার পর অনেক গুলো মাস পেরিয়ে গেছে। এই কয়মাসে খুব কমই কথা হয়েছে ওদের। মাঝে মাঝে তো কথাও হতো নাহ। সমুদ্র এক এক সময় এক এক জায়গায় থাকতো। যার দরুন নেটওয়ার্ক এর সম্যসায় পড়তে হতো। এর জন্য শশীর সমুদ্রের উপর ভীষণ অভিমান জমেছে। আজ প্রায় পাঁচদিন মতো কথা হয় নাহ। শীত পেরিয়ে গেছে। দিনের বেলায় গরম লাগলেও রাতের বেলা হালকা ঠান্ডার রেশ এখনো যেনো রয়ে গেছে। জোনাকির স্কুল বন্ধ তাই ছুটি কাটাতে শশীর কাছে এসেছে। বিছানায় উপর হয়ে শুয়ে আছে শশী। চোখে হালকা ঘুম ঘুম ভাব। হঠাৎ দরজা বন্ধের শব্দে হালকা ঘুম ভাব টাও কেটে গেলো। ওভাবে থেকেই ঘুম জড়ানো গলায় বলল।
“জোনাকি নিচে গিয়ে জয়ের সাথে খেলাকর। আমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে বিরক্ত করিস নাহ।
কথাটা বলেই পুনরায় চোখ বন্ধ করে নিলো। কিছুক্ষণ অতিবাহিত হওয়ার পর কমরে শক্ত হাতের নরম ছোঁয়া পেতেই শশীর ঘুম উড়ে গেলো। চমকে হাতটাকে ধরে ধরফরিয়ে উঠে বসে পিছনে তাকালো।
#চলবে?