প্রিয় অর্ধাঙ্গীনি পর্ব-৩৩

0
618

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_৩৩
,
পেরিয়ে গেছে আরো এক সপ্তাহ। রোদ্র নিজের শেষ শার্টটা ব্যাগে রেখে পাশে তাকালো। সেখানে শাহানারা বসে কান্না করছে। রোদ্র মুচকি হেসে মায়ের পাশে বসে কাঁধে মাথা রেখে বলল। আর কত কাঁদবে আবার আসবো তো আমি। এমন ভাবে কান্না করছো যেনো আমি সারাজীবন এর জন্য চলে যাচ্ছি।

তুই তো এভাবেই বলিস আগে বাবা হ তারপর বুঝবি সন্তান কাছে নাহ থাকলে কেমন লাগে।

সেটা কি আর কখনো সম্ভব মা?

এটা কী ধরনের কথা রোদ্র আর কখনো এমন কথা বলবি নাহ। এই বার যা তবে খুব শীঘ্রই ফিরে আসবি আমি সুন্দর একটা মেয়ে দেখে তোর বউ করে আনবো।

মায়ের কথায় বেশ শব্দ করে হাসলো রোদ্র। তুমি যে কি বলো না মা। তোমার কী সত্যিই মনে হয় আমি আবার নতুন করে কোনো সম্পর্কে জড়াতে পারবো। ভালো তো একজন কেই বাসা যায়। এক মনে আর কয়জন কে জায়গা দিতে বলো তুমি মা। আর তাছাড়া যাকে ভালোই বাসি না তাকে বিয়ে কেনো করবো। মনে একজন কে রেখে আরেকজন এর সাথে কি আদেও সংসার করা যায়? এতে তো তাকে ঠকানো হবে।

তাহলে কি তুই সারা জীবন এভাবেই একা পাড় করে দেওয়ার চিন্তা করছিস?

এখন তো আপাতত এটাই ঠিক করেছি। তবে সামনে কি হবে সেটা বলতে পারছি নাহ।
,,,,,,,,,,,,,,
আচ্ছা আমায় একটা কথা বলুন তো হঠাৎ করে রোদ্র ভাইয়ার কি হলো?

বিছানায় বসে কথাটা বলল শশী। সমুদ্র আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শার্ট পড়তে পড়তে শশীর কথা শুনে বোতাম লাগাতে লাগাতে বলল। হঠাৎ এমন মনে হওয়ার কারণ?

না এমনিতেই। প্রথম যেদিন ওনার সাথে আমার পরিচয় হলো সেদিন থেকে আজ পযন্ত ওনার সাথে কোনো মিল পাচ্ছি নাহ। কেমন যেনো আমাকে এড়িয়ে চলে আগের মতো হাসায় নাহ। কথা কম বলে। আবার আজকে কোনো কথাবার্তা ছাড়াই চলে যাচ্ছে। আচ্ছা ওনার কী হয়েছে আপনি কি কিছু জানেন?

চুলটা আঁচড়িয়ে নিজেকে আবার দেখে নিয়ে শশীর দিকে এগিয়ে গিয়ে শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে বলল। ওর কি হয়েছে সেটা ওই জানে। আর তোমাকে এতো ভাবতে হবে নাহ এসব নিয়ে। এই কদিন এ একদম কলেজে যাওনি। পড়াশোনা নিয়ে ফাঁকি আমি একদম পছন্দ করি নাহ।

কথাটা বলেই সমুদ্র রুম থেকে বেরিয়ে যাবে তখনি শশী বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের পিছে পিছে হাঁটতে হাঁটতে বলল। কোথায় যাচ্ছেন? আর কখন আসবেন?

কথাগুলো বলছিলো আর সমুদ্রের পিছনে হাঁটছিলো। সমুদ্র দরজার সামনে গিয়ে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়তেই শশী ওর পিঠের সাথে ধাক্কা খেলো। সমুদ্র পিছনে তাকিয়ে দেখে শশী নিজের নাকে হাত দিয়ে ডলতেছে। এমন অবস্থায় সমুদ্রের কাছে শশীকে বেশ লাগছে। ছোট খাটো গড়নের চিকন শরীলে শাড়ি পেঁচানো। লম্বা চুলগুলো খোঁপায় মুড়িয়ে রাখা। ছোটো ছোটো কিছু চুল আবার কপাল ছেঁয়ে গাল বেয়ে নেমে গেছে। শশী নাক ডলতে ডলতে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে খানিক রাগী সুরে বলল। এভাবে কেউ পিছনে ঘোরে? উফ আমার নাকটা একদম শেষ করে দিছে।

শশীর কথায় সমুদ্র পাত্তা না দিয়ে। এক পা এগিয়ে নিজেদের মাঝে থাকা সামান্য দুরত্ব ঘুচিয়ে বাঁ হাতে শশীর কোমর জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে ফিসফিস করে বলল। তাহলে থেকে যাই?

শশী প্রথমে চোখ বড়বড় করে তাকালেও সমুদ্রের কাজে আর কথায় লজ্জায় মাথা নিচু করে নিলো। সমুদ্র ডান হাত শশীর থুতনিতে রেখে মাথা উঁচু করে মুখে ফুঁ দিলো। ঠান্ডা বাসাত লাগতেই চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলো শশী। চুলগুলোও মুখের থেকে সরে একপাশে পড়ে রইলো। সমুদ্র নিজের মুখটা শশীর মুখের আরো নিকটে নিয়ে গিয়ে কপালে নিজের ঠোঁট জোড়া ছোঁয়ালো। অতঃপর বন্ধ চোখের পাতায়। দুগালে ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে লাল হয়ে যাওয়া নাকের মাথার উপরের ঠোঁট ছোঁয়ালো। তারপর আস্তে করে মাথাটা নিচে নামিয়ে শশীর নরম ঠোঁটের মধ্যে নিজের শুষ্ক ঠোঁট জোড়া আস্তে করে চালান করে দিলো। খানিক সময় অতিবাহিত হওয়ার পর সমুদ্র শশীকে ছেড়ে দিলো। বৃদ্ধা আঙুলে নিজের ঠোঁট জোড়া মুছে শশীর দিকে তাকালো৷ শশী তখনো মাথা নিচু করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। সমুদ্র শশীর থেকে চোখ সরিয়ে হালকা কেশে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বলল।

রোদ্রকে এয়ারপোর্টে নামিয়ে দিয়ে একটা কাজে যাবো আসতে রাত হতে পারে। সাবধানে থেকো আর জয়ের কথাশুনে ওর সাথে বাইরে বেরিয়ে যেও না।

কথাগুলো বলে সমুদ্র রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। সমুদ্র বেরিয়ে যেতেই শশী সেদিকে তাকিয়ে দৌড়ে রুমের ভিতরে চলে গেলো।
,,,,,,,,,,,,
সামনের দিকে তাকিয়ে একমনে গাড়ি চালাচ্ছে সমুদ্র। রোদ্র বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। কেউ কারো সাথে কোনো কথা বলেনি। বেশ কিছুক্ষণ পর সমুদ্র সামনে তাকিয়েই বলল। কোনোকিছু নিয়ে চিন্তত থাকলে বলতে পারিস। আমি বলবো নাহ তাকে ভুলে যেতে কারণ ভুলে যাওয়া অনেক কঠিন। কিন্তু সেই একটা মানুষের জন্য আর সবাইকে কষ্ট দেওয়া মানায় নাহ। একজন মানুষের জন্য নিজের জীবনকে থামিয়ে রাখা নিতান্তই বোকামো। আশা করছি ওখানে গিয়ে নিজেকে গুছিয়ে নিবি।

সমুদ্রের কথাশুনে রোদ্র পাশে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। অতঃপর আগের ন্যায় বাইরের দিকে তাকিয়ে বলল। ভালো থাকার জন্যই তো যাচ্ছি ভাইয়া। এখানে থাকলে আমি কখনোই ভালো থাকতে পারবো নাহ। সেই একটা মানুষ আমাকে কখনোই ভালো থাকতে দেবে নাহ। তাই জন্য তার থেকে অনেক অনেক দূরে চলে যাচ্ছি যেনো তাকে ভুলে থাকতে পারি।

রোদ্রর কথা শেষ হতেই আবার নিশ্চুপ হয়ে গেলো। তাত্ক্ষণিক আর কেউ কোনো কথা বলল নাহ। আবার ও নিরবতা ভেঙ্গে সমুদ্র রোদ্রকে প্রশ্ন করলো। সেই একটা মানুষ টা কে সেটা জানতে পারি?

সমুদ্রের প্রশ্নে রোদ্র কোনো কথা বলল নাহ। ঘাড় ফিরিয়ে তাকালোও নাহ নিশ্চুপ রইলো। সমুদ্র ও আর কিছু বলল নাহ। গাড়ি কাঙ্ক্ষিত জায়গায় এসে থামতেই রোদ্র গাড়ি থেকে নামার আগে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল। কিছু কিছু জিনিস না জানায় ভালো ভাইয়া। জানলে কষ্টই পাওয়া যায় শুধু। ভালো থেকো আর মায়ের খেয়াল রেখো। আমি জানি তোমাকে না বললেও এটা তুমি করবে তবুও বলছি তোমার ভালোবাসার ভালোথাকার যত্ন নিও, আসি।

কথাগুলো বলে রোদ্র গাড়ি থেকে নেমে গেলো। সমুদ্র কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে গাড়ি নিয়ে চলে গেলো।
,,,,,,,,,,

অন্ধকার রুমের মধ্যে চেয়ারে হাত পা বাঁধা অবস্থায় বসে আছে শাহীন। মাথাটা নিচু হয়ে ঝুলে আছে। তবে গায়ের কোনো জায়গায় কোনো আঘাতের চিন্হ নেই। হাঠাৎ গায়ের মধ্যে ঠান্ডা পানি পড়তেই চমকে উঠলো শাহীন। মাথা উঁচু করে সামনে তাকাতেই দেখলো সমুদ্র ওর সামনের চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে। সমুদ্র কে দেখে হাসি দিয়ে বাঙ্গ করে বলে উঠল শাহীন।

কি অফিসার এতোকিছু রেখে হঠাৎ আমার পিছনে পড়লেন কেনো? আপনার সম্যসা তো ম্যাডাম মালবিকার সঙ্গে তাহলে আমাকে ধরলেন কেনো?

সেদিন ইচ্ছে করে আমার কাছে ধরা দিলে কেনো?

আরেহ বাহ আমিতো ভেবেছি নতুন বিয়ে করে আপনার এসব কিছু মনেই নেই। কিন্তু এখন তো দেখছি পুরোই উল্টা আপনার তো দেখছি হেব্বি বুদ্ধি।

বাজে কথা রেখে এটা বলো সেদিন আমার কাছে ধরা দিলে কেনো? আর আমিতো তোমাকে মালবিকার কথা বলেনি তাহলে তুমি কীভাবে জানো এতোকিছু কীভাবে চিনো ওনাকে? কি সম্পর্ক তোমাদের?

সমুদ্রের কথায় শাহীন বেশ মজা পেলো মনে হলো। হাসতে হাসতে মাথা তুলে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল। কী স্যার এতোবড় মানুষের সাথে আমার আর কী সম্পর্ক থাকতে পারে। আমি ভাই গ্রামের পোলা অশিক্ষিত আমার সাথে আর কী সম্পর্ক থাকবে। আপনিও না এতো বড় মানুষ হয়ে কি বাচ্চাদের মতো প্রশ্ন করেন।

শাহীনের কথাশুনে সমুদ্র কিছু বলল নাহ৷ তবে কিছু একটা ভাবতে ব্যাস্ত। শাহীনের কথাশুনে ইমরান পাশ থেকে রেগে বলল। স্যার ওর কথা বিশ্বাস করবেন নাহ। ও মিথ্যা বলছে কয়েক ঘা পড়লে ঠিকি সত্যি কথা বলবে। একবার শুধু অনুমতি দেন ওরে আমি।

ইমরান পুরো কথাটা শেষ করার আগেই সমুদ্র হাত উঁচিয়ে থামিয়ে দিলো। শাহীন তখনো বিশ্রিভাবে হাসছে। সমুদ্র কিছু একটা ভেবে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো ইমরান কে ইশারা করলো শাহীনের হাতের বাঁধন খুলে দেওয়ার।

স্যার এটা আপনি কি বলছেন। ওকে ছাড়বেন নাহ। কয়েক ঘা দিলেই আপনা আপনি মুখ খুলবে।

এতো কথা বাড়িও নাহ ইমরান ওকে ছেড়ে দাও।

সমুদ্রের কথায় ইমরান বাধ্য হয়ে রাগে রাগে শাহীনের হাতের বাঁধন খুলে দিলো। খোলা পেতেই শাহীন হাত ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। হাত ডলতে ডলতে সমুদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে হাসি দিয়ে বলল। আগেই বলেছিলাম আমাকে ধরে কোনো লাভ নাই। আপনিও না স্যার এতোবড় অফিসার হয়ে কেমন মূর্খের মতো কাজ করেন।

কথাটা বলে শাহীন সমুদ্র কে সালাম দিয়ে শিস বাজাতে বাজাতে বেরিয়ে গেলো৷ তবে যাওয়ার আগে ইমরান এর দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে চোখ মেরে গেলো। ইমরান রাগে হাত মুট করে আছে। শুধুমাত্র সমুদ্রের জন্য কিছু বলতে পারলো নাহ।

ওর উপর নজর রাখো ইমরান। ও কি করছে কোথায় যাচ্ছে কার সাথে কথা বলছে সব কিছুর ইনফরমেশন আমার চাই।

ওকে স্যার।

শাহীন বাইরে এসে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে আবার ও পিছনের দিকে তাকালো অতঃপর বাঁকা হেসে নিজে নিজেই বলল। আমি জানি অফিসার তুমি আমাকে কেনো ছেড়ে দিলে। আমিও চাই তুমি আমার উপর নজর রাখো। কথাটা বলে ফোন বের করে মালবিকা কে কল দিলো। ফোনটা রিসিভ করতেই বলল।

আম্মা কাজ শেষ সবকিছু আমাদের প্লান মতোই হচ্ছে। আপনি নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন।
,,,,,,,,,,,,,

আধুনিক শহরের পরিষ্কার রাস্তা দিয়ে হেলেদুলে হেঁটে যাচ্ছে রোদ্র। রাস্তায় থাকা ল্যাম্পপোস্টের আলোর সবকিছুই দিনের মতো পরিষ্কার। রাত ঠিক আনুমানিক কয়টা বাজে সেটাও খেয়াল নেই। প্রথম বার ড্রিংক করায় নিজেকে সামলাতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। চোখ খোলা রাখায় দায়। তবুও অনেক কষ্টে হেঁটে সামনের দিকে যাচ্ছে। আর কিছুটা গেলেই ওর থাকার ঘর। রাস্তায় মানুষ খুবি কম খানিকক্ষণ পরপর এক দুইটা গাড়ি সাঁই সাঁই করে পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে। রোদ্রের মনে হলো ওর পিছনে আরো কয়েক জোড়া পা হেঁটে আসছে। তবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে নাহ। বেশ কিছুক্ষণ পর কয়েকটা ছেলে ওর সামনে এসে দাঁড়ালো। হাতে একটা চা*কু। চিকন গড়নের ছেলেগুলো গায়ের রঙ বেশ ফর্সা এক কথায় সাদা বলা যেতে পারে। রোদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে চা*কুটা গলার সামনে ধরে ইংরেজি ভাষায় কিছু একটা বলল। তবে রোদ্র নেশা করায় ওর কাছে সেটা অস্পষ্ট। শুধু একটা কথা কানে এলো ওখানে থাকা কেউ একজন ইংরেজি তে বলল। তোমার কাছে যা আছে সবকিছু আমাদের দিয়ে দাও। এটা শুনতেই রোদ্র হাসতে হাসতে মাতাল সুরে বলল।

এই যে দেখছো আমার শরীর এটার মধ্যে কিছুই নাই। আমার সবকিছু বাংলাদেশে রেখে এসেছি। তোমাদের আর কি দেবো আমি নিজেই আমার সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসটা অন্যজনকে দিয়ে এসেছি। এখন তোমাদের কে দেওয়ার মতো আমার কাছে কিছুই নেই। আমি শূন্য।

রোদ্রের কথা ওখানে থাকা কেউই বুঝতে পারলো নাহ৷ ওরা পুনরায় একি কথা বলতে লাগলো। তবে রোদ্র মাতাল সুরে আবুল তাবুল কথা বলছে। ওদের মধ্যে একজন চা*কু দিয়ে রোদ্রকে আঘাত করতে নিলেই হঠাৎই ওদের দুজনের মাঝে বাইক নিয়ে কেউ একজন এসে দাঁড়ালো। মাথায় হেলমেট থাকায় কেউই ওই ব্যাক্তির মুখ দেখতে পারলো নাহ।

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে