প্রিয় অর্ধাঙ্গীনি পর্ব-৩১+৩২

0
568

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_৩১
,
ঘড়ির কাঁটা তখন একটার ঘর পেরিয়ে দুটোর ঘর ছুঁবো ছুঁবো ফাঁকা রাস্তা পেয়ে বেশ ভালো গতিতেই চার চাকার গাড়িটা সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ইমরান গাড়ি চালানোর ফাঁকে ফাঁকে মাথা বাঁকিয়ে সমুদ্রের দিকে তাকাচ্ছে। সমুদ্র সিটে হেলান দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। বেশ কিছুক্ষণ পর সমুদ্র সেদিকে তাকিয়েই গম্ভীর স্বরে বলল। কিছু বলার থাকলে বলে ফেলো ইমরান। তবুও বার বার আমার দিকে এভাবে তাকিও নাহ। এক্সিডেন্ট হতে পারে ভুলে যেও নাহ সকালে আমার বিয়ে।

সমুদ্রের কথাশুনে ইমরান থতমত খেয়ে গেলো মাথা ঘুরিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে শক্ত হাতে স্টিয়ারিং ধরল। স্যার অনুমতি দিলে একটা কথা বলি? আসলে কথাটা বেশ কিছুক্ষণ ধরেই পেটের মধ্যে গুড়গুড় করছে না বললে পেট খারাপ করবে।

আমি বলতে নিষেধ করলেও তুমি বলবে তাই বেশি কথা না বারিয়ে কি বলবে বলে ফেলো।

বলছি যে স্যার আমরা তো এখানে আসছিলাম মালবিকা মির্জার সাথে এই গ্রামের চেয়ারম্যান এর কি সম্পর্ক সেটার খোঁজ নিতে। কিন্তু সেটার তো কিছুই হলো নাহ উল্টো ভাবির সাথে আপনার দেখা হয়ে গেলো। সাথে জামাই আদরও পেয়ে গেলেন।

যেটা জানার সেটা বলো ইমরান এতো বেশি কথা বলো কেনো।

ইয়ে মানে বলছি যে স্যার আপনি কি কিছু জানতে পেরেছেন? মানে ওই মালবিকা মির্জার সাথে চেয়ারম্যান এর সম্পর্ক টা কী।

ইমরান এর কথাশুনে সমুদ্র একটা শ্বাস ফেলে বৃদ্ধ আঙ্গুল দিয়ে খোঁচা খোঁচা দাঁড়িয়ে পূর্ণ থুতনিতে ঘষে বলল, ওই মহিলাটা ভীষণ চালাক ইমরান। আমারই আগে থেকে আরো বেশি সজাগ হওয়া উচিত ছিলো৷ ওনি কোনো ভাবে আমার গতিবিধির উপর নজর রাখছে। এই যে আমি এখানে এসেছি ওনি সেটা আগে থেকেই জানে এই জন্যই সবকিছু আড়াল করে নিয়েছে। শাহীন কেও সরিয়ে ফেলেছে কিন্তু অপরাধী নিজেও জানে নাহ যে সে যখন অপরাধ করে তখন নিজের অজান্তেই কোনো না কোনো ক্লু সে রেখে যায়।

তারমানে স্যার আপনি কিছু পেয়েছেন কিন্তু সেটা কি?

সময় হলেই জানতে পারবে এখন আর বেশি কথা না বলে মন দিয়ে গাড়ি চালাও। সকালের আগে বসায় পৌঁছাতে হবে মাথাটা ভীষণ ধরেছে।
,,,,,,,,,,,,,,
সমুদ্র নিজেকে ভীষণ চালাক ভাবো তুমি কিন্তু আমার কাছে তুমি নিতান্তই বাচ্চা। তোমার কতবড় সাহস তুমি আমার সম্পর্কে জানতে পুরানো কাসন্দি ঘাটতে গিছিলে। কিন্তু লাভ হলো কি কিছুই নাহ। এভাবেই তুমি প্রতিটা পদে পদে আমার কাছে হেরে যাবে।

কথাগুলো বলে মালবিকা বাঁকা হেসে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো অতঃপর ফোনটা হাতে নিয়ে কাউকে কল দিলো৷ প্রথমবার কেউ না ধরলেও পরেরবার রিং বাজতেই ওপাশ থেকে কেউ রিসিভ করলো।

হ্যাঁ শাহীন ফোনটা রেখে কোথায় থাকো তুমি রিসিভ করতে এতো সময় লাগে কেনো? আচ্ছা শোনো তোমাকে যা বলেছি করেছো তো? আগামী একমাস সমুদ্রের সামনে পড়বে নাহ। কিছুই করবে নাহ আপাতত ওকে ওর বিয়েটা এনজয় করতে দাও কারণ সুখের পরেই তো দুঃখ আসবে। আচ্ছা আমি রাখছি আর তোমার ফোন সুইচ অফ করে রাখো।

ফোনটা কেটে দিয়ে সামনের দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে মালবিকা বলে উঠল। আনন্দ করে নাও সমুদ্র যতটা পারো পরিবার কে সময় দাও৷ বলা তো যায় না কখন আবার কী হয়ে যায় কারণ নিঃশ্বাস এর তো আবার বিশ্বাস নাই।

কথাটা বলেই জোরে জোরে হাসতে লাগল। হাসির আওয়াজ বন্ধ রুমের দেওয়ালে দেওয়ালে লেগে বিকট শব্দে প্রতিধ্বনি হচ্ছে।
,,,,,,,,,,
শশীকে বিছানায় বসিয়ে রাখা হয়েছে। দেখতে একদম পুতুলের মতো লাগছে৷ এই সাজ সজ্জা সবি সমুদ্রের জন্য। শশী লজ্জায় মাথা নুইয়ে রেখেছে পাশে ওর সব বোনরা বসে ওকে আরো বেশি লজ্জায় ফেলছে। সমুদ্ররা চলে এসেছে হয়ত একটু পরেই বিয়েটাও পরানো হয়ে যাবে। ওনাকে পাঞ্জাবি তে ঠিক কেমন লাগছে হয়ত অনেক বেশিই সুন্দর লাগছে। এইসব কল্পনা করছিলো শশী। অতি আবেগে ওর এক বোনকে জিগাসা করেছিলো সমুদ্র কে কেমন দেখতে লাগছে। ব্যাস সেই থেকে সবগুলো মিলে শশীকে লজ্জা দিয়ে যাচ্ছে। আর শশীর মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে সেই যে মাথা নিচু করেছে আর উঠানোর নামগন্ধ নেই। যেনো আজকে পণ করেছে ঘাড় বেঁকিয়ে গেলেও ও মাথা তুলে তাকাবে নাহ। দূরে দরজায় দাঁড়িয়ে শশীর লজ্জা মাথা মুখের দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে রোদ্র। এখানে আসার পর থেকে শশীকে একটা নজর দেখার জন্য মনটা ছটফট করছিলো। তাই জন্যই তো এসেই এখানে চলে এসেছে জানি এটা ঠিক নয়। সম্পর্কে শশী বড় ভাইয়ের বউ তবুও মন মানে নাহ৷ এই জন্য দূর থেকে দাঁড়িয়ে ওকে দেখে চোখের তৃষ্ণা মিটাচ্ছে।

শশী, তুমি চাঁদ! রাতের আকাশে তোমার আধিপত্য।পুরো পৃথিবীর তুমি সবখানেই আছো শুধু আমার ভাগ্যেই নেই।

শশীর দিকে তাকিয়ে বিরবির করে কথাটা বলল রোদ্র। চোখে পানি টলমল করছে কিন্তু এক ফোঁটা পানিও গাল বেঁয়ে গড়িয়ে পরেনি। রোদ্রের ভাবনার মাঝেই হঠাৎ করে পিছন থেকে কেউ ওর কাঁধে হাত রাখল। রোদ্র চমকে কোনো রকমে নিজেকে ঠিক করে হাসি হাসি মুখে পিছন ফিরলো।

এই যে বেয়াই সাহেব এমন ভাবে দরজায় দাড়িয়ে আছেন যেনো আমাদের ভিতরে যেতেই দিবেন নাহ। বলি একটু পরতো ওকে নিয়েই যাবেন তখন নাহয় মন ভরে দেখিয়েন এখন আমাদের যেতে দেন।

সত্যই যদি কাউকে ওর কাছে না যেতে দেওয়ার আমার ক্ষমতা থাকতো। সবার থেকে ওকে আড়াল করার ক্ষমতা আমার থাকতো। যদি বুকের মধ্যে সত্যি কাউকে আটকে রাখা যেতো তাহলে ওকে আমার বুকের মধ্যে রেখে দিতাম। কেউ দেখতে পেতো নাহ কেউ আমার কাছ থেকে ওকে নিয়ে যেতো নাহ৷ শুধু মাঝে মাঝে ওকে একটু খানি বের করে কপালে ভালোবাসা দিয়ে আবার বুকের মধ্যে রেখে দিতাম।

আরে কোথায় হারিয়ে গেলেন।

রোদ্রের ভাবনার মাঝেই শশীর মামাতো বোনের কথাটা শুনে রোদ্র হালকা হেসে দরজা থেকে সরে দাঁড়ালো। তারপর ওরা সবাই ভিতরে চলে গেলে রোদ্র আবার একবার শশীর দিকে তাকালো। কত খুশী আর তৃপ্ত দেখাচ্ছে শশীকে আর দেখাবেই না কেনো নিজের কাছের মানুষ ভালোবাসার মানুষ কে সারাজীবন এর জন্য পেতে যাচ্ছে খুশি তো দেখাবেই। কেনো জানি হঠাৎ করে রোদ্রর খুবি বেশি সার্থপর হতে মন চাইছে। শশীকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যেতে মন চাইছে। যেখানে কোনো চেনা মানুষ থাকবে নাহ। কেউ ওকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নেবে নাহ৷ আচ্ছা এমন কোনো জায়গা কি সত্যিই এই পৃথিবীতে আছে? রোদ্রের এমন ভাবনায় রোদ্র নিজেই হাসলো কি সব ভাবছে সে। বাঁ হাতে চোখের পানিটা মুছে নিয়ে ওখান থেকে চলে গেলো।
,,,,,,,,,,,,,,
চেনা সেই ঘরটায় বধু বেশে লম্বা একটা ঘোমটা টেনে বসে আছে শশী৷ বসে আছে বললে ভুল হবে। দুই পা ভেঙ্গে একটুও না নড়ে থাকা কে বলে বসে থাকা তবে শশী আপাতত সেটা করছে না। গায়ের ব্লাউজ টা খুব বেশিই টাইট হয়েছে এই জন্য কাঁধের কাছটাই বেশ বেথ্যা লাগছে। ভারি কাজ করা শাড়িটা পিঠে কমরে বেশ বিঁধছে। সব মিলিয়ে ভিতর থেকে কেমন দম বন্ধ লাগছে এই জন্য বসে থাকা দায়। সমুদ্র এখনো রুমে আসেনি কখন আসবে সেটাও শশীর অজানা বেশ কিছুক্ষণ বসে থাকার পর আর সয্য হলো নাহ শশীর। মাথার উড়নাটা খুলে পাশে রাখলো। হাত পিছনে মুড়িয়ে ব্লাউজ এর ফিতা আর হুকটা খুলে দিতেই পিঠ আলগা হয়ে গেলো। এবার বেশ আরাম লাগছে শশীর লম্বা একটা শ্বাস নিলো। এতোক্ষণ যেনো দমবন্ধ লাগছিলো। তবে ওনি আসার আগেই আবার হুকটা লাগিয়ে ফেলতে হবে নয়ত ওনার সামনে আবার লজ্জায় পড়তে হবে।
,,,,,,,,,
সমুদ্র হাত টা পেতে দিতেই ইমরান হা করে সমুদ্রের হাতে চাবিটা দিয়ে দিলো। সমুদ্র হাত মুঠো করে ইমরান এর থুতনিতে নিজের আঙুল রেখে চাপ দিয়ে ওর মুখ বন্ধ করতে করতে বলল। মুখটা বন্ধ রাখো ইমরান নয়ত বিয়ে বাড়ির সব মশা মাছি তোমার মুখের মধ্যে যাবে।

কথাটা বলে সমুদ্র চাবিটা নিজের পকেটে ঢুকিয়ে রুমে ঢুকতে যাবে তখনি পিছন থেকে ইমরান ডেকে উঠল।

স্যার শেষ বারের মতো আরো একটা প্রশ্ন করি?

কি ইমরান তুমি আমাকে বাসর করতে দেবে নাহ? আচ্ছা যাও সারাদিনে অসংখ্য প্রশ্ন করেছো আর একটা না হয় করো। তবে যা করার যলদি করো রাত শেষের পথে তোমার ম্যাডাম রেগে যাবে।

বলছি যে স্যার কালকে আমি গায়ে হলুদের পর থেকে সারাক্ষণ আপনার সাথেই ছিলাম। এক সাথে দুজনে হিজলতলী গেলাম। আবার ফিরেও আসলাম তাহলে আপনি শাহীনকে ধরলেন কখন?

ইমরান এর কথাশুনে সমুদ্র বাঁকা হেসে এগিয়ে এসে ইমরান এর কাঁধে হাত রেখে বলল। রাতে ঘুমানোর আগে বিছানায় শুয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করে ভাবতে থাকো উত্তর পেয়ে যাবে।

কথাটা বলে সমুদ্র চলে গেলো। ইমরান এখনো হা করে ওখানে দাঁড়িয়ে থেকেই মাথা চুলকে নিজে নিজেই বলল। ওইটুকু সময়ের মধ্যে স্যার শশী ম্যাডামের সাথে দেখা করলো কখন আর শাহীনকেই বা ধরলো কখন। কিছুই তো মাথায় ঢুকছে নাহ।
,,,,,,,,,,,,,,
তোমার কাজগুলো দেখে মনে হয় না তুমি ছোটো। বরং তুমি অনেক আডভান্স সবাই তোমাকে ছোটো ভাবে।

রুমের লাইট বন্ধ হালকা নীল আলো রুমে জ্বলছে৷ সাথে ব্যালকনি দিয়ে আসা বাইরের অল্প আলোতে রুমের পরিবেশ টা বেশ রোমাঞ্চকর হয়ে উঠেছে। শশী অনেক্ক্ষণ বসে থাকায় কমর লেগে গিছিলো এই জন্য উঠে রুমের মধ্যে হাঁটা হাঁটি করছিলো।(লেখিকা-সুমাইয়া সুলতানা সুমী) তখনি বাইরে কারো পায়ের শব্দ শুনে ভাবলো সমুদ্র আসছে এই জন্য তড়িঘড়ি করে ওমনেই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ব্লাউজ এর হুক লাগাচ্ছিলো। তখনি সমুদ্র রুমে এসে দরজা বন্ধ করে শশীর খোলা পিঠের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলল।

মানে?

মানে এই যে আমি যেনো এসেই শুরু করতে পারি এই জন্য সবকিছ খুলে রাখছো।

কথাটা বলতে বলতে সমুদ্র পকেট থেকে ফোন আর চাবিটা পাশের ওয়ারড্রব এর উপর রেখে শশীর দিকে এগিয়ে গেলো। সমুদ্রের কথায় শশী লজ্জা পেয়ে পিছন ঘুরে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগে সমুদ্র তড়িৎ গতিতে এসে দুহাতে শশীর কমর জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিলো। আচমকা এমন হওয়াই শশী বড়বড় চোখ করে সমুদ্রের দিকে তাকাতেই সমুদ্র বাঁ হাত শশীর চোখের উপর রেখে চোখ বন্ধ করে দিলো। শশী কাঁপা হাতে সমুদ্রের পিঠের কাছের পাঞ্জাবি মুঠো করে চেপে ধরতেই সমুদ্র যেনো আরো উত্তাল হয়ে উঠল। দু হাতে আরো বেশি শক্ত করে শশীর নরম শরীলটা নিজের সাথে চেপে ধরল। শশীও এক হাতে সমুদ্রের পিঠের কাছের পাঞ্জাবি আর আরেক হাতে ওর চুল মুঠো করে ধরল। সমুদ্র পাগলের মতো শশীর ঠোঁটে চুমু খেয়ে যাচ্ছে যেনো আজকে সে শশীতে মেতে গেছে। খানিকক্ষণ পর শশীর ঠোঁট ছেড়ে দাঁড়াতেই শশী জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগল। সমুদ্রও জোরে শ্বাস নিতে নিতে মাতাল চোখে শশীর দিকে তাকালো। শশী মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সমুদ্র এগিয়ে গিয়ে শশীর মুখটা উপরে তুলে ওর কপালে চুমু দিয়ে কোলে তুলে নিলো। বিছানায় শুইয়ে দিয়ে শশীর নরম শরীলের উপর নিজের শক্ত সামর্থ্য শরীলের সম্পন্ন ভার দিয়ে। শশীর গলায় মুখ ডুবাতেই শশী বেথ্যাতুর শব্দ করে উঠল। সমুদ্র মুখ তুলে শশীর দিকে তাকাতেই দেখলো শশী ঘাড়ে হাত দিয়ে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে।

এমন ভাবে শব্দ টা করলে যেনো মনে হচ্ছে আমি তোমাকে কত কষ্ট দিয়েই না আদর করছি।

সমুদ্রের এমন লাগাম ছাড়া কথাশুনে শশী লজ্জায় চোখ নামিয়ে ঘাড়ে ডলতে ডলতে বলল। আপনার দাঁড়িতে লাগছে। খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি আমার কাঁধে ফুঁটছে এই জন্যই তো বেথ্যা লাগছে।

এমন আরো অনেক বেথ্যা লাগবে তোমাকে সেটাও সয্য করতে হবে। কারণ বেথ্যার সাথে আমার ভালোবাসাটাও আছে।

কথাটা বলে সমুদ্র আবারও শশীর কাঁধে মুখ ডুবালো। শশীর বেথ্যা লাগলেও তা প্রকাশ করলো নাহ। কারণ ও আজ সমুদ্রের গহীনে ডুবতে চাই। সমুদ্রের বড়বড় ঢেউ এর মুখোমুখি হতে চাই। সমুদ্র পরম আদরে নিজের প্রিয় অর্ধাঙ্গীনি কে নিজের করে নিচ্ছে। সবটা উজার করে ভালোবাসার চিন্হ এঁকে দিচ্ছে শশীর শরীলের প্রতিটি ভাজে ভাজে।

#চলবে?

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_৩২
,
কাক ডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে শিউলি ফুল কুঁড়ানো জোনাকির বিছানায় আর পিট ঠেকলো নাহ। বাড়িতে বড় মোরগের ডাকে ঘুম ভাঙলেও এখানে কাকের কা কা কর্কশ ডাকে ঘুম ভেঙে গেলো। কালকে শশীর সাথেই এখানে এসেছে ও। ঘুম ভাঙতেই পাশে শাহানারা কে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখলো। শাহানারা কে পাড় করে খাট থেকে নেমে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো। বাইরে তখন সূর্য উঠেছে সবে মাত্র। বাড়িতে এতোক্ষণে সবাই উঠে পড়লেও এখানে কারো উঠার নামগন্ধ নেই। গুটিগুটি পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো। পুরো বাড়িতে কাউকেই দেখতে পেলো নাহ৷ হয়ত এখনো কেউ ঘুম থেকে উঠেনি। চোখ ডলতে ডলতে হেঁটে সামনের দিকে গিয়ে সিঁড়ির সামনে যেতেই দেখলো জয় হাতে কিছু একটা নিয়ে খেতে খেতে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠছে। জোনাকি এক পাশে সরে দাঁড়ালো। জয় তখনো শশীকে দেখেনি। শেষের সিঁড়ি পাড় করে কেবলি উপরে উঠবে তখনি জোনাকি পা দিয়ে জয়কে ল্যাং মারলো। তবে জয় নিজেকে পড়ার হাত থেকে বাঁচাতে পারলেও হাতের আইসক্রিম এর বাটিটা বাঁচাতে পারলো নাহ। সিঁড়ি বেয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে নিচে গিয়ে ঝনঝন শব্দ করে থেমে গেলো। রেলিং ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে উপরে উঠে কমরে হাত দিয়ে রাগী চোখে জোনাকির দিকে তাকিয়ে জয় বলল।

‘তুমি এমন করলে কেনো? আমি যদি এই সিঁড়ি থেকে নিচে পরে ধুপ করে মরে যেতাম তখন কি হতো?

‘কি আবার হতো ভালোই হতো। আর তাছাড়া দিনে দিনে খেয়ে খেয়ে নিজের যে অবস্থা বানিয়েছো কবে দেখা যাবে ফটাস করে ফেঁটে ঠাস করে মরে গিয়েছো।

‘জোনাকির কথায় জয়ের রাগ তড়তড় করে আরো খানিকটা বেড়ে গেলো। কীহ তোমার এতোবড় সাহস তুমি আমাকে মরার কথা বলছো। এখন যদি আমি সত্যি মরে যাই তখন কি হবে বলো?

‘জয়ের রেগে যাওয়া দেখে জোনাকি মোটেও বিচলিত হলো নাহ। উল্টো জয়কে বোঝানোর স্বরে বলল। আরে তুমি এতো রেগে যাচ্ছো কেনো। আমিতো তোমার আরো ভালো করলাম।

‘কাউকে মরার কথা বললে সেখানে ভালো কোথায় থাকে শুনি।

‘আরে তুমি জানো না বুঝি যে কাউকে মরার কথা বললে উল্টো তার আয়ু বেড়ে দ্বিগুন হয়ে যায়। তো তোমাদের বাড়িতে এসে থাকছি। তোমরা এতো আদর যত্ন করছো তাই আমিও ভাবলাম তোমাদের ও কিছু দেওয়া দরকার। এই জন্য তোমার আয়ুটা একটু বাড়িয়ে দিলাম। ধন্যবাদ দিতে হবে নাহ। আমি এমনি সবার উপকার করে বেড়ায়। স্কুলেও কতজনকে এমন উপকার করেছি।

‘কথাটা বলে জোনাকি নিজের ফ্রগটা দুপাশে ধরে দুলাতে দুলাতে চলে গেলো। জয় এখনো সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে। সত্যি কি কাউকে মরার কথা বললে তার আয়ু বেড়ে যায়? কই স্কুলে তো কখনো এটা তাকে শিখাই নাই।
‘,,,,,,,,,,
আপনি দেশ রক্ষক হিসাবে ভালো হলেও বর হিসাবে খুবি খারাপ। প্রথম দিনই ফেল করে গেছেন।

‘সকাল সকাল নিজের নব বধূর থেকে এমন সার্টিফিকেট পেয়ে সমুদ্র অবাক হয়ে শশীর দিকে তাকিয়ে বলল। কি বলছো তাহলে কী আমি আদর কম করে ফেললাম? আচ্ছা কোনো ব্যাপার না তুমি চাইলে এখন আবার পুরো দমে শুরু করতে পারি।

‘ছিঃ কথার কি ধরন। আমি আপনাকে মোটেও এই বিষয়ে কোনো কথা বলেনি।

‘তাহলে কোন বিষয়ে বলেছো শুনি। কিন্তু তার আগে তুমি আমায় এটা বলো যে তুমি এভাবে কাঁথায় মুখ ঢেকে আমার সাথে কথা বলছো কেনো। বুক থেকে মাথাটা তোলো আমিও একটু দু-চোখ ভরে আমার নব বধূকে দেখি।

‘কথাটা বলে সমুদ্র শশীর মুখ থেকে কাঁথা টান দিতে গেলে শশী আরো নিজেকে কাঁথায় আবৃত করে শাসানোর ভঙ্গিতে বলল। খবরদার কাঁথা টান দিবেন নাহ। আমি এভাবেই কথা বলবো।

‘কিন্তু কেনো?

‘কারণ আমার লজ্জা লাগছে তাই। আর এ ছাড়া-ও আরো একটি কারণ আছে সেটা বলা যাবে নাহ।

‘এবার মনে হচ্ছে তুমি কথাটা ঠিকি বলেছো। স্বামী হিসাবে আমি সত্যই ফেল করে গেলাম। নয়ত এতো কসরত করেও বউয়ের লজ্জা ভাঙতে পারলাম নাহ। তাহলে আর কেমন স্বামী আমি।

‘শশী বুঝলো ও যদি আরো কথা বাড়ায় তাহলে এই ঠোঁটকাটা লোকটা এর থেকেও লজ্জা জনক কথা বলে ওকে আরো বেশি লজ্জায় ফেলবে এই জন্য শশী কথা ঘুরিয়ে বলল। আপনি উঠুন তো আর আমাকে ছারুন আমি ফ্রেশ হবো।

‘বললেই তো হয় গোসল করবা এতো লজ্জা পাওয়ার কী আছে। আচ্ছা ঠিক আছে চলো একসাথে গোসল করি। তখন যদি বউয়ের লজ্জা ভাঙ্গতে পারি।

‘এই না না একদম নাহ।

‘হ্যাঁ হ্যাঁ একদম হ্যাঁ চুপ থাকো।

‘কথাটা বলে সমুদ্র এক লাফে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালো। উদম শরীলে টাওজার এর রাবারটা নাভির নিচে নামানো। নিচু হয়ে এক টানে শশীর উপর থেকে কাঁথাটা সরিয়ে ফেলল। সমুদ্রের এমন কাজে শশী লজ্জা নিবারণ এর জন্য দু হাতে নিজের মুখ ঢেকে ফেলল। শশীর পরনে তখন সমুদ্রের গায়ের বিয়ের পাঞ্জাবি টা। একদম পা পযন্ত নেমে গেছে। চিকন শরীলে পাঞ্জাবি টা পরিমাণের তুলনায় বেশ ঢোলা হয়েছে। গলার দিকে কাঁধ গলিয়ে অনেকটাই নেমে এসে শশীর ফর্সা কাঁধটা বেরিয়ে আছে। আর ফর্সা কাঁধে রাতে সমুদ্রের দেওয়া ভালোবাসার চিন্হটা লাল হয়ে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। সমুদ্র সেদিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে শশীর উপর উবু হলো। হাতের উপর চুমু দিয়ে মুখ থেকে শশীর হাত টা সরিয়ে দিলো। শশী তখনো চোখ বন্ধ করে আছে। সমুদ্র একে একে শশীর বন্ধ চোখের পাতায় কপালে দু গালে থুতনিতে চুমু দিয়ে নাকের ডগায় কুট করে একটা কামড় বসালো। বেথ্যা পেয়ে চোখ খুলে রাগী চোখে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে শশী বলে উঠল।

‘কালকে রাতে এতো কাঁমড়িয়েও সাধ মেটেনি? রাক্ষস কোথাকার।

‘না মেটেনি আমার বউকে আদর করবো দরকার হলে কাঁমড়িয়ে খেয়ে ফেলবো তাতে তোমার কি? এখন বেশি কথা না বলে চলো।

‘কথাটা বলেই শশীকে পাজাকোলা করে কোলে তুলে নিয়ে বাথরুমের দিকে চলল সমুদ্র।
,,,,,,,,,,,,,

‘কি হয়েছে এতো সকালে ফোন করেছো কেনো?

‘এতো কিছু হয়ে গেছে আর তুমি এভাবে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছো? আবার আমায় বলছো কেনো ফোন দিয়েছি। তুৃমি জানো সমুদ্র শাহীন কে তুলে নিয়ে গেছে। আমার ছেলেটা আদেও বেঁচে আছে কীনা কে জানে। আর বেঁচে থাকলেও ওই সমুদ্র ওকে কোথায় রেখেছে কী অবস্থায় রেখেছে তাও জানি নাহ। তোমার কথামত সবকিছু করেছি। এখন আমার ছেলেকে বিপদে ফেলে তুমি নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছো মালবিকা।

‘সকাল সকাল এমন তাজা খবর শুনার পরেও ওনার মাঝে কোনো হেলেদুল দেখা গেলো নাহ। হাঁটু অবধি উঠে আসা নাইটির লেনটা নিচে নামিয়ে ঠিক করে দিয়ে বালিশে পিঠ ঠেকিয়ে শান্ত গলায় বলল। এতে এতো উত্তেজিত হওয়ার কি আছে আমি বুঝলাম নাহ।

‘মালবিকার এমন গা ছাড়া কথাশুনে খেপে গেলেন চেয়ারম্যান। রাগে মুখ থেকে প্রায় বেরিয়ে আসা গা*লি টা গিলে নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল। তোমার কি মনে হয় এই খবর শোনার পরে আমি বিছানায় শুয়ে আরাম করবো? আরে তুমি বুঝতে পারছো নাহ। আমার ছেলেকে ওই সমুদ্র ধরে নিয়ে গেছে এখন যদি সমুদ্র টর্চার করে আর শাহীন বলে দেয় তোমার আমার মধ্যে কি সম্পর্ক তখন? শোনো মালবিকা একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো ফাঁসলে কিন্তু আমি একা ফাঁসবো না তোমাকে নিয়েই ফাঁসবো। তোমার সব অপরাধের সাক্ষী আমি।

‘চেয়ারম্যান এর কথায় এবার বেশ রেগে গেলো মালবিকা রাগে বাজে একটা গা,লি দিয়ে বলল। এই চেয়ারম্যান ভুলে যাসনা তোকে ওই গ্রামের চেয়ারম্যান কিন্তু আমিই বানিয়েছি। আর চাইলেই তোকে ওই চেয়ার থেকে টেনে ছুঁরে ফেলে দিতে পারি। আর কি বললি তুই শাহীন আমাদের সম্পর্কের কথা সমুদ্র কে বলে দেবে। আচ্ছা দিক ওকে নিষেধ করেছে কে।

‘মানে?

‘আরে বোকা চেয়ারম্যান আমি তোর মতো এতো বোকা নয়।তোর সাহস কি করে হলো আমার সাথে এভাবে কথা বলার। আর রইলো বাকী ওই হাঁটুর বয়সী সমুদ্র আমার কিছুই করতে পারবে নাহ। আর আমি চেয়েছি বলেই ওই সমুদ্র শাহীন কে ধরতে পেরেছে। আর শাহীন ও জানে ওকে ঠিক কি করতে হবে। জাল পেতেছি আমি সমুদ্রের চারপাশে আর অবস্থা বুঝে আস্তে আস্তে জালটা গুটিয়ে নেবো। সমুদ্র ও নিজের অজান্তেই সেই জালে আটকে পরবে।

‘মালবিকার এমন কথা শুনে চেয়ারম্যান ভয় পেয়ে শুকনো ঢোক গিলে বলল। তুমি আসলে করতে কি চাইছো মালবিকা।

‘সেটা তোর না জানলেও চলবে। এই মালবিকা মির্জা এতোটাও কাঁচা খেলোয়াড় নয় কথাটা মনে রাখিস।

‘আচ্ছা আমাকে একটা কথা বলবে তুমি? ওই সমুদ্রের সাথে তোমার ঠিক কিসের এতো শত্রুতা। আর ওতো তোমার থেকে অনেক ছোট তাহলে তুমি ওর এতো ক্ষতি কেনো করতে চাও?

‘আমি চাই না তো। আমি তো ওর সাথে আগে শত্রুতা করতে যায়নি। আমিতো চেয়েছিলাম আমাদের মাঝে সুন্দর একটা সম্পর্ক হোক। কিন্তু ও সেটা চাইলো না। বাবা আর কাকার মৃত্যুর জন্য আমাকে দায়ী করে। অনেক ক্ষতি করেছে আমার ও এবার ওর পালা। আর আমি তোমাকে এতো কিছু কেনো বলছি। শোনো চেয়ারম্যান মুখ বন্ধ রাখো যা হচ্ছে হোক বেশি কিছু করতে যেও না তাহলে অকালে প্রাণটা হারাবে।
,,,,,,,,,,,,

খাবার টেবিলে বসে আছে সমুদ্র সহ সবাই। শশী মাথায় লম্বা একটা ঘোমটা দিয়ে সবইকে খাবার পরিবেশন করছে। জয় বেশ বিচক্ষণ চোখে শশীকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। এতো লম্বা ঘোমটা দেওয়ার কারণ সে খুঁজে পাচ্ছে নাহ। সমুদ্রের মুখোমুখি বসেছে রোদ্র প্লেটে শুধু ভাত নিয়ে অনেকক্ষণ ধরে আঙুল দিয়ে নাড়ানাড়ি করছে। শশী পিছন থেকে চামচে করে একটু ডাল প্লেটে দিতেই রোদ্র মাথা উঁচু করে শশীর দিকে তাকালো। রোদ্রের তাকানো দেখে শশী সৌজন্যে মূলক একটা হাসি দিলো। কিন্তু রোদ্র মোটেও সে হাসিতে মোহিত হলো নাহ। সেতো এখন শশীর ঠোঁটের কোনে লাল হয়ে যাওয়া দাগ টার দিকে তাকিয়ে। এই দাগের কারণ তার সামনে বসা সমুদ্র। রোদ্র মাথা ঘুরিয়ে একবার সমুদ্রের দিকে তাকালো যে কিনা এই মুহুর্তে খাবার খেতে ব্যাস্ত। রোদ্রের এক মুহুর্তের জন্য মনে হলো ঝুড়ি থেকে ফল কাঁটার ছুড়িটা নিয়ে হয় সমুদ্রের বুকে বিঁধিয়ে দিতে নয়ত নিজের বুকে বিঁধিয়ে এই যন্ত্রণার শেষ করে দিতে। কালকে রাতে সমুদ্র শশীকে ছুঁয়েছে ওকে ভালোবেসেছে এটাই সয্য করতে পারছে নাহ রোদ্র। দুজনের মধ্যে কেউ একজন মরে গেলে শান্তি লাগত। কেননা এই বেথ্যা অসহনীয়। ধ্যান ফিরতেই প্রচন্ড অনুশোচনা ভুগতে লাগলো রোদ্র কিছুক্ষণ আগে সে কি ভাবছিলো এটা মনে হতেই নিজের উপর ঘৃণা হতে লাগলো। সে কী ভাবছিলো নিজের বড় ভাইকে মারার কথা ভাবছিলো সে। একদিকে ভালোবাসা অন্যদিকে নিজের বড়ভাই। মন আর মস্তিষ্কের খেলায় সত্যি এবার নিজেকে কেমন পাগল পাগল লাগছে। খাবার ছেড়ে হঠাৎই উঠে দাঁড়ালো রোদ্র।

‘কিরে দাঁড়িয়ে পড়লি যে কিছুই তো খেলি নাহ।

‘আমার খাওয়া হয়ে গেছে মা আমি উপরে যাচ্ছি।

‘কথাটা বলে একটুও দাঁড়ালো না রোদ্র সোজা সিঁড়ি বেঁয়ে উপরে চলে গেলো। চেয়ারে বসে সবটাই দেখলো সমুদ্র কিন্তু কিছুই বলল নাহ। শশী রোদ্রের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে মনে মনে এটাই ভাবছে৷ প্রথম যেদিন দেখা হলো সেই রোদ্র ভাইয়া আর আজকের রোদ্র ভাইয়ার মধ্যে আকাশ পাতাল তফাত। হঠাৎ কি এমন হলো যে ওনি এতোটা বদলে গেলেন।

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে