প্রিয় অর্ধাঙ্গীনি পর্ব-০২

0
657

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_২
,
ঢাকা থেকে এতোটা পথ জার্নি করে এসে অনেক ক্লান্ত লাগছিলো তাই রেস্ট করার জন্য সমুদ্র কে একটা রুম দেওয়া হলো। সমুদ্র রুমের দরজা খুলে ভিতরে যেতেই কপাল কুঁচকে সামনে তাকালো। পুরোটা রুম জুড়ে মরিচ বাতি মাথার উপড়ে রঙিন কাগজ দিয়ে তারা এবং চাঁদ বানিয়ে ঝুলিয়ে রাখা। দেওয়ালের সাথেও রঙিন কাগজ দিয়ে নানা ধরনের ফুল বানিয়ে আঠা দিয়ে লাগানো। সমুদ্র এসব তোয়াক্কা না করে সোজা বিছানায় সটান হয়ে শুয়ে পড়ল। কখন যে দিন পেরিয়ে রাত নেমে এসেছে তার খেয়াল নেই হঠাৎ মেয়লী একটা চিৎকার এ ঘুম ভেঙে গেলো। কিন্তু উঠে বসার আগেই সে রুম ত্যাগ করেছে। সমুদ্র সেদিকে পাত্তা না দিয়ে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালো মাথাটা প্রচুর বেথ্যা করছে কড়া করে এককাপ চা খেলে ভালো লাগত।

দোতলা বাড়ির সামনের উঠানে বসার জন্য জামশেদ মাস্টার বেশ বড়সড় করেই একটা চড়াট পেতে রেখেছে। গরমের সময় কারেন্ট চলে গেলে যেনো এখানে বসতে পারে সবাই। সেই চড়াটে বসে পা ঝুলিয়ে দিয়ে দুই বোন মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। আর তাদের সামনে কাঠের চেয়ার নিয়ে বসে আছে জামশেদ মাস্টার খানিকক্ষণ পর তিনি বলে উঠলেন।

আম্মা আপনাদের কি হয়েছে আমায় বলবেন কি? এভাবে রাগ করে আছেন কেনো? শুনলাম এখনো নাকি খান নাই কিন্তু কেনো? রাত কত হয়ছে আপনাদের না বলেছি রাত আটটার মধ্যে খেয়ে নিবেন তাহলে খান নাই কেনো?

বাবার কথা শুনে শশী মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বলল, মন ভালো নাই আব্বা অনেক রাগ করে আছি রাগের জন্য পেট ফুলে আছে তাই খিদা লাগেনাই।

হঠাৎ এতো রাগের কারনটা কি আম্মা? আপনাদের মা কি আপনাদের রাগ করছে? এই জন্য রেগে আছেন? কথাটা বলেই জামশেদ মাস্টার গলা ছেড়ে ডাকলো। বড় বউ এইদিকে আসো আজকে তোমার নামে বিচার বসামু তোমার কতবড় সাহস তুমি আমার আম্মাদের রাগ করো।

হ আমার তো কোনো কাজকাম নাই যে ওদের রাগ করতে যাবো। আপনার মেয়েরাতো ননীর পুতুল একটু কিছু হলেই ওদের রাগ হয়। অথচ যখন সারা গ্রামের মানুষ কে জ্বালায় তখন কিছু হয় নাহ।

মায়ের কথা শুনে রাগটা যেনো আরো বেশি পাকাপোক্ত হলো। জামশেদ মাস্টার বউয়ের কথায় কান না দিয়ে আদর মাখা কন্ঠে আবার ও মেয়েদের জিগাস করলো। তাহলে কী জন্য এমন কঠিন রাগ করে আছেন আম্মা আমাকে বলা যায় নাহ?

এটা কেমন বিচার আব্বা এভাবে আমাকে না বলে আমার রুমে অন্য একজন কে কেমনে থাকার অনুমতি দিলেন আপনি। আমি এটা মোটেও আশা করেনি আপনার থেকে। শশীর কথা শেষ হতেই জোনাকীও সাথে তাল মিলিয়ে বলল, আর ওই মোটা ছেলেটা ওতো আরো বেশি বদমাশ আমার বকুল কে গরুর বাচ্চা বলেছে।

এবার যেনো সবটা পরিষ্কার হলো কি জন্য তার দুই মেয়ে এমন রাগ করে আছে তিনি এতক্ষণে সেটা ধরতে পারলেন। ওনার বাবা মারা গেছে বেশ কিছুবছর হলো, ওনার বাবার একমাত্র বন্ধু ছিলেন ইসহাক তারই ছেলের বউ এবং তিন নাতি ঢাকা থেকে ওনাদের বাড়ি বেড়াতে এসেছে। ইসহাক কাকা মারা যাওয়ার পরে ওনাদের সাথে যোগাযোগ প্রায় নেই বললেই চলে। তবে ইসহাক কাকার ছেলে মারা যাওয়ার পর থেকে যোগাযোগ হয়েছে। ইসহাক কাকার ছেলে ছিলো আর্মিদের মেজর শুনেছি কোনো একটা মিশনে গিয়ে গুলি লেগে ওনি মারা গিয়েছে তবে সঠিক খবর কেউ বলতে পারে নাহ। দুই মেয়ের হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বোঝানোর সূরে বললেন।

আমি কি যেনো শিখেছিলাম ছোটো বেলায় আমার আম্মাদের সেটা একটু কনতো দেহি আমি একটু শুনি।

বাবার কথা শুনে দুই বোনই এবার মুখ ঘুরিয়ে বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে একসঙ্গে বলে উঠল, অতিথি হলো সম্মানিও ব্যাক্তি। তাদের যেনো কোনো সম্যসা না হয় সেই দিকে খেয়াল রাখা উচিত আর সব সময় বড়দের সম্মান করা উচিত।

কথাটা শেষ হতেই তিনি হেসে মেয়েদের দিকে তাকিয়ে বললেন তাহলে এবার কি রাগ কমছে? একটু একটু ক্ষিদা লাগছে? বাবার কথার শেষ হতেই দুই বোনই হেসে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।

দূরে দাঁড়িয়ে পুরো ঘটনাটা শাহানারা দেখলো মুচকি হেসে রান্নাঘরে কাজ করতে থাকা শশীর মা পারভিনকে বলল, আপা আপনার মেয়ে দুটো তো মাশাল্লাহ কত লক্ষী মুখটা একদম চাঁদের মতো। সারাদিন তো ওদের দেখলাম নাহ আমরা আসছি সেই বিকালে কিন্তু দেখলাম এখন।

দুটোতে বাড়ি থাকলে তো দেখবেন আপা স্কুল থেকে এসেই না খেয়ে বের হয়েছে আসলোই সেই সন্ধ্যার সময়। আপা রাত অনেক হয়ছে আপনি বরং সমুদ্র বাবারে একটু ডেকে দেন খেয়ে নিক ছেলেটা অসুস্থ তারউপর আবার এতোটা পথ পাড়ি দিয়ে আসছে। এসেও তো কিছু খাইনি।

বড় ছেলের কথা শুনতেই একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললেন শাহানারা। তার বড় ছেলেটা দিনদিন কেমন বেপরোয়া হয়ে উঠছে লাগামহীন হয়ে যাচ্ছে। কতবড় একটা বিপদের মুখ থেকে আল্লাহ বাঁচিয়ে দিয়েছে। কবে যে একটু শান্তিতে শ্বাস ফেলতে পারবো ওকে নিয়েই যত চিন্তা আমার।
,,,,,,,,,,,
এটা কেমন কথা আংকেল আমি বলছিতো আমি সুস্থ তারপরেও আপনি এই কথা কীভাবে বলতে পারেন?

সমুদ্র তুমি আমার কথা কেনো শুনতে চাইছো নাহ তুমি ভুলে গেছো তোমার দু দুটো গুলি লেগেছে। তারপরেও তুমি কীভাবে বলো তুমি সুস্থ। সময় নাও পরিবারের সাথে সময় কাটাও তোমাকে তোমার পরিবারের প্রয়োজন। সময় হলে আমিই তোমাকে ফোন করবো এখন রাখছি।

কথাটা বলেই ওপাশের ব্যাক্তিটা ফোন কেটে দিলো। রেগে কান থেকে ফোন সরিয়ে ফোনটা বিছানায় ফেলে দিলো সমুদ্র। চোখ বন্ধ করে মনে মনে বলল,কীভাবে আমি পরিবারকে সময় দিবো মায়ের দিকে তাকালেই যেনো মনে হয়। ওই মুখ থেকে সারা জীবনের জন্য হাসি মুছে দেওয়ার পিছনে আমি দায়ী। নিজের বাবার মৃত্যুর জন্য আমি দায়ী উফফ এই যন্ত্রণা থেকে কবে মুক্তি পাবো।

নিজের রুমের সামনে দাড়িয়ে আছে শশী ওর কোলবালিশ ছাড়া ঘুম আসেনা তাই সেটা নেওয়ার জন্যই আসা কিন্তু রুমের মধ্যে থেকে জোরে কথা বলার আওয়াজ শুনে আর ভিতরে যাওয়ার সাহস হয়নি। কিছুক্ষণ পর কোনো সাড়া না পেয়ে ভিতরে ঢুকলো। সমুদ্র তখন চেয়ারে বসে ফোন টিপছিলো শশীকে দেখে এক নজর তাকিয়ে আবার ফোনে মগ্ন হয়ে গেলো। শশী রেগে দাঁত কিড়মিড় করে সমুদ্র কে একবার দেখে বিছানায় উঠে গেলো। কোলবালিশ নিতে নিতে নিজের মনে বিরবির করতে লাগল।

ইস এক বেলায় বিছানাটা কেমন অগোছালো বানায় ফেলছে। পুরো রুম এলোমেলো করে ফেলছে। যদি জানতাম এই লোকটা আমাদের বাড়ি আমার রুমে থাকবে তাহলে তখনি ওনাকে ওনার গাড়ি সমেত ঢাকায় ফেরত পাঠায় দিতাম।

কোলবালিশ টা দুই হাতে নিয়ে বিছানা থেকে নেমে পিছন ঘুরতেই কারো শক্ত বুকের সাথে ধাক্কা খেলো শশী। নাকে হাত দিয়ে ডলতে ডলতে বলল, উফফ এতো শক্ত কারো বুক হয় আমার নাকটা পুরো চাপ্টা বানায় দিছে।

সমুদ্র গম্ভীর কন্ঠে বলল, তোমার কাজ শেষ হলে রুম থেকে যাও।

কথাটা শশীর ইগোতে লাগল যদিও সামনে থাকা বিশাল দেহি লোকটাকে দেখে ভয় লাগছে তবুও অনেক খানি সাহস সঞ্চয় করে মিনমিন করে বলল, দেখুন এটা আমার রুম এই রুমের কোনো জিনিসে হাত দিবেন নাহ। আর এই মাথার উপরে ঝুলতে থাকা তারাতে তো আরো নয়। আর দেওয়ালে থাকা ফুল, বাকিটা বলার আগেই সমুদ্র শশীর হাতের কব্জি ধরে টেনে রুমের বাইরে এনে ধরাম করে দরজা লাগিয়ে দিলো। শশী পুরো বোকা বনে গেলো কোলবালিশ চেপে ধরে রেগে দরজায় লাত্থি দিয়ে বলল।

শুধু আব্বা বলেছে অতিথি সম্মানিয় তাই কিছু বললাম নাহ নয়ত দেখিয়ে দিতাম এই শশী কি জিনিস। কত বড় সাহস আমাকে আমার রুম থেকে বের করে দেয়। আমি বুঝি নাহ বাড়িতে কোনো মেহমান আসলে বার বার শুধু আমাকেই কেনো নিজের রুম ছাড়তে হয়।

একা একা বকবক করতে করতে কোলবালিশ নিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো তখনি সামনে থেকে আসা কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে হাত থেকে কোলবালিশ টি নিচে পড়ে গেলো। শশী রেগে সামনে তাকিয়ে বলল, এই চোখে দেখেন না নাকি এভাবে ধাক্কা দিলেন কেনো।

কিন্তু সামনে থাকা লোকটার কোনো সাড়া নেই সেতো খোলা চুলে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এই ছোটো মেয়েটাকে দেখে ব্যাস্ত। কেউ এতোটা সুন্দর কীভাবে হতে পারে এ যেনো রং তুলি দিয়ে আঁকা কোনো ফুটন্ত গোলাপ। সামনের জনের কোনো সাড়া না পেয়ে শশী হাত নাড়িয়ে বলল আরে ঘুমিয়ে গেলেন নাকি কে আপনি?

আমি রোদ্র তোমাদের বাড়িতে আসা সম্মানিত মেহমান।

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে