#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_২৫
,
বন্ধ দরজার সামনে সমানে পায়চারী করে যাচ্ছে শশী। পারভিন বলেছিলো সমুদ্রের জন্য নাস্তা রেডি করে রুমে রেখে আসতে, কিন্তু সেটা করার মতো কোনো মন মানসিকতা শশীর আপাতত নেই টেনশনে ঠিক মতো এক জায়গায় বসতে অবধি পারছে নাহ। এসে পরনের জামা পযন্ত এখনো পাল্টায়নি, একবার বন্ধ দরজায় কান পাতছে তো আবার ঘন ঘন পায়চারী করছে। আব্বার সাথে কি এমন কথা থাকতে পারে ওনার যে এসেই এভাবে দরজা বন্ধ করে আলোচনা শুরু করছে। কোনো ভাবে কি ওনি কালকে রাতের কথাটা আব্বাকে বলছে? হায় হায় তাহলে তো সর্বনাশ আমি আব্বার সামনে মুখ দেখাবো কীভাবে, কি জন্য যে ওমন লোকের প্রেমে পড়তে গেলাম। আর পড়েছি তো কি হয়েছে এতো ঘটা করে ওনাকে জানানোর কি ছিলো, ভালোত দূর থেকেও বাসা যায়। ধ্যাত কেনো যে ওনাকে কথাগুলো বলেছিলাম না বললেই ভালো হতো, এই জন্যই লোকে বলে চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে।
তাহলে তুমি সত্যি বিয়েটা করবে?
জামশেদ মাস্টার এর গম্ভীর কন্ঠে কথাটা শুনে সমুদ্র এবার বিরক্তি নিয়ে গা-ছাড়া ভাব নিয়ে বলল, যদি মিথ্যা বিয়ে করা যায় তাহলে ওটাও করতে পারি।
সমুদ্রের কথায় এবার ওনিও নড়েচড়ে বসে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল, আমি কিন্তু সিরিয়াস কথা বলছি, তোমার আর শশীর বয়সের দিক টাও একটু ভাবো। ওর জন্য তোমার বয়সটা একটু নয় বরং বেশিই মনে হচ্ছে আমার কাছে, আর তাছাড়া ও এখনো অনেক ছোট।
সমুদ্রের এবার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেলো এসব কথাতো ওনার সাথে আরো আগেই হয়ে গিছিলো তাহলে এখন এসব কথার মানে কি? আর ওনি যে এভাবে সবার আড়ালে ডেকে যে এসব কথা বলবে সেটা সমুদ্রের আগে থেকেই মনে হয়েছিলো। তাই এবার তেড়্যাভাবে জবাব দিলো, কেনো আপনার মেয়েকে কি দুধের শিশুর সাথে বিয়ে দিবেন? যদি জানতেন আপনার মেয়ে ভিতরে ভিতরে কত বড় হয়ে গেছে তহলে এখনি আমার কোলে তুলে দিতেন। শেষের কথাটা আস্তে করে বলে কিছু একটা মনে হতেই সমুদ্র চেয়ারে হেলান দিয়ে বেশ আয়েশ করে বসে একটু কথার খোঁচা দিয়ে বলল, শুনেছি আপনি নাকি যে বাড়িতে লজিং থেকে মাস্টারি করতেন ওই বাড়িই মেয়েকেই ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করেছেন। নিজেতো ঠিকি প্রেম করে বিয়ে করেছেন তখন নাকি আপনার বয়সও অনেক ছিলো আর আন্টি নিতান্তই ছোট ছিলো। নিজে বুড়ো হয়ে একটা দুধের শিশুকে ভুলিয়ে ভালিয়ে বিয়ে করতে পারেন আর এখন আমার বেলায় এতো এতো জ্ঞান কোথা থেকে আসছে? বা বা নিজের বেলায় ষোলো আনা আর আমার বেলায় চারা-না নো নো এটা তো আমি মেনে নিবো না মাস্টার মশাই।
সমুদ্রের কথা শুনে জামশেদ মাস্টার বড় বড় চোখ করে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে কাশতে লাগল। অতঃপর গলা পরিষ্কার করে বলল, আমি মোটেও ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করিনি নিজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে তারপর পারভিন কে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে ছিলাম।
তো তাহলে কি আমি বেকার? এমন ভাবে বলছেন যেনো আমি বেকার লাফাঙ্গা ছেলে কাজ কাম কিছু করি নাহ বাবার হোটেলে বসে খাই এই জন্য মেয়ে দিতে ভয় পাচ্ছেন, শুনুন মাস্টার মশাই মেয়েকে আমার সাথে বিয়ে না দিলে কিন্তু তুলে নিয়ে যাবো। তখন বসে বসে মাথায় হাত দিয়ে হায় হায় করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে নাহ।
সমুদ্রের কথা শুনে একের পর এক ঝটকা খাচ্ছে জামশেদ মাস্টার তার জানামতে সমুদ্র মোটেও এমন নয়, কথা কম বলা গম্ভীর একটা ছেলে প্রথমে দেখে তো সেটাই মনে হয়েছিলো কিন্তু আজকের সমুদ্রের সাথে আগের সমুদ্রের কোনো মিল খুঁজে পাচ্ছে নাহ। ওনার ভাবনার মাঝেই সমুদ্র নিজের মুখটা একটু ওনার দিকে এগিয়ে নিয়ে এসে আস্তে আস্তে বলল, আমার কেমন জানি একটা ডাউট হচ্ছে মাস্টার মশাই।
সমুদ্রের এমন করা দেখে এবার ওনিও বেশ সিরিয়াস হয়ে নিজের মাথাটা সমুদ্রের দিকে এগিয়ে নিয়ে মাথার সাথে মাথা ঠেকিয়ে ফিসফিস করে বলল, কি বলোত?
সত্যি কি আপনারা ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন? নাকি আন্টিকে কোনো জাদুটোনা করে বিয়ে করেছেন। না দেখুন আপনার মাথার সবগুলো চুল কেমন পেঁকে গেছে আবার ভূড়িটাও কেমন বেড়ে গেছে আর ওদিকে আন্টি এখনো কত সুন্দরী যেনো সাজিয়ে গুজিয়ে আবারও বিয়ে দেওয়া যাবে। সত্যি করে বলেন তো মাস্টার মশাই কাহিনী কি?
এবার বোধহয় হয় স্কুলের সবচেয়ে রাগী আর গম্ভীর জামশেদ মাস্টার হার্ট অ্যাটাক করেই ফেলবে। সমুদ্রের কথা শুনে তাড়াক করে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে এক নিশ্বাসে পুরো পানিটা সাবাড় করে দিলো। না না এই ছেলেকে এতো হালকা করে নেওয়া মোটেও ঠিক হবে নাহ, এটা ছেলে নাকি পুরো একটা তুফান বাপরে বাপ বুকের ভিতর এখনো ধুপধাপ করছে৷ কথাগুলো ভেবে পিছন ফিরে সমুদ্রের দিকে তাকালো দেখলো সমুদ্র গা-ছাড়া একটা ভাব নিয়ে চেয়ারে বসে আছে। ওকে দেখলে কেউ বলবে যে ও একটু আগে কত নিলর্জ্জ মার্কা কথা বলেছে, ওনি নিজেকে ঠিক করে হালকা কাশি দিয়ে বলল, আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে তুমি যাও চা নাস্তা খাও আমি তোমার মায়ের সাথে কথা বলবো।
সমুদ্র চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে গায়ের শার্টটা ঝেড়ে টানতে টানতে বলল, একটু জলদি কথাটা বলিয়েন আমার হাতে সময় কম।
তোমার কি লজ্জা সরম নেই নিজের বিয়ের কথা এভাবে নিজে এসে বলছো তাও আবার আমার কাছেই।
আজব এখানে লজ্জার কি আছে, বিয়ে করবো আমি সংসার করবো আমি মেহনত করে আপনাকে নানা বানাবো আমি তাহলে এখানে আমার লজ্জা পাওয়ার কি আছে। আর আমি লজ্জা পেলে আপনি নানা হতে পারবেন বলুন?
না না এই ছেলের সাথে আর একটা কথাও বাড়ানো যাবে না মুখ খুললেই কথা নয় যেনো এক একটা বোমা বের হচ্ছে। মনে মনে কথাটা বলে মুখে বলল, আচ্ছা ঠিক আছে তুমি এখন বসার ঘরে যাও তোমার আন্টি তোমায় ডেকেছে।
সমুদ্র একবার হুবু শশুরের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে টেবিল এর উপর থেকে নিজের ফোনটা নিয়ে বেরিয়ে গেলো। সমুদ্র চলে যেতেই ধপ করে খাটে বসে পড়লেন ওনি বুকে হাত দিয়ে লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে নিজে নিজেই বলল, বাঁচা গেলো এই ছেলের সাথে কথা বলতে গেলে দেখছি বুঝেশুনে মেপে মেপে বলতে হবে। কথাটা বলতে বলতেই রুমের মধ্যে থাকা বড় আয়নার দিকে চোখ গেলো ওনার উঠে দাঁড়িয়ে আয়নার দিকে এগিয়ে গেলো। নিজের অবয়ব এর দিকে তাকিয়ে নিজে নিজেই বলল, সত্যিতো মাথার চুলগুলো সব পাঁকতে বসেছে আবার ভূড়িটাও দিনকে দিন বেড়েই চলেছে থামার কোনো নামগন্ধ নেই। শ্বাস বন্ধ করে পেটটা একটু ভিতরের দিকে নেওয়ার চেষ্টা করলো তখনি পারভিন আঁচলের সাথে হাত মুছতে মুছতে রুমে এসে বলল।
একি সমুদ্র কোথায় গেলো আপনার সাথেই তো ছিলো, আমি আরো সবকিছু এখানেই আনতে বললাম অথচ সমুদ্রই এখানে নেই।
বাইরেই কোথাও আছে হয়ত এইমাত্রই বেড়িয়ে গেলো। কথাটা বলেই আবার আয়নার দিকে তাকালো, পারভিন তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ওনি পিছন থেকে ডেকে বলল, আচ্ছা বড় বউ আমি কি বুড়ো হয়ে যাচ্ছি? পেটটাও কেমন বেড়ে যাচ্ছে তবে তুমি যদি অনুমতি দাও তাহলে চুলে কলপ করতে পারি কি বলো নইলে তো দেখছি তোমার পাশে আমায় মানাবেই নাহ। শেষে একসাথে কোথাও গেলে লোকে তোমাকে ভাবি আর আমাকে চাচা বলবে।
স্বামীর মুখে এমন কথাশুনে পারভিন অবাক হয়ে স্বামীর দিকে তাকালো অতঃপর রেগে বলল, বুড়ো বয়সে ভীমরতি বলি দিন দিন বয়স কমে যাচ্ছে নাকি যে জোয়ান হবে। মাঝে মাঝে আপনার কি যে হয় আমি গেলাম হাতে অনেক কাজ আছে, ছোটো আর মেজো হেঁসেলে কি করছে কে জানে।
,,,,,,,,,,,,,
ছোটোমা ডেকেছিলো এইজন্য শশী রান্নাঘরের দিকে গিয়েছিলো কাজটা শেষ হতেই আবার তড়িঘড়ি করে বাবার রুমের দিকে যাচ্ছে। এতোক্ষণে লোকটা আব্বাকে না জানি উল্টো পাল্টা কি কি কথা বলেছে, এই মুখ কীভাবে আব্বাকে দেখাবো। ওনি যদি আব্বাকে বলে যে আমি ওনাকে প্রেমের প্রস্তাব দিছি তাহলে তো যেটুকু মান ইজ্জত আছে তাও আর থাকবে নাহ। এগুলো বিরবির করতে করতে করতে শশী ওর আব্বার রুমের দিকে যাচ্ছিলো তখনি সমুদ্রের সাথে ধাক্কা খেলো। সমুদ্রের বুকের সাথে ধাক্কা লাগতেই নাকে বেশ বেথ্যা পেলো ডান হাতে নাক ডলতে ডলতে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল, আপনি আব্বা কে কি বললেন এতো সময় ধরে? আর আব্বা কি বলল? এতো সময় লাগলো কেনো? কি কথা হয়েছে আমাকে বলুন।
শশীর কথাশুনে সমুদ্র প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে শশীর দিকে একটু ঝুঁকে মুখটা ওর কানের কাছে নামিয়ে এনে ক্ষীণ স্বরে বলল, তোমার আব্বা বলেছে ওনার মেয়েকে বেশি বেশি ভালোবাসতে আর অনেক অনেক চুমু দিতে।
কথাটা বলেই সমুদ্র সোজা শশীকে পাড় করে শিস বাজাতে বাজাতে চলে গেলো, শশী এখনো হা করে সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। আব্বা ওনাকে এই কথা বলেছে? নিজে নিজেই কথাটা ভেবে পরক্ষণেই আবার বলল, আমিও না ওনার কথা বিশ্বাস করে কি সব কথা ভাবছি আব্বা কেনো ওনাকে এই কথা বলবে।
,,,,,,,,,,,
সবাই এতো এতো অনুরোধ করেও সমুদ্র কে থামাতে পারেনি। রাতেই বেরিয়ে পড়েছে রাতে রাস্তা ফাঁকা থাকবে তাই কোনো সম্যসা হবে নাহ এই বলে। আপাতত রাস্তায় তেমন কোনো গাড়ি নেই ফুরফুরে মেজাজে গাড়ি টেনে চলেছে সমুদ্র, শশীর মুখটা চোখের সামনে ভাসতেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুৃঁটে উঠল। বিকেলে জামশেদ মাস্টার এর সাথে হওয়া কথপোকথন মনে হতেই বেশ উচ্চ স্বরে হেসে উঠল সমুদ্র, এখন যদি শশী ওকে দেখতো তাহলে মেয়েটা বেশ চমকে যেতো। সামনে বড় আলো দেখতেই গাড়ির স্পিড খানিক কমায়ে দিলো সমুদ্র, সামনে ঠিক কি গাড়ি আর গাড়িটা কতবড় সেটা আন্দাজ করা যাচ্ছে নাহ প্রখর আলোতে পিছনের অংশ অদৃশ্যের মতন। এবার বেশ ধীর গতীতে গাড়ি চলাচ্ছে সামনে যেতেই চোখের সামনে সারি সারি দাঁড় করিয়ে রাখা ট্রাক দেখে সমুদ্র গাড়ি থামিয়ে দিলো। সামনের রাস্তা পুরোটাই বন্ধ, কিছু একটা মনে হতেই সমুদ্র তড়িঘড়ি করে সিট বেল খুললো যখনি গাড়ির দরজা খুলতে যাবে ওমনি পিছন থেকে একটা গাড়ি এসে সমুদ্রের জিপটাতে জোরে ধাক্কা মারল। সিট বেল না থাকায় সামনে খানিকটা ঝুঁকে সামনের গ্লাসের সাথে মাথায় আঘাত লাগল। পিছনের গাড়িটা হয়ত বেশ কিছুক্ষণ ধরেই ফলো করছিলো কিন্তু অন্যমনষ্ক থাকায় সমুদ্র সেটা বুঝতে পারেনি। সোজা হয়ে বসে কপালে হাত দিতেই বুঝতে পারলো রক্ত, কপালের কোনায় কেঁটে গেছে। সেদিকে পাত্তা না দিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকাতেই দেখলো দশ চাকার বেশ বড়সড় একটা মালবাহী ট্রাক সেটাই ওর গাড়িটিকে ধাক্কা দিয়েছে। ট্রাকটা এখন পিছনের দিকে যাচ্ছে হয়ত আবারও ধাক্কা দেওয়ার প্লান আছে।
ওহ শিট।
কথাটা বলেই সমুদ্র তড়িঘড়ি করে ফোনটা বের করলো পিছনে তাকিয়ে থেকেই কাউকে কল দিলো। ফোন রিসিভ হতেই সমুদ্র বলা শুরু করলো, ইমরান তোমাকে একটা লোকেশন পাঠিয়েছি যলদি গাড়ি নিয়ে সেখানে চলে এসো সময় অনেক কম হারিআপ৷ আর হ্যাঁ আসার আগে কি করতে হবে মনে আছে তো?
অবশ্যই স্যার আপনি শুধু কয়েক মিনিট ওদিকটা সামাল দেন আমি যত দ্রুত সম্ভব আসছি।
#চলবে?
#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_২৬
,
বিছানার উপর থাকা ফোনটা অনবরত বেজেই চলেছে, ওয়াশরুমের দরজা খুলে টাওয়াল দিয়ে শরীল মুছতে মুছতে বেরিয়ে এলো সমুদ্র। বিছানা থেকে ফোনটা তুলে পুনরায় কল আসার আগেই সমুদ্র ফিরতি কল দিলো।
আপনি ঠিক আছেন? আন্টি বলল মাথায় আঘাত পেয়েছেন। ক্ষতটা কি অনেক গভীর? নিশ্চয়ই জ্বালা করছে আর আপনিও সেখানে ঔষধ লাগাননি৷ আমিতো চিনি আপনাকে কেমন ধরনের লোক আপনি, ঔষধ লাগাবেন কেনো আপনি তো বীর বাহাদুর তাই নাহ? বলছি আমি কি আসবো?
ফোনের ওপাশে চিকন কন্ঠে উৎকন্ঠা নিয়ে এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে থামল শশী, গলার টাওয়াল টা বেডের এককোণে ছুঁড়ে ফেলে সটান শুয়ে পড়ল সমুদ্র । শাসন করছো আমায়? তোমার তো ভারি সাহস মেয়ে এতোটুকু একটা বাচ্চা মেয়ে হয়ে আমাকে শাসন করছো। আর তুমি এসে কি করবে তুমি কি ডাক্তার নাকি?
সমুদ্রের কথাশুনে মিইয়ে গেলো শশী, কথার পিঠে আর কোনো জবাব দিলো নাহ। তখন সমুদ্রের চিন্তায় কথাগুলো বলেছে তবে এখন আর কোনো কিছু বলার সাহস হচ্ছে নাহ। শশীকে চুপ থাকতে দেখে সমুদ্র কান থেকে ফোনটা সরিয়ে সামনে এনে স্কিনের উপর চোখ বুলিয়ে হালকা হেসে নরম কন্ঠে ছোট্ট করে বলল,
ঠিক আছি আমি।
এই এতোটুক কথায় শশীর সাহস বাড়ানোর জন্য যথেষ্ট ছিলো, এবার বেশ আগ্রহ নিয়ে বলে উঠল, এসব হলো কি করে? মা কাকি সবাই কত করে বলল থাকতে তাদের কথা না শুনেতো বেড়িয়ে গেলেন, এখন বুঝতেছেন তো বড়দের কথা না শুনলে কি হয়।
হুম খুব বুঝতেছি তুমি ভারী চালাক মেয়ে দেখছি নিজের লাভের জন্য আন্টিদের দিয়ে আমাকে থাকতে বলিয়েছ।
সমুদ্রের কথায় শশী বেশ অবাক হলো বিষ্ময় নিয়ে বলল, এখানে লাভের কি আছে আর আপনি থাকলে আমার কি লাভ?
হুম এখনতো সব বুঝেও না বোঝার অভিনয় করছো, তুমি বেশ ভালো করেই জানো যে তোমার কাছাকাছি থাকলে আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবো নাহ। আর তুমি সেটার সুযোগ নিয়ে আমাকে দিয়ে ফ্রিতে আদর করিয়ে নিবা কি ভেবেছো আমি কিছু বুঝি নাহ।
সমুদ্রের কথায় শশীর চোখ বড় বড় হয়ে গেলো, ছিঃ ছিঃ এসব তো আমার ভাবনারও বাহিরে আর এই লোকটা কিসের সাথে কি মিলিয়ে কতকিছু ভেবে ফেলেছে। সত্যি ওনার লজ্জা শরমের বালাই নেই দেখছি, শশী লজ্জায় বাঁ হাতে নিজের মুখ ঢাকার চেষ্টা করলো কিন্তু ব্যার্থ হলো এই জন্য কথা ঘুরাতে ফের সমুদ্র কে প্রশ্ন করল, বলুন না এসব কীভাবে হলো?
আরে ওসব কিছু নাহ কিছু কুকুর পিছে লেগেছিলো কিন্তু কাঁমড়াতে না পেরে আহত হয়ে ফিরে গেছে৷ দাঁতে দাঁত চেপে কথাটা বলল সমুদ্র, কথাটা বলার সময় রাগে হাত মুঠো করে সামনের দেওয়াল এর দিকে তাকিয়ে ছিলো। সমুদ্রের কথা শশী বুঝতে না পেরে ফিরতি আবার প্রশ্ন করে বসল, কিন্তু আপনি তো গাড়ির মধ্যে ছিলেন তাহলে আঘাত পেলেন কীভাবে?
ও তুমি বুঝবে নাহ এটা চার পা ওয়ালা কুকুর নয় মানুষ রুপি দুই পা ওয়ালা কুকুর। এখন এতো বেশি কথা না বলে ঘুমিয়ে পড়ো ছোট মাথায় এতো চাপ নেওয়া মোটেও ঠিক হবে নাহ। আর এভাবে রাত জেগে শরীল নষ্ট না করে শরীলের যত্ন নাও কারণ কিছুদিন পরে তোমার ওই নরম শরীলের উপর দিয়ে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় বইবে।
কথাটা বলেই সমুদ্র খট করে ফোন কেটে দিলো, শশী হা করে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে সমুদ্রের কথার মাথা মুন্ডু তৎক্ষনাৎ ও কিছুই বুঝতে পারেনি তবে কিছুক্ষণ ভাবার পর যখন সমুদ্রের কথার মানেটা বুঝতে পারলো লজ্জায় ফর্সা মুখটা লাল হয়ে উঠল৷ পাশ থেকে কাথাটা নিয়ে নিজের পুরো শরীল টা আবৃত করে নিলো, এখন আর কিছুতেই ও সমুদ্রের সাথে কথা বলবে নাহ লোকটা বড়ই বেহায়া ঠোঁটকাটা, যখন যা মুখে আসে সেটাই বলে দেয়।
,,,,,,,,,,,
তোর কি বুদ্ধি সুদ্ধি সব লোপ পেয়েছে? তোকে এতোবার করে নিষেধ করার পরেও কেনো সমুদ্রের উপর আক্রমণ করিয়েছিস?
তো কি করতাম আমি ফুপি বসে বসে নিজের ধ্বংসের জন্য অপেক্ষা করতাম? ওই সমুদ্র একের পর এক আমার ক্ষতি করে যাচ্ছে আর আমি কিছু না করে কাপুরুষের মতো হাত গুটিয়ে বসে থাকবো?
জোসেফ রেগে কথাটা বলেই টেবিলের উপর থেকে কাঁচের গ্লাসটা ফেলে দিলো, মালবিকা চোখ বন্ধ করে নিজের রাগটাকে সংবরণ করছে। বিরবির করে বলল, একদম নিজের বাপের মতো ধৈর্যহীন একটা গাঁধা তৈরি হয়েছে। বোনটাকেও নিজের মতোই বানিয়েছে দিনরাত শুধু সমুদ্রের নাম যপে ওটাকে তো সামলে লন্ডনে পাঠিয়েছি এবার এটাকে সামলাতে হবে৷ ঠোঁট গোল করে আস্তে করে একটা শ্বাস ছেড়ে মালবিকা জোসেফ এর কাছে গেলো ওর কাঁধে হাত রেখে শান্ত করার জন্য বলল।
আচ্ছা ঠিক আছে আমি মানছি তুই যেটা করেছিস একদম ঠিক করেছিস সমুদ্রের এইটুকু আঘাত দেওয়ার দরকার ছিলো৷ কিন্তু তোকেও তো বাঁচতে হবে এখন তুই যদি না থাকিস তাহলে সমুদ্র কে নিঃশেষ করবি কীভাবে?
ফুপির কথা বুঝতে না পেরে জোসেফ মালবিকার দিকে তাকিয়ে বলল, মানে?
মানে হলো তোকে কয়দিন এর জন্য দেশের বাইরে যেতে হবে।
ওহ তারমানে তুমি আমাকে পালাতে বলছো তাইতো? তুমি এটা ভাবলেও কীভাবে ফুপি যে আমি ওই সমুদ্রের ভয়ে দেশ ছেড়ে পালাবো। ভুলে যেও না ক্ষমতায় আমি ওর থেকেও উপরে, আমি চাইলেই ক্ষমতার জোড়ে ওকে আমার বাড়ির চাকর বানিয়ে রাখতে পারি।
জোসেফ এর কথায় মালবিকার রাগ হলেও সেটা গিলে নিয়ে নরম কন্ঠে বোঝানোর স্বরে বলল, আচ্ছা আমি মানছি যে তুই যেটা বলছিস সেটা সঠিক, কিন্তু এটাও তোকে মানতে হবে যে সমুদ্রের ও কিন্তু ক্ষমতা কম নয়। আর সামনে ইলেকশন এখন যদি তোর উপর কোনো দোষ পড়ে তাহলে আর সামনে আগাতে পারবি? শোন রাজনীতি হলো সাদা কাপড়ের মতো যার ভিতরে অসংখ্য দাগ থাকলেও সাধারণ জনগণ এর কাছে সেটাকে ধবধবে সাদা দেখাতে হয় ওখানে এক ফোঁটা দাগ লাগলেও সেটা সবার আগে চোখে পড়ে। তাই আমি যেটা বলছি সেটা কর, আর তোকে কে বলল যে তোকে সমুদ্রের ভয়ে বাইরে পাঠাচ্ছি তোকে ওখানে গিয়ে আমার একটা কাজ করে দিতে হবে।
কেমন কাজ?
সেটা সময় হলেই বুঝতে পারবি, আমি সব রেডি করে দিচ্ছি আজকে রাতের মধ্যেই তুই রওনা দিবি আর তোকে একজন এর সাথে দেখা করে কথাও বলতে হবে।
,,,,,,,,,,,
এই দিয়ে পঞ্চম বারের মতো কল দিলো শশীর ফোনে কিন্তু প্রথম বারের মতোই ওপাশ থেকে চিকন মেয়েলি স্বরে ফের বলে উঠল, আপনি যাকে কল দিয়েছেন সে এই মুহুর্তে ব্যাস্ত আছে। এইটুকু শুনেই ফোন কেটে পাশে ছুড়ে ফেলল রোদ্র, এতো কিসের ব্যাস্ত তুমি শশী সত্যি তুমি আমাকে অনেক বেশি পোড়াচ্ছো একটা বার তোমায় নিজের করে নিই তারপর সবটা সুদে আসলে মিটিয়ে নেবো। কথাটা বলেই নিজের মনে হেসে উঠল রোদ্র।
দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে পুরোটাই দেখলো শাহানারা বুকের ভিতরটা বড্ড জ্বলছে, এক ছেলের খুশির জন্য এখন তাকে অন্য ছেলের মুখের হাসি কেড়ে নিতে হবে। মনকে শক্ত করে ঘরের ভিতরে পা বাড়ালো, হাতে থাকা জিনিসগুলো বিছানার উপর রেখে রোদ্রের পাশে বসল। মাকে হঠাৎ গহনাপত্র নিয়ে নিজের রুমে দেখে অবাক বনে গেলো রোদ্র তবুও কৌতূহল চেপে রেখে মুচকি হেসে মাকে সুধালো।
এগুলো কার মা?
শশীর জন্য আরো আগেই বানিয়ে রেখেছিলাম যেদিন কথাহলো তারপর থেকে বানাতে দিয়েছিলাম। সমুদ্র কে তো এসব বলে লাভ নেই ও এসবের কিছুই বুঝবে না তুই একটু আমার হাতে হাতে সাহায্য করে দে তো এখনো কত কাজ বাকি।
মায়ের কথাগুলো পুরোটাই মাথার উপর দিয়ে গেলো রোদ্রের, কিছু বুঝতে না পারায় শাহানারাকে প্রশ্ন করলো, আমি তোমার কথা কিছুই বুঝতে পারছি নাহ মা। গয়নাগুলো শশীর জন্য বানিয়েছো ঠিক আছে বিয়েতে তো ওকে গয়না দেওয়া লাগবে কিন্তু তার পরের কথাগুলো বুঝতে পারেনি।
ছেলের কথায় এবার শাহানারা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে কথা ঘুরানোর জন্য হাতের ফোনটা রোদ্রের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, এটা হলো তোর বাবার বন্ধু শফিক ভাইকে মনে আছে? ওনার মেয়ে, দেখতে মাশাল্লাহ আবার নাকি ডাক্তারি পরছে তোর বাকিটা বলার আগেই রোদ্র শাহানারার থেকে ফোনটা নিজের হাতে নিয়ে স্কিনে থাকা মেয়েটার ছবির দিকে তাকিয়ে হেসে বলল, বাহ বেশ দেখতে তো একেতো ভাইয়ার সাথে বেশ মানাবে, তাহলে কি ভাইয়া বিয়ে করতে রাজি হয়েছে? কিন্তু তুমিতো আমাকে কিছু বললে নাহ।
সমুদ্রের জন্য নয় একে আমি তোর জন্য পছন্দ করেছি, আমি চাইছি সমুদ্রের বিয়ের পরপরই তোর বিয়েটাও দিয়ে দিতে।
মায়ের কথায় রোদ্রের হাসি মাখা মুখটা কালো হয়ে গেলো, কিন্তু পরক্ষণেই আবার হেসে বলল, ধূর আমি কেনো একে বিয়ে করতে যাবো, তুমিও না মা এমন এমন মজা করো আমাকে পুরো ভয় পাইয়ে দাও। আর তাছাড়া আমিতো তোমাকে বলেই রেখেছি যে আমি শশীকে বিয়ে, বাকিটা বলার আগেই শাহানারা রোদ্রকে থামিয়ে দিয়ে শক্ত করে রোদ্রের হাতটা চেপে ধরে বলল।
শশীর সঙ্গে সমুদ্রের বিয়ে সামনের সপ্তাহে।
#চলবে?