#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_১৮
,
ওয়াও অনেক সুন্দর কেউ এতোটা সুন্দর কীভাবে হতে পারে? আসলে আমিও বোকা যে ছবিটা এঁকেছে তার হাতে জাদু আছে এই জন্য সামান্য কিছুও অনেক অসামান্য হয়ে উঠে।
পিছন থেকে আসা চিকন মেয়েলি গলার স্বর শুনে রোদ্র পিছনে তাকালো, তারপর হাতের তুলিটা পাশের টেবিলে রেখে মুচকি হেসে আর্ট বোর্ডের দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি ভুল বললে লিজা ছবির মানুষ টাই এতো সুন্দর যে আমিই তার সৌন্দর্য তুলে ধরতে পারেনি। তুমি তাকে সামনাসামনি দেখলে চোখ ফেরাতে পারবে নাহ, সে চঞ্চলা হরিণীর মতো, মুক্ত পাখির ন্যায় তার দুই ডানা মেলে নীল আকাশে উড়ে বেড়ায় যেনো মনে হয় তার ওই দুটো চোখের দিকে তাকিয়ে আমি এক জীবন পাড় করে দিতে পারবো।
আচ্ছা তাহলে এনিই বুঝি তিনি যার জন্য আমার এই বন্ধুটা তার মহা মূল্যবান মনটা সেই সুদূর বাংলাদেশে রেখে এসেছে।
লিজার কথাশুনে রোদ্র আনমনে হাসলো শশীর ছবির দিকে তাকিয়ে বলল, আমিতো সেই কবেই মন হারিয়েছি। সেই রোদ্র উজ্জ্বল দুপুরে একটা মেয়ে দূরন্ত পায়ে ছুটে চলছিলো মাটির রাস্তা দিয়ে। আমি মুগ্ধ হয়ে সেদিকে চেয়েছিলাম হঠাৎই সে চোখের পলকে হারিয়ে গেলো। আশেপাশে তাকিয়ে অনেক খুঁজেছি কিন্তু তাকে আর কোথাও পায়নি।
রোদ্র এতো হেয়ালি না করে পুরো কাহিনী টা খুলে বলো নাহ, আমার ভীষণ শুনতে ইচ্ছে করছে।
রোদ্র চোখ বন্ধ করে সেইদিন টার কথা মনে করল যেদিন শশীকে প্রথমবার দেখেছিলো। জয় আর মায়ের সাথে শহর থেকে অনেক দূরে হিজলতলী গ্রামে যাচ্ছিল। শহরের ইট পাথরের দালান ছেড়ে গ্রামের ধূলো মাখা মাটির রাস্তা ধরে এঁকেবেঁকে গাড়ি চলছিলো। তখনি পিছনে বসে থাকা মায়ের দিকে তাকিয়ে রোদ্র বলল, এখান থেকে কোন দিকে যাবো তুমি ঠিক করে চেনো তো?
ছেলের কথায় শাহানারা গাড়ির জানালা দিয়ে মুখ বের করে আশেপাশে তাকিয়ে আবার রোদ্রের দিকে চেয়ে বলল, আমিও ঠিক বুঝতে পারছি নাহ, কতদিন হলো গ্রামে আসি নাহ বাড়ি ঘর রাস্তা ঘাট কত বদলে গেছে ওদের বাড়িটা ঠিক কোন দিকে সেটাই তো বুঝতে পারছি নাহ।
মায়ের কথায় রোদ্র কিছু না বলে গাড়ি চালানোই মন দিলো। খানিক দূর গিয়ে এক পাশে গাড়ি থামিয়ে নিজে গাড়ি থেকে নামল কারো কাছ থেকে জামশেদ মাস্টার এর বাড়ি কোনটা জিগাস করার জন্য। রোদ্র কিছুটা হাঁটতেই দেখলো রাস্তার পাশে ক্ষেতের জমিতে কিছু কৃষক কাজ করছে রোদ্র ওনাদের কাছে গেলো তারপর ওনাদের কাছে জিগাস করতেই একজন রাস্তা চিনিয়ে দিলো। রোদ্র ওনাদের ধন্যবাদ জানিয়ে কেবলি রাস্তায় উঠতে যাবে তখনি পাশ থেকে মেয়েদের হাসাহাসির শব্দ শুনে সেদিকে তাকাতেই চোখ আটকে গেল। লম্বা চুলের ছোট্ট একটা মেয়ে ক্ষেতের মাঝ দিয়ে আইল ধরে দৌড়ে সামনের দিকে যাচ্ছে তার পিছন পিছন আরো অনেকগুলো মেয়ে। তাদের মধ্যে থেকেই একটা মেয়ে সামনের মেয়েটাকে বলল, আস্তে দৌড়া শশী নয়ত পড়ে যাবি আর আমরাও তো যাবো নাকি।
শশী নামটা শুনতেই রোদ্র মুখ ফুঁটে উচ্চারণ করল চাঁদ, তাহলে ওই এলোকেশীর নামটা বুঝি চাঁদ? তখনি সামনে থেকে জবাব দিলো মেয়েটা, মালেক কাকারা জমিতে পানি দেওয়ার জন্য নতুন মেশিন বসাইছে কি সুন্দর পরিষ্কার পানি একদম কাঁচের মতো। তাই জন্যই তো আমি আগে যাচ্ছি তোরা পানি নষ্ট করার আগেই আমি পানিতে ভিজবো।
রোদ্র মোহিত হলো সেই কন্ঠে একটু খানি অন্যমনষ্ক হতেই চোখের পলকে হারিয়ে গেলো তার দিনের বেলা পাওয়া চাঁদ। রোদ্র যখন অধীর চোখে আশেপাশে তাকিয়ে শশীকে খুঁজতে ব্যাস্ত তখনি রাস্তার উপর থেকে জয় রোদ্রকে ডাকলো। রোদ্র আরো কয়েকবার দেখে চলে গেলো, গাড়িতে উঠার আগে আরো একবার ক্ষেতের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলল, রাতের আকাশের চাঁদ দিনের বেলায় ধরতে গেলে বুঝি এমন ভাবেই মুখ থুবরে পড়তে হয়।
যাহ তারমানে তুমি মেয়েটাকে হারিয়ে ফেললে? তাহলে তোমার ভালোবাসাতো অসমাপ্ত রয়ে গেলো এখন কি হবে?
লিজার বোকা বোকা কথাশুনে রোদ্র হেসে বলল, আমিও প্রথমে এটাই ভেবে ছিলাম কিন্তু পরে কি হলো জানো? আমরা যেই জামশেদ মাস্টার এর বাড়িতে গিয়েছিলাম শশী আসলে ওনারই মেয়ে।
বলো কি এতো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি।
হুম সেইতো আমিতো ওকে ওখানে দেখে পুরাই অবাক বনে গিছিলাম। কিন্তু ভিতরে ভিতরে অনেক খুশি লাগছিলো।
তারপর?
ওমমম আজকে আর নাহ বাকি কথা অন্য কোনো একদিন বলবো ঠিক আছে?
,,,,,,,
আর কত হাঁটবো আমার পা বেথ্যা করছে।
কথাটা বলেই শশী বসে পড়ল, সমুদ্র হাঁটা থামিয়ে পিছন ফিরে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বলল, সামনে রাস্তায় উঠে তারপর গাড়ি নিবো। জলদি আসো তোমাকে নিয়ে ঘুরার সময় নেই আমার আর এখানে থাকা অনেক রিস্ক। কথাটা বলেই সমুদ্র হাঁটা শুরু করলো শশী এখনো মুখ গোমড়া করে বসে আছে আর বিরবির করে বলল, কি নিষ্ঠুর মানুষ ওনি জানেন আমার পায়ে ব্যাথা তবুও আমাকে হাঁটাচ্ছে আমি জানি ওনি ইচ্ছে করে এমনটা করছে। একা একা বকবক করে শশী আবার আস্তে আস্তে হাঁটা শুরু করলো। কালকের বৃষ্টিতে পুরোটা কাঁদা হয়ে আছে তার উপর জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে উঁচু নিচু পথ হাঁটতেও ভীষণ অসুবিধা হচ্ছে। শশী সামনে তাকিয়ে দেখে সমুদ্র ততক্ষণে বেশ খানি দূর চলে গেছে। শশী খোঁড়াতে খোঁড়াতে সামনের দিকে যেতে লাগল, বেশ কিছুক্ষণ হাঁটার পর শশী পানির কলকল শব্দ শুনতে পেলো হয়ত সামনেই কোথাও ঝড়না আছে। ইস যদি ওনার সাথে ঝড়নাটা দেখতে পারতাম তাহলে কত সুন্দর হতো, এসব ভাবতে ভাবতে আনমনে হেঁটে যেতেই ঠাস করে কিছু একটর সাথে ধাক্কা খেলো। শশী কপাল ঘষতে ঘষতে সামনে তাকিয়ে দেখে ও আসোলে সমুদ্রের পিঠের সাথে ধাক্কা খেয়েছে। হঠাৎ করে এভাবে এখানে সমুদ্র কে দাঁড়িয়ে যেতে দেখে শশী সমুদ্রের পাশে দাঁড়িয়ে বলল, কি ব্যাপার এখানে দাঁড়িয়ে পড়লেন যে ঝড়না দেখছেন বুঝি?
মুখটা বন্ধ করে চুপ করে দাঁড়াও।
কথাটা বলে সমুদ্র পকেট থেকে ওর ফোনটা বের করে কাউকে ফোন দিলো, কিন্তু ওপাশ থেকে বোধ-হয় সে ফোন রিসিভ করলো নাহ এই জন্য টপাটপ চপটপে হাতে মেসেজ টাইপ করে ফোনটা পকেটে রেখে সামনে তাকিয়েই ডান হাত দিয়ে শশীকে নিজের পিছনে নেওয়ার জন্য হাত বাড়ালো। হাত বাড়িয়ে শশীর দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তখনি দেখলো শশী ওর দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। সমুদ্র শশীর এভাবে তাকানো দেখে নিজের হাতের দিকে তাকালো দেখলো ওর হাত ঠিক শশীর বুক বরাবর আর একটু পিছালে সমুদ্রের হাতটা শশীর শরীলের লজ্জাষ্কর স্থানে লাগবে। বিষয়টা সমুদ্র বুঝতে পেরে দ্রুত হাত সরিয়ে নিয়ে বলল, আমার পিছনে সরিয়ে যাও।
শশী ব্যাপারটা ঠিক বুঝলো নাহ তবে সমুদ্রের কথামতো একপাশে সরে গেলো। ওদের পাশেই একটা ছোট্ট ঝড়না আর ওরা ছোটো খাটো একটা খাঁরা পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে আছে। সমুদ্র তীক্ষ্ণ চোখে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে যেনো কোনো কিছুর অপেক্ষা করছে। কিছু একটা ভেবে সমুদ্র শশীর দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি সাঁতার জানো?
হ্যাঁ কেনো বলুন তো? কথাটা বলে শশী একবার সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে পাশের ঝড়নার দিকে চেয়ে আতংকিত চোখে বলল, এই আপনি কি আমায় এখানে ফেলে দেওয়ার চিন্তা ভাবনা করছেন?
চিন্তা করছি না তোমাকে এখানেই ফেলে দেবো। কথাটা বলেই সমুদ্র শশীকে ধাক্কা দিয়ে পাশের পানির স্রোত বয়ে যাওয়া কাঁদা মাখা ছোট একটা খালমতো জায়গায় ফেলে দিলো। শশী অবাকের চমর পর্যায়ে পৌঁছে গেছে রাগে পুরো শরীল টগবগ করছে, সারা শরীল পানিতে ভিজে একাকার পায়েও বেশ খানিকটা বেথ্যা পেয়েছে। কাঁটা জায়গায় নতুন করে আবার বেথ্যা পাওয়াই ভীষণ রকম জ্বলছে। প্রায় হাঁটু অবধি কাঁদার মধ্যে অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়ায়ে সামনে তাকাতেই দেখলো সমুদ্র ওখানে নেই। শশী আশেপাশে তাকালো কিন্তু কোথাও সমুদ্র কে দেখতে পেলো নাহ ঠিক তখনি সামনের দিক থেকে বিকট একটা শব্দে শশী কান চেপে ধরে বসে পড়ল। এটা কীসের আওয়াজ ও জানে নাহ তবে মুভিতে দেখেছে গুলির আওয়াজ ঠিক এমনটাই। তাহলে এটা কি কোনো গুলির শব্দ? কিন্তু সমুদ্র কোথায় গেলো কোনো ভাবে গুলিটা ওনার লাগেনি তো? কিন্তু ওনাকে কে গুলি করবে ওনার কি কারো সাথে শুত্রুতা আছে?
#চলবে?
#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_১৯
,
এখানেই থাকার ইচ্ছে আছে নাকি? যদি থাকে তাহলে বলতে পারো আমি সেই ব্যাবস্হা করে দিতে পারি।
কাঁদার মধ্যে দাঁড়িয়ে নিচে থেকে পা ছাড়ানোর চেষ্টা করছিলাম তখনি কেউ পিছন থেকে কথাটা বলল। আমি কাঙ্খিত কন্ঠটি পেয়ে তড়িত গতিতে পিছন ফিরে সমুদ্র কে উদ্দেশ্য করে বললাম, আপনি? কোথায় ছিলেন এতোক্ষণ? আর ওটা কিসের শব্দ ছিলো?
আমি এখানেই ছিলাম তোমার চোখে সম্যসা তাই দেখতে পাওনি। এখন ওখান থেকে উঠবে নাকি এভাবেই থাকবে।
উঠতেই তো পারছি নাহ।
কথাটা বলে শশী ঠোঁট উল্টে সমুদ্রের দিকে তাকালো, দেখলো সমুদ্র ওর দিকেই তাকিয়ে আছে৷ সাথে সাথে শশী চোখ নামিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে পুনরায় উঠার চেষ্টা করলো তবে বরাবরের মতোই ব্যার্থ হলো। পায়ের কাঁটা জায়গাতেও জ্বলছে, লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে কেবলি সমুদ্র কে বলতে যাবে এখান থেকে উঠতে সাহায্য করার জন্য। তখনি হাতে টান অনুভব করল, সমুদ্র এক টানে শশীকে নিজের কোলে তুলে নিলো। হাঁটু অবধি কাঁদায় মাখামাখি কমর অবধি ভেজা। শশী পড়ে যাওয়ার ভয়ে সমুদ্রের গলা জড়িয়ে ধরলো, সমুদ্র শশীকে ঘুরিয়ে ঝড়নার দিকে করলো, ঝড়নার পরিষ্কার পানিতে শশীর পায়ের কাঁদা আস্তে আস্তে ধুয়ে যাচ্ছে। শশী আড় চোখে বারবার শুধু সমুদ্র কে দেখছে তবে সরাসরি তাকানোর সাহস নাই। সমুদ্র একবারও শশীর দিকে তাকালো নাহ সে আপাতত নিজের কাজে মগ্ন, পা ধোয়া হয়ে গেলে সমুদ্র আশেপাশে তাকিয়ে তারপর শশীকে কোলে নিয়েই হাঁটতে লাগল।
তোমরা তো চাষী নিজেদের ক্ষেত আছে।
হুম কেনো বলেন তো?
নিজেদের ক্ষেতের ভেজাল ছাড়া ধানের চাউলের ভাত খাও তাও এতো পাতলা কেনো তুমি? মনে হচ্ছে একটা আট বছরের বাচ্চা কে কোলে নিয়ে হাঁটছি।
সমুদ্রের কথা শুনে শশী মুখ অভিমানে অন্যদিকে ঘুরিয়ে রাখল, এই লোকটা সব সময় এভাবে খোঁচা দিয়ে কথা বলে সবাইকে নিজের মতো পালোয়ান মনে করে নাকি, নিজেকে তো পাঁচজন মিলেও উঠাতে পারবে কিনা সন্দেহ আবার আমাকে বলতে আসে। সমুদ্র নিজের মতো হেঁটে জঙ্গল ছেড়ে রাস্তায় উঠল, সেখানে কালো রঙের জীপ দাঁড় করানো। সমুদ্র কে আসতে দেখে ড্রাইভার চাবিটা দিয়ে চলে গেলো, সমুদ্র শশীকে সিটে বসায়ে পা ধরে উঁচু করলো। তারপর কাঁটা জায়গাটা পরিষ্কার করে সেখানে ঔষধ লাগিয়ে দিয়ে নিজে গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসলো। পায়ের জুতোটা সেই কাঁদার মধ্যেই রয়ে গেছে, শশী পুরোটা সময় সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে ছিলো এই লোকটাকে ও ঠিক বুঝতে পারে নাহ৷ কখনো কষ্ট দেয় খোঁচা দিয়ে কথা বলে আবার নিজেই সেইখানে মলম লাগিয়ে দেয়। সমুদ্র গাড়ি স্টার্ট করল পেশি বহুল দুটো হাত দিয়ে এক মনে গাড়ি চালাচ্ছে, চোখ দুটি কালো দুটো গ্লাসের আড়ালে ঢাকা। শশী আড় চোখে বারবার সমুদ্র কে দেখছে, এতোকিছু হওয়ার পরেও তার মনে হচ্ছে এই ট্রিপটা তার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর একটা ট্রিপ। ইস যদি আরো কিছুটা সময় এভাবে ওনার সাথে থাকা যেতো, কিন্তু সেটাতো সম্ভব নয় ওনি এখানে ওনার কাজের জন্য আছে আর কাজ ফেলে রেখে ওনি নিশ্চয়ই আমাকে নিয়ে ঢ্যাংঢ্যাং করে পুরো খাগড়াছড়ি ঘুরবে নাহ। শশীর এসব ভাবনার মাঝেই গাড়ি তার গন্তব্যে এসে থেমে গেলো, সমুদ্র গাড়ি থেকে নেমে শশীর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
আগেই গাড়ি থেকে নামবে নাহ আমি ভিতর থেকে আসবো তারপর।
শশীও বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানালো। সমুদ্র রিসোর্টের ভিতরে যেতে গেলে শশী পিছন থেকে জেরে চিল্লিয়ে বলল, আবার কবে আপনার সাথে দেখা হবে?
সমুদ্র পিছন ঘুরে শশীর দিকে তাকিয়ে তার চোখ থেকে সানগ্লাস টা খুলে টির্শাট এর সামনে বুকের সাথে ঝুলিয়ে রেখে বলল, আমার যখন ইচ্ছে হবে তখন। এখন এতো কথা না বলে চুপচাপ বসে থাকো আমি না আসা অবধি নামবে নাহ।
কথাগুলো বলে সমুদ্র ভিতরে চলে গেলো এদিকে শশী বসে বসে ভাবছে। ওনি কি বলে গেলো ওনার ইচ্ছে হলে তবেই আবার দেখা হবে? আচ্ছা তাহলে এই যে আমি এখানে আসলাম ঝড়ের কবলে পড়লাম তারপর ওনার সাথে দেখা হলো এগুলোও কি ওনার ইচ্ছে হয়েছে বলে হয়েছে? ধ্যাত আমিও কি যা তা ভাবছি, এখানে ওনার সাথে দেখা হওয়াটা পুরোটাই একটা এক্সিডেন্ট, আচ্ছা আমি যে পুরো একটা রাত আবার দিনের এতোটা সময় ধরে মিসিং তবুও কেউ আমার খোঁজ করলো নাহ কেনো? আন্টিতো স্যারকে বলে দিয়েছিলো আমার খেয়াল রাখতে তাহলে আমি এতোটা সময় ধরে এখানে নাই স্যার একটা বারও আমার খোঁজ নিলো নাহ? এতোটা দায়িত্ব ঙ্গানহীন তো স্যার নয় তাহলে আসলে কাহিনি টা কি? শশীর এতোসব ভাবনার মাঝেই দেখলো ওর দুই বান্ধবী ওর দিকে আসছে আর পিছনে সমুদ্র ওর স্যারদের সাথে কথা বলছে। মিলি এসে শশীর হাত ধরে বলল,
তুই ঠিক আছিস? আচ্ছা আস্তে আস্তে নেমে আয় আমরা কত টেনশনে ছিলাম জানিস? ভাগ্যিস তোকে আর্মিরা পেয়েছিলো নয়ত কি হতো এই অচেনা জায়গায়।
শশী দুজনের হাত ধরে নিচে নেমে এসে ওদের কাঁধে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে বলল, তোরা জানলি কীভাবে যে আমি কোথায় আছি?
আরে ওই যে সমুদ্র স্যার ওনিই তো, বাকিটা বলার আগেই ওখানে সমুদ্র চলে আসলো তারপর শশীকে উদ্দেশ্য করে বলল, ভিতরে গিয়ে রেস্ট নাও কালকে সকালেই সবাই ফিরে যাবে আজকে আর কোথাও বের হওয়ার দরকার নাই। আর তোমরা ওকে ধরে ভিতরে নিয়ে যাও।
কথাগুলো বলে সমুদ্র বুকের সাথে ঝুলানো সানগ্লাস টা খুলে চোখে পড়ে গাড়িতে উঠে বসল, অতঃপর সোজা ওখান থেকে বেরিয়ে গেলো। যতদূর অবধি গাড়িটা দেখা যায় শশী তাকিয়ে ছিলো কিন্তু সমুদ্র সেতো নিষ্ঠুর, পাষান তার হৃদয় একটা বারের জন্যও ফিরে তাকায়নি।
,,,,,,,,,,,,,
বাড়ি ফিরে আসার দুইদিন হয়ে গেছে পায়ের কাঁটাটা আগের থেকে অনেক টাই কমেছে। শশী নিজের ঘরে বসে বসে বই পড়ছিলো তখনি পাশে রাখা ফোনটা বেজে উঠল, কোলের উপর রাখা বইটা বন্ধ করে বা হাতে ফোনটা তুলতেই দেখলো রোদ্র কল দিয়েছে। শশী মুচকি হেসে ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে রোদ্র চিন্তিত আর রাগমিশ্রিত গলায় বলল, এই মেয়ে তোমার ফোন কই থাকে হ্যাঁ? এতোবার ফোন দেওয়ার পরেও কোনো খোঁজ খবর নাই। বলি ফোনটা দেওয়া হয়েছে কিসের জন্য নিশ্চয়ই সকাল সন্ধ্যা ধুয়ে মুছে সৌকেছে সাজিয়ে রাখার জন্য নাহ। আর মায়ের থেকে শুনলাম তুমি নাকি পিকনিকে গিয়ে হারিয়ে গিয়েছিলে ভাগ্যিস ভাই তোমাকে পেয়েছিলো নয়ত কি হতো হ্যাঁ? এই জন্যই আমি তোমার ওতোদূরে যাওয়ার কথাশুনে রাজি ছিলাম নাহ কিন্তু ভাই বলল সে ওখানে আছে তাই নয়ত কখনোই যেতে দিতাম নাহ।
সমুদ্রের কথা শুনতেই শশীর বুকের মধ্যে উথাল পাথাল ঢেউ বইতে শুরু হলো। যে সে সত্যি সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ের কবলে পড়েছে এবার আর তার রেহায় নাই৷ শশী যখন সমুদ্রের ভাবনায় মত্ত ফোনের ওপাশে রোদ্র তখন অধীর কন্ঠে হ্যালো বলতে ব্যাস্ত। আরে কথা বলছো নাহ কেনো ঘুমিয়ে পড়লে নাকি।
এটা কি ধরনের কথা রোদ্র ভাইয়া এই দিনে দুপুরে কথা বলতে বলতে কেউ ঘুমায় নাকি।
শশীর কথাশুনে রোদ্র মুচকি হাসলো, মাথাটা নরম বালিয়ে রেখে চোখ বন্ধ করে বলল, হতেও পারে বাচ্চা মানুষের বলে আবার বিশ্বাস নাই।
আমি মোটেও বাচ্চা নই ওকে।
হুম তুমিতো পাকা বুড়ি আচ্ছা শোনো আমি আর দুইমাস পর বাড়ি আসছি আর তোমার জন্যও বিশাল বড়সড় একটা সারপ্রাইজ ও আনছি।
শশী রোদ্রের কথাশুনে লজ্জা মিশ্রিত হেসে বলল, হুম আমিও তো আপনার অপেক্ষায় আছি আপনার জন্যও একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে। কথাটা বলে শশী মনে মনে বলল, একমাত্র রোদ্র ভাইয়ার সাথেই আমি সমুদ্রের ব্যাপারটা শেয়ার করতে পারবো। ওনি ছাড়া আমাকে কেউ সাহায্য করতে পারবে নাহ, আর সমুদ্র যে রাগী বাবা যদি একবার শুনে আমি ওনাকে পছন্দ করি তাহলে হয়ত বলবে, এতো ছোট্ট মাথায় এসব ভুলভাল চিন্তা তোমার আসে কীভাবে?
,,,,,,,,,,,
আজকে কলেজে অনুষ্ঠান এই জন্য সকাল সকাল আসা লাগলো। গাড়ি থেকে কলেজের গেটে নেমে দাঁড়াতেই গাড়ি চলে গেলো, শশী গাড়ি যাওয়ার আগে গাড়ির মধ্যে থাকা ইউনিফর্ম পড়া জয়কে হাত নাড়িয়ে বিদায় জানালো। আজকে কলেজে প্রবীনদের বিদায় জানানো হবে সেই উপলক্ষে বিশেষ অতিথি হিসাবে মন্ত্রী সাহেব এর আসার কথা ছিলো। তবে শেষ মুহুর্তে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় তার বদলে তার ছেলে আসবে। শশী আর আরো কিছু মেয়ে মিলে গেটের পাশ থেকে সারি সারি হয়ে ফুল ভর্তি ডালা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, কাঙ্ক্ষিত মানুষ টা এলেই তার উপর ফুলের বর্ষণ করা হবে। লম্বা বেণীটা পিছন থেকে এনে সামনের একপাশে রেখে দিয়েছে শশী, ফুলের ডালাটা কমরের সাথে ঠেকিয়ে রেখে এক হাতে ধরে রেখেছে। আর অন্য হাতের নখ কামড়াচ্ছে তখনি স্বরগোল শুনে শশী দ্রুত সোজা হয়ে দাঁড়ালো ততক্ষণে বিশেষ অতিথির আগমন হয়ে গেছে। সবাই তার উপর ফুলের বর্ষণ করতে ব্যাস্ত লোকটা ধীর গতিতে সামনের দিকে এগোচ্ছো। শশীও তার উপর ফুল দিচ্ছে লোকটা শশী পযন্ত এসে থেমে গেলো চোখ থেকে সানগ্লাস টা খুলে শশীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
হাতের নখ কাঁমড়ানো ব্যাড মার্নাস ম্যাডাম৷
কথাটা বলেই হাসি মুখেই লোকটা সামনে দিকে চলে গেলো, আর এদিকে শশী লোকটার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবছে এই লোকটাকে ভীষণ রকম চেনা চেনা লাগছে যেনো এর আগেও কোথাও দেখেছে কিন্তু কোথায়?
#চলবে?