#প্রিয়_অনুভব
#সাবরিন_জাহান_রোদেলা
#পর্ব_১৪
“আমার রুমে কি করছিস তুই?”
নাহিয়ানের ধমকে চটজলদি ওর দিকে ঘুরে তাকালো তূর্ণা। আমতা আমতা করে বললো, “না, মানে আমার জন্য কি গিফট এনেছো দেখতে এসেছিলাম।”
“আমাকে তোর বোকা মনে হয়?”
“না, না, তা মনে হবে কেনো? আমি তো… ”
নাহিয়ান ওকে থামিয়ে দিয়ে বললো, “দেখ তূর্ণা তোকে আমি ছোট বোনের মতো স্নেহ করি। তাই এমন কোনো কাজ করিস না যাতে আমার চোখে তুই নেমে মাস।”
তূর্ণা মাথা নিচু করে বললো, “আমাকে অন্য চোখে দেখো না কেনো তুমি?”
“কারণ তুই আমার বোন। বের হ এখন।”
তৃণা মাথা নিচু করে বেরিয়ে গেলো । নাহিয়ান ওর যাওয়ার পানে তাকালো। ও জানে এটা তূর্ণার আবেগ ছাড়া কিচ্ছুটি নয়। অতঃপর দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
রুমের বাইরে তূর্ণা আসতেই মুখ বাঁকিয়ে ভেঙচি কাটলো।
“ইহ, একটু নতুন সুন্দর দেখে কত ভাব! ডোন্ট কেয়ার ইউর ভাব, নতুন ক্রাশ খুঁজবো আমি আব! লা লা লালা..”
বলেই লাফাতে লাফাতে নিচে নামলো। ওদের বাড়ি নাহিয়ানদের বাড়ির সামনেই। তাই আসা যাওয়ার বেশ সুবিধা রয়েছে।
__________________________________
মুখ গোমড়া করে বসে আছে নীতি। প্রীতি তৈরি হচ্ছে, আর বর্ষা আপাতত ওর পাশে বসে ওর এই গোমড়া মুখেই ওর সাথে ছবি তুলছে। আনাফ হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে এসে বললো, “কিরে? হলো তোদের?”
প্রীতি তাড়াহুড়ো করে বললো, “আরেকটু ওয়েট!”
আনাফের চোখ নীতির দিকে গেলো।
“তুই গোমড়া মুখে বসে আছিস কেনো?”
“আমার ফোন ঠিক করিয়ে দিলে না কেউ। আমি আজ ওখানে গিয়ে ছবি তুলবো কি করে?”
বলেই ঠোঁট উল্টালো। আনাফ হেসে ওর পাশে বসলো।
“চাচীর কাছে না বলতে বললাম?”
“বলেছি, বলে ‘তোর ফোন নষ্ট হওয়ায় আমি অনেক খুশি হইছি। বাপের ছয় বছরের ইউজ করা ফোন নষ্ট হতে এত সময় যে লাগলো। আলহামদুলিল্লাহ আমি খুশি!’—”
সঙ্গে সঙ্গে তিনজন সমস্বরে হেসে উঠলো। নীতি অসহায় মুখ করে বসে রইলো। ও জানতো ওর মা ওকে ফোন কিনে দিবে না। এই একটা কারণেই বাবার ছয় বছরের ইউজ করা ফোনটা অনেক যত্নে রেখেছিল। কালকে কেনো যে বেখায়ালী হলো।
“কি নিয়ে কথা বলছিস তোরা?”
বলতে বলতেই রাদিফ ভিতরে এলো। বর্ষা ওকে দেখে উঠে প্রীতির কাছে গেলো। রাদিফ নীতির অন্য পাশে বসে পড়লো।
“আপাতত আমার ফোনের জন্য দুঃখ প্রকাশ চলছে। তোমার হাতে কি?”
রাদিফ নিজের হাতে থাকা প্যাকেটের দিকে তাকালো। অতঃপর সবার দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো। প্যাকেটটা নীতির হাতে দিয়ে বলল, “দেখ!”
নীতি ভ্রু কুঁচকে দেখতে লাগলো। বক্স জাতীয় কিছু বের করতেই চোখে খুশির ঝলক দেখা গেলো। মৃদু চিৎকার করে বললো, “ফোন!”
বলেই রাদিফের দিকে তাকালো।
“আমার?”
“হুমম!”
“তুমি কিনেছো?”
আনাফ নীতির মাথায় চাটি দিয়ে বললো, “আমরা সবাই মিলে কিনেছি।”
নীতি মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে অবাক হয়ে বললো, “মানে?”
প্রীতি নীতির সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো, “আমরা সবাই মিলে দিয়েছি!”
“সবাই?”
“হুমম, আমি, বর্ষা, রীতি আপু, রাদিফ ভাইয়া আর আনাফ ভাই…”
‘ভাইয়া’ বলতে গিয়েও আনাফের দিকে তাকিয়ে থেমে গেলো। উপস্থিত সবাই মুখ চেপে হাসলো। নীতি ফোন দেখতে দেখতে বললো, ”হঠাৎ গিফট কেনো?”
রাদিফ হেসে বললো, ”গিফট দেয়ার জন্য কোনো কারণ লাগে না। আর আমাদের নীতিরাণীর জন্য আরো লাগে না।”
নীতি এক পলক সবার দিকে তাকালো। ওর আশেপাশের মানুষগুলো ওকে কতটা ভালোবাসে। হুট করেই নাহিয়ানের কথা মনে পড়লো। সে তাকে অপছন্দ করে। মাথা থেকে ওকে ঝেড়ে ফেলে ওদের উদ্দেশ্যে বললো, “এত দামী ফোনের দরকার ছিল না!”
“হুস, অত দামীও না। আমার তো নতুন চাকরি হয়েছে। বেতনও পাইনি এখনও। তাই সবাই মিলে যা পেরেছি দিয়েছি।
নীতি আনাফের দিকে তাকিয়ে হাসলো।
”কিপটামি না করে পাঁচজন পাঁচটা ফোন দিলেও পারতে।”
আনাফ ওর চুল টেনে বললো, “ফাজিল মাইয়া!”
সবাই একসাথে হেসে দিল। রাদিফ তাড়া দিয়ে বললো, “দেরি হয়ে যাচ্ছে, চল চল।”
বর্ষা বলে উঠলো, “বড়রা যাবে না?”
”না, মানে ওখানে সব আমাদের মতোই থাকবে, তাই বড়রা যেতে চাচ্ছে না।”
বর্ষা আর কিছু বললো না। ওকে তুর্ণাই ইনভাইট করেছে। কিন্তু এখানে ওদের সাথে একসাথে যাবে বলে এসেছে। যদিও যেতে চায় নি, তবে তুর্ণা মেয়েটা জোর করেছে বেশি। অতঃপর সবাই মিলে রওনা হলো।
__________________________________
পুরো বাড়ি ঘুরে দেখছে নীতি। নিচে সবাই আছে। কিন্তু ওর ভালো লাগছে না এই গান বাজনা ভালো লাগছে না ওর। তুর্ণাদের বাড়িতেই এখন ও। তবে ওর মন ভীষণ উদাস। করিডোরের শেষে একটা ব্যালকনি আছে। নীতি ওখানে গিয়ে দাঁড়ালো।
“কি ভাবছো? আবার লোহার মাথা দিয়ে কি দুর্নীতি করার চিন্তা করছো?”
নাহিয়ানের কথা শুনে ওর দিকে তাকালো নীতি।
“মানে?”
নাহিয়ান ওর পাশে এসে দাঁড়ালো। থুতনিতে হাত বুলাতে বুলাতে বললো, “মানে বুঝো না?”
নীতি দাঁত কিড়মিড় করে কপালের সামনের চুল সরিয়ে দেখিয়ে বললো, “আপনার থুতনিও কোনো তুলার তৈরি না। রডের তৈরি। দেখেন আমার কপালের এখানে কালো হয়ে আছে। এখনও ব্যাথা করছে!”
”মেকআপের জাদু!”
“হুর বেডা!”
অতঃপর দুইজন চুপ।
“নিচে যাচ্ছো না কেনো?”
“ভালো লাগছে না!”
“কারণ?”
“কারণ লাগে না!”
“বিনা কারণে ভালো না লাগার কি মানে?”
“আপনার এত ইন্টারেস্ট কেনো?”
“তাও ঠিক!”
নীতি হাসলো।
“আমাদের আশেপাশের মানুষগুলো আমাদের এত ভালোবাসে, তবুও আমরা কেনো এমন মানুষের ভালোবাসা চাই, যাকে কখনো দেখিও নাই!”
নাহিয়ান অবাক হয়ে বললো, “মানে?”
“কিছু না!”
নাহিয়ান চুপ করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর হেসে বললো,
“আমরা না পাওয়া ভালোবাসার পিছেই বেশি ছুটি! জানিও না সেটা আদোতে সত্য নাকি মিথ্যে!”
নীতি অবাক চোখে তাকালো।
“তবে জানো, মন থেকে কিছু চাইলে, আল্লাহ একটা না একটা সময় ওই জিনিসটা দেয় আমাদের। দেরীতে হলেও দেয়!”
“মন থেকে চাইলে সব পাওয়া যায়?”
“হুমম, যদি সেটা তোমার জন্য মঙ্গলজনক হয়!”
নীতি ওর দিকে তাকিয়ে রইলো।
“থাকো, নিচে গেলাম।”
বলেই চলে গেলো। নীতি ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবলো। সঙ্গে সঙ্গে ফোন বের করলো। ফেসবুক লাইটে ঢুকলো। এমবি নেই ওর ফোনে। কাঁপা কাঁপা হাতে ‘প্রিয়’ আইডিতে ঢুকলো। পোস্টে আজও কোনো কাঙ্ক্ষিত সেই ব্যাক্তিটি নেই। বের হতে গিয়েও মেসেজ অপশনে গেলো। মেসেজ রিকুয়েস্ট এসেছে। নীতির হৃদস্পন্দন বাড়ছে। ঢোক গিলে মেসেজ চেক করতে গেলো। চেক করার সাথে সাথে থমকে গেলো ও। ধপ করে বসে পড়লো মেঝেতে। মুখে হাত দিয়ে ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে রইলো। ফুঁফিয়ে কেঁদে উঠলো ও। ওর কাঙ্ক্ষিত সে, হ্যাঁ সে! এটা সে ই! ফোনটা বুকের সাথে চেপে ধরে কাঁদছে ও। আবারও ফোনটা সামনে ধরলো ও। স্পষ্ট ওর লিখা কথাগুলো লিখেছে। বিড়বিড় করে পড়তে লাগলো!
“তুমি আমার প্রিয় প্রহরের, প্রিয় অভিমান..
তুমি আমার প্রিয় নগরের, প্রিয় ভালোবাসা!
তুমি আমার স্নিগ্ধ বিকেলের, শুভ্র রঙা লাল খামের চিরকুট..
তুমি আমার প্রিয় প্রভাতের এক ফালি রোদ্দুর!”
নীতি ঝটপট মেসেঞ্জারে ঢুকলো। কিন্তু আশেপাশে দেখে উঠে দাঁড়ালো। চোখ মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করে দৌড়ে নিচে গেলো। আনাফের কাছে গিয়ে বললো, ”বাড়ি যাবে কখন ভাইয়া?”
“নীতি, এখনও কেক কাটেনি। খাওয়া দাওয়া করে তারপর!”
“কতক্ষণ লাগবে?”
নীতির বিচলিত কণ্ঠ শুনে আনাফ চিন্তিত হলো।
“কি হয়েছে নীতি?”
আনাফের চিন্তিত মুখ দেখে নীতি শান্ত হলো।
“না এমনি, আসলে ভালো লাগছে না!”
তুর্ণা ওদের কাছেই আসছিলো। নীতির কথা শুনে বললো,”কেনো নীতি? ভালো লাগছে না কেনো?”
“না, ওই একটু মাথা ধরেছে।!”
“সে-কি ওষুধ দিবো?”
“না না লাগবে না। ঠিক আছি আমি।”
বলেই ওদের থেকে দূরে সরে গেলো। এক কোণায় গিয়ে দাঁড়ালো। এখানে কথা বলা যাবে না। বললে ও নিজেকে শান্ত রাখতে পারবে না। কিন্তু এখনও অস্থির হয়ে আছে ও।
“তুমি ঠিক আছো?”
নীতি চমকে তাকালো। নাহিয়ানের প্রশ্ন ওর কানে গেলেও উত্তর দেয়ার মত আওয়াজ আসছে না। বলতে গেলেই গলা কাঁপছে ওর।
“নীতি কি হয়েছে?”
নীতি কেঁদে উঠলো। তবে যথাসম্ভব আওয়াজ আটকানোর চেষ্টা করছে সে। নাহিয়ান ভরকে গেলো। সবাই নাচ, গান, গল্পে মত্ত। নাহিয়ান উপায় না পেয়ে নীতিকে নিচের গেস্ট রুমে নিয়ে এলো। বিছানায় ওকে বসিয়ে পানি আনতে গেলো ও। দরজা খোলাই রেখেছে। পানি এনে নীতিকে দিয়ে বললো, “খেয়ে নেও!”
নীতি বিনাবাক্যে এক নিঃশ্বাসে পুরো পানি পান করলো। অতঃপর শেষ করে গ্লাসটা নাহিয়ানের দিকে বাড়িয়ে দিলো। হেঁচকি তুলছে ও।
“কি হয়েছে নীতি? হঠাৎ কাঁদছো কেনো? কেউ কিছু বলেছে? তুর্ণার কোনো ফ্রেন্ড মিসবিহেভ করেছে?”
নীতি মাথা নাড়লো।
“তাহলে?”
“আমি জানি না কেনো কাঁদছি!”
“মজা করছো?”
“না, আমি মজা করছি না।”
“তাহলে অকারণ কাঁদার কি মানে? যে কেউ দেখলে খারাপ ভাববে। ভাববে আমাদের এখানে কিছু হয়েছে তোমার সাথে!”
“আচ্ছা, অনেকদিন থেকে চাওয়া জিনিস যদি হুট করে পেয়ে গিয়ে মানুষ কাঁদে তাহলে ওটাকে কি বলে? সুখ নাকি দুঃখ?”
“অবশ্যই সুখ!”
“সেই জন্য কাঁদছি!”
নাহিয়ান কি রিয়েকশন দিবে বুঝলো না। ওর থেকে দূরত্ব রেখে ওর পাশে বসলো ও।
“সুখের কান্না এমন ম’রার মতো?”
নীতি ওর দিকে তাকিয়ে বললো, “একদম মজা করবেন না!”
“আচ্ছা মজা করলাম না। শান্ত হও!”
নীতি শান্ত হতে পারলো না। নাহিয়ানকে দেখে ওর কান্না যেনো আরো বেরিয়ে আসতে চাইছে।
“আমি এখন সেই জিনিসকে ছুঁতে চাচ্ছি। আমি পারছি না অপেক্ষা করতে। আমার অশান্তি লাগছে। আমার দ্বারা অপেক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না।”
নীতি আরো কত কিছু বলে যাচ্ছে। নাহিয়ান না পেরে ওর সামনে হাঁটুতে ভর দিয়ে বসলো। ওর হাতে হাত রেখে বলল, ”নীতি, প্লিজ! শান্ত হও। আমার দিকে তাকাও।”
নীতি নাহিয়ানের দিকে তাকালো।
“অনেক কাঙ্ক্ষিত কোনো জিনিস যদি হুট করে আসে আমরা আনন্দিত হই। ধরো এখন তোমার রেজাল্ট আসবে আগামী মাসে। কিন্তু তুমি আগেই কারো মাধ্যমে জেনে গিয়েছো তুমি টপ করেছো। কিন্তু এটা যদি আগেই সবাইকে বলে বেড়াও তাহলে কি আনন্দটা থাকবে? যখন সবার একসাথে রেজাল্ট দিবে তখনই তো আসল আনন্দ হবে!”
“আমি কখনো টপ করবো না। তাই ধরতে পারলাম না।”
নাহিয়ান ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেললো।
“হওয়া লাগবে না। লোহার মাথা নিয়ে কিছু হওয়া যায় না!”
“আপনি কিন্তু…”
নাহিয়ান ওকে বলতে না দিয়ে বললো, “আমি এটাই বোঝাতে চাইছি কাঙ্ক্ষিত জিনিস পেতে যদি আরেকটু অপেক্ষা করতে হয়, তাহলে কেনো করবে না? অনেকদিন তো করেছো! যদিও জানি না সেটা কি, তবে আরেকটু তো করা যায় তাই না?”
নীতি মাথা নাড়লো।
“তাই শান্ত হও!”
নীতি ওর দিকে তাকালো।
“লিস্টের অপ্রিয় মানুষকে শান্ত করতে এত উঠে পড়ে লেগেছেন কেনো?”
“কারণ তুমি শান্ত হলেই এটা আমার জিত হবে। আর তোমার হার!”
“মানে?”
“মানে এটাই এই যে তুমি এখন শান্ত হয়েছো, তাও আমার কথার মাধ্যমে এটাই আমার কাছে জিত। মিস দুর্নীতি আমার কথায় শান্ত হয়েছে। সবাইকে বলে বেড়াবো।”
নীতি কয়েক পলক নাহিয়ানের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো। নাহিয়ান আনমনা হয়ে সেই হাসি দেখলো। পরক্ষণেই দুইজনের মাঝে ক্ষুদ্র সময়ের জন্য দৃষ্টি বিনিময় হলো।
সালেহা সবে রুম থেকে বেরিয়েছেন। বাচ্চাদের আড্ডায় তিনি যেতে চান না। তবুও রীতির বাড়ির লোক এসেছে, একটু দেখা তো করতেই হয়। তাই তূর্ণাদের বাড়িতে এসেছে। গেস্ট রুম সদর দরজার কাছে হওয়ায় চোখ যায় সেদিকে। নীতি আর নাহিয়ানকে দেখে ভ্রু কুঁচকে নিলেন উনি। কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে মুচকি হয়েছে ভিতরে গেলেন।
__________________________________
এরপরের পুরোটা সময় শান্ত ছিলো নীতি। কিন্তু বাড়ি আসতেই এক মিনিটের অপেক্ষাও করেনি সে। সোজা রুমে এসে দরজা দিয়েছে। ‘অনুভব’ নামক আইডিতে মেসেজ দিলো। পর পর কয়েকটা। কিন্তু সিন হচ্ছে না। নীতি কল করলো। বেশ কয়েকবার কল করলো। কিন্তু ধরছে না। লাইনেই নেই সে। নীতি আবার কেঁদে উঠলো। মেসেজটা দুইদিন আগের। আর সে আজ দেখছে! চোখ মুছে আবার কল দিলো। নো রেসপন্স!
বিছানার কাছে বসে পড়লো ও। এতক্ষণ শান্ত থাকলেও এখন পারছে না ও। একটুও পারছে না। বিছানায় মাথা রেখে কাঁদছে ও। পরক্ষণেই ফোন বেজে উঠে ওর। অনুভবের আইডি থেকে কল আসছে। চোখ মুখে খুশি দেখা দিলো তার। সঙ্গে সঙ্গে রিসিভ করলো। কিন্তু কথা বলতে পারলো না। ওপাশে নিরবতা। নীতিও চুপ। সব নিরবতা ভেঙ্গে অনুভবই মৃদু স্বরে ডাকলো,
“প্রিয়!”
ফুঁফিয়ে কেঁদে উঠলো নীতি। ফাইনালি! পেয়েছে সে। পেয়েছে….
#চলবে
#প্রিয়_অনুভব
#সাবরিন_জাহান_রোদেলা
#পর্ব_১৫
“প্রিয়?”
নীতি কথা বলতে পারছে না। আওয়াজগুলো আটকে যাচ্ছে গলায় এসে। অনুভব বুঝতে পেরে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
“কোথায় ছিলে প্রিয়?”
নীতি নাক টেনে উত্তর দিলো,
“বাসায় ছিলাম । আর কোথায় থাকবো? আমার কি শ্বশুরবাড়ি আছে, যে সেখানে যাবো?”
ওপাশ থেকে মৃদু হাসির শব্দ শুনতে পেলো নীতি। কান্নার মাঝে নিজেও মুচকি হাসলো।
“দূরে কেনো গিয়েছিলে?”
“ইচ্ছে করে যাইনি। আইডি নষ্ট করে দেয়া হয়েছিলো। আমি জানতাম না কখন হয়েছে। তাই…. কিন্তু আমি নতুন আইডি খুলে আপনাকে খুঁজেছিলাম পাইনি।”
অনুভব দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
“কারণ ততক্ষণে আমিও আইডি ডিলিট করে দিয়েছি।”
নীতির কান্না থেমে গেলো।
“কেনো অনুভব?”
“ভেবেছিলাম তুমি উপলব্ধি করেছো তোমার অনুভূতি কেবল ভালোলাগার ছিল। আমি অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেছিলাম। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ভীষণ কষ্ট হলো। ভাবলাম প্রিয় তো তার অনুভবকে ভুলে গিয়েছে। আমি তাহলে কেনো মনে রাখবো!”
নীতি বেশকিছুক্ষণ চুপ থেকে উত্তর দিলো, “একটা দিন অপেক্ষা করতেন অন্তত!”
“ভুল হয়ে গিয়েছে প্রিয়। সরি!”
নীতি চুপ রইলো।
“সরি! আমার আসলেই আরেকটু অপেক্ষা করা উচিত ছিল। কেনো যে করেছি এমন!”
“ব্যাপার না! কেমন আছো?”
“প্রিয়হীনা অনুভব কেমন থাকবে বলেছিলো?”
নীতি হাসলো।
“আমি ভালো ছিলাম।”
“সত্যি ছিলে?”
“হুমম, আমার কল্পমানবের সাথে!”
“কল্পমানব?”
“হুমম, তুমি নামক কল্পমানব!”
অনুভব চুপ রইলো। নীতি আবারও হেসে বললো,
“প্রিয় কল্পমানব,
আপনি আমার কল্পনায় সবসময় বিদ্যমান। আমার উদাস মনের বিষণ্নতার সময়ে আপনি ছিলেন আমার এক ফালি সুখ। বলে না মানুষ কল্পনায় সুখী? আপনি আমার সেই সুখ, যাকে অনুভব করি সময়ে-অসময়ে। মনের গল্প বলি। আপনাকে নিয়ে শহর ঘুরি। আপনি শুভ্রপুরুষ সাজেন, আর আমি? শুভ্রময়ী! কি ভাবছেন তো কখন হলো এসব? ওইযে বললাম, ‘কল্পনা!’ আমার কল্পমানুষকে আমি ভীষণভাবে অনুভব করি। অতঃপর ভালোবাসি। বুঝলেন?”
“খুব করে বুঝলাম!”
“কি বুঝলেন শুনি।”
“প্রিয় তার অনুভবকে ভীষণভাবে মিস করেছে।”
“এত দেরিতে বুঝলেন?”
“নাহ, অনেক আগেই। যখন পোস্ট দেখেছিলাম।”
“আগে দেখেননি কেনো?”
“আইডি আবার খুলেছি ই মাস খানেক হলো।”
“এবার দেখা করুন!”
“আমি কি বলেছিলাম প্রিয়?”
“এত কিছুর পরেও ওই একই কথায় অনড় থাকবেন?”
“দেখো প্রিয়, তোমার আমার দেখা যদি আমার সফলতার পর হয় তখন আমাদের মাঝে হারানোর কোনো ভয় থাকবে না। না থাকবে কোনো বাঁধা! যদি সফল হওয়ার আগেই আমাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়, আর এরপর আমাদের দেখা হয়, তখন আমরা একে অপরকে চিনবো না। তখন কষ্টও পাবো না। কারণ আমরা উপলব্ধিই করবো না আমি অনুভব আর তুমি প্রিয়! বুঝলে?”
“কিন্তু যদি বিচ্ছেদ হয় তোমাকে না দেখার আফসোস তো আমার রয়ে যাবে!”
“ভুলে যাচ্ছো কেনো? এত্তগুলো মাস যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার পরও আমাদের মিল হয়েছে আবার প্রিয়! তবে ভয় কোন বিচ্ছেদের?”
নীতি শান্ত হলো।
“তাহলে এভাবেই চলবে?”
“খুব অসুবিধে হচ্ছে?”
“উহু!”
“তবে?”
“কিচ্ছুটি নয়!”
“মন খারাপ?”
“উহু..”
“মন ভালো?”
“হুমম!”
“কেনো?”
নীতি হেসে বললো, “কারণ ফোনের ওপাশের মানুষটির সাথে আমার সকল মুহূর্ত ভালো কাটে।”
“তবে কি সব শেষ?”
“উহু, নতুন করে প্রণয় শুরু। প্রিয় আর অনুভবের প্রণয়! প্রিয় অনুভবের প্রণয়!”
অনুভব হাসলো।
“প্রিয় কথা সাজাতে শিখেছে!”
“অনুভব তাকে শিখিয়েছে!”
“আর কি শিখিয়েছে সে?”
“কাঁদানো!”
“সে কাঁদিয়েছে?”
“উহু, তার প্রণয় শিখিয়েছে!”
অনুভব গুনগুনিয়ে সুর তুললো,
“যদি বারে বারে একই সুরে প্রেম তোমায় কাঁদায়! তবে প্রেমিকা কোথায়? আর প্রেমই বা কোথায়?”
নীতি মৃদু শব্দ করে হাসলো। তার হাসির শব্দ শুনে অনুভবের মনটাও শান্ত হলো! ইশ, কবে যে আসবে তাদের দুইজনের অপেক্ষাকৃত সেই সময়!
__________________________________
এভাবেই চলে গেলো আরো কয়েকটি দিন। প্রীতি আর আনাফের বিয়ের প্রস্তুতি শুরু হবে কয়েকদিনেই। তবে এর মাঝেই বড়দের মধ্যে ছোট্ট করে আলাপ আলোচনা চলছে। যার এক অংশ নিয়ে প্রীতি গেলো নীতির নিকট।
“তোর বিয়েতে কাকে কাকে দাওয়াত দিবি রে নীতি?”
নীতি সবে গোসল সেরেছে। মাথা মুছতে মুছতেই ফোন হাতে নিলো।
“তোকে দিবো না অন্তত!”
“আমাকে দেওয়াও লাগে না।”
“বিন বুলায়ে মেহমান তুই!”
“হুস! তোর আর আমার বিয়ে একসাথে হবে। কি মজা!”
নীতি ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকালো।
“মজা নিচ্ছিস?”
“না, সত্যি!”
“সরি, বিশ্বাস করলাম না।”
“আরে, সালেহা আন্টি নিজে তোর মাকে তোর আর নাহিয়ান ভাইয়ার বিয়ের কথা বলেছেন।”
নীতি চমকালো।
“পা’গ’ল তুই?”
“আরে, সত্যি! উফফ, তুই আর রীতি আপু একসাথে থাকবি! ইশ, যদি তাদের আরেকটা ভাই থাকতো!”
নীতির কানে ওসব কিছু যাচ্ছে না। ওর মনে ভয় ঢুকছে। অসম্ভব রকমের ভয়। ফোন হাতে নিয়ে অনুভবকে মেসেজ করলো। সে লাইনে নেই আপাতত। পরক্ষণেই নাহিয়ানের কথা মাথায় আসতেই নিজের নামের আইডিতে গেলো। নাহিয়ানকে মেসেজ করলো।
“কোথায় আপনি?”
নাহিয়ানও অফলাইনে। বিরক্ত হলো নীতি। এদিকে প্রীতি বকবক করেই যাচ্ছে। নীতি শান্ত গলায় বললো, “বের হ রুম থেকে!”
“কোন সুখে?”
“নাহলে লা’থি মে’রে বের করবো আমি!”
“আরে আশ্চর্য!”
“যা বলছি!”
“যাচ্ছি যাচ্ছি!”
প্রীতি উঠে বিড়বিড় করতে করতে বেরিয়ে গেলো। পরক্ষণেই উকি দিয়ে বললো, “নাহিয়ান ভাইয়া খুব হ্যান্ডসাম, বাট তোর মতো পে’ত্নীর সাথে কেমনে যাবে ভাবছি!”
নীতি রেগে বালিশ নিয়ে ওর দিকে ছুঁড়ে মা’রলো। প্রীতি তার আগেই সরে গেলো। ধপ করে বিছানায় বসলো ও। হচ্ছেটা কি? মোবাইলের নোটিফিকেশনের শব্দে তাড়াতাড়ি ফোন হাতে নিলো। নাহিয়ান রিপ্লাই করেছে।
“বাড়ি আছি।”
“দেখা করুন!”
“হঠাৎ?”
“দরকার!”
“আবার কোন দুর্নীতি করার প্ল্যান করছো?”
“সহজ কথা সহজ ভাবে নেন না কেনো? বলছি না প্রয়োজন?”
“তুমি রেগে যাচ্ছো কেনো?”
নীতির সহ্য হলো না আর।
”বিকেলে চারটায় সেম রেস্টুরেন্টে আসবেন যেখানে আগেও দেখা হয়েছে। আমি থাকবো।”
নাহিয়ান পরে রিপ্লাই করলেও নীতি সিন করলো না। অনুভবের লাইনে আসার অপেক্ষা করতে লাগলো।
__________________________________
“বলেন মিস দুর্নীতি। হঠাৎ এত জরুরি তলব? কাঙ্ক্ষিত জিনিস কি পেয়ে গিয়েছেন নাকি?”
নীতি চুপচাপ বসে আছে।
“নীতি?”
নীতি এবার তাকালো নাহিয়ানের দিকে।
“কিছু হয়েছে?”
”দেখুন নাহিয়ান আমি জানি আপনার নিকট আমি সবচেয়ে অপছন্দের একজন মানুষ। আপনিও আমার কাছে তাই। আপনার প্রতি আমার বিন্দুমাত্র ইন্টারেস্ট নেই!”
নাহিয়ান ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
“এসব বলার জন্য আমাকে ডেকেছো?”
“ফোনে বললে ব্যাপারটা আপনি বুঝতেন না। তাই সামনাসামনি বলাই শ্রেয়।”
“আরে, কিসের ব্যাপার? কি বলছো?”
“নাটক করছেন? আপনি কিছু জানেন না?”
“কি জানবো?”
নীতির রাগ হলো। তার মা বিয়ের কথা বার্তা বলে ফেলছে আর সে কিছু জানে না? এটা ওর মানা লাগবে?
“ওহ, তাহলে আপনার মা বুঝি কলা গাছের সাথে কথা বলে আমাদের বিয়ের কথা বলেছে আমার মাকে? শুনুন মিষ্টার, আপনি যাই করুন না কেন, আপনার সাথে বিয়ে তো দূরে থাক, আপনার প্রতি আমার এক চুল পরিমাণও ইন্টারেস্ট নেই। আশা করি আপনার পরিবারকে জানিয়ে দিবেন এটা!”
কথাগুলো নাহিয়ানের আত্মসম্মানে লাগলো। আরে ও তো এর কিছুই জানে না। ধমক উঠলো সে,
“ওয় মিস! কি আমার প্রতি ইন্টারেস্ট নাই নাই করছেন। আপনার প্রতি আমার ইন্টারেস্ট কোনো কালেই ছিল না। আর না আসবে..আর বিয়ের কথা, আরে রাস্তার পা’গলকেও বিয়ে করতে রাজি আমি। তবু আপনায়! এটা আগে জানলে আমি ই না করতাম।আপনার এই তলব দিয়ে ডেকে আমায় বলা লাগতো না। আর আপনি আমার অপছন্দের মানুষের লিস্টে সর্বপ্রথম ও সর্বসেরা অপছন্দের মানুষ। যত্তসব!”
বলে এক মিনিটও দাঁড়ালো না সে। বেরিয়ে গেলো। নীতি কিছু বলার সুযোগ পেলো না। হঠাৎ ই কান্না পাচ্ছে তার। উফফ! কেনো যে এসব বলতে আসতে গেলো।
__________________________________
বাড়ি ফিরেই মায়ের রুমে গেলো নীতি। বড় চাচী আর ছোট চাচীও সেখানেই রয়েছেন।
“ওইতো নীতি!”
বোঝাই যাচ্ছে ওরা তারই অপেক্ষা করছিলো। স্মৃতি ওকে নিজের কাছে ডাকলো। নিজের পাশে বসিয়ে আদরমাখা কণ্ঠে বলল,
“আমাদের নীতিরাণী কত বড় হয়ে গিয়েছে!”
নীতি মলিন হেসে বললো, “আজকে জানলে?”
”হ্যাঁ, তবুও তুই ছোটই।”
বলেই নীতির মায়ের দিকে কিছু ইশারা করলো। নীতি বুঝতে পারছে ওদের কথা কি হবে!
“নীতি, প্রত্যেক মেয়ে ই তো একটা সময় বড় হয়। আর নিজের বাড়ি ছেড়ে পরের বাড়ি যায়। তো আমি বলতে চাচ্ছি যে…”
বলেই আমতা আমতা করতে লাগলো। বলবে কি? ছোট চাচী মরিয়ম বিরক্ত হয়ে নীতির সামনে এলেন।
“ধুর বড় ভাবী আপনাকে দাড়া কিছু হবে না। নীতি তুই আমার কথা শোন। দেখ প্রীতি তোর ছোট। তোর আগে ওর বিয়ে হয়ে যাবে এটা আমার পছন্দ হচ্ছে না। আবার তোরা দুইজন সমবয়সীর মতোই। তাই আমি চাচ্ছি আনাফ আর প্রীতির সাথে তোর বিয়েটাও সেরে ফেলতে। কি বলিস?”
নীতি চুপ করে রইলো। স্মৃতি ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো,
“কিরে? চুপ করে আছিস কেনো? তোর কি কাউকে পছন্দ আছে?”
নীতি তবুও চুপ।
নীতির মা এবার মুখ খুললেন,
“নীতি, কিছু জিজ্ঞেস করছে তো!”
“আমি এখন বিয়ে করতে চাই না মা।”
নীতির মা জোহরা ওর কাছে এলেন। ওর অন্যপাশে বসে মেয়ের মাথায় হাত রাখলেন।
“আমরা তোকে জোর করবো না। তবে তোর বাবারও বয়স হচ্ছে। এমন নয় তুই আমাদের বোঝা। কিন্তু হায়াতের কথা কে জানে? মেয়ের সংসার দেখলেই আমরা খুশি। আর তাছাড়া তুই বড় হয়েছিস, প্রাপ্ত বয়স্ক। পড়তে চাইলে বিয়ের পরও আমরাই নাহয় পড়াবো। তবুও বলবো, ইচ্ছে না থাকলে কেউ জোর করবে না। তবে সালেহা বেগম তার ছেলের জন্য তোকে চেয়েছেন। ছেলেটা যথেষ্ট ভালো আর ভদ্র। তুই ওদের সাথে থাকলে আমরা নিশ্চিন্ত একেবারে। ওখানে আবার রীতিও আছে। সব মিলিয়ে আমাদের আপত্তি নেই, কিন্তু আমরা সম্মতিও জানাই নি। তুই একটু ভেবে দেখ।”
মায়ের কথায় চুপ করে রইলো নীতি। বেশ কিছুক্ষণ পর উত্তর দিলো,
“কয়েকটা দিন সময় দেও। আমি ভেবে নেই!”
মরিয়ম বিস্মিত হয় জিজ্ঞেস করলো, “কয়েকটা দিন?”
স্মৃতি ধমক দিয়ে বললো, “চুপ কর তুই! নীতি, তুই ভাব। যত খুশি! তবে একটু জলদি। প্রীতি আর আনাফের বিয়েটাও দিয়ে দিতে চাচ্ছি। যতই হোক, তুই ই বলেছিস!”
নীতি হাসলো। কিছু না বলে উঠে নিজের রুমে গেলো। দরজা আটকে বিছানায় গা এলিয়ে দিল। অদ্ভুত লাগছে ভীষণ! নীতি নিজেও মানে নাহিয়ান একজন চমৎকার মানুষ। সে মেয়েদের সম্মান করতে জানে। এর থেকে বড় সত্য আর নেই। কিন্তু অনুভব? নীতি যে ওকে ভালোবাসে! তার উপর আজকে নাহিয়ানকে কত কিছু বলেছে সে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোন হাতে নিলো। অনুভবকে লাইনে দেখে কল দিল। আজকাল কলেই বেশি কথা হয় তাদের। কল রিসিভ হতেই নীতি ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বলে উঠলো,
“একটা প্রস্তাব এসেছে বিয়ের। ছেলে চেনা পরিচিত। যথেষ্ট ভালো, সবাই চাচ্ছে বিয়েতে রাজি হয়ে যাই যেনো!”
ওপাশে বেশ কিছুক্ষণ নিরবতা পালন পর অনুভব জিজ্ঞেস করলো, “কি বলেছো?”
“তোমার তো জানার কথা!”
অনুভব চুপ করে রইলো। নীতি উঠে বসলো,
“জানো না, তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না? জানো না, তোমাকে ছাড়া শূন্য আমি? জানো না, তোমায় আমি ভালোবাসি?”
“জানি!”
“তাহলে?”
“কি করতে বলছো?”
“এখনও বুঝিয়ে বলা লাগবে?”
অনুভব নিশ্চুপ!
“আমি কি করবো অনুভব?”
“দুইদিন পর হ্যাঁ বলে দিও!”
নীতি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“হ্যাঁ বলে দিবো?”
“হুমম, দুইদিন পর!”
“কি এমন হবে দুইদিন পর?”
“তোমার আমার প্রেম হবে, প্রেম কথন হবে, অতঃপর এই সম্পর্কের বিচ্ছেদ হবে!”
বিচ্ছেদের কথা শুনতেই বুক কেঁপে উঠে নীতির।
“বিচ্ছেদ হবে?”
“হুমম হবে।”
“আপনি বড় নিষ্ঠুর মানুষ।”
বলেই ফোন রেখে দিল সে। মুখ চেপে কেঁদে উঠলো। ইশ, কি সহজে বলে দিলো, ‘অতঃপর এই সম্পর্কের বিচ্ছেদ হবে!’
__________________________________
দুইদিন অভিমানে কথা বলেনি নীতি। আর বলেই না লাভ কি? সে তো হ্যাঁ ই করে দিতে বলেছে।
আনমনে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে আছে নীতি। মেসেঞ্জারে কল আসার শব্দে ফোনের কাছে গেলো সে। অনুভব কল করেছে। রিসিভ করলো না। কই, দুইদিন তো একবারও খোঁজ নিলো না ওর! তাহলে এখন কিসের তাড়া?
কল কেঁটে গেলো। নীতি ফোনের দিকেই তাকিয়ে রইলো। হুট করেই মেসেজ এলো। না চাইতেও মেসেজটা পড়ে ফেললো নোটিফিকেশন থেকে। মেসেজটা পড়া মাত্রই চমকে উঠে আরেকবার মনে মনে আওড়ালো! স্পষ্ট লিখা সেখানে,
“চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি প্রিয় শুনছো?”
#চলবে