#প্রিয়_অনুভব
#সাবরিন_জাহান_রোদেলা
#পর্ব_০৮
ভোর সাড়ে পাঁচটা। হাঁটতে বেরিয়েছে অনুভব। আপাতত তার একটু শান্তি দরকার। রাস্তায় তেমন কেউ নেই। বেশ খানিকটা হেঁটে শুনশান জায়গায় গিয়ে পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করলো। শুনেছিল বিরহ কাঁটাতে নাকি অনেকে সিগারেট খায়। সেও ট্রাই করেছে এই কয়েক মাসে। সিগারেট ধরিয়ে এক টান দিতেই কাশতে লাগলো সে। সিগারেট তার নিয়মে নেই। হুট করেই মনে পড়লো তার। আইডিতে একবার সিগারেটের পিক দিয়েছিল। তখন প্রিয় জিজ্ঞেস করেছিল,
“তুমি সিগারেট খাও?”
অনুভব মজা করে বলেছিলো, “হুমম, খাইতো!”
“কেনো?”
“মজা লাগে।”
“খাবে না আর।”
“কেনো?”
“আমি আপনার সাথে লাখ লাখ বছর বাঁচতে চাই অনুভব।”
“লাখ লাখ বছর কেউ বাঁচে না প্রিয়!”
“না বাঁচুক, যত টুকুই বাঁচে মানুষ, ওইটুকুর মাঝে এই ম’রণকে খেয়ে সময় কমাবেন কেনো?”
“সিগারেট ম’র’ণ?”
“অবশ্যই!”
অনুভব সেদিন খুব হেসেছিল। প্রিয়কে আর তার বলা হয়নি সে সিগারেট খায় না। যেই প্রিয় সেই প্রিয় তাকে ছেড়ে কি সত্যি ভালো আছে? সিগারেটের প্যাকেট ফেলে দিলো ও। নাহ, এভাবে আর চলে না তার।
“তুমি ফিরবে প্রিয়। ঠিক ফিরবে!”
__________________________________
শরীরের উপর ভারী কিছুর অস্তিত্ব অনুভব করে নিঃশ্বাস আটকে যাচ্ছে নীতির। হালকা করে চোখ খুলতেই দেখলো তার গলার উপর প্রীতির দুই পা, আর পেটের উপর বর্ষার মাথা। মুহূর্তেই হতবাক হলো সে। এই দামড়া দামড়া মেয়েগুলোর ঘুমানোর স্টাইল এমন কেনো? এই জন্যই প্রীতি কোনোদিন নীতির রুমে নীতির সাথে ঘুমানোর পারমিশন পায় না। আর বর্ষা? সে আসলেই নীতি পাহাড় সমান বালিশ মাঝে দিয়ে দেয়। শরীরের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে ওদের দুইজনকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে উঠে বসলো। ধাক্কার ফলে প্রীতি ধড়ফড়িয়ে উঠলেও, বর্ষা ঘুমাচ্ছে। প্রীতি একবার নীতির দিকে তাকিয়ে বর্ষার পায়ের উপর শুয়ে পড়লো। নীতি বিড়বিড় করে বললো, “আমার লাইফ এত অদ্ভুত মানুষ কেন রে ভাই?”
উঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো। ঘড়ির কাঁটায় দেখলো আটটা বাজে সবে। দরজা খুলে বাইরে যেতেই তাহসিনের সাথে ধাক্কা খেলো। তাহসিন তখন ওদের রুমের সামনে দিয়েই যাচ্ছিলো। তৎক্ষণাৎ বলে উঠলো,“সরি, সরি!”
“ইটস ওকে ভাইয়া!”
“এত জলদি উঠলে যে?”
“এমনি, ঘুম ভেঙে গেলো।”
“ওহ, ছাদে যাবে?”
নীতি ভাবলো একটু। অতঃপর বললো, “যাওয়া যায়!”
“চলো তাহলে।”
ছাদে যেতেই নীতি তাহসিনকে বললো,
“আচ্ছা, ছাদের এই অবস্থা কেনো?”
তাহসিন আশেপাশে তাকিয়ে বললো, “কি অবস্থা? পরিষ্কারই তো আছে।”
“পরিষ্কার রেখে কি হবে? এমন নিরামিষ ছাদ কেনো? কোনো ফুলগাছ নেই, দোলনা নেই।”
তাহসিন হাসলো।
“নাহিয়ান লাগাতে দেয় না এসব।”
“কেনো?”
“কালকে আড্ডা দিলে না? মূলত গাছ রাখলে মাঝ রাতে এমন আড্ডার জায়গা নাকি কম পড়ে যাবে। তাই ও এসব দেয় না।”
“সুন্দর মতো সাজালে সব কিছুরই জায়গা হবে।”
“তাহলে তুমিই সাজিয়ে দেও।”
“বয়েই গেছে আমার। আমি আমার জামাইয়ের বাড়ি সাজাবো। যদি থাকে আরকি। আর আপনার বন্ধুর বাড়ি সাজালে, তারপর সে বলবে আমি এই বাড়িতে থাকবো না। আমার লিস্টের অপছন্দের মানুষ বাড়ি সাজিয়েছে তাই।”
নীতির কথা শুনে তাহসিন শব্দ করে হাসলো। নীতিও মৃদু হাসলো।
“নাহির তোমাকে অপছন্দ করার কারণ জানো?”
নীতি জিজ্ঞাসাসূচক দৃষ্টিতে তাহসিনের দিকে তাকালো।
“তুমি তো কাল চলে গেলে রীতি তোমাকে কেনো আগে বলেনি। সত্যি বলতে আমরাও জেনেছি বিয়ে যখন ঠিক হবে তার প্রায় এক কি দুই মাস আগে। আমরাও রেগে গিয়েছিলাম। তোমার রাগ করাটাও স্বাভাবিক। কিন্তু রীতির কথা, সম্পর্ক যদি গোপন থাকে সেই সম্পর্ক টেকার সম্ভাবনা বেশি হয়। তাই!”
নীতি হেসে বললো, “আপুর উপর আমি রাগ করিনি। শুধু একটু আফসোস হয়েছে, যদি আগে জানতাম তাহলে একটা জিনিস স্বাভাবিক থাকতো।”
“কি জিনিস?”
“বাদ দিন, ওসব পুরোনো কথা। আপনি বলুন যেটা বলছেন।”
“আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের আড্ডায় তোমার আর প্রীতির কথাই ও বেশি বলতো। তোমরা এমন সেমন! আরো কত্ত কি! নাহির তোমাকে অপছন্দ কারণ তোমার খাম খেয়ালিপনা।”
নীতি অবাক হয়ে বললো, “মানে?”
“এইযে তুমি নাহিয়ানের গিটারের মতো, রাস্তাঘাটেও এর ওর জিনিস ভেঙ্গে নাকি টাকা দিয়ে আসো। এটাই! নাহির মতে তুমি টাকার উপর অনেক নির্ভরশীল। এটা ছাড়া তোমার জীবন অচল!”
“কার জিনিস ভাঙলাম আমি?”
“রীতি বলেছিলো কয়েকদিন আগেও নাকি তুমি কার স্কুটি ভেঙ্গে টাকা দিয়ে এসেছো!”
নীতি মনে করার চেষ্টা করলো। মনে পড়তেই ফিক করে হেসে দিল।
“এটাই অপছন্দের কারণ আপনার বন্ধুর?”
“হুমম!”
নীতি হেসে বললো, “কিছু মানুষ বাইরে এক ভিতরে আরেক। এটা অনেকেই বুঝে না।”
তাহসিন বুঝতে না পেরে বললো, “মানে?”
“ঐযে বললাম। অনেকে বুঝে না। নিচে যাই কেমন?”
বলেই নিচে গেলো সে। তাহসিন অবুঝ হয়ে তাকিয়ে রইলো নীতির দিলে। অতঃপর বললো, “রীতির মতো কি ওর বোনও পা’গল! ধুর, কই ভাবলাম লাইন টাইন মা’রবো। এখন দেখি এও পা’গল। এর সাথে দুইটাও কি এক?”
__________________________________
নিচে আসতেই দেখলো রীতি রান্না করছে।
“কি করছো আপু?”
“পায়েস রান্না করছি!”
“বাহ, আমাকে একটু দেও।”
“নীতি, এটা আমার শ্বশুর বাড়ি!”
নীতি দাঁত দিয়ে জিভ কাটলো। হেসে বললো, “সরি!”
কিছুক্ষণের মাঝেই বড়রা এসে টেবিলে বসলো। সালেহা বেগমের স্বামী নুরুল আলম, সাথে তার ভাই মোস্তফা, আর সালেহা বেগমের বোন সেলিনা বসলো। আত্মীয় বলতে এরাই। এরই মাঝে সাজ্জাদ, তাহসিন আর নাহিয়ান এসে বসলো। নীতিকে বসতে বললে সে জানায় পরে সালেহাদের সাথে বসবে সে। ওদের নাশতা শেষে রীতি সবাইকে পায়েস দিলো। নতুন বউ হিসেবে সালেহা ওকে কেবল পায়েসটুকুই করতে বলেছেন। পায়েস মুখে দেয়ার পর অন্যরা কিছু না বললেও সেলিনা বলে উঠলো, “চিনি কি দিছো বউ?”
রীতি চমকে উঠলো। তৎক্ষণাৎ মনে পড়লো সে পায়েস চেক করে দেখেনি আদো সব ঠিকঠাক আছে কিনা। নুরুল উত্তর দিলেন, “দিয়েছে, কিন্তু কম হয়েছে। ব্যাপার না, প্রথম প্রথম হয় এমন!”
সেলিনা মুখ বাঁকিয়ে বললো, “এটা ঠিক না দুলাভাই। বাড়ির বউকে প্রথমেই শাসন করা উচিত। নয়তো পরে মাথায় চড়ে বসে। তা রীতি, তুমি রান্না বান্না পারো তো?”
রীতি মাথা নিচু করে উত্তর দিলো, “জি পারি!”
“তাহলে পায়েসে চিনি এত কম কেনো? নেই বললেই চলে। তো আমাদেরকে কি ডায়বেটিসের রোগী মনে হয়?”
রীতি উত্তর দিলো না। নীতি রীতির দিকে তাকিয়ে রইলো। এখানে সে কিছু বললে রীতির উপরেই দোষ যাবে সব। তাই চুপ করে আছে।
“তূর্ণা একটু চিনি এনে দে তো।”
নাহিয়ানের কণ্ঠ শুনে সবার মনোযোগ ওর দিকে গেলো। তুর্ণা সেলিনার মেয়ে। সে এতক্ষণ রীতির সাথেই ছিল। নাহিয়ান তার কাছে কিছু চেয়েছে, এটা শুনেই দৌড়ে রান্না ঘরে গেলো। আহা, তার ক্রাশ তার সাথে নিজে থেকে কথা বলছে। তার যে কি আনন্দ লাগছে। চিনির কৌটা নিয়ে সে নাহিয়ানের কাছে গেলো। নাহিয়ান সেখান থেকে একটু চিনি নিয়ে পায়েসে মিশিয়ে খেতে লাগলো। তাই দেখে সেলিনা নাক মুখ কুঁচকে বললো, “এ আবার কেমন খাওয়া?”
“চিনির জন্য না চিল্লিয়ে এভাবে চিনি নিয়ে খাও, মজা লাগবে।”
“কেনো? নিয়ে খাবো কেনো? ওর আক্কেল নেই?”
নাহিয়ান রীতির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “চিনি কম হয়েছে কেনো?”
রীতি একবার নাহিয়ানের দিকে তাকিয়ে আবার মাথা নিচু করে বললো, “চেক করিনি। আর খেয়ালও ছিল না কতটুকু দিয়েছি।”
অতঃপর নাহিয়ান সেলিনার দিকে তাকিয়ে বললো, “এবার হয়েছে?”
“এমন করলে সংসার করবে কি করে? খেয়াল কই থাকে?”
“আন্টি, রীতি এই বাড়িতে আগে আসলেও এখন ও এখানে এক নতুন পরিচয়ে আছে। এ বাড়ির বউ। আর আজ ওর বিয়ের পরের দিন। হুট করেই ও স্বাভাবিক হতে পারবে না। এতদিন এ বাড়িতে আসলেও ওর নতুন পরিচয়ে আজ প্রথমদিন। এ সময় ও নার্ভাস থাকবেই। তাই একটু চিনি এদিক সেদিক হয়েছে। নয়তো মাও জানে রীতি কতটা পারফেক্ট রান্না করে। তুমিও তো ভালো রান্না করতে। তাও বিয়ে পরের দিন যখন তোমাকে ডাল রাঁধতে দিলো তখন মনে আছে? কতগুলো লবণ দিয়েছিলে? ওটা খেয়ে সবাই হেসেছিল, কিন্তু কেউ তোমাকে বকেনি। উল্টে তোমার নার্ভাসনেস বুঝেছিল। তাহলে আজ রীতিরটা বুঝতে অসুবিধা কোথায়?”
সেলিনা অপমানবোধ করলেন । আড়চোখে সবার দিকে তাকিয়ে উঠে গেলেন। রীতিকে তার এমন বলার কারণ ছিল ওকে ছোট করা। তিনি শাফিনের সাথে নিজের মেয়ের বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। কেননা তার ধারণা এই বাড়ির সবাই তার মেয়েকে বড্ড ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখবে। একটা মায়ের তো এইটুকুই চাওয়া হয়। কিন্তু শাফিনের হটাৎ বিয়ে উনি মানতে পারছেন না। তাই রীতিকেও তার সহ্য হচ্ছে না। সেলিনার পর বাকিরাও উঠলো। নুরুল রীতিকে বললেন, “ওর কথায় কিছু মনে করো না মা!”
রীতি কেবল হাসলো। সালেহা নাহিয়ানকে নিজের কাছে ডাকলে। মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, “আমার ছেলেটাকে আমি মানুষের মতো মানুষ করতে পেরেছি!”
“মানুষ হয়ে জন্মেছি, তো মানুষ না হয়ে কি ছা’গল হবো?”
“এর থেকেই বা কম কি আপনি!”
নীতির বিড়বিড় করে বলা কথা রীতি আর নাহিয়ানের কানে গেলেও আর কেউ শুনলো না। নাহিয়ান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালো। নীতি পাত্তা দিলো না। সালেহা নাহিয়ানের কান টেনে বললেন, “তাই না?”
উপস্থিত সবাই হাসলো। নুরুলের ডাকে তিনি ঘরে গেলেন। নাহিয়ান নীতিকে কিছু বলবে তার আগেই তুর্ণা ওর কাছে এসে বললো, “আর কি লাগবে ভাইয়া?”
নাহিয়ান তূর্ণার দিকে তাকালো। হেসে বললো, “আর কি লাগবে বলতে?”
“না মানে চিনি! অনেকক্ষণ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি তো!”
“এটা রেখে আয় বইন!”
বলে একবার নীতির দিকে তাকিয়ে হাঁটা ধরলো। নীতি সেসব খেয়াল না করে তূর্ণার দিকে তাকিয়ে আছে। সেই যে চিনির কৌটা নিয়ে নাহিয়ানের পাশে ঘুরছে আর রাখার নাম নেয় নি মেয়েটা। বড্ড অদ্ভুত না? পাশে সাজ্জাদকে দেখে জিজ্ঞেস করলো, “এই মালটা কে ভাই?”
সাজ্জাদ ফোন দেখছিল। তাই নাহিয়ান আর তাহসিন কখন গিয়েছে সেটা খেয়াল করেনি। নীতি আমতা আমতা করে বলল, “এই মেয়েটা কে সেটাই বলছি!”
“ওহ, আমি কি না কি শুনলাম!”
“কি শুনলেন?”
“আব..কিছু না! ও তুর্ণা, ঐযে যিনি রীতিকে কথা শুনাচ্ছিলেন তার মেয়ে। মানে নাহির খালাতো বোন, হবু বউও বলতে পারো।”
“হবু বউ?”
“হ্যাঁ, তূর্ণার একমাত্র স্বপ্ন এটাই!”
বলেই সে চলে গেল।
“বাবা, সব দেখি সেটিংকৃত মাল!”
“এসব কি কথা নীতি?”
“রাগছো কেনো আপু?”
“নাহির পিছে কম লাগ। ওর রাগ উঠলে কিন্তু তোকে ছাদ থেকে ফেলতেও দুইবার ভাববে না।”
”আমি কি কম নাকি?”
রীতি হতাশ হয়ে বললো, “সেটাই ভয়! দুইজন না জানি খু’নাখু’নি শুরু করিস। যা ওই দুই মহিলাকে ডাক। খাওয়া লাগবে তো!”
নীতি হেসে উপরে গেলো।
__________________________________
বাইরে প্রচন্ড রোদ। নীতি ভেবে পাচ্ছে না, শীত আসতে চললো, তবুও শীতের কোনো নিশানা নেই। এই গরমে তাও দুপুরে লেহেঙ্গা পড়বে কি করে? বিছানার উপর লেহেঙ্গা বিছিয়ে পাশে বসে আছে ও। বর্ষা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে নীতিকে এভাবে বসে থাকতে দেখে বললো, “কি রে? এমন দেবদাস হয়ে আছিস কেন?”
“দেবদাস কেন হবো?”
“অনুভবকে না পাওয়ার দুঃখে।”
নীতি চমকালো। হুট করেই মনে পড়লো সে আজ সকাল থেকে ফোন ধরেনি। সাথে সাথে উঠে ফোনের কাছে গেলো। আইডিতে ঢুকতেই দেখলো পোস্টে তিনটা লাইক পড়েছে। কমেন্ট নেই ই! স্বাভাবিক, তার এটাই এই আইডি দিয়ে তার প্রথম পোস্ট। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোন রাখলো।
“রেডি হবি না?”
“এই লেহেঙ্গা পড়ার আগেই আমার গরম লাগছে। পড়লে কি হবে?”
“আর কিছু তো আনিস নাই!”
“সেটাই তো! মাও আসবে অনুষ্ঠান শুরুর পর।”
“গিয়ে নিয়ে আয়!”
“হ্যাঁ, বাড়িতে যেতে তো দশ মিনিট লাগে, তাই না?”
“এক ঘন্টা লাগে!”
“তো যেতে আসতেই তো দুই ঘণ্টা শেষ!”
“তাইলে মুড়ি খা বসে বসে।”
বলেই বর্ষা রেডি হতে শুরু করলো। নীতি উপায় না পেয়ে রীতির কাছে গেলো। রীতিকে তখন পার্লারের লোকেরা সাজাচ্ছিলো।
“আপু!”
“কি হয়েছে?”
“তোমার কাছে হালকা কাজের লেহেঙ্গা বা গাউন আছে?”
“আছে, তবে বাড়িতে। এখানে আনা হয়নি। কেনো?”
“ধুর এই গরমে এর কাজের লেহেঙ্গা কেমনে পড়বো?”
“লুঙ্গি পড়বে?”
নাহিয়ানের কথা শুনে উপস্থিত সবাই হেসে দিল। নীতি নাহিয়ানের দিকে তাকাতেই বললো, “বাবার একটা লুঙ্গি এনে দেই! আর আমার একটা টিশার্ট পড়। দারুন লাগবে!”
নীতি হাত মুঠো করে দাড়িয়ে রইলো।
“এনে দিবো?”
কোনোরূপ জবাব না দিয়ে নীতি হনহন করে বেরিয়ে গেলো। ও যেতেই রীতি নাহিয়ানকে বলে উঠলো, “ওর সাথে এমন করিস কেন তুই?”
“ও যে আমাকে উল্টা পাল্টা বলে?”
“তুই বড়, বড় ভাই হিসেবে ছোট বোনের মজা মনে করতেও তো পারিস!”
“ছি, এমন মেয়ে বোন বানানোর শখ নাই আমার!”
রীতি চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বললো, “তাহলে কি বউ বানানোর শখ?”
“সেটা হতে হলে তোর বোনকে আরো দশ বছর সাধনা করতে হবে!”
রীতি হাসলো।
__________________________________
বৌ ভাতের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে। নীতি আশেপাশে দেখছে সবাইকে। তখনই তূর্ণা ওর কাছে আসলো।
“নীতি!”
“আরে তুর্ণা। ধন্যবাদ আমাকে হেল্প করার জন্য। সত্যি বলতে আমি এমন হালকার মাঝেই আউটফিট খুঁজছিলাম।”
“আরে, এটা আমাকে আঙ্কেল দিয়েছিল। কিন্তু আমার হালকা কাজের লেহেঙ্গা ভালো লাগে না। তাই রেখে দিয়েছিলাম। ফিট হয়েছে এটা?”
“হুমম হয়েছে!”
“নীতি, এটা না তুমি ই রেখে দেও।”
“সেকি? কেনো? এটা তো তোমার আংকেলের দেয়া।”
“আঙ্কেল আমায় অনেক কিছু দেয়। এইযে এই লেহেঙ্গা পড়েছি না? এটাও আঙ্কেল দিয়েছে। সত্যি বলতে এই লেহেঙ্গা তোমাকে আমার থেকেও বেশি মানাচ্ছে। ইশ, কি মিষ্টি লাগছে তোমায়!”
নীতি একবার নিজের দিকে তাকালো। উপরের অংশ আর নিচের অংশ পুরোটাই কালো এর মাঝে গলার দিকে মিষ্টি কালার সুতোর কাজ করা। পিঠের দিকটা তেও হালকা কাজ আছে। আর নিচের অংশে পারের দিকে কাজ করা। ওড়নাটা সেই সুতোর সাথেই মিলানো। আর তার পার কালো। সব মিলিয়ে সুন্দর, তবে তুর্ণার এত হালকা কাজ পছন্দ না। তার মতে অনুষ্ঠানে পড়তে হলে গর্জিয়াস কিছু চাই।
“তাও, এটা আমি কি করে নেই? আমি পারবো না।”
“এটা আমি একবারও পড়িনি। তাই ভেবো না ইউজ করে দিচ্ছি!”
“আরে আমি সেটা মিন করিনি!”
“তাহলে আর কোনো কথা নয়! শাফিন ভাইয়া আর ভাবীকে দেখো। দুইজনকে লাভবার্ড লাগছে না?”
নীতি ওদের দিকে তাকাতেই দেখলো দুইজন নিজেদের মাঝে খুনসুটি করছে। ভালো লাগলো ভীষণ তার। চোখ বন্ধ করে গভীরভাবে অনুভব করলো সে! আচ্ছা, যেই মানুষটাকে সে চায়, তাকে যখন সম্পূর্ণভাবে নিজের করে পেয়ে যাবে তখন কেমন লাগবে ওর! ভাবলো সে, অনুভব করলো তার অনুভবকে! কিছুক্ষণ বাদে চোখ খুললো। চোখের কোণে জমে থাকা পানিটুকু আঙ্গুলে নিয়ে তাকালো তার দিকে! তার উত্তর যে সেই পানিটুকু। উহু, কষ্টের নয়! সে অনুভব করেছে! গভীরভাবে তাকে অনুভব করেছে! অনুভব করেছে তার প্রিয় অনুভবকে, যেখানে শান্তি আর শান্তি! রয়েছে তৃপ্তি! তৃপ্তি থাকবে না ই বা কেনো? সে যে তার প্রিয় মানুষ! কেবল তারর…প্রিয় অনুভব। আবারও বোনের দিকে তাকালো। রীতিও কত খুশি! সত্যি বলতে প্রিয় মানুষটাকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পাওয়াটাই বিরাট সুখের ব্যাপার। যা সবাই পায় না। একদম পায় না!
#চলবে