প্রিয় অনুভব পর্ব-০১

0
1120

#প্রিয়_অনুভব
#সাবরিন_জাহান_রোদেলা
#সূচনা_পর্ব

নিজের ভাঙ্গা গিটারের দিকে বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নাহিয়ান। নিজের থেকেও প্রিয় গিটারের এই অবস্থা দেখে বিস্মিত হয়েছে ও। বিস্ময়ের মাত্রাকে আরো কয়েক দফা বাড়িয়ে দিয়ে সাজ্জাদ বলে উঠলো‚ “মেয়েটা যে কেনো গিটারটাকেই চোখে দেখলো!”

বিস্ময় কাটাতে বেশ খানিকটা সময় নিলো নাহিয়ান। কিছুক্ষণ পর নাহিয়ান ফুঁসে উঠলো । তেজী কণ্ঠে বললো‚ “এটা কে করেছে?”

সাজ্জাদ কিছুটা সময় নিয়ে বললো, “একটা মেয়ে।”

“কে?”

সাজ্জাদ চুপ করে রইলো।

“কে সে?”

“বাদ দে না, ভুলবশত করেছে মেয়েটা!”

“আমি জানতে চাইছি কে করেছে?”

সাজ্জাদকে কিছু বলতে না দিয়ে তাহসিন বলে উঠলো, “রীতির কাজিন!”

“কোথায় সে?”

সাজ্জাদ আর তাহসিন একে অপরের দিকে তাকালো। ইশারায় বোঝালো তারা জানে না। নাহিয়ান চোখ বন্ধ করে রাগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলো।

“ভাইয়া, গিটারের মালিক কি এসেছেন?”

মেয়েলি কণ্ঠ শুনে ঘুরে তাকালো নাহিয়ান। পরনে তার হালকা নীল রঙের গাউন। মুখে হালকা সাজ।

“কি হলো, এসেছেন?”

সাজ্জাদ আর তাহসিন নাহিয়ানের দিকে তাকালো। ওদের দৃষ্টি অনুসরণ করে মেয়েটি তার দিকে তাকালো।

“ওহ আপনার তাহলে। সরি ভাইয়া, আসলে একটু মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল। তাই ভুলবশত আপনার গিটারের উপর রাগ ঝেড়ে ফেলেছি।”

নাহিয়ান কিছু বলবে তার আগেই সেই মেয়েটির পাশে থাকা আরেক মেয়ে বলে উঠলো, “নীতির বাচ্চা, সুন্দর করে বল। তোর কথায় কোনো অনুতপ্তবোধ নাই। ঠিক করে বল।”

প্রীতির কথায় বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকালো নীতি। আড়চোখে আবার সামনে থাকা যুবকটিকে। সে অগ্নিচোখে তাকিয়ে আছে তারই দিকে। ভয়ে ভয়ে ঢোক গিললো।

কাজিন বোনের বিয়ে‚ চারপাশের ডেকোরেশন নিয়ে ব্যস্ত ছিলো সে। সেই মুহূর্তে ওর ফোনে কিছু মেসেজ আসে। মেসেজগুলো ওর ভার্সিটির এক ছেলে পাঠিয়েছে। যেগুলো দেখে ওর মেজাজ জাস্ট বিগড়ে গিয়েছিল। রেগে গেলে জিনিসপত্র ছুঁড়ে ফেলার অভ্যাস আছে তার। অভ্যাসের ধারা ধরেই সেই মুহূর্তে গিটার সামনে দেখে ছুঁড়ে ফেলেছিল। এদিকে নাহিয়ান, সাজ্জাদ আর তাহসিন গিটার রেখে নিজেদের ব্যাক্তিগত কাজে একটু সরে গিয়েছিল। কিছুক্ষণ পর তাহসিন আর সাজ্জাদ ফিরে এসে দেখে গিটার মাটিতে। আর তার কিছু অংশ ভেঙ্গে গেছে। পাশেই ভয়ে গুটিশুটি হয়ে দাড়িয়ে আছে নীতি। কার না কার জিনিস ভাঙলো। সে তো ভাবেই নি গিটারটা ভেঙে যাবে। এখন ভীষণ আফসোস হচ্ছে তার। যার গিটার তাকে কী জবাব দিবে এখন?

“গিটারটা কে ভাঙলো?”(সাজ্জাদ)

“নাহিয়ান দেখলে শেষ আজকে!”(তাহসিন)

নীতি বুঝতে পারলো এরাই গিটারের মালিক। নিজেকে কিছুটা ধাতস্থ করে বলে উঠলো‚ “সরি, আমার আসলে মাথা গরম ছিলো। তাই কোনোদিক না ভেবেই‚ ইয়ে মানে ভুল হয়ে গেছে।”

সাজ্জাদ চমকে উঠে বললো ,“ভুল হয়ে গেছে মানে? তুমি জানো এটা কার? সে জানলে কি হবে বুঝতে পারছো?”

নীতি কাঁদো স্বরে বলল, “আমি সত্যি বুঝিনি। রাগের মাথায় করে ফেলেছি। সরি!”

তাহসিন তাচ্ছিল্যের সুরে বললো, “আমাদের সরি বলে লাভ নেই। যার গিটার তাকে বলো!”

অতঃপর নীতি অসহায়। আর এখন নাহিয়ানের সামনে।

“আমি সত্যি ইচ্ছে করে করিনি। রাগের বশে মানে মাথা এত গরম হয়ে গিয়েছিল, তাই সামনে যা পেয়েছি ছুঁড়ে ফেলেছি। আচ্ছা এটার দাম কত? আমি দিয়ে দিবো। সত্যি!”

বলেই হাসার চেষ্টা করলো ও। যদিও জানে না টাকা কোথা থেকে পাবে। নাহিয়ান যেনো আরও রেগে গেলো। দাঁত কিড়মিড় করে বললো‚ “গরম ছিলো তাই না?”

নীতি উপর নিচ মাথা নাড়লো।

“ওয়েট!”‚ বলেই সে কোথায় যেনো গেলো।

সেই জন্য প্রীতি ভাবুক ভঙ্গিতে বলে উঠলো‚ “কোথায় গেলো?”

“কে জানে… আরে!”‚ কথা বলার মাঝেই মৃদু আর্তনাদ করে উঠলো নীতি। মাথা বেয়ে পানি পড়তে লাগলো ওর শরীরে। চুল ও জামার অর্ধাংশ ভিজে গেলো সেই পানিতে। সম্পূর্ণ বোতলের পানি নীতির মাথায় ঢেলে ক্যাপ আটকাতে‚ আটকাতে নাহিয়ান বললো‚

“এবার ঠান্ডা হয়েছে‚ মাথা?”

বিস্ময়ের রেশ কাটিয়ে উঠতে সময় লাগলো নীতির। চমকে ওঠা কণ্ঠে বললো‚ “এটা কি করলেন?”

“মাথা ঠান্ডা।”

“আপনাকে আমার মাথা ঠান্ডা করতে বলেছি?”

“তো তোমার মাথা গরম দেখে আমার গিটার ভাঙতে বলেছি?”

“ওটা ভুল ছিলো!”

“এটা ভুলের মাশুল ছিলো!”

নীতি রাগে ফুঁসে উঠলো। সকাল সকাল গোসল সেরে কাজে লেগেছে ও। নয়তো কাজ করতে গিয়ে সেটা আর হতো না। তাই আগেই সেরেছে। কিন্তু এখন? এখন আবার ওকে ড্রেস পাল্টাতে হবে। আবার চুল শুকিয়ে সেট করতে হবে। আবার যা হালকা সাজ করেছিলো সেগুলোও করতে হবে। যতই হোক‚ বিয়ে বাড়ি তো। একটু না সেজে থাকলে চলে? এখন ওর যে এত এত সময় নষ্ট হবে এগুলো পুনরায় করতে গেলে, তার দায় কে নেবে?

“আপনাকে আমি…” ‚ বলেই নাহিয়ানের চুল টেনে ধরলো। আকস্মিক ঘটনায় বেকুব বনে গেলো নাহিয়ান। সাজ্জাদ আর তাহসিন হতভম্ব।

“আরে আরে কি করছো?”

নাহিয়ানের কথা শুনেও নীতি কিছু না বলে তার সমস্ত শক্তি দিয়ে ওর চুল টানতে থাকে। নাহিয়ান আর না পেরে নিজেও নীতির চুল টেনে ধরে। দুজনের চুলোচুলি দেখে ভরকে গেলো প্রীতি, সাজ্জাদ আর তাহসিন। প্রীতি কি করবে ভেবে না পেয়ে দুজনের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো ।

বেশ খানিকটা ধমকে বললো‚ “নীতি‚ ছাড়। কি করছিসটা কি?”

নীতি সেই অবস্থাতে থেকেই বললো‚ “আমাকে না বলে এই বেডারে বল।”

প্রীতি অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। এদের থামাবে কি করে? কেউ দেখলে সমস্যা! এই নীতি পরে ওকেই ফাঁসাবে সব কিছুর জন্য। ভাবতে ভাবতে হুট করেই বলে উঠলো‚ “বাবা দেখো ওরা কি করছে!”

সঙ্গে সঙ্গে ছিটকে সরে গেলো দুজন। কিন্তু সেখানে কাউকে না দেখতে পেয়ে দুজনই প্রীতির দিকে তাকালো। প্রীতি মলিন মুখ করে বললো‚ “আমি দুঃখিত। কিন্তু তোমরা প্লিজ থামো। কেউ এসব দেখলে বাজে পরিস্থিতি তৈরি হবে।”

নীতি রেগে বললো‚ “এই লোকটাকে বল।”

“আমাকে কি বলবে?”

“বলবে আপনার মাঝে আসলেই সমস্যা আছে। নইলে একটা মেয়ের চুল এমন করে টানতে পারতেন?”

“ওরে বাবা! নিজে টানলে দোষ নেই। আমি টানলেই যত দোষ নন্দ ঘোষ ?”

“আপনি আমার মাথায় পানি ঢাললেন কেন? ঢাললেন তো ঢাললেন‚ আবার চুলও টানলে !”

“আমার গিটার ভাঙ্গার জন্য চ’ড় দিয়ে তোমার দাঁত যে আমি ফেলে দেইনি তার শুকরিয়া আদায় করো! আবার টাকার গরম দেখাও আমায়? যত্তসব‚ আজাইরা পাবলিক।”

ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়লো নীতি।

“আপনাকে আমি . . . . .”‚ বলে আবার তেড়ে যেতে নিলেই প্রীতি ওকে টেনে ধরলো।

“প্রীতি ছাড় আমায়। আজকে ইনাকে টাক যদি না করেছি তাহলে আমার নামও নীতি না!”

নাহিয়ান টিটকারী দিয়ে বললো, “এই যে পাঁচ ফুটের মেয়ে! তোমাকে আর কষ্ট করে নাম রাখতে হবে না। তোমার নতুন নাম আমি রেখে দিচ্ছি। ‘দুর্নীতি’ ‚ ওকে? সুন্দর না নামটা? এখন থেকে এটা বলেই ডাকবো ! বাই!”

বলেই ভাঙ্গা গিটারটা তুলে নিলো । একেই তো ওর প্রিয় গিটার ভেঙ্গেছে, তার উপর টাকা দিবে বলছে। টাকা আর প্রিয় জিনিস কি এক হয়? সব কেনা গেলেও, প্রিয় জিনিসগুলোর মায়া কি কেন যায়! সরি বলে চুপ থাকলেও হতো। এইটুকু মেয়ে, আবার টাকা দিবে বলছে। চুপ করে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে ওখান থেকে চলে গেলো ও। ওর পিছু পিছু সাজ্জাদ আর তাহসিনও ছুটলো। নীতি প্রীতির দিকে অগ্নি চোখে তাকালো। অতঃপর নিজেকে ছাড়িয়ে রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো। প্রীতি কাঁদো কাঁদো মুখ করে তাকিয়ে রইলো। কি করবে এখন? নীতি নিশ্চয়ই ওকে আটকানোর জন্য রাগ করেছে। কাঁদো কাঁদো স্বরে নিজেকে নিজেই বললো‚ “ধুর ভাই‚ ভাল্লাগে না!”

বলেই ধপাধপ পা ফেলে রীতির কাছে গেলো।

নীতি‚ রীতি আর প্রীতি তিনজনই চাচাতো বোন। তাদের মায়েরা শখ করে তিনজনের নাম মিলিয়ে রেখেছে। এদের মাঝে রীতি তাদের বড়, আর প্রীতি নীতির এক বছরের ছোট। তবুও দুইজন সমবয়সীর মতোই থাকে। রীতির বিয়ে উপলক্ষে চলছে এত আয়োজন। তাই দুই বোন অনেক ব্যাস্ত। এই ব্যাস্ততার মাঝে আবার এমন পরিস্থিতি ঘটার কারণে নীতি চরম বিরক্ত। রুমে এসে স্বশব্দে আলমারি খুলে নিজের এক সেট কাপড় নিয়ে আবার স্বশব্দে লাগিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো সে। বিছানায় বসে রীতি অবাক নয়নে কেবল সবটা পর্যবেক্ষণ করেই গেলো। কিছুক্ষণ পর গম্ভীর মুখ নিয়ে প্রবেশ করলো প্রীতি। রীতি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো‚ “তোদের আবার কি হলো? ফের ঝ‘গড়া করেছিস দুইজন?”

প্রীতি গাল ফুলিয়ে বললো‚ “ঝগড়া নয়, চুলো‘চুলি হয়েছে! তাও আমার সাথে না, তোমার বন্ধুর সাথে !”

রীতি ভরকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো‚ “মানে?”

“মানে তোমার বন্ধু উরফে তোমার দেবর নীতির চুল টেনেছে!”

“কী বলিস?”

অতঃপর প্রীতি সবটা খুলে বললো।

“ওই বে‘ক্কলটা তাহলে আপুর বন্ধু?”

চুল মুছতে মুছতে বেরিয়ে এলো নীতি। প্রীতি প্রত্যুত্তরে বললো‚ “দেবরও হয়। শাফিন জিজুর এক মাত্র ভাই লাগে।”

নীতি টাওয়াল চুলে পেঁচিয়ে প্রীতির উদ্দেশ্যে বললো, “আপু‚ তোমার দেবরকে ভালো হতে বলবে। নয়তো এই নীতি কি চিজ‚ সেটা হারে হারে বুঝিয়ে দিবে!”

রীতি বিরক্ত হয়ে বললো‚ “তোরই বা কি দরকার ছিল ছেলেদের মতো গু‘ন্ডাগীরি করার?”

প্রীতি ফিক করে হেসে দিয়ে বললো‚ “গু‘ন্ডা না গু’ন্ডি হবে!”

সঙ্গে সঙ্গে নীতি ওর কান টেনে ধরলো। প্রীতি মৃদু আর্তনাদ করে বলে উঠলো, “আহ নীতি ছাড়!”

“চুপ বে‘দ্যোপ! ওই টাকলা মুরাদের জন্য তোর এত জ্বলে কেন? তোর জন্য আজকে ওই লোক হাত ছাড়া হলো। নাইলে আজকেই বুঝিয়ে দিতাম এই নীতি কী জিনিস!”

অতঃপর প্রীতিকে ছেড়ে রীতির দিকে তাকিয়ে বললো‚ “কেউ সরি বললে মেনে নিতে হয়। আমি কি ইচ্ছে করে ওমন করেছি? তাহলে উনি আমার সাথে লাগলো কেনো? আমি তো টাকা দিবোও বললাম।”

রীতি বিছানা থেকে নামতে নামতে বললো‚ “দেখ নীতি, গিটার নাহিয়ানের অনেক শখের একটা জিনিস। তাই ওর রাগ করাটা স্বাভাবিক। আর তাছাড়া তুই কেবল সরি বললে ও হয়তো তেমন রিয়েক্ট করতো না। টাকার কথাটা বলায় এমন করেছে। এখন আর কথা বাড়াস না। এমনেই অনেক ঝামেলা চলছে। তুই আবার কোনো গ্যাঞ্জাম করিস না। যেটা গেছে, গেছেই। বাদ দে‚ আমি গিয়ে দেখি নাহিয়ান কোথায়! ও যদি না বুঝে তোর বাবাকে বিচার দেয় তখন আরেক বিপদ! থাক তোরা।”

বলেই বেরিয়ে গেলো। দু সেকেন্ডের মাথায় আবার ফিরে এসে বললো‚ “নীতি, প্রীতি! সাবধান! ভুলেও খিচুড়ি পাকাবি না দুইটা মিলে!”

দুইজনই বাধ্য মেয়ের মতো বললো‚ “ওকে!”

রীতি যেতেই নীতি বাঁকা হেসে বললো‚ “খিচুড়ি পাকাবো না‚ তবে বিরিয়ানি পাকাবো! উইথ অনেকগুলো এলাচ!”

প্রীতি সতর্কতার বাণী হিসেবে বললো‚ “নীতি, প্লিজ! উল্টা পাল্টা চিন্তা বাদ দে। উনি কিন্তু আপুর শ্বশুরবাড়ির লোক। তোর উল্টা পাল্টা কাজে যদি বিয়েতে সমস্যা হয়?”

নীতি হেসে কোমরে হাত রেখে বললো‚ “কিচ্ছু করতে পারবে না ওই টাকলা মুরাদ! বিয়ের এই কয়দিনে যদি ওই টাকলা মুরাদকে জব্দ না করেছি‚ তবে আমার নামও নীতি নয়!”

প্রীতি ঠাস করে কপালে হাত দিয়ে বললো‚ “এই নিয়ে হাজারবার বলেছিস‚ এটা না পারলে‚ ওটা না পারলে তোর নাম নীতি না। অথচ এখন অব্দিও তোর নাম নীতি-ই আছে।”

নীতি ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকালো। অতঃপর মাথা থেকে টাওয়াল খুলে প্রীতির মুখে ছুঁড়ে দিয়ে বললো‚ “বের হ ‚ ফাজিল! আমার সাথে থেকে আমারই বিরোধিতা করিস? তুই দেখি ফুল টু মির জাফর! বের হ বলছি! যা…”

নীতির ধমকে মুখ বাঁকিয়ে বের হয়ে গেলো প্রীতি। নীতি রাগে গজগজ করতে করতে রেডি হতে থাকলো!

__________________________________

“নাহি!”

রীতির ডাকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো নাহিয়ান। বন্ধুমহলের আড্ডায় ব্যস্ত ছিল সে। এখানে এসেছিলো কনের কিছু জিনিস দিতে‚ যা ওর মা পাঠিয়েছে। রীতির এমন সম্বোধনে বিরক্ত হলো নাহিয়ান! ধপাধপ পা ফেলে রীতির কাছে এসে বললো‚ “তোকে বলেছি না? পাবলিক প্লেসে এমন শর্ট করে ডাকবি না? আরে ভাই লোকে মেয়ে ভাবে আমায়!”

“ভাবলে ভাবুক। যেটা বলতে আসলাম! তুই নাকি নীতির চুল টেনেছিস?”

প্রথমে নীতির নাম ধরতে পারেনি ওর মস্তিষ্ক। পরমুহুর্তে বুঝতে পারলো ‚ ‘সেই মেয়েটি ছিলো নীতি!’

“শুধু এতটুকু বলেছে? বাকিটা বলেনি?”

“বলেছে। দেখ ওর কথা ধরিস না তুই। বাচ্চা মানুষ.. কী বলতে কী বলে বুঝে না।”

নাহিয়ান ভ্রু কুঁচকে বলে‚ “ও বাচ্চা?”

রীতি বিরক্তিতে ‘উফফ’ বলে উঠলো।

“ধুর ছাই, শোন না। তুই ওর কথা মনে নিস না। আর..”

“আর ভাইয়াকে বলবো না‚ তাই তো?”

রীতি উপর নিচ মাথা নাড়লো। নাহিয়ান ওর মাথায় গাট্টা মে’রে বললো‚ “তুই না বললেও বলতাম না।”

তৎক্ষণাৎ রীতির মুখে হাসি ফুটলো।

“ঠিক এই কারণেই তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।”

বলেই নাহিয়ানের গাল টেনে দিলো। নাহিয়ান গালে হাত বুলাতে বুলাতে বললো‚ “হইছে‚ দাড়া তো ঠিকভাবে!”

“কেনো?”

“তোর জামাই তোর কয়েকটা ছবি তুলে নিয়ে যেতে বলেছে।”

সঙ্গে সঙ্গে গালে লাল আভা ফুঁটে উঠলো ওর।

“যাহ!”

“এত লজ্জা পেয়ে কাজ নেই। দাড়া!”

রীতি লজ্জায় নত হয়ে দাড়িয়ে রইলো। কি দরকার ছিলো নাহিয়ানকে এসব করতে বলার? রীতির এমন লজ্জারাঙা মুখ দেখে মুচকি হাসলো নাহিয়ান।

__________________________________

সাজগোজ শেষে ওড়না ঠিক করে বের হতে নিবে সেই মুহূর্তে বিছানায় পড়ে থাকা নিজের মোবাইলের ফেসবুক নোটিফিকেশন টিউন শুনতে পেলো নীতি। হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলো ওর। সঙ্গে সঙ্গে ফোন হাতে নিলো ও। নোটিফিকেশন চেক করতেই শান্ত হয়ে গেলো ওর। চোখে মুখে নেমে এলো মলিনতার ছাপ। না‚ তার কাঙ্ক্ষিত নোটিফিকেশন এখনও আসেনি। আর না খুঁজে পেয়েছে সেই কাঙ্ক্ষিত আইডি। কি করে খুঁজবে ও তাকে? আদো কি পাবে? ভাবতে ভাবতেই একটা রেকর্ডিং অন করলো ও। গানের রেকর্ড সেটা। গানটা তার ভীষণ প্রিয়! গান গেয়ে তাকে পাঠানো মানুষটা তার থেকেও অধিক প্রিয়। যে এখন ওর থেকে অনেক দূরে। অনেক অনেক দূরে! ইয়ারফোন কানে গুঁজে অনুভব করতে লাগলো সেই গান‚ আর গান গাওয়া মানুষটাকে।

“একটা মানুষ কাছে ছিলো‚
একটা মানুষ দূরে….
আমার যত কথা ছিল‚
বলতে যে চাই তারে!”

চোখ দিয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়লো ওর। আচ্ছা এটাকে কী মানুষ হারানো বলবে নাকি বিচ্ছেদ? ভেবে পেলো না ও। মনে মনে আওড়ালো‚ “আচ্ছা‚ দূরে আছি বলে কী ভালোবাসা ছেড়ে দিবেন অনুভব? আপনার প্রিয় যে দুঃখের সাগরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে আপনাকে ছাড়া‚ তা কি জানেন?”
কথাটা বলেই হাসলো নীতি। এটা যদি তার অনুভবকে বলতো‚ তাহলে সে অভিমান করে বলতো‚ “আমাকে ছেড়ে তুমি ওই দুঃখের সাগরের কাছে গেলে কী করে প্রিয়?”
পরক্ষণেই হাসি মিলিয়ে গেলো তার। বুক চিরে বেরিয়ে এলো দীর্ঘশ্বাস। অতঃপর উঠে বাইরে গেলো। কত কাজ তার? এভাবে বিরহে ডুবে থাকলে চলবে তার? আবারো মনে মনে বলে উঠলো‚

“আপনারও বিরহে আমি বিরহীনি‚ অনুভব! এই বিরহে ডুবে আছি আমি! জানেন কি?”

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে