#প্রিয়ানুভব [৮]
প্রভা আফরিন
এক মেদুর দিনের আদুরে বিকেলের কথা। কিশোরী প্রিয়া তখন সবে ক্লাস সেভেনে পড়ে। বাবা রেজাউল করীমের প্রতিদিন বিকেলে অফিস থেকে ফিরে চা খাওয়ার অভ্যাস। তিনি বাড়িতে থাকলে প্রতি দু’ঘন্টা অন্তর এক কাপ চা খেতেন। যার ফলে রান্নাঘরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সিলেট থেকে আনা স্পেশাল চা পাতার সুঘ্রাণ নাকে সুড়সুড়ি দিতো সব সময়। একদিন প্রিয়ার ইচ্ছে হলো বাবাকে চা বানিয়ে খাওয়াবে। ভাবনার বাস্তবায়ন ঘটাতেই বাবার অফিস থেকে ফেরার সময়ে চুপিচুপি রান্নাঘরে ঢুকে চা বানাতে লেগে যায় সে। প্রথমবার নিজ হাতে চুলা জ্বালানোর উত্তেজনায় প্রিয়া ভীষণ খুশি ছিল। অভিজ্ঞতা ও পরিমানের আন্দাজ না থাকায় লিকার এবং চিনি হয়েছিল অতিরিক্ত। তিতকুটে মিষ্টি শরবতের অনুরূপ সেই চা খেয়ে বাবা ভীষণ খুশি হলেন। মেয়ের হাতের প্রথম চা বলে কথা! সেই সঙ্গে সাবধানও করলেন কাউকে পাশে না রেখে যেন দ্বিতীয়বার রান্নাঘরে না যায়। অপটু হাতে পাছে কোনো অঘটন ঘটে! বাবা কী জানেন তার মেয়ে এখন রোজ দুবেলা হাত পুড়িয়ে রাঁধে? জেলে দেখা করতে গিয়ে প্রিয়া বাবার সঙ্গে কোনো কথাই বলতে পারে না। বাবাও নতমস্তকে থাকেন। একসময় দেখা হওয়াটা যতটা প্রশান্তির ছিল এখন ততটাই মানসিক অশান্তির, বিব্রতকর। অনুভূতি বদলাতে সময় লাগে না, গতানুগতিক জীবনের স্বাভাবিকতার ছন্দপতন হলেই অনুভূতির ছন্দপতন হয়।
প্রিয়া এলোমেলো ভাবতে ভাবতেই ভাতের মাড় গালছিল। ঢাকনা ফসকে গরম ফ্যান পড়ে গেল হাতে। প্রবল উত্তাপের ফলে সৃষ্ট জ্ব’লুনিতে চৈতন্য ফিরল ওর। কণ্ঠ নিংড়ে বেরিয়ে আসে আর্তনাদ। মুনিরা বেগম পাশেই বসে রান্নার সরঞ্জাম গোছাচ্ছিলেন। ঘটনার আকস্মিকতায় তিনি বিমূঢ় হয়ে গেলেন কয়েক পলের জন্য। এরপর মেয়ের হাত জগের ভেতর চেপে ধরলেন। গজগজ করে বললেন,
“কাজের সময় মনোযোগ কই থাকে? পুড়ল তো হাতটা। এখন বরফ কই পাই?”
প্রিয়া ঠোঁট চেপে ধরে, বুজে আসে চোখ। পানির সান্নিধ্যে একটু আরাম লাগছে। কিন্তু হাত বের করলেই আবার জ্ব’লছে। বরফের কথা শুনে দিয়া ছুটে বেরিয়ে গেছে। রঞ্জু তাকে ছুটতে দেখে পিছু ডেকে বলল,
“ও দিয়া, ভাগ মিলখা ভাগ কইরা কই যাও?”
“আপুর হাত পুড়ে গেছে। বরফ লাগবে, রঞ্জু ভাইয়া।”
রঞ্জু চমকে উঠল। ফুরফুরে মেজাজ মিলিয়ে গেল নিমিষেই। ব্যস্ত গলায় বলল,
“কী কও! চলো আমার সাথে।”
রঞ্জু দুটো কাঠি আইসক্রিম কিনে নিয়ে এলো প্রিয়ার জন্য। মুনিরাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“খালাম্মা, এইটা হাতে লাগান। আরাম পাইব।”
মুনিরা আইসক্রিমের প্যাকেট খুলে প্রিয়ার ভেজা হাতের কব্জিতে চেপে ধরে। প্রিয়া বলল,
“এটার দরকার ছিল না রঞ্জু ভাই। অল্পই পু’ড়েছে।”
রঞ্জু স্মিত হেসে বলল,
“তুমি সংসারের একমাত্র কাজের মানুষ। অসুস্থ হইলে ক্ষতি। আমার দেওয়া দেইখ্যা সংকোচ কইরো না। অন্যকেউ হইলেও তো দিতাম। দিতাম না?”
প্রিয়ার আর কিছু বলার রইল না। রঞ্জুর নারীপ্রীতি স্বভাবের ফলেই প্রিয়া তাকে এড়িয়ে চলে ঠিক। কিন্তু ছেলেটা কিছুটা উ’শৃংখল, ব’খাটে গোছের হলেও সেবাপরায়ণ। রঞ্জু অবশ্য দাঁড়াল না। সে বস্তির অঘোষিত মুশকিল আসান ধরনের মানুষ। এক জায়গায় বেশি সময় থাকতে পারে না। কোনো কাজের দরকারে ছুটে চলে গেল।
দিয়া বোনের পাশে বসে একদৃষ্টিতে আইসক্রিম গলে গলে পড়া দেখছিল। প্রিয়া তা খেয়াল করল। মেয়েটা আগে আইসক্রিম, চকলেটের জন্য কত পাগলই না ছিল। এখন তিনবেলা পেট ভরে খেলেই হলো। প্রিয়া অপর আইসক্রিমটা দিয়ার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“আমার আর লাগবে না। খেয়ে নে।”
দিয়া বোনের লাল হয়ে যাওয়া হাতের কব্জিতে সন্দিগ্ধ চোখে চেয়ে বলল,
“না, তোমার হাত লাল হয়ে গেছে। এটাও লাগবে।”
“গলে যাচ্ছে তো। শুধু শুধু নষ্ট হওয়ার চেয়ে তুই খেয়ে নে।”
ভাতের মাড় অসাবধানে পড়ে গিয়ে অনেকগুলো ভাতও পড়েছে। প্রিয়া হাড়ির ভাত দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এখন পুনরায় রাঁধার সময় নেই। ও খেয়ে গেলে মা-বোনের কম পড়বে। মাকে আবার চুলার কাছে আসতে হবে যেটা ভীষণ কষ্টসাধ্য মানুষটার জন্য। এরপর নিজের অপারগতায় মা সারাদিন গুমরে থাকবে। কী দরকার! ঘড়িতে সময় দেখল প্রিয়া। কাজে যাওয়ার সময় হয়েছে।
মেয়েকে পোড়া হাতে না খেয়ে বেরিয়ে যেতে দেখে মুনিরা আঁতকে উঠলেন। নিষেধ করে বললেন,
“আজকে না গেলি। ফোনে বলে দে।”
“মানবে না, মা। এমনিতেই পরীক্ষার সময় বন্ধ করেছি।”
“খেয়ে যা, হাতে মলম লাগাতে হবে।”
“ও বাড়ি গিয়ে খেয়ে নেব। মলম পথে যেতে কিনে নেব, তুমি চিন্তা করবে না একদম।”
প্রিয়া অনুভবদের বাড়ি পৌঁছাতেই লিফটের কাছে অনুভবের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। অনুভব ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বেরিয়েছে তখন। ওকে দেখে মুচকি হেসে ভ্রু নাচিয়ে বলল,
“কেমন আছো, হাসুউউ?”
হাসির বিপরীতে প্রিয়া মুখটা ম্লান করে বলল,
“হাসু কেমন আছে জানি না, প্রিয়া ভালো আছে।”
“আমার তো তা মনে হচ্ছে না। মুখটা শুকনো কেন?”
“ভেজা কবে ছিল?”
প্রিয়া স্বাভাবিক সুরেই বলল। অনুভব ওর ত্যাড়া জবাবে মুখ কুচকাতে গিয়েও হেসে ফেলল। এই মেয়েটার এমন গম্ভীর সুরের কথাগুলো আজকাল তার ভালো লাগে। বিপরীত স্বভাবের মানুষকে বোঝার চেষ্টা করতে মন্দ লাগে না। অনুভব বলল,
“তুমি খুব ভদ্রভাবে ত্যাড়া জবাব দিতে জানো। অপরপক্ষকে অপ্রস্তুত করতে যা অব্যর্থ।”
“আমি যাই।”
প্রিয়া হাতের চিনচিনে ব্যথা সামলে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিল। অনুভব হাত ধরে ওকে আটকাতে গেলে মুখ থেকে ক্ষীণ আর্তনাদ বেরিয়ে আসে। অনুভব খেয়াল করে বলল,
“কী হয়েছে হাতে?”
প্রিয়া হাত সরিয়ে নিতে চাইলে সে ছাড়ল না। তীক্ষ্ণ চোখে পর্যবেক্ষণ করতে লাগল। প্রিয়া বলল,
“ভাতের মাড় গালতে গিয়ে গরম ফ্যান পড়েছে।”
“মেডিসিন লাগাওনি?”
“লাগিয়ে নেব পরে।”
অনুভব ধমকে বলল,
“তোমার পরের জন্য ক্ষতের জ্বা’লা থেমে থাকবে? সবকিছুতে বেশি বোঝার ভাব দেখানো বন্ধ করো।”
অনুভব ওকে টেনে নিয়ে লিফটে উঠে গেল। বাড়িতে নিওবার্নিয়া ছিল। অনুভব নিজের হাতে সেটা ওর আহত স্থানে লাগিয়ে দিল। সাবধানী স্বরে বলল,
“পাকামো করবে না একদম। জাইমকে কোলে কম রাখবে। দোলনায় বসিয়ে খেলা কোরো। আর বেশি খারাপ লাগলে বুড়ি তো আছেই সুস্থসবল। তার কাছে রেখে বাড়ি চলে যেয়ো।”
প্রিয়া কোনো জবাব দিল না। তাচ্ছিল্য ভরা দুনিয়াতে একটুখানি যত্ন পেয়ে ওর চোখজোড়া আড়ালে ভিজে উঠল বোধহয়। অনুভব প্রিয়ার মাথায় আলতো হাত রেখে চলে গেল। সঙ্গে সঙ্গে কোথা থেকে ছুটে এসে ওর ওপর হামলে পড়লেন জয়নব। বাজখাঁই সুরে বললেন,
“তোমার আব্বা নাকি অ’প’রাধী? কোম্পানির অর্থ আত্মসাতের দায়ে জে’লে গেছে?”
কথাগুলো কর্ণগোচর হতেই প্রিয়ার সর্বাঙ্গে কাঁপুনি ছুটে গেল। আব্বা অপ’রা’ধী! এমন জঘন্য শব্দ ইহজগতে দুটি হয়? প্রিয়ার কেমন দমবন্ধ লাগে। মানসপটে ভেসে ওঠে বাবার ভারী মুখখানা।
রেজাউল করীম সারাজীবন কন্যাদের কাছে ছিলেন এক আদর্শ পিতা, স্ত্রীর নিকট আদর্শ স্বামী, পরিবারের নিকট একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তিত্ব। স্ত্রী যখন প্যারালাইজড হলেন রেজাউল করীম যথেষ্ট সেবা করেছেন বলতে দ্বিধা নেই। মেয়েদুটোকেও আগলে রেখেছেন৷ কখনো গায়ে হাত তোলা তো দূর অন্যকেউও কন্যাদের দিকে বক্র চোখে তাকালেও বরদাশত করতেন না। স্বল্পভাষী প্রিয়া সারাক্ষণ চুপচাপ থাকলেও বাবার সামনে তার গল্পের অন্ত ছিল না। ছিল না জীবনে কোনো বিষাদের হাতছানি। দুচোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে রোজ রাতে তারা ঘুমাতে যেত। এরপর হুট করেই একদিন স্বপ্ন ভঙ্গ হলো। লোভের ঝকঝকে মোহে পড়ে রেজাউল হক ভুল করলেন, অথবা পাপ। প্রিয়া দেখতে পেল বাবাকে কোম্পানির অর্থ আত্মসাতের দায়ে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। নিয়ে যাচ্ছে বাকি তিনটি মানুষের ভাগের সকল সুখ। চেনা পৃথিবীটা সেদিন থেকেই আমূল পরিবর্তন হয়ে গেল।
বড়ো চাচি অ’প’রাধীর মেয়ে-বউকে বাড়িতে রাখতে চাইলেন না। একই রক্তের ধারা, তাদের দ্বারাও অন্যায় হওয়ার সম্ভাবনা আছে। নিজের সন্তানদের সঙ্গে ওদের দুই বোনকে রাখা বিপদজনক। বড়ো চাচির দুটি মেয়ে বিবাহযোগ্যা। এসব রটনা ছড়ানোর পর তাদের বিয়ে দিতেও ঝামেলা হবে। সুতরাং সব সমস্যার সমাধান অ’প’রাধী রেজাউল করীমের অস্তিত্বদের বাড়ি থেকে সরিয়ে ফেলা। বড়ো চাচি নিজের সন্তানদের প্রতি সচেতনতা প্রকাশের সাথে সাথে অন্যের সন্তানের প্রতি নি’র্ম’মতার পরিচয় দিলেন।
শূন্য হস্তে বিতাড়িত হয়ে ঠাঁই পাওয়ার আশায় প্রিয়ারা ছুটল মামা বাড়িতে। সেখানে থেকে এইচএসসি পরীক্ষাটা দিতে পেরেছিল প্রিয়া। কিন্তু তিনটি মানুষকে ঘাড়ে বসিয়ে খাওয়ানোর ঝামেলা কে নিতে চায়? তার ওপর একটি মেয়ে সমাজের চোখে প্রায় বিবাহযোগ্য। মামার আর্থিক অবস্থাও আহামরি নয়। মামীর মিষ্টভাষী স্বরটা অল্প কয়দিনেই নিমের মতো তেতো হতে থাকল। আশেপাশের মানুষের কটুক্তি তো ছিলই। মামা চাইলেন ভাগ্নীকে বিয়ে দিয়ে দেবেন। জোগাড় করলেন একজন মুদি দোকানওয়ালাকে। প্রিয়া বুঝে গেছিল বিয়েটা করে নিলে নিজে কেমন থাকবে আর মামার বাড়িতে মা-বোনও কেমন থাকবে। মুনিরা বিয়েতে আপত্তি তুললেন। উনার নিজেরই বিয়ে হয়েছিল একুশ বছর বয়সে। মেয়েকে আঠারোতে দেবেন তাও আবার অশিক্ষিত ছেলের কাছে! মামা-মামী রূঢ় হতে শুরু করলেন। স্বামী জেলে গেছে, অর্থ আত্মসাতের মা’মলায় তিন বছরের জে’ল-জরিমানা হয়েছে। তার পরিবারের এত দে’মাগ কোত্থেকে আসে? কোনো উচ্চশিক্ষিত, সম্রান্ত ঘর এই পরিবারে আত্মীয়তা করবে না। ওরা বুঝল মামা বাড়িতেও দিন ফুরিয়েছে। আর কেউ নেই মাথার ওপর ছায়া হওয়ার। পায়ের নিচে জমি দেওয়ার। এবার নিজেকেই নিজের ছায়া হতে হবে।
সকলের হীন দৃষ্টি থেকে বাঁচতে, একটা ভালো বাড়ির ভাড়া বহন করার ক্ষমতাটুকুও কপালে নেই বলেই বাধ্য হয়েই বস্তিতে উঠতে হয়েছে ওদের। প্রিয়ার মন ভেতর থেকে তাগিদ দিয়েছে বড়ো হতে হবে। আশ্রয়হীন সংসারের ছায়া হতে হবে। সেই থেকেই তার কৈশোরের কোমলতা ধীরে ধীরে গম্ভীরতায় ঢেকে গেছে।
বস্তিতে ওরা কাউকেই বাবার অ’প’রাধের কথা জানায়নি। এ নিয়ে খুব সচেতন থেকেছে। তারপরেও অন্তরা আপার মা কী করে জেনে গেল প্রিয়ার মাথা কাজ করছে না। তবে উনি যে প্রশ্নটা করেছেন তার উত্তরে প্রিয়া বলতে পারে তার বাবা অপ’রাধী নয়। বাবা সত্ত্বাটা কখনো তাদের সঙ্গে অ’ন্যায় করেনি। ব্যক্তি রেজাউল করীম অপ’রা’ধী হতে পারেন। যাকে প্রিয়া অস্বীকার করে। স্মৃতিতে আঁকড়ে ধরে রাখতে চায় বাবা সত্ত্বাটাকেই।
প্রিয়ার জবাব না পেয়ে জয়নব চ্যাঁচিয়ে বলতে লাগলেন,
“কী অবাক কান্ড! জেল খাটা আ’সামীর মেয়ে হয়ে ছদ্মবেশে চাকরি নিয়েছো? তোমার মতলব তো ভালো না। চু’রি, ডা’কাতি করতে ঢুকেছো? প্রথমে মানুষের বিশ্বাস অর্জন করবে এরপর সব নিয়ে ভেগে যাবে।”
“আমি ছদ্মবেশ নেইনি।” প্রিয়া ভাঙা সুরে কোনোমতে উচ্চারণ করে।
“আবার মুখে মুখে কথা! এখন তো সন্দেহ হচ্ছে বাড়ির সবকিছু সহিসালামত আছে কিনা। আল্লাহ গো আল্লাহ, দুধ-কলা দিয়ে কালসাপ পুষছিলাম ঘরে! বাড়ির ছেলের দিকেও তো হাত বাড়িয়েছ। দিনে-দুপুরে ফাঁকা বাড়িতে লটকা-লটকি করে বেড়াচ্ছ। ভেবেছ বুড়ো মানুষ চোখে কিছু দেখি না? আর কী কী ধান্দা জানো? তাই তো বলি, এই মেয়ে এমন ভেজা বেড়াল হয়ে থাকে কেন?”
প্রিয়ার কানে কেউ গরম সিসা ঢালছে বোধহয়। মনে হচ্ছে অদৃশ্য এক হাত গলা চেপে ধরেছে। মুখ ফুটে একটা প্রতিবাদও করতে পারছে না। এরপরের বাকিটা সময় প্রিয়া ঘোরগ্রস্তের মতো রইল। হাজারটা নোংরা বাক্য তার কান ছুঁয়ে গেলেও কোনো প্রতিক্রিয়া দিতে পারল না। শুধু মনে মনে হিসেব করতে লাগল এই চাকরিটা যাওয়ার পর কত বড়ো ধাক্কাটা আসবে? কতদিন আধপেটা খেয়ে থাকবে? নতুন কাজ আদৌ জুটবে তো? আর পড়াশোনা?
একসময় জয়নব ওকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার আগে পোশাক খুলে শরীর চেক করে দেখতে চাইলেন বাড়ি থেকে কোনোকিছু সরিয়ে নিয়েছে কিনা। প্রিয়া লজ্জায় অপমানে মাটিতে মিশে যাচ্ছে প্রতিক্ষণে। সেই লজ্জার কাছে পো’ড়া স্থানের ব্যথা নস্যি হয়ে গেল। বন্ধ চোখের কবাট হতে জল গড়িয়ে পড়তে লাগল বিরামহীন। অবস কণ্ঠে বিড়বিড় করে বলল,
“আল্লাহ, ধৈর্য দাও। শক্তি দাও।”
চলবে…