#প্রিয়দর্শিনী🧡
#প্রজ্ঞা_জামান_তৃণ
#পর্ব__৫০
সময় যেন থেমে নেই। দর্শিনীর নয় মাস রানিং চলছে। প্রসবকালীন ভয়াবহ সময়টা যেন ক্রমশ এগিয়ে আসছে। দর্শিনীর পেট আগের চেয়ে অনেক উঁচু হয়েছে। ডাক্তার বলেছে তার শারীরিক কন্ডিশন নরমাল। তাই বাচ্চা নরমালে হওয়ার সম্ভবনা সবচেয়ে বেশি! সবটা আবিদের জন্য সম্ভব হয়েছে। আবিদের অতিরিক্ত যত্ন–ভালোবাসার জন্য! প্রেগন্যান্সির শেষমুহূর্তে আবিদ দর্শিনীর জন্য বেশ টেনশনে রয়েছে। এমন কী আবিদ সরাসরি অফিসে উপস্থিত হয়নি। কারণ বশত বলা যায় হঠাৎ করেই যদি দর্শিনীর লেবার পেইন উঠে তাহলে করণীয় হিসাবে দ্রুত হসপিটালে নিয়ে যেতে পারবে ভেবেই। ফলশ্রুতিতে আবিদ ভার্চুয়ালে কানেক্টেড থেকে যাবতীয় কাজকর্ম–অফিস সামলাতে ব্যস্ত।
চৌধুরী বাড়িতে দর্শিনীর প্রেগন্যান্সির শুরু থেকেই অনুসা বেগম, পুস্পিতা তার ভালো মতো খেয়াল রাখে। তাছাড়া পুস্পিতা সবসময় দর্শিনীকে নিজের বোনের মতো সাহায্য করে। যাবতীয় সমস্যা সম্পর্কে আগেই সর্তক করে। করণীয় সবকিছু স্পষ্টত ব্যাখ্যা করে। দর্শিনী পুস্পিতাকে বলে ভাগ্য করে শ্বশুরবাড়িতে দ্বিতীয় মা-বোন পেয়েছে। পুস্পিতা দর্শিনীর কথা শুনে মিষ্টি করে হাসে। তার ছেলেটা মাকে হাসতে দেখে কিছু একটা বুঝে হাসতে থাকে। ছোট্ট সমুদ্র, আরহান এবং পুস্পিতার একমাত্র ছেলে। বয়স সবে আট মাস চলছে। আট মাসেই সমুদ্রকে এক্সট্রা অর্ডিনারি দ্রুত বেড়ে ওঠা বাচ্চাদের মতো মনে হয়। ছোট্ট সমুদ্র দেখতে সুদর্শন বটে। তুষার শুভ্র, ফর্সা ত্বক তার! দর্শিনী মাঝে মাঝেই সমুদ্রকে দেখে বিস্ময় বোধ করে। কারণ সমুদ্র যেনো তারই মেইল ভার্সন! দর্শিনী ছোটবেলায় সমুদ্রের মতো তুষার শুভ্র ফর্সা ছিল। কাজিনরা সবাই তাকে কোলে নেওয়ার জন্য উদগ্রীব থাকতো। কিন্তু ছোট্ট দর্শিনী বাবার কোল ছাড়া কারো কোলে যেতে পছন্দ করতো না। দর্শিনী পুরোনো কথা মনে করে হাসল কিছুক্ষণ। হঠাৎ-ই আবিদ রুমে এসে হন্তদন্ত হয়ে তৈরি হতে থাকে। এইমুহূর্তে হয়তো কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজে যাবে! পুস্পিতা তখন সমুদ্রকে নিয়ে চলে যায়। দর্শিনী তখন বিছানায় শুয়েছিল। সে আবিদকে তাড়াহুড়ো করতে দেখে জিগ্যেস করে,
‘কোথায় যাচ্ছেন?’
‘একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে! দুপুরের আগেই চলে আসবো। কোনো সমস্যা হলে ফোন করবে। নাহলে মাকে জানাবে! মনে থাকবে?’
‘আচ্ছা! আপনি সাবধানে থাকবেন।’
আবিদ দর্শিনীর কপালে দীর্ঘ চুমু খেয়ে বেড়িয়ে যায়। কাল রাত থেকে দর্শিনীর পেটে মৃদু ব্যথা হচ্ছে। অবশ্য শেষের কয়েকদিন ধরেই এমন ব্যথা। দর্শিনী বিষয়টি স্বাভাবিক ভাবেই নেয়। মৃদু ব্যথা হওয়ার কারণ বেবির নড়াচড়া! দর্শিনী বিগত দুই-তিন মাস ধরে বেবির নড়াচড়া অনুভব করতে পারে। যখনি বেবি নড়াচড়া করে উঠে! আবিদ তখন দর্শিনীর পেটে কান পেতে বেবিকে অনুভব করে। মাঝেমাঝে বেবির লাথিকে অনুভব করে আবিদ আনন্দে আত্মহারা হয়ে যেতো। নিজের ঔরসজাত সন্তান বলে কথা! আবিদ প্রায়ই দর্শিনীর পেটে মুখ গুঁজে মেয়ের সঙ্গে নানান গল্পে মেতে থাকতো। ইমোশনাল হয়ে দর্শিনীকে অজস্র চুমু দিতো। আবিদ সর্বদা বলে ছেলে হোক কিংবা মেয়ে আমার জন্য সবসময় আলহামদুলিল্লাহ্! তাইতো আল্লাহ্ খুশি হয়ে তাদেরকে কন্যাসন্তান দান করেছেন। হ্যাঁ, আবিদ দর্শিনীর মেয়ে হবে! দুইমাস আগে সবাই খবরটা জানতে পেরেছে। চৌধুরী বংশে শবনম চৌধুরী এবং আদিবার পরে আবার কন্যাসন্তান আসছে। খবরটা শুনে সবাই খুশি ছিল। বিশেষ করে আবিদ! পেটে মৃদু ব্যথার জন্য দর্শিনী সকাল থেকে শুয়ে ছিল। তলপেটের ব্যথাটা কেমন যেন অন্যদিনের থেকে বেশি অনুভব হচ্ছে। দর্শিনী বিষয়টিকে স্বাভাবিক দিনের মতো আমলে নিলো। সে প্রসব ব্যথা সম্পর্কে ভেবেই দেখেনি।
সকাল দশটায় প্রজ্জ্বলিনীর সঙ্গে কথা বলে দর্শিনী ঘুমানোর প্রচেষ্টা করে। কারণ খাওয়া, ঘুমানো, শুয়ে থাকা ছাড়া কোন কাজ নেই তার। একটু আগে পুস্পিতা ফলমূল কেটে দিয়ে গেছে। দর্শিনী বমি করার ভয়ে সকালে অল্প খেয়েছে। আজকে শরীরটা ভালো লাগছে না। দর্শিনী খোঁজখবর নেওয়ার জন্য বাবাকে ফোন দেয়। কিন্তু বাবার নাম্বার সুইচঅফ বলছে। সে ভাবল মাকে ফোন দিবে। হঠাৎ করেই দর্শিনীর ফোনে মুহতাসিম ভিলার ল্যান্ডলাইন থেকে ফোন আসে। দর্শিনী রিসিভ করতেই মায়ের কান্নাকাটি শুনতে পেলো। মাকে কাঁদতে দেখে দর্শিনী ভয় পেয়ে যায়! ভাবলো বাসার কারো বিপদ হয়নি তো? ভয়ে তার কন্ঠস্বর আড়ষ্ট হয়ে গেছে! তৎক্ষনাৎ দর্শিনী ব্যস্ত হয়ে মায়ের উদ্দেশ্যে বলে,
‘হ্যালো মা! তুমি ঠিক আছো? এভাবে কান্না করছো কেনো? দাদু ঠিক আছে তো? নাকি বাবার শরীর খারাপ? বাবাকে ফোন দিলাম কিন্তু সুইচঅফ বলছে!’
অপরপাশে প্রিয়মা বেগমের কান্নার স্বর আরো বেড়ে যায়। দর্শিনী বিছানা ছেড়ে কষ্ট করে উঠে পড়ে। পরক্ষণেই মাকে কান্না থামিয়ে সবটা খুলে বলতে বলে। প্রিয়মা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন,
‘যাই হয়ে যাক, প্রিয় তুই এখানে আসবি না!’
উক্ত কথাটা বলার সঙ্গে সঙ্গে অপরপাশে স্বশব্দে থাপ্পড়ের আওয়াজ পায় দর্শিনী। ভীতিকর অবস্থায় প্রিয়মা বেগম চিৎকার করে ছিঁটকে পড়েন। ফোনটা কেটে যায়। দর্শিনী আবার ফোন দেয়! কিন্তু না আর রিসিভ হচ্ছে না। টেনশনে বেশ কয়েকবার আবিদকে ফোন দিয়ে বসে। আবিদ ফোন ধরছে না। কি করবে বুঝতে না পেরে দর্শিনী বিছানায় বসল। একটুপর ল্যান্ডলাইন নম্বর থেকে আবার ফোন আসল! দর্শিনী রিসিভ করতেই একজন বিশ্রীভাবে হেসে বলল,
‘মাকে বাঁচাতে চাইলে মুহতাসিম ভিলায় চলে আয়। খবরদার কাউকে কিছু জানালে তোর মাকে মেরে ফেলব। শোন চালাকি করার চেষ্টা করিসনা। নাহলে ফলাফল ভালো হবেনা। এই মুহূর্তে কাউকে না জানিয়ে একা চলে আয়।’
লোকটি হুমকি দিয়েই ফোন বন্ধ করে দেয়। দর্শিনীর ভয়ে হাত-পা কাঁপছে। লোকটি তাকে ঘটনাটা কাউকে জানাতে নিষেধ করল। কিন্তু কে সেই লোক? তার মাকে আঁটকে কী চাইছে? এমন হাজারটা প্রশ্নকে সাইডে রেখে দর্শিনী পার্সে কিছু টাকা আর ফোনটা নিয়ে মুহতাসিম ভিলার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে যায়। তাকে চুপিচুপি বেড়িয়ে আসতে হলো। বাড়ির কেউ দেখলে তাকে যেতে দিতো না। সবটা জানাজানি হয়ে যেতো। পরবর্তীতে হয়তো তার মায়ের ক্ষতি করে দিতো। তাই কাউকে জানায়নি সে। দর্শিনী রাস্তায় দাঁড়িয়ে ব্যস্ত হয়ে ট্যাক্সি খুঁজে চলেছে। পুরোপুরি নয় মাস বিশ দিনের ফুলো পেটকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছিলো। তবুও সে দাঁড়িয়ে রইল! কিছুক্ষণ পরে একটা ট্যাক্সি তার সামনে এসে দাঁড়াল। লোকটি প্রেগন্যান্ট মেয়েটিকে সাহায্য করতেই পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। দর্শিনী তাকে দ্রুত মুহতাসিম ভিলার দিকে যেতে বলে। রাস্তায় অনেক জ্যাম ছিল। বিশ মিনিট পরে ড্রাইভার তাকে সহিসালামত পৌঁছে দিলো। দর্শিনী ড্রাইভারকে টাকা দিয়ে মুহতাসিম ভিলার দিকে যেতে থাকলো।
এতো ভারী পেট নিয়ে টেনশন, দৌঁড়াদৌঁড়ি সহ্য হচ্ছে না দর্শিনীর। পেট, পীঠ, কোমড় ব্যথায় জর্জরিত। দর্শিনী গেটে ঢুকতে কোনো দাড়োয়ানকে দেখতে পেলো না। কেমন যেন নিঃশব্দ অবস্থা। ভয়ের চোটে দর্শিনীর ঘাম ছুটে গেছে। শাড়িটাকে ভালো করে জড়িয়ে শরীর, পেট ঢেকে আল্লাহর নাম নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে দর্শিনী! আশরাফ সাহেব বাসায় উপস্থিত ছিলেন না। হয়তো কলেজে গেছেন। তাছাড়া আহমেদ মুহতাসিম বিছানাগত। তিনি নিজের রুমেই থাকেন। আবার কাজের মেয়েটি সবসময় থাকেনা। বাড়িতে শুধু প্রিয়মা বেগম একা থাকেন। মায়ের ব্যপারে বেশ দুশ্চিন্তা হচ্ছে দর্শিনীর। বাড়িতে ঢুকতেই লিভিং রুমে প্রিয়মা বেগমের বিধ্বস্ত, ভীতিকর অবস্থা নজরে পড়ল। মেঝেতে লুটিয়ে বসে আছেন তিনি। মুখে, ঠোঁটে রক্তের শুকনো দাগ। মাথায় বন্দুক তাঁক করে রেখেছে তারই দূরসম্পর্কের মামা। প্রিয়মা বেগমের চাচাতো ভাই ইব্রাহিম খলিল এবং তার ছেলে ইয়ামিন আয়ভি। তারা সুযোগ বুঝে বাড়িতে কয়েকজন গুন্ডা-মাস্তান নিয়ে এসেছে। যদিও দর্শিনী কারণটা জানেনা। মায়ের ভীতিকর অবস্থা দেখে সে আত্মচিৎকার করে এগিয়ে যায়। প্রিয়মা বেগম এইমুহূর্তে দর্শিনীকে দেখে আঁতকে উঠেছেন। এভাবে ভরা পেট নিয়ে দর্শিনীর এখানে আসা ঠিক হয়নি। মেয়েটাকে ওরা হয়তো আজকে মেরে ফেলবে। অতিরিক্ত টেনশনে প্রিয়মা বেগম যেনো মূর্ছা যাচ্ছেন। তিনি দর্শিনীকে এগিয়ে আসতে দেখে বলেন,
‘কেনো এসেছিস মা? নিষেধ করেছিলাম যে! এভাবে কাউকে না জানিয়ে বিপদের সম্মুখে স্বয়ং হাজির হওয়া উচিত হয়নি। তুই এখুনি পালিয়ে যা। এই মুহূর্তে আবিদের কাছে চলে যা।’
দর্শিনী কাঁদতে কাঁদতে বলে,
‘মা তোমার এই অবস্থা কেনো? কী হয়েছে সবটা বলো আমাকে!’
দর্শিনী হাউমাউ করে কেঁদে ইব্রাহিমের উদ্দেশ্যে বলে,
‘আপনারা আমার মার সঙ্গে এমন কেনো করছেন, মামা?’
ইব্রাহিম খলিল বিশ্রী ভাবে হেসে ওঠেন। একটু আগে যেই গান দিয়ে প্রিয়মা বেগমকে গান পয়েন্টে রেখেছিল। এবার সেটা দর্শিনীর দিকে তাঁক করেন। দর্শিনী ভয় পেয়ে যায়! চোখের সামনে বন্দুক দেখে সে ঘাবড়ে গেছে। প্রিয়মা বেগম দর্শিনীর জন্য আঁকুতি করেন।
ইয়ামিন এবং ইব্রাহিম খলিল দুজনেই সমান তালে হাসছে। দর্শিনীদের করুণ অবস্থায় তাদের পৈশাচিক আনন্দ হচ্ছে। তাদের হাসি দেখে ভেতরে ভেতরে দর্শিনীর শরীর জ্বলে উঠল। ইব্রাহিম খলিল হাসছে ঠিকই! কিন্তু ইয়ামিন বেশি খুশি হতে পারেনি। ইয়ামিনের শরীরে তো রাগ উপচে পড়ছে। দর্শিনীকে অন্যের বাচ্চা বহন করতে দেখে রাগ অতিশয় বাড়ছে কিন্তু কমছে না। সে প্রিয়দর্শিনীকে পছন্দ করতো। একসময় বিয়ে করতে চেয়েছিল। একবছর আগে বিয়ের প্রস্তাবও পাঠিয়েছিল। কিন্তু প্রিয়মা বেগম সেটা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি জানতেন উনার নিজের বংশ খুব একটা সুবিধার নয়। বংশগত উনার বাপ-দাদারা গুন্ডা, মাস্তান ছিলেন! তাছাড়া চাচাতো ভাই, তাদের ছেলেদের অনেক স্ক্যান্ড্রেল আছে। স্পষ্টত বললে মেয়েলী স্ক্যান্ড্রেল! তাই তিনি দর্শিনীকে সর্বদা তাদের নজর থেকে দূরে সরিয়ে রাখতেন। মেয়ের অনিন্দ্য সৌন্দর্য্য সর্বদা ঢেকে রাখতে চাইতেন। তিনি দর্শিনীকে দাদুবাড়ি কিংবা নানাবাড়ি যেতে দিতে চাইতেন না। আগে বাবা বেঁচে থাকতে তিনি ভয় পাননি। কিন্তু আহমেদ মুহতাসিমের অসুস্থতার পরে আবার নিজের বাবার মৃত্যুতে অনেকটা দমে যান প্রিয়মা বেগম। আজ উনার বাবা বেঁচে থাকলে ইব্রাহিম হয়তো সাহস পেতোনা। অবশেষে তিনি সিদ্ধান্ত নেন দর্শিনীর সুরক্ষার জন্য দ্রুত বিয়ে দিবেন। এতো সাবধানতার পর ইব্রাহিম খলিলের ছেলে ইয়ামিন বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে। নিঃসংকোচে দ্বিতীয়বার সেটা নাকচ করে দেন প্রিয়মা বেগম। অতঃপর ইব্রাহিম খলিলের ভেতরে চাপা ক্ষোভ তৈরি হয়। অবশ্য আগে থেকেই সম্পত্তি বিষায়ক ক্ষোভ ছিলো। সবশেষে আরোএকটি যোগ হলো! প্রিয়মা বেগম বাবার দুইমাত্র সন্তান ছিলেন। উনার সহোদর নিজের ভাই ছিল। কিন্তু চাচাদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে অনেক আগে মারা গেছে। পরবর্তীতে প্রমাণ ছাড়া দর্শিনীর নানু কিছু করতে পারেনি। তবে কৌশলে তাদের প্রাপ্যটুকু বাদে সমস্ত সম্পত্তি মালিক মেয়েকে লিখে উইল করেন। প্রিয়মা বেগম এসব কিছুই চাইতেন না। তাই বাবা বেঁচে থাকাকালীন সবটা দেখেছেন। কিন্তু দখল করেনি কখনো। তাদের প্রয়োজনই পড়েনি। চাচার মৃত্যুর পরে— অর্থ সম্পদের পরিমাণ খুবই সামান্য পেয়ে ইব্রাহিম ক্রুদ্ধ হয়। পরবর্তীতে তিনি সবকিছু মেনে নেন। নিজের স্বার্থে ছেলের জন্য স্বাভাবিক ভাবে দর্শিনীকে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বারবার প্রত্যাখান পেয়ে একটু বেশিই ক্রুদ্ধ ছিলেন। তিনি ছেলেকে ভরসা দেন দর্শিনীকে তুলে নিয়ে আসবেন তার জন্য। দরকার হলে জোর করে ইয়ামিনের সঙ্গে বিয়ে দিবেন। এতে মেয়ে জামাই হিসাবে ইয়ামিন সম্পত্তি, দর্শিনী দুটোরই মালিকানা পেয়ে যেতো।
অতঃপর তাদের প্ল্যানকে ধূলিসাৎ করতে অগোচরে আশরাফ সাহেব দর্শিনীর জন্য পাত্র দেখতে শুরু করেন। পরবর্তীতে দর্শিনীর জীবনে ঢাল স্বরূপ আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরীর আগমন ঘটে। দর্শিনীর বিয়ে হবার পরেও ইয়ামিন তাকে পেতে চাইতো। তাই জন্য সবসময় আবিদের খোঁজখবর রাখতো। লোক লাগিয়ে তাকে ফলো করতো। অগোচরে আক্রমণ করতো। সেদিনের সেই ছেলেগুলো ইব্রাহিমের কথাতে আবিদকে হামলা করেছিল। ইব্রাহিমের প্ল্যান অনুযায়ী তারা আবিদকে মেরে দর্শিনীকে উঠিয়ে আনতে চেয়েছিল। কিন্তু আবিদের জন্য পারেনি। ইব্রাহিম আবিদের উপর অনেকবার অ্যাটাক করিয়েছে। কিন্তু বিশেষ কোনো লাভ হয়নি। তারা আবিদের কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। প্রতিবারই ইব্রাহিম খলিল এবং তার ছেলে ইয়ামিন ব্যর্থ হয়েছে।
দর্শিনী অন্যে কারো বাচ্চার মা হবে। এজন্যই তাকে বিয়ে করার স্বপ্নটা ইয়ামিনের কোনদিন পূরণ হবে না। প্রচন্ড রাগে ইয়ামিনের এইমুহূর্তে দর্শিনীকে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করে। দর্শিনী যেহেতু তার নয়! অন্য কারো থাকলে সে মানতে পারবে না। নিজেদের প্ল্যানের কথা ইয়ামিন স্বহাস্যে বলে পৈশাচিক হাসতে থাকে। তাদের কথা শুনে দর্শিনী ভয় পেয়ে যায়। অগোচরে বুদ্ধি করে নিজের ফোনে সমস্ত কথোপকথন রেকর্ড করে নেয়। পরবর্তীতে কৌশলে আবিদকে ফোন করে কিন্তু আবিদ রিসিভ করেনা। দর্শিনী আবিদকে সবটা কীভাবে জানাবে বুঝতে পারেনা! তার প্রচন্ড টেনশন হচ্ছে। নিজের বিপদকে তোয়াক্কা না করে, বেবিকে কীভাবে বাঁচাবে সেই উপায় খুঁজে চলেছে দর্শিনী। সময় বিলম্ব না করে আবিদকে ম্যাসেজের মাধ্যমে রেকর্ডিং পাঠিয়ে দেয় দর্শিনী। আবিদ হয়তো গুরুত্বপূর্ণ কাজে আঁটকে গেছে। তাই ফোন রিসিভ করছেনা। এখানো পর্যন্ত টেক্সট সিন করেনি। দর্শিনী মনে মনে প্রার্থনা করছে— আবিদ যেনো দ্রুত স্ক্রিনের ম্যাসেজটা লক্ষ্য করে! ম্যাসেজটি দেখলে সে দ্রুত কিছু করতে পারবে। যেভাবেই হোক তাদেরকে বাঁচাতে ছুটে আসবে। তার নিজের অংশকে রক্ষা করবে।
#চলবে