#প্রিয়দর্শিনী🧡
#প্রজ্ঞা_জামান_তৃণ
#পর্ব__৪১
আদিবা খুব স্পষ্টভাষী প্রাণবন্ত মেয়ে। নিজের মনের কথা সগৌরবে জানানোর সৎসাহস রয়েছে তার। এজন্যই হয়তো আদিবা সবার কাছে স্নেহাশীষ। সবার সঙ্গে দ্রুত মিশে যাওয়াটা ইজি নয়। কিন্তু আদিবার ক্ষেত্রে ইজি। এটা একটা ভালো গুণ! আবিদের মতোই আদিবা যে কাউকে সুন্দরভাবে ডোমিনেন্ট করতে পারে। তার এইদিকটা ভালো লাগে নিহালের। নিহালের এখন আদিবার সঙ্গে কথা হয়। সে নিজে থেকে টেক্সট করেনা ঠিকই! তবে আদিবা তাকে নিয়মিত টেক্সট করে। তার মেয়েটার প্রাণোচ্ছল আচরণ ভালো লাগে। আদিবা এইতো গতপরশু নিহালকে বলে বসেছে, ভালোবাসি। সেইসময় নিহাল হতভম্ব হয়ে গেছিল। তবে এমন কিছু হবে আগে থেকেই আন্দাজ করেছিল। আদিবার তার প্রতি আগ্রহ, কৌতূহল, মুগ্ধতা দেখে ধারণার উৎপত্তি। এমন নয় যে, নিহালের আদিবাকে ভালো লাগেনা। অবশ্যই ভালো লাগে! অ্যাজ অ্যা পার্সন অনেক ভালো মেয়ে। কিন্তু বুকের মাঝে প্রথম ভালোলাগা প্রিয়দর্শিনী নামটা এখনো ঝাপসা হয়ে বিঁধে আছে। হয়তো সময়ের সঙ্গে সম্পূর্ণ অদৃশ্য হয়ে যাবে। নিহাল নিজে থেকে চায় লাইফে গ্রো-আপ করতে। সবার ভাগ্যে তো সবকিছু থাকেনা। প্রিয়দর্শিনী নাহয় তার স্মৃতিচারণে অপ্রাপ্তি নামক প্রথম ভালোলাগা হিসাবে থাকুক। তবে সত্যিকার ভালোবাসার মর্যাদা অন্যকেউ পাক। যে নিহালের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত হবে! সবকিছু ভুলে গিয়ে তার সামনে এগিয়ে যাওয়াই সমীচীন হবে। নিহালের মা রেহানা বেগমের ইচ্ছে; তার জীবদ্দশাতেই ছেলে বিয়ে করুক, সংসার করুক, সুখে-শান্তিতে থাকুক!
কখন তিনি সময় ফুরিয়ে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিবেন সেটার নিশ্চয়তা নেই। এজন্যই ছেলেটার বিয়ে দিয়ে যেতে পারলে রেহানা বেগম নিশ্চিন্ত হবেন। নিহাল অবশ্য মাকে আস্বস্ত করেছে! সে অবশ্যই বিয়ে করবে কিন্তু তার একটু সময় লাগবে; সে নিজেকে গুছিয়ে নিতে চায়। এতোদিন ধরে মাঝেমধ্যে আদিবার সঙ্গে কথা হয়েছে। সত্যি বলতে নিহাল আদিবার কথাবার্তা, সরলতায় আকৃষ্ট! অবশ্যই মেয়েটা ভালো লাগার মতো। আদিবা যখন তাকে ভালোবাসি বলেছিল ব্যাপারটাকে নিহাল সুন্দরভাবে এড়িয়ে গেছে। কারণস্বরূপ বলা যায়, নিহালের ভয় হয়! ভয় হয়, যদি কখনো আদিবা তার মনের ঘরে পৌঁছে যায়? তখন কী হবে? আপাতত, নিহাল এমনটা চায়না। যদি এমনটা কখনো হয়! তবে আদিবাকে গ্রহণ করতে হবে, আদিবার ভালোবাসার চেয়ে দ্বিগুণ ফিরিয়ে দিতে হবে তাকে। সে কী আদেও পারবে? তাদের বয়সেরও ডিফারেন্স আছে। উফফ, ভাবাই যাচ্ছে না। এতো জটিলতা কেনো সবকিছুতে? ল্যাপটপে কাজ করতে করতে এগুলো ভাবছিল নিহাল। আদিবার কথা তার অনিচ্ছাকৃতভাবে মনে পড়ে যাচ্ছে। আর যদি কখনো মনে না পড়ে; আদিবা নিজ দায়িত্বে ইচ্ছেকৃত মনে করিয়ে দেয়। অদ্ভুত মেয়ে!
.
আবিদের পর, দর্শিনী রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়। আবিদ তখন ব্যালকনিতে ছিল। ফ্রেশ হয়ে রুমে আবিদকে না পেয়ে ব্যালকনিতে চলে যায় দর্শিনী। মানুষটা কোথায় গেলো? রাগ করেছে নাকি বিকালের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য? পরবর্তীতে আবিদকে ব্যালকনির চেয়ারে বসে থাকতে দেখে। সে আবিদের পাশের চেয়ারে বসে সহসা জিগ্যেস করে,
‘আপনি কী রাগ করেছেন আমার উপর? আপনার রাগ করা সাজেনা আবিদ!’
আবিদ কিছু একটা নিয়ে চিন্তা করছিল। এইবার সে দর্শিনীর দিকে তাকিয়ে দেখল। অকস্মাৎ তার কোমড় আঁকড়ে কোলে বসিয়ে বলে,
‘রাগ কেনো করবো? সমস্যা তো ওটাই! সুদর্শিনী বউদের প্রতি রাগ হয়না বরং সবসময় প্রেম প্রেম পায়। আদর করতে মন চায়। ইচ্ছে করে সারাক্ষণ বুকের মাঝে আলতো করে জড়িয়ে রাখি! এতটা নেশালো কেনো তুমি? দিন দিন ভয়ংকর ভাবে অ্যাডিক্টেড হয়ে যাচ্ছি, বউ!’
দর্শিনী মনে হয় লজ্জা পেলো। তার ফর্সা গাল আরক্তিম হয়ে উঠেছে। আবিদ টুপ করে গালে চুমু খেয়ে বলে,
‘ইশশ! মেয়েদের লজ্জা পেলে কী মারাত্মক দেখায়।’
‘কিহহ! আর কোন মেয়েকে লজ্জা পেতে দেখেছেন আপনি? আমি যদি আপনার ভাস্যমতে সুদর্শিনী না হতাম, তবে রাগ করতেন তাইনা? এটাই তো বোঝাতে চাইলেন। আপনার যদি রাগ না হয়ে থাকে, তবে আসার পর থেকে কথা বলছিলেন না কেনো?’
আবিদ দর্শিনীর এতো কোয়েশ্চেন করা দেখে বলে,
‘ওয়েট বউ, হাইপার হচ্ছো কেনো? আর আমি কখন বললাম অন্য মেয়েদের লজ্জা পেতে দেখেছি? আমি তো শুধু আমার সুদর্শিনী বউকে দেখেছি! যার মন সুন্দর সে সবসময় সুন্দর। সেই হিসাবে তুমি সর্বদা সুদর্শিনী, কারণ তোমার মন স্বচ্ছ, সুন্দর, পবিত্র! অবশ্য বাহ্যিক দিক দিয়ে সুদর্শিনী নাহলেও ভালোবাসতাম। তখন আরো বেশি বাসতাম; রাগ করার তো প্রশ্নই আসেনা।’
আবিদের এইকথাটা যথেষ্ট ছিল দর্শিনীকে ইমোশনাল করে দেওয়ার জন্য। সে আবিদের গলা জড়িয়ে ধরে। আবিদ তার পিঠে হাত রাখে। দর্শিনীর শরীর শিরশির করে কেঁপে উঠে। আবিদ সব অনুভব করতে পেরে হাসে। হঠাৎ তার রোমান্টিক মুডটা মাথা চারা দিয়ে উঠে। বিকালে বাঁধা পেয়ে দমে গেছিলো ঠিকই কিন্তু এখনতো নিজ বাসায়, ব্যাক্তিগত রুমে অবস্থান করছে। এখানে কেউ নেই তাকে বাঁধা দেওয়ার। আবিদ দুষ্টুমি করে দর্শিনীর কাধে আলতো কামড় দেয়। দর্শিনীর আবিদকে জড়িয়ে থাকতে ভিষণ ভালো লাগছিল। সবাই ঠিকই বলে মেয়েরা স্বামীর বাহুডরে সবচেয়ে সুখী। তাদের শান্তিপূর্ণ, নির্ভয় আশ্রয়স্থান স্বামীর বুকে।
.
রাতের ডিনারে চৌধুরী পরিবারের সবাই একসঙ্গে উপস্থিত ছিল। আজকে সবাই আরহান পুস্পিতার জন্য অনেক খুশি। তাদের দুইবছরের সংসার আজ পূর্ণতা লাভ করছে অবশেষে। পুস্পিতা প্রেগন্যান্ট! ফাইভ উইক রানিং চলছে। কিছুদিন ধরে পুস্পিতা ধারণা করেছিল, তবে আজকে টেস্ট করে শিয়র হয়েছে। প্রেগন্যান্সির রেজাল্ট পজেটিভ এসেছে। সবাই দুজনকে শুভেচ্ছা জানালো। যেহেতু বাড়িতে একাধিক আনন্দের সংবাদ এসে আনন্দকে দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই আগামীকালকে চৌধুরী ভিলাতে পরিবারের সদস্যরা মিলে পিকনিক করার পরিকল্পনা করেছে। পরিবারের সবাই হাসিখুশি ছিল বিশেষ করে আদিবা। এমনকি শবনম চৌধুরী এই আনন্দের খবরটা শুনে নিজের কষ্ট, বিষণ্নতাকে কিছু সময়ের জন্য দূরে ঠেলে; সবার সঙ্গে আনন্দ বিনিময়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়লেন। অন্যদিকে দর্শিনী পরিবারের প্রত্যেকটি সদস্যকে অবজার্ব করে দেখছে। সবার ঠোঁটেই মিষ্টি-মধুর হাসি ছিল। সে সবার মাঝে আলাদা আলাদা এক্সপেক্টেশন দেখেছে। চৌধুরী ভিলার প্রথম সন্তান আসবে বলে কথা। এই দৃশ্যগুলো অনেক মনোমুগ্ধকর ছিল দর্শিনীর কাছে। মাত্র কয়েকটাদিনের ব্যবধানে দর্শিনী পরিবারটাকে এতটা আপন করে নিয়েছে! যে তার মনে হয়না এটা তার শ্বশুরবাড়ি। সবসময় নিজের বাড়ি মনে হয়, এই পরিবারের সবাই যেন তার রক্তসম্পর্কিত আপন মানুষ!
.
আনন্দদায়ক খবর শোনার পর আবিদকে খুব খুশি দেখাল। সে চাচ্চু হবে; ভাবতেই খুশি খুশি লাগছে। বারবার দর্শিনীকে ভাইয়ের অনাগত বেবির কথা বলছে। দর্শিনী বুঝলো আবিদের হয়তো বাচ্চা অনেক পছন্দের। সে আবিদকে খুশি হতে দেখে মৃদু হাসলো। আবিদ অকস্মাৎ তাকে জড়িয়ে কাঁধে মুখ গুঁজে বলে,
‘বউ, আমাদের প্রথম ম্যারেজ অ্যানিভার্সারীর পরে আমরা বেবি নিয়ে নিবো, ঠিকাছে! নিশ্চয়ই পিতা-মাতা হওয়া সবচেয়ে সুখের অনুভূতি।’
দর্শিনী চোখ বুঝে আবিদকে অনুভব করে বলে,
‘কেনো, আগে নয় কেনো?’
‘বয়সটা দেখেছো? অষ্টাদশী তুমি! তাছাড়া ভার্সিটি শুরু হবে নেক্সট মান্থ থেকে! আমি চায়না কোনকিছু তোমার পড়াশোনায় বাঁধা হয়ে দাঁড়াক।’
দর্শিনী নিজেও পড়াশোনা নিয়ে সিরিয়াস। হয়তো আবিদ বেবি পছন্দ করে ভেবেই বলেছে। সে আবিদের উদ্দেশ্যে বলে,
‘এক্সকিউজ মি ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব! এইতো এই মাসের বিশ তারিখে আমি উনিশ বছরে পর্দাপণ করবো। আপনি আমাকে পিচ্চি ভাবতে পারেন না, কিছুতেই না!’
‘আচ্ছা? বড় হয়ে গেছো না?’
‘অবশ্যই! আপনি তো বুড়ো হয়ে যাচ্ছেন। তেত্রিশ চলছে আপনার। আর আমাকে দেখুন, আমার ভাগ্যটাই খারাপ! আরো আগে কেনো পৃথিবীতে আসলাম না।’
‘এটিটিউড না! ওকে, বুড়ো হয়ে যাচ্ছি কিনা প্রমাণ হয়ে যাক?’
বলেই আবিদ লাইট অফ করে দর্শিনীকে কোলে তুলে নেয়। দর্শিনী ভয় পেয়ে আবিদের থেকে ছাড়া পেতে চায়। ফলে বারবার তাকে নামাতে বলে। আবিদ দর্শিনীকে বিছানায় শুয়ে তার উপর আলতো করে ভর দেয়। তার ঠোঁট দিয়ে দর্শিনীর ঠোঁট ছুঁয়ে দিতেই; দর্শিনী শান্ত হয়ে যায়। সে দর্শিনীর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,
‘বিকালে কারণ বশত আঁটকে গেছিলাম। এটা আমার বেডরুম! এখন তো তোমাকে প্রুফ দিতেই হবে। পানিশমেন্টের জন্য প্রস্তুত তো?’
দর্শিনী অনুভূতি,লজ্জা,ভয়, সংকোচে আবিদের শার্ট খামচে ধরে। আবিদ তার গলায় মুখ ডুবিয়ে শাড়ির আঁচল উন্মুক্ত করতে থাকে। কিছুক্ষণ পর দুজনেই ভেসে যায় সুখের রাজ্যে।
#চলবে
[ গল্পে অনেক সময় বানান ভুল হয়ে যায়, গ্রুপে গল্প পোস্ট করার পর; পরবর্তীতে ঠিক করার কোনো উপায় থাকে না। এজন্য সবাই ভুলত্রু’টি মানিয়ে নিবেন প্লীজ, আর রেসপন্স করবেন ]