#প্রিয়দর্শিনী🧡
#প্রজ্ঞা_জামান_তৃণ
#পর্ব_৩
‘আসফি রেগে তাকায় এতো সাহস গ্রেট আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরী ছাড়া কারো নেই সে খুব ভালো করে জানে।’
আবিদ নিজের রাগ দমন করে ধমকে উঠে,
‘আসফি লিমিটের মধ্যে থাক।’
‘ধমক দিবে না। তুমি জানো ও কি করেছে? ডিটেইল’স বদলে দিয়েছে। ওর জন্য সব হয়েছে ওকে তো আমার মা’রতে ইচ্ছে করছে।’
‘ভালো কাজ করেছে ডিটেল’স বদলে।বড় ভাই বিয়ে করতে পারলো না ছোট ভাইয়ের এতো তাড়া কিসের?’
এমন ভাবলেশহীন কথায় আসফি রেগে যায় এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নেয় আবিদের থেকে। শরিফুল করিম যেন প্রাণ ফিরে পেলো। আবিদ শরিফুলের কাছে ভাইয়ের হয়ে ক্ষমা চেয়ে হাতে টাকার একটা খাম তুলে দেয়। আবিদ বরাবরের মতো গম্ভীর কন্ঠে সবার উদ্দেশ্যে বলে,
‘ঘটক রাজ শরিফুলের দোষ নেই বাবা। ওকে তোমাদের নামে মিথ্যা বলা হয়েছে। কে বলেছে কেনো বলেছে জানা যায়নি। তবে আমার জন্য সুবিধা হয়েছে। আশরাফ মুহতাসিমকে বলো আমি প্রিয়দর্শিনীকে বিয়ে করতে রাজি। ম্যাজিস্ট্রেট আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরী দরকার হলে নিজে প্রিয়দর্শিনীর জন্য সমন্ধ নিয়ে যাবে। আমি শুধু ওদের সিদ্ধান্ত হ্যা চাই।’
আবিদ আসফির দিকে ভাবলেশহীন তাকিয়ে কথাটা বলল।আসফি বিরক্তিতে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলো। শাহরিয়ার চৌধুরী ঘটক রাজ শরিফুল করিমকে আসতে বলেন। শরিফুল চলে গেলে বড় ভাই আরহান আসফিকে মাথা গরম করতে নিষেধ করে। আসফি নিজেও বুঝে গেছে সে যতই প্রিয়দর্শিনীকে পাওয়ার চেষ্টা করুক না কেনো আবিদ পরিবারকে মানিয়ে ঠিকই নিজের জি’দ বহাল রাখবে। তাকে অন্য ভাবে ট্রাই করতে হবে। দরকার হলে সোজাসুজি প্রিয়দর্শিনীর সঙ্গে কথা বলে জানাবে তার ভাই প্রিয়দর্শিনীর যোগ্য নয়। ভিষণ খা’রাপ,অহংকারী, নি’ষ্ঠু’র একজন মানুষ। আবিদের এক দেহ দুই সত্তা। সে যেমনটা দেখায় তেমনটা নয়। প্রিয়দর্শিনী নিশ্চয় তাকে বুঝবে।
আবিদ বরাবরের মতো শান্ত স্বাভাবিক গম্ভীর কন্ঠে বলল,
‘বাবা, তাহলে আশরাফ মুহতাসিমকে জানিয়ে দেও।
শাহরিয়ার চৌধুরী আসফির দিকে চিন্তিত হয়ে তাকালেন। উনার একটাই ভয় ছোট ছেলে ঝামেলা না করলেই হলো। অনুসা বেগম শাহরিয়ার চৌধুরীকে আবিদের ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতে বলছিলেন। শাহরিয়ার চৌধুরী খুশি আবিদের জন্য। কিন্তু আসফিকে নিয়ে দু’শ্চিন্তা হচ্ছে। আসফি নিরব নিশ্চুপ। যেন ঝড় আসার পূর্বা’ভাস। আসফি নিজেকে ধাতস্থ করে মনে মনে ঠিক করল তার কি করা উচিত। সে ভাইয়ের সঙ্গে লড়াইয়ে ক্ষমতায় টিকবে না!এই বিয়েটা তাকে অন্য উপায়ে আটকাতে হবে। শাহরিয়ার সাহেব বলে উঠল,
‘আসফি তোমাকে বাবা হিসাবে উপদেশ দেই একটু শোনো। তুমি ডেস্টিনিতে বিশ্বাস করো? ভাগ্য বলে কিছু আছে। যা হচ্ছে বা ভবিষ্যতে হবে সবকিছু আমার ভাগ্যে লেখা আছে। তাই তোমাকে ভাগ্য মানতে হবে। হুটহাট রাগ করলে চলবে না। উনারা যেহেতু আবিদকে পাত্র হিসাবে জেনেছে। তুমি তো জানো সবাই রাজিই ছিলো মাঝখানে পাত্র নিয়ে ঝামেলা হয়ে গেলো। যাইহোক এখানে আমাদের কারো হাত নেই। তুমি আর ঝামেলা করোনা প্রিয়দর্শিনী তোমার ভাগ্যে নেই এইটা মেনে নেও। আমি বিশ্বাস করি বাবা হিসাবে তুমি আমার কথা রাখবে! কি রাখবে না?’
শাহরিয়ার সাহেব অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে জিগ্যেস করলেন। আরহান আর শাহরিয়ার চৌধুরী দুজনেই জবাব শোনার জন্য বসে রইল। আবিদ ভাবলেশহীন সোফায় বসেছিল। হুট করে উঠে গিয়ে ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি বের করে ঢকঢক করে খেলো। আসফি ভাইকে পরোক্ষ করে দেখলো। আবিদের নির্বাক আচরণ। যেনো কোন আগ্রহই নেই এসব কথায়। এমন মনে হচ্ছে আসফির উত্তর কি হবে সে ভালো করে জানে। আবিদ পানির বোটলটা ট্রি – টেবিলে রেখে আসফির দিকে তাকাল। গালে হাত দিয়ে মেকি আগ্রহ দেখাল। আসফি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। সে বাবার উদ্দেশ্যে বলে উঠল,
‘যা ইচ্ছা করো।’
যাস্ট এতটুকু কথায় সবার মুখে হাসি ফুটে উঠল। কিন্তু আবিদ নির্বাক রইল। আবিদ ভেবেছিল আসফি রাজি হবেনা ওর উত্তর না হবে। এতে আসফিকে রাজি করানোর উপায় সেট করায় ছিল কিন্তু উত্তর হ্যা শুনে ঝটকা খেলো। মনে মনে এপ্রিশিয়েট করে বলল,’বাহ্ ভাই বাহ্ এতো দ্রুত রাজি হয়ে গেলি। আমার সুবিধা হলো অযথা পরিশ্রম করতে হবেনা।’
আসফি কথাটুকু বলেই নিজের ঘরে চলে গেলো। রান্নাঘর থেকে অনুসা বেগম আর পুস্পিতা দুজনেই শুনে নিশ্চিন্ত হলো। অনুসা বেগম খুশি হলেন ছোট ছেলে তার কথা একেবারে ফেলে দেয়নি। মনে মনে আসফির প্রতি সন্তুষ্ট হলেন। এদিকে আসফি নিজের রুমে এসে বিছানা উলোটপালোট করতে শুরু করে। রাগে তার ইচ্ছে করছে সবকিছু ভা’ঙচুর করতে কিন্তু সে নিরুপায়। আবিদকে সে ক্ষ’মতা, বুদ্ধি দিয়ে আটকাতে পারবেনা উল্টো সবার কাছে খারাপ হয়ে যাবে। আসফি এই বিয়ে কিছুতেই হতে দিবেনা। সে প্রিয়দর্শিনীকে আবিদের সঙ্গে দেখতে পারবে না। হয়তো সামনে থেকে আটকাতে পারবেনা কিন্তু পেছন থেকে সে আপ্রাণ চেষ্টা করবে। অগোচরে কলকাঠি নাড়ার মজাই আলাদা এতে সাপ ম’রে না লাঠিও ভা’ঙবেনা। আসফি ঠিক করে প্রিয়দর্শিনী এবং আশরাফ মুহতাসিমের সঙ্গে দ্রুত দেখা করে আবিদের সম্পর্কে সব উল্টাপাল্টা বলে দিবে। এতেও যদি কাজ নাহয় অন্য পথ আছে। তবুও প্রিয়দর্শিনীকে লাগবে তার। আসফি ভাবলো সে ভাইয়ের চেয়ে ফর্সা,সুদর্শন শুধু প্রিয়দর্শিনীকে ফাঁদে ফেলতে পারলে সব সম্ভব। আবিদের ক্ষমতাকে ভয় পেতে হবে না তার।
জীবনের প্রথম আসফি আবিদকে কোন কিছুর প্রতি এতটা সিরিয়াস দেখলো। প্রিয়দর্শিনীর প্রতি আবিদের উ’ই’কনেস ভালোমতো লক্ষ্য করেছে। এটাকে ভালোবাসা বলে কিনা জানা নেই আসফির তবে আবিদকে ভে’ঙ্গে’চু’রে ফেলার জন্য এই সুযোগ সে হাতছাড়া করবে না। প্রিয়দর্শিনী যদি আসফির হয়ে যায় আবিদ সহ্য করতে পারবেনা ক’ষ্ট পাবে। আসফিকে ছোটবেলা থেকে অবহেলা, হেয় করার ফল সারাজীবন ভোগ করতে হবে আবিদকে করতেই হবে নাহলে সে শান্তি পাবেনা।
–
রাতে ৮: ০০বাজছে। আশরাফ মুহতাসিম সবার সঙ্গে আলোচনায় বসেছে। ষার্টাধ্ব আহমেদ মুহতাসিম যোগ দিয়েছেন। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু চৌধুরী পরিবার। শাহরিয়ার চৌধুরী নিজে ফোন দিয়ে ঘটকের সবটা জানিয়েছেন এমনকি আবিদের প্রিয়দর্শিনীকে খুব পছন্দ হয়েছে সেটাও। আশরাফ মুহতাসিম ঘটক রাজ শরিফুলের জন্য একটু বিভ্রান্তি হয়েছে এটা আগেই বুঝেছিল। কিন্তু আবিদ প্রিয়দর্শিনীকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে শুনে আশরাফ মুহতাসিম খুশি হয়েছেন। তার আদরের মেয়ে প্রিয়দর্শিনী রূপে গুনে নিপুণ যে কেউ পছন্দ করবে। না করে থাকতেই পারবেনা। আশরাফ শাহরিয়ারের গর্ব হয় প্রিয়দর্শিনীকে নিয়ে। সব দিকে পারদর্শী,আদর্শ মেয়ে প্রিয়দর্শিনী।
আশরাফ মুহতাসিমের মতে চৌধুরী পরিবারের সব ছেলে যথেষ্ট ভদ্র। সবার আচার-আচরণ অমায়িক। যেহেতু তারা ছোট ছেলের জন্য এসেছিল,একটু ভুলে বি’ভ্রা’ন্তি অপ্রাসঙ্গিক সমস্যায় পরতে হয়েছে। কিন্তু পাত্র হিসাবে আসফি খা’রা’প ছিলনা। অন্যদিকে আবিদকে আশরাফ সাহেব যতটুকু চিনেন ভিষণ ভালো। মেয়ে জামাই হিসাবে লাখে এক! এমন পাত্র হাত ছাড়া করার মানেই হয়না। বয়সটা ফ্যা’ক্ট নয়, গমরঙা চেহারায় ভিষণ মায়া,সৌন্দর্য তো সেখানেই ফুটে উঠে। লম্বা, চওড়া, সুদর্শন, সরকারি চাকুরীজীবি। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন পাত্র হিসাবে আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরীর চেয়ে ভালো কেউ হবে না। তাই বিয়েতে তিনি রাজি। উজান শ্বশুরের সঙ্গে একমত। প্রিয়মা বেগম তো স্বামীর সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করেছে আবিদ শাহরিয়ার প্রিয়দর্শিনীর জন্য একদম উপযুক্ত। অন্যদিকে ষার্টাধ্ব আহমেদ মুহতাসিম নিরব। একবার দেখাতে তিনি মানুষের ব্যাক্তিত্ব যাচাই করার মতো মানুষ নন। তিনি অত্যন্ত গম্ভীর মুখে বললেন,
‘ছেলে খা’রা’প না কিন্তু সে আমার নাতনির জন্য কতোটা যোগ্য সামনে থেকে যাচাই করতে চাই। এটা একান্তই আমার পরীক্ষা। এর আগে এঙ্গেজমেন্ট করার পারমিশন আমি দেবনা।’
কাটকাট করে কথাটি বলে ঘরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ান বয়স্ক আহমেদ মুহতাসিম। বাবার কথা শুনে আশরাফ সাহেব চিন্তিত হলেন তিনি ভাবলেন আবিদ শাহরিয়ারের সঙ্গে কথা বলে দেখবেন। আবিদের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলাতে পারলে আহমেদ মুহতাসিম বুঝবে ছেলে হিসাবে আবিদ শাহরিয়ার কতোটা যোগ্য ন্যায়নি’ষ্ঠবান। এদিকে দুর থেকে প্রজ্জ্বলিনী এসব শুনে ফুঁসে উঠে। তার বাবা তাকে ছাড়াই আবিদ শাহরিয়ারের সঙ্গে বিয়ের পরিকল্পনা করে ফেলেছেন। সে চায়না আবিদ আর প্রিয়দর্শিনীর বিয়ে হোক। সে মতামত দিতেই পারলো না। আবিদকে তার মোটেও স’হ্য হয়না অবশ্য কারণ আছে। সে গটগট পায়ে সিড়ি বেয়ে প্রিয়দর্শিনীর রুমে যায়। প্রিয়দর্শিনী বিছানায় বসে ইংরেজি উপন্যাস পড়ছিল। প্রজ্জ্বলিনী বোনের কাছে গিয়ে বলে,
‘কি করছিস? বিরক্ত করলাম?’
প্রিয়দর্শিনী বইটা বন্ধ করে মিষ্টি হেসে বলে,
‘কি যে বলো! তুমি আমাকে বিরক্ত করতেই পারোনা। কি হয়েছে কিছু বলবে।’
হঠাৎ প্রজ্জ্বলিনী সিরিয়াস হয়ে উঠে। বোনের পাশে বসে বলে,
‘বাবা তোর বিয়ে ঠিক করে ফেলছে।’
প্রিয়দর্শিনী আতকে উঠে। হঠাৎ চোখে মুখে ভয়ের ছাপ। হৃদপিণ্ডটা সজোরে আ’ঘা’ত করছে। কন্ঠরোধ হয়ে আসছে কান্না পাচ্ছে ভিষণ প্রিয়দর্শিনী নিজেকে সামলাতে চেষ্টা করে,
‘কি বলছো বিয়ে ঠিক করছে মানে? আসফি শাহরিয়ারকে আমি বিয়ে করতে পারবোনা একদমই না।’
‘আসফি শাহরিয়ার নয় আবিদ শাহরিয়ারের সঙ্গে।’
প্রিয়দর্শিনী বি’স্ম’য় নিয়ে তাকিয়ে রইল। বোনের বি’স্মি’ত অবস্থা দেখে প্রজ্জ্বলিনী ক্রু’দ্ধ হয়ে বলে,
‘আবিদ শাহরিয়ার তোকে পছন্দ করেছে। শাহরিয়ার চৌধুরী নিজে ফোন দিয়ে বাবাকে বলেছে। উনারা কথাবার্তা পাকাপোক্ত করতে আসতে চাইছে।’
প্রিয়দর্শিনী হতভম্ব হয়ে গেলো। সে তো এটাই চাইছিল আবিদ তাকে পছন্দ করুক। সে তো আবিদের অযোগ্য নয় বরং যোগ্য কেউ। আবিদ শাহরিয়ার নিশ্চয় তাকে পছন্দ করেছে নাহলে বিয়ের কথা জানাতো না? কিন্তু আগে কেনো বলল না উনি? এতো গুড বয় সাজার ইচ্ছে?যে বাসায় গিয়ে বলেছে এখানে বলতে পারেনি? প্রিয়দর্শিনীর অভিমান হলো। প্রিয়দর্শিনী স্র’ষ্টার কাছে কতো করে চাইছিল এখন তার চাওয়া পূর্ণ হতে যাচ্ছে। তার চোখে একফোটা আনন্দ অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। প্রজ্জ্বলিনী বোনের চোখে পানি দেখে ধরেই নিলো সে এই বিয়েতে রাজি নয়। সে খুশিতে গদগদ হলো! এখানে একটা প্লাস পয়েন্ট আছে। আশরাফ শাহরিয়ার এটা জানলে নিশ্চিত বিয়েটা ক্যান্সেল করে দিবে। যাকে প্রিয়দর্শিনীর পছন্দ না সেখানে জোর করে নিশ্চয় বিয়ে দেবেন না। প্রিয়দর্শিনী সকলের আদরের তার চাওয়ার মূল্য রয়েছে সবার কাছে। আশরাফ সাহেব যদি ক্যান্সেল না করে। তাদের দাদু আহমেদ মুহতাসিম কিছুতেই বিয়ে হতে দিবেনা এতটাই ভালোবাসেন প্রিয়দর্শিনীকে। বোনকে জরিয়ে প্রজ্জ্বলিনী বলে উঠল,
‘এই বিয়েতে তুই রাজি হবিনা প্রিয়। আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরী তোর জন্য যোগ্য নয়। তুই চল আমার সঙ্গে বাবাকে বলে দিবি তুই এই বিয়েতে রাজি না।’
প্রিয়দর্শিনী থমকে তাকায় বোনের দিকে। কি বলছে প্রজ্জ্বলিনী এসব? সে আবিদকে ভালোবাসে। কাল ওরা চলে যাওয়ার পর থেকে পুরোটা সময় আল্লাহ্কে ডেকেছে। কোন একটা চমৎকার হওয়ার অপেক্ষা করেছে। আজ যখন তার দোয়া কবুল হলো সে কিভাবে মানা করে দিবে। আবিদের উপর একটু অভিমান আছে। কিন্তু তার এতো সাহস নেই আবিদ শাহরিয়ারকে ‘না’ করবে। ভিষণ ভালোবাসে আবিদকে। এতোদিনের অনুভূতি মিথ্যা হবার নয়। প্রথম দেখায় ‘ভালোবাসা’ ‘ভালোলাগা’ বলে একটা কথা আছে। প্রিয়দর্শিনীর বোধ আছে কোনটা ভালোবাসা আর ভালোলাগা। কিন্তু সে দেখতে চায় আবিদ তাকে কতোটা পছন্দ করে। আবিদের হুট করে বিয়ে করতে চাওয়ায় পবিত্রতা আছে নাকি শুধুই মুগ্ধতা? প্রিয়দর্শিনীকে দেখে আবিদের কি একই অনূভুতি হয়েছিল নাকি হয়নি? আবিদ শাহরিয়ারকে ছোট্ট করে পরীক্ষা করবে প্রিয়দর্শিনী। ছোট ভাইয়ের জন্য পাত্রি দেখতে এসে নিজে বিয়ের প্রস্তাব পাঠানো এটা নিশ্চয় কয়েন্সিডেন্স নয়। এমন তো নয় সে প্রিয়দর্শিনীকে প্রথম দেখল। আবিদের চোখ তাকে কিছু না বলেও অনেক কিছু বলেছে। প্রিয়দর্শিনী প্রথমে বিয়েতে ‘না’ বলবে। সোজা বাংলা ভাষায় আবিদকে প্রত্যাখান করবে তারপর আবিদের রিয়েকশন দেখবে। সেই দৃ’ষ্টি যা প্রিয়দর্শিনী আজও ভুলতে পারেনি সেটা কি শুধু মুগ্ধতা নাকি কোন অজানা অনুভূতি?
প্রিয়দর্শিনী চোখের পানি মুছে ফেলে। বোনকে বলে,
‘চলো।’
–
আশরাফ সাহেব আর প্রিয়মা বেগম নিজেদের রুমের বিছানায় বসে আছেন। তারা দুজনেই প্রিয়দর্শিনীর দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। শান্তশিষ্ঠ আদুরে মেয়ে তাদের। মুখের উপর কথা বলার মতো মেয়ে প্রিয়দর্শিনী নয়, সেখানে বাবার সিদ্ধান্তকে সরাসরি নাকচ করে দেওয়ার মতো দুঃসাহস দেখে একটু অবাক হলেন দুজনেই।প্রজ্জ্বলিনী বোনকে পুরো সাপোর্ট করছে যাতে আবিদের সঙ্গে বিয়েটা না হয়। অজানা ক্ষো’ভে প্রজ্জ্বলিনী আবিদের উপস্থিতি ও স’হ্য করেনি সেদিন। আশরাফ সাহেব দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। মেয়ের অপছন্দ মানে তিনি মেয়েকে জোর করবেনা কিন্তু আবিদের মতো এতো যোগ্য ছেলেকে নাকচ করার কারণ জানতে ইচ্ছে হলো আশরাফ সাহেবের,
‘কোন কারণ আছে বিয়েটা করতে না চাওয়ার?’
প্রিয়দর্শিনী বাবাকে চেনে। বাবাকে এমন শান্তভাবে দেখে অসস্থি বোধ করে। এই প্রথম বাবার উপর কথা বলল। নিজেকে নিজের কাছে অপরাধী মনে হচ্ছে প্রিয়দর্শিনীর। মনে মনে ভিষণ অনুতপ্ত। প্রিয়দর্শিনীর ভিতরের সত্তা বলে,
‘মাফ করো বাবা। জীবনে প্রথম তোমার অমত করলাম কিন্তু আমার কিছু বিষয় জানা জুরুরি। তোমার আদুরে মেয়ের কান্নার দাম দিতে হবে আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরীকে। আমার অভিমান দূর করে হৃদয়ের পবিত্রতা দিয়ে রাজি করাতে হবে। তবেই হ্যা বলবো এর আগে নয়। আমি ভালোবাসি তাকে। আমার অনুভূতি গুলো পবিত্র। কিন্তু আমি আত্মসম্মানহীন নই তাকেও বুঝতে হবে বাবা।’
প্রিয়দর্শিনীর চোখ টলমলে ঝাপসা দৃষ্টিতে বলে,
‘আমি জানিনা বাবা আমার সময় প্রয়োজন। হুট করে বিয়ে করাটা আমার পছন্দ নয় তাকে আমি কতটুকু চিনি? আমি পড়াশোনা করতে চাই এত দ্রুত বিয়ে করতে চাইনা।’
প্রিয়মা বেগম মেয়েকে কাদঁতে দেখে উঠে গিয়ে বুকে জরিয়ে নেন। মায়ের সানিধ্য পেয়ে বিড়াল ছানার মতো লেপ্টে যায় প্রিয়দর্শিনী। আশরাফ সাহেব মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। ঘড়িতে সময় দেখলেন রাত ৯:০০টা বাজছে। বিছানার পাশে থাকা ল্যান্ডলাইন নাম্বার থেকে শাহরিয়ার চৌধুরীর বাড়িতে ফোন দেন।
–
চৌধুরী পরিবারের সবাই খেতে বসেছে। আরহান আর আসফি একে অপরের সঙ্গে অফিস নিয়ে টুকটাক কথা বলছে। শাহরিয়ার চৌধুরী মাঝে মাঝে যোগ দিচ্ছে। আবিদ একদম নিশ্চুপ হয়ে আসফিকে পর্যবেক্ষণ করছে। আসফি প্রিয়দর্শিনীর উপর ক্রা’শড অথচ কত সহজে রাজি হয়ে গেলো এটাই ভাবাচ্ছে। আবিদের চেহারা দেখে ভিতরে কি চলছে আন্দাজ করার বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে। আসফি যে চুপচাপ মেনে নেওয়ার ছেলে না আবিদ ভালো মতো জানে।আসফি যাই করুক না কেনো প্রিয়দর্শিনীকে মিসেস আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরী হওয়া থেকে আটকাতে পারবে না।সে হতেই দিবে না এমনটা। আবিদের ঠোঁটের কোনে সু’ক্ষ্ম হাসি দেখা গেলো। আবিদ মুরগির লেগপিসটা মুখে দিতেই বাড়ির ল্যান্ডলাইন নাম্বারে কল আসে। অনুসা বেগম উঠে গিয়ে টেলিফোনটা ধরেন। প্রচন্ড অবাক হয়ে শাহরিয়ার চৌধুরীকে বলেন,
‘আশরাফ মুহতাসিমের ফোন। তোমাকে চাইছে।’
ডাইনিং টেবিলে বসা প্রত্যেক সদস্য অবাক হলো। শাহরিয়ার চৌধুরী ছেলের দিকে তাকিয়ে ফোনটা ধরতে গেলেন। আবিদ এখনো উৎসুক চাহনী দিচ্ছে। শাহরিয়ার সাহেব মিনিট পাচেক কথা বলে থমথমে মুখে টেবিলে এসে বসলেন। পুস্পিতা,অনুসা বেগম খাবার সার্ভ করছিলো শাহরিয়ার সাহেব ওদেরকে বসতে বললেন। সবাই উৎসুক হয়ে আছে জানতে আশরাফ মুহতাসিম কি বলল এতক্ষণ। শাহরিয়ার সাহেব বলে উঠে,
‘প্রিয়দর্শিনী বিয়েতে নাকচ করে দিয়েছে।’
#চলবে