প্রিয়তোষ পর্ব-১২

0
65

#প্রিয়তোষ
পর্ব ১২
লিখা Sidratul Muntaz

” নোরা জানো, মা আমার বিয়ের কথা ভাবছে।”

হঠাৎ অনিকের এই মেসেজ দেখে নোরা ভড়কে গেল। পড়তে বসেছিল কিছু সময়ের জন্য। আগামীকাল কেমিস্ট্রি পরীক্ষা। তবে আপাতত বই রেখে লাফিয়ে ফোন হাতে নিল।নোরা অবাক হয়ে লিখল,” আপনার বিয়ে মানে? এতো জলদি?”

” জলদি কোথায়? বয়স তো কম হয়নি। ছাব্বিশবছর বিয়ের জন্য যথেষ্ট।”

” ওহ।” নোরা ভাবছে কি বলবে। তার বিয়ের পরিকল্পনা তো এখনও বহুদূরে। আগে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হবে। গ্র্যাজুয়েশন করবে, তারপর।

অনিক আবার লিখল,” কি করি বলোতো? তোমার ফ্যামিলি তো তোমাকে এতো দ্রুত বিয়েও দেবে না, তাইনা?”

” হুম.. কমপক্ষে পাঁচবছর অপেক্ষা করতে হবে।”

” এতোদিন অপেক্ষা কিভাবে সম্ভব? মা তো এখনি উঠে-পরে লেগেছে। পাঁচবছরের কথা শুনলে হার্টফেইল করবে নিশ্চয়ই।”

” আন্টির কি পছন্দের কোনো মেয়ে আছে?”

” আছে। কিন্তু মায়ের যাকে পছন্দ আমার তাকে খুবই অপছন্দ। জীবনেও ওই মেয়েকে বিয়ে করবো না আমি।”

” তাহলে ওই মেয়েটা ছাড়া অন্যমেয়েকে করবেন?”

” অন্যকাউকে বিয়ে করার হলে অনেক আগেই করে ফেলতাম। তোমার জন্য চারবছর অপেক্ষা করতাম না। বুঝেছো মিষ্টিপরী?”

নোরা মৃদু হেসে লিখল,” হুম বুঝলাম। আচ্ছা ওই মেয়েটির নাম কি তিথি?”

” তুমি এটাও আমার ডায়েরী থেকে পড়ে ফেলেছো?”

” হ্যাঁ। আসলে লেখাগুলো সামনে এসে গিয়েছিল তাই..সরি।”

” সরি’র কিছু নেই। আমার সবকিছুই তোমার জানা দরকার। মেয়েটি ছয়বছর ধরে আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে থাকে। ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী। মায়ের মাথাটা আগেই খেয়েছে এখন আমাদের সবার মাথা খাওয়ার জন্য হাত ধুঁয়ে পেছনে পড়ে আছে। অসহ্য! ”

” আচ্ছা আমি কি তিথির একটা ছবি দেখতে পারি?”

” তুমি ওর ছবি দেখে কি করবে?”

” কিছু করবো না, শুধু দেখবো।”

” আমার কাছে তো ওর কোনো ছবি নেই।”

” ফেসবুক থেকে সেইভ করে দেন।”

” সেটাও সম্ভব না। ও আমার ব্লকলিস্টে। আচ্ছা নোরা এখন রাখছি। পরে কথা হবে।”

অনিক অফলাইন হয়ে গেল। নোরার আর পড়ায় মন বসছে না। কেমন যেন অস্থির লাগছে। দুশ্চিন্তায় রাতে ঘুমও আসছিল না। অনিক ফোন ধরেনি সারারাত। খুব ব্যস্ত মনে হয়। ভোরে নোরার ঘুম আপনা-আপনি ভেঙে গেল। তখন আবার অনিকের নাম্বারে ডায়াল করল। কিন্তু নাম্বার বন্ধ দেখাচ্ছে। সকালে নোরা একটা দুঃসংবাদ পেল। গতরাতে গ্রুপ ট্যুরে সিলেট যাওয়ার পথে অনিক এক্সিডেন্ট করেছে!

কলিংবেল বাজছে। অন্তরা ব্রেকফাস্ট করছিল। তার মা আর বাবা দু’জনেই অফিসের জন্য খুব সকালে বের হয়ে যান। সারাদিন অন্তরা একা বাসাতেই থাকে। আধখাওয়া ব্রেডটা রেখে দরজা খুলতেই নোরার কান্নারত অবস্থা দেখে অন্তরা হকচকিয়ে গেল।

হিঁচকি তুলে কাঁদছে মেয়েটা। এলোমেলো চুল। নাকের ডগায় জমে আছে ঘাম। বিধ্বস্ত অবস্থা একেবারে! অন্তরা আলতো করে ধরল তার কাঁধ। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,” কি হয়েছে দোস্ত? তোর এই অবস্থা কেন?”

” অনিক স্যার এক্সিডেন্ট করেছে… কথাটা বলতে বলতে নোরা প্রায় লুটিয়ে পড়তে নিচ্ছিল। তাকে শক্তহাতে সামলে নিল অন্তরা। কোনমতে ধরে এনে সোফায় বসালো।

” শান্ত হ। আমি আলভীর কাছে শুনেছি সব। তোকে জানাতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু গাঁধাটা বলেই দিল।”

” আমি এক্ষুণি ওর কাছে যাব। এক্ষুণি যাব।” অপ্রকৃতস্থের মতো কথা বলছে নোরা। অন্তরা ওর এই অবস্থা দেখে ঘাবড়ে গেল।

” আরে, সিরিয়াস কিছু হয়নি পাগল। খুবই মাইনর ইনজ্যুরি হয়েছে। অনিক স্যার জানালার কাছে ছিল বলে মাথায় চোট লেগে অজ্ঞান হয়েছে। এর বেশি কিছু না।”

” তোর কাছে এটা বেশি কিছু মনে হচ্ছে না? কি ফালতু কথা বলছিস!”

রাগে সেন্টার টেবিলের টিস্যুবক্স আর ফুলের টব আছড়ে ফেলে দিল সে। সিরামিকের টবটা কার্পেটের উপর পিছলে পড়ার কারণে ভেঙে গেল না। অন্তরা ভীত কণ্ঠে বলল,” মাথা ঠান্ডা কর নোরা। সত্যি অনিকস্যারের কিছু হয়নি।”

” তাহলে ও আমার ফোন ধরছে না কেন? আমি ওর সাথে কথা বলতে চাই। রাইট নাউ!”

” আচ্ছা, আচ্ছা, আমি আলভীকে ফোন করছি।”

” আমি সিরিয়াস অন্তু। আমি সিলেট যাবো।”

” মানে? পাগল হয়েছিস?”

” তুই আমার সাথে যেতে চাইলে আয়। নয়তো আমি একা একাই চলে যাবো।”

” চুপ কর, থাপ্পড় খাবি একটা। তুই কিভাবে যাবি?”

নোরা সেই প্রশ্নের জবাব দিল না। শুধু বলতে লাগল,” আমি অবশ্যই যাবো।”

দুপুরে অনিকের সাথে নোরার কথা বলার ব্যবস্থা করা গেল। অনিক নিজের অবস্থা নোরাকে বুঝতেই দিল না। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে মাথা ব্যান্ডেজ আর হাতে গুরুতর ইনজুরি নিয়ে সে খুব হৃষ্টচিত্তে জানাল, ” আমি একদম ঠিকাছি নোরা। কিছুই হয়নি আমার। শুধু সামান্য একটু ইনজ্যুরড হয়েছি। হসপিটালে তো জাস্ট ফার্স্ট এইড ট্রিটমেন্টের জন্য এসেছিলাম। এখন আমি রিসোর্টে আছি।”

নোরার তখন কান্নাই থামছে না। সে ভালো করেই জানে অনিক হসপিটালে। একটু আগেই আলভীর সাথে অন্তরা কথা বলেছে। নোরা তাদের কথোপকথন শুনেছে মন দিয়ে৷ তাই অনিক নিখুঁত অভিনয় দিয়েও তাকে ভোলাতে পারল না। সে বলল,” আমি এখুনি আপনাকে দেখতে চাই। এই মুহূর্তে। ”

অনিক বিপাকে পড়ে গেল। হাসপাতালে বসে সে ভিডিওকলের কথা বলতে পারবে না। তাই বাহানা বানাল,” আচ্ছা আমি তো এখন বের হচ্ছিলাম। বাসায় এসে তোমাকে ভিডিওকল দিবো।”

” আর একটাও মিথ্যা বলবেন না। আমি ভালো করেই জানি আপনি কোথায়। আর শুনুন, আমি এখনি সিলেট আসছি।”

” পাগল নাকি তুমি? খবরদার এসব পাগলামি করবে না।”

নোরা অবিরাম কাঁদছে। অনিক নরম গলায় বলল,” তেমন কিছুই হয়নি বিশ্বাস করো। শুধু পেছন থেকে একটা ছোট গাড়ির সাথে ধাক্কা লেগেছিল। আলভী তোমাকে না জানি কি উল্টা-পাল্টা বুঝিয়েছে। টেনশনের কিচ্ছু নেই।”

” আমি দুইঘণ্টার মধ্যে সিলেট পৌঁছে যাবো। আপনারা যেখানে আছেন ঠিক সেখানেই। আমি বাসে আছি।”

” হোয়াট?”

নোরা কথা শেষ করেই লাইন কেটে দিল।অনিক ভেবেছিল নোরা হয়তো ফাজলামো করছে। কিন্তু কে জানতো মেয়েটা সন্ধ্যার মধ্যে সত্যি সত্যি চলে আসবে!

অনিক হাসপাতালের গ্রাউন্ডফ্লোরে বসে চা খাচ্ছিল। একটু পর হঠাৎ দেখল নোরা দূর থেকে হেঁটে আসছে। তার কাঁধে হালকা গোলাপী রঙের একটা ব্যাগপ্যাক। থ্রি কোয়ার্টার কালো জিন্সের সাথে সাদা টি-শার্ট। টি-শার্টের উপর আকাশী রঙের জ্যাকেট। খোলা চুল। দেখতে একদম অন্যরকম লাগছে নোরাকে। অনিক প্রথমে ভেবেছিল এটা বুঝি তার ভ্রম! নোরাকে দেখতে দেখতে আনমনে চায়ে চুমুক দিতে নিয়ে তার ঠোঁট অবধি পুড়ে গেল!

নোরা অনিককে দেখতে পেয়েই ছুটে এসে জড়িয়ে ধরল। পেছনেই অন্তরা ছিল। বিনয়ী কণ্ঠে বলল,” স্যার আসসালামু আলাইকুম।”

অনিক হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। নোরা তাকে জড়িয়ে ধরে কেঁপে কেঁপে কাঁদছে। অনিক তাকে সামলাবে নাকি নিজেকে এখনও বুঝে উঠতে পারল না। মেয়েটা কেঁদেই যাচ্ছে!

থমথমে নীরবতা ঘর জুড়ে। বিশাল জানালা থেকে ফুরফুর করে বাতাস আসছে। মাথা নিচু করে বিছানায় বসে আছে নোরা। অনিক তারই সামনে বসে আছে সোফাতে। ধা’ক্কাটা এখনও সামলাতে পারছে না সে। দু’টো মেয়ে মানুষ ঢাকা থেকে সিলেট চলে এসেছে। বিষয়টা হজম করার মতো না। অনিক গম্ভীর মুখে প্রশ্ন করল,” কাজটা কেন করলে নোরা?”

” তার আগে বলো তুমি এটা কেন করলে?”

অনিক হতভম্ব হয়ে উচ্চারণ করল,” মানে? আমি কি করেছি?”

” তোমার এক্সিডেন্ট হয়েছিল মাঝরাতে। অথচ সেটা আমাকে জানতে হলো সকালে। তাও তুমি কিছু জানালে না। আমাকে জানতে হলো আলভীর কাছ থেকে। আর এই…”

বিছানা ছেড়ে উঠে এলো নোরা। সোফায় অবস্থানরত অনিকের মুখোমুখি এসে তার শার্টের কলার খামচে ধরল। শাসনের ভঙ্গিতে শুধাল,” কোনোকিছু প্ল্যান না করে আলভীর সাথে তুমি এখানে কিভাবে এলে? সীতাকুন্ডে ও তোমার এতোবড় ক্ষতি করেছিল তবুও? জানো না ওর সঙ্গে থাকলেই তোমার বিপদ হয়। এখন এই এক্সিডেন্টটাও যে পূর্ব পরিকল্পিত না তার কি গ্যারান্টি আছে? বলো?”

নোরার চোখ থেকে আগুনের হু’লকি বের হচ্ছে। ক্রোধে কাঁপছে ঠোঁট দু’টো। অনিকের মাত্র খেয়াল হল নোরা তাকে তুমি করে বলছে। এজন্যই কি সবকিছু এতোটা এলোমেলো লাগছে? নোরা যতবার কথা বলছে অনিক বুকে একটা ধাক্কার মতো খাচ্ছে। তবে বিষয়টা তার ভালোই লাগছে। নোরা আবার জিজ্ঞেস করল,” কি হলো উত্তর দিচ্ছো না কেন? বলো?”

অনিক কিছু সময় চুপ করে থেকে বলল,” তুমি বাসায় ম্যানেজ করলে কিভাবে? এখানে আসার সময় আন্টি-আঙ্কেল কিছু বলেনি।”

নোরা ক্ষীপ্ত কণ্ঠে বলল,” সেটা বড় কথা না। আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।”

” কি উত্তর দিবো? আলভী তার কাজের জন্য অনেক আগেই ক্ষ’মা চেয়েছে। আর আজকের ঘটনাটা শুধুই একটা দূর্ঘটনা। এখানে আলভীর দোষ নেই কারণ গাড়িতে সেও ছিল। তাছাড়া আলভী আমাদের গ্রুপ মেম্বার। ওকে ছাড়া কোনো ট্যুর প্ল্যান হয় না।”

” উফ, তোমাকে কে বলেছিল ট্যুরে আসতে? তাও আবার আমাকে না জানিয়ে? যদি ভ*য়ংকর কিছু হয়ে যেতো আমি কি করতাম বলো?”

অনিক পলক না ফেলে তাকিয়ে আছে নোরার দিকে। ইশশ! লাল চুলের বাচ্চা মেয়েটার মুখে ‘তুমি’ ডাকটা শুনতে কি দারুণ লাগছে। মনে হচ্ছে মেয়েটা তার বউ। অনিক মনের অনুভূতিকে প্রশ্রয় দিল। নোরার নরম গালে হাত রেখে কোমল গলায় বলল,”আ’ম স্যরি। এরপর থেকে আর কখনও তোমাকে না জানিয়ে কিছু করব না।”

কথাটা বলেই নোরাকে টেনে সোফার দেয়ালে মিশিয়ে দিল অনিক। তারপর ঠোঁটে দিল গাঢ় চুমু। সারাদিনের ক্লান্তি, দূর্বলতা, সব এক নিমেষে শেষ হয়ে গেল। প্রশান্তিতে চোখ বুজে আসতে লাগল। বেশ অনেকক্ষণ পর অনিক ছাড়ল নোরাকে। মেয়েটা তখন বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে। অনিক জিজ্ঞেস করল আলতো গলায়,” এখন বলো, বাসায় কি বলে এসেছো?”

নোরা জোরে একটা শ্বাস নিয়ে বলল,
” শোনো, প্রথমে আমি ফোন করলাম বাবাকে। বললাম অন্তুর মা ভীষণ অসুস্থ। তাই আঙ্কেল আন্টিকে নিয়ে হসপিটালে গেছেন। অন্তু বাসায় একা থাকবে। আন্টিকে এক কয়েকদিনের জন্য হসপিটালে এডমিট করার প্রয়োজন হয়েছে। এই ক’দিন আমি অন্তুর সাথে ওর বাসায় থাকবো। তারপর অন্তুকে বাবার সাথে কথা বলিয়ে দিয়েছি। অন্তু একটু গলা ভেঙে কান্নাকাটির চেষ্টা করেছে, ব্যাস! ”

” এতোবড় মিথ্যে? আর অন্তরা? ও কিভাবে ম্যানেজ করেছে ওর বাসায়?”

” ও একই কাজ করেছে। ওর মাকে বলেছে আমার বাবা হাসপাতালে। কিছুদিন ও আমার বাসায় থাকবে।”

অনিক দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল একটা। কণ্ঠে অসন্তোষ ঢেলে বলল,” কি দরকার ছিল এতো রিস্ক নেওয়ার?”

” তোমার জন্য আমি এর থেকেও বড় রিস্ক নিতে পারি।”

” তাই?”

” হুম। তাই।”

” তাহলে প্রমাণ দাও। চলো বিয়ে করে ফেলি। আর ঢাকায় ফিরে যাবো না। সংসার পাতবো এখানেই। রাজি?”

নোরা হেসে ফেলল। অনিক হঠাৎ চিন্তিত গলায় বলল,” ওহ শিট!”

” কি হয়েছে?”

” আলভী তো তোমাকে দেখেছে নিশ্চয়ই? যদি বাড়িতে ফোন করে বলে দেয়? ও তো একটা কিনিকবাজ নেটওয়ার্ক।”

নোরা হেসে জিজ্ঞেস করল,” কিনিকবাজ নেটওয়ার্ক? সেটা আবার কি?”

অনিক আশঙ্কাগ্রস্ত গলায় বলল,” আচ্ছা তোমার বাবা মানে আঙ্কেল যদি তোমাকে খুঁজতে অন্তরাদের বাসায় চলে যায় তখন?”

” আরে ধুর! বাবার এতো টাইম নেই। আর কেনোই না যাবে? বাবা কি আমাকে সন্দেহ করেছে? সন্দেহ করলে তো আসতেই দিতো না।”

” পরে যদি সন্দেহ করে?”

” কেন করবে? কোনো কারণ আছে সন্দেহ করার? দেখেন আপনি শুধু শুধু টেনশন করবেন না। আর আমারও টেনশন বাড়াবেন না।”

” ‘তুমি’টাই তো ঠিক ছিল। এখন আবার ‘আপনি’ কেন?”

” ‘তুমি’ তো আমি রাগের মাথায় বলছিলাম।”

” রাগটাই তো ভালো লাগছিল। বউ বউ লাগছিল।”

“ইশ!” নোরা লজ্জা পেয়ে হাসল। তখনি দরজা ঠেলে কেবিনে প্রবেশ করল নার্স। নোরা দ্রুত সোফা থেকে উঠে বিছানায় এসে বসল। অল্পবয়সী নার্স আঁড়চোখে একবার নোরাকে দেখেই অনিকের দিকে তাকাল। তারপর প্রশ্ন করল,” পেশেন্ট কে?”

অনিক জবাব দিল,” আমি পেশেন্ট।”

” তাহলে আপনি ওখানে বসে আছেন কেন? শুয়ে থাকতে বলা হয়েছিল আপনাকে।”

তারপর নোরার দিকে চেয়ে কিছুটা রুক্ষ স্বরে বলল,” দয়া করে পেশেন্টের বেড থেকে উঠুন।”

নোরা সঙ্গে সঙ্গেই উঠে দাঁড়াল। নার্সটি শাসনের সুরে অনিককে বলছে,” সন্ধ্যা থেকেই নিচে গিয়ে পায়চারী করছেন আপনি। একবারও আপনাকে বেডে দেখি না আমি। প্রবলেম কি? এভাবে চললে সুস্থ হবেন? বসুন এদিকে। ঔষধটা খান। আর জ্বর আছে নাকি আপনার গায়ে? দেখি তো!”

নার্স অনিকের কপালে হাত রাখল জ্বর দেখার উদ্দেশ্যে। নোরার যেন গা-পিত্তি জ্বলে গেল। নার্স ঔষধ বের করে অনিকের মুখের সামনে ধরতেই সে বলে উঠল,” আমাকে দিন। আমি খাওয়াচ্ছি।”

বলেই নার্সের হাত থেকে ট্যাবলেট কেঁড়ে নিল নোরা। ইতস্তত মুখে বলল,” আপনি যান। আর প্রেসক্রিপশনটা রেখে যান। আমিই ওকে সময়মতো ঔষধ খাইয়ে দিবো। আপনাকে প্রেশার নিতে হবে না।”

হঠাৎ নোরার এমন আচরণে নার্সের চেহারা গম্ভীর হয়ে গেল। অস্বস্তি মাখা কণ্ঠে বলল,” ঠিকাছে। কিছু লাগলে বলবেন।”

” লাগবে না কিছু। আপনি যেতে পারেন।” বেশ স্পষ্ট কণ্ঠে বলল নোরা।

নার্স চলে যেতেই অনিক হাসিতে ভেঙে পড়ল। নোরা অবাক হয়ে বলল,” হাসছেন কেন?”

” জেলাসিতে তোমাকে দারুণ দেখায় নোরা।”

নোরা থতমত খেয়ে বললাম,” আমি জেলাসি কোথায় করলাম? আর এই নার্সকে জেলাস করার কি আছে? আমার কি খেয়ে কাজ নেই?”

বলেই মুখ গোজ করে সোফায় বসল নোরা। অনিক হাসি হাসি মুখে তখনও তাকিয়ে আছে। হঠাৎ মুখ গম্ভীর করে বলল,” মা যে কাল তোমার সাথে এতো রুড বিহেভ করেছে সেটা তুমি আমাকে জানাওনি কেন নোরা?”

নোরা চ’মকে উঠল। আ’চমকাই মুখটা মলিন হয়ে গেল তার। অনিক বলল,” কি ভেবেছিলে? বললে আমি বিশ্বাস করতাম না?”

নোরা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,” আসলে আমি কিভাবে কথাটা বলবো বুঝতে পারছিলাম না,সরি। কিন্তু আপনি কি করে জানলেন? আন্টি কি নিজেই আপনাকে বলেছে?”

অনিক তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল, “হুহ! মা বলবে আমাকে? ফোনের রেকোর্ডিং চেক করেছিলাম৷ মা তোমাকে যা যা বলেছে সব শুনেছি।”

নোরা অস্বস্তি মাখা গলায় বলল,” আপনি আবার উনার সাথে রুড হোননি তো? দেখুন উনি হয়তো বিষয়টা বোঝেননি তাই…”

নোরাকে কথা শেষ করতে না দিয়েই অনিক কাছে এসে ওর ঠোঁট চেপে ধরল। তারপর বলল,” তুমি এতো মিষ্টি কেন নোরা?”

তারপর নোরার ডানহাতটা নিয়ে হাতের উল্টোপিঠে একটা গাঢ় চুমু দিল। হাতটা ধরে থেকেই বলল,” এইযে হাতটা ধরলাম, কোনোদিনও ছাড়ব না। মরে গেলেও না। প্রমিস।”

নোরা চোখে অশ্রুমেলা। নাক টেনে বলল,” আর আপনার ফ্যামিলি যদি আমাকে কোনোদিন না মানে?”

” অবশ্যই মানবে। আমি মানিয়েই ছাড়ব।”

নোরা অনিকের বুকে মাথা রাখল। অনিক ওর কোমর জড়িয়ে ধরে আরো কাছে নিয়ে এলো। সারারাত অনিকের কেবিনেই ছিল নোরা। আর অনিকের গ্রুপ মেম্বাররা রিসোর্ট বুক করে সেখানে। অন্তরাও চলে গেছে আলভীদের সাথে। কিছুসময়ের জন্য অনিক ঘুমিয়েছে। নোরা তার মাথার কাছে বসে ম্যাগাজিন পড়ছিল। হঠাৎ মাঝরাতে অনিকের ঘুম ভেঙে যায়। সে ফিসফিসিয়ে নোরাকে ডাকল,”এই নোরা।”

” হুম? কিছু লাগবে আপনার? ওয়াশরুমে যাবেন?”

” না। বাইরে যেতে ইচ্ছে করছে।”

” এতোরাতে?”

অনিক উঠে বসতে বসতে বলল,” বাইরে অনেক বাতাস৷ এমন আবহাওয়ায় রাতের শহর ঘুরতে দারুণ লাগবে। নিচে সাব্বির ভাই তার সাইকেলটা রেখে গেছে। আমিই বলেছিলাম। চলো ঘুরে আসি।”

” কিন্তু, ডাক্তার আপনাকে বলেছে রেস্ট নিতে।”

” কিছু হবে না। মাত্র একঘণ্টার জন্য।”

নোরা মৃদু শ্বাস ফেলে বলল,” ঠিকাছে। কিন্তু শুধু একঘণ্টা।”

হাসপাতালের বেয়ারাকে পাঁচশো টাকা দিয়ে অনিক নোরা সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। নোরাকে সামনে বসাল অনিক। নোরা বসলও।

” আচ্ছা আপনি কিভাব জানলেন আমার সাইকেলে এভাবে বসতে ভালো লাগে?”

” জানি না। আমি তো বসিয়েছি আমার স্বার্থে।”

নোরা অবাক হয়ে বলল, “আপনার স্বার্থে?”

” হুম। এইযে দেখো, তোমার চুলগুলো আমার চোখেমুখে এসে বারি খাচ্ছে। আমি চুলের মিষ্টি গন্ধ নিতে পারছি। আর ইচ্ছে করলেই তোমার ঘাড়ে,পিঠে, মুখ ঘষতে পারছি। তুমি পেছনে বসলে তো এই সুযোগগুলো পেতাম না। মিস হয়ে যেতো।”

নোরা লজ্জায় গুটিয়ে গেল। চারদিকে অন্ধকার। শীতল পরিবেশ। কেমন একটা নেশা জাগানো রোমাঞ্চকর অনুভূতি। নোরা আজকের এই রাত কোনোদিন ভুলবে না! অনিক একটা নিরিবিলি জায়গা দেখে সাইকেল থামাল। চারদিকে ঝড়ো হাওয়া বইছে। মনে হচ্ছে বৃষ্টিও হতে পারে। অনিক সাইকেল থামিয়েই নোরাকে জড়িয়ে ধরে একদম কোলে নিয়ে ফেলল।

নোরা হাসতে হাসতে বলল,” আরে কি করছেন? আপনার হাতে তো ব্যথা!”

” ব্যথা সেরে গেছে।”

নোরা বলল,” তাই বলে এভাবে আমাকে কোলে নিয়ে হাঁটতে হবে?”

” হ্যাঁ হবে। আমার ভালো লাগছে। তোমার লাগছে না?”

নোরা অনিকের শার্টের বোতাম খুঁটতে খুঁটতে লাজুক মুখে জবাব দিল,” হুম লাগছে তো।”

“আর কি কি ভালো লাগে বলো?”

নোরা অনিকের বুকে মুখ ঢেকে বলল,” আপনি যা করবেন তাই ভালো লাগবে।”

” তুমি নিশ্চিত? ”

“হুম।”

” এইটা ভুল নোরা, আমার সবকাজই তো তোমার ভালো লাগবে না।”

” কেন? ”

অনিক দুষ্ট হেসে বলল,”যদি অন্যমেয়ের সাথে প্রেম করি সেটাও ভালো লাগবে? যদি তোমার জায়গায়…”

অনিক আর কিছু বলার আগেই নোরা ওর মুখ চেপে ধরে বলল,” একদম খু’ন করে ফেলব।”

অনিক উচ্চশব্দে হেসে উঠল। হঠাৎ খেয়াল করল নোরার চোখ ছলছল করছে। মেয়েটাকে সে যত অবুঝ ভেবেছিল এই মেয়ে তার চেয়েও অবুঝ। অনিক হেসে বলল,” আরে পাগলি, আমি তো দুষ্টুমী করছি এতে কাঁদার কি হল?”

” এ ধরণের বাজে দুষ্টুমীও আর করবেন না। ”

” আচ্ছা করবো না সরি।”

অনিক নোরাকে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা দূর চলে এসেছে। নোরা হঠাৎ বলল,” প্লিজ এবার আমাকে নামান, আমি হাঁটতে চাই।”

অনিক নামিয়ে দিল। নোরা বলল,” জায়গাটা খুব ঠান্ডা তাইনা? বাতাস আসছে। বৃষ্টি হলে ভালো হতো।”

“বৃষ্টি হবে মনে হয়।”

” আমরা ভিজবো?”

” তুমি চাইলে ভিজবো।”

” না থাক, আপনার জ্বর এলে?”

নোরা লাফিয়ে লাফিয়ে হাঁটতে লাগল। অনিক পকেটে হাত রেখে স্বাভাবিক ভাবেই হাঁটছে। নোরা অনেকটা দূরে চলে গেছে। হঠাৎ বজ্রপাতের বিকট শব্দে নোরা চিৎকার দিয়ে সামনের একটা বটগাছ জড়িয়ে ধরল। অনিক কাছে এসে বলল,” বাহ! সবসময় দেখি বজ্রপাতের শব্দে ভয় পেলে মেয়েরা ছেলেদের জড়িয়ে ধরে। আর তুমি কিনা একটা বটগাছ জড়িয়ে ধরলে? তুমি তো ইতিহাসই বদলে দিলে।”

নোরা ভয়ে কাঁপা কণ্ঠে বলল,” আপনি তো কাছে ছিলেন না। নাহলে আপনাকেই জড়িয়ে ধরতাম।”

” এইতো এখন কাছে আছি। জড়িয়ে ধরো।”

” আগে বাজ পড়ুক!”

অনিক এক হাত দিয়ে নোরার কোমর জড়িয়ে ধরে কাছে এনে বলল,” বাজ পড়াটা কি জরুরী?”

নোরা সরে যেতে চাইল কিন্তু পারল না। বলল,” অবশ্যই জরুরী এবার ছাড়ুন।”

” উহুম!”

” কামড় দিবো কিন্তু।”

” দাও। আমিও দিবো।”

” কি? আপনি আমাকে কামড় দিবেন?”

” হ্যাঁ। ”

“আচ্ছা আমার আগে কি আপনার কোনো গার্লফ্রেন্ড ছিল?”

” হ্যা ছিল তো।”

নোরার চোখ বড় বড় হয়ে গেল,” কি? ছিল? আমাকে কোনোদিন বলেন নি তো!”

” তুমি জিজ্ঞেসই করোনি। কিভাবে বলবো? আমি তো আর তোমার মতো না। রাস্তাঘাটের অচেনা মানুষদেরও বলে বেড়াই বয়ফ্রেন্ডের সাথে ব্রেকআপ হওয়ার ঘটনা।”

অনিক একথা বলেই অন্যদিকে তাকাল। নোরার মনে পড়ে গেল, তাদের যখন প্রথম দেখা হয়েছিল তখন সে রিকশায় বসে অনিককে তার এক্স বয়ফ্রেন্ড ফারহানের গল্প শুনিয়েছিল। অনিক সেটা এখনো মনে রেখেছে। আবার সুযোগ পেয়ে তাকে খোঁচাও দিচ্ছে। কি বদের হাড্ডি রে বাবা! নোরা মুখ হাঁ করে সরু চোখে তাকাল। তারপর অনিকের বাহুতে কয়েকটা কিল দিয়ে বলল,” মজা নিচ্ছেন তাইনা?”

অনিক হাসতে হাসতে বলল,” যদিও ফারহানের বিষয়টা আমি জানতাম, তবুও তোমার মুখ থেকে শুনতে মজা লাগছিল। আর তোমার ইনোসেন্সনেস দেখেও ভালো লাগছিল।”

” হুহ! আপনি আসলেই বদের হাড্ডি। আচ্ছা এখন বলুন তো আপনার কয়টা গার্লফ্রেন্ড ছিল?”

অনিক কড় গুণতে লাগল,” এক..দুই..তিন..চার..

নোরা অবাক হয়ে বলল,” এতোগুলো গার্লফ্রেন্ড ছিল?”

” খুব বেশি না। সাড়ে আটটা।”

” মানে? গার্লফ্রেন্ড আবার সাড়ে আটটা হয় কিভাবে?”

” মানে একজনের সাথে রিলেশন হওয়ার আগেই ব্রেকআপ হয়ে গেছে। তাই সে আমার হাফ গার্লফ্রেন্ড, হাফ এক্স।”

নোরা হাঁ করে তাকিয়ে আছে। অনিকের কথার আগা-গোড়া তার মাথায় ঢুকছে না। নোরাকে বোকার মতো তাকিয়ে থাকতে দেখে অনিক হেসে দিল। বলল,” কি?”

নোরা কথা না বলে আবার অনিককে মারতে শুরু করল। আর অনিক তো হেসেই খু’ন। হাসতে হাসতে বলল,” আরে মারছো কেন?”

” সত্যি করে বলুন কয়টা গার্লফ্রেন্ড ছিল আপনার। আর তাদের সাথে কি কি করেছেন। সবাইকেই কি কিস করেছেন? এজন্যই তো বলি, এতো ভালো কিসিং কোথ থেকে শিখলেন!”

” তাহলে স্বীকার করছো আমি গুড কিসার?” সামান্য ঝুঁকে এলো অনিক।

নোরা হকচকিয়ে গেল।রাগী কণ্ঠে বলল,” আপনি বলবেন?”

” আচ্ছা বলছি। মজা করেছি। আমার কখনো কোনো গার্লফ্রেন্ড ছিল না। তুমিই আমার প্রথম, তুমিই আমার শেষ। ”

নোরা সন্দেহী দৃষ্টিতে বলল,” সত্যি? ”

” সত্যি রে বাবা! এখন কি প্রমাণ লাগবে?”

” না। প্রমাণ লাগবে না। কিন্তু এটা বলুন, তাহলে আপনি কিস করা কিভাবে শিখলেন?”

” বোকা মেয়ে! এসব শিখতে গার্লফ্রেন্ড থাকা লাগে? মুভি দেখেও তো শেখা যায়।”

” মুভি? মুভি তো আমিও দেখি। কই আমি তো শিখিনি।”

” তুমি তো তামিল, হিন্দি, বাংলা এসব দেখো। ইংলিশ মুভি কখনো দেখেছো?”

নোরা মাথা নেড়ে বলল,” উহুম। ওদের ইংরেজি আমি বুঝিনা। আর সাবটাইটেলও পড়তে পারিনা। সব মিলিয়ে দেখা হয়না।”

” আচ্ছা এসব বাদ দাও। অন্তত টাইটানিক তো দেখেছো?”

” ওটাও দেখিনি। হিন্দি ডাবিং অনেক খুজেছি কিন্তু পাইনি। তাই দেখাও হয়নি।”

অনিক মৃদু হেসে নোরার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,” আহারে! আমার বউটা কত্ত ইনোসেন্ট। থাক তোমাকে এসব দেখতেও হবে না জানতেও হবেনা। তুমি এমনই থাকো।”

হঠাৎ কিসের একটা শব্দে দু’জনই চমকে উঠল তারা। অনিক সরে গেল নোরার কাছ থেকে। নোরাও আশেপাশে খুঁজতে লাগল। কারো কথার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। হাসির আওয়াজও আসছে। নোরার হালকা ভয় লাগল। অনিকের হাত ধরে বলল,” এখানে মনে হয় কেউ আছে। চলুন চলে যাই।”

“সামনে তাকাও।”

নোরা অনিকের ইশারা বরাবর সামনে তাকাতেই অবাক হয়ে গেল। আলভী আর অন্তরা একসাথে খুবই অন্তরঙ্গ অবস্থায়। নোরার দেখেই ভীষণ লজ্জা লাগল। অনিক বলল,” আলভীর রুমে সাব্বির ভাই ছিল। তাই হয়তো ওরা এখানে এসেছে।”

নোরা অনিকের চোখ ধরে বলল,” আপনি কেন দেখছেন? তাকাবেন না।”

অনিকের হাসি পেল৷ বলল,” আচ্ছা তাকাবো না। চলো এখান থেকে।”

” না দাঁড়ান। ওদেরকে একটু ডিস্টার্ব করি।”

” ডিস্টার্ব করবে মানে? কোনো দরকার নেই। শুধু শুধু লজ্জা পাবে।”

” উহুম। আমি এভাবে ছেড়ে দিবোনা। রাত-বিরাতে ফষ্টিনষ্টি বের করছি ওদের।”

“নোরা, আমরাও কিন্তু একই কাজ করছিলাম। যদি ওরা আমাদের আগে দেখতো তখন আমরাও অস্বস্তিতে পড়তাম। তাই ছেড়ে দাও। আমরা দেখেছি এটা ওদের জানানোর কোনো দরকার নেই।”

” আমরা কি ওদের মতো এসব করছিলাম? ”

” তবুও বাদ দাও না ভাই।”

” না। আমি বাদ দিবো না। এতোবড় একটা জিনিস দেখে ফেলেছি। আর অন্তুকে একটু জ্বালাবো না?তাই কি হয়?”

” অন্তরা তোমার বেস্টফ্রেন্ড। কিন্তু আমার তো ছোটভাই আর ছাত্রী। আমি কিভাবে..”

” এতো সাধু সেজেন না তো। অন্তু এখন আর আপনার ছাত্রী না। আপনার শালিকা। তাই আপনি সব করতে পারেন। এইযে নিন পাথর।”

” পাথর দিয়ে কি হবে?”

” একটা পাথর আমি নিবো আরেকটা আপনি। তারপর একসঙ্গে ঢিল মারবো।”

” এই না একদম না। পাগল নাকি?”

” পাগল না পাগলী। আপনিই তো বলেন। এবার ধরেন।”

নোরা এ কথা বলেই অনিকের হাতে পাথরটা দিয়ে সামনে তাকাল। তারপর নিজের হাতেরটা ঢিল মারতে মারতে অনিককে বলল,” আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেন? মারেন,মারেন!”

অনিক মারবে না তাই বাধ্য হয়ে নোরাই ওর হাত থেকে নিয়ে ঢিল মারল। পরে নিজেরটাও মারল। তারপর সাথে সাথে নিচে বসে গেল। অনিককেও টেনে বসাল। তারপর হেসে হেসে বলল,” এবার শুধু মজা দেখুন।”

আলভী আর অন্তরা ভয়ে তটস্থ হয়ে উঠে দাঁড়াল। আশেপাশে ঢিলের উৎস খুঁজতে খুঁজতে নিজেদের অবস্থা ঠিক করল। তারপর কিছুক্ষণ গুজুরগুজুর করে চলে যেতে লাগল। ওরা চলে যেতেই নোরা হাসতে হাসতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। অনিকও হাসছে। নোরা বলল,
” আমি হান্ড্রেড পারসেন্ট সিওর ওরা ভূতের ভয় পেয়েছে। এখন এই ঘটনা তো কাউকে জানাতেও পারবে না। ভীষণ মজা হবে।”

অনিক বলল,” তুমি এতো দুষ্টু কেন নোরা?”

নোরা কিছু বলছে না শুধু হেসেই যাচ্ছে।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে