#প্রিয়তোষ
#পর্ব_৬
লিখা: Sidratul muntaz
নোরা কাঁদতে কাঁদতে কোচিং এর ছাদে চলে এসেছে। তার ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে। চোখ দিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত বর্ষণ বয়েই চলেছে। নোরা নিজেকে থামাতে পারছেনা। কেনো এইটা করতে গেল সে? সারাজীবনের জন্য অনিকের চোখে নিচে নেমে গেল। অনিক তার সম্বন্ধে কি ভাবছে কে জানে? কিন্তু তার তো কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছিলনা। এটা ঠিক যে অনিকের সাথে তার যেই সম্পর্ক তাতে এ ধরণের উপহার সম্পুর্ণ বেমানান। কিন্তু তাই বলে অনিক সবার সামনে এভাবে অপমান করল? অবশ্য এটাই স্বাভাবিক। বরং অনিক যথেষ্ট ভদ্র ব্যবহার করেছে। ওর জায়গায় অন্যকেউ হলে হয়তো নোরা এতোক্ষণে একটা চড় উপহার পেয়ে যেতো।
চোখের জল মুছতে মুছতে নিচের দিকে তাকাল নোরা। মেয়েরা কোচিং থেকে বের হচ্ছে। তন্নীরা রিকশাতে উঠে যাচ্ছে। সেজুতি আর অন্তরা রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। কোচিং কি তাহলে ছুটি হয়ে গেছে? নোরা নিজের হাতের ঘড়ি দেখল। মাত্র পাঁচটা বেজে সাতমিনিট। কোচিং ছুটি হওয়ার কথা ছয়টায়। তাহলে সবাই চলে যাচ্ছে কেন? নাকি অনিকস্যার তার উপর রাগ দেখিয়ে সবাইকে ছুটি দিয়ে দিয়েছে?, এতোটাই মেজাজ গরম হয়েছে উনার, যে এখন আর ক্লাসও নিতে চান না।
নোরার আবার কান্না পেল। জোরে কান্না পেল। সে আসলেই খুব বোকা। তার থেকে দুর্ভাগ্যবতী পৃথিবীতে হয়তো আর একটাও নেই। তাইতো ওর সাথেই এমন হলো। অন্তরা আর সেজুতি নোরার জন্যই নিচে দাঁড়িয়ে আছে৷ কিন্তু নোরা এখন নিচে যাবেনা৷ তার কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছেনা। নিজের চেহারাও কাউকে দেখাতে ইচ্ছে করছে না। নোরা নীরবে কাঁদতে লাগল।
হঠাৎ কারো উপস্থিতি টের পেয়ে চোখ-মুখ মুছে স্বাভাবিক হয়ে নিল নোরা। পেছনে তাকাতেই সে অবাক, অনিক! ওর হাত সিগারেট। সেই সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বামসাইডের দেয়াল ঘেঁষে দাড়াল। নোরা সামনের দিকে ফিরে গেল। কোচিং এর ভেতর স্মোকিং নিষেধ। তাই হয়তো ছাদে এসেছে। কিন্তু নোরা এবার কি করবে? চলে যাবে ছাদ থেকে? অনিকের সামনে আপাতত থাকতে ইচ্ছে করছে না।
নোরার ভাবনার মাঝখানেই অনিক পাশে এসে দাঁড়াল। নোরা অপ্রস্তুত হয়ে গেল। সিগারেটের গন্ধে তার বমি পাওয়ার কথা৷ কিন্তু পাচ্ছেনা। বরং জীবনে প্রথমবার সিগারেটের গন্ধটাও ভালোই লাগছে৷ অনিকের ঠোঁটের ছোয়া পেয়ে সিগারেটটাও যেন ধন্য। তার পারফিউমের ঘ্রাণের সাথে নিকোটিনের গন্ধ মিশে চমৎকার এক মাদকতার সৃষ্টি হয়েছে যেন। অনিক সামনে তাকিয়ে খুব স্বাভাবিক কণ্ঠে বলল,” কি দেখছো? ”
নোরা জবাব দিতে পারলনা। বিস্ময়ে জবাব দিতে ভুলে গেছে। অনিকই বলল,” এদিকের ভিউটা খুব সুন্দর। মনে হয় এক নজরে পুরো শহর। তাইনা?”
এ কথা বলেই অনিক নোরার দিকে তাকিয়ে হাসল। নোরা এই মুহুর্তে কি করবে দিশা খুঁজে পাচ্ছে না। হাসবে? না হাসা ঠিক হবেনা। মুখ গম্ভীর রেখেই মাথা নাড়াল। অনিক নোরার দিকে ঘুরে দাঁড়াল। নোরা বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে। একটু আগেই যে এতো ধমকালো, খারাপ ব্যবহার করল, এখন সে-ই স্বাভাবিক ভঙ্গিতে কথা বলছে?এমন পরিস্থিতিতে কি করা উচিৎ নোরার জানা নেই। অনিকস্যার কি সবকিছু ভুলে স্বাভাবিক হতে চাইছে?
অনিক ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বলল,” নোরা একটা কথা বলবে?”
” বলুন?”
” আমার স্মোকিং এর অভ্যাস আছে এই কথা তোমাকে কে বলল? আমি তো কখনো তোমাদের সামনে স্মোক করিনি! তাহলে জানলে কিভাবে?”
নোরা ইতস্ততায় পড়ে গেল। রেশমির কথাটা কি বলবে? বলা ঠিক হবে? যদিও এখানে রেশমির দোষ নেই। রেশমি বললেই যে ওকে সেই কাজ করতে হবে এমন তো নয়। সিগারেটের কার্টুন নোরা নিজের ইচ্ছায় অনিককে দিয়েছে। এখানে রেশমির কি দোষ? রেশমি তো আর জোর করে ওকে দিয়ে কিছু করায়নি। নোরা বলল,” জেনেছি।”
” কিভাবে জেনেছো? আর তোমার তো সিগারেটের গন্ধও সহ্য হয়না। তাহলে আমাকে দিলে কি মনে করে?”
” আপনি কিভাবে জানলেন আমার সিগারেটের গন্ধ সহ্য হয়না?”
” আমি আসার পর থেকেই অস্বাভাবিকভাবে নিঃশ্বাস নিচ্ছো। এটা দেখেই বুঝেছি। তোমার কষ্ট হচ্ছে।”
একটু থেমে অনিক আবার বলল,” আচ্ছা আমাকে এসব গিফট করলে আমি খুশি হবো এই আইডিয়া তোমাকে কে দিল?”
নোরা চুপ। অনিক জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আবার বলল,” দেখো আমি জানি আইডিয়াটা তোমার না। এ ধরণের বুদ্ধি তোমার মাথায় আসতে পারেনা। আর তোমাকে বোকা বানানো অনেক সহজ। তাই সত্যিটা বলো।মেইন কালপ্রিট কে?”
নোরা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। কিছু বলল না। অনিক কিছুক্ষণ উত্তরের অপেক্ষা করল। তারপর বলল,” আচ্ছা নাম বলতে না চাইলে থাক। বাদ দাও। কিন্তু একটা সত্যি কথা কি জানো?”
“কি?”
” স্মোকিং এর প্রতি আমার এ্যাডিকশন ছিল এটা ঠিক। কিন্তু আমি স্মোকিং ছেড়ে দিয়েছি প্রায় চারবছর আগে।”
নোরা অবাক হয়ে তাকাল। অনিক নরমগলায় বলল,” সরি।”
” সরি কেন?” নোরার প্রায় নিশ্বাস আটকে আসছে।
” হঠাৎ এই জিনিসটা দেখে মাথাগরম হয়ে গিয়েছিল। তাই অনেক কিছু বলে ফেলেছি তোমাকে। সেজন্য সরি।”
নোরা আনন্দের সাগরে ভাসছে৷ খুশিতে তার চোখ-মুখ উজ্জল। যদিও দোষটা তারই, তবুও অনিক ওকে সরি বলছে। এরচেয়ে আনন্দের আর কি হতে পারে?
নোরা উত্তেজিত হয়ে বলল,” ছি ছি! স্যার আপনি কেন সরি বলছেন? ভুলটা তো আমারই ছিল। আমারই আপনাকে এ ধরণের উপহার দেওয়া উচিৎ হয়নি। তাই সরি আমার বলা উচিৎ। আমি সরি। খুব সরি।”
অনিক হাসল। তারপর বলল,” সিগারেট খাওয়া তো চারবছর আগেই ছেড়ে দিয়েছিলাম। তখন ডেঞ্জারাস এ্যাডিকশন ছিল৷ এখন তার এক পারসেন্টও নেই। গন্ধটাও সহ্য হয়না। আজ অনেকদিন আধঘণ্টায় দুইটা শেষ করলাম। তাও তোমার জন্য।”
” আমার জন্য কেন?”
,” না মানে.. তুমি গিফট না করলে তো আমি খেতাম না। তাই বলছি।”
” ও। তাহলে আমি আপনাকে খেতে বাধ্য করেছি।”
” বাধ্য করোনি, সুযোগ করে দিয়েছো।”
” স্যার আসলে আমি বুঝতে পারিনি আপনি এতোটা রেগে যাবেন।”
” তুমি কি চাও? আমি তোমার দেওয়া এক কার্টুন শেষ করি? তাহলে কিন্তু আবার আগের অভ্যাসে ফিরে যেতে হবে।”
” স্যার আমি কিছুই চাইনা। আমি শুধু আপনাকে খুশি করতে চেয়েছিলাম।”
“খুশি করার আরো অনেক উপায় ছিল। তাছাড়া আজকে তোমাকে দেখে আমি এমনিই খুশি হয়ে গিয়েছি। সুন্দর লাগছে। লালরঙে তোমাকে এতো ভালো মানায় জানা ছিলনা ”
নোরা নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। অনিক তার প্রশংসা করল? এটাকে শুধুই তাকে খুশি করার জন্য বলল? নাকি সত্যিই মন থেকে বলল? যে কারণেই বলুক, বলেছে তো! এটাই বড় কথা। নোরার নিজেকে সার্থক মনে হচ্ছে।
অনিক বলল,” শোনো নোরা, সরলতা ভালো। কিন্তু বোকামি না। তুমি বোকামি করেছো। এই জিনিসটা আমাকে দেওয়ার আগে অন্তত একবার চিন্তা করা উচিৎ ছিল। টিচারকে মানুষ এসব গিফট করে? কমন সেন্স নেই? ও সরি, তোমার তো আসলেই কমন সেন্স নেই।ভুলে গেছিলাম।”
নোরা মাথা নিচু করে বলল,” স্যার আপনি আবার শুরু করলেন।”
অনিক হেসে উঠল। কি যে সুন্দর সেই হাসি!
নোরা নিচে নেমে দেখল অন্তরা আর সেজুতি তখনও দাঁড়িয়ে আছে। অন্তরা নোরাকে নামতে দেখেই জিজ্ঞেস করল,” কিরে তুই কই ছিলি এতোক্ষণ? তোকে কত খুঁজলাম!”
নোরা বলল,” পরে বলছি। তার আগে বল তোরা অনিকস্যারকে কি বলে কনভেন্স করেছিস?”
সেজুতি আর অন্তরা একবার চোখচোখি করল। সেজুতি বলল,” আমরা আবার কখন অনিকস্যারকে কনভেন্স করলাম?”
নোরা বলল,” কনভেন্স করিসনি? কিছু বলিসও নি?”
অন্তরা বলল,” উহুম! বলার সুযোগই হয়নি। তুই ক্লাস থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর অনিকস্যার অনেকক্ষণ চুপ করে চেয়ার বসে ছিলেন। তারপর আমাদের ছুটি দিয়ে দিলেন। আমরা সবাই বের হয়ে গেলাম কিন্তু উনি তখনো বসেছিলেন। উনার সাথে কোনো কথাও তো হয়নি।”
নোরা বলল,” ও। আমি আরো ভাবলাম তোরাই উনাকে কনভেন্স করে আমার কাছে পাঠিয়েছিস।”
সেজুতি বলল,” স্যার তোর কাছে গিয়েছিল?”
নোরা বলল,” হ্যাঁ৷ সরি বলেছে।”
সেজুতি আর অন্তরা অবিশ্বাস্য নজরে তাকাল।
” কি সত্যি?”
নোরা হাসি হাসিমুখে মাথা নেড়ে বলল,” হুম।”
তারপর ওদেরকে সব কাহিনি শোনাল। সেজুতি হাসতে হাসতে বলল,” সত্যি করে বলতো! সিগারেটের সাথে কি তাবিজ মেশানো ছিল? স্যার কি খেয়ে পাগল হয়ে গেছে?”
নোরা বলল,” জানিনা। কিন্তু আজকে আমি খুব খুশি। তাই তোদেরকে ট্রিট দিবো। আয়।”
অন্তরা বলল,” ট্রিটটা আমার বেশি পাওয়া উচিৎ। কারণ আমিই তোকে এভাবে সাজিয়েছি। যা দেখে স্যার ফিদা হয়ে গেছে।”
নোরা বলল,” তুই আবার বেশিই ভাবছিস। স্যার ফিদা হয়নি। শুধু সুন্দর বলেছে।”
অন্তরা বলল,” আরে ওইটাই। সরাসরি বলেনি। আকার-ইঙ্গিতে বুঝিয়েছে।”
নোরা মুখে অন্তরার কথাটা অগ্রাহ্য করলেও ভেতরে ভেতরে খুশির জোয়ারে ভাসছিল। একসঙ্গে স্কুটারে বসল তারা। সেঁজুতি বসতে বসতে বলল,” দোস্ত তুই যখন অনিকস্যারকে গিফট দিতে গিয়েছিলি আর অনিক স্যারের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলি? তোদেরকে দেখতে এত কিউট লাগছিল! মনে হচ্ছিল মেড ফর ইচ আদার। একদম পারফেক্ট জুটি। ”
অন্তরা বলল,” হ্যাঁ একদম একদম ঠিক বলেছিস। আমার কাছেও খুব ভালো লাগছিল দুজনকে একসাথে দেখতে।”
নোরা চোখ বড় করে বলল,” সিরিয়াসলি? নাকি আমাকে খুশি করার জন্য বলছিস?”
সেঁজুতি বলল,”না দোস্ত একদমই না। খুশি করার জন্য কেন বলব? সত্যিই তোদের কে একসাথে দেখতে খুব ভালো লাগে বিশ্বাস কর!”
নোরা মন খারাপ করে বলল,”কিন্তু আমার মনে হয় আমি একটু বেশিই শর্ট। উনি কত লম্বা! আমি যেন একদম ওনার কোমরের নিচে পড়ে থাকি।”
সেঁজুতি বলল,” ধুর এটা কোন ব্যাপার হলো? তোদেরকে তো আরো বেশি কিউট লাগে সেজন্য। মনে হয় দা বেস্ট পেয়ার। তাইনা অন্তরা?”
অন্তরা সুর মিলিয়ে বলল, “একদম। আমার তো তোদের আগে থেকেই ভালো লাগতো। তার ওপর আজকে আবার সেইম কালার ড্রেস পরেছিলি। সত্যিই অসাধারণ লাগছিল। আমার কাছে বেস্ট কাপলের অ্যাওয়ার্ড থাকলে তোদের হাতে ধরিয়ে দিতাম।”
নোরা হেসে বলল,”ইশশ!”
ডিনারের পর মাত্র বিছানায় শুয়েছে নোরা। তখনই ফোনটা হাতে নিল।মেসেজ বক্স চেক করতেই এক প্রকার লাফিয়ে উঠলো। অনিক স্যারের রিপ্লাই। কাল যে অনিককে মেসেজ দিয়েছিল, সেই রিপ্লাই এখন এসেছে। নোরার বিশ্বাস হচ্ছে না সত্যিই কি অনিক স্যার তার মেসেজের রিপ্লাই করেছে? এক মুহূর্ত দেরি না করে মেসেজটি চেক করলো,” এই পিচ্চি, কি খবর? ”
নোর খুশিতে ডগোমগো চোখে ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে চিন্তা করতে লাগল এ ধরনের মেসেজ অনিক লিখেছে? কেন যেন বিশ্বাসই করতে পারছেনা নোরা। কি রিপ্লাই দিবে সেটাও বুঝতে পারছে না। তার হাতের আঙুলগুলো থর থর করে কাঁপছে। কি মুশকিল! অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে মেসেজ লিখল,” ভালো। আপনি কেমন আছেন স্যার? ”
প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সিন হলো মেসেজটি। মানে অনলাইনে আছে। প্রচন্ড উত্তেজনায় নোরার হার্টবিট বাড়তে লাগলো। অনিক রিপ্লাই দিলো, “আমি ভালো। কিন্তু তুমি এখনো ঘুমাওনি কেন?”
” আসলে মাত্র ডিনার শেষ করলাম।”
” এত দেরিতে ডিনার? ”
“আমাদের বাসার এমনই রুটিন ”
“ও আচ্ছা। তবে বেশি রাত জাগা কিন্তু ভালো অভ্যাস না়। এতে মস্তিষ্কের ওপর চাপ পড়ে। তাই জলদি ঘুমানোর অভ্যাসটা করে নিও।”
নোরা সাহস করে লিখল, ” স্যার আপনিও তো জেগে আছেন। ”
“আমি তো জেগে আছি কাজে। এত রাতে তোমার কি কাজ? নাকি বয়ফ্রেন্ডঘটিত ব্যাপার?”
নোরা এই মেসেজ দেখে হালকা লজ্জিত বোধ করলো। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই লিখল, “ছি ছি! আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই।”
অনিক বলল, “সত্যি? ”
নোরা লিখল,” আজ্ঞে।”
” তাহলে তো রাত জাগার কোন কারণই দেখছিনা।”
“কেন? মানুষ বুঝি শুধু প্রেমের জন্যই রাত জাগে! তাহলে আপনিও কি গার্লফ্রেন্ডের জন্য জেগে আছেন?”
অনিক অপ্রস্তুত হয়ে বলল,” ভালোই তো কথার প্যাঁচে ফেলতে পারো দেখছি। রাত জেগে আর কোনো কাজ নেই তাইনা? ঘুমাও!”
” ধমকাচ্ছেন কেন? আপনি কি আমাকে মেসেঞ্জারেও রেহাই দিবেন না?”
“আমি তো ভেবেছিলাম তুমি ধমকও বুঝবেনা। কমন সেন্স আছে তাহলে!”
” আবার? ধুর আপনার সাথে আর কথাই বলব না। আমি ঘুমাচ্ছি৷ ”
” সেটাই ভালো। ফোন রেখে ঘুমাও।”
“ফোন নিয়ে কি ঘুমানো যায়? রেখেই তো ঘুমাবো।”
” হ্যাঁ তাইতো।”
” আচ্ছা তার আগে একটা কথা বলুনতো?”
অনিক শুধু প্রশ্নবোধক চিহ্ন পাঠাল। কোনো শব্দ লিখল না। নোরা বলল,” আপনি আমাকে পিচ্চি বললেন কেন?”
” পিচ্চিকে পিচ্চি বলতে পারবো না?”
” না পারবেন না। আমি পিচ্চি কিভাবে হলাম?”
” আমার কাছে তো তুমি পিচ্চিই। তোমরা সবাই পিচ্চি।”
” আমার আঠারো বছর চারমাস। ”
” মাত্র?”
” এটা মাত্র মনে হল? কতবছর হলে পিচ্চি থাকবো না?”
” যত বয়সই হোক, আমার কাছে পিচ্চিই থাকবে।”
” আপনার বয়স কত?”
” আজকে আমার ছাব্বিশতম জন্মবার্ষিকী ছিল।”
” কি? আপনার ছাব্বিশ বছর?”
” অবাক হলে মনে হচ্ছে? ”
” অবাক তো হচ্ছিই। আপনাকে দেখে তো একদমই বোঝা যায়না যে আপনার বয়স ছাব্বিশ।”
” তাহলে কি বোঝা যায়?”
” একুশ কি বিশ।”
” হাহাহা। মজা পেলাম।”
” আপনি দৈত্যের মতো হাসছেন কেন?”
” দৈত্যের মতো কোথায় হাসলাম?”
” হাহাহা! এটা তো দৈত্যের মতো হাসি। রুপকথার গল্পে শোনেননি? দৈত্যরা বিশাল শরীর নিয়ে ভারী শব্দে হিহোহা করে হাসে। হাসার সময় ওদের ভুড়ি নড়তে থাকে।”
” আমি তো হিহোহা করে হাসিনি। হাহাহা করে হেসেছি।”
” তবুও আমার দৈত্যের কথা মনে পড়ছে। ভয় লাগছে।”
” ভয় লাগার কি হলো? ”
” জানি না।”
“তুমি কি রাতে একা ঘুমাও?”
” না। আমার সাথে কিড্ডো ঘুমায়। ”
” কিড্ডো কে?”
” আমার টেডিবিয়ার। ওর শরীর অনেক মসৃণ। ওকে জড়িয়ে না ধরলে আমার ঘুমই আসেনা। তাই প্রতিদিন ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাই।”
” ঠিকাছে তাহলে কিড্ডোকে জড়িয়ে ধরেই ঘুমাও। কিন্তু দেখো কিড্ডো যেন আবার তোমাকে জড়িয়ে না ধরে।”
এই মেসেজ দেখে নোরা ভয় পেয়ে একটা চিৎকার দিয়ে ফেলল। তারপর লিখল,” আজব তো! আপনি আমাকে এভাবে ভয় দেখাচ্ছেন কেন?”
” তুমি ভয় পাচ্ছো ?”
” আপনি তো চাইছেনই আমি ভয় পাই।”
” আমি এটা চাইছি না।”
” অবশ্যই চাইছেন। নাহলে ওমন কথা কেন বললেন? আমার এখন সত্যি ভয় লাগছে, কি করবো?”
“যিকির করো। দোয়া পড়ো। আর ভয় লাগবেনা।”
” নিজে ভয় দেখিয়ে এখন আবার বলছে যিকির করতে, দোয়া পড়তে। কি অদ্ভুত! আপনি ভয় না দেখালে তো আমি ভয়ই পেতাম না।”
” ভয় তাড়ানোর আরেকটা উপায় আছে। একটা সিগারেট ধরিয়ে শুয়ে পড়ো। আগুন দেখলে ভূত কাছে আসেনা।”
” সিগারেট ধরিয়ে শুয়ে পড়বো মানে? আমি কি সিগারেট খাই?”
” আমাকে এক কার্টুন দিলে, অথচ নিজে খাওনা? আমি তো ভেবেছিলাম তোমার বাবার সিগারেটের ফ্যাক্টরি আছে।”
” ধেৎ! আর মজা নিয়েন না। ব্যাপারটার জন্য তো সরি বলেছি আমি।”
” সব ভুলের সমাধান সরি দিয়ে হয়না নোরা।”
” তাহলে কি করতে হবে?”
” কিছুনা, তুমি ঘুমাও নোরা। অনেকরাত হয়েছে। ”
” আপনি ঘুমাবেন না?”
” আমি ঘুমাতেই যাচ্ছি।”
” ঠিকাছে চলুন একসাথে ঘুমাতে যাই।
” তুমি কি এ ধরণের দুষ্টুমি সবার সাথেই করো?”
” সবার সাথে কেন করবো? সবাই তো সব দুষ্টুমির যোগ্য না।”
অনিক লিখল,” ঘুমাও নোরা। রাত কম হয়নি।”
” আপনার কি খুব ঘুম পাচ্ছে?”
মেসেজটা সেন্ড হল। কিন্তু অনেক সময় কেটে যাওয়ার পরেও সীন হলনা। অনিক অফলাইন হয়ে গেছে। নোরার হালকা মনখারাপ হল। অনিক হঠাৎ কনভারসেশনটা শেষ করে দিল কেন? ভালোই তো লাগছিল কথা বলতে। সারাজীবন যদি এভাবে কথা বলে যাওয়া যেতো! এই কথপোকথন হতো অনন্তকালের। নোরা বামকাত হয়ে শুয়ে পড়ল। আজরাতে তার ঘুম আসবেনা।
নোরা ক্লাসে বসে আছে। ক্লাস চলছে ফিজিক্স। আফজাল স্যার লেকচার দিচ্ছেন। কিন্তু সেদিকে নোরার কোন মনোযোগ নেই। তার দৃষ্টি দরজার বাইরে। অনিকস্যার এর বিখ্যাত লাঠিটা আজ তাদের ক্লাসে। প্রতিদিন এই সময় লাঠিটা নিতে আসে অনিকস্যার। আজকেও নিশ্চয়ই আসবে। তখন একটিবার দৃষ্টি বিনিময় হবে। সেই অপেক্ষাতেই প্রহর গুনছে নোরা। কিন্তু অনিক আসছে না। অপেক্ষাও শেষ হচ্ছেনা।
কোচিং এর প্রায় সবাই মোটামোটি কালকের ঘটনাটা জেনে গেছে। অনিককে সিগারেট গিফট করার ঘটনা। অনেকে এই নিয়ে হাসি-তামাশাও করছে। আফজাল স্যারও ছাড় দেননি। কিছুক্ষণ আগে তিনিও পচালেন। বলেছিলেন,” গিফটটা কিন্তু খুব দামী। সবাই এর মুল্য বোঝেনা। অনিককে না দিয়ে যদি আমাকে দিতে, খুব যত্ন করে ব্যবহার করতাম।”
নোরার কারো কথাতেই কোনো মাথাব্যথা হচ্ছেনা। অনিকস্যার যে তাকে মাফ করেছেন এবং স্বাভাবিক ব্যবহার করছেন এটাই তার কাছে অনেক। এতোসময় কেটে যাওয়ার পরেও যখন অনিক আসল না, নোরা ফেসবুকে মেসেজ পাঠাল,” স্যার, আপনি কি আজ এসেছেন?”
পাঁচমিনিটের মধ্যেই রিপ্লাই এলো,” আসবো না কেন?”
” তাহলে আপনাকে দেখতে পেলাম না যে?”
” আমি গ্রাউন্ড ফ্লোরে ক্লাস নিচ্ছি। উপরে আসিনি। তাই দেখা হয়নি।”
” আমাদের ক্লাসে তো আপনার লাঠি আছে। লাঠি নিতেও আসবেন না?”
” নাহ। সিঁড়ি বেয়ে উঠতে ইচ্ছে করছেনা। টায়ার্ড লাগে।”
“তাহলে আমি আপনার লাঠি নিয়ে আসি?”
” তুমি কেন নিয়ে আসবে? তোমার না ক্লাস চলছে?”
” কিছু হবেনা। মাত্র পাঁচমিনিটেরই তো ব্যাপার।”
“দরকার নেই। পরে সবাই বলবে আমি আলসেমি করে নিজের কাজ স্টুডেন্ট দিয়ে করাচ্ছি।”
” কেউ জানবেনা। আমি বলবো ওয়াশরুমে যাচ্ছি।”
” লাঠি নেওয়ার সময় কেউ তোমাকে দেখবে না? তখন তো বুঝবেই।”
” বুঝবে না। আমি ম্যানেজ করে নিবো।”
” লাগবে না নোরা! বাদ দাও।”
নোরা মনখারাপের ইমোজি দিল। তারপর লিখল,” ভেবেছিলাম এই বাহানায় আপনার সাথে একটু দেখা হবে।”
” আমার সাথে দেখা করে তোমার লাভ কি?”
” লাভ আছে। অনেক Love। আপনি বুঝবেন না।”
নোরা ইচ্ছে করেই ‘লাভ’ এর জায়গায় ‘Love’ লিখেছে।অনিক সেটা বুঝতে পেরে বলল,” তুমি ক্লাসে বসে ম্যাসেজিং করছো আফজাল ভাই দেখে না?”
” দেখবে কিভাবে? আমি তো লুকিয়ে করছি।”
” মোবাইল রেখে ক্লাসে মনোযোগ দাও। নাহলে আমিই আফজাল ভাইকে ফোন দিয়ে বলবো তুমি কি করছো।”
” ঠিকাছে রাখছি। বায়।”
“নোরা শোনো!”
“জ্বী বলুন?”
“ছুটির সময় আমি ছাদে থাকবো।”
নোরা ভীষণ অবাক হল। অনিক কি চাইছে ছুটির পর ছাদে দেখা করতে? নোরা অস্থিরতা নিয়ে লিখল,” আমিও আসবো?”
“তোমার ইচ্ছা। আমি শুধু আমারটা বললাম। এখন বায়। ক্লাস করো।”
“ঠিকাছে। থ্যাঙ্কিউ স্যার। ”
মেসেজটা সেন্ড হল, কিন্তু সীন হলনা। অনিক অফলাইন হয়ে গেছে। নোরার ভেতরে হাঁসফাস করছে। অস্থির লাগা শুরু হয়ে গেছে। কখন ছুটি হবে? ঘড়ির কাটা যেন চলছেইনা। লেকচার শুনতেও বিষাক্ত লাগছে। অনেক অপেক্ষার পর অবশেষে আসল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ক্লাস ছুটি হল। সবাই ব্যাগ গুছিয়ে ক্লাস থেকে বের হচ্ছে। নোরা,অন্তরা আর সেজুতি একসাথে বের হচ্ছিল তখন রেশমি এসে নোরার সামনে দাড়াল। অপরাধী কণ্ঠে বলল,” নোরা কালকের জন্য সরি। আমি বুঝতে পারিনি এমন হবে। প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও।”
অন্তরা আর সেজুতি কিছুই বুঝলনা। নোরা বলল,” তুমি কেন সরি বলছো? দোষটা আমারই। মানুষের কথা শুনে কিছু যাচাই-বাছাই না করে কোনো পদক্ষেপ নিতে হয়না। এটা আমার শিক্ষা হয়েছে। আমি কিছু মনে করিনি।”
রেশমি আবার বিনয়ী কণ্ঠে বলল,” সরি হ্যাঁ? স্যার কালকে তোমার সাথে যেমন বিহেভ করল আমার খুব খারাপ লেগেছে। তাই ক্ষমা চাইতে আসলাম। আমি এমন আইডিয়া না দিলে তো তুমি এটা করতে না। এক্সট্রিমলি সরি।”
নোরা নকল হাসি দিয়ে বলল,” ইটস ওকে।”
রেশমি চলে যাওয়ার পর অন্তরা আর সেজুতি নোরাকে চেপে ধরল। অন্তরা বলল,” আইডিয়াটা তাহলে রেশমির ছিল?”
নোরা বাধ্য হয়ে স্বীকার করল,” হুম।”
অন্তরা বলল,” তুই এটা আগে বললি না কেন? ও না আসলে তো আমরা জানতেও পারতাম না।”
সেজুতি বলল,” আর এতোকিছুর পরেও তুই ওর সাথে এমন হেসে হেসে কথা বললি? আমি হলে তো সেদিনই গালে থাপ্পর লাগিয়ে দিতাম। তুই খুব বোকা নোরা। ওর এই কথাটা সবার আগে আমাদের সাথে আলোচনা করা দরকার ছিল তোর। তাহলে কালকের মতো দিনটা দেখতে হতো না।”
নোরা বলল,” আচ্ছা বাদ দে না। স্যার তো কিছু মনে করেনি।উনি আমাকে মাফ করে দিয়েছে। এটাই আমার কাছে বড় ব্যাপার। আর কিছু লাগবেনা।”
সেজুতি বলল,” বাদ দেওয়া যাবেনা। তুই এখনি আমাদের সাথে অনিকস্যারের কাছে যাবি। আমরা তিনজন মিলে স্যারকে রেশমির ঘটনা বলবো।”
নোরা বলল,” কোনো দরকার নেই। আমি যাবোনা। বিষয়টা তো শেষ হয়ে গেছে, স্যারও সব ভুলে গেছে। তাহলে কি দরকার আবার নতুন করে সব টেনে আনার?”
সেজুতি বলল,” তাই বলে স্যার সত্যিটা জানবে না?”
নোরা বলল,” না জানবে না।”
অন্তরা বলল,” আচ্ছা থাক বাদ দে তো। ও যখন চাইছে না তখন থাক। নোরা চল আমরা নিচে যাই।”
নোরা বলল,” আচ্ছা শোন, আমি না এখন যেতে পারবো না। একটু ছাদে যাব।”
অন্তরা বলল,” ছাদে কি?”
“কাজ আছে। তোরা আমার ব্যাগটা নিয়ে নিচে চলে যা। আমি দশমিনিটের মধ্যে আসছি।”
নোরা ওদের হাতে ব্যাগ ধরিয়ে ঝড়ের গতিতে ছাদে চলে গেল। সেজুতি আর অন্তরা কিছুই বুঝল না। নোরা ছাদে উঠে দেখল অনিক উপরে উঠে কালো ট্যাংকটায় পা ঝুলিয়ে বসে আছে। অনিককে এতো উঁচুতে দেখে নোরার ভেতরটা ধক করে উঠল। শব্দ করে বলল,”স্যার! এটা আপনি কোথায় উঠেছেন?”
অনিক তাকাল। তারপর দারুণ একটা হাসি দিল,” নোরা, তুমিও এসো।”
” না না আমি আসতে পারবো না। আমার তো দেখেই ভয় লাগছে।”
অনিক হাসতে হাসতে বলল,” দাঁড়াও তাহলে নামছি।”
” আচ্ছা থাক, আপনার নামতে হবেনা। আমিই আসছি।”
” আসতে পারবে?”
” পারব।”
নোরা প্রথমে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠল। তারপর ইটের উপর পাড়া দিয়ে ট্যাংকে চড়ার চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু পারছে না। অনিক হেল্প করল। নোরার হাত ধরে টেনে উঠাল। নোরাও অনিকের মতো পা ঝুলিয়ে বসে পড়ল। নিচের দিকে তাকাতেই নোরার হৃৎস্পন্দন আটকে যাচ্ছে। শরীরের রক্ত হিম হয়ে আসেছে। সবকিছু ক্ষুদ্র মনে হচ্ছে। মাথা ঘুরে যাচ্ছে। শরীর কাঁপছে। ঠান্ডা হাত-পাও কেঁপে কেপে উঠছে।
অনিক এ অবস্থা খেয়াল করে বলল,” কি হয়েছে নোরা? ভয় পাচ্ছো?”
নোরা অলরেডি ভয়ে সিটিয়ে আছে৷ তবুও বলল,” না। ভয় লাগছেনা।”
নোরা এ কথাটা বলল কারণ অনিক তাকে একহাত দিয়ে ধরে আছে। অনিকের স্পর্শ অনুভব করতে পেরে তার প্রতিটা মুহুর্ত দামী মনে হচ্ছে। নিচে নেমে গেলে তো আর এই সুখটা পাওয়া যাবেনা। নোরার চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট।
সেটা লক্ষ্য করেই অনিক বলল,” অবশ্যই ভয় পাচ্ছো তুমি। নাহলে এভাবে কাঁপছো কেন? এতো ভয় নিয়ে বসে থাকার দরকার নেই। চলো নিচে নামি।”
” না। আমি এখানেই বসে থাকতে চাই।”
” পাগলামি করো না নোরা! তোমাকে নিয়ে এখন আমারই ভয় লাগছে।”
” আপনি থাকলে আমার কোনো ভয় নেই। আপনি যদি বসে থাকতে পারেন আমিও পারবো।”
” আমার তো অভ্যাস আছে। তোমার নেই। প্রথমবার আমারও ভয় লেগেছিল। তাই আমি বুঝতে পারছি তোমার কেমন লাগছে। চলো নামো।”
“আপনি এখানে কেন বসেন? জায়গাটা কি ভয়ংকর! যদি পড়ে যান?”
” এখানে নেটওয়ার্ক ভালো আসে। আর বললাম তো আমার অভ্যাস আছে। আমি পড়বোনা। কিন্তু আর কিছুক্ষণ বসে থাকলে তুমি পড়ে যাবে।”
” আমিও পড়বোনা। আপনার যেমন অভ্যাস আছে তেমনি আমারও আপনি আছেন। আপনি আমাকে ধরে থাকুন, তাহলেই আমার কিচ্ছু হবেনা।”
” ইউ আর লস্টেড। কিছু বলেও লাভ নেই।”
” এখানে উঠে কি গার্লফ্রেন্ডের সাথে গল্প করেন?”
” হোয়াট? তোমাকে কে বলল আমি এখানে উঠে গার্লফ্রেন্ডের সাথে গল্প করি?”
” আপনিই বলেছেন।”
” আমি কখন বললাম?”
” মাত্রই তো বললেন, এখানে নেটওয়ার্ক ভালো পাওয়া যায়। মানে নিশ্চয়ই ফোনে কথা বলার জন্য এখানে উঠেন। আর গার্লফ্রেন্ড ছাড়া অন্যকোনো কারণে কেউ এতো কষ্ট করবেনা।”
” নোরা, তোমার কিন্তু অনেক সাহস। স্টুডেন্টদের মধ্যে তুমি ছাড়া কেউ আমার সাথে এভাবে কথা বলেনা।”
“সাহসটা তো আপনিই দিয়েছেন?”
” তাহলে কি চাও সাহসটা কেঁড়ে নেই?”
” না না! একদমই না। সেটা কেন চাইবো?”
” তাহলে নিজেকে সামলাও। নাহলে মরবে।”
” মরবো কেন?”
” তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার দায়িত্ব নেইনি আমি। এখন নামো।”
এ কথা বলেই অনিক ট্যাংক থেকে নামতে লাগল। নোরা বলল,” একি আপনি নেমে যাচ্ছেন কেন? আমার কি হবে?”
” আমি নামার পর তুমি নামবে।”
অনিক নিচে নেমে নোরাকে বলল,” এসো নামো।”
“কিভাবে নামবো?”
“যেভাবে উঠেছো সেভাবেই নামবে! পাথরে ভর দিয়ে নামো।”
নোরা তাই করছে। কিন্তু তার পা পাথর পর্যন্ত পৌছাচ্ছে না। নোরা বিরক্ত হয়ে বলল,” উফফ আমার পা কি আপনার মতো জিরাফের পা? আমি কিভাবে পাথরে ভর দিবো?”
” তাহলে উঠেছো কিভাবে?”
” আপনি আমাকে টেনে উঠিয়েছেন। ”
অনিক বাধ্য হয়ে হাত বাড়িয়ে দিল।বলল,” আচ্ছা এসো।”
নোরা চোখ বড় করে বলল,” কোলে নিবেন নাকি?”
অনিক তেতে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে হাত গুটিয়ে নিয়ে বলল,,” বসে থাকো। আমি মই খুজে আনছি।”
” এই না না না! প্লিজ প্লিজ, মই আনবেন না। আপনি মই আনতে আনতে আমি হার্টঅ্যাটাক করে মরে যাব।”
” তাহলে কি করবো?”
নোরা লাজুকমুখে বলল,” যেটা করছিলেন সেটাই করুন।”
অনিকের গম্ভীরমুখে বলল,” তাহলে মুখটা বন্ধ রেখে এসো।”
অনিক পাথরে পাড়া দিয়ে উঁচু হল। নোরা অনিকের গলা জড়িয়ে ধরল। অনিক নোরাকে পাজাকোলা করে নিচে নামালো। এই কয়েক সেকেন্ডে নোরার সম্পুর্ণ শরীর বেয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হল। কোনো এক সুখময় অনুভূতিতে তার চোখে পানিও চলে এসেছে। হৃৎস্পন্দনের গতিবিধি তুমুলে। মনে হচ্ছে, এই অবস্থায় মরে গেলেও তার কোনো আফসোস থাকবেনা!
চলবে