প্রিয়তার প্রহর ২ পর্ব-১০

0
564

#প্রিয়তার_প্রহর (২য় পরিচ্ছেদ)
পর্ব সংখ্যা (১০)

দরজার অপর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মহিলাকে প্রিয়তা চেনে না। আগে কখনো দেখেছে বলে মনেও হয় না। কিন্তু মহিলার আচরণ অন্যরকম। হাসি হাসি মুখে প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে আছেন তিনি। অপেক্ষায় আছেন প্রিয়তার ঘরে ঢুকতে বলার আহ্বানের। প্রিয়তা বুঝতে পারে। দরজার কাছ থেকে সরে গিয়ে বলে,

” ভিতরে আসুন। ঘরে বসে কথা বলি।

মহিলা সময় ব্যয় করলেন না। জুতো খুলে প্রবেশ করলেন ঘরে। আশপাশে নজর বুলালেন। প্রিয়তা উনাকে বসতে দিল খাটে। পা ঝুলিয়ে খাটে বসলেন মহিলা। বললেন,

” তোমার কাছে আসবো আসবো করে আসাই হচ্ছিল না। আজ দুপুরের বাসে তাই চলে এলাম।

প্রিয়তা দু হাত বুকের কিঞ্চিত নিচের অংশে ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে থাকে। ইশারায় আরহামকে কাছে ডাকে। আরহাম খাট থেকে নেমে প্রিয়তার কাছে আসে। প্রিয়তা কণ্ঠ খাদে নামিয়ে বলে,
” সেদিন যে চানাচুর এনেছিলাম। সব খেয়েছো?

আরহাম হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ে। প্রিয়তা বিরক্ত হয় খানিক। পুনরায় জিজ্ঞেস করে,
” বিস্কিট আছে তো? প্লেটে করে কয়েকটা বিস্কিট নিয়ে এসো।

আরহাম নীল রঙের কিচেন র‌্যাক থেকে বিস্কিট এনে সম্মুখে রাখে মহিলার। মহিলা আরহামের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,
” তোমার ছবি আমি দেখেছি। তাই তোমাকে চিনতেও অসুবিধে হয়নি।

প্রিয়তা বুঝতে পারে মহিলার কথার মানে। আসল কথায় আসে বলে,
” আপনি যেহেতু বলেছেন আমাকে যিনি চিঠি লিখেন তারই মা আপনি, সেহেতু আপনি জানেন আপনার ছেলে আমাকে চিঠি দেন। কেন উনি আমাকে চিঠি দেন সে প্রশ্ন আমি করবো না। কারণ আমি প্রাপ্তবয়স্ক। উনার এইসব লেখার মানে আমি বুঝি। প্রশ্ন একটাই, আপনি আপনার ছেলেকে এসব লিখতে নিষেধ করেননি কেন?

মহিলা হাসেন। বলেন,
” আমার ছেলেটা তোমাকে পছন্দ করে।

পরবর্তী কথাটুকু বলতে দেয় না প্রিয়তা। বলে,
” আপনি সরাসরি বলতে পারেন আন্টি। আপনার ছেলে আমাকে শুধু পছন্দ করেন না, ভালোও বাসেন। রাস্তায় তো অনেক সুন্দর সুন্দর মেয়ে দেখা যায়। সবাইকেই তো দেখতে ভালো লাগে কিংবা অনেককেই দেখে পছন্দ হয়ে যায়। তাই বলে কি তাদের সবাইকে চিঠি লিখা যায়? না তো? আপনার ছেলের লেখা অনুযায়ী বুঝেছি আমাকে উনি বিয়েও করতে চান। এ ধরনের কথা লেখা কি আদৌ যৌক্তিক?

মহিলা ততক্ষণাৎ বলে ওঠেন,
” আমি তোমাদের বিয়ের কথাই বলতে এসেছি। ওর মুখে শুনেছি তোমার বাবা-মা থেকেও নেই। তুমি নিজেই তোমার গার্ডিয়ান। তাই তোমার কাছে এসেছি। তুমি আমার ছেলেকে চিনবে। রাজি হবে আশা করি।

” সিলেটে থাকাকালীন সময়ে চিঠি পেতাম। এখানে আসার পর ও চিঠি পেয়ে আমি বুঝেছিলাম উনি আমার পিছু এত সহজে ছাড়বেন না। চেষ্টা করলেই হয়তো চিঠি প্রেরণকারীকে আমি ধরতে পারতাম। কিন্তু আমার মনে হয়েছিল চিঠির উত্তর না দিলে প্রেরণকারী আর চিঠি লিখবেন না একসময়।

মহিলা প্রিয়তার কাঠকাঠ কণ্ঠ শোনেন মনোযোগ দিয়ে। অতঃপর দরজার বাইরে তাকান। খোঁজেন কাউকে। প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে বলেন,

” আমার ছেলে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। তুমি অনুমতি দিলে ভিতরে আসবে।

প্রিয়তা থমকায়। মহিলার মার্জিত দৃষ্টিভঙ্গি ভালো লাগে তার। দরজার সম্মুখে এসে হাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,

” আসুন।

সাথে সাথেই একজন সুঠাম দেহের ছেলে বিনীত ভঙ্গিতে দরজার অপর প্রান্তে এসে দাঁড়াল। ছেলেটার পরণে লাল-কালো শার্ট। আগোছালো কোকড়া চুল। প্রিয়তা তীক্ষ্ম চোখে লোকটার পানে তাকায়। কেমন চেনা চেনা লাগে ছেলেটাকে। ঘরে ঢোকার আহ্বান জানায় প্রিয়তা। মায়ের পাশে গিয়ে বসে ছেলেটা। প্রিয়তা একটু ভেবে বলে,

” আপনাকে আমি পুলিশ ইউনিফর্মে দেখেছি। কখন, কোথায় দেখেছি ঠিক মনে করতে পারছি না।

ছেলেটা প্রিয়তার দিকে গাঢ় দৃষ্টিতে তাকায়। একটু হেসে বলে,
‘ তোমার স্মৃতিশক্তি বেশ ধারালো। তোমার সাথে আমার মাত্র একবারই দেখা হয়েছে। প্রহর স্যারের বাড়ির মাঠে ব্যাটমিন্টন খেলার সময় তোমার সাথে কথা হয়েছিল। মনে আছে আমি কথা বলতে এসেছিলাম তোমার সাথে? তোমার সব তথ্য আমিই যোগাড় করে স্যারকে দিয়েছিলাম।

প্রিয়তার মনে পরে। এই ছেলেটাই কয়েক মাস আগে রাতে ব্যাটমিন্টন খেলতে এসেছিল প্রহরের বাসায়। আরহামকে ডাকতে প্রিয়তা গিয়েছিল খেলার স্থানে। ছেলেটা তখন যেচে কথা বলতে এসেছিল। পরিচয় দিয়েছিল। কি যেন নাম বলেছিল নিজের? ভাবল প্রিয়তা। মনে পরল একটু পর। সন্দিহান চোখে জিজ্ঞেস করল,

” আপনি সোহেল?

” হ্যাঁ। চিনেছো তবে।

প্রিয়তা কি বলবে ভেবে পায় না। সোহেলের মা বলে ওঠেন,

” আমি তোমাকে আমার ছেলের বউ বানাতে চাই। তুমি যদি রাজি থাকো..

প্রিয়তা ততক্ষণাৎ উত্তর দেয়,
” দুঃখিত আন্টি। আমায় ক্ষমা করবেন। আমি একজনকে ভালোবাসি। এ মাসের মধ্যে আমরা দুজন বিয়ে করবো। আপনার প্রস্তাব আমি গ্রহণ করতে পারবো না।

মহিলা অবাক হন। পাশ ফিরে তাকান ছেলের দিকে। গম্ভীর কণ্ঠে বলেন,
” তুমি তো বলেছিলে ওর কোনো সম্পর্ক নেই।

সোহেল ছেলেটা হকচকিয়ে তাকায় প্রিয়তার পানে। প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে বলে,
” তুমি তো রিলেশনশীপে ছিলে না।

প্রিয়তা মাথা নত করে বলে,
” কিছুদিন আগেই আমি আমার জীবন সঙ্গী নির্বাচন করেছি। প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছি উনার সাথে। কোনোভাবেই এই সম্পর্ক আমি ঘুঁচিয়ে ফেলতে পারবো না।

” কে সে? কার সাথে..

” আজওয়াদ ইশতিয়াক প্রহর।

” প্রহর স্যার? অবাক কণ্ঠে বলে উঠে সোহেল।

” জি

সোহেল উঠে দাঁড়ায়। প্রিয়তার সাথে অনেক কথা থাকলেও মায়ের সম্মুখে বলতে পারে না সে কথা। মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,

” এ ব্যাপারে আমি ওর সাথে পরে একসময় কথা বলে নিবো আম্মু। আজ চলে যাই।

মহিলা আরহামের দিকে তাকিয়ে হাসেন। ঘুরে চলে যাবার পূর্বে সোহেল বলে ওঠে,

” আর কয়েকদিন আগে তোমার সামনে আসলে হয়তো তুমি আমারই হতে।

ছেলেটার করুণ কণ্ঠে প্রিয়তা হকচকিয়ে ওঠে। ভারী বিচলিত হয়। কথা কাটাতে মহিলার উদ্দেশ্যে বলে,

” আজই সিলেটে চলে যাবেন?

মহিলার ফ্যাকাশে মুখশ্রী দেখে ভাঙে প্রিয়তা। ভদ্রতাসূচক এটুকু বলে ইচ্ছে করেই। মহিলা চাপা স্বরে বলেন,
” সোহেলের এক বন্ধু থাকে এখানে। ওর বাসায় উঠবো। সকালে চলে যাবো।

” বিস্কিট খেলেন না?

” দশটা বেজে গেলে ওর বন্ধুর বাড়িতে তালা মেরে দেওয়া হয়। আমাদের আগেই পৌঁছাতে হবে।

” উনি উনার বন্ধুর বাড়ি যাক। আপনার কোনো সমস্যা না হলে আপনি আমাদের সাথে থাকতে পারেন। আমরা দু ভাই-বোনই শুধু এখানে থাকি।

মহিলা ছেলের দিকে তাকান। সোহেলের বন্ধু থাকে ব্যাচেলর হিহেবে। বন্ধু আর বন্ধুর মাকে রাখতে ছেলেটার অসুবিধা হতে পারে। খানিক ভেবে মহিলা বলে ওঠেন,

” ঠিক আছে। আজ রাতটা আমি এখানেই থাকবো।

_________

রাত দশটা নাগাদ ইহান থানা থেকে বের হয়। কাজের চাপ কমেছে কিছুটা। সবটা গুছিয়ে ফিরতে রাত হলো একটু। থানা থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠে ইহান। ফোন চেইক দেয়। মেসেঞ্জারে মেসেজের টুং শব্দ বেজে ওঠে। ইহান মেসেঞ্জারে ঢুকে তানিয়ার মেসেজ পায়। তানিয়া লিখেছে,

” আন্টি আজ মাথায় তেল দিতে চাইল, তেল তো নেই। আপনি কি মাথায় তেলটেল কিছু দেন না? আদা বাটা তো কই? ফ্রিজে তো নেই। রাঁধবো কিভাবে? মেয়েদের শ্যাম্পুও তো নাই ঘরে। বাড়িতে দুটো মেয়ে মানুষ আসছে আপনার চোখে পরে না? আসার সময় মনে করে এগুলো আনবেন। নিচে লিস্ট দেওয়া হলো,

১| তেল
২| শ্যাম্পু
৩| আদা
৪| আইসক্রিম।

ইহান ভ্রু কুঁচকে ফেলে। তানিয়ার এমন মেসেজে বিস্ময় ধরে রাখতে পারে না। রিপ্লাই করে,

” সব ঠিক আছে। এই রাতে আইসক্রিম কেন? আমি পারবো না আজগুবি আবদার মেটাতে।

তানিয়া অনলাইনেই ছিল। মেসেজটা দেখার সাথে সাথে সেও রিপ্লাই করে,

” আগের দিন চটপটি এনেছিলেন, দোকানদার টকজল দিয়েছিল একটুখানি। খেতে ভালো লাগেনি। আজ আইসক্রিম আনবেন। দরজা টোকা দিলে আমি দরজার ফুঁটো দিয়ে আইসক্রিম দেখে তবেই দরজা খুলবো। নইলে আজকে বাড়িতে ঢুকতে দিবো না আপনাকে। ঘাড়ত্যাড়ামি করবেন না খবরদার।

ইহান হেসে ফেলে তানিয়ার এমন মেসেজ দেখে। হাসে একটু। গাড়ি দাঁড় করিয়ে লিস্ট দেখে সবকিছু কিনে। সকালের রাগটা এই রাতে এসে উধাও হয়ে যায় ইহানের।

____

সিলিন্ডারের গ্যাসে রান্না করছে প্রিয়তা। পাশে বসে আরহাম আর সোহেলের মা রাবেয়া খানম গল্প করছেন। আরহাম মুগ্ধ হয়ে গল্প শুনছে। মাঝেমাঝে এটা ওটা প্রশ্ন করছে। প্রিয়তার ফোন বেজে ওঠে। প্রহরের ফটো স্ক্রিনে ভেসে ওঠে। প্রিয়তা কিঞ্চিত অসস্তি নিয়ে কলটা ধরে। বলে,

” হু বলুন।

প্রহর গিয়েছিল রিজাইন দেওয়ার কিছু ফর্মালিটিস পূরণ করতে। ফিরেই প্রিয়তার খোঁজ নিতে ইচ্ছে হয়েছে তার। তাইতো এত রাতেও ফোন দিল প্রিয়তাকে। প্রিয়তার উক্ত কথায় সে বলে ওঠে,
” কি করছেন ম্যাডাম? মিস করেননি আমাকে?

প্রিয়তা হেসে ফেলে এমন সম্বোধনে। বলে,
” দুপুরেই তো দেখা হলো। মিস করবো কেন?

‘ আমি চাই আপনি আমাকে প্রতি সেকেন্ডে সেকেন্ডে মিস করুন।

” বুঝেছি বুঝেছি। ফোন রাখুন এখন।

” কেন?

” কাজ করছি।

” এত রাতে?কি কাজ?

” রান্না করছি। মেহমান এসেছেন। ভালোমন্দ রান্না না করলে চলে?

” মেহমান? কে? বিচলিত কণ্ঠে বলে প্রহর।

প্রিয়তা তরকারিতে ঝোল দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দেয়। আরহামদের থেকে দূরে সরে আসে। প্রহরকে হঠাৎই জ্বালাতে ইচ্ছে হয় প্রিয়তার। মুচকি হেসে লাজুক ভঙ্গীতে বলে,

” আমার না হওয়া হবু শাশুড়ি এসেছেন।

প্রহরের ললাটে ভাঁজ পরে। ওষ্ঠাদ্বয় চেপে ধরে দাঁত দ্বারা। চোয়াল শক্ত করে বলে,

” হবু শাশুড়ি? কি বলছেন?

” একটা আন্টি এসেছেন বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। উনার ছেলের বউ হিসেবে আমাকে চাইছেন। এত রাতে নাকি আবার সিলেটে ফিরে যাবেন। এটা কেমন বেমানান দেখায় তাইনা বলুন? এজন্যই তো আমি বললাম আজ রাতটা আমাদের ঘরে থেকে যেতে।

প্রহর বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে জড় বস্তুর মতো। প্রিয় মানুষের এহেন কথায় বিচলিত হয় ছেলেটা। বলে,
” আপনি বলেননি আপনার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে?

প্রিয়তা উত্তর দেয় না। প্রহর উত্তেজিত হয়। কণ্ঠে দৃঢ়তা আসে। বলে,

” আমরা আগামীকাল বিয়ে করবো প্রিয়তা। তৈরী হয়ে থাকবেন।

প্রিয়তা চমকে উঠে। ততক্ষণাৎ বলে,
“আরেহ্! আমি বলেছি আপনার কথা। চিন্তা করবেন না।

” আমি কোনো কথাই শুনবো না। এমন দুষ্টুমি করার জন্য আপনাকে আদুরে শাস্তি দিতে চাই। রাখছি। টা টা।

কল কাটে প্রহর। হতভম্ব চোখে ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকে প্রিয়তা। আরহাম ডাকে। ছুটে আসে ঘরে। প্রহরের কথাগুলো কানে বাজতে থাকে। লজ্জা পায় প্রিয়তা। নত হয় মুখশ্রী। রক্তিম হয় নাকের মাথা। চোখ বন্ধ করে শ্বাস নেয় ঘনঘন। চোখের পাতায় ভেসে ওঠে প্রহরের মুখটা। লাজুক হাসে প্রিয়তা।

____

সকাল সকাল রাবেয়া খানম বাসে উঠলেন। সোহেল ছেলেটা তার মাকে বাসে উঠিয়ে দিল দায়িত্বের সাথে। সোহেল এখান থেকে যাবে না হয়তো। বুঝতে পেরে খানিক বিরক্ত হলো প্রিয়তা। স্টেশনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে তারা। মেহমান বাড়ি থেকে চলে গেলে তাকে এগিয়ে দিয়ে আসতে হয়। ভদ্রতাসূচক সেটুকু করতে স্টেশনে এসেছে প্রিয়তা। গতরাতে মাছ রান্না করে খাইয়েছিল রাবেয়া খানমকে। মহিলা যথেষ্ট বিনীত এবং মার্জিত আচরণ করেছেন প্রিয়তার সাথে। আরহামের সাথেও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন কয়েক ঘন্টায়। আরহামকে যারা ভালোবাসে প্রিয়তাও তাদের ভালোবাসে। তাদের প্রতি কোনো রাগ থাকে না প্রিয়তার।

জানালার পাশের সিটে বসেছেন রাবেয়া খানম। মাথা বের করে প্রিয়তাকে ডাকলেন তিনি। প্রিয়তা এগিয়ে গেল। বাসের জানালার দিকে তাকিয়ে রইল। মহিলা হাসি মুখে বললেন,

” তোমার সম্পর্কে সব শুনেছি। আমার ছেলের ভাগ্যে হয়তো তুমি নেই। আমার ধারণা তুমি যার জীবনে যাবে তার জীবনকে আনন্দময় করে তুলতে পারবে।

প্রিয়তা হাসে। মাথা নত করে। বলে,
” উনাকে আপনার সাথে নিলেন না?

” ওর তোমার সাথে নাকি কথা আছে। সে কথা হয়ে গেলেই ও চলে যাবে। আমি কথা দিচ্ছি ও তোমাকে বিরক্ত করবে না।

প্রিয়তা মানে। বাস ছেড়ে দেয়। আরহামকে নিয়ে বাড়ির দিকে ফিরে প্রিয়তা। সোহেল পিছু পিছু হাঁটে। প্রিয়তার অসস্তি হয়। কাঠকাঠ কণ্ঠে সে বলে ওঠে,

” আপনি আমার আশেপাশে না থাকলে আমি খুশি হবো। আপনি আমার সাথে কিছু কথা বলতে চান তাইতো? আরহামের সামনে আমি এসব বিষয়ে আলোচনা করতে চাই না। একটা সময় নির্ধারণ করুন।

সোহেলের পা থামে। লজ্জিত হয় ছেলেটা। বলে,
” আমি তোমাকে সময়টা জানিয়ে দিবো।

” ঠিক আছে।

________

প্রীতিলতা রান্না-বান্না করে ঘরে ঢুকেছে মাত্র।আজিজ ঘুমে এখন। ডাকতে হবে তাকে। প্রীতি স্বামীর পাশে গিয়ে বসে। নম্র কণ্ঠে ডাকে,

” শুনছো? ওঠো। অফিসে যাবে না?

আজিজ উঠে বসে খানিক সময় নিয়ে। প্রীতির হুট করেই গা গুলিয়ে ওঠে। বমি-বমি ভাবটা আবার ও জেগে ওঠে। তন্ত্র পায়ে ওয়াশরুমে গিয়ে বমি করে দেয় প্রীতি। শরীরে ক্লান্তি ছেয়ে যায়। ঘরে ফিরে উবু হয়ে শুয়ে পরে বিছানার মাঝ বরাবর। চিন্তিত হয় আজিজ। স্ত্রীর কাছে এসে জিজ্ঞেস করে,

” গ্যাস হয়েছে নাকি?

প্রীতি অশ্রুসজল চোখে স্বামীর পানে চায়। ধীরে ধীরে উঠে বসে। ওয়ারড্রবের সম্মুখে এগিয়ে যায়। ড্রয়ার খুলে একটি কাগজে পেঁচানো বস্ত এগিয়ে দেয় আজিজের দিকে। আজিজ দ্রুত খুলে দেখে বস্তুটা। প্রেগনেন্সি কিট দেখে কিছুটা চমকে ওঠে। লাল দুটো দাগ দেখে বিমূঢ় নয়নে তাকায় স্ত্রীর পানে। বলে,

” তুমি প্রেগন্যান্ট?

প্রীতির চোখেমুখে খুশির চিহ্ন নেই। কেমন মলিন দেখাচ্ছে তাকে। স্বামীর এহেন প্রশ্নে বিরক্ত হয় সে। বলে,

“দেখতেই তো পাচ্ছো।

আজিজ দ্রুত প্রীতির নিকটে এসে চুমু খায় প্রীতির গালে। জড়িয়ে ধরে। খুশিতে উচ্ছ্বসিত হয় আজিজের হৃদয়। বলে,

” কবে জানতে পেরেছো? আমায় বলোনি কেন?

প্রীতির ভাবভঙ্গি বুঝতে পারে না আজিজ। এত খুশির একটা খবর দেওয়ার সময় প্রীতির মুখটা এমন ফ্যাকাশে করে রাখার কারণ কি? ততক্ষণাৎ বাইরে গিয়ে মাকে ডেকে আনে আজিজ। প্রীতির শাশুড়ি ছুটে এসে আনন্দের সাথে বলে,

” তুমি আমারে আগে কইবা না আমার নাতি-নাতনি আইবো? আমার নাতি-নাতনির লগে আমি খেলমু। আমার অনেক দিনের স্বাধ। বহো বহো। আজ থাইকা কোনো কাম করা লাগবো না তোমার।

প্রীতির চোখ ভরে ওঠে নোনাজলে। মা হবার অনুভূতি তার কাছে নতুন নয়। এর আগেও সে গর্ভে প্রিয়তা আর আরহামকে ধারণ করেছিল। তাদের প্রতি যে ভালোবাসা ছিল সেসময়, এই সন্তানের প্রতি সেই ভালোবাসা জাগছে না প্রীতির। প্রিয়তা আর আরহাম আসার সংবাদ পেয়ে যতটা খুশি হয়েছিল, তার বিন্দু পরিমাণ আনন্দ ও এখন হচ্ছে না। প্রীতির শাশুড়ি দ্রুত যান আচার আনতে। আজিজ প্রীতির চোখের পানি খেয়াল করে। রাগে হয় তার। ক্ষুদ্ধ কণ্ঠে বলে,

” অন্যের বাচ্চা পেটে রাখতে খুব ভালো লাগে তাইনা? আমার বাচ্চা তোমার পেটে আইছে তাই ভালো লাগতেছে না। আনন্দ নাই। আরিফের বাচ্চা পেটে রাখতে খুব ভালো লাগছে। এতই যখন আগের সন্তানদের প্রতি দরদ, তাইলে আসলি কেন আমার কাছে? ঢং করস তুই। মা*গী

ধপ করে বিছানায় শুয়ে পরে প্রীতি। ফুঁপিয়ে উঠে নিঃশব্দে। এত কষ্ট কেন হচ্ছে তার? নবজাতকের প্রতি ভালবাসা দেখাতে কেন পারছে না সে? কেন আনন্দ হচ্ছে না?

চলবে?
লেখনীতেঃ #বৃষ্টি_শেখ

[ রি-চেইক দিই নাই ]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে