#প্রিয়তার_প্রণয়
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_০৬
রুমে সাথে সাথে লাইট অন হয়ে গেলে সানি পিছনের দিকে তাকিয়ে ইয়াশকে দেখতে পায়।
— আ আ আপনি?
— আমার রুমে আমি থাকবো না তো কে থাকবে তুমি থাকবে? ভাই দুই মিনিটের জন্য ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম এর মধ্যেই এসব!
যে তোমাকে পছন্দ করে না শুধু শুধু কেন তার পিছনে পড়ে থাকো তোমরা বল তো? মানে পৃথিবীতে আর কোন মেয়ে নেই এই একজনকেই তোমাদের পছন্দ হতে হয়? কত কিছুই তো পছন্দ হয় কতকিছুই তো নিজের সাধ্যের বাইরে থাকে তাই বলে কি সেটা সবাই পাওয়ার চেষ্টা নাকি এই যে তোমার মত এরকম করে?
— না মানে…
ইয়াশকে দেখে প্রিয়তা বিছানা থেকে উঠে দৌঁড়ে গিয়ে ইয়াশের সামনে চলে যায়। ইয়াশ একটানে প্রিয়তার হাতের আর মুখের কাপড়ের বাধন খুলে দিতেই প্রিয়তা তাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়। ইয়াশের হৃদক্রিয়া বেড়ে যায়, প্রথম ছোয়া পেয়ে একটা শিহরন বয়ে যায় তার শরীরে। তাড়াতাড়ি করে প্রিয়তার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয় ইয়াশ।
— তুই ভয় পাচ্ছিস কেন, আমি তো আছি তাই না!আর শোন, এভাবে কাউকে কখনো জড়িয়ে ধরবি না অন্তত পুরুষ জাতি থেকে দূরে থাকবি। তুই যা নিজের রুমে যা, আমি দেখছি বিষয়টা।
প্রিয়তা কান্না করতে করতে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। ইয়াশ যদি ঠিক সময়ে না আসতো আজকে তাহলে কি হতো তার! আজকে যে সব হারিয়ে ফেলতো।
— তো এবার আপনি বলেন কাকে কল দেব এখন আমি? আপনি তো রে*’প করার চেষ্টা করেছেন।
— প্লিজ ভাইয়া, আমাকে মাফ করে দেন। এরকম কাজ আমি আর কখনও করব না।
— কখনও করার কথা তো পরের ব্যাপার, তোর সাহস কি করে হলো প্রিয়তার শরীরে হাত দেওয়ার? খুব শখ না তোর ওকে পাওয়ার! কোথায় কোথায় স্পর্শ করেছিস যেন হাতে আর কাধে তাই না? দেখ আমি তোর কি অবস্থা করি আজ। এরপর থেকে প্রিয়তার সাথে কিছু করা তো দূরের কথা তার দিকে তাকাতেও যেন দুইবার ভাবতে হয়।
কথাগুলো বলতে বলতে ইয়াশ সানিকে মা*’রতে শুরু করে।
________________________________________
— মা আসবো? (ইয়াশ)
— হ্যাঁ আয়, কিছু বলবি?
— হ্যাঁ বলতাম বাবা কোথায়?
— তোর বাবা তো তোর ছোট কাকার ঘরে গেল।
— কেন কোন দরকার ওখানে?
— হ্যাঁ দরকারই তো, দরকার ছাড়া কি তোর বাবা কোথাও যায় কখনো দেখেছিস সেটা?
— আচ্ছা এত রাতে কিসের দরকার এখন আবার কেন ওখানে গেল?
— তোর বিয়ের কথা বলতে গেল।
— আমার বিয়ের কথা বলতে!! আমার বিয়ের কথা বাবা ওখানে কেন বলবে? আমার বিয়ের কথা আমি কেন জানি না?
— তুই কেন জানবি না? ছোটবেলা থেকেই তো জেনে আসছিস ।
— মানে?
— আমি তো ছোটবেলায় তোর সাথে প্রিয়তার বিয়ে ঠিক করে রেখেছি। (কথাটি শুনেই ইয়াশের মুখে হাসির রেখা দেখা যায়, এ যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি)
— মা, এটা কি প্রিয়তা জানে? বাবা কখন গেল ওখানে?
— মাত্রই গেল।
— তাড়াতাড়ি এসো তো।
— কেন?
— আরে এসো তো পরে বলছি।
ইয়াশ আর তার মাকে দেখে ইয়াশের বাবা বলে ওঠে ঐ তো ইয়াশ আর তার মাও চলে এসেছে তাহলে এবার ভালো করে কথা বলা যাবে।
— ইয়াশ এসো এখানে বস।
— আমরা অভিভাবকরা কথা বলছি ঠিক আছে ভাই কিন্তু ইয়াস কি রাজি হবে? (প্রিয়তার বাবা)
— রাজী হবে না মানে আমরা ওদের ছোটবেলা থেকে বিয়ে ঠিক করে রেখেছি। ওরা সেটা জানে, এমন তো না যে সেটা জানানো হয় নি। প্রিয়তাকে আমার ছেলের বউ বানাবো এটা আমার অনেক দিনের ইচ্ছে আর এটাই আমার শেষ কথা।
— তবুও ভাই ইয়াশের থেকে জেনে আমাদের এই বিষয়ে এগোনো ভালো হবে। দুজনই এখন বড় হয়েছে, তাদের পছন্দ অপছন্দের ব্যাপার নিশ্চয়ই আছে। আমরা বাবা মায়েরা তো তাদের ওপর চাপিয়ে দিতে পারি না কিছু।(প্রিয়তার মা)
— হ্যাঁ ছোট তুই এটা নিয়ে একদম চিন্তা করিস না। আমার ছেলে এই বিয়েতে রাজি।(আঞ্জুয়ারা)
— হ্যাঁ আমি জানি আমার ছেলে রাজি, তোদের বিষয়টা বল এবার।(সামির, ইয়াশের বাবা)
— ভাই আমাদের ও তো কোন আপত্তি নেই।(সাজিদ)
— তবুও ইয়াশের মুখ থেকে শুনে নিলে ভালো হত।(রমেলা, প্রিয়তার মা)
— চাচি, আমার কোন আপত্তি নেই বিয়েতে। তবে এখনই বিয়ে করতে চাইছি না। আর দুই এক বছর যাক। ওর শহরে পড়ার ইচ্ছে, আমি ওকে ভর্তি করে দেব বলে কথা দিয়েছি। আমি বাসা ও ঠিক করে দেব, ওর সব দায়িত্ব আমার। আপনারা ওকে নিয়ে কোন চিন্তা করবেন না।
— তাহলে বিয়েটা পড়িয়ে রাখা ভালো নয় কি ইয়াশ? তাহলে প্রিয়তা আমাদের সাথেই থাকতো।(আঞ্জুয়ারা)
— না মা ক’দিন দেরি করি তার মনের অবস্থাও তো আমাকে জানতে হবে।
— আচ্ছা সমস্যা নেই, আমরা রাজি। তাহলে তুমিই ভালো একটা কলেজে ভর্তি করে দাও। তোমার ওপর আমাদের ভরসা আছে, বিয়েটা দুই বছর পরেই হোক।(সাজিদ)
— আচ্ছা তোদের যেহেতু কারও কোন আপত্তি নেই তাহলে আমিও রাজি।
সবার মুখে খুশির ঝলক দেখে ইয়াশের ও ভালো লাগে। বড়রা মিলেই যে তার ভালোবাসার মানুষকে কাছে এনে দিবে এটা সে ভাবতেই পারে নি। বড়রা কথা বলতে থাকে, ইয়াশ রুম থেকে বের হয়ে যায়।
নিজের রুমে যাওয়ার সময় খেয়াল করে প্রিয়তার রুমের দরজা খোলা। ভেতরে উঁকি দিতেই দেখে প্রিয়তা রুমে নেই। ইয়াশ এবার আগ্রহ নিয়ে রুমে ঢুকে যায়, কখনো প্রিয়তার রুমে আসা হয় নি তার। রুমের এপাশে ওপাশে দেখতে থাকে, হঠাৎ টেবিলে বাম পাশে রাখা ডায়েরির ওপর চোখ যায়। ওপরে বড় বড় করে “প্রিয় পুরুষ” লেখাটা দেখে ইয়াশের আগ্রহ জাগে ভেতরে কি আছে তা দেখার জন্য। ডায়েরিটা নিয়ে নিজের রুমে রেখে ছাদে চলে যায় ইয়াশ, কারণ প্রিয়তার এখন ছাদে থাকারই কথা। আর আজকে ওর সাথে যা হতে যাচ্ছিলো হয়তো সে অনেক ভয় পেয়েছে।
পিছনে কারও পায়ের শব্দ শুনে ঘুরে তাকায় প্রিয়তা।
পিছনে তাকিয়েই দেখতে পায় সেই চিরচেনা মুখটা। কয়েকদিনের অভিমানে প্রিয় এখন খুব চেষ্টা করে ইয়াশের থেকে নিজেকে দূরে রাখতে। তবুও যে এই ছেলে তার আশেপাশে থাকলে সমস্ত শরীর অবশ হয়ে যায়, নড়াচড়া করার শক্তি হারিয়ে ফেলে প্রিয়তা। আর আজকে তার কারও উপস্থিতিই যেন ভালো লাগছে না, মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরছে কি হতো আজকে তার!
ইয়াশ কাছাকাছি এলে প্রিয় চোখের পানি মুছে চলে যেতে লাগলে ইয়াশ তার হাতটা ধরে থামিয়ে দেয়।
— আহ….!!
— কি হলো?(ইয়াশ হাত ধরতেই প্রিয় চিৎকার দিয়ে ওঠে।)
— কিছু না।
— দেখি দেখতে দে আমায়।
— কিছু হয় নি ছাড়ুন, রুমে যাব। কেউ দেখলে খারাপ ভাববে এত রাতে আমাদের একসাথে ছাদে মানায় না।
— হাতের এই অবস্থা কিভাবে হলো?
— কিছু হয় নি।
— স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, হাতের এখানে কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে।
— আমার শরীরটা আমার স্বামীর জন্য রেখে দেওয়া আমানত। আর আজকে তার..……
কথা শেষ করতে পারে না প্রিয়তা, শব্দ করে কান্না করে দেয়। প্রিয়তাকে এভাবে কান্না করতে দেখে ইয়াশের খুব কষ্ট হচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো প্রাণপাখিটাকে আর দূরে রাখা ঠিক হচ্ছে না। সে যে তার প্রিয় মানুষটির থেকে আর দূরে থাকতে পারছে না। তাকে কান্না করা বাদে সবকিছুতেই মানায়, প্রিয়তার চোখের পানি সহ্য করতে পারছিল না ইয়াশ।
— কি এমন হয়েছে তোর যে এভাবে কান্না করতে হবে?
— আপনি বুঝবেন না ইয়াশ ভাইয়া।
— আমিও তো তোর হাত ধরলাম, গা ঘিনঘিন করছে না? আমার ছোয়ায় নোংরামি অনুভব করিস না?
— সব ছোয়াতে সবকিছু থাকে না।
— তুই অনেক ছোট, তাই এটুকুতেই এত খারাপ লাগছে।
— আমাকে আর কতদিন আপনার চোখে ছোট লাগবে? আমি কি বড় হয়ে যাই নি! বাসায় আমার বিয়ের কথা চলছে, হয়তো পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে। আবার আজকেই এতকিছু ঘটে গেল।
— কিছু হতে দেই নি তো তাই না?(প্রিয়তার অনেকটা কাছে এসে)
এত এত মন খারাপের মাঝেও এবার যেন হৃৎপিন্ডটা বের হয়ে আসার মতো অবস্থা। প্রিয়তা পিছনে সরেও যেতে পারছে না।
— এতটুকুর জন্য তোকে কেউ বিয়ে না করলে আমাকে বিয়ে করে নিস বুঝেছিস?
কথাটা শোনা মাত্র প্রিয়তা আর নিজের ভর সহ্য করতে না পেরে পড়ে যেতে লাগলে ইয়াশ ধরে নেয়।
প্রিয়তাও এবার চোখ বন্ধ করে নেয়, ইয়াশ ও এবার সুযোগটা হাত ছাড়া করে না। দেখতেই থাকে প্রিয়তাকে,এত কাছে থেকে যে তাকে কখনও দেখা হয় নি।
প্রিয়তা কোন কথাবার্তা না শুনে চোখ খুলে দেখে ইয়াশ তাকিয়ে আছে, সে তাড়াতাড়ি করে নিজেকে ঠিক করে নেয়। ইয়াশ ও স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়ায়।
— একটা কথা বলার ছিল।
— হ্যাঁ বলেন।
— তোর কি কারও সাথে সম্পর্ক আছে?
— না,এসব কি জিজ্ঞেস করছেন আপনি ভাইয়া!
— তোর বড় ভাই হয়ে কথা জিজ্ঞেস করি নি, এমনি জানতে চেয়েছি বল।
— এমনি ফেসবুকে একটা ছেলে ফ্রেন্ড ছিল, তাছাড়া কেউ নাই।
— কাউকে পছন্দ করিস না?
— হ্যাঁ করি।
প্রিয়তার থেকে এরকম কিছু আশা করে নি ইয়াশ। ক্ষণিকের মধ্যে পরিবেশটা কেমন যেন স্তব্ধ হয়ে গেল। তাহলে লাবণ্য যে বলেছিল প্রিয়তার আমার কাছে না আসার লক্ষণ গুলো নাকি……!!
— আচ্ছা ঠিক আছে, রুমে যা এখন অনেক রাত হয়ে গিয়েছে।
— আচ্ছা ঠিক আছে।
প্রিয়তা রুমে চলে যায় আর ইয়াশ সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। শুধু ভাবতে থাকে তার এত দিনের আবেগঘন ভালোবাসা সব আজকে মিথ্যা হয়ে গেল! একটা স্বীকারোক্তিতে সবকিছু মিথ্যা হয়ে গেল! সে এতদিন যা ভেবে এসেছে সবকিছু মিথ্যা?
হঠাৎ প্রিয়তার ডায়েরির কথা মনে পড়তেই সেটাতে কি আছে দেখার জন্য তাড়াহুড়ো করে নিচে নেমে আসে ইয়াশ। কি আছে ওই ডায়েরিতে, তার প্রেমিককে নিয়ে লেখা! না হলে ওপরে কেন লেখা থাকবে, ” প্রিয় পুরুষ ”
চলবে……….
#প্রিয়তার_প্রণয়
#তানিয়া_মাহি(নবনীতা নীরু)
#পর্ব_০৭
ইয়াশ রুমে গিয়েই টেবিল থেকে প্রিয়তার ডায়েরি নিয়ে বিছানায় গিয়ে বসে। ডায়েরিতে কি লেখা আছে তা দেখতে এবং জানতে খুব আগ্রহ সহকারে ডায়েরির প্রথম পৃষ্ঠা খুলেই দেখে ডায়েরির মধ্যে কোন পৃষ্ঠা নেই। তার মানে সেদিন রাতে প্রিয়তা রুমে এসে ডায়েরি নষ্ট করে ফেলেছে।
এভাবে প্রিয়তার টেবিল থেকে তার ডায়েরি নিয়ে এসে কোন কাজের কাজই হলো না। কিভাবে প্রিয়তার পছন্দের মানুষের ব্যাপারে জানতে পারবে ইয়াশ!
সে অনেক ভেবে লাবণ্যকে কল দিলো। যেন তার থেকে এ ব্যাপারে কোন সাহায্য পাওয়া যায়। একবার, দুইবার, তিনবার ফোনে রিং হলেও লাবণ্য কল রিসিভ না করলে ইয়াশ ফোন রেখে রুমে পায়চারি শুরু করলো।
কিছুক্ষণ পর ফোনে রিংটোন শুনেই গিয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখে লাবণ্য কল দিয়েছে। ইয়াশ এবার কল রিসিভ করে নেয়।
— হ্যাঁ ইয়াশ, কোন দরকার?(লাবণ্য)
— একটু ছিল, তুই কি ব্যস্ত আছিস?
— না ব্যস্ত না। একটু বোনেদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম এসে দেখি তুই কল দিয়েছিস।
— এখানেই আছিস না?
— হ্যাঁ এখানেই আছি।
— আচ্ছা শোন একটা কথা।
— হুম বল।
— সেদিনের পর থেকে তো তোর সাথে কথাও হয় নি, বিষয়টা তোকে জানানো ও হয় নি। প্রিয়তা সেদিন আমাকে না জানিয়ে তার বান্ধবীর বাসায় গিয়েছিল। পরদিন বাসায় ফিরেছে, আমার সাথে আগে তবু কিছু কথা বলতো এখন তাও বলতে চায় না। বললেও বাঁকা বাঁকা কথা বলে। আমি রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে দুইদিন তার গায়ে হাত তুলে ফেলেছি, আমি এটা করতে চাই নি তবু হয়ে গিয়েছে।
— কি বলছিস তুই! নাহ ইয়াশ আমি তোর থেকে এটা আশা করি নি। এটা একদমই ঠিক করিস নি তুই। মেয়েটা এমনিতেই ভয়ে তোর সামনে যেতে পারে না তার ওপর তুই এটা কি করলি তার সাথে!
— হুম সেটা তো বুঝতে পারছি, আমার ভুল হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সমস্যাটা অন্য জায়গায়।
— কি সমস্যা?
— আজকে তো আমার চাচাতো বোন লুবনার বিয়ে ছিল। সব সমস্যা শেষ হলে রাত দশটার দিকে ছাদে গিয়ে দেখি প্রিয়তা ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। কথায় কথায় আজকে ওকে জিজ্ঞেস করেছি যে তোর পছন্দের মানুষ আছে কি না!
— কি বলল?
— বলল তার নাকি পছন্দের মানুষ আছে।
— হ্যাঁ সেটা তুই।
— যদি অন্যকেউ হয় তাহলে?
— এটা কোনভাবেই অন্য কেউ হতেই পারে না। এটা তোর কথাই বলেছে।
— আমার কেমন যেন মনে হচ্ছে অন্যকেউ। তুই আর আমি জানি যে আমি তাকে পছন্দ করি তাই তোর মনে হচ্ছে প্রিয়তাও আমাকেই পছন্দ করে কিন্তু সেটা তো নাও হতে পারে তাই না!
আরেকটা কথা শোন…..
— হ্যাঁ বল।
— বাসায় থেকে আমার বাবা মা আর প্রিয়তার বাবা মা আমাদের বিয়ে ঠিক করেছে।
— কি!!
— হ্যাঁ, কিন্তু প্রিয়তাকে জানাতে নিষেধ করেছি। কারণ ওর ব্যাপারটা আমার পরিষ্কার হয়ে নিতে হবে। আমি ওর রুম থেক ডায়েরি নিয়েছিলাম, ওর ব্যক্তিগত ডায়েরি কিন্তু এখন দেখছি এখানে কিছুই নেই। আমি কিভাবে জানব বল ওর ব্যাপার টা।
— আচ্ছা শোন আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে
— হ্যাঁ বল তাড়াতাড়ি।
— (……………..…….….)
— ঠিক আছে আমি রাজি।
— আচ্ছা যা এবার ঘুমিয়ে পড় নিশ্চিন্তে।
— আচ্ছা শুভ রাত্রি।
কাল কি হবে সেটা ভেবে মিটিমিটি হাসতে থাকে ইয়াশ। আগামীকালের ডোজ প্রিয়তা সহ্য করতে পারবে তো!
________________________________
প্রিয়তার ঘুম ধরছে না দেখে পাশে ফোনে পুরোনো গান দিয়ে শুয়ে আছে। এমন সময় ফোনে রিং বেজে উঠলে দেখে অচেনা নম্বর।
প্রথমে রিসিভ করে না অচেনা নম্বর দেখে। পরে সাথে সাথে একটা মেসেজ আসে, “বেয়াইন আমি হুমায়ুন, এত রাতে আপনাকে বিরক্ত করলাম। কলটা একটু রিসিভ করুন।”
আবার কল এলে প্রিয়তা এবার রিসিভ করে।
— হ্যাঁ হুমায়ুন ভাইয়া বলেন।
— কেমন আছেন?
— হুম ভালো, আপনি?
— ভালো। তবে তাকে খুব মনে পড়ছে।
— আচ্ছা তাই নাকি?
— হ্যাঁ, আপনার বোন হয় তো তাই না?
— হ্যাঁ বোন।
— নম্বরটা কি……..
— হ্যাঁ দিচ্ছি টেক্সট করে।
— আচ্ছা ঠিক আছে, এতরাতে বিরক্ত করলাম না তো?
— না না একটুও বিরক্ত করেন নি। আপনি কলটা রাখুন আমি এখনি নম্বর পাঠিয়ে দিচ্ছি।
— ঠিক আছে।
প্রিয়তা সাথে সাথে বুশরার ফোন নম্বর হুমায়ুনকে পাঠিয়ে দিলো। ওপাশ থেকে একটা লাভ ইমোজি এলো, তার মানে উনি সন্তুষ্ট।
প্রিয়তার কিছুতেই ঘুম আসছে না। জীবনটা যেন কালো অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে। সবকিছু রঙহীন হয়ে যাচ্ছে। মাথাটাও প্রচন্ড ব্যথা করছে তাই সে চলে যায় ওয়াশরুমে, যদি মাথায় পানি নিলে একটু কমে এই ব্যথা।
____________________________
সকালবেলা-
ইয়াশের মা এবং ইয়াশের তিন কাকি বসে ড্রয়িংরুমে বসে কথা বলছিল। ইয়াশকে আসতে দেখেই তারা হাসতে থাকে।
— তোমরা আমাকে দেখে হাসছো কেন বলো তো?(ইয়াশ)
— বাড়ির হবু জামাই হয়ে গেলি তো ইয়াশ!(সীমা, বুশরার মা)
— হ্যাঁ যাও তাড়াতাড়ি জামাইয়ের জন্য খাবার নিয়ে এসো। তোমাদের বাড়ির হবু জামাই আজকে নতুন একটা নাটক শুরু করবে তাই পার্টনারকে নিয়ে আসতে যাচ্ছে।
— কি নাটক শুনি? আমরাও যেন একটু অংশ নিতে পারি।( হোসনেয়ারা, লুবনার মা)
— তোমরা কি পারবে তোমাদের মেয়ের কান্না দেখতে?
— মেয়ে কেন কান্না করবে?(আঞ্জুয়ারা)
— সোজাভাবে বলে দেই?
— হ্যাঁ বল।
— (…….………….)
— তুই ও কি ছোট হয়ে গেলি ইয়াশ?(আঞ্জুয়ারা)
— ওদের ব্যাপার ওদেরকেই বুঝে নিতে দাও আপা।(রমেলা)
— যদি অন্যরকম কিছু হয়ে যায়?(হোসনেয়ারা)
— কিচ্ছু হবে না, তুই যা তো ইয়াশ।(সীমা)
— আচ্ছা মা, আমরা কিন্তু কালকে ব্যাক করছি শহরে।
— হ্যাঁ তোর বাবা বলেছে।
— লুবনা কি আজকেই বাসায় আসবে ছোটমা?
— হ্যাঁ ভেবেছি তুই আর প্রিয়তা যাবি বিকেলে।
— আমরা কেন?
— চলেই যাবি, তাই ঘুরে আয়।
— দেখো, একটু পর কি হয়। থাকো বের হই…..
ইয়াশ বের হয়ে চলে যায়। চারজন মিলে সিদ্ধান্ত নেয় তাদের ব্যাপারে আজকে কোন কথাই বলবে না আর তারা। তারা যেন এ বিষয়ে কিছুই জানে না।
_________________________________
এগারোটা……
বাহিরে হাসাহাসি আর জোরে কথা বলার শব্দ শুনে প্রিয়তার ঘুম ভেঙে যায়। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে এগারোটা পার হয়ে গিয়েছে। তাড়াহুড়ো করে এলোমেলো চুলে চোখ মুছতে মুছতে বাহিরে যায় কি হলো দেখতে।
বাহিরে এসে যা দেখে সেটা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না কালো একটা শাড়ি পড়ে কেউ বসে আছে বাড়ির সবার সাথে আবার ইয়াশ ও আছে দাঁড়িয়ে। বাহিরের দিকে এগিয়ে যায় সবাই লাবণ্যকে ঘিরে গল্প করছে। এই সময়ে ওই মেয়ে এখানে কেন! লাবণ্যকে দেখেই যেন প্রিয়তার মাথা গরম হয়ে যায়।
এই মেয়েটাই তার ইয়াশ তার থেকে দূরে নিয়ে গিয়েছে। তার জন্য এই কয়েকটা দিন তার কাছে বিষাদে পরিপূর্ণ কয়েকটা যুগ মনে হয়েছে।
প্রিয়তা কিছু একটা ভেবে মুখের ভঙ্গিমা পরিবর্তন করে সামনে এগিয়ে গেল।
— মা, আমার খাবার দাও তো। আরে আপু আপনি…..!( লাবণ্যর দিকে তাকিয়ে)
— হ্যাঁ তোমার ভাইয়া নিয়ে এলো। কেমন আছো তুমি?(লাবণ্য)
— আলহামদুলিল্লাহ, আপনি?
— আলহামদুলিল্লাহ।
— প্রিয় মা তুই লাবণ্যকে নিয়ে তোর রুমে যা তো একটু। তোর রুমে একটু বসুক, অনেকক্ষণ এখানে আছে। আমাদের ও এখন কাজ আছে অনেক, বিকেলে লুবনার শ্বশুড়বাড়ি যেতে হবে ওদের নিয়ে আসতে।(বুশরার মা)
— বুশরা কোথায়?
— তোকে আর বুশরাকে সকালে যেতে বলেছিল লুবনা কিন্তু তুই তো আমাদের ডাক শুনিস নি তাই ওকে এসে লুবনার দেবর নিয়ে গিয়েছে।(প্রিয়তার মা)
— কে হুমায়ুন ভাইয়া?
— হ্যাঁ হুমায়ুন।
— আচ্ছা ঠিক আছে, আপু চলুন আমার রুমে।
— আপু কেন বলছিস ভাবি বল।(ইয়াশ)
— ভাবি! ( ইয়াশের কথা শুনে যেন এক মুহূর্তের জন্য দম বন্ধ হয়ে যায়, সাথে সাথে ইয়াশের দিকে তাকায় প্রিয়তা)
— হ্যাঁ ভাবি বলবি, বাসায় দেখাতে নিয়ে এসেছি লাবণ্যকে। সবাই খুব পছন্দ করেছে ওকে।(ইয়াশ)
— তাহলে তো ভালো খবর। প্রথমে আপুর বিয়ে হলো, এখন আবার আপনার! পরপর দুই দুইটা বিয়ে ভাবা যায়! ক’দিন পর হয়তো আমাকেও টার্গেট করবে। (প্রিয়তা কথাগুলো খুব কষ্টে মুখে হাসি এনে বলল, কিন্তু ভেতরটায় যে ঝ°ড় শুরু হয়ে গিয়েছে সবকিছু হারিয়ে ফেলার ঝ°ড়।)
প্রিয়তা লাবণ্যকে রুমে নিয়ে গিয়ে বসতে দেয়, ইয়াশ ও সাথে থাকায় তাদের বলে বাহিরে আসে।
— দেখলি তুই, প্রিয়তার কোন রেসপন্স পেলি তুই?এটার জন্যই ওকে আমার কেমন সন্দেহ হয়।(ইয়াশ)
— তুই প্রথমে ওর মুখের অবস্থা দেখেছিলি? আমি কিন্তু খেয়াল করেছি। বেচারির মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তবে সে অনেকটা স্ট্রং, তাই তোকে বুঝতে দেয় না আর তুই বুঝিস ও না।
— কি করব তুই বল আমাকে! কিভাবে বুঝব?
— তুই বলেই তো দিতে পারিস, তোদের তো বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে।
— আমি যেভাবে চাইছি সেটা সেভাবে হচ্ছেই না। আচ্ছা তুই বস একটু, আমি দেখি প্রিয় কোথায় গেল।
— ঠিক আছে।
________________________________
— ভাবি.…..(প্রিয়তা)
— হ্যাঁ কোথায় গিয়েছিলে?
— ফ্রেশ হয়ে এলাম, আপনাদের তো একটু ব্যক্তিগত সময় প্রয়োজন তাই না! ইয়াশ ভাইয়া কোথায়?
— বাহিরে গেল একটু। আমার বাসায় ফিরতে হবে এখন, কল এসেছিল। একটু দেখো না ইয়াশ কোথায়?
— আচ্ছা আমি দেখছি…..
— কি হয়েছে? আমি চলে এসেছি।(ইয়াশ)
— ইয়াশ, বাসা থেকে কল দিয়েছে আমার বাসায় ফিরতে হবে এখনই। আর তোমরাও তো বের হবে তাই না? আমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে এসে তারপর যাও। (লাবণ্য)
— হ্যাঁ ঠিক আছে চলো, তোমার সাথে আমার কিছু কথাও আছে, না বলে থাকতে পারছি না।
— এত খুশি কেন?(লাবণ্য)
— কারণ আছে চলো বলছি।
— আপনারা কথা বলুন আমি বাহিরে যাচ্ছি।(প্রিয়তা)
— না, তুই তৈরি হয়ে নিবি তাড়াতাড়ি। (ইয়াশ)
— কেন?
— লুবনার ওখানে যেতে হবে।
— কে কে যাবে?
— কেউ যাবে না, তুই আমার সাথে যাবি।
— আমার শরীরটা ভালো না, যেতে ইচ্ছে করছে না।
— কোন কথা না, আমি লাবণ্যকে দিয়ে আসছি আধাঘণ্টার মধ্যেই ফিরব। এসে যেন দেখি তুই রেডি হয়ে আছিস।
— কিন্তু……
— উহু, বড়দের কথা শুনতে হয় প্রিয়তা। ইয়াশ যা বলছে তাই করো। সুন্দর করে তৈরি হয়ে থাকবে কিন্তু। ইয়াশ চলো এবার…..
— হ্যাঁ চলো। প্রিয়তা আর কোন কথা না রেডি হয়ে নিবি তাড়াতাড়ি।
— হুম।
ইয়াশ আর লাবণ্য বের হয়ে চলে যায়, প্রিয়তা এক পলকে লাবণ্য আর ইয়াশের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। তৃতীয় ব্যক্তি চলে এলে মানুষ কতটা দূরের হয়ে যায়। তাকে যেন দেখেও দেখছে না ইয়াশ, এতটা পরিবর্তন কিভাবে হয় মানুষের! প্রিয়তা এবার ইয়াশকে নিয়ে ভাবতে শুরু করে,,
ইয়াশ হয়তো এই বিয়েতে অনেক খুশি। কিন্তু সেটা তো আগে থেকেই খুশি, বাহিরে থেকে আসার পর তাকে এত বেশি খুশি কেন লাগছিল! বাহিরে কি এমন হয়েছে তার সাথে যে এত এত খুশি যে কথা তার সামনে বলল না!
চলবে……………..