#প্রিয়তার_প্রণয়
#তানিয়া_মাহি(নবনীতা নীরু)
#পর্ব_০৪
আশেপাশে প্রিয়তাকে না পেয়ে বাসায় ফিরে আসে ইয়াশ। মাথায় যেন চিন্তার সাথে একরাশ অভিমান আর রাগ ভর করেছে তার। দ্রুত হেটে প্রিয়তার মায়ের কাছে চলে যায় সে।
— ছোটমা…
— হ্যাঁ ইয়াশ বল।
— তোমার মেয়ে কোথায়? আমি আমার বান্ধবীর সাথে কথা বলছিলাম এর মাঝে সে উধাও হয়ে গেল!
— তুই চিন্তা করিস না, আমাকে কল দিয়েছিল। ওর বান্ধবীর বাসায় আছে।
— কি! আমাকে না জানিয়ে বের হয়ে কেন গেল সে?
— তুই নাকি ব্যস্ত ছিলি তাই ও বের হয়ে গিয়েছে তোকে না বলে। তুই খুঁজতে পারিস জন্য আমাকে কল দিয়ে বলেছে।
— কখন আসবে?
— কালকে বিকেলে আসবে বলল।
— ওহ আচ্ছা
— হুম চিন্তা করিস না, ফ্রেশ হয়ে নে।
— ঠিক আছে।
ইয়াশ রুম থেকে রেগে বের হয়ে যায় কিন্তু তা প্রকাশ করে না সে। ওই মেয়ে বাসায় আসুক কালকে, এরকম ব্যবহার করার মজা আমি ওকে বুঝিয়ে দেব। সাহস কত বড় আমার সাথে বের হয়ে, আমাকে না জানিয়ে বান্ধবীর বাসায় চলে গেল!
—-
___________________________________
— আচ্ছা বলবি তো কি হয়েছে তোর? তখন থেকে এসে বারান্দায় মন খারাপ করে বসে আছিস।(তামান্না, প্রিয়তার বান্ধবী)
— তুই কি চাচ্ছিস আমি চলে যাই?
— তা চাইবো কেন? তুই এভাবে মন খারাপ করে বসে আছিস তাই জিজ্ঞেস করছি।
— ………….
— এ কি! কান্না কেন করছিস প্রিয়? কি হয়েছে তোর বল তো? বাসায় কিছু হয়েছে নাকি আঙ্কেল তোকে শহরে ভর্তি করবে না বলে মন খারাপ?
— ইয়াশ ভাইয়া…..
— ইয়াশ ভাইয়া! কি হয়েছে তার বল তো, চুপ করে থাকবি না একদম। প্রিয় বল কিছু….
প্রিয়তা প্রথম থেকে সবকিছু বলতে শুরু করে। তার ভালো লাগা তৈরি হওয়া থেকে শুরু করে প্রেমে পড়া আজকে ঘটে যাওয়া ঘটনা সব বলে দেয় তামান্নাকে।
প্রিয়তার অবস্থা দেখে তামান্নার এবার আসলেই খারাপ লাগছে। ইয়াশ ভাইয়া তার কাজিন জন্য হয়তো কথাগুলো তাকে জানায় নি, তবে তার যতটুকু মনে পড়ে ইয়াশ ভাইয়াকে নিয়ে কেউ পছন্দের কথা বললেই প্রিয় রেগে যেত।
— আচ্ছা কান্না থামা, এত কান্না করে কি কিছু হবে বল? উনি যেহেতু কাউকে সত্যিই পছন্দ করেন, তাহলে তোর আর উনাকে নিয়ে ভাবা উচিৎ নয়।
— উনি আমার, একান্তই আমার।
— দেখ প্রিয় পাগলামি করিস না, তুই নিজেকে সরিয়ে নে এসব থেকে। তুই যদি এটা নিয়ে তার সাথে কথা বলতে যাস তাহলে তোদের বাড়ির সম্পর্কটাও নষ্ট হয়ে যাবে, বাহিরের কেউ হলে ভেবে দেখতে বলতাম।
— সব খারাপ কেন আমার সাথেই হয় বল তো? আমাকেই কেন সবকিছু হারাতে হয়, আমাকেই কেন নিজেকে ভালোবাসার মানুষের থেকে সরিয়ে নিতে হয়? আমার পছন্দের জিনিসগুলো, পছন্দের মানুষগুলোর ওপরই কেন অন্য কেউ নজর দেয়! আমি উনাকে খুব ভালোবাসি বিশ্বাস কর তামান্না।
— খুব বেশি ভালো না বাসলে কেউ কারও জন্য কান্না করে না প্রিয়। কিন্তু এখানে কিছুই করার নেই, তুই শুধু উনাকে ইগনোর করে যাবি। মন শক্ত রাখতে হবে বুঝেছিস?
— আমি এমনিতেও উনার সামনে যাই না, এখন তো আরও যেতে পারব না। মানুষটা অন্যকারো হয়ে গেছে তামান্না! উনাকে দেখলে, উনার কণ্ঠ শুনলেই তো আমার হৃদয় ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। আগে তো অন্য কারণে উনার সামনে যেতাম না কিন্তু এখন তো………..
— প্রিয় এরকম করলে কিন্তু আমার ভালো লাগবে না, দেখ এবার কিন্তু আমারও খারাপ লাগছে।
— মানুষটা কেন আমাকে একটু ভালোবাসলো না বলতে পারিস? কি এমন হতো আমাকে ভালোবাসলে, উনার তো কোন ক্ষতি হত না।
কথাগুলো বলেই আবার কান্না শুরু করে দেয় প্রিয়তা। তাকে বুকে জড়িয়ে নেয় তামান্না, মেয়েটার কষ্ট যে আর সে দেখতে পারছে না।
________________________________
পরদিন সন্ধ্যাবেলা-
সন্ধ্যাবেলা বাড়িতে ঢুকে মায়ের সাথে দেখা করেই নিজের রুমে চলে যায় প্রিয়তা। রুমে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দেয় সে। গোসলটা করে রুমে এসে বিছানায় বসে চুল শুকিয়ে নেয়। হঠাৎ ইয়াশের দেওয়ার শাড়ির কথা মনে হলে আলমারি থেকে শাড়িটা বের করে নেয়। কিছু একটা মনে করলে আবার চোখ দিয়ে দুই ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে। টেবিল থেকে ডায়েরি আর ইয়াশের ছবি নিয়ে বিছানায় রেখে দেয়। এগুলো যে এখন তাকে বড্ড পীড়া দিচ্ছে!
রাতে খাওয়ার সময় হলে, প্রিয়তার মা তাকে ডেকে নিয়ে যায় সবার সাথে বসে খাওয়ার জন্য। প্রিয়তা জিনিসগুলো লুকিয়ে রেখে খেতে চলে যায়। বাসার সবার সাথে খেতে বসেও তার মন খারাপ।
— এই প্রিয় শোন তুই, আমি, আরশি আর বুশরা চারজন মিলে কিছু কেনাকাটা করতে যাব ঠিক আছে?(লুবনা, যার বিয়ে )
— তোমরা তিনজন যেও, আমার যেতে ইচ্ছে করছে না আপু।
— যেতেই হবে, খারাপ লাগুক বা ভালো লাগুক।
— শরীরটা ভালো নেই আপু।
— আমার বিয়ে কি প্রতিদিন হবে নাকি, তবুও এরকম করছিস?
— আচ্ছা ঠিক আছে যাব।
প্রিয়তার পাশের চেয়ার খালি থাকায় ইয়াশ এসে চেয়ার টেনে বসে সেখানে। প্রিয়তা তখনই উঠে যাবে, কিন্তু এটা ভেবে যায় না যে সবাই কিছু সন্দেহ করতে পারে। আর হয়তো দেখা গেল সে উঠে যাওয়ার কারণে ইয়াশ ভাই আর খাবেই না।
দুজন এত কাছাকাছি বসে অথচ কেউ কারও সাথে একটা কথাও বলে নি। এদিকে প্রিয়তার আগের মতই অবস্থা আবার সাথে পাহাড় সমান অভিমান আর অভিযোগ। এত কাছাকাছি থেকেও যে মনের দূরত্ব বহু ক্রোশ বেড়ে গিয়েছে। এ দূরত্ব কবে ঘুচবে, আদৌ ঘুচবে কি না কে জানে!
কিছুক্ষণ পর আর এভাবে থাকতে না পেরে উঠে চলে যায় প্রিয়তা এরপর পিছনে কি হলো সেটা তাকিয়ে দেখার সাহস করে নি সে।
রাত দশটার দিকে সবাই যখন নিজের রুমে চলে যায় তখন সে চুপিচুপি রান্নাঘর থেকে লাইটার নিয়ে ডায়েরি আর শাড়ি পু°’ড়িয়ে ফেলতে ছাদে চলে যায়। কোনকিছু আর অবশিষ্ট রাখতে চায় না সে।
ডায়েরির পৃষ্ঠা ছিড়তে যাবে ওমনি কেউ এসে সেটা প্রিয়তার হাত থেকে কেড়ে নেয়। প্রিয়তা ভয় পেয়ে যায়, তাকিয়ে দেখে ইয়াশ দাঁড়িয়ে আছে।
— আ আ আপ আপনি!!
— তুই আজকেও এতরাতে এখানে কি করছিস? গতকাল তুই আমাকে না বলে বের হয়ে গিয়েছিলি কেন?
— আপনারা ব্যস্ত ছিলেন জন্য আর বিরক্ত করি নি।
— ফোন বন্ধ রেখেছিলি কেন?
— চার্জ ছিল না।
— সব প্রশ্নের উত্তর সাজিয়েই রেখেছিস তাই না? তোর একবার ও মনে হয় নি যে আমাকে অন্তত একবার বলে যাওয়া উচিৎ?
— আপনারা তথাকথিত রোমাঞ্চে ব্যস্ত ছিলেন, দেখতে পারছিলাম না আমি। বোনকে নিয়ে যেয়ে অন্য একটা মেয়ের সাথে হাত ধরে অশ্লী°`লতা না বাড়ালে কি হতো? কি হতো এত বেহা`য়াপনা না করলে?
কথাটা বলামাত্র ঠাস করে একটা চ°`ড় বসে যায় প্রিয়তার গালে। প্রিয়তা গালে হাত দিয়ে ইয়াশের দিকে তাকিয়ে থাকে। একেই তো পাহাড় সমান অভিমান তার ওপর এরকম করে বসে ইয়াশ এটা যেন মেনে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছিলো প্রিয়তার। কাটা শরীরে লবণ ছিটিয়ে দেওয়ার মতো হয়ে যায় ব্যাপারটা।
প্রিয়তা আর একটা কথাও না বলে ইয়াশের হাত থেকে ডায়েরিটা ছিনিয়ে নিয়ে আর চেয়ার থেকে শাড়িটা নিয়ে চোখ মুছতে মুছতে চলে যায় নিজের রুমে। ইয়াশ পরিস্থিতি বুঝে ওঠার আগেই এতকিছু হয়ে গেলে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। সে আসলে প্রিয়তার সাথে এমন করতে চায় নি, কিন্তু হয়ে গিয়েছে। প্রিয়তার মুখে যে তখন লাগাম ছিল না।
সারা রাত প্রিয়তার কথা ভেবে ইয়াশ ঘুমাতে পারে না। মেয়েটা এমন কেন করে?
যে কারণে রেস্টুরেন্টে যাওয়া সেটা না হয়ে উল্টো ব্যাপার হয়ে গেল। প্রিয়তা এমনভাবে কথা বলল যেন সে রেস্টুরেন্টের ব্যাপারটা নিতে পারে নি, এটাই তো হওয়ার ছিল। কিন্তু সেটা কি কারণে, ইয়াশ তার সামনে হাত ধরেছে জন্য নাকি অন্য কোন কারণ!
_____________________________________
বিয়ের আগের দিন জন্য বাড়িতে যেন আনন্দ খুশি বেড়ে গিয়েছে। কত হৈচৈ করছে সবাই। বড়রা কাজে ব্যস্ত আর ছোটরা আনন্দ করতে।
সব বোনেরা অর্থাৎ আরশি, প্রিয়তা,বুশরা সবাই ঠিক করেছে আজকে সবাই শাড়ি পড়ে লুবনাকে হলুদ আর মেহেদী পড়াবে।
কেউ লাল,কেউ নীল পড়বে বলে ঠিক করে। কিন্তু প্রিয়তার তো সবসময় নজর আটকে থাকে তার মায়ের গতবছরে কেনা সাদা শাড়িটায়।
কোথায় বসে সবাই মেহেদী পড়াবে, জায়গাটা ঠিক করে সবাই তৈরি হতে চলে যায় কারণ লুবনাকে রেডি করাও শেষ।
রাতে সবাই মেহেদী পড়া শেষে বসে আছে। সারাক্ষণ বাহিরে থেকে থেকে বাসায় এসে প্রিয়তাকে এই অবস্থায় দেখবে এটা ভাবতেই পারে নি ইয়াশ।
সাদা রঙেও যে কম রূপবতী লাগছে না প্রিয়তাকে। এবার যে তার সাথে কথা বলতে ভীষণ ইচ্ছে করছে ইয়াশের। ইচ্ছে করছে আজকেই সব জানিয়ে দিতে। তাকে শাড়িতে দেখে যে প্রণয়ের ঝড় উঠে গিয়েছে ইয়াশের মনে। কাছে পেতে ইচ্ছে করছে, দুদন্ড চেয়ে দেখতে ইচ্ছে করছে। গল্প করার মাঝে মাঝে হাসিটা যে তার বুকে আঘা*ত করছে। তার হাসি আর পরনের শাড়ি যে ইয়াশের প্রেমিক সত্তা জাগিয়ে তুলছে। আবার তখনি বাড়ির বড় ছেলের সত্তা জেগে উঠে ধমক দিয়ে বলছে নাহ ইয়াশ, ও তোর চাচাতো বোন তোর এত বেহায়া হওয়া সাজে না। পরেক্ষণেই আবার প্রেমিক সত্তা জেগে উঠছে বারবার বলছে এর আগে অনেক এরকম সম্পর্ক হয়েছে আর বিয়েতেও রূপ নিয়েছে।
নাহ, প্রিয়তাকে ব্যক্তিগত ভাবে একটু না দেখলে তার শান্তি লাগবে না।
— কি রে এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?(ইয়াশের মা)
— এমনি মা, মাথাটা ব্য°থা করছে।
— কি বলিস লুবনার কালকে বিয়ে, আর এখন তোর মাথাব্যথা! বাড়িতে সবাই কয় আনন্দ করছে আর তুই মাত্র বাসায় ফিরছিস!
— হ্যাঁ মা, একটু বাহিরে ছিলাম। বাড়িতে তো সব মেয়েলি অনুষ্ঠান আমি কি করব এখানে থেকে?
আমি রুমে যাচ্ছি থাকো, মাথাটা খুব ধরেছে।
— আমি কি প্রিয়তাকে পাঠিয়ে দেব? মাথা টিপে দেবে..
— না মা, সে আনন্দ করছে, থাকুক এখানে। পিচ্চি মেয়ে দেখ সবার সাথে কত মজা করছে!
— প্রিয়তা পিচ্চি!
–…………………..
— আচ্ছা তুই রুমে গিয়ে বিশ্রাম কর।
— ঠিক আছে মা।
ইয়াশের এবার সত্যিই প্রচন্ড মাথা ব্য°থা করছে। বিছানায় শুয়ে গড়াগড়ি করছে মাথা ব্যথার জন্য তাকাতেও কষ্ট হচ্ছে, চোখ লালবর্ণ ধারণ করেছে। হঠাৎ দরজায় শব্দ শুনে তাকিয়ে দেখে প্রিয়তা, অবশেষে হুরপরী তার দরজায়!!
ইয়াশ আর তাকিয়ে থাকতে না পেরে চোখ বন্ধ করে নেয়, সেদিনের অভিমান যেন আবার মাথাচাড়া দিয়েও ওঠে।
প্রিয়তা নক করার পর কোন অনুমতি না পেয়ে প্রশ্ন ছুড়ে মারলো ইয়াশকে,” ভাইয়া আমি কি চলে যাব?”
কোন উত্তর না পেয়ে সে আবার কথাটি বলল কিন্তু এবারেও কোন উত্তর না পেয়ে তার কেমন যেন লাগলো! সত্যি সত্যি বেশি অসুস্থ হয়ে গেল না তো! প্রিয়তা দৌঁড়ে ভেতরে চলে গেল, খাটে বসেই ইয়াশের মাথায় হাত রাখতেই ইয়াশ চোখ খুলে তাকায়। কি ভ°য়ংকর লাগছে চোখ দুটো। দেখতে ও ভীষণ অসুস্থ লাগছে।
— খুব খারাপ লাগছে আপনার ভাইয়া?
— না, তুই আসতে গেলি কেন? যা এখান থেকে…
— যাওয়ার জন্য আসি নি, মানুষজন তো ভালোবাসতে জানে না শুধু জানে চড় মে*রে কাঁদাতে। মানুষ ভুলেই যায় আমি এখন আর ছোট নেই, প্রাপ্তবয়স্কা আমি, আমার গায়ে হাত তুলতে নেই।
— তুই কি আমাকে এখন জ্ঞান দিতে এসেছিস? যা তো রুম থেকে, যা। শরীর খারাপের সাথে মন মেজাজ ও খারাপ আছে আজ।
— সবসময় জ্ঞানই বা কেন মনে করেন বলেন তো!
— কি মনে করব? শোন ছোট ছোটর মতো থাকবি একদম বড় বড় কথা বলবি না বলে দিলাম।
— ওষুধটা খেয়ে নেন, উঠেন।।
— রেখে যা, আমি খেয়ে নেব।
— না আপনি এখনই খেয়ে নেন তাহলে ভালো লাগবে।
— খেয়ে নেব পরে, তুই যা বাহিরে সবাই আনন্দ করছে তুই এখানে থাকিস না।
— চলে যাচ্ছি, আগে ওষুধটা খেয়ে নেন প্লিজ। আপনার চোখমুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে অনেক খারাপ লাগছে আপনার।
— তুই নিজেই আমার মাথাব্যথার ওষুধ কেন হয়ে যাচ্ছিস না প্রিয়?(মনে মনে কথাটি আওড়াতে থাকে ইয়াশ)
— তোর চোখে পানি কেন?(ওষুধ খাওয়ার পর প্রিয়তার দিকে তাকাতেই দেখে তার চোখে পানি টলমল করছে)
— কাজল দিয়েছি চোখ ব্য°`থা করছে তার জন্য।
— ওহ আচ্ছা, যা এবার বাহিরে গিয়ে আনন্দ কর। শুধু শুধু এখানে থাকতে হবে না।
— থাকি না একটু।
— থাকবি কেন?
— এমনি ইচ্ছে করছে না যেতে। একটু পরে যাই প্লিজ! আর আপনারও তো খুব খারাপ লাগছে।
— আমি তোকে যেতে বলেছি প্রিয়তা।
— প্লিজ ভাইয়া…
— ঠিক হয়ে যাবে, ওষুধ তো খেয়ে নিয়েছি।
— তবুও আমি পরে যাব বাহিরে, আমি আপনার কথা শুনছি না।
— এবার কি উঠে তোকে রুম থেকে বের করে দিতে হবে আমার? দেখ বিয়ের আগের দিন অশান্তি করিস না বের হয়ে যা, সবাই বাহিরের উঠোনে আছে। বাড়িতে একটা মানুষ নেই, কেউ দেখলে খারাপ ভাববে।
— এত ভয় পান কেন আপনি?
— ভয় পাই মানে! তোর সম্মানের ভয় না থাকলেও আমার আছে আর সেটা খুব বেশি পরিমাণে।
— আপনাদের তো হয়তো আর তাড়াতাড়ি শহরে যাওয়া হবে না। আর যাওয়া হলেও আবার তাড়াতাড়ি ফিরে আসতে হবে।
— কেন?
— আরেকটা বিয়েতে আপনাদের যোগ দিতে হবে না!
— আরেকটা বিয়ে মানে?
— কিছু না, আমি আসছি। কাউকে সম্মান নষ্টের বিপদে ফেলতে চাই না। আমার না হয় সম্মানের ভয় নেই, সম্মান নষ্ট করতে পারি আপনি তো তা পারেন না তাই না? বড় সম্মানের মানুষ আপনি….
কথা শেষ না করতেই সেদিনের মতো আরেকটা থা°`প্পড় পড়ে যায় প্রিয়তার গালে। প্রিয়তা আজকে কোনভাবেই এটা আশা করে নি। টলমল চোখে গালে হাত দিয়ে বসে থাকে প্রিয়তা। ফোটায় ফোটায় চোখের পানি গাল বেয়ে পড়তে থাকে তার।
ভালোবাসায় এত কষ্ট কেন, কেনই বা এত অভিমান নামক দূরত্ব? একটু ভালো থাকার আহাজারি কেন প্রিয় মানুষটি বুঝতে পারে না!
চলবে…….
#প্রিয়তার_প্রণয়
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_০৫
প্রিয়তা চুপ করে ইয়াশের দিকে তাকিয়ে আছে। ইয়াশ ও কিছু বলতে পারছে না। কেন এত লাগাম ছাড়া কথা বলে সে! ইয়াশ তো তার সম্মানের কথা ভেবেই তাকে চলে যেতে বলেছে কারণ কলঙ্ক লাগলে নারীর শরীরেই লাগে পুরুষের না।
— আজকের পর থেকে আর কখনও আমি আপনার সামনে আসব না। আপনি বলেন না যে আমি আপনার থেকে দূরে দূরে কেন থাকি? এই কারণগুলোর জন্যই। আমি আপনার কাছে আসলেই এমন কিছু বলে ফেলি যেটা আপনার পছন্দ হয় না। এই যে আপনি আজ প্রায় সপ্তাহখানেক এসেছেন, সবমিলিয়ে কি আমাদের দুই ঘণ্টাও সময় নেওয়া হয়েছে? অথচ দেখুন কতকিছু হয়ে যায়।
— তুই কথা বলার সময় একটাবার চিন্তা করে দেখিস না যে তুই কি বলছিস!
— আমি তো কথা বলতে চাই নি, কথা বলি না, কম বলি, প্রয়োজন ছাড়া কেন কথা বলি না এখানেও আপনার সমস্যা। আসলে আমি মানুষটাই আপনার জন্য সমস্যা।
— তোর কথা কম বলাই ভালো, বেশি বললেই তুই লাগামহীন হয়ে যাস।
— আর কত অপমান করবেন? আমারও যে একটা সম্মান আছে এটা ভুলে যান কেন আপনি বারবার? আপনার এই অপমান আমি নিতে পারি না জন্যই কথা গুলো বলি।
— আশেপাশে আসা তো বাদ দিয়েছিসই, চোখের সামনেও যেন না দেখি আর তোকে!
— পরেরবার এসে আর দেখতে হবে না, তখন অন্যকারো থেকে শুনতে হবে কথা। মেয়ে তো, মেয়ে মানুষের শখ, মন্তব্য,ইচ্ছে, ভালোবাসা কোনটাই থাকতে নেই।
— কি বলতে চাইছিস তুই?
— পরবর্তীতে এসে আমার বিদায়ে অংশ নিয়েন। আপনাকে ছাড়া কিভাবে সম্ভব হবে বলেন, আমি আপনার শত্রু হয়ে গিয়েছি এখন, শত্রুকে বিদায় তো করতেই হবে চলে আসবেন। আর সত্যিই আপনার যেহেতু এত সমস্যা এই প্রিয়তা আর কখনও আসবে না আপনার আশেপাশে।
কথাগুলো বলেই প্রিয়তা বের হয়ে চলে গেল। শেষ কথাগুলো যেন ইয়াশের মাথার ওপর দিয়ে গেল। বিদায় দিতে আসব মানে? বিয়ে! মানে ওর কি বিয়ের কথা চলছে নাকি! এটা কিভাবে হতে পারে!
না এটা কিছুতেই হতে পারে না। প্রিয়তা অন্যকারো কিছুতেই হতে পারে না।
ইয়াশ ঠিক করলো আর দূরে নয়, সবচেয়ে কাছে তার প্রিয়তাকেই চাই। প্রিয়তাকে সব জানাবে সে…..
__________________________________
ভোরবেলা ঘুম ভেঙে যায় ইয়াশের, কিছুতেই ঘুম না আসায় বিছানা ছেড়ে রুমের বাহিরে এসে দাঁড়ায়। রুমের দরজার দিকে তাকাতেই খেয়াল করে দরজা বাহিরে থেকে আটকানো। মানে প্রিয়তা রুমে নেই, এত সকালে কোথায় গেল সে! বাহিরের দরজার দিকে খেয়াল করতেই দেখে দরজাও বন্ধ তার মানে বাড়ির ভেতরেই আছে।
এখানে ওখানে খুঁজে না পেয়ে ছাদে উঠে যায় ইয়াশ। ছাদে গিয়েই দেখতে পায় প্রিয়তা একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। ইয়াশ ও এগিয়ে যায় সেদিকে।
পিছনে কারও পায়ের শব্দ পেয়ে পিছনে ঘুরে তাকায় প্রিয়তা। প্রিয়তার ঘুরে তাকানো দেখে ইয়াশ থেমে যায়।
— এখানে কি করছিস তুই?
–….
— আমি কিছু বলেছি প্রিয়তা।
প্রিয়তা কোন উত্তর না দিয়ে চলে যেতে লাগলে ইয়াশ তার হাত ধরে আটকে ফেলে।
ইয়াশের এমন স্পর্শ পেয়ে প্রিয়তা দাঁড়িয়ে যায়। সামনে যাওয়ার আর সাহস হয় না তার। হাতটা ছাড়িয়ে নিতে ইচ্ছে করছিল না তবুও সে ছাড়িয়ে নিল।
— কিছু বলবেন?
— তুই আমার ওপর খুব রাগ করে আছিস তাই না রে?
— আপনার ওপর কেন রাগ করে থাকব?
— দুইদিনের খারাপ ব্যবহারের জন্য।
— ভুল করেছি তাই ওমন করেছেন, শেষ।
— এরকম আর কোনদিন হবে না।
— আপনি আমার বড়, আমাদের ভাই বোনদের মধ্যে বড়। ভুল হলে শাসন করার অধিকার আপনার আছে। আমি এখন যাচ্ছি, আজকে তো বিয়ে সবাই তাড়াতাড়ি উঠে পড়বে। এখানে কেউ আমাদের একসাথে দেখলে অন্যকিছু ভাববে। আমি ছোট থাকলে হয়তো কিছু ভাবতো না কিন্তু এখন…..
— কি ভাববে?
— আপনি সেটা ভালোভাবেই জানেন ভাইয়া। আর আমার চেয়ে ভালো বোঝেন ও।
— তুই এবার আমাদের সাথে শহরে যাবি।
— না, আমার ওখানে পড়াশোনা করা হবে না। বাবা বিয়ের জন্য পাত্র দেখা শুরু করেছে। যেখানে বিয়ে হবে সেখানেই যদি কোথাও ভর্তি করে দেয় তাহলে পড়ব, নইলে পড়ব না। আমাকে নিয়ে আপনার ভাবতে হবে না।
— আপনার বিষয়ে আমারই ভাবতে হবে। অপেক্ষা করুন বিয়েটা হয়ে গেলেই আমি আপনার বাবার সাথে কথা বলছি এই বিষয়ে।
— আমার বিষয়ে আপনার ভাবতে হবে না বললাম তো।
— মাথা যেহেতু আছে ভাবতে তো হবেই।
— আমি আসছি।
কথাটা বলতে দেরি হলেও প্রিয়তার যেতে একটুও দেরি হয় নি। ইয়াশকে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে দ্রুত চলে যায় সে। ইয়াশ দাঁড়িয়ে থেকে তার চলে যাওয়া দেখে আর ভাবতে থাকে এত কিসের অভিমান প্রিয়তার! বড় হয়ে যদি তার বেয়াদবির জন্য শাসন করেও থাকি তাহলে তো পরবর্তীতে ঠিক হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু সে রেস্টুরেন্ট থেকে আসার পর থেকেই মন খারাপ আর অভিমান করে আছে। তবে কি আমি যা ভাবছি সেটাই!! সেটা কি করে হয়, কিন্তু সেটাই যদি হয় আমার চেয়ে বেশি খুশি আর কিছু হবে না।
ইয়াশ সরাসরি বড়দের সাথেই কথা বলবে ভাবলো, সে আর এভাবে দিন কাটাতে পারছে না। অনেকদিন তো হলো এই একপাক্ষিক ভালোবাসা, তার ও তো ইচ্ছে করে, সে যাকে এত ভালোবাসে সেও তাকে ভালোবাসুক, তার কাছে আসুক।
ইয়াশ এবার নিজেও ছাদ থেকে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়।
_________________________________________
আজ লুবনার বিয়ে, বাড়িভর্তি মানুষ। সবাই নানারকম কাজে ব্যস্ত হয়ে গিয়েছে। ইয়াশ ও সারাদিন ব্যস্ততার মধ্যে কাটিয়েছে,বাড়ির বড় ছেলে বলে কথা। সারাদিনে সে একটাবার ও প্রিয়তাকে দেখতে পায় নি। দুপুরের শেষ ভাগ, প্রায় বিকেলে সব কাজ শেষ করে ফ্রেশ হতে যাবে। কারণ হয়তো যখন তখন বরযাত্রী চলে আসবে, ওখানে আবার উপস্থিত থাকতে হবে।
ইয়াশ রুমে এসে নিজের ফোনটা বিছানার ওপর পায়, কারণ সে ইচ্ছে করেই নিয়ে যায় নি। যখন তখন যে কেউ প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে বারবার ফোন দিয়ে বিরক্ত করে। ফোন হাতে নিয়ে দেখলো স্নেহা চারবার ফোন দিয়েছে, একবার রিসিভ করা হয়েছে। কিন্তু ফোন রিসিভ কে করলো! ইয়াশ সাথে সাথে স্নেহাকে কল দেয়, আর কল রিসিভ ও হয়।
— স্নেহা কল দিয়েছিলে?
— হ্যাঁ কিন্তু পরে একটা মেয়ে রিসিভ করে বলল তুমি ব্যস্ত আছো।
— আর কিছু বলেছে? মানে কে সে…..
— না সেটা বলে নাই, জিজ্ঞেস করল যে আমি কে? আমিও বলে দিয়েছি আমি ইয়াশের প্রেমিকা।
— কি! তুমি আমার প্রেমিকা কিভাবে হলে? যখন তখন যাকে তাকে যা তা কেন বলে বেড়াচ্ছো?
— আমি তো মজা করে বলেছি। আমি তো জানি তোমার বিষয়টা। আর আমার মনে হয় তোমার সে ই কল রিসিভ করেছিল বিষয়টি দেখে নিও। রাখছি…..
তার মানে প্রিয়তা কল রিসিভ করছিল! এবার বিষয়টা সত্যি সত্যি দেখতেই হচ্ছে।
ইয়াশ ফোনটা রেখে ফ্রেশ হতে চলে যায়।
_______________________________________
দুপুরের দিকে বুশরা আর প্রিয়তা লুবনাকে নিয়ে পার্লার থেকে বাসায় ফিরে আসে। বরযাত্রী ও আসার সময় হয়ে গিয়েছে। তাড়াতাড়ি লুবনাকে রুমে বসাতে হবে।
প্রিয়তা লুবনাকে রেখে নিজের রুমের দিকে যেতে থাকে। পাশের রুম থেকে ইয়াশের ডাক শুনে দাঁড়িয়ে যায় সে।
— ভেতরে আসবি একটু?(ইয়াশ)
— নাহ
— না মানে?
— আপনার মান সম্মান নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
— আবার শুরু করলি?
— বলেন কি বলবেন?(ইয়াশের সামনে গিয়ে)
— ফোন রিসিভ করেছিস কেন?
— কার ফোন? ওহ আচ্ছা আপনার আরেকটা প্রেমিকা? মানে পুরাতনটা?
— যেই হোক, তুই কেন আমার ফোন রিসিভ করবি?
— আমি তো কথা বাড়াই নি, শুধু জিজ্ঞেস করেছিলাম কে আপনি? বলল ইয়াশের গফ এতটুকুই।
— ও আমার বান্ধবী হয়, তোকে মজা করে বলেছে।
— আচ্ছা।
— আচ্ছা?
— হ্যাঁ, তো কি বলব? ভাইয়ের ব্যাপারে ইন্টারেস্ট দেখিয়ে লাভ আছে আমার?
— আচ্ছা যা এখন, বরযাত্রী চলে আসছে হয়তো।
— আপনি যাবেন না?
— পরে যাব।
— ঠিক আছে।
— শোন….
— হ্যাঁ
— আমার দেওয়া শড়ি পড়িস নি কেন?
— আম্মু এটা পছন্দ করে দিল।
— তোকে তো ওটা পড়তে বলেছিলাম। আচ্ছা যা এখন…….
— হুম।
রুম থেকে বের হয়ে চলে যায় প্রিয়তা। ইয়াশ ভাবতে থাকে, প্রিয়তা যে তার দেওয়া শাড়ি পড়বে এটা বেশি বেশি ভাবা হয়েছিল। তার সাথে যে আচরণ করা হয়েছে এরপর ও ওটা সম্ভব না।
____________________________
— বিয়াইন আপনার রুপের আ’*গুনে কিন্তু ভীষণ জ্বল*’ছি, তাড়াতাড়ি কিছু করেন।(বরের ভাই হুমায়ুন )
— পানি নিয়ে আসব বেয়াই?(প্রিয়তা)
— পানি না নিয়ে এসে একটু প্রেম নিয়ে আসলেও তো পারেন বিয়াইন।
— প্রেম কি আর সবার জন্য বলেন বেয়াই!
— শুধু আমার জন্য হলেই হয়।
— এটা অলরেডি কারও জন্য রাখা হয়ে গিয়েছে বেয়াই, দেরি করে ফেলেছেন।
— সেটাই মনে হচ্ছে।
— থাকেন বেয়াই পরে কথা হবে।
— আচ্ছা ঠিক আছে।
প্রিয়তা চলে যাওয়ার পর ওখানে ইয়াশকে দেখতে পাওয়া যায়, তার মানে ইয়াশ এতক্ষণ সব কথা শুনেছে। তার মুখের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে রেগেও গিয়েছে।
বিয়ে সম্পন্ন হয়ে গেলে এবার চলে যাওয়ার পালা। বরযাত্রীর সবাই গাড়িতে উঠে গিয়েছে। কিন্তু হুমায়ুন কি যেন মনে করে গাড়ি থেকে নেমে সোজা প্রিয়তার কাছে এলো। ইয়াশ পিছেই দাঁড়িয়ে ছিল, ছেলেটার এমন কাজ দেখে ইয়াশ রাগে ফুসছে।
— একটু এদিকে আসুন তো একটা কথা আছে।(হুমায়ুন)
— কি কথা?(প্রিয়তা)
— আপনাদের বাড়ির একজনকে আমার খুব মনে ধরেছে। তার সাথে আমার কথা হয় নি, আপনার সাথে হয়েছে তাই বলছি। ওইপাশে ডানে দেখুন কালো পোশাকে যে দাঁড়িয়ে আছে।
— ওহ আচ্ছা সমস্যা নেই, আপনি আমার নম্বর রাখুন। আমি আপনার কাজ করে দেব।
— সত্যি!
— হ্যাঁ।
প্রিয়তার নম্বর নিয়েই এবার গিয়ে গাড়িতে উঠে বসে হুমায়ুন। অতঃপর এক বাড়ির মেয়ে অন্য বাড়ির বউ হয়ে কর্তব্য পালন করতে অগ্রসর হয়।
_______________________________________
সারাদিন বাড়িভর্তি মানুষ ছিল, এখন একটু হালকা লাগছে। প্রিয়তা ইয়াশের ওপর এতটাই অভিমান করে আছে যে তার দেওয়া শাড়িটা পড়ে নি । অন্য একটা শাড়ি পড়ে সারাদিন ঘুরেছে সে। কিন্তু এবার চেঞ্জ করা দরকার, অনেক রাত ও হয়ে গিয়েছে। বসার রুমটা একদম ফাঁকা, সবাই নিজেদের রুমে চলে গিয়েছে। আত্মীয়দের বাড়ি কাছাকাছি হওয়ায় সবাই নিজ নিজ বাড়িতে চলে গিয়েছে। এখন বাড়ির অবস্থা দেখে মনেই হচ্ছে না কিছুক্ষণ আগেও বাড়ি ভর্তি মানুষ ছিল।
প্রিয়তা নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়, হঠাৎ আচমকা কেউ হাত ধরে টান দিয়ে পাশের রুমে চলে যায়। রুমের সামনের লাইট অফ থাকায় বোঝা যায় না।
— ক কে?(প্রিয়তা)
—
— কে? কথা বলছেন না কেন?
একহাত দিয়ে প্রিয়তার মুখ চেপে ধরে অন্য হাত দিয়ে দরজা আটকে দেয় অন্ধকারে থাকা ব্যক্তি।
— দরজা কেন বন্ধ করছেন, কে আপনি? দেখুন আমি কিন্তু চিৎকার করব!
— কর।
— সানি!
— বাহ চিনে ফেললে এত তাড়াতাড়ি? ভালোই হলো…. (সানি, প্রিয়তার প্রতিবেশী। প্রিয়তাকে সবসময় বিরক্ত করে)
— আমাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছেন? আমার বাড়িতে আমাকে…..!!
— হ্যাঁ তোমার বাড়িতেই জান। তুমি তো আমাকে দেখ না, আজকে আমি তোমাকে দুচোখ ভরে দেখব। আজকে আমার হাত থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।
— দেখুন উল্টাপাল্টা কথা না বলে আমাকে ছাড়ুন। নইলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে।
প্রিয়তাকে আর কোন কথা বলতে না দিয়ে পকেট থেকে পাতলা ওরনা বের করে সেটা দিয়ে প্রথমে মুখ এবং পরে হাত বেধে দেয়। প্রিয়তা পেরে উঠে নি তার সাথে। কেন যেন মনে হচ্ছে তার বাড়িতেই তার সম্মান নষ্ট হতে চলেছে।
এক ধাক্কায় বিছানায় ফেলে দেয় প্রিয়তাকে।
চলবে……..