#প্রিয়তার_প্রণয়
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_৩২
ইয়াশকে কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না প্রিয়তা। কারণ ওটা ইচ্ছে হলেও সে আর এখন ভাবতে চায় না তবুও স্যার তাকে রাজি করার জন্য বলেই যাচ্ছে।
— আমাকে একবার নিজের ইচ্ছের কথা জানালেই পারতে তুমি, দেখতে আমি তোমার ইচ্ছে পূরণ করি কি না।(ইয়াশ)
— বিশ্বাস কর, আমি ভার্সিটি ভর্তি হওয়ার আগে থেকে স্কলারশিপ নিয়ে বাহিরে পড়তে যেতে চাইতাম। আরশি আপুকে দেখে আমার ইচ্ছেটা বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমি আর এখন ওসব ইচ্ছে আমার আর একদম নেই। ওটার ব্যবস্থা হয়ে গিয়েছে স্যার আমাকে জানিয়েছিল কিন্তু আমার তো আর এখন যাওয়া সম্ভব না আমার এখন বিয়ে হয়েছে সংসার হয়েছে। বড়মা বড়বাবাকে ছেড়ে বাহিরের দেশে থাকা অসম্ভব না? আর সবচেয়ে বড় কথা তুমিও যাচ্ছো, আরশি আপুও গিয়েছে এবার আমিও যদি যেতে চাই এক বাসার তিনজন পড়াশোনার জন্য বাহিরে থাকলে কেমন দেখায়!
— বিয়ে হলে বাহিরে পড়তে যাওয়া নিষেধ এটা কোথাও লেখা আছে?
— না তা লেখা নেই কিন্তু এটা তো অসম্ভব তাই না। আর তার চেয়ে বড় কথা আমি আর এখন যেতে চাই না ইচ্ছে নেই আমি স্যারকে জানিয়ে দিয়েছি আগামীকাল আবার ভালো করে বুঝিয়ে বলব।
— না একদম না।
— কেন? তুমি কি চাইছো বুঝতে পারছো?
— হ্যাঁ বুঝতে পারছি৷ আমরা সবাই বাহিরে পড়তে গেলে বাসায় শুধু বাবা মা থাকবে এটা ভেবে যদি নিজের ইচ্ছে জলাঞ্জলি দাও তাহলে খুব বড় ভুল করা হবে তোমার নিজের সাথে।
— না, আমি এমনিই এখন আর যেতে চাই না।
— আমি তো যাচ্ছি সেটার কাজ ও শুরু হয়ে গিয়েছে। এখন আমি গেলে তোমার তো আমাকে ছাড়া অন্ততপক্ষে চার থেকে পাঁচ বছর থাকতে হবে। তাহলে এটা ভালো হবে না যে তুমিও তোমার ক্যারিয়ারের দিকে নজর দিলে?
— এখানে পড়েও তো ক্যারিয়ার গড়া যাবে।
— তবে কাঙ্ক্ষিত ক্যারিয়ার পাবে? আর যেখানে আমি তোমাকে বলছি সেখানে তুমি কেন না করছো আমি বুঝতে পারছি না।
— কিন্তু সত্যিই আমি আর এখন…..
— একদম কোন কথা না। আমি এই বিষয়ে সবার সাথে কথা বলব, একটাই অনুরোধ মাঝখানে শুধু ঝামেলা পাকিও না।
— শোন….
— হ্যাঁ বল।
— ভালোবাসি।
— হঠাৎ?
— আমি না জানি না অন্য মেয়েদের স্বামী কেমন, তবে মনে হয় না তোমার মত কেউ হবে। তুমি ঠিক আমার গল্পের মুখ্য চরিত্রের মত, যেটা আমার গল্পেই শুধু বাস্তব অন্যদের কাছে অবাস্তব বা গল্প।
— আমি কেমন জানি না, আমি শুধু জানি আমার ভালোবাসার মানুষকে আমার ভালো রাখতে হবে। আমার ভালোবাসার মানুষটা ভালো থাকলেই আমি ভালো থাকতে পারব। আগে তো আমার জীবনে বাবা মা আর আরশি ছিল, এখন তুমিও যুক্ত এই চারজনের জন্য আমি জীবনও দিয়ে দিতে পারি। আর একটা ছেলের যখন বিয়ে হয়ে যায় তখন তার স্ত্রী হয় তার সবচেয়ে কাছের।
— এত ভালোবাসা রেখে এতদিন আমাদের দূরে থাকতে হবে!
— শুধু চার থেকে পাঁচ বছর, দেখতে দেখতে চলে যাবে। তারপর আমরা আর আমাদের হ্যাপিলি ম্যারিড লাইফ।
— আমি বুঝতে পারছি না আমার কথা শুনে সবাই বিষয়টা কিভাবে নেবে!
— আপনাকে এতকিছু বুঝতে হবে না। আপনি শুধু বাহিরে গিয়ে আমাকে ভুলে কোন বিদেশীর প্রেমে পিছলে যাবেন না তাহলেই হবে আর বাকিটা আমি দেখে নেব।
— তোমার কি মনে হয় তোমার মতো কেউ আমাকে ভালোবাসতে পারবে? এত ভালোবাসা আমি কখনও মাথা থেকে নামাতেই পারব না পায়ে ঠেলা তো দূর।
— ভালোবাসি প্রিয়।
— আমি তো কাউকে ভালোবাসি না।
— আপনাকে ভালোবাসতেও হবে না।
— আমি ভালো না বাসলে আপনাকে কে ভালোবাসবে মশাই?
— মেয়ের অভাব আছে নাকি?
— কেউ শুধু নজর দিয়ে দেখুক, নজর নামিয়ে ফেলার আগেই শেষ করে দেব।
— একটু বেশি হয়ে যাবে না?
— কিচ্ছু বেশি হবে না।
— এটা কি আমার জন্য ভালোবাসা?
— অধিকার এটা মশাই।
— তাহলে ভালোবাসা নেই আমার জন্য একটুও?
— না নেই।
— আমি কার সাথে আছি! আমাকে নাকি একটুও ভালোবাসে না!
— তুমি শুধু আমাকে সবটুকু দিয়ে ভালোবেসে নাও কিছুদিন পর তো আমরা দীর্ঘসময়ের জন্য আলাদা হয়ে যাব।
— কোথায় দীর্ঘসময় দুজনের জীবন থেকে চার/পাঁচটা বছর যাবে শুধু আর এরপর আর কখনও আলাদা হব না।
— দূরে যাওয়ার কথা উঠলেই আমার কেমন যেন ভয় লাগে, যদি আর এক হতে না পারি! আমি খুব বেশি ভালোবাসি, একদম আলাদা হওয়া সহ্য করতে পারব না।
— এক কেন হব না? এই সময়টা দেখবে দেখতে দেখতে কেটে যাবে। এখন রেস্ট নাও, আমি মা বাবার সাথে কথা বলে তোমার বাবা মার সাথে কথা বলব। রাতেই রেজাল্ট পেয়ে যাবে, আশা করছি পজেটিভ আসবে।
— আমার বিষয়টি বাদ দিলে হয় না?
— না হয় না, তুমি রেস্ট নাও কোন কথা বলতে হবে না।
প্রিয়তাকে রেখে ফ্রেশ হতে চলে যায়, প্রিয়তা আর কি বা করবে বসে বসে ফোন টিপতে থাকে।
_____________
রাতে বসে বসে ক্লাসের পড়া কমপ্লিট করছিল প্রিয়তা। এমন সময় ইয়াশের বাবা মা রুমে আসে ইয়াশ তখন বাহিরে ছিল। দুজনকে দেখে বই বন্ধ করে পাশে রেখে তাদের বসতে বলে। প্রিয়তার এখন ভয় ভয় লাগছে ইয়াশ কি তাহলে বাসায় বলে দিয়েছে। সে বারবার নিষেধ করেছিল এক বাড়ি থেকে তিনজনই বাহিরে পড়তে গেলে ভালো দেখায় না তবুও সে হয়তো বলে দিয়েছে। বড়মা বড়বাবা হয়তো রাজি হয় নি তাই দুজন একসাথে এসেছে।
— পড়ছিলি?(আঞ্জুয়ারা)
— হ্যাঁ বড়মা পড়া বাদ ছিল তাই কমপ্লিট করে রাখছিলাম।
— ইয়াশ যা বলল তা কি সত্যি? আমি কিন্তু আমার বন্ধুকে বলেছি সব ব্যবস্থা করতে যদিও প্রায় সব হয়েই গিয়েছে তুই ভার্সিটিতে হ্যাঁ বললেই হলো। (বাবা)
— বড়বাবা তুমিও! আমি বারবার বলেছি আমি যাব না তবুও উনি এমন করছেন। নিজে যাবেন জন্য কি আমারও যেতে হবে!
— দুইজনই যাবি সমস্যা কি দুজনরই ভবিষ্যৎ আছে।
— তোমরাও!
— তোমরাও আবার কি! প্রথমে ভেবেছিলাম যেতে দেব না কিন্তু পরে ভাবলাম দুইজন যেহেতু হচ্ছে আর তুই যদি যেতেই চাস তাহলে আটকে কেন রাখব। তোর ও তো ভবিষ্যৎ আছে, চার পাঁচ বছর কষ্ট করলেই আর কিছু ভাবতে হবে না।
— আরশি আপু গিয়েছে, তোমার ছেলেও যাচ্ছে এখন যদি আমিও যাই বিষয়টা কেমন দেখায় না?
— তোর তো আরও যাওয়ার আগ্রহ থাকা উচিৎ মা, ওরা দুজনই বাহিরে যাচ্ছে বা গিয়েছে তাহলে তোর ও ওদের মতো হতে হবে।(বাবা)
— আমি বুঝতে পারছি না কি করব বড়বাবা।
— যাওয়ার ইচ্ছে না থাকলে ইচ্ছে জন্মা মা। কালকে ইয়াশ যাবে তোর ডিপার্টমেন্টে কথা বলতে। সব ঠিকঠাক হলে দুজন খুব তাড়াতাড়ি যেতে পারবি।
অনেকক্ষণ কথা বলে দুজন বুঝিয়ে রাজি করায় প্রিয়তাকে। প্রিয়তাও আর না বলে না কারণ সত্যিই তো সে চায় তার স্বপ্নপূরণ করতে।
দেখতে দেখতে নিজেদের স্বপ্নপূরণের সময় চলে আসে। একদিকে আনন্দ আবার অন্যদিকে দুজনের এত দূরত্বের কথা ভেবে মন খারাপ। সকাল হলেই ইয়াশের ফ্লাইট। ততদিনে ইয়াশের রেজাল্টও দিয়ে দিয়েছে, তার রেজাল্ট পাওয়ার পরই যাওয়ার ব্যাপারটা আরও বেশি দ্রুত এগিয়েছে।
দুদিন ধরে ইয়াশের প্যাকিং চলছিল, এতদিনের ব্যাপার প্রথমদিকের প্রয়োজনীয় সমস্ত জিনিস প্রিয়তা ব্যাগে গুছিয়ে দিচ্ছে।
রাত প্রায় এগারোটা বেজে গিয়েছে ইয়াশ মা-বাবার রুম থেকে নিজের রুমে আসে। প্রিয়তা রুমে নেই, ব্যাগ গুছিয়ে পাশে রেখে দিয়েছে। বারান্দায় প্রিয়তার গলা শুনতে পাওয়া যায়। হয়তো কারও সাথে ফোনে কথা বলছে। ইয়াশ বারান্দায় গিয়ে নিজের উপস্থিতি বুঝায়, প্রিয়তা ইয়াশকে দেখে এক হাত তার দিকে বাড়িয়ে দেয়। হাতে হাত রেখে এগিয়ে গিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।
— হ্যাঁ মা, তাহলে ওই কথাই রইলো তুমি আর বাবা সকাল সকাল চলে এসো, ওর ফ্লাইট এগারোটায়, সাড়ে নয়টা বা দশটায় তো ওখানে পৌঁছাতে হবে। তোমরা তাড়াতাড়ি চলে এসো। অনেক রাত হয়ে গিয়েছে এখন ঘুমাও।
প্রিয়তা ফোন কেটে কোমড়ে রাখা ইয়াশের হাত ধরে দাঁড়ায়।
— তোমার বাবা মা আসছে?
— হ্যাঁ, সকালেই আসছে, কিছুদিন থাকবে আমারও তো সোমবার ফ্লাইট আমি চলে গেলে তারাও চলে যাবে বাড়িতে।
— তোমার সময় তো আমি থাকতে পারব না, তুমি কিন্তু সাবধানে যাবে বুঝেছো, গিয়ে অবশ্যই সেখান থেকে ফোন আর সিম নিয়ে নিবে। নিজের আইডি সবসময় সচল রাখবে। একদম চিন্তা করবে না, নতুন জায়গা একটু সমস্যা হবে কয়েকদিন কেটে গেলে সব ঠক হয়ে যাবে।
প্রিয়তা ইয়াশের দিকে হয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে। ইয়াশ বুঝতে পারছে প্রিয়তার খুব কষ্ট হচ্ছে। তারও তো কম কষ্ট হচ্ছে না। প্রিয় মানুষকে এতবছর পর কাছে পেয়ে বছর না ঘুরতেই এত দীর্ঘ সময়ের জন্য আবার আলাদা হতে হবে।
ইয়াশ হঠাৎ বুকে ভেজা অনুভব করে, তার মানে প্রিয়তা কান্না করছে!
— এই তুমি কান্না কেন করছো?(ইয়াশ)
—
— প্রিয়…
— হুম
— কান্না করছো কেন? এভাবে কান্না করলে কি আমার যেতে মন চাইবে বল?
— জানি না, আমার ভালো লাগছে না। আমি কিভাবে থাকব এতগুলো বছর!
— এতগুলো বছর থাকতে হবে এটা শুধু ভাবছো কেন? এরপরেরটা একটু ভাবো তাহলেই দেখবে আর কান্না পাবে না।
— আমি ভাবতে পারছি না।
— তাহলে কি আমি বা তুমি কেউ যাব না?
— না গেলেও তো হবে না তাই না?
— হ্যাঁ হবে না তো।
— আজকে সারারাত আমাকে জড়িয়ে শুয়ে থাকবে একটুও ছাড়বে না। জানি না আবার কবে আমি তোমার বুকে মাথা রাখতে পারব কি পারব না।
— একদম চুপ, রাখতে পারব কি পারব না এটা আবার কেমন কথা। বিষয়টা এমনভাবে নিচ্ছো যে কেউ বোধ হয় কখনও যায় নি। প্লিজ এমন করে না জান, সময়টা কিন্তু খুব বেশি নয়। আমি যেমন আগে দেশ ছাড়ছি ঠিক তেমন আমিই আগে চলে আসব। আমি অপেক্ষা করব আমার প্রিয়র জন্য। আর আজকে আমাকে জড়িয়ে ঘুমোবে আমার বিবিসাহেবা তাই না? চল, অনেকরাত হয়ে গিয়েছে আজকে সারারাত বুকে রেখে দেব।
_____
সকালবেলা এয়ারপোর্টে সবাই দাঁড়িয়ে আছে। ইয়াশের যাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে প্রায়। এখনই ভেতরের দিকে যেতে হবে। এদিকে প্রিয়তার মনে যেন কালো মেঘ জমে একাকার হয়ে আছে। মেয়েটার চোখ টলমল করছে, বারবার কাছে এসে দাঁড়াচ্ছে কিন্তু বড়রা আছে আর চারপাশে এত মানুষ আছে তাই হয়তো একটু জড়িয়ে ধরে মনকে শান্ত করতে পারছে না। ইয়াশ বিষয়টা বুঝতে পেরে নিজেই লাজলজ্জার মাথা খেয়ে প্রিয়তাকে জড়িয়ে ধরে। প্রিয়তা তখন শব্দ করে কান্না করে দেয়। দুজনেরই খারাপ লাগছে, কিছুদিন হলো দুজন দুজনকে কাছে পেয়েছে আর এখনই কি না একে অপরের থেকে এতটা দূরে থাকতে হবে।
ইয়াশের যাওয়ার সময় হলে সবার কাছে থেকে বিদায় নিয়ে নিজের গন্তব্যের দিকে পা বাড়ায়। দুজন দুজনকে মন ভরে দেখে নেয় আবার কবে দেখতে পাবে কেউ জানে না। যতদূর ইয়াশকে দেখা যায় ততদূর প্রিয়তা তাকিয়ে থাকে। ইয়াশকে আর না দেখা গেলে প্রিয়তা মা আর বড়মাকে(শাশুড়ী) জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়।
অতঃপর প্রিয় মানুষটি অনেকটা সময়ের জন্য নিজের মানুষদের কাছে থেকে বিদায় নেয়।
________
ইয়াশ চলে যাওয়ার সপ্তাহখানেক পর প্রিয়তারও ফ্লাইট থাকে। নিজেদের স্বপ্নপূরণ বলে কথা। নিজেরাই নিজেদের মাঝে বোঝাপড়া করে নিয়েছে নিজেদের ভালোবাসার মানুষের সাথে থাকার মত স্বপ্নপূরণও জরুরি। চিরদিন একসাথে ভালো থাকার জন্য কিছু সময় দূরে থাকা ভালো।
চলবে……
#প্রিয়তার_প্রণয়
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_৩৩
কেটে যায় পাঁচ বছর, ইয়াশ দেশে ফিরে ভালো একটা হাসপাতালে দায়িত্বরত আছে। আরশিও ভালো একটা জব করছে, তার বিয়ের কথাবার্তা চলছে।
রাত এগারোটার দিকে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে আসে ইয়াশ। বাসায় ফিরে সোজা নিজের রুমে চলে যায় সে। রুমে গিয়ে দেখে তার জন্য খাবার রুমেই রেখে দেওয়া হয়েছে। ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে বারান্দায় গিয়ে প্রিয়তাকে কল দেয়। কিছুক্ষণ রিং হতেই প্রিয়তা কল রিসিভ করে নেয়।
— প্রিয়…..
— হ্যাঁ বল, কি করছো?
— খাওয়া দাওয়া করে তোমাকে কল দিলাম। তুমি কি করছো?
— আমি এই তো রুমেই আছি খাওয়া দাওয়া করব। খুব বেশি প্রেশার হয়ে যাচ্ছে তোমার?
— মাঝে মাঝে এরকম হয়। তবে তোমাকে খুব মিস করছি, তোমার আসার কথা শুনছি না কেন? তোমার তো রেজাল্ট ও দিয়ে দিয়েছে।
— এই তো অল্প কিছুদিনের মধ্যেই চলে আসব, জবের একটা ডেট ছিল ওটা এই মাসেই শেষ হবে, শেষ না হলে তো বের হতে পারব না।
— প্লিজ তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা কর, ভার্চুয়ালে দেখতে পেলেও তোমায় ছুঁতে তো পারি না। কতদিন হয়ে গেল এই বুকে তোমার মাথা স্পর্শ করে না বল তো!
— আমি কি আসতে চেয়েছিলাম? তোমার জন্যই তো এতকিছু। আর কিছুদিন অপেক্ষা করো শুধু তোমার প্রিয় খুব তাড়াতাড়ি তোমার কাছে আসছে, রেডি থাকো কতসময় বুকে রাখতে পারো আমি শুধু দেখব।
— শুধু চলে এসো প্লিজ তোমাকে ছাড়া খুব একা একা লাগে আমার। চারদিকের এত এত ভালোবাসা তোমার শূন্যতা আমায় ভীষণ পীড়া দেয়।
— আমার অবস্থা বোঝো একটু, যে মেয়ে তোমাকে ছাড়া থাকতে পারতো না সে এতদিন তোমাকে ছাড়া। সময় সময় মনে হয় শুধু শরীরটাই বাকি আছে, মনটা তোমার কাছে পড়ে থাকে।
— একবার শুধু এসে দেখ, আর একটাদিনের জন্যও তোমাকে আমি আমার থেকে দূরে রাখব না। আমি আর সত্যিই তোমাকে ছাড়া থাকতে পারছি না।
— কবে যে সৃষ্টিকর্তা আমাদের আবার এক করবে!
— খুব তাড়াতাড়ি যেন আমরা এক হতে পারি। সামনে তো আরশির বিয়ে, বিয়ের কথা হচ্ছে। তার একমাত্র ভাবি না থাকলে তো বিয়ে জমবে না তাই তোমার কথা ভেবে সে সময় নিয়েছে। তার কথা আমরা তাকে ছাড়া বিয়ে করে নিলেও সে আমাদের দুজনকে একসাথে না দেখে বিয়েতে বসবে না।
— আরশির বিয়েতে খুব মজা করব।
— মজা পরে, আগে আসো তো তোমাকে কতদিন কাছে পাই না বল তো বুকটা একদম খরায় খাঁ খাঁ করছে তুমি আসলে সতেজ হবে।
— প্রেম জমিয়ে রাখো আমার জন্য।
— চার পাঁচ বছরের প্রেম জমা হয়ে আছে, এগুলো নিয়ে আগে আমায় বাঁচাও।
— আর কয়েকটা দিন শুধু অপেক্ষা করো। আচ্ছা লুবনা আপুর মেয়ে অনেকটা বড় হয়ে গিয়েছে তাই না?
— হ্যাঁ অনেক বড় হয়ে গিয়েছে। তারা তো সময় নেয় নি বেশি। ওহ বুশরারও বাবু হবে শুনেছো?
— না তো, সবার বাবু হয়ে গেল।
— তোমারও চাই নাকি?
— হ্যাঁ অনলাইনে একটা অর্ডার দিয়ে রাখো, এসেই যেন পাই।
— অনলাইনে কেন অর্ডার দিতে হবেই, তুমি চলে এসো বাচ্চাও কয়েকমাস পর চলে আসবে।
—
— কথা নেই কেন? আমার প্রিয় কি লজ্জা পাচ্ছে নাকি?
— হুম।
— থাক আর লজ্জা পেতে হবে না।
— আমার কিন্তু মেয়ে বাবু চাই।
— মেয়ে পেয়ে গেলে আমার ভালোবাসা কমে যাবে না তো? মেয়েকে ভালোবাসার মানুষের কিন্তু অভাব নেই, মেয়ের বাবাকে ভালোবাসার মানুষ একজনই।
শহরের মানুষগুলো নিজেদের কাজে ব্যস্ত তেমন দুটি প্রাণ তাদের মনের কথাগুলো ভাগাভাগি করে নিতে ব্যস্ত। অনেক রাত অবধি প্রিয়তা আর ইয়াশের কথা চলে।
__________
সকালবেলা ইয়াশ নাস্তা করছিল এমন সময় আরশি রুম থেকে বেরিয়ে ইয়াশের পাশের চেয়ারে এসে বসে।
— বাসায় আসা কখন ভাইয়া?
— কেন?
— এমনি জানতে চাইছিলাম।
— এই কয়েকদিন তো দেরি হচ্ছে আসতে আজকেও হয়তো দেরিই হবে কেন কোন দরকার?
— না না এমনি জানতে চাইলাম। ছোটবাবা আর ছোটমা আসছে শুনলাম।
— আজকে?
— হ্যাঁ।
— হঠাৎ?
— জানি না এমনিই হয়তো।
— ওহ আচ্ছা, আসুক তাহলে আমি রাতে এসে দেখা করব।
— আচ্ছা তাহলে খাওয়া দাওয়া করে বের হও। আমিও বের হব একটু।
— কোথায় যাবি?
— এমনি ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে।
— নামিয়ে দিতে হবে কোথাও?
— না একাই চলে যাব। একটু দেরি হবে যেতে।
— আচ্ছা ঠিক আছে চলে যাস তাহলে।
— ঠিক আছে।
ইয়াশ খাওয়া দাওয়া করে বেরিয়ে যায়। আরশিও তার বাবার থেকে কিছু টাকা নিতে যায় কেনাকাটার জন্য।
— তোমার আবার এখন কি কেনাকাটা করতে হবে?(বাবা)
— প্রিয় আসছে, ও আসবে দুজন আজকে ঘুরবো ড্রাইভারের কাছে ওর ব্যাগসহ পাঠিয়ে দেব বিকেলে দুজন বাড়ি আসব।
— মেয়েটা এতগুলো বছর পর বাসায় আসছে, তোর আর তার পাগলামির জন্য ইয়াশকে জানাতে পারলাম না আবার বলছিস বিকেলে ফিরবি। তাড়াতাড়ি ওকে নিয়ে বাসায় আসবি, প্রয়োজন হলে কাল বের হবি।
— আচ্ছা যাও তাড়াতাড়ি নিয়েই চলে আসব। ভাইয়া এসে কেমন অবাক হবে বল তো?
— তাকে জানালে কত খুশি খুশি থাকতো বল তো? সে নিজেই চলে যেত প্রিয়তাকে নিয়ে আসতে।
— তুমি একবার ভাবো রাতে ভাইয়া রুমে গিয়ে দেখবে প্রিয় রুমে আছে, কি চমকানো চমকাবে শুধু ভাবো তুমি!
— হ্যাঁ হ্যাঁ ভেবেছি।
মা মেয়ে দুজন কথা বলছিল এমন সময় রুম থেকে চিৎকার করে ইয়াশের মাকে ডাকতে ডাকতে বেরিয়ে আসে ইয়াশের বাবা। এটুকুতেই যেন তিনি হাপিয়ে উঠেছেন। যত কাছে আসছে তত দেখেই মিসেস আঞ্জুয়ারা বুঝতে পারলেন ইয়াশের বাবার কপালে চিন্তার ছাপ।
— কি হয়েছে? এভাবে চিৎকার কেন করছো?(আঞ্জুয়ারা)
— এই আরশি, প্রিয়তা যে প্লেনে আসছে ওটা কখন রওয়ানা দিয়েছে?
— রাত সাড়ে বারোটার দিকে কেন?
— এখানে ল্যান্ড করার কথা কয়টায়?
— এইতো কিছুক্ষণের মধ্যেই।
— আয় তো টিভিতে কি দেখাচ্ছে দেখ তো! আমার তো ব্যাপারটা ঠিক লাগছে না।
— কেন কি দেখাচ্ছে টিভিতে?
— প্লেন ল্যান্ড করতে যেয়ে নাকি কি হয়েছে ভেতরে থাকা অনেক যাত্রীই আহত হয়েছে দুই থেকে তিনজন নিহত ও হয়েছে।
— আমাদের এখানে?
— হ্যাঁ রে।
— কি বলছো বাবা!
— চল তো, কি বলছে তোর বাবা এসব!
সবাই দৌঁড়ে রুমে চলে যায়। ইয়াশের বাবা যা বলেছে তা একদম ঠিকই বলেছে। এই প্লেনেই তো প্রিয়তার আসার কথা ছিল, প্রিয়তা তো বলল আসতে আসতে এগারোটা প্রায় বেজে যাবে কারণ কোথায় কোথায় যেন প্লেন পাল্টাতে হয়। কিন্তু প্লেন তো এটাই বোধ হয়। প্রিয়তার সাথে যোগাযোগ কিভাবে করবে ভেবে পাচ্ছে না আরশি। তার মাথা আর কাজ করছে না। কোন কিছু মাথায় আসছে না কি করবে সে। এদিকে ইয়াশের বাবা মার হাত পা কাঁপছে, কিছুক্ষণের মধ্যে হয়তো প্রিয়তার বাবা মা আসবে তারা এসে এটা শুনলে কেমন হবে। আর প্রিয়তা কেমন আছে কোথায় কিভাবে আছে তা জানবে কিভাবে! ইয়াশের মা এবার আরশিকে বলল ইয়াশকে কল করে জানাতে কারণ আর ব্যাপারটা মজার নেই, ব্যাপারটা সিরিয়াস হয়ে গিয়েছে। যদি সত্যিই অন্যরকম কিছু হয়ে যায়!
আরশি কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন দিল ইয়াশকে। প্রথমবার কল কেটে গেল ইয়াশ রিসিভ করলো না। আরশির ভীষণ চিন্তা হচ্ছে কি করবে সে এখন! আবার কল দিলো ইয়াশকে। ইয়াশ এবার কল রিসিভ করলো।
— হ্যাঁ বল, রোগী দেখছিলাম।
— ভাইয়া,….
— হ্যাঁ শুনছি বল।
— ভাইয়া তু তুমিইইই…
— হ্যাঁ আমি কি?
— তু তুমি একটু তাড়াতাড়ি এয়ারপোর্টে যাও প্লিজ।
— এয়ারপোর্টে কেন?
— ভাইয়ায়ায়ায়ায়ায়া….
— কি হলো কান্না করছিস কেন?
— ভাইয়া প্রিয়…
— প্রিয় কি? এরকম অর্ধেক অর্ধেক কথা কেন বলছিস? ক্লিয়ারলি বল…
— ভাইয়া আজকে প্রিয়তার দেশে ফেরার কথা। সে তোমাকে জানাতে চেয়েছিল কিন্তু তোমাকে সারপ্রাইজ দেব ভেবে ওকে নিষেধ করেছিলাম। ভেবেছিলাম তুমি হাসপাতাল থেকে এসে ওকে দেখলে চমকে যাবে। কিন্তু আল্লাহ বোধ হয় তা হতে দিলো না….
— মানে? কি বলছিস তুই এসব?
— ভাইয়া প্রিয়তার যে প্লেনে আসার কথা ছিল সেটা নাকি ল্যান্ড করতে গিয়ে দূর্ঘটনার শিকার হয়েছে খবরে দেখাচ্ছে।
আরশির কথা শুনে নিজের পায়ের ভর স্থানচ্যুত হয়। টাল সামলাতে না পেরে পিছনে সরে যায়। এটা কি বলল আরশি! আর প্রিয়……
সাথে সাথে দুচোখ টলমল করে উঠলো তার।
হঠাৎ কোত্থেকে মনোবল চলে আসে তার, চোখের পানি মুছে নেয়। নাহ তার প্রিয়তার কিছু হতে পারে না, কিচ্ছু হতে পারে না।
সে তার ফোন আর ওয়ালেট নিয়ে তাড়াহুড়ো করে কাউকে কিছু না বলেই বেরিয়ে যায়। যে করেই হোক তাড়াতাড়ি সেখানে পৌঁছতে হবে। তার প্রিয়তার কিছু হয় নি, সে একদম ঠিকঠাক আছে। সে গিয়ে দেখবে হয়তো প্রিয়তা তাকে দেখামাত্র দৌঁড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরবে, বলবে কেমন সারপ্রাইজ দিলাম বল।
ইয়াশ নিজের গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায় এয়ারপোর্টের উদ্দেশে। বারবার সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করতে থাকে, তিনি নিশ্চয়ই খারাপ কিছু হতে দেবে না কিন্তু তবুও তার মনের ভেতরটা এমন কেন লাগছে! তার প্রিয়তা ঠিক আছে তো!!!
যারা পড়বেন অন্তত লাইক দিয়ে রেস্পন্স জানাবেন। গল্পের আর এক পর্ব পাবেন, চেষ্টা করব আগামীকাল দেওয়ার, আর যদি না পারি কালকের পরদিন পাক্কা দিয়ে দেব অন্তিমপর্ব। আজকের পর্বে আমার সকল পাঠক রেস্পন্স করবেন, যারা কোনভাবে লাইক রিয়েক্ট বা কমেন্ট করে রেসপন্স করেন না তারাও প্লিজ আজকে নিজেদের উপস্তিতি বোঝাবেন।
চলবে……