#প্রিয়তার_প্রণয়
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_৩০
প্রিয়তা আর ইয়াশের শহরে ফিরতে ফিরতে প্রায় বিকেল হয়ে যায়। বাসায় যারা হেল্পিং হ্যান্ড ছিল তারাও ছুটিতে, হয়তো ইয়াশের বাবা মা আসলেই সবাই আসবে। ইয়াশ আর প্রিয়তা বাসার ভেতরে চলে যায়। প্রিয়তা নিজের রুমের দিকে যেতে নিলে ইয়াশ হাত ধরে পিছনের দিকে টান দেয়।
— আপনি কোথায় যাচ্ছেন ম্যাম?
— রুমে যাব না?
— আজকে থেকে আমার রুমই আপনার রুম।
— আমার রুমই আপনার রুম, চলে আসুন।
— চলুন আপনার রুমের জিনিসগুলো আমার রুমে নিয়ে যাই।
— শুধু আমার রুমের জিনিসগুলো আপনার রুমে যাবে?
— নাহ আমার বউটাও যাবে। বাই দা ওয়ে গতরাতের মতো তুমি করে বললে হয় না?
— না আপনিই বলব।
— তাড়াতাড়ি রুমে চল।
— কেন?
— আপনার সবকিছু আমার রুমে নিয়ে আসতে হবে না? রুম গোছাতেও তো সময় লাগবে তাই না?
— জার্নি করে আমার এখন এসব করতে ইচ্ছে করছে না।
— তাহলে বাদ এত কষ্ট করতে হবে না। এখন গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।
— ঠিক আছে।
দুজন রুমে চলে যায়, রুমে ঢুকে ব্যাগ রেখেই ইয়াশ খাটের ওপর শুয়ে পড়ে। প্রিয়তা নিজের ব্যাগ রেখে তার আগের রুম থেকে পড়ার জন্য জামা আনতে যাওয়ার জন্য এগুলেই ইয়াশ ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়।
— কি হলো?
— এখনই তো খাটের কোণায় লাগতো।
— আমি খেয়াল করি নি
— একটু খেয়াল করে চলতে হবে প্রিয়।
— কেন? আমার খেয়াল রাখার জন্য তো আপনি আছেনই।
— এখন আমি যদি না থাকতাম তাহলে কি হতো? নিজের খেয়াল নিজেরও একটু রাখতে হবে প্রিয়, আমি তো আছিই তবুও।
— ঠিক আছে, আমি আসছি আপনি ফ্রেশ হয়ে নেন।
— শোনো….
— হ্যাঁ শুনছি।
— কালো শাড়িটা পড়বে?
— এখন শাড়ি?
— হ্যাঁ বাসায় রান্না করতে হবে না বের হই ফ্রেশ হয়ে, ঘুরেফিরে রাতে ডিনার করেই বাসায় ফিরে আসব।
— আপনার পরিক্ষা কবে যেন?
— একুশ দিন পর।
— আপনি বাসায় বলেছেন দুই সপ্তাহ পর, এমন কেন?
— পড়তে হবে অনেক।
— মনে যেন থাকে।
— জি ম্যাম এখন তাড়াতাড়ি ফ্রেশ কয়ে রেডি হয়ে নেন।
— আপনি ফ্রেশ হয়ে নেন আমি আমার কিছু জামাকাপড় অন্তত এখানে নিয়ে আসি।
— ঠিক আছে।
দুজন রাত আটটা নয়টা পর্যন্ত ঘুরাঘুরি করে বাসায় ফিরে আসে। দুজন বসে গল্প করছিল, এমন সময় প্রিয়তা ইয়াশকে বলে-
— আপনাকে না জানিয়ে আমি একটা কাজ করেছি।
— কি কাজ?
— আমি এখানে আসার পরপরই বান্ধবীর সাথে পাসপোর্টের অফিসে গিয়ে ওটা বানাতে দিয়েছিলাম।
— কি?
— হ্যাঁ, প্লিজ রাগ করবেন না। আপনি রাগ করলে….
— আমাকে জানালে কি আমি না করতাম?
— না কিন্তু….
— ঘুমাও।
— প্লিজ রাগ করবেন না, আমার ভুল হয়ে গিয়েছে আর আপনাকে না জানিয়ে কিছু করব না।
— ঠিক আছে ঘুমাও এখন।
— আপনি তবু রাগ করছেন, বলছি তো আর হবে না।(ভয়ে ভয়ে)
— ঘুমাতে বলেছি প্রিয়।
— প্লিইইইজ..
— ঘুমাও।
প্রিয়তা আর কিছু বলে না, শেষে কি না ইয়াশ তার সাথে চিৎকার করে কথা বলল! তার উচিৎ হয় নি ইয়াশকে না জানিয়ে এসব করা। প্রিয়তা পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে, তার চোখ দিয়ে পানি টপটপ করে পড়ছে একপাশে।
ইয়াশ ঘটনা বুঝতে পেরে প্রিয়তাকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে। প্রিয়তা এবার শব্দ করে কান্না করে দেয়। ইয়াশ প্রিয়তার পিঠে হাত বুলাতে থাকে।
— কান্না করতে হবে না থামো এবার।
—
— প্রিয়….
—
— এই প্রিয়, কান্না করতে না করেছি কিন্তু।
— নিজে বকবে আবার কান্নাও করা যাবে না।(কান্না করতে করতে)
— আমি যা বলব তাই। এখন কোনরকম কান্না করা চলবে না বুকে নিয়েছি না?
—
— একটা কথা জিজ্ঞেস করছি, সোজাসাপ্টা উত্তর দিতে হবে।
— কি?
— পাসপোর্ট কেন?
—
— আবার চুপ কেন?
— আপনার সাথে ঘুরতে যাওয়ার জন্য।
— শুধু এই একটা কারণেই?
— হ্যাঁ।
— আমার তো মনে হচ্ছে অন্য কারণ আছে।
— অন্য কোন কারণ নেই।
— আমার পরিক্ষার রেজাল্ট ভালো হলে সার্টিফাইড ডাক্তার হলে বাহিরে যেতে হবে এটা আগে থেকেই ঠিক করে রাখা আছে।
— তখন আমি ডাক্তারবাবুর বউ আহহা।
— এখনই না কান্না করছিলে!
— আবার কান্না করব?
— না, একদম কথায় কথায় কান্না করা যাবে না।
— ভালোবাসলে আর কে কান্না করে?
— চুপ করে এখানেই ঘুমাও আজকে।
— আমাকে বলতে হবে না আপনার বুক আজকে আমার বালিশ।
— হুম ঘুমাও এখন রাত হয়ে গিয়েছে।
— ভালোবাসি কে বলবে শুনি?
ইয়াশ মুচকি হেসে প্রিয়তার কপালে একটা চুমু দিয়ে বলে ভালোবাসি প্রিয় অনেক ভালোবাসি। এবার ঘুমাও কাল থেকে আবার ক্লাসে যেতে হবে তোমার। আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দেই তুমি ঘুমিয়ে পড়। প্রিয়তা সম্মতি জানিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে। ইয়াশ মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।
________________
শহুরে আবহাওয়ায় কেটে গিয়েছে বেশ কিছুদিন।
সকালে প্রিয়তা তার বড়মার সাথে রান্না শেষ করে ক্লাসে যাওয়ার জন্য রেডি হতে রুমে গিয়ে দেখে ইয়াশ তখনও ঘুমোচ্ছে। প্রিয়তা ভেবেছিল হয়তো ইয়াশ ঘুম থেকে উঠে পড়ছে কারণ তার আজ পরিক্ষা আছে। আর এই ছেলে এখনও পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছে। প্রিয়তা কোমড়ে শাড়ির আঁচল গুজে ইয়াশকে ডাকতে থাকে। একপর্যায়ে ইয়াশ ঘুম থেকে উঠে পরে।
— কি হয়েছে?(ঘুম ঘুম কণ্ঠে)
— আপনাকে আমি সেই কখন ডেকে গিয়েছি বলেন তো?
— এদিকে এসো।( বলেই প্রিয়তাকে টেনে বিছানায় বসিয়ে নেয় ইয়াশ)
— কি, নিজে মাত্র উঠছেন আবার আমাকে বসিয়ে রাখছেন বাহ।
— কে বলেছে আমি এখন উঠছি?
— আমি দেখছি না?
— আপনি সবসময় ভুল দেখেন, এই যেমন আপনি সকালে ডেকে গিয়েছেন তখন উঠে পড়েছি আমি। রাতে ঘুমোচ্ছিলেন তো বেশ কিন্তু আমি সারারাত জেগে পড়েছি। আমার পড়া শেষ।
— বাহ আমার জামাই খুব গতিশীল, এবার উঠুন খাওয়া দাওয়া করে বের হতে হবে।
— প্রতিদিনের মত কপালে ওটা কে দেবে শুনি?
— সকালে আমি ওঠার সময় দিয়েছি।
— এখন আবার দিতে হবে তাড়াতাড়ি দাও আমার কিন্তু দেরি হয়ে যাচ্ছে।
— এসব পাগলামি না করলে হয় না তাই না আপনার?
— না হয় না, তাড়াতাড়ি।
প্রিয়তা আর কোন উপায়ন্তর না দেখে ইয়াশের কপালে চুমু দিয়ে দেয়।
দুপুরে প্রিয়তা ভার্সিটির গেইটের বাহিরে দাঁড়িয়ে ইয়াশের জন্য অপেক্ষা করছিল এমন সময় আহিন এসে পাশে দাঁড়ায়।
— দাঁড়িয়ে আছিস কেন এখানে?
— নিতে আসবে তাই দাঁড়িয়ে আছি। তুই দাঁড়ালি কেন, যা বাসায় যা।
— তুই একা দাঁড়িয়ে থাকবি আর আমি চলে যাব?
— আমাকে নিতে এখনই চলে আসবে। আজকেই ইয়াশের পরিক্ষা শেষ তাই হয়তো একটু দেরি হচ্ছে।
— আগে না ইয়াশ ভাইয়া বলতি এখন ইয়াশ?
— ওই একই হলো। (প্রিয়তা মনে করে কিছু কিছু বিষয় লুকিয়ে রাখায় অনেক মজা এই যেমন বিয়ের ব্যাপারটা)
— পরিক্ষা শেষ কয়টায়?
— দশটা থেকে একটা পর্যন্ত।
— তাহলে তো অনেক আগে থেকে এসে অপেক্ষা করার কথা।
— হুম, তুই যা আহিন তোর দেরি হয়ে যাচ্ছে।
— চল পাশে রেস্টুরেন্টে যাই, এক কাপ কফি খাই। উনি এসে কল দিলে চলে আসিস।
— না রে তুই যা আমি কোথাও যাব না।
— চল না।
— যাব না, তুই যা না প্লিজ।
— আচ্ছা ঠিক আছে আসছি তাহলে।
আহিন চলে গেলে প্রিয়তা একাই দাঁড়িয়ে থাকে। তার ও প্রায় এক ঘন্টা কেটে যায়। প্রিয়তা দাঁড়িয়ে থেকে বারবার চোখ মুছছে। সে পারতো একটা গাড়ি ডেকে বাসায় চলে যেতে কিন্তু যায় নি কারণ ইয়াশের আসার কথা ছিল।
হঠাৎ ইয়াশের গাড়ি এসে প্রিয়তার সামনে দাঁড়ায়। ইয়াশ ভেতর থেকে তাড়াতাড়ি করে বের হয়ে আসে।
— স্যরি পাগলী আমার ভুল হয়ে গিয়েছে। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করিয়ে ফেলেছি তাই না!
—
— স্যরি বললাম তো, তুমি কান্না করো না প্লিজ। আমার আসতে দেরি হচ্ছে দেখে একটা গাড়ি নিয়ে কেন বাসায় ফেরো নি?
— আমি কেন অন্য গাড়ি করে বাসায় ফিরব? আপনার তো রেসপনসেবলিটি ছিল তাই না!
— হ্যাঁ, আমি সত্যিই স্যরি জান।
প্রিয়তা কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে গিয়ে বসে। ইয়াশ প্রিয়তাকে দেখে ভাবতে থাকে, না জানি বাসায় গিয়ে কি যে হবে তার!
বাসায় ঢুকেই ড্রয়িংরুমে আবিরাকে সোফায় বসে থাকতে দেখে আরেক দফায় মেজাজ বি*’গড়ে যায় প্রিয়তার। বাসায় কেউ নেই, সে কেন এখানে বসে আছে! কোন কথা না বলে প্রিয়তা রুমে চলে যায়। ইয়াশ কি করবে বুঝতে না পেরে আর রুমে যায় না। আবিরার সাথে কথাবার্তা বলে বসে বসে।
কিছুক্ষণ পর ইয়াশ রুমে চলে যায় আবিরাকে বিদায় দিয়ে।
“তুমি নিচে আবিরার সাথে কথা না বলে চলে এলে কেন?”(ইয়াশ)
বারান্দায় বসে বসে চা খাচ্ছিলো আর বই পড়ছিল প্রিয়তা, ইয়াশের এমন কথায় ভ্রু কুচকে ইয়াশের দিকে তাকায়।
— আপনি যে দুইঘণ্টা আমাকে অপেক্ষা করিয়েছেন আমি কিছু বলেছি? বাসায় এসে দেখি মেয়ে বাসায় আমি তবু কিছু বলেছি? বলি নি তো তাই না? তাহলে আমি তার সাথে কথা বলি নি জন্য আপনি আবার সেটার কারণ জানতে এসেছেন!
— কথার মাঝে নোংরামি ছড়াচ্ছো তুমি।
— বাসায় মা বাবা কেউ নেই, ওই মেয়ে একা আমাদের বাসায় কি করছে? আপনার এত দেরি হয়েছে কেন আমাকে বলেন।
— তোমার সাথে কথা বাড়ানোর ইচ্ছেই নেই আমার, অযথা মনে নোংরা নোংরা জিনিস, কথা পুষে রাখো তুমি।
— একদম বাজে কথা বলবেন না।
— আমাদের নিয়ে হয়ে গিয়েছে আর তার অনেকদিন কেটেও গিয়েছে তবুও কেন এরকম করো?
— জানি না ভালো লাগছে আমার, একা থাকতে দেন একটু।
ইয়াশ আর কথা না বাড়িয়ে চলে প্রিয়তার কাছে থেকে। সে নিজেও ভাবে প্রিয়তার রাগ করাটা স্বাভাবিক। তবুও আজকের বিষয়টি এখনই তাকে বুঝতে দেওয়া যাবে না।
ইয়াশ রুমে গিয়ে কারও সাথে ফোনে কথা বলছে সেটা বেশ বুঝতে পারে প্রিয়তা। তার খুব কান্না পাচ্ছে ইয়াশের ব্যবহারে, সে এমন কেন করছে তার সাথে! একে তো দুই ঘন্টা বাহিরে অপেক্ষা করিয়েছে তার ওপর এতকিছু। ধীরে ধীরে যেন অভিমানের পাহাড় জমছে ইয়াশের প্রতি প্রিয়তার মনে।
রাত এগারোটা বাজে তবু ইয়াশ বাহিরে থেকে আসছে না দেখে প্রিয়তার একটু চিন্তা হচ্ছে। বাসায় সবাই খাওয়া দাওয়া করে রুমে চলে গিয়েছে। এই বাসায় কেউ আর তাকে ভালোবাসে না বলে আক্ষেপ করতে থাকে প্রিয়তা। আজকে যে একটা স্পেশাল দিন সেটা এ বাড়ির সবাই ভুলে গিয়েছে। ভুলে যাবে নাই বা কেন? সবাই তো আর আগের মতো তাকে ভালোবাসে না। বড়বাবা বড়মাও অনেকক্ষণ বাসায় ছিল না।
কেউ তাকে কোনকিছু জানায় না এখন আর কেউ তাকে ভালোইবাসে না। এটা ওটা ভাবতে ভাবতে প্রিয়তা ঘুমিয়ে যায়।
চলবে…….
#প্রিয়তার_প্রণয়
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_৩১
প্রিয়তা ঘুমিয়েছে দেখে পা টিপে টিপে কেক হাতে নিয়ে রুমে ঢুকে যায় ইয়াশ আর তার বাবা মা। রাত বারোটা বাজতে আর দুই মিনিট। ইয়াশ গিয়ে কেকটা টেবিলের ওপর রেখে দেয়। বাহিরে থেকে আরও দুজন রুমে চলে আসে তারা হচ্ছে প্রিয়তার বাবা মা।
ইয়াশের বাবা মা আর প্রিয়তার বাবা মা মিলে আজকে ঘুরোঘুরি করেছে। প্রিয়তার জন্যই এসেছে তবুও তাকে জানানো হয় নি।
ঘড়িতে বারোটা বাজলে ইয়াশ গিয়ে প্রিয়তার মাথার পাশে বসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে আস্তে আস্তে ডাকতে থাকে। প্রিয়তা চোখ খুললেই তাকে “শুভ জন্মদিন” বলে শুভেচ্ছে জানায়। প্রিয়তা চোখ মুছতে থাকে, ইয়াশ বুঝে যায় এবার আবেগে সে কি না কি করে বসবে গুরুজনদের সামনে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। তাই ইয়াশ আগে থেকেই ইশারা করে সামনে দেখতে বলে।
নিজের রুমে বাবা মাকে দেখে চমকে যায় প্রিয়তা৷ বিছানা থেকে উঠেই জড়িয়ে ধরে বাবা মাকে।
কিছুক্ষণ পর কেক কাটা হলে সবার সাথে খুব ভালো সময় কাটে প্রিয়তার। প্রায় রাত একটা পর্যন্ত সবার আড্ডা চলে সেখানে। অনেক রাত হয়ে যাওয়ায় সবাই যার যার রুমে চলে যায়।
ইয়াশ দরজা আটকে প্রিয়তার দিকে তাকালে দেখে প্রিয়তা আবার মুখ কালো করে বসে আছে। বুঝতে পারে হয়তো আবার আবিরার কথা মনে হয়েছে তার। কিন্তু আবিরা হয়তো আগে ইয়াশকে পছন্দ করতো এখন তো আর তা সম্ভব না। ইয়াশ টেবিলের ওপর থেকে একটা কার্ড নিয়ে প্রিয়তার হাতে ধরিয়ে দেয়। কার্ডটি দেখে বোঝা যাচ্ছে এটা বিয়ের কার্ড।
ভালো করে পড়ে অসহায়ের মতো ইয়াশের দিকে তাকায় সে।
— না এরকম অসহায়ের মত তাকিয়ে লাভ নেই আমি আর এখন ক্ষমা করব না।(ইয়াশ)
— প্লিজ আর এরকম হবে না, প্লিজ এবারই শেষ আর কোনদিন এরকম করব না।
— না আমি ক্ষমা করছি না। তুমি সবাইকে নিয়ে সন্দেহ করো এটা আমার একদম ভালো লাগে না।
— আচ্ছা আর করব না, এটা তো সন্দেহ না আমার খারাপ লেগেছিল। বাসায় এসে দেখি একটা মেয়ে বসে আছে যে কি না আমার বরকে পছন্দ করতো!
— তুমিই কিন্তু বলে দিলে যে পছন্দ করতো, এখন না সেটা ছিল অতীত। আর সে আজকে আমাকে আর তোমাকে তার বিয়েতে দাওয়াত দিতে এসেছিল।
— আচ্ছা বলেন তো বিয়েতে কি পরে যাব?
— কেউ যাবে না বিয়েতে।
— আরে বাবুটা রাগ করেছে? রাগ করে না বাবু। এসো আদর করে দেই একটু।
ইয়াশ বসে চুপচাপ কেক খেতে থাকে একটু একটু করে। প্রিয়তাকে চুপ করে থাকতে দেখে তার দিকে একটু কেক বাড়িয়ে দিলে প্রিয়তা তাড়াতাড়ি করে খেয়ে নেয় ইয়াশ হাসতে থাকে।
— আমার গিফট কোথায়?
— তোমাকে গিফট না দিয়ে বাঁচা যাবে না জানি কালকে আমার সাথে বের হবে ইচ্ছেমতো শপিং করবে।
— আর এখন কিছু নেই গিফট?
— হ্যাঁ আছে তো।
— তাড়াতাড়ি দাও।
— নিতেই হবে?
— হ্যাঁ।
ইয়াশ বুকপকেট থেকে একটা রিং বের করে প্রিয়তার আঙুলে পড়িয়ে দিয়ে বলে খুব ভালোবাসি আমি আমার প্রিয়কে। আমি সারাজীবন এই প্রিয়কেই আমার পাশে চাই, থাকবে না আমার সাথে আমার প্রিয়?
” হুম থাকব তো হবু ডাক্তারবাবু” বলেই ইয়াশকে জড়িয়ে ধরে । আবার হাজারো রাগ অভিমানের পর দুজনের ভালোবাসায় দুজন একত্রিত হয়।
________
প্রিয়তার বাবা মা শহরে সপ্তাহখানেক ছিল, সেই সময়টা প্রিয়তার খুব ভালো গিয়েছে। এখন আবার আগের মত বাসায় শুধু মাত্র চারজন। ইদানীং সে আরশিকেও খুব মিস করে, প্রায় প্রতিদিন কথা হয় তবুও তাকে খুব বেশি পরিমাণে মিস করে সে।
এদিকে ইয়াশের ও বাহিরে যাওয়ার কথা হচ্ছে। এক বাড়ির একজন অলরেডি পড়াশোনার জন্য বাহিরে চলে গিয়েছে আবার আরেকজনের যাওয়ার কথা হচ্ছিলো আবার নাকি সেও……..
থাক এসব আর না ভাবাই ভালো বলে বড়মার সাথে কাজে হাত লাগায়।
আজকে শুক্রবার সবকিছু বন্ধ থাকায় সবাই আজ বাড়িতেই। নাহলে এই সময়ে সবাই বেরিয়ে যায়। দুজন মনোযোগ দিয়ে রান্নাঘরের কাজ করছে। চা বানানো শেষ হলে আঞ্জুয়ারা বেগম চায়ের কাপ প্রিয়তাকে দিয়ে ইয়াশের জন্য নিয়ে যেতে বলে। প্রিয়তাও চা নিয়ে নিজেদের রুমের দিকে যায়।
রুমে ঢুকবে এমন সময় হঠাৎ থেমে যায়, একটুর জন্য ইয়াশের সাথে ধাক্কা লাগে নি। হঠাৎ থেমে যাওয়ায় গরম চা একটু প্রিয়তার হাতে পড়ে যায়।
— আহ……
— ইশ গরম চা লেগেছে হাতে? দেখি দেখতে দাও, কি যে কর না তুমি!
ইয়াশ প্রিয়তার হাত থেকে চায়ের কাপটা নিয়ে আরেক হাত দিয়ে প্রিয়তাকে রুমে নিয়ে গিয়ে বিছানায় বসিয়ে দেয়। তাড়াতাড়ি করে ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে চলে আসে।
কিছুক্ষণ পর প্রিয়তার হাতের জ্বা*’লাপো*’ড়া ঠিক হয়ে যায় সেটা বারবার বলেই যাচ্ছে তবুও ইয়াশ হাতে ফু দিয়েই যাচ্ছে।
— এত পাগল হচ্ছো কেন তুমি? মলম তো লাগিয়ে দিয়েছো তাই না? আর সামান্য একটু চা লেগেছে হাতে আর কিছু হয় নি এত হাইপার হচ্ছো কেন? ইয়াশ…….
— তোমার কিছু হলে তোমার চেয়ে আমাকে বেশি আঘা*’ত করে প্রিয়।
— তাহলে তো আমি বারবার অসুস্থ হতে চাই এত কেয়ার পেতে ভালোই লাগে। এরকম ছোট খাটো আঘা*’তে ভালোবাসা বাড়ে।
— সুস্থ থাকলে আমি তোমার যত্ন করি না?
— তা কর, তবে অসুস্থ হলে একটু বেশিই ভালো লাগে।
ইয়াশ প্রিয়তাকে বুকে নিয়ে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলতে থাকে ভালোবাসা বাড়ানোর জন্য আঘা*’তের দরকার হয় না প্রিয়। যদি ভালোবাসায় আ*’ঘাত করলেই ভালোবাসা বেড়ে যেতো তাহলে চারপাশে ভালোবাসার এত হাহাকার থাকতো না। জীবনে অনেক কিছুর অভাব দেখা যায় কিন্তু এত এত অভাবের মধ্যে সবচেয়ে বড় অভাব হচ্ছে একটা সঠিক মানুষের আর বিরামহীন ভালোবাসার। এখনকার মানুষ যেমন ভালোবাসতে জানে ঠিক সেরকম কেউ কেউ তুচ্ছ কারণ দেখিয়ে চলে যেতেও পারে৷ কিন্তু আমি তোমাকে ছেড়ে যাওয়ার জন্য ভালোবাসিনি, আর এরকম ও ভালোবাসিনি যে আঘা*’ত দিয়ে ভালোবাসা বাড়াতে হবে। আমাকে একটু ভালোবাসলেই দেখবে এই ভালোবাসা কতগুণ বেড়ে গিয়েছে।
— আমি এমনি বললাম আর তুমি এতগুলো কথা বললে!
— এগুলো আমি এমনি বললাম প্রিয়।
— জড়িয়ে ধরো।
— আবার জড়িয়ে ধরতে হবে?
— হ্যাঁ অনেক শক্ত করে।
— এসো।
প্রিয়তা ইয়াশের দিকে এগিয়ে এলে ইয়াশ হাসিমুখে তার ভালোবাসাকে জড়িয়ে নেয়। এই মেয়ের ভালোবাসায় সে মুগ্ধ না হয়ে পারে না। ভালোবাসার মানুষের কাছে মেয়েরা এত বাচ্চা হতে পারে সেটা শুধুমাত্র ভালোবাসার মানুষটাই জানে।
— আচ্ছা প্রিয় সত্যি কথা বলবে একটা?
— আমি কি মিথ্যা বলি?
— মিথ্যা বল না তবে লুকাও। একটা সত্যি কথা বল তুমি কি তোমার ইচ্ছের কথা আমাকে জানাতে দ্বিধাগ্রস্থ?
— এমন কেন মনে হলো?
— কিছু কিছু সময় মনে হয়, তুমি হয়তো তোমার কথাগুলো মন খুলে আমাকে বলতে পারো না। কোন সমস্যা কি তোমার সব কথা আমাকে খুলে বলতে?
— আমার এমন কোন কথা নেই যা আমি আপনাকে বলি নি বা এরকম কোন ব্যাপার নেই যা বলতে পারি না। আপনি যেমন আমার কাছে একটা খোলা বইয়ের মতো তেমন আমিও পুরোটাই একটা খোলা বই আপনার কাছে।
— আবার আপনি কেন?
— স্যরি, হয়ে যায় মাঝেমাঝে। আপনি বলতাম তো আগে তাই…
— হুম আমারও মাঝেমাঝেই তুই বের হয়ে যায় অভ্যাস আমাদের এটা। আচ্ছা একটা কথা…
— হ্যাঁ?
— তোমার ডিপার্টমেন্টের হেড কল করেছিল।
কথাটি শোনামাত্র প্রিয়তা মাথা উঁচু করে ইয়াশের দিকে তাকায়। তার মানে স্যার কি ইয়াশকে সব বলে দিয়েছে! আর তার জন্যই কি ইয়াশ তখন থেকে এতগুলো কথা বলছিল! এখন আবার তাদের ভুল বুঝাবুঝি হবে, কেন যে স্যার ফোন দিতে গেল এত করে না বলার পরও!
চলবে……….