#প্রিয়তার_প্রণয়
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_২৮
প্রিয়তা কোনরকমে নিজের শরীরে শাড়ি জড়িয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে। বের হয়ে রুমে শাড়ি পরবে বলে শাড়ি শরীর থেকে নামাতে যাবে ওমনি বিছানার দিকে চোখ গেলে দেখে ইয়াশ শুয়ে আছে। সাথে সাথে শাড়ি ঠিকঠাক করে নেয়।
— আপনি আমার রুমে?
—
— কি হলো আপনি আমার রুমে কেন? আমি শাড়ি ঠিক করব আপনি বাহিরে যান।
— আমি ছাড়া আপনি শাড়ি ঠিক করতে পারবেন না ম্যাম। আপনার এই গুণটা নেই।
— কি! আমি একাই শাড়ি পরব, বাহিরে যান আপনি।
— রাগ করলে কাজের কাজ হবে না, সারাদিন এমনভাবেই থাকতে হবে। তার চেয়ে ভালো আমি সাহায্য করি।
প্রিয়তা ভাবে ইয়াশ তো ঠিকই বলেছে। কুচিটা অন্তত কাউকে ধরে দিতে হবে।
— বিছানায় শুয়ে শুয়ে কি করছেন? বউ যে এভাবে অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে চোখে পড়ছে না?
— মেনে নিলি তাহলে যে তুই একা শাড়ি পড়তে পারবি না?
— এই আমি কি বিয়ে করেছি আপনার সাথে যু*’দ্ধ করতে? আর আপনি আমার সাথে তুই করে বলছেন কেন? বড়মাকে ডাকব? বড়মা…………
ইয়াশ বিছানা থেকে দৌঁড়ে এসে প্রিয়তার মুখ চেপে ধরে। প্রিয়তা হাসতে থাকে….
— পাগল হয়েছিস নাকি? যেকোন কিছুতেই বড়মাকে ডাকতে হবে তাই না!
— আমার কথার অবাধ্য হলেই পুরুষ নি*’র্যাতন হবে।
ইয়াশ প্রিয়তার কোমড়ে হাত দিয়ে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে এসে মুচকি হেসে বলে,” আর যদি বেশি ভালোবাসা হয় তাহলে কাকে বলা হবে শুনি?
প্রিয়তা আর কিছু বলতে পারে না।
ইয়াশ প্রিয়তার চুপ থাকা দেখে কপালে একটা চুমু দিয়ে দেয়।
— আর লজ্জা পেতে হবে না, শাড়িটা ঠিক করে নেন।
— নিজে বারবার লজ্জা দেবে সেটা কিছু না, আমি লজ্জা পেলেই দোষ!
— বরের কাজই হচ্ছে বউকে লজ্জা দেওয়া। এটা আমাদের বরগত অধিকার। এখন শাড়ি ঠিকমতো পড়ে আমার চোখের শান্তির ব্যবস্থা কর।
— মনের শান্তি মিলবে না?
— আপনি পুরোটাই আমার মনের শান্তি। দেখলেই শীতল হাওয়া বয়ে যায় হৃদয়ে।
— হয়েছে হয়েছে এখন তাড়াতাড়ি শাড়ির কুচি ঠিক করে দেন বাকিটা আমি ঠিক করে নিচ্ছি।
— বাসায় যাওয়া কবে?
— তা তো জানি না, কেন?
— নতুন নতুন বিয়ে হয়েছে বউ নিয়ে ঘুরবো, ফিরবো বাড়িতে এত মানুষের মধ্যে থাকতে কি ভালো লাগে নাকি? এত মানুষের মধ্যে দেখা যাবে বউকে একা একটু কাছে পাওয়াই যাবে না।
— মানে একদম লাজলজ্জা গুলিয়ে খেয়ে নিয়েছেন তাই না?
— গতবার লুবনার বিয়েতে এসেছিলাম, এবার এখানে এসে এরকম একটা আনরোমান্টিক মেয়েকে বিয়ে করতে হবে জানলে আমি নেপাল থেকে আসতামই না।।
— খুব উপকার করেছেন এসে, এবার এই মেয়েটাকেই সারাজীবন সহ্য করে নিতে হবে।
— কিভাবে যে সহ্য করব সেটাই ভাবছি।
— ইয়াশ ভা……
ইয়াশ তাড়াতাড়ি করে প্রিয়তার মুখ চেপে ধরে।
— এই আমি তোকে বিয়ে করেছি ভাইয়া ডাক শোনার জন্য নাকি?
— ওটা তো ভুলে বের হয়ে যাচ্ছিলো।
— আর যদি মুখ বের হইতে দেখেছি….
— স্যরি।
— হুম,
শাড়ি পরে প্রিয়তা তৈরি হতে থাকে, ইয়াশ বাহিরে চলে যায়। প্রিয়তা তৈরি হয়ে নিজেও বাহিরে আসে সবাইকে দেখাতে যে তাদের কাছে প্রিয়তাকে কেমন লাগছে!
______________________________
সন্ধ্যায় বুশরা, হুমায়ুন, লুবনা,হিমেল চলে আসায় সবাই একসাথে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো। প্রিয়তাও তাদের সাথেই ছিল, কেউ ভাবতেই পারে নি প্রিয়তা আর ইয়াশের বিয়ে এভাবে হয়ে যাবে। প্রিয়তা আর ইয়াশের বিয়ে নিয়ে কথা হচ্ছিলো।
সারাটা বিকেল সবাই খুব মজা করে কাটিয়ে দেয়।
লুবনার মা বাবা সবার কাছে থেকে বিদায় নিয়ে নিজেদের গন্তব্যের দিকে রওয়ানা দেয়। তারাই একমাত্র যারা কিনা অল্প কিছুক্ষণের জন্য আনন্দে সবার সাথে যোগ দিতে পারে কিন্তু নিজেদের ইচ্ছেমতো থাকতে পারে না।
বাড়ির বড়রা নিজেদের রুমেই ছিল। বাহিরে ড্রয়িংরুমে বসে বাকি পাঁচজন গল্প করছিল। ইয়াশ বাহিরে গিয়েছিল বিকেলে, সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে সবাইকে একসাথে আড্ডা দিতেদেখে। ইয়াশকে আসতে দেখে প্রিয়তা তাকিয়ে থাকে, সে সাদা পাঞ্জাবি পাজামা কখন পরলো! লম্বা চওড়া মানুষ গায়ে সাদা পাঞ্জাবি পাজামা অসম্ভব মানিয়েছে যদিও ইয়াশকে সবকিছুতেই খুব ভালো মানায়। ইয়াশ যেই তার মা বাবার রুমের দিকে যাচ্ছিলো ঠিক তখন লুবনা পিছন থেকে ডাক দেয়।।
— আমাদের সাথে আড্ডা দিবে না?
— মার সাথে একটু কথা আছে, তোমরা আড্ডা দাও।
— কথা বলে চলে এসো।
— শরীরটা ভালোও লাগছে না, প্লিজ তোমরা কন্টিনিউ করো।
— আপনার কি বেশি খারাপ লাগছে?(প্রিয়তা)
— উহু তোমরা আড্ডা দাও আমি মার রুমে গেলাম।
ইয়াশ আর কথা না বাড়িয়ে চলে যায়। প্রিয়তা তাকিয়ে থাকে তার আবার কি হলো শরীর কি বেশি খারাপ লাগছে নাকি!
— ওহ হো একদিনেই তুই থেকে তুমি!( বুশরা)
— তো কি বউয়ের সাথে তুই করে বলবে নাকি, চুপ থাক বুশরা।(লুবনা)
— এখন সে তুই বললে তুইই বলতি যে বউ হয়ে গেছিস তুই বলছে কেন! এসব বাদ দিয়ে কি নিয়ে যেন কথা হচ্ছিলো সেটা বল।
সবাই আবার কথা শুরু করে। এদিকে হুমায়ুন শুধু বুশরাকে ইশারা করে বুঝিয়ে যাচ্ছে তার এখানে এত আড্ডা দিতে ভালো লাগছে না। কিন্তু বুশরা সেটা বুঝেও না বোঝার মতো হয়ে বসেই আছে। হুমায়ুনের কপালে অসহায়ত্বের ছাপ স্পষ্ট।
___________________________
— মা আসব?
— হ্যাঁ আয়, আবার অনুমতি নিতে হয় নাকি!
— মা কিছু করছিলে?(ইয়াশ)
— না, কিছু বলবি?
— তোমরা বাসায় ফিরবে কবে? আমার তো আজকে পরিক্ষার রুটিন দিয়ে দিয়েছে। কয়েকটা দিন হাতে আছে। আগামীকাল বাসায় ফিরতে পারলেই ভালো হতো। তোমরা এখানে কয়েকটা দিন থাকবে বলেছিলে, আমি তো আর কাজের মধ্যে যাচ্ছি না আর যাব ও না। পড়ায় মন দেব, আর পড়া শেষ হলে তিন বছরের কোর্স করতে বাহিরে যেতে হবে।
— হ্যাঁ এখন একটু পড়াশোনা নিয়ে সিরিয়াস হও বাবা। আগে তো একটা চিন্তা ছিল কিন্তু এখন সেটা নেই। আমরা এখানে একটু গ্রাম্য পরিবেশে কিছুদিন থাকি। তুই প্রিয়তাকে নিয়ে কালকেই চলে যা।
— প্রিয়তাও থাকুক সমস্যা নেই।
— না, ওর ও তো ক্লাস হচ্ছে। সামনে হয়তো পরিক্ষা তার ও।
— আচ্ছা বলে দেখি, গেলে নিয়ে যাব।
— হ্যাঁ তোমরা যাও, আমরা বুড়ো বুড়ি একটু এখানে কয়েকটা দিন কাটাই। ব্যবসা, অফিস সব ম্যানেজার দেখবে, তবু তুমি প্রতিদিন সময় করে একটু যেও।
— ঠিক আছে বাবা।
— বাহিরে ছিলে এতক্ষণ?
— হ্যাঁ মাত্র বাসায় ফিরেই এখানে এলাম।
— আচ্ছা ঠিক আছে, রুমে গিয়ে রেস্ট নাও।
— ঠিক আছে।
— হুম।
ইয়াশ মা বাবার রুম থেকে বেরিয়ে গিয়ে সবার সাথে একটু কথাবার্তা বলতে সোফায় গিয়ে বসে কারণ কালকেই যদি চলে যেতে হয় তাহলে তো সবার সাথে আর তেমন কথাই হবে না।
ইয়াশকে তেমন আড্ডায় পাওয়া যায় না। একটু সময়ের জন্য পেলেই সবাই খুব খুশি হয়ে যায়।
এই যেমন আজকে, ইয়াশ তার মা বাবার রুম থেকে তাদের কাছে এসে বসায় সবাই অনেক খুশি হয়েছে।
— এই যে বাড়ির দুই জামাই, ভালো তো?(ইয়াশ)
— দুই শালিকার বিয়ে খাচ্ছি ভালো থাকব না!(হিমেল)
আচ্ছা তাই নাকি! আরেক জামাইয়ের কি খবর?
— বিয়ে করে নতুন বউ নিয়ে আড্ডা দিতে ভালোই লাগছে, আড্ডা দিচ্ছি এইতো।(হুমায়ুন)
— কিন্তু মুখের ভঙ্গিমা বলছে ঘুম ধরে গিয়েছে।
— তা অবশ্য ঠিক।
সবাই বসে কথাবার্তা বলতে থাকে। প্রায় কিছুক্ষণ কেটে যায়।
” থাক সবাই আমি রুমে গেলাম ভালো লাগছে না, প্রিয়তা একটু রুমে এসো তাড়াতাড়ি। ” কথাটা বলেই ইয়াশ নিজের রুমে চলে যায়। লুবনা প্রিয়তাকে পাঠিয়ে দেয় কারণ বুঝতে পারে ইয়াশের হয়তো শরীর খারাপ লাগছে।
প্রিয়তা সবার কথামতো আড্ডার আসর থেকে উঠে ইয়াশের রুমের দিকে যায়। দরজায় গিয়ে দেখে ইয়াশ রুমে নেই। তাহলে হয়তো ওয়াশরুমে গিয়েছে। প্রিয়তা গিয়ে বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে থাকে।
ইয়াশ তোয়ালে দিয়ে হাতমুখ মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে। রুমে এসেই দেখে প্রিয়তা বিছানায় বসে আছে।
“আপনার কি বেশি খারাপ লাগছে? কেমন লাগছে আপনার?” বলেই প্রিয়তা বিছানা থেকে দাঁড়িয়ে যায়। ইয়াশ ও তোয়ালে রেখে দেয়। ” হ্যাঁ খারাপ লাগছিল, এখন ঠিক আছি।” বলেই টেবিল থেকে একগ্লাস পানি নিয়ে খেয়ে নেয়। প্রিয়তা এগিয়ে আসে ইয়াশের দিকে। জ্বর আসছে কি না দেখার জন্য ইয়াশের কপালে হাত দেয়…..
চলবে………….
#প্রিয়তার_প্রণয়
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_২৯
ইয়াশ প্রিয়তার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিজের বুকের বামপাশে রাখে। দুজন দুজনের দিকে তাকায়। প্রিয়তা বুঝে ওঠার আগের ইয়াশ মুচকি হেসে দেয়।
— আমার বউটাকে আজকে কাছেই পাচ্ছিলাম না তাই খুব অসুস্থ অসুস্থ লাগছিল।
— ওহ আচ্ছা এই ব্যাপার! তো এখন কেমন লাগছে জামাইসাহেব?
— আমার বিবিসাহেবা আমার কাছে থাকলেই আমি ভালো থাকতে পারি।
— আরও ভালো থাকতে হবে?(প্রিয়তা)
— তুমি রাখলেই আমি থাকতে পারি।
— কীভাবে আরও ভালো রাখতে পারি?
— আরও বেশি কাছে এসে।(ইয়াশ)
— এই আপনি এত লজ্জাহীন কীভাবে হয়ে গেলেন বলেন তো?
— এই যে তিন কবুলই তো তার কারণ। তিন কবুল বলার পর থেকেই কেমন লজ্জা বিদায় নিয়েছে।
— হিহিহি তাই নাকি!
— ইশ!(বুকে হাত দিয়ে)
প্রিয়তা ততক্ষণে ইয়াশের বুক থেকে হাত নামিয়ে নিয়েছিল, ইয়াশের এভাবে বুকে হাত দেওয়া দেখে চমকে যায়।
— আবার কি হলো? এভাবে বুকে কেন হাত দিলেন!
— তোমার হাসিটা বুকে বিধে গেল।
— ধুর কি যে বলেন না! আমি ভাবলাম কি না কি হলো!
— কেন, এটা কি সামান্য কিছু? এটাকে সামান্য করে কেন দেখছো তুমি?
— অনেক বড় করে দেখতে হবে? ইশ বুকের কোথায় লাগলো দেখি দেখি। প্লিজ দেখি কোথায় লাগলো!
প্রিয়তা কথাগুলো বলা শেষ করতেই দুজনে হেসে ফেলে। প্রিয়তা হাসতে থাকার সময় সামনের দিকের চুলগুলো মুখের ওপর আটকে যায়। এভাবে প্রিয়তাকে দেখে ইয়াশ মুগ্ধ চোখে চেয়ে আছে। হঠাৎ ইয়াশের হাত প্রিয়তার গাল স্পর্শ করলে হাসি থামিয়ে চুপ হয়ে ইয়াশের দিকে তাকায়। ইয়াশ ও পরম যত্নে গালে ঠোঁটে লেপ্টে থাকা চুলগুলো আলতো করে আঙুল দিয়ে কানের পিছনে গুজে দেয়।
আবার কি ভেবে কানের পিছনে গুজে দেওয়া চুলগুলো আবার সামনে দিয়ে দেয়।
— এটা কি হলো?(প্রিয়তা ইয়াশের কান্ডে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে)
— প্রথমে ভুল করেছিলাম, আপনাকে এভাবেই সুন্দর লাগছিল।
— তাহলে কি আমি এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকব?
— এভাবে কেন কষ্ট করে দাঁড়িয়ে থাকবেন? আপনি তো থাকবেন আমার বুকে।
ইয়াশ প্রিয়তাকে নিজের সবচেয়ে কাছে নিয়ে এসে বুকে জড়িয়ে নেয়। এতক্ষণে প্রিয়তার যেন শান্তি মিলে যায়। প্রতিটা পুরুষ যেন কোন নারীর শান্তির কারণ হতে পারে ভেবে পরম শান্তিতে চোখ বন্ধ করে ভালোবাসা অনুভব করতে থাকে প্রিয়তা।
_____
রাত এগারোটা-
খাওয়া দাওয়া সেরে বাড়ির সবাই নিজেদের রুমে চলে গিয়েছে। রাত তো কম হলো না।
“এই তোমার জ্ঞান হবে কবে? আমার ভাই নতুন বিয়ে করেছে বউ নিয়ে রুমে দুজন একসাথে সময় কাটাবে তা না সবাইকে ধরে গল্প করতে বসে গিয়েছো। নিজে রোমান্সের র ও বোঝো না আবার তাদের দুই জোড়াকেও ডিস্টার্ব করলে। মাঝখান দিয়ে ইয়াশ ভাইয়া ভালো কাজ করেছে, বুদ্ধি আছে। বউকে ঠিকই রুমে ডেকে নিল। আর তুমি!”
হিমেলের কথা শুনে হা হয়ে তাকিয়ে আছে লুবনা। কি সব বলছে সে!
— তোমাকে এতকিছু কি ওরা নিজেরা বলেছে যে এত তাড়াতাড়ি ওদের পারসোনাল সময় কাটাতে হবে?
— সব কথা বলতে কেন হবে বুঝতে পারো না?
— খাওয়া দাওয়া করে রুমে আসার সময় ইয়াশ বলল শুনলে না প্রিয় আর ইয়াশ কালকেই চলে যাবে। তাহলে আমরা কি ওদের আর সহজে পাবো?
বুশরার সাথে মাঝে মাঝে দেখা হলেও ওদের সাথে আর সহজে দেখা হবে না।
— এবার একটু আমাকে সময় দেন ম্যাম, আমরাও নতুন নতুন কাপল হয়েছি।
— কেন তোমাকে কি সময় দেই না আমি? এই যে এখন থেকে আবার তোমার জন্য সময় বরাদ্দ।
— আচ্ছা তাই!
— জি সাহেব।
___________
খাওয়া দাওয়া শেষ করে হুমায়ুন এসে বিছানায় শুয়ে ফোন ঘাটাঘাটি করছিল। এমন সময় বাটিতে কিছু একটা এনে সেটা টেবিলে রেখে হুমায়ুনের পাশে এসে বসে।
— কি করছো?
— কিছু না এমনি ফোন ঘাটছিলাম।
— তখন আসি নি জন্য কি রাগ হয়েছে?
— রাগ তো একটু হয়েছিলই।
— এখন?
— নেই।
— সত্যি!
— হুম।
— তখন কীভাবে উঠে আসব বল, লুবনা আপু ভাইয়ারা ছিল।
— হুম বুঝতে পেরেছি, বরকেও তো একটু সময় দিতে হবে নাকি?
— এই যে এখন থেকে আছি।
— আছো?
— হ্যাঁ আছি তো!
— সারারাত পাবো?
— হ্যাঁ তোমার বুকেই ঘুমোবো, তোমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
— সে আমি দেখে নেব। ওখানে বাটিতে কি?
— ওহ ওই যে তোমার জন্য সেমাই এনেছি। কথায় কথায় আম্মুর থেকে তোমার পছন্দের কথা জেনে নিয়েছি।
— আমার মা কি আমার সব পছন্দের কথা বলেছে?
— হ্যাঁ প্রায় সবই তো বলল।
— আমার মা কি এটা বলেছে সে আমার সব পছন্দের মধ্যে তুমিই সেরা যাকে আমি কোনদিন সেরা পছন্দ বা ভালোবাসা থেকে বাদ দিতে পারব না!
— এটা আম্মুর কেন বলতে হবে? এটা আমি জানি……(বুশরা হুমায়ুনের মুখের দিকে নিজের মুখ এনে কথাটি বলে)
— তুমিই একমাত্র সেই মানুষ যার প্রতি আমার ভালোবাসা কখনও কমবে না, সময় নিয়ে বেড়েই চলবে।
— বিশ্বাস কর, আমি তোমার থেকে ভালোবাসা ছাড়া অন্যকিছু সহ্য করতে পারব না। তুমি আমাকে কষ্ট দিলে আমি কিন্তু মা*’রা………..!
বুশরাকে আর কোন কথা বলতে না দিয়ে বুশরার ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে দেয় হুমায়ুন। বুশরা কেঁপে ওঠে চোখ বন্ধ করে নেয়। সে ভাবতেও পারেনি হুমায়ুন তাকে এভাবে চুপ করিয়ে দেবে।
কিছুক্ষণ পর হুমায়ুন বুশরাকে ছেড়ে দিয়ে বুশরার মুখ তার দুই হাত দিয়ে পরম ভালোবাসায় স্পর্শ করে বলে,” ওই যে কি যেন একটা কথা আছে না ঠোঁটের লিপস্টিকের গ্যারান্টি হয়তো দিতে পারব না কিন্তু চোখের কাজল কখনও কান্নায় নষ্ট হবে না। তবে আমি বলব অতিরিক্ত সুখ বা ভালোবাসায় সেটাও হতে পারে। আমার রানী করে রাখব তোমায়।”
বুশরা হুমায়ুনের কথায় কাজে এখনও লজ্জা পাচ্ছে আর এই লজ্জায় হুমায়ুনের বুকটাই লুকানোর জন্য নিরাপদ বুঝতে পেরে হুমায়ুনের বুকেই মুখ লুকায়। তার ধারণা এই লোকটা হুটহাট লজ্জা দেওয়ার পাশাপাশি অসম্ভব ভালোবাসতে পারে, যা অন্য কেউ পারে কি না মনে হয় না!
_________
প্রিয়তা শুয়ে থাকা থেকে উঠে বসে। কিছু একটা ভেবে দাঁড়িয়ে যাবে ঠিক তখন ইয়াশ জিজ্ঞেস করে,
— কি হলো?
— আগামীকালই যেহেতু চলে যেতে হবে তাহলে তো ব্যাগ গুছাতে হবে তাই না।
— এখানে তো তেমন কিছুই নেই। যা আছে কালকে ব্যাগে নিয়ে নিলেই হবে।
— এখনই ঠিকঠাক করে নেই সমস্যা কি! আপনি শুয়ে থাকুন আমি দশ মিনিটের মধ্যে সব কাজ শেষ করছি।
— আমি আসলে তো তাহলে তো পাঁচ মিনিট লাগবে তাই না? যেহেতু তুমি একা কাজটা করলে দশ মিনিট লাগতো।
— না একদম না, আপনি আসলে আরও বেশি সময় লাগবে।
ইয়াশ বিছানায় নিজের জায়গা থেকে প্রিয়তার দিকে এগিয়ে আসে। প্রিয়তা এখনো শাড়িটা পরে আছে তবে আগের মতো শাড়িটা ততটা গুছানো নেই। ফাঁকফোকর দিয়ে পে*টটা ঠিক দেখা যাচ্ছে। প্রিয়তা পা ঝুলিয়ে বিছানায় বসে ছিল বাঁকা হয়ে। ইয়াশ শুয়ে থাকা অবস্থাতেই প্রিয়তার দৃশ্যমান কোমড়ে হাত দিয়ে হিচকে টান দিলে প্রিয়তা টাল সামলাতে না পেরে ইয়াশের বুকের ওপর পড়ে যায়। ছোট চুলগুলো আবারও প্রিয়তার মুখ ঢেকে যায়। ইয়াশ চুলগুলো সরিয়ে দেয়।
— আমি তো চাই তোমার সাথে যখন থাকি তখন সময় একদম থেমে যাক, ঘড়িতে সেকেন্ডের কা’*টাও যেন জায়গা পরিবর্তন না করে। আমি চাই তুমি আমার সাথে থাকলে আমাদের চারপাশের সবকিছুও যেন থেমে যায়।
— এত ভালোবাসো! ( প্রিয়তা এক নজরে তাকিয়ে আছে ইয়াশের দিকে, মনে হচ্ছে কোন একটা ঘোরের মধ্যে আছে সে। এখনই হয়তো এই জগৎ ছেড়ে অন্য জগতে পা বাড়াবে।)
— আমার ভালোবাসা কখনও পরিমাপ করতে পারবে না তুমি, পরিমাপ করতেও যেও না। এত ভালোবাসব যা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না।
— এত ভালোবাসা আমার কপালে সইবে তো, আমার কেমন যেন এতকিছু স্বপ্ন স্বপ্ন লাগে!
— আমার সাথে যাবে স্বপ্নের রাজ্যে? যেখানে শুধু তুমি, আমি আর শুধু আমাদের ভালোবাসা। যেখানকার ভালোবাসা ভুলিয়ে দেয় সবকিছু।
প্রিয়তা লজ্জায় আর কিছু বলতে পারে না। ইয়াশের বুক থেকে উঠতে যাবে ঠিক তখনই ইয়াশ প্রিয়তাকে টেনে বিছানায় ফেলে দেয়। এক জোড়া নে*’শাক্ত চোখ যেন প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে আছে, আর এ চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেই হয়তো অথৈ সাগরে ডুবে যাবে প্রিয়তা।
যারা পড়বেন তারা অন্তত লাইকটা দিয়ে রাখবেন। গল্পটা খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে। কেমন লাগছে গল্পটা অবশ্যই জানাতে ভুলবেন না।
চলবে…..