#প্রিয়তার_প্রণয়
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_২৬
ইয়াশ ভিডিয়োটি দেখে বিছানা থেকে নিজের ফোনটা আনতে গেল। প্রিয়তা যে এরকম ছোট একটা বিষয় এত বড় করবে সেটা ইয়াশ ভাবতেও পারে নি। এজন্যই হয়তো বলে মেয়েরা বোঝে কম চিল্লায় বেশি, ওহ প্রিয়তা তো চিল্লায় ও নি মুখে রুমাল গুজে ছিল।(স্যরি গার্লস)
ইয়াশ এবার নিজের ফোনে ভিডিয়ো প্রিয়তাকে হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,”এবার আমার ফোনের ভিডিয়ো দেখ, আমি সবসময় এরকম ভিডিয়ো করে রাখি শ্যুটিংয়ের যেন ছোট কোন ভিডিয়ো কেউ আমার ইমেজ নষ্ট করতে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড দিলেও আমার কোন ক্ষতি কেউ করতে না পারে। ওই ভিডিয়োটা শ্যুটিংয়ের শর্টক্লিপ ছিল, এটা দেখ বুঝতে পারবি। আর এটার জন্য তুই কি না আমার সাথে সারাদিন এমন ব্যবহার করলি।
প্রিয়তা ভিডিও দেখতে শুরু করে। সম্পূর্ণ ভিডিয়ো দেখার পর প্রিয়তা ভাবছে এখন ইয়াশের থেকে কিভাবে মাফ চাইবে। ইশ বেচারাকে সারাদিন কষ্ট দিয়েছে সে। কিন্তু তারই বা কি করার ছিল যা নিজের চোখে দেখেছে তাই তো বিশ্বাস করেছে। নিজের চোখ ও যে ভুল দেখবে এটা তো সে জানতো না।
প্রিয়তা অসহায় নজরে ইয়াশের দিকে তাকায়।
— লাইট বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পরিস, আমি সোফায় ঘুমালাম।
— আপনি বিছানায় ঘুমান আমিই সোফায় ঘুমাবো।
— তোকে বলেছি বিছানায় ঘুমাতে।
— আমিও বলেছি সোফায় ঘুমোবো।।
— প্রিয়! মেজাজ খারাপ হয়ে যাবে এবার।
— হ্যাঁ আপনি তো কতদিন আমাকে কত কষ্ট দিয়েছেন আমি তো আপনাকে কষ্ট দেই নি। আজকে শুধু কথা বলি নি জন্য আপনি আমার সাথে এরকম করছেন তাও আমি আজকে নতুন বউ।
— শোন আমাকে নিয়ে কোন খারাপ লাগা সৃষ্টি হলে, সন্দেহ হলে আমাকেই বলবি সেটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। এভাবে পুষে রাখলে দূরত্ব শুধু বাড়বে।
— আমি চাই না আপনি কোন মেয়ের সংস্পর্শে আসুন, হোক সেটা সত্যি বা অভিনয়। আপনার এই অভিনয় জগৎ আমাকে ভালো থাকতে দেয় না।
— আমার এই কাজটায় সিগনেচার করা হয়েছিল, তার জন্য করতে হয়েছে। আমিও ভেবেছি এখানে আর আমি থাকব না। সামনেই আমার ফাইনাল পরিক্ষা।
— সত্যি বলছেন?
— হ্যাঁ। আমি কিছুদিন আগে ভেবে রেখেছি, এই জগৎ একদম বাজে। এটা আমার জন্য নয়।
— এবার আমার শান্তি। প্লেটে খাবার রাখা আছে খেয়ে নেন এবার।
— হ্যাঁ ভীষণ ক্ষুধা পেয়েছে।
— স্যরি অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তাই না।
— হ্যাঁ অনেক, আমি ভাবতেও পারি নি প্রিয়তা এত বোকা।
— আমি রাগছি না। আমি রাগলে আজকের রাতটাই মাটি হয়ে যাবে।
— কেন আজকে কি?
প্রিয়তার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে ইয়াশ কথাটি বলে। প্রিয়তাও না পিছিয়ে ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকে।
— জড়িয়ে ধরব। (প্রিয়তা)
— এহ না, আমার বুক এত সস্তা নাকি।
— সস্তা কে বলল তিনবার কবুল বলে কিনে নিয়েছি।
— আচ্ছা তাই নাকি?
— হ্যাঁ তাই।
— তবুও এখানে আপনার জায়গা হবে না।
— আপনি বললেন আর আমি শুনলাম তাই না!
প্রিয়তা আর দেরি না করে ইয়াশকে জড়িয়ে ধরে। ইয়াশের হৃৎপিন্ডের ক্রিয়া বেড়ে চলেছিল। প্রিয়তা কান ফেলে সেটা শুনতে থাকে। ইয়াশও এবার আর দেরি না করে প্রিয়তাকে জড়িয়ে নেয়।
কিছুক্ষণ পর প্রিয়তা ইয়াশকে ছেড়ে দেয়।
— কি হলো ছাড়লি কেন? তোকে বুকে রাখতে ভালোই তো লাগছিল।
— যত ইচ্ছে রাখবেন আগে খেয়ে নেন। আমিও ঠিকমতো খাই নি, খাইয়ে দিবেন আমাকে।
— আচ্ছা বিছানায় গিয়ে বস।
— তুমি করে বলতে হবে।
— আর কি কি বলতে হবে?
— ভালোবাসি কথাটা শুনি নি।
— আচ্ছা সব হবে এখন গিয়ে বিছানায় বস স্যরি বসো।
— হুম।
ইয়াশ টেবিল থেকে খাবারের প্লেট নিয়ে এসে নিজে খায় আর প্রিয়তাকে খাইয়ে দেয়। প্রিয়তা মনে মনে ভেবে নেয় প্রতিদিন রাতে অন্তত আপনাকে এই দায়িত্ব পালন করতেই হবে। বরের হাতে খাবার খেতে এত ভালো লাগে জানলে আরও আগেই বিয়ে করে নিতাম।
খাওয়া শেষ করে প্লেট টেবিলে রেখে ফ্রেশ হয়ে আসে ইয়াশ। প্রিয়তা বসেই আছে, তার ও চেঞ্জ করা প্রয়োজন। ইয়াশ প্রিয়তার মুখ গোমড়া দেখে এগিয়ে যায়।
— কি হয়েছে?
— আমি চেঞ্জ করব কিন্তু রুম তো বাহিরে থেকে আটকে দেওয়া।
— এটাতেই তো সুন্দর লাগছে।
— চেঞ্জ করব আমি।
— কেন? সুন্দর লাগছে তো!
— ড্রেস অনেক ভারী।
— আচ্ছা ওয়েট।
ইয়াশ তার ব্যাগ থেকে একটা কালো টিশার্ট বের করে প্রিয়তার দিকে এগিয়ে দেয়।
— নাও।
— কি এটা?
— টিশার্ট, এটা পড়ে এসো।
— হ্যাঁ দেন, এটা হলেই হবে।
প্রিয়তা তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে ওরনায় পা বেধে পড়ে যেতে লাগলে ইয়াশ ধরে নেয়। ইয়াশ এক পলকে তাকিয়ে আছে প্রিয়তার দিকে। দুটো নেশাক্ত চোখ তার দিকেও তাকিয়ে আছে।
— প্রিয়….
— হুম।
— ভালোবাসি, অনেক বেশি ভালোবাসি।
কথাটা শোনামাত্র প্রিয়তার চোখ বন্ধ হয়ে যায়, হৃদক্রিয়া বেড়ে যায়। নাহ ভালোবাসি শব্দটা বলে প্রিয় মানুষটি তাকে ঘায়েল করে দিতে পারে। শব্দটা খুব পরিচিত, আগে শুনলেও এমন লাগে নি তবে আজকে কেন সব যেন উল্টাপাল্টা হয়ে যাচ্ছে!
কিছুক্ষণ এভাবেই কেটে যায়, ইয়াশ প্রিয়তাকে ছেড়ে দেয়। এখনও যেন দুজনের এত কাছে চলে আসার ঘোর কাটে নি।
— কি?(ইয়াশ)
— উহু কিছু না।
— এমনভাবে দেখছো মনে হচ্ছে কখনও দেখো নি। যাও,চেঞ্জ করে এসে যত ইচ্ছে দেখো এখন যাও।
প্রিয়তা লজ্জা মাখা মুখ নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। আয়নার নিজেকে দেখছে আর ভাবছে ইশ কি বেহায়া হয়ে গিয়েছি, এভাবে সে ইয়াশের দিকে তাকিয়ে ছিল ভাবতেই হাসি পাচ্ছে।
প্রিয়তা ইয়াশের দেওয়া টিশার্ট পড়ে নেয় তবে সেটা তার তুলনায় অনেক বেশিই বড়। টিশার্ট পড়েও যে কখনও ইয়াশের সামনে যেতে হবে এটা কখনও ভাবতেই পারে নি সে। টিশার্ট পড়ে দুপাশে টানতে টানতে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসে প্রিয়তা। প্রিয়তার এরকম টানাটানি দেখে ইয়াশ হেসে ফেলে।
— আমার টিশার্ট এমনিই বড় হয়েছে তার ওপর এত টানাটানি কেন করতে হবে?
— আমি কখনও টিশার্ট পড়ি নি, কারও সামনে যাওয়া তো দূর।
— অথচ শহরের মেয়েরা টিশার্ট পড়েই বাহিরে ঘুরে বেড়ায়।
— আমি শহরের মেয়ে না।
— শহরের হতেও হবে না, তুমি প্রতিদিন শাড়ি পড়বে।
— প্রতিদিন শাড়ি পড়লে আমাকে আর শাড়িতে ভালো লাগবে না।
— কে বলেছে ? শাড়িতে তোমাকে অসম্ভব সুন্দর লাগে।
— পরে শাড়িতে দেখতে দেখতে অভ্যাস হয়ে গেলে আর সুন্দর লাগবে না।
— চোখটা আমার, তোমার এতসব ভাবতে হবে না।
— তো কি ভাববো?
— তুমি শুধু আমাকে ভাববে, আমি সবটা ভেবে নেব।
ইয়াশের এমন কথায় প্রিয়তা লজ্জা পেয়ে যায়, সবসময় তো তার কথাই ভাবে তবুও ইয়াশের এমন কথায় তার দিক থেকে নজর সরিয়ে অন্যদিকে না দিয়ে পারলো না।
ইয়াশ নিজের হাত দিয়ে প্রিয়তার মুখ তার দিকে ঘুরিয়ে নিলো। প্রিয়তা মুখ নিচু করতে চাইছে তবুও ইয়াশ তার মুখ নিচু করতে দিচ্ছে না।
— ছাড়ুন, আমার লজ্জা লাগছে।(প্রিয়তা ছিটকে গিয়ে কথাটি বলল)
— খুব তো জড়িয়ে ধরতে চাইতে এখন তাকিয়ে থাকতেই এত লজ্জা!
— ভুল হয়ে গিয়েছে আমার।
— ভুলের মাশুল তো এবার দিতেই হবে।
বলতে বলতে ইয়াশ প্রিয়তার দিকে এগিয়ে যায়। প্রিয়তা পরিস্থিতি খারাপ দেখে এদিক ওদিক দৌঁড়াতে থাকে। ইয়াশ প্রিয়তার পাগলামি দেখে দাঁড়িয়ে যায়। মানে এটা কেমন মেয়ে বরের কাছে না এসে ছুটোছুটি করছে!
— আমি কি এখন তোর সাথে এরকম দৌঁড়াদৌঁড়ি করব প্রিয়? আমি শুয়ে পরলাম থাক তুই।
— আবার তুই করে কেন?
— তুই আমার সাথে এরকম করবি আর আমি অতি রোমান্টিক হয়ে তুমি বলব?
প্রিয়তা এবার ইয়াশকে জড়িয়ে ধরে,ইয়াশ ও মুচকি হেসে প্রিয়তাকে জড়িয়ে ধরে। প্রিয়তা এবার ইয়াশের বুক থেকে মাথা তুলে ইয়াশকে উদ্দেশ্য করে বলে,” কপালে এখনও একটা আদর পাই নি আমি, আমার বরটা খুবই আনরোমান্টিক।”
— আমি তো আমার বউটাকে কাছেই পাচ্ছি না, কাছে আসলে তো আদর পাবে তাই না।
— তো এখন আপনার সবথেকে কাছে কে আছে আপনার বউয়ের আত্মা?
— বউয়ের আত্মা হবে কেন এটা তো আমার আত্মা, জান সবকিছু।
বলেই ইয়াশ প্রিয়তাকে কোলে তুলে নেয়, প্রিয়তাও লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেলে।
একচোখ খুলে ইয়াশের দিকে তাকায়।
— ইশ এভাবে কেউ আচমকা কোলে তুলে নেয় নাকি?
— এখন আর কোন কথা না, একদম চুপ। আমার যেভাবে ইচ্ছে কোলে নেব তোমার কোন কথা আজ আমার কানে পৌঁছবে না।
— কি নোংরা কথা বাবাহ!
— আপনার কাছে ভালো হয়ে আমার কি কোন লাভ আছে বলেন? তিন কবুল বলে একদম হালাল করে নিয়েছি।
প্রিয়তা কিছু বলবে ঠিক তখনই ইয়াশ প্রিয়তার ঠোঁটে আঙুল দিয়ে ইশারা করে বুঝিয়ে দেয় আজ আর কোন কথা নয়। প্রিয়তাও চুপ হয়ে যায়, আর কোন কথা বলার সাহস করে না সে। ইয়াশ প্রিয়তাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে পাশে থাকা স্যুইচবোর্ড থেকে স্যুইচ টিপে লাইট অফ করে দেয়।
অতঃপর আরও একজোড়া ভালোবাসার সাক্ষী হয় এই রাত্রি।
যারা গল্পটি পড়েন অবশ্যই রেস্পন্স করবেন। অন্তত লাইক তো দিতেই পারেন আমার মনোবল বাড়াতে যেন ভালো লেখা উপহার দিতে পারি। গত দুই পর্বে আলহামদুলিল্লাহ ভালো রেস্পন্স পেয়েছি আটশো বা এরকম লাইক রিয়েক্ট কমেন্ট পেলে (আটশো/ সাতশো রিয়েক্ট আমার পেইজের কথা বলেছি) গল্পটা আমি আরেকটু বড় করতে পারি। যা তা লিখে নিশ্চয়ই বড় করব না, নতুন কিছু ঘটনা যোগ করব। ভালো লাগবে আশা করছি।
আগামী পর্ব একদিন পর দেব, ভেবেছিলাম গল্প শেষ করে দেব, সবাই বড় করার কথা বলেছে তাই গল্প আরেকটু গুছিয়ে লিখতে হবে।
চলবে….
#প্রিয়তার_প্রণয়
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_২৭
বাসরঘরে বসে অপেক্ষা করছে বুশরা রাত অনেক হয়ে গিয়েছে। রুমে অনেকেই ছিল, কিছুক্ষণ আগে বেরিয়ে গিয়েছে। হুমায়ুন এখনও রুমে আসে নি। বুশরা বসে বসে ভাবছে প্রতিটা গল্প সিনেমার মতো নতুন বরেরা বাহিরে কি করে!
আরও প্রায় দশ মিনিট কেটে যাওয়ার পর হুমায়ুন রুমে ঢুকলো। হুমায়ুনের রুমে প্রবেশ বুশরা টের পেলো। দরজা আটকে বুশরার পাশে গিয়ে বসে।
— আপনি এত দেরি কেন করলেন? সবাই চলে গিয়েছে অনেক্ষণ হলো।
— স্যরি বুশরা, আসলেই অনেক দেরি হয়ে গেল। তুমি যাও চেঞ্জ করে এসো অনেক রাত হয়ে গিয়েছে। এত ভারি শাড়ি পড়ে থাকতে হবে না। শোনো এই শাড়িটা পড়ে এসো।
— শাড়িই পরতে হবে?
— হ্যাঁ আজকের রাতটা অন্তত প্লিজ প্লিজ প্লিজ।
— আচ্ছা চেঞ্জ করে আসছি এত প্লিজ বলতে হবে না।
বুশরা শাড়ি নিয়ে চেঞ্জ করতে চলে যায়। হুমায়ুন পাঞ্জাবির পকেট থেকে বেলিফুলের মালা বের করে বিছানায় মাথার পাশে রেখে শুয়ে পড়ে।
কিছুক্ষণ পর বুশরা রুমে এসে দেখে হুমায়ুন চোখের ওপর হাত দিয়ে শুয়ে আছে। ঘুমিয়ে গিয়েছে কি না বুঝতে পারছে না। বুশরার উপস্থিতি বুঝতে পেরে চোখের ওপর থেকে হাত সরিয়ে বুশরার দিকে তাকায় হুমায়ুন। কি সুন্দর লাগছে তাকে এই শাড়িতে। কুচি এলোমেলো দেখে হুমায়ুন বুশরার দিকে এগিয়ে আসে।
— কুচি তো ঠিক করা হয় নি, আমি ঠিক করে দিচ্ছি।
— এত কেয়ারিং জামাই কই ছিল শুনি?
— একদম রাজরানী করে রাখব, নিজের সবটুকু দিয়ে আমার এই প্রিয় মানুষটিকে ভালো রাখব। কেয়ার কাকে বলে বুঝতে পারবে।
— মুখে বললে তো হবে না আমি দেখতে চাই।
হুমায়ুন বুশরার শাড়ির কুচি ঠিক করে দাঁড়িয়ে যায়।
— নাও এবার একদম পারফেক্ট। আমি যা বললাম তা প্রমাণ করতে কি কি করতে হবে?
— আপাতত আমাকে কোলে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিবেন।
— তার আগে এখানে দাঁড়াও।
বুশরাকে দাঁড় করিয়ে ফুলের মালা নিয়ে এসে বুশরাকে চুলে খোঁপা করতে বলে। বুশরা খোপা করলে হুমায়ুন বুশরার খোপায় ফুল গুজে দেয়।
— বাহ প্রথম থেকে ইম্প্রেস করার কাজ!( খোপায় হাত দিয়ে হাসতে হাসতে কথাটি বলে বুশরা)
— বউকে ইম্প্রেস কেন করতে যাব এটা তো ভালোবাসা।
— মুখ থেকে তো একবারও বের হলো না কথাটা।
হুমায়ুন ততক্ষণে বিছানায় গিয়ে পা নামিয়ে বসেছে। বুশরার কথা শুনে বুশরাকে টেনে নিজের দিকে নিয়ে এসে পাশে বসিয়ে দেয়।
মুখটা নিজের দিকে এগিয়ে নিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বুশরার কানে ফিসফিসিয়ে বলে,” ভালোবাসি!”
— জড়িয়ে ধরবেন না?(বুশরা)
— সারারাত আজকে আমার বুকেই রাখব তোমায় হবে না?
— হুম।
হুমায়ুন এবার বুশরাকে আলতো করে নিজের বুকে টেনে নেয়। প্রিয় মানুষকে বুকে রাখতে বা থাকতেও কেমন যেন একটা ভালো লাগা কাজ করে। প্রিয় জনের বুকে এক প্রকার শান্তি অনুভব করা যায়।
বুশরা হুমায়ুনের বুকে কান ফেলে হৃসস্পন্দন শুনতে থাকে। ভালোবাসার পূর্ণতা যেন এখানেই এসে থেমে গিয়েছে।
______________________________
সকালে ঘুম ভাঙে প্রিয়তার, নিজের অবস্থান কোথায় সেটা বুঝে উঠতে পারে না। চোখ খুলতেই দেখে কেউ তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে আছে। কেউ তাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে, কে হতে পারে ভাবতেই গতরাতের কথা মনে পড়ে যায়। ইয়াশের কথা মনে করে লজ্জা পেয়ে তার বুকেই মুখ লুকায়। ইয়াশের বুকের লোমগুলো মুখে লাগলে কেমন যেন আরেকটা অন্যরকম ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। সে নিজেও জড়িয়ে ধরে ইয়াশকে। কত বছর অপেক্ষার পর তাকে কাছে পেয়েছে সে। প্রিয়তা ইয়াশকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
— কি হলো বুকের মধ্যে থেকে এত নড়াচড়া করলে হবে?(ঘুম ঘুম কন্ঠে)
— আপনি জেগে?(অবাকে হয়ে ইয়াশের দিকে মাথা তুলে জিজ্ঞেস করে প্রিয়তা)
— জেগে ছিলাম না, আমার বউ খুব নড়াচড়া করে তার জন্যই ঘুম ভেঙে গেল।
— কোথায় নড়াচড়া করলাম আমি?
— এই যে মাত্র।
— আমাকে ছাড়ুন, তাহলে আর নড়ব না।
— দূরে যেতে দেওয়ার জন্য বিয়ে করেছি নাকি!
— নড়তেও দিবেন না আবার সরে শুতে চাইলে তাও দিবেন না।
— না আমার বউ চুপ করে জড় হয়ে আমার বুকের মধ্যে থাকবে। কতদিন ধরে এখানে মাথাটা রাখতে চাচ্ছিলো আমি রাখতে দেই নি শুধু এই দিনের অপেক্ষায়। আগে থেকে জড়িয়ে ধরলে কি এই অনুভূতি পাওয়া যেত! এখন থেকে সবসময় এখানে থাকলেও সমস্যা নেই।
— একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
— কি কথা শুনি?
— কবে থেকে আমাকে ভালোবাসেন?
— এটা জানতে হবে?
— হুম।
— না জানলে হয় না?
— না হয় না, বলতে হবে।
— সকাল সকাল ঘুমোতে না দিয়ে আপনার এসব জানতে হবে!
— হ্যাঁ বলেন না প্লিজ।
— আমার মা যখন থেকে তোকে বউমা বলে ডাকতো।
— কি! সত্যি?
— মিথ্যা কেন বলব?
— ইশ আমাকে দুই এক বছর আগে জানাতেন!
— কেন? তাহলে কি হতো?
— প্রেম করতাম।
— এখন করব। প্রেম করলে তো আর এখন যেমন জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছি এভাবে থাকতে দিতেন?
— নাহ।
— জড়িয়ে ধরতেন?
— একটু আধটু।
— আর এখন যা করব সব হালাল, দরকার কি ওসবে যাওয়ার। তার থেকে ভালো হয় আরও কাছে এসো আদর করে দেই।
— নায়ায়ায়ায়ায়া
ইয়াশ প্রিয়তার মুখ চেপে ধরে-
— এভাবে চিৎকার করলে সবাই কি ভাববে! বেয়া°’দব মেয়ে একটা।
— স্যরি।
ইয়াশ প্রিয়তার দিকে এক পলকে তাকিয়ে আছে দেখে প্রিয়তা লজ্জা পায়।
প্রিয়তা লজ্জা পেয়ে ইয়াশের বুকে আবার মাথা রাখে থাকে ইয়াশ ও হাসতে থাকে প্রিয়তার কান্ড দেখে।
— আপনি আমার দিকে এভাবে তাকাবেন না তো।
— কেন? এভাবে তাকালে কি হবে?
— আমার লজ্জা লাগে।
— লজ্জা কেন লাগবে? আমি কি আমার প্রিয়র দিকে ভালোবাসাময় চোখে দেখতেও পারব না?
— আপনি তো দেখতে পারবেন কিন্তু আপনি এভাবে তাকালে আমার খুব লজ্জা লাগে।
— আহহা রে আমার লজ্জাবতী। এত লজ্জা পেলে আমাদের সংসার বাচ্চা কাচ্চা কিভাবে হবে? আমার মা তো বলেই দিয়েছে বিয়ের বছর ঘুরতে না ঘুরতেই তার নাতি নাতনি লাগবে।
— থামবেন আপনি!
— কেন বউয়ের কাছে কোন লিমিট নেই।
— আপনি ঘুমান আমি উঠছি।
— এখনই কেন উঠতে হবে? স্ত্রীর দায়িত্ব, বর যতক্ষণ শুয়ে থাকবে স্ত্রীও ততক্ষণ শুয়ে থাকবে। মোট কথা স্বামীকে সঙ্গ দিতে হবে এটা স্ত্রীর একমাত্র দায়িত্ব ও কর্তব্য।
— এসব কোন আইনে লেখা?
— যে আইনে লেখা শাড়ি পড়লে রাগ দেখানো যাবে না সেই আইনে।
— আমি পারব না আর শুয়ে থাকতে।
— শুধু শুধু শুয়ে থাকতে কে বলেছে?
— তাহলে আর কি করব?
“আপনাকে কিছু করতে হবে না শুধু জড়িয়ে ধরে আরেকটু ঘুমাতে দেন” বলেই প্রিয়তাকে আবার জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেলে ইয়াশ। প্রিয়তাও আর কিছু না বলে ইয়াশের বুকে মুখ লুকায়।
__________________________
বাড়িতে আজকে নানারকম রান্না হচ্ছে। দুইটা বিয়ে একসাথে হয়েছে বলে কথা। এরকম আনন্দের দিনে বারবার মিসেস আঞ্জুয়ারার ফোনে কল আসছে। আরশি এতসব কিছু খুব মিস করছে, কান্নাকাটি ও করছে। তার একমাত্র ভাইয়ের বিয়ে এভাবে হয়ে গেল। আঞ্জুয়ারা মেয়ের সাথে কথা বলছিলেন এমন সময় ইয়াশের রুমের দরজায় প্রিয়তার গলা শুনতে পাওয়া যায় তিনি পরে কল করবেন বলে কল কেটে দেন।
— কে আছো বাহিরে দরজা এখনও খুলে দাও নি কেন? আর কতক্ষণ রুমে থাকতে হবে? আমার কিন্তু এখন বিরক্ত লাগছে মা……
প্রিয়তার গলা শুনে ইয়াশের মা আর প্রিয়তার মার খেয়াল তারা তো রাতে বাহিরে থেকে দরজা আটকে দিয়েছিল। বুশরার মাসহ সবাই রান্নাঘরে হাসতে থাকে। লুবনার মা গিয়ে দরজা খুলে দিতেই যেন রুমের ভেতর থেকে আগুনের গোলা বের হয়ে সোজা এগিয়ে যায়। দুই কোমড়ে দুই হাত দিয়ে প্রিয়তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সবাই শব্দ করে হেসে ওঠে। সবার হাসি দেখে প্রিয়তা ভ্রু কুচকে বলে-
— সমস্যা কি তোমাদের রাতে দরজা আটকাতে বলেছে কে তোমাদের?
— দরজা না আটকালে কি তুই ওই রুমে থাকতি?(লুবনার মা)
— সেটা পরের ব্যাপার, আগে বলো তোমরা দরজা আটকেছো কেন?
— দরজা আটকে রাখতে হয় তাই।(বুশরার মা)
— এই তোমরা না মা হও, মানে ভাবিদের মতো আচরণ কিভাবে করো তোমরা লজ্জা লাগে না?
বাসায় কোন পুরুষ আসছে বুঝতে পেরে আঞ্জুয়ারা বেগম প্রিয়তাকে টেনে রান্নাঘরে নিয়ে নেয়।
“কি হলো এখানে টেনে আনলে কেন?” কথার পরিপ্রেক্ষিতে প্রিয়তার মা বলেন,” নিজের দিকে একটু তাকিয়ে দেখ।”
অতঃপর প্রিয়তা নিজের দিকে তাকিয়ে লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেলে। প্রিয়তার অবস্থা দেখে সবাই আবার হেসে ফেলে।
— আমার ছেলের টিশার্ট ও ছাড়িস নি প্রিয়।(আঞ্জুয়ারা)
— ড্রেস চেঞ্জ করার উপায় রেখেছিলে তোমরা? আমার রুমে যাব আর দেখি দরজা আটকে রাখা হয়েছে।
— এখন যা ফ্রেশ হয়ে নে, তোর বিছানায় শাড়ি রাখা আছে।( প্রিয়তার মা)
— আমি শাড়ি পড়তে পারি না জানোই তো মা। ধরে বেধে বিয়ে তো দিয়ে দিলে শাড়ি পড়ানো শিখিয়েছো? আমি আমার পাতলা কোন জামা পরছি।
— না শাড়ি পরতে হবে। আমরা তো কাজ করছি ইয়াশকে বলছি কুচি ধরে দেবে এটা তো তার দায়িত্ব।
— বড়মা……..
প্রিয়তা আর কথা না বাড়িয়ে নিজের রুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে। নিজের রুমে ঢুকে বিছানায় একটা প্যাকেট দেখে এগিয়ে যায়। প্যাকেট থেকে শাড়ি বের করে দেখে লাল টকটকে একটা শাড়ি রাখা, শাড়িটা অসম্ভব সুন্দর। প্রিয়তা শাড়িটা হাতে নিয়ে খুশিমনে ওয়াশরুমে চলে যায়, আজকে তার একা একা শাড়ি পড়া শিখতেই হবে বলে মনে মনে একটা প্রতিজ্ঞা করে নেয়।
যারা গল্প পড়েন তারা প্লিজ অন্তত লাইকটা দিয়ে রাখবেন, এতে লেখার আগ্রহ জন্মে। আর অবশ্যই জানাবেন কেমন হচ্ছে।
চলবে……..