#প্রিয়তার_প্রণয়
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_২৪
রাত দুইটা-
সবাই কিছুক্ষণ আগে ঘুমিয়ে পড়েছে। আর প্রিয়তা এখনও জেগে থেকে ইয়াশের সাথে কথা চালু রেখেছে। বড়মাকেও সে নিজেই ঘুমোতে বলেছে সে অপেক্ষা করবে বলে।
এবার ফোন রেখে বাহিরের দিকে রওয়ানা দেয় প্রিয়তা। এতক্ষণে ইয়াশ বাড়ির সামনে চলে এসেছে।প্রিয়তা গিয়ে দরজার পাশেই দাঁড়িয়ে থাকে। ওপাশ থেকে নক করার শব্দ হয়।
— কে?(প্রিয়তা)
— আপনার জামাইজান, দরজা খুলুন বিবিসাহেবা।
“খুলছি” বলে তাড়াতাড়ি করে দরজা খুলে দেয় প্রিয়তা। ইয়াশ ভেতরে চলে এলে প্রিয়তা আবার দরজা লাগিয়ে দেয়। ইয়াশ নিজের রুমে ঢুকবে এমন সময় প্রিয়তাও নিজের রুমে ঢুকবে তখনই ইয়াশ প্রিয়তার দিকে তাকায়।
— তুই ওই রুমে কেন যাচ্ছিস?(ইয়াশ)
— কেন? আপনি ফ্রেশ হয়ে নেন তারপর আমি খাবার বেড়ে দিচ্ছি।
— ফ্রেশ তো আমি রুমে হব না তাই না? আয় এই রুমে আয়।
— আচ্ছা ঠিক আছে।
প্রিয়তা ইয়াশের পিছু পিছু তার রুমেই যায়।
— বস ওখানে, সবসময় শুধু দূরে দূরে থাকবে…(ইয়াশ)
— কাছে থাকার মত সময় তো এখনও আসে নি।
— বলেছিলাম রেডি থাকতে বিয়ের জন্য।
— সবাইকে না জানিয়ে আমি বিয়ে করছি না।
— আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে আরও দেরি হোক।
— দেরি কেন হবে?
— আমার ইচ্ছে ছিল লুকিয়ে বিয়ে করে প্রেম করব বউয়ের সাথে। কিন্তু তা তো হলো না বিয়ে না করেই এবার প্রেম করতে হবে।
— না না আমি বিয়ে করব।
— না আমি আর বিয়ে করব না।
— না প্লিজ।
— উহু হবে না।
— হবে।
— জোর করে লাভ নেই।
— কে বলেছে লাভ নেই, আমি বিয়ে করব মানে বিয়ে করব।
— বস আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। ( শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বলল ইয়াশ)
প্রিয়তা মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ বুঝিয়ে অন্যদিকে তাকালো। ইয়াশ প্রিয়তার দিকে তাকালে দেখে প্রিয়তা অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। ইয়াশ বিষয়টা বুঝতে পেরে মজা করতে প্রিয়তার পাশে গিয়ে বসে প্রিয়তাকে ধাক্কা দেয়।
— কি হলো?(প্রিয়তা)
— অন্যদিকে কেন তাকিয়ে আছো?
— তুমি!
— প্লিজ কথার মাঝখানে এভাবে কথা ধরে অনুভূতি শূন্য করে দিও না তো।
— স্যরি।( মাথা নিচু করে)
— এখন বল আমার দিকে না তাকিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে কেন কথা বলছিলে?
— এমনি..
— বল.
— আপনি তো আমার সামনেই দাঁড়িয়ে শার্ট খুলছিলেন তাই।
— অভ্যাস করে নাও প্রিয়।
ইয়াশের কথায় লজ্জায় কুঁকড়ে যায় প্রিয়। আর কি বলবে কথা খুঁজে পায় না। শুধু ইয়াশের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। প্রিয়তাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইয়াশ ও যেন প্রিয়তার চোখে ম°’রণ ডুব দিয়ে দেয়।
— শুনুন.। (প্রিয়তা)
— হ্যাঁ
— একবার জড়িয়ে ধরি প্লিজ আমার খুব বেশি ইচ্ছে করছে। আপনাকে একবার জড়িয়ে ধরার পিপাসা আমাকে শেষ করে দিচ্ছে।
— চল কালকেই বিয়ে করি, এখানকার কোন একটা কাজী অফিসেই। একটা দিন শুধু সময় দে। আমারও তো ভীষণ ইচ্ছে করে আমার প্রিয় মানুষটাকে একদম পুরোপুরি আমার মনের মতো করে পেতে। তোর চেয়ে এই পিপাসায় আরও বেশি কাতর আমি।
— প্লিজ একবার শুধু, আমি আর পারছি না ইয়াশ ভাই। আপনার বুকে মাথা রাখাটা এখন আমার প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
— আর কয়েকটা ঘণ্টা প্রিয়।
— একটাবার জড়িয়ে ধরলে বিষয়টি খুব খারাপ হয় যাবে?
— খারাপ না কিন্তু….
— স্যরি আর চাইবো না জড়িয়ে ধরতে। টেবিলে আপনার জন্য খাবার রাখা আছে খেয়ে নিবেন প্লিজ।আসছি…..
ইয়াশকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিজের রুমে চলে যায় প্রিয়তা। ইয়াশ বসে বসে ভাবতে থাকে এত অধৈর্য কেন এই মেয়ে!
__________________________________
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফোন হাতে নেয় প্রিয়তা। রাতে রুমে এসে ফোন বন্ধ রেখেছিল প্রিয়। তাই ফোনট অন করে।
ডাটা অন থাকায় মেসেজ নোটিফিকেশন দেখে অনলাইনে চলে যায় প্রিয়তা।
ইয়াশ অনেকগুলো মেসেজ করেছে, নয়টার বেশি মেসেজ হলে তো আর সংখ্যা দেখা যায় না। আরেকজনের মেসেজ দেখে ইনবক্সে চলে যায়। এটা হচ্ছে আহিন, তার ক্লাসমেট। এই কয়েকদিনে প্রিয়তার ভালো একটা বন্ধু হয়ে গিয়েছে।
মেসেজ সিন করে দেখে আহিন একটা ভিডিয়ো পাঠিয়েছে।
প্রিয়তা ভিডিয়ো দেখা শুরু করলে একমিনিট দেখেই আর দেখতে পারে না। এত তাড়াতাড়ি তার চোখ টলমল করতে থাকে। কেনই বা চোখে পানি আসবে না! প্রিয় মানুষটির সাথে অন্য একটা মেয়ের এত কাছাকাছি অবস্থান মেনে নিতে পারছে না সে।
চোখে পানি নিয়ে টেক্সট করে প্রিয়তা।
— তোমাকে এটা কে দিলো?
— এটা আবিরা আপলোড দিয়েছে তার প্রোফাইলে গিয়ে দেখ। ক্যাপশনে লেখা নায়কের কেয়ারিং।
— আচ্ছা পরে কথা বলছি তোমার সাথে।
প্রিয়তা সাথে সাথে আবিরার প্রোফাইলে যায়। আহিনের কথা সত্যি! ইয়াশ ওই মেয়ের এত যত্ন নিয়েছে বাহ! তার কাধে হাত দিয়ে বুকের এত কাছে! খাইয়েও দিচ্ছিলো, বলতে গেলে ভিডিয়োতে এক প্রকার কেয়ারিং বর বা বয়ফ্রেন্ডকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। ওই মেয়ের সাথে ইয়াশের এতকিছু চলছে! তাহলে প্রিয়তার সাথে এসব কি?
প্রিয়তা যেন ভিডিয়ো আর তার কমেন্ট দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারছিল না। সবাই তাদেরকে বাস্তব জুটি হিসেবেই মেনে নিয়েছে।
প্রিয়তা কান্না করেই চলেছে আর আওড়াতে থাকে আমার সাথে এসব না করলেও পারতেন ইয়াশ ভাই! আমাকে এভাবে শেষ করে না দিলেও তো পারতেন, কি ক্ষতি করেছিলাম আমি শুধু ভালোই তো বেসেছিলাম আপনাকে!
___________________________
সকাল দশটা-
প্রিয়তা ফ্রেশ হয়ে বাহিরে হয়ে দেখে বড়রা সবাই কাজে ব্যস্ত। তার বাবা আর বুশরার বাবা রান্নার ওখানে ব্যস্ত আর ইয়াশের বাবাও বাকি কাজ দেখাশোনা করছে।
বাকি তিন ঘরনীও বসে নেই তারাও কাজে ব্যস্ত। বুশরার রুমে যাবে এমন সময় সানিকে তার দিকে আসতে দেখে। প্রিয়তা তাড়াতাড়ি চলে যাবে ঠিক তখনই সানি প্রিয়তাকে ডাক দেয়।
প্রিয়তা আর কোথাও না গিয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। সানি তার সামনে এসে দাঁড়ায়।
— কিছু বলবেন?(প্রিয়তা)
— কেমন আছো?
— আলহামদুলিল্লাহ, আপনি?
— আমিও ভালো। আসলে সেদিনের পর থেকে আমি আর তোমার সামনে আসতে পারি নি। আজকে তোমাকে একা দেখে খুব সাহস করে এলাম। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিও।
— আমি এই বিষয়ে আর কোন কথা বলতে চাই না প্লিজ। এতদিন যেরকম সামনে আসেন নি, আর কখনো আসবেন না। আপনাদের মতো পুরুষকে দেখলে আমার গা গুলোয়।
— আমি জানি আমি খুব খারাপ একটা কাজ করেছি, তার জন্য আমি এতদিন কষ্ট পাচ্ছি ভেতরে ভেতরে। নিজের কাছে নিজেকে নি*’কৃষ্ট লাগছে, আমার মনে হয় না আমার জন্য কোন শা*’স্তি যথাযথ হবে। তবুও বলব আমাকে প্লিজ মাফ করে দিও।
কথাটা বলেই সানি বাহিরের দিকে চলে যায়। প্রিয়তাও চলে যায় বুশরার রুমে।
প্রিয়তা রুমে ঢুকতেই লুবনা দেখে বলে ওঠে-
— ওই তো প্রিয়তা ঘুম থেকে উঠে পড়েছে।
— এই তোর চোখ এত লাল আর ফুলে গিয়েছে মনে হচ্ছে।(বুশরা)
— ওই যে রাতে একটু জেগেছিলাম তাই হয়তো।
— আচ্ছা ওসব বাদ দে এখন, প্রিয়তা তুই বুশরাকে নিয়ে পার্লারে চলে যা। আমি তো কাজে ব্যস্ত থাকব, তুই ও সেজে আসিস। যা তুইও গোসল দিয়ে নে বোন তাড়াতাড়ি যা দেখ দশটা পার হয়ে গিয়েছে।
— প্রিয়তা যা তাড়াতাড়ি আমার গোসল হয়ে গিয়েছে।(বুশরা)
— আচ্ছা ঠিক আছে আমি খাব, ক্ষুধা পেয়েছে।
— খেয়ে গোসল দিয়ে ব্যাগ পত্র নিয়ে একেবারে চলে আয়।
— আচ্ছা ঠিক আছে।
প্রিয়তা গিয়ে খাবার টেবিলে খেতে বসে। সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত তাই একাই খাবার নিয়ে বসে পড়ে।
এমন সময় ইয়াশ ও চলে আসে। ইয়াশকে দেখামাত্র সকালে দেখা ভিডিয়ো এর কথা মনে পড়ে যায়।
ইয়াশ এসে চেয়ার টেনে খাবার টেবিলে বসে পড়ে।
প্রিয়তা আর এক মুহূর্ত দেরি না করে খাবারের প্লেট আর পানির গ্লাস নিয়ে দাঁড়ালে ইয়াশ ভ্রু কুচকে প্রিয়তার দিকে তাকায়।
— কি হয়েছে?(ইয়াশ)
— কিছু না।
— আমি আসায় তাহলে চলে যাওয়া হচ্ছে কেন?
— আমি আমার রুমে গিয়ে খাব তাই।
— তাহলে এখানে এত বড় খাবার টেবিল কেন রাখা হয়েছে?
— আমার এখন এখানে খেতে ইচ্ছে করছে না তাই রুমে যাচ্ছি। আপনার ও এখানে খেতে ইচ্ছে না করলে নিজের রুমে গিয়ে খান।
— একটু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে না প্রিয়?
— কিছু বেশি হচ্ছে না। আমি আসছি।
— তুই এখান থেকে গেলে আমি এখন কেন আজকে সারাদিন খাব না।
— সেটা আপনার ইচ্ছে, পেট আপনার শরীর আপনার সবই আপনার।
— তুইও আমার।
— এই কথা বলতে লজ্জা লাগা উচিৎ আপনার।
— লজ্জা লাগা উচিৎ মানে? লজ্জা কেন লাগবে?
— আমি এই নিয়ে কথা বাড়াতে চাইছি না।
— প্রিয় আমি তোমার সাথে মজা করছি না। আমার কথার অবাধ্য হলে আমি আজকের এই বিয়ে বাড়িতে কিন্তু তা°’ন্ডব বাধিয়ে দেব। এতসময় জার্নি করে কালকে এসেছি, রাতে ঘুমোই নি পর্যন্ত এখন ও তোমার এই ব্যবহার।
— আমার সামনাসামনি হবেন না তাহলেই আর আপনার মেজাজ খারাপ হবে না।
— মানে গতরাতে তোর কথামতো…..
— একদম বাজে কথা বলবেন না। আমার আপনার সাথে কথা বাড়িয়ে কোন কাজ নেই ভালো হয় আপনি নিজের চরিত্রের দিকে নজর দেন।
— আমার চরিত্রের কি হলো?
— নজর দেন বুঝে যাবেন, আসছি।
প্রিয়তা খাবারের প্লেট আর গ্লাস নিয়ে নিজের রুমের দিকে চলে যায়। ইয়াশ ও না খেয়ে উঠে বাহিরের দিকে চলে যায়।
চলবে……..
#প্রিয়তার_প্রণয়
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_২৫
প্রায় তিনটার দিকে পার্লার থেকে বের হওয়ার আগে বুশরা ইয়াশকে কল দিয়ে তাদের নিয়ে যেতে বললে কিছুক্ষণের মধ্যে ইয়াশ চলে আসে।
ইয়াশ বাহিরে এসে প্রিয়তাকে কল দিলে, প্রিয়তা কল কেটে দিয়ে বুশরাকে বলে হয়তো ইয়াশ ভাইয়া চলে এসেছে কল দিয়েছিল।
বুশরা আর প্রিয়তা বাহিরে চলে এসে দেখে ইয়াশ গাড়ির বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে।
— ভাইয়া কখন এসেছো?(বুশরা)
— মিনিট পাঁচেক। গাড়িতে উঠে পড়, বরযাত্রী প্রায় চলে এসেছে।
— আচ্ছা চল। প্রিয়তা তুই সামনে বস।
— আমিও পিছনেই বসছি তোর সাথে।(প্রিয়তা)
— আমি কারও ড্রাইভার না বুশরা তুই সামনে বস।
— হ্যাঁ যা বস।(প্রিয়তা)
— কি হয়েছে তোদের?
— কিচ্ছু হয় নি যা বস।(প্রিয়তা)
— আমিই গিয়ে বসছি, তোদের মিটমাট করতে গেলে আমারই আজ বিয়ে হবে না।
বুশরা গিয়ে পাশের সামনের সিটে বসে পড়ে। ইয়াশ অসহায়ের মতো প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে থাকে। কি এমন হয়েছে প্রিয়তার যে নিজে আজকে তার জায়গা ছেড়ে দিলো! আর সেদিন কতকিছু করে আবিরাকে পিছনে বসিয়েছিল সে।
প্রিয়তা গিয়ে পিছনের সিটে বসে পড়ে। ইয়াশ আর কি করতে পারে, তাই সেও ড্রাইভ শুরু করে দেয়।
কয়েক মিনিট পর বাসায় পৌঁছে যায় তারা। প্রিয়তা বুশরাকে নিয়ে ভেতরে চলে যায়। ততক্ষণে বর চলে এসেছে।
প্রিয়তা আর বুশরা রুমে বসে আছে। বরের বাসার কয়েকজন করে এসে বুশরাকে দেখে দেখে যাচ্ছে।
প্রায় সন্ধ্যার আগে প্রিয়তার মা এসে বুশরাকে বাহিরে নিয়ে যেতে বলে। বিয়ে পড়ানোর সময় হয়ে গিয়েছে, কিছুক্ষণ পর আবার সন্ধ্যা হয়ে যাবে আবার ওদের তো বাসায় যেতে হবে।
প্রিয়তা আর লুবনা দুজন মিলে বুশরাকে নিয়ে যায় বাহিরে।
ইয়াশ বরযাত্রীর ওখানে বসে সবার সাথে গল্প করছে। প্রিয়তা আর লুবনা যখন বুশরাকে নিয়ে আসে তখন ইয়াশ এক নজরে প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে ছিল। দুপুরে প্রিয়তার ওরকম ব্যবহারের জন্য সে তখন প্রিয়তার দিকে ভালোভাবে তাকিয়ে দেখেনি। দূরে থেকে যতই তাদের কাছাকাছি আসছিল তত বেশি বোঝা যাচ্ছিল যে প্রিয়তাকে কি অসম্ভব সুন্দর লাগছে!
কিন্তু প্রিয়তা তার সাথে খারাপ ব্যবহার কেন করছে শুধু রাতের জন্যই যদি এরকম করে তাহলে তো একটু বেশি বেশি করছে। কিন্তু শুধু রাতের জন্য তো এরকম করার কথা না। নিশ্চয়ই অন্য কিছু হয়েছে। এসব ভাবতে ভাবতে ইয়াশ ঠিক করলো বিয়ে চলে যাওয়ার পরপরই প্রিয়তাকে ধরতে হবে জানতে হবে কি হয়েছে সে এমন কেন করছে তার সাথে!
প্রিয়তা আর লুবনা, বুশরা কে নিয়ে গিয়ে বরের পাশে বসালো। হুমায়ুন এই প্রথম বুশরাকে শাড়ি পড়ে দেখলো তাও আবার একেবারে বউ সাজে।
নিজের বউকেও যে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতে হবে এটা কখনো হুমায়ুন ভাবতেই পারিনি। তবুও আড়চোখে বুশরাকে দেখাই যাচ্ছে না।
অতঃপর কিছুক্ষণ পর বিয়ের কাজ শুরু হয়। আর এই বিয়ের মাধ্যমে দুটি হৃদয়ের অসীম ভালোবাসা এক হয়। একে অপরের সারা জীবনের সুখ দুঃখের সঙ্গী হয় তারা দুজন।
সন্ধ্যা সাতটার দিকে বরযাত্রী বিদায় নিলে সবাই বাসার ভেতরের দিকে যার যার রুমে চলে যায়। কারণ লুবনার বিয়ের চেয়েও ছোট করে আয়োজন করা হয়েছে বুশরার বিয়েতে। বিয়েতে শুধু তাদের বাসার মানুষ গুলোই। লুবনার মা বাবা একদিনের ছুটি নিয়ে এসেছিল সকাল ভোরবেলায় আবার চলে যাবে। লুবনা আর হিমেল তখনই বাসায় ফিরে গিয়েছে কারণ ওখানে এখন থাকা প্রয়োজন।
ইয়াশের বাবা আর প্রিয়তার বাবা দুজন মিলে বুশরাদের বিয়ে পড়ানো কাজীকে নিয়ে বাসার ভেতরে ঢুকে সবাইকে ডাকাডাকি শুরু করে দেয়। যার যার রুম থেকে সবাই বেরিয়ে আসে।
সবাই এসে চারপাশে দাঁড়িয়ে যায়। প্রিয়তার বাবা সবাইকে বসতে বললে সবাই বসে।
— কি হয়েছে?(ইয়ালিদ,লুবনার বাবা)
— আমরা ভেবেছি আজকেই ইয়াশ আর প্রিয়তার বিয়েটা পড়িয়ে দিতে, তাহলে একদম সব ঝামেলা শেষ। (সাজিদ)
— বাহ ভালোই তো হয়, আমরা থাকতেই বিয়েটা হয়ে যাবে।(হোসনেয়ারা, লুবনার মা)
— হ্যাঁ ওদের বিয়ে ঠিক তো অনেক আগে থেকেই আর বিষয়টা দুজনই জানে তাই আমার মনে হয় একেবারেই আজকে বিয়ে পড়িয়ে দেওয়া ভালো হবে।( বুশরার মা, সীমা)
— এই ছোট যা তুই বুশরাকে নিয়ে আয়। আমি ইয়াশকে নিয়ে আসি। (আঞ্জুয়ারা)
— আচ্ছা আমি যাচ্ছি।
দুইজনের মা দুজনের রুমে চলে যায়।
প্রিয়তার মা প্রিয়তাকে বিয়ের কথা বললে প্রিয়তা এক প্রকার আঁতকে ওঠে।
— আজকেই বিয়ে মানে?
— হ্যাঁ সবাই বাহিরে বসে আছে ইয়াশ ও হয়তো এতক্ষণে বাহিরে চলে গেছে তুই তাড়াতাড়ি চল।
— মা আমি এখন বিয়ে করব না।
— ঢং বিয়ের পর ইয়াশকে দেখাস, এখন তাড়াতাড়ি চল।
— আমি পারব না এখন বিয়ে করতে।
— যদি কোন কারণে রাগ বা অভিমান থাকে পরে মিটিয়ে নিস, এখন এমন করিস না।
— এমন কিছুই না মা আমি শুধু বিয়েটা করব না এখন।
— বাহিরে সবাই বসে আছে, মান সম্মান নষ্ট করিস না আমাদের।
— মা প্লিজ।
— তুই যদি বিয়ে এখন না করিস তাহলে পুরো বাড়ির মানুষ কি ভাববে সেটা একবার ভাব তো!
— আমাকেই কেন সবার কথা ভাবতে হবে।
— কারও কথা ভাবতে হবে না চল তুই মা।
প্রিয়তার মা প্রিয়তার হাত ধরে বাহিরে নিয়ে যায়। বাহিরে সবাই অপেক্ষা করছিল। ইয়াশ ও বসে আছে একটা সোফায়। প্রিয়তার মা প্রিয়তাকে নিয়ে গিয়ে ইয়াশের পাশে বসিয়ে দিলো। প্রিয়তা মনে মনে শুধু ভাবছে এমন একটা মানুষ সারাজীবনের জন্য তার কপালে জুটে গেল!
বারবার সকালের ওই ভিডিয়োর কথা মনে পড়ছিল। কিভাবে একটা ছেলে অন্য একটা মেয়ের এত কাছাকাছি থাকে!
প্রিয়তা একদিকে এসব কথা ভাবছিল অন্যদিকে কাজী সাহেব তার কাজ করছিল। মায়ের ধাক্কা পেয়ে প্রিয়তা বাস্তবে ফিরে আসে। মায়ের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়।
— কি?
— কবুল বল
— মা….
— বল।
—
— কি হলো বল কবুল।
—
— আলহামদুলিল্লাহ কবুল এটা বলবি বল তাড়াতাড়ি।
প্রিয়তার মা সহ সবাই কবুল বলার জন্য বলেই যাচ্ছে অতঃপর প্রিয়তাও বলে দেয়। ইয়াশকে কবুল বলার জন্য বলতে দেরি হলেও তার কবুল বলতে দেরি হয় না। ইয়াশের কান্ড দেখে বাড়ির সবাই হেসে ফেলে।
আজকে আরও দুইজনের ভালোবাসা একসাথে হলো। দুজনের এই ভালোবাসা যেন আজীবন অটুট থাকে।
কিন্তু ইয়াশের জানতেই হবে প্রিয়তার কি হয়েছে! আজ সারাদিন তার সাথে কথা বলে নি। ইয়াশ যে সকালের প্রিয়তার ওরকম ব্যবহারের জন্য সারাদিন খাওয়া দাওয়া করে নি সেটা হয়তো প্রিয়তা জানেই না। জানলে হয়তো অনেক আগেই সবকিছু ঠিক হয়ে যেত। ইয়াশ আজকে নিজের প্রতি প্রিয়তার চরম অবহেলা দেখেছে। দুজন ভালোবাসার মানুষের ভালোবাসা শেষ করতে অবহেলা আর ভুল বুঝাবুঝিই যথেষ্ট। ইয়াশ কোনভাবেই চায় না তার এত বছরের ভালোবাসা একদিনের অবহেলায় হারিয়ে যাক।
গল্পগুজব শেষ করে কিছুক্ষণ পর সবাই খেতে বসে, ইয়াশ খাবে না বলে নিজের রুমে চলে যায়। প্রিয়তা সবার সাথে বসে খাওয়া দাওয়া করছে। হঠাৎ ইয়াশের কথা তার মনে পড়ে সকালে ইয়াশ বলেছিল আমি উঠে গেলে নাকি শুধু সকালে কেন সারাদিন খাবে না। তার মানে সারাদিন না খেয়ে আছে! গতরাতেও খেয়েছিল কি না সন্দেহ। তার মানে যদি না খায় তাহলে পুরো দুদিন প্রায় না খেয়ে আছে! ইয়াশের কথা ভেবে প্রিয়তা এবার আর খেতে পারে না। এদিকে সবার খাওয়া শেষ হয়ে যার যার রুমে চলে যায়। প্রিয়তার মা প্লেটে খাবার দিয়ে প্রিয়তাকে নিয়ে যেতে বলে।
ইয়াশের বাবাও রুমে চলে যায় বাহিরে এখন শুধু দুজনের মা আছে।
তারা বুঝিয়ে প্রিয়তাকে ইয়াশের ঘরে পাঠিয়ে দেয়। তারা দুজন ও এবার নিজেদের রুমে চলে যায়।
প্রিয়তা খাবার প্লেট টেবিলে রাখতেই ইয়াশ বুঝতে পারে প্রিয়তা চলে এসেছে। ইয়াশ এতক্ষণ চোখ বন্ধ করে চোখের ওপর হাত দিয়ে শুয়ে ছিল। প্রিয়তা আসতেই কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না সে। এই প্রথম এমন হলো যে ইয়াশ প্রিয়তাকে কিছু বলার মত পাচ্ছে না। প্রিয়তা টেবিলের ওখানেই দাঁড়িয়ে রইলো।
— খাবার খেয়ে নেন।(প্রিয়তা)
— খাব না, খাবার খাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই।
— আচ্ছা তাহলে আমি চলে যাচ্ছি।
— চলে যাচ্ছিস মানে?
— চলে যাচ্ছি মানে চলে যাচ্ছি। আমি আমার রুমে চলে যাচ্ছি।
— তুই গিয়ে দেখ শুধু একবার। (বিছানা থেকে উঠে সোজা প্রিয়তার সামনে চলে আসে ইয়াশ)
— কেন গেলে কি করবেন?
— তুই শুধু যাওয়ার সাহস কর, দেখ কি করি।
প্রিয়তা দরজা খুলতে যাবে ঠিক তখন বুঝতে পারে দরজা বাহিরে থেকে লাগানো। তার মানে দুজন দরজা বাহির থেকে লাগিয়ে দিয়ে গিয়েছে।
— দরজা বাহির থেকে লাগিয়ে দিয়ে গিয়েছে নইলে আমার এত ইচ্ছে নেই কোন চরিত্রহীন লোকের সাথে একই রুমে থাকার।
— এই তুই চরিত্রহীন কাকে বলছিস আমাকে?
— আপনি নয়তো কে?
— আমি চরিত্রহীন হওয়ার মতো কি কাজ করলাম?
— সেটা নিজেই খেয়াল করে দেখুন।
— আমার খেয়াল হচ্ছে না প্লিজ আমাকে বলবেন একটু আমি কি করেছি?
— আপনার তো আমাকে দিয়ে হয় না তাই না তার জন্যই তো অন্য মেয়েদের সাথে ওরকম ক্লোজ হোন।
— দেখ প্রিয় একদম বাজে কথা বলবি না এমনিতেই গতকাল থেকে না খেয়ে আছি আর রাগ বাড়াস না।
— না খেয়ে আছেন এখন কি সেটাও আমার দোষ?
— আমি তোর দোষ দিচ্ছি না।
— দোষ থাকলে তো দিবেন চরিত্রহীন ব্যক্তি একটা।
— দেখ প্রিয় এমন ব্যবহার করিস না, যাতে করে পরে পস্তাতে হয়। তুই অনেক বেশি করছিস, অনেক বেশি। এভাবে না বলে কি হয়েছে সেটা বল। যদি তুই সঠিক হোস তাহলে আমি কোনদিন এই মুখ নিয়ে তোর সামনে আসব না। আর যদি তুই ভুল হোস তাহলে আমি দূরে যাব না, যদিও অনেকটা আ°’ঘাত করে ফেলেছিস আমাকে তুই।
প্রিয়তা তার ফোনের ভিডিয়ো বের করে ইয়াশের সামনে ধরে। ইয়াশ ভিডিয়ো দেখতে থাকে।
অনেকেই গল্প পড়েন কিন্তু রেস্পন্স করেন না। প্লিজ অন্তত লাইকটা দিবেন। রেস্পন্স ভালো পেলে লেখায় আগ্রহ পাই।
চলবে…………..