#প্রিয়তার_প্রণয়
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_২২
” বিয়ের তারিখ ঠিক কর, কেউ যেন এই বিষয়ে না জানে। আমি ফিরে এসেই বিয়ে করছি তোকে।”
— জড়িয়ে ধরার ইচ্ছে হলেই বিয়ে করতে হবে? (প্রিয়তা)
— হ্যাঁ বিয়ে করতে হবে। আর তাছাড়া তুই বিয়ে করতে চাস না?
— হ্যাঁ আমি তো চাইই আপনার বউ হতে।(লজ্জা পেয়ে)
— বুঝেছি বুঝেছি লজ্জা পেতে হবে না। বিয়ে করলে সব লজ্জা চলে যাবে।
— ধ্যাত, যান তো।
— যাচ্ছিলামই তো, তুই তো আটকে দিলি।
— বউয়ের সাথে কেউ তুই করে বলে? সবার সামনে না হয় বললেন, শুধু আমি আর আপনি যখন থাকি তখন তো একটু……..
— তুমি বলার অভ্যাস করতে হবে?
— হ্যাঁ একটু একটু….
— চিন্তা করার বিষয় না, এটাও হয়ে যাবে।
— এখন আসুন তাহলে, ফুসকা ছাড়া যেন বাসায় না ফেরা হয় বলে দিলাম।
— ঠিক আছে মেরি জান।
ইয়াশের ব্যবহারে ইদানীং প্রিয়তার খুব হাসি পায়। আগে তার সাথে কত গম্ভীরমুখে কথা বলতো, আর এখন যে বাচ্চা স্বভাবের হয়ে গিয়েছে। প্রিয়তার কোন ইচ্ছেই যেন সে অপূর্ণ রাখছে না।
________________________
পরদিন সকাল এগারোটা-
বুশরার মা কারও সাথে কথা বলে ফোন রেখেই তড়িঘড়ি করে প্রিয়তার মায়ের কাছে চলে যায়।
— কিছু হয়েছে?(প্রিয়তার মা)
— আরে তাড়াতাড়ি চল রান্না বসাতে হবে।
— সকালে তো রান্না হলো, এখন আবার কিসের রান্না?
— লুবনা, হিমেল রওয়ানা দিয়েছে। ওর মা নেই তো কি হয়েছে আমরা তো আছি। আর বিকেলে হুমায়ুন আর তার মা বাবা আসছে বুশরাকে দেখতে।
— কি বলো আপা! আমি তোমাকে বলেছিলাম না বুশরা আর হুমায়ুনকে একসাথে খুব ভালো লাগে। হুমায়ুনকে দেখে মনে হয়েছিল হুমায়ুন বুশরাকে পছন্দ করে।
— আচ্ছা লুবনা কিন্তু বুশরাকে বিষয়টি জানাতে নিষেধ করেছে। আমি বুশরার বাবাকে কল দিয়েছিলাম সে বাজার করে আসছে।
— আচ্ছা ঠিক আছে আমরা রান্নাঘরের দিকে যাই চলো।
— প্রিয়কে জানালে হতো না?
— হ্যাঁ জানানো যায়, শুনলাম আজকে নাকি ইয়াশের ফ্লাইট, নেপালে যাচ্ছে।
— কাজের সূত্রে?
— হ্যাঁ।
— বলেছিলে ইয়াশ নাকি বিয়ে দেরিতে করবে বললে, তাড়াতাড়ি বিয়েটা পড়িয়ে রাখলে ভালো হতো না?
— সে তো হতোই। আমি ইয়াশের সাথে কথা বলে দেখব এক সময়। এখন চলো কাজ সেরে ফেলি।
দুজন কথা বলতে বলতে রান্নাঘরে চলে যায়। অনেক কাজ, তাড়াতাড়ি শেষ করে ফেলতে হবে।
_________________________
বিকেলবেলা-
ইয়াশ মা বাবার সাথে কথা শেষ করে নিজের রুমে গিয়ে দেখে প্রিয়তার ব্যাগ গোছানো শেষ। ব্যাগ রেখে বের হচ্ছিলো এমন সময় ইয়াশ চলে আসে।
— এখনই বের হতে হবে আমার। ফোন এসেছিলো, তুই কিন্তু সাবধানে থাকবি। সাবধানে ভার্সিটিতে যাওয়া আসা করবি।
— আচ্ছা ঠিক আছে, আমাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না আমি এখন ছোট নেই।
— চিন্তা করার জন্য ছোট হতে হয় না প্রিয়, ভালোবাসলে এমনি অটোমেটিক্যালি চিন্তা চলে আসে ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে।
— হ্যাঁ এখন তো আপনার জন্য হলেও ভালো থাকতে হবে আমাকে।
— এই তো বুঝে গিয়েছিস। সবসময় সাবধানে থাকতে হবে। কি বলেছিলাম মনে আছে তো?
— কি বলেছিলেন?
— আমার যে বিয়ের রোগ হয়েছে, বিয়ে করতে হবে।
— সে তো আমি আজকেও রেডি।
— আজকে রেডি থাকলে তো হবে, বিয়ে করে ওতদূর বউ রেখে যেতে পারব না। বিয়ে করে বউকে কাছে না পেলে বিয়ে করে কি হবে!
— কি বাজে লোক!
— ভালো হয়ে কি হবে? সবার কাছে ভালো হলে খারাপ হব কার কাছে।
— আপনি ইদানীং লাগামহীন হয়ে যাচ্ছেন ইয়াশ ভাই।
— ভাই বলা বাদ দিতে হবে, ইয়াশ জান বলা শুরু করে দাও।
— ইয়াশ জান….
— হ্যাঁ জান।
— আমার জানটা এসো একটা চুম্মা দেই, এসো এসো….
— জমিয়ে রাখো জান আমি এক সপ্তাহ পরই চলে আসছি, রেডি রাখবে তোর চুম্মাগুলো।
— পারব না।
— পারতে হবে জান।
— হয়েছে, সাবধানে যাবেন। আর ওই মেয়ের সাথে একদম কাজের সময় ছাড়া মিশবেন না।
— আমি শুধু আমার বউয়ের। অন্য কেউ আসতে পারবে না চিন্তা করিস না।
— একটা খবর তো দেওয়াই হয় নি।
— কি খবর।
— মা কল দিয়েছিল, বুশরাকে দেখতে আসছে। আমি ভাবতেই পারি নি এটা হবে।
— কারা আসছে?
— হুমায়ুন ভাইয়া আর তার পরিবার। সেদিন বলেছিলাম না যে বুশরার জন্য ভালো লাগছিল না। হুমায়ুন ভাইয়ার পরিবার তো আমার বান্ধবীকে দেখতে গিয়েছিল। পরে কিসের থেকে কি হয়ে গেল বুঝলাম না। হয়তো ভাইয়া তার পরিবারকে জানিয়েছে। আজকে দেখতে আসবে, এতক্ষণ হয়তো চলেও এসেছে।
— তাহলে তো ভালোই।
— আমার জীবনে একটাই দুঃখ।
— কি?
— আমাকে কেউ দেখতে এলো না।
— বাড়ি চলে যা, বাবা মাকে নিয়ে আমিও চলে আসব।
— তাই করতে হবে দেখছি।
— হুম এখন থাক আমি আসছি বের হতে হবে।
— আল্লাহ হাফেজ।
— আল্লাহ হাফেজ মেরি জান।
ইয়াশ রুম থেকে বেড়িয়ে যায়, পিছন পিছন প্রিয়তাও যায়। যাওয়ার সময় চোখ ততদূর নিজের দৃষ্টি ফেলে যতদূর প্রিয় মানুষটিকে দেখা যায় প্রিয়তার ও হয়েছে এমন। প্রিয় মানুষের যাওয়া যতদূর দেখা যায় ততদূর দেখতে হবে তার।
______________________________
” মা আমি বাহিরে যেতে পারব না, যে কেউ দেখতে আসবে আর তাদের জন্য আমাকে সেজেগুজে তাদের সামনে যেতে হবে তাই না? কি ভেবেছো কি তোমরা আমাকে!”
কথাটি বলেই বুশরা অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বসলো।
লুবনা তাড়াহুড়ো করে বুশরার রুমে ঢুকে যায়।
— হয়েছে কাকি বুশরা রেডি তো?
— দেখ না বুশরা তো যেতেই চাইছে না। ও নাকি যাবে না।
— শেষ সময়ে এসে এসব বললে হবে বলো? সেটা আগেই বলে দিতে পারতি বুশরা। এখন ওরা সবাই চলে এসেছে, তুই সামনে না গেলে বিষয়টা অন্যরকম দেখাবে। পরে যা হয় হবে, তুই এখন চল আমার সাথে।
— আমাকে আগে কিছুই জানায় নি আপু।
— ওসব এখন বাদ দিয়ে আমার সাথে চল, সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছে।
— আমি এখন বিয়ে করব না। আর প্রিয়তার তো এখনও বিয়ে হয় নি।
— প্রিয়তার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে, যখন তখন হয়ে যাবে। ওর বিষয় ছাড়, তুই আমার সাথে চল তাড়াতাড়ি।
— আপু আমি যাব না।
— বুশরা…….
অনেক কষ্টে রাজি করিয়ে লুবনা বুশরাকে বাহিরের রুমে নিয়ে যায়। বুশরা রুম থেকে বের হওয়ার সময় সেই যে মাথা নিচু করেছে, মাথা আর তুলে নি সে। পরিস্থিতি এতটা কঠিন হয়ে যাবে ভাবতেও পারে নি বুশরা। একদিকে একজনের বিয়ে আর আরেকজনকে বিয়ের জন্য দেখতে এসেছে।
বুশরা অনেকক্ষণ যাবৎ হুমায়ুনের বাবা মার সামনে বসে আছে। আর হুমায়ুন একটু দূরে হিমেলের সাথে দাঁড়িয়ে থেকে বুশরার অবস্থা দেখছে। বুশরা সেদিন সবসময় লুবনার সাথে সাথে থাকায় হুমায়ুনের মা বাবাকে দেখে নি। হুমায়ুনের বাবা মার খুব পছন্দ হয় বুশরাকে। তারা তো আজকেই বিয়ের প্রস্তাব করে বসে। কিন্তু বুশরার বাবা এক সপ্তাহ অন্তত সময় চেয়ে নেন। এদিকে বুশরা ওখানে বসে থেকে বড়দের সামনে কিছু বলতেও পারছে না।
বুশরা বারবার তার মার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। বুশরার মা মুচকি মুচকি হাসছে বুশরাকে দেখে। বুশরার মা হুমায়ুনের মাকে উদ্দেশ্য করে বলেন-
— আপা আমরা বিয়ের সিদ্ধান্তে যাওয়ার আগে ছেলেমেয়েকে একটু আলাদা কথা বলতে দিলে ভালো হতো না? তাদের ও তো ব্যক্তিগত মতামত শোনা প্রয়োজন।
— হ্যাঁ ঠিকই বলেছেন। হিমেল তো আপনাদের মেয়ের কথা বলার পরেই আমরা আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ওদের আগে কেমন কথাবার্তা হয়েছে কি না হয়েছে সেটা তো জানি না।
— তাহলে আলাদা কথা বলার ব্যবস্থা করে দেই কি বলেন?
— হ্যাঁ ওরা কথা বলুক, আমরাও কথা বলি।
— হ্যাঁ। লুবনা বুশরাকে তার রুমে নিয়ে যাও তো মা।
লুবনা সাথে সাথে বুশরাকে তার রুমে দিয়ে হুমায়ুনের কাছে চলে আসে।
— এই যে ভাইয়া, যান তাড়াতাড়ি মেয়ের রাগ ভাঙান। এই কয়েকদিন খুব কষ্ট দিয়েছেন আমার বোনটাকে। আমার তো খুশি দ্বিগুণ বেড়ে যাচ্ছে আমার বোন আমার জা হবে।
— ভাবি আপনি!
— আপনি তো আর আমাকে জানাবেন না আমার জামাই আমাকে জানিয়েছে একমাত্র বউ বলে কথা।
হুমায়ুন হিমেলের দিকে তাকালে হিমেল কথা বাড়াতে না দিয়ে ঠেলে বুশরার রুমে পাঠিয়ে দেয়।
বুশরার রুমের দরজায় গিয়ে হালকা কেশে জানান দেয় কেউ এসেছে। বুশরা নড়েচড়ে বসে এবার, সে করেই হোক ছেলেকেই না বলে দিতে হবে ভেবে প্রস্তুত হয়।
” বুশরা আসব?” পরিচিত গলায় কথাটি শুনে বুশরা দরজার দিকে তাকালে চোখ বড় বড় করে বলে,” আপনি!!!”
প্রিয়তার প্রণয় শেষ হলেই কিন্তু সামনে মাসে নিয়ম করে চলে আসছে #পুরোনো_ডাকবাক্স(নতুন গল্প আসছে)
চলবে……..
#প্রিয়তার_প্রণয়
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_২৩
হুমায়ুন মুখ টিপে হাসতে হাসতে ভেতরে যায়। ভেতরে গিয়ে বুশরার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। বুশরার চোখে তখন জল টলমল করছে।
— অন্য কাউকে আশা করেছিলে?(হুমায়ুন)
— আপনাকে অন্তত আশা করি নি আমি।
— কেন?
— আপনার তো অন্য জায়গায় বিয়ে প্রায় ঠিক হয়ে গিয়েছিল তাই না? তাহলে আপনি এখানে কি করছেন?
— ওখানে তো মেয়ের বাসা থেকে নিষেধ করে দিয়েছে। আমি রিজেক্টেড….
— আপনাকে কোন মেয়ে রিজেক্ট করবে! এটাও আমাকে এখন বিশ্বাস করতে হবে?
— কেন আমাকে রিজেক্ট করতে পারে না? এই যে তোমাকে দেখতে এসেছি তুমিই আমাকে বিয়ে করতে রাজি হবে? তোমার ইচ্ছে হলে তো রিজেক্ট ও করে দিতে পারো তাই নয় কি?
— রিজেক্ট তো আমি আপনাকে করবই, আপনাকে আমি বিয়ে করতে পারব না। আপনি আমার এখানে রিজেক্ট হবেন।
— তাহলে আমার আর এ জীবনে বিয়ে করা হবে না। বিয়ে না করেই জীবন পার করে দিতে হবে।
— সেটা আপনার ইচ্ছে, আপনি কি করবেন, না করবেন সেটা আপনার ব্যাপার।
— আমি তোমাকে বলেছিলাম যে জীবন একটাই আর সেটাও অনেক ছোট। এই ছোট জীবনে তোমাকে হারানোর মতো এত বড় ত্যাগ আমি করতে পারব না।
— অন্য মেয়েকে তো ঠিকই দেখতে গিয়েছিলেন তাই না?
— আমাকে জোর করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বুশরা। আমি কখনো মা বাবার অবাধ্য হয় নি।
— আপনার বাবা মা যদি আমাকে রিজেক্ট করে দেয় তবে?
— দেবে না।
— এত টা নিশ্চিত আপনি কি করে হচ্ছেন?
— কারণ তারা জানে আমি তোমাকে পছন্দ করি।
— এ্যাঁ? কি হয়েছে বলেন তো আমাকে প্লিজ, ওখানে আপনার বিয়ে প্রায় ঠিক ছিল আর আজ আপনারা এখানে!
— রবিবারে আমি ওই মেয়ের সাথে দেখা করি..
— ওহ মেয়েদের সাথে একা একা দেখা করাও শুরু করেছেন? আমি আপনাকে বিয়ে করব না কিছুতেই না।
— চুপ! পুরো কথা তো শুনবে নাকি?
— হ্যাঁ বলেন।
— ওদের বাসায় গিয়ে নিশ্চয়ই বিয়ে ভাঙার কথা বলতে পারতাম না তাই না! তাই তাকে বাহিরে ডাকি, ডেকে আমি যে কাউকে পছন্দ করি এ কথা জানাই। আমার কথাগুলো খুব সহজে সে মেনে নিয়েছে। আমি বলব সে নিতান্তই একজন ভালো বুঝদার মেয়ে।
— ইশ, মেয়ের কত প্রশংসা!
— ভালো হলে তো ভালো বলবই তাই না! তারপর মেয়ে বাসায় গিয়ে বলে আমাকে পছন্দ হয় নি বিয়ে করতে পারবে না এরকম অনেক কিছু। তারপর ওই বাসা থেকে বাবাকে কল দিয়ে বিয়ের ব্যাপারে না করে দেয়।
— তারপর?
— তারপর আর কি হিমেলকে বলে রেখেছিলাম মেয়ের বাসা থেকে বিয়ের ব্যাপারে না বললেই যেন সে তোমার কথা বলে। সে ও গিয়ে মাকে তোমার কথা বলল, মা আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল আমি তোমাকে দেখেছি কি না। আমি বলেছি যে দেখেছি ভালো আছে মেয়েটা। এই তো তারপর আমরা সবাই এখানে।
— কি চালাক আপনি!
— তোমাক আমি কোন ভাবেই হারাতে চাই নি বুশরা। তুমি জানো এই ক’ দিন আমি কতটা চিন্তায় ছিলাম ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করতে পারি নি। তোমাকে কল দিয়ে কথা বলে যে মানসিক একটু শান্তি পাব সেই পথটাও ছিল না। কিভাবে যে আমি দিনগুলো অতীত করেছি একমাত্র আমি জানি।
— আমার তো একটুও কষ্ট হয় নি তাই না?
কথাটি বলে বুশরা হুমায়ুনের দিকে এগিয়ে আসে। হুমায়ুন বুঝতে পারে মেয়েটা এখন কান্না করে দেবে। এই মেয়েটার এখন তার বুকের বা’ পাশ টা লাগবে।
হুমায়ুন সাত পাঁচ না ভেবে বুশরাকে পরম ভালোবাসায় নিজের বুকে জড়িয়ে নেয়। বুশরা এবার আর নিজেকে নিজের আয়ত্তে রাখতে পারে না। হুঁ হুঁ করে কান্না করে দেয়।
— এই ছোট্ট মেয়েটা আমাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছে তাই না?(হুমায়ুন)
— হুম, কিন্তু সেটা সে বুঝতেই চায় না।
— বুঝি তো, তার জন্যই আমি আমার জীবনে আমি এই মেয়েটাকে ছাড়া কাউকে ভাবতে পারি নি। পরে ভাবতে হতে পারে তবে এখন না।
— কি!( হুমায়ুনের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে তার দিকে তাকিয়ে)
— পরে যদি আরও দুই একটা বিয়ে করতে ইচ্ছে হয় তার জন্য বললাম আর কি!
— আমাকে ছাড়া অন্য নারীর দিকে তাকালে মে°’ রে নদীতে ফেলে দেব, মাছে খেয়ে নিবে তাও আপনাকে অন্য কোন নারী পাবে না।
— ভয় পেয়ে গেলাম।
— বউকে ভয় পেলে সংসার ভালো থাকে।
— আমি খুব ভীতু হয়ে গেলাম আজ থেকে।
— ভীতু হয়েই থাকতে হবে।
— আসেন আরেকটু জড়িয়ে ধরেন, আমি অনেক ভয় পেয়ে আছি।
— ফা°’জি°’ল কোথাকার…….
দরজায় নক করার শব্দে দুজন দুদিকে ছিটকে চলে যায়। হিমেল আর লুবনা হাসতে হাসতে ভেতরে চলে আসে।
— হয়েছে দুজনের মিলমিশ?(লুবনা)
— হ্যাঁ জানিয়ে দেন ভাবি, আপনার বোন বিয়েতে রাজি।(হুমায়ুন)
— তাহলে যাই খুশির খবরটা গিয়ে দেই।
লুবনার পিছু পিছু হিমেল ও চলে যায় আর হুমায়ুনকেও বাহিরে আসতে বলে।
সন্ধ্যার দিকে সবাই একসাথে বসে বিয়ের ব্যাপারে সবকিছু ঠিক করে নেয়। অর্থাৎ আগামী সপ্তাহেই বিয়ে।
_____________________________
ইয়াশের মাকে ডাকতে ডাকতে রুমে ঢুকে যায় প্রিয়তা। তিনি বসে বসে অন্যদিনের মতো বই পড়ছিলেন। প্রিয়তাকে দেখে সোজা হয়ে বসলেন।
— কি রে কিছু হয়েছে?
— বুশরার ব্যাপারটা জানো?
— হ্যাঁ তোর মা কল দিয়ে বলেছিল বুশরাকে দেখতে আসবে।
— বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে।
— কি বলিস! কবে?
— সামনে সপ্তাহে।
— তোর ছোট হয়ে বুশরার বিয়ে ঠিক হয়ে গেল, আর তোরা কি করছিস বল তো?
— তোমার ছেলেকে আসতে দাও, ধরে কাজী অফিসে নিয়ে যাব।
— কাজী অফিসে নিয়ে যেতে হবে কেন? আমরা আছি কি করতে!
— আমাদের তো ইচ্ছে লুকিয়ে বিয়ে করব, তোমরা সবাই তো রাজিই আছো।
— তোদের বিষয় সব ঠিকঠাক হয়ে গিয়েছে? আলহামদুলিল্লাহ, এবার তাহলে তোদের সবকিছু ঠিকঠাক ভাবে মিটে গেলেই হবে। এই লুকিয়ে বিয়ে করবি মানে? বিয়ে করে নিস নি তো আবার?
— এই ধরো সপ্তাহখানেকের মধ্যেই।
— কি কথা হচ্ছে দুজনের?(রুমে ঢুকতে ঢুকতে কথাটা বলেন ইয়াশের বাবা)
— বিয়ের কথা।(ইয়াশের মা)
— কার বিয়ের কথা?
— বুশরার তো বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে। ওকে আজকে দেখতে এসেছিল।
— কি বলো দারুণ খবর! ছেলে কোথাকার?
— হিমেলের কেমন যেন ভাই।
— লম্বা ফর্সা করে ছেলেটা?
— হ্যাঁ ওটাই।(প্রিয়তা)
— এবার গিয়ে দুই জোড়ার বিয়ে দেব।(ইয়াশের মা)
— দুই জোড়া কে কে?
— এই যে আরেকজন বসে আছেন দেখছো না?
বড়মার কথা শুনে প্রিয়তা নিজের রুমে চলে যায় দৌঁড়ে। এদিকে ইয়াশের মা বাবা হাসতে থাকে।
_____________________________
এর মাঝে প্রায় সাতদিন কেটে গিয়েছে। বাড়িতে সবাই বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত, কিছুক্ষণ আগেই প্রিয়তা আর ইয়াশের বাবা মা এসে বাসায় পৌঁছেছে।
প্রিয়তা রুমে নিজের ব্যাগটা রেখেই দৌঁড়ে বুশরার কাছে চলে যায়।
বুশরা নিজের সবচেয়ে প্রিয় বোন আর প্রিয় বান্ধবীকে(একজনই) দেখে দৌঁড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে।
— এই যে বিয়ে তো করে নিচ্ছেন, ফিলিংস কেমন শুনি?
— তুই ও ইয়াশ ভাইয়াকে বিয়ে করে দেখ ফিলিংস কেমন!
— এটা জানতে হলে বিয়ে করতে হবে?
— হ্যাঁ বিয়ে করতে হবে। আচ্ছা আজকে কেন আসতে গেলি? না আসলেই হতো তো!
— আর বলিস না আমার ক্লাস টেস্ট চলছিল, খুব প্যারায় ছিলাম। এখন বল ঠিকঠাক হলো কিভাবে সবকিছু?
— বুশরা একে একে সবকিছু বলতে শুরু করে।
— যাক আলহামদুলিল্লাহ সবকিছু ঠিক হয়ে গিয়েছে বিয়েটা হয়ে গেলেই বাঁচা যায়। আমাদের ও সবকিছু ঠিক হয়ে গিয়েছে।
— কিভাবে?
— কিছুদিন হলো, আমি এখান থেকে যাওয়ার আগে কি মনে করে সেদিন ইয়াশ ভাইয়ের রুম দেখছিলাম। কেন জানি না টেবিলের ওপর রাখা ডায়েরি হাতে নেই প্রথম পৃষ্টা খুলে দেখি কিছু লেখা নেই। এবার শেষ পৃষ্টায় লেখা ভালোবাসি প্রিয়তা। আমি তো সেদিন শেষ!
— তুই এখানে থাকতেই এতকিছু হয়েছে আর আমি কিছুই জানি না! ইয়াশ ভাইয়া আসবে কবে?
— আজকেই তো আসার কথা, এয়ারপোর্টে এসে পৌঁছবে দশটা। এখানে আসতে আসতে একটা হবে হয়তো।
— যাক আমার বিয়েতে পাচ্ছি তাহলে।
— তোরা বিয়ে করছিস কবে?
— অনেক দেরি।
— আচ্ছা করিস বাচ্চাসহ তোদের বিয়েতে থাকব। এখন তাড়াতাড়ি মেহেদী পড়িয়ে দে আমায়।
— তুই দশমিনিট অপেক্ষা কর আমি পাঁচ মিনিটে আসছি।
— হ্যাঁ জলদি।
প্রিয়তা বুশরার রুম থেকে বের হয়ে মার কাছে চলে যায়। বাড়ির সবাইকে দেখে মনে হচ্ছে কতদিন তাদের দেখেনি। প্রিয়তা সোজা তার মাকে জড়িয়ে ধরে গিয়ে।
— এসেই বোনের কাছে তাই না, আমি তো কেউ না।
— তোমার কি বিয়ে নাকি, বুশরার তো বিয়ে তাই তো দেখা করে এলাম।
— হয়েছে হয়েছে যা ফ্রেশ হয়ে নে।
— প্রিয়তা দেখছি এই কয়েকদিনে আরও বেশি সুন্দর হয়ে গিয়েছিস রে।( লুবনা)
— আচ্ছা তাই নাকি?(প্রিয়তা)
— তাই তো। আচ্ছা যা ফ্রেশ হয়ে আয় অনেক গল্প হবে।
— আচ্ছা আপু।
বুশরা চলে যায় নিজের রুমে ফ্রেশ হতে। আর মনে মনে ভাবতে থাকে এত আনন্দের দিনে আরশি ও নেই আবার ইয়াশ যে কখন আসবে!!!
চলবে….