#প্রাপ্তি_____(১০)
______🍂________________
দুপুর তিনটা নাগাদ হলুদের অনুষ্ঠানের আয়োজন শুরু হয়ে গিয়েছে। আয়োজন বলতে বিভিন্ন প্রকারের ফলমূলে আকর্ষণীয় কারুকার্যের নকশা একে বিভিন্ন আঙ্গিকে সাজাচ্ছে জোয়ান মেয়েছেলেগুলো। কেউ বা হুমায়রাকে সাজাতে ব্যস্ত। কেউ নিজে সাজতে ব্যস্ত। বাবুর্চি একপাশে বিরিয়ানি রান্না চাপিয়ে দিয়েছে। মেহমানদের জন্য আয়োজন করা হয়েছে।
হলুদ, সাদা রঙের সামিয়ানা আর সাদা, লাল গোলাপের হালুদ আর বিভিন্ন ফুল দিয়ে পুরো সেন্টার ডেকোরেশন করা হয়েছে। দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায় এমন সুন্দর আয়োজন করা হয়েছে। সবটাই হেমন্তের ইচ্ছে। হলুদে হুমায়রার ড্রেসকোড হচ্ছে হলুদ লম্বা ঘের বিশিষ্ট গাউন আর মাথায় সাদা হিজাব সাথে সাদা ওড়না। আর হেমন্তের জন্য সাদা পাজামা পাঞ্জাবি।
হলুদ, লাল কাপড়ের পোশাক ছেলেদের জন্য হারাম করা হয়েছে ইসলামে। এজন্য এই রঙের পোশাক বাদ দেওেয়া হয়েছে।
দু পক্ষের আগমনে অনুষ্ঠানে গমগমে ভাব বিরাজমান। মুখরিত চারপাশ। বর কনের জন্য নিদিষ্ট স্টেজ করা হয়েছে। নানা রকম ফুলের সমারোহে সাজানো সেখানে। যেন নজর কাড়া আয়োজন। হলুদ, বিয়ে, বউভাত যাইহোক সবেতেই মূল আকর্ষণ থাকে বর কনের স্টেজে। কিন্তু কিছু মানুষ আছে খেতে যায় আর খেয়েই চলে আসে। তারা এদিক সেদিক তাকাই কম। যেন খাওয়াই মূল আকর্ষণীয় বস্তু।
তবে একটা বিষয় এভোয়েট করা হয়েছে। সেটা হচ্ছে মিউজিক। বর্তমানে মিউজিক ছাড়া কোন অনুষ্ঠান জমেই না। হুমায়রার বাবা মোটামুটি ধর্মকর্ম মেনে চলেন বিধায় তিনিই এটি বাদ দিয়ে দিয়েছেন।
হেমন্ত নামক সুদর্শন পুরুষটি পরিপাটি রূপে হাজির। প্রেয়সীর অপেক্ষায় অধীর আগ্রহে স্টেজের নির্দিষ্ট সোফায় বসে আছে। বারবার ঘড়ির দিকে নজর বুলাচ্ছে। হলদে রঙা লং গাউন সাদা হিজাবে আবৃত হুমায়রা। হালকা প্রসাধনীর ছোঁয়া পেয়েছে মুখে। উজ্জ্বলতা বেড়েছে দ্বিগুন। হেমন্ত সেদিক পানে নজর দিতেই হৃদস্পন্দন যেন কিছুক্ষণের জন্য থেমে গিয়েছে। থমকে গেছে এক নির্দিষ্ট রমনীর লাস্যময়ী রূপে। গুটি গুটি পায়ে স্টেজের দিকে এগিয়ে আসে হুমায়রা। হেমন্ত এগিয়ে গিয়ে হাত বাড়িয়ে দেয় হুমায়রার দিকে। হুমায়রা লাজুক হেসে প্রিয়দর্শনের হাতের ওপর নিজের হাতটা রাখে। হেমন্ত শক্ত করে আকড়ে ধরে হাতটা। তারপর দুজনে একত্রে এসে বসলো পাশাপাশি দুটো সোফায়। করতালিতে একদফা মুখরিত হলো চারিপাশ।
হেমন্ত আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলো মানুষগুলো নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। মনে হলো তাদের একটু স্পেস দিয়েছে। মোহনীয় কন্ঠে হুমায়রাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“তোমাকে হলদে পরির মতো লাগছে হুমায়রা! আরশীতে এক নজর দেখোছো? কি রূপে সাজিয়েছো নিজেকে? এদিকে আমি নিষ্পাপ যুবক তোমার রূপের আ’গু’নে ঝ’ল’সে যাচ্ছি। হৃদয় পো’ড়ার গ’ন্ধ কি তুমি ঠিক পাচ্ছো?”
ভ’য়ংক’র সুন্দর পুরুষটির থেকে এমন প্রেমময় বাক্য শুনে হুমায়রার নাজেহাল অবস্থা। শ্বাস’ক্রিয়া যেন বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছে। নিচু মস্তক আর একটু নিচু হয়ে গেল। রিনরিনে কন্ঠে জবাবে বলল, “আমি খুব সাধারণ। সাধারণ ভাবেই সাজিয়েছে। আপনি যে ভ’য়ংক’র রিভিউ দিলেন তার কোনটাই নিজের মধ্যে নেই বললেই চলে। তবে শুনে রাখুন ভয়ংকর সুন্দর সুদর্শন পুরুষ আপনিও কিন্তু কম যান না। কি মারা’ত্মক দেখাচ্ছে সেটা আপনিও আরশিতে দেখেছেন?”
“তুমি কিন্তু ভুল বললে। নিজের কাছে সাধারণ হতেই পারো তবে আমার কাছে অসাধারণ এক রমনী। আর রইল বাকি আমার কথা। সবসময়ের মতোই অগোছালো রূপে হাজির হয়েছি। এতটুকুতেই যদি দিশেহারা হয়ে যাও বাকি সময় সামলাবে কি করে শুনি?”
“আল্লাহর দোহাই আপনি চুপ করুন। মুখের লাগা’ম টানুন। চুপ করে বসে থাকুন। একটা বাড়তি কথাও বলবেন না।”
“দিলাম লাগা’ম। করলাম চুপ। সুন্দরী রমনীর কথা হেমন্ত ফেলতে পারে না। শুধু তোমাকে দেখবো।”
হেমন্তের কথার পরিবর্তে কিছু বলল না হুমায়রা। কথায় কথা বাড়ে। আর এক কথোপকথনের শেষ সবে না কখনও। তাই চুপ থাকাই শ্রেয়।
————-
হেমন্ত হলুদ ছোঁয়াবে না আগেই বলে দিয়েছে। সে স্টেজ থেকে উঠে গিয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে গিয়েছে। মহিলারা গিয়ে হলুদ ছোঁয়াচ্ছে হুমায়রাকে। প্রথমে হুমায়রার আম্মু তারপর হবু শাশুড়ি এসে মুখে সামান্য হলুদ মাখিয়ে দিয়ে গিয়েছে। মূলত হলুদ মাখিয়ে আগেই গোসল করানো হয়েছে। এখন শুধু কপালে আর মুখে হালকা ছোঁয়াচ্ছে। কেউ হলুদ কেউ মিষ্টিয, ফলমূল, পুডিং, কেক মোটকথা সামনে রাখা খাবারের একটু একটু করে মুখে দিয়ে যাচ্ছে। এদিকে সবার থেকে একটু একটু করে খেতে খেতে পেট গিয়েছে ভাড়ি হয়ে। এমন অবস্থা যে নড়াচড়া করা দায় হয়ে পড়েছে।
শুধু ফটোসেশনের সময় হেমন্তের দেখা পাওয়া গিয়েছে। বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিতে কয়েকদফা ফটো তোলা হয়েছে। কখনও দু পরিবারের সবাই মিলে কখনও শুধু দুজন মিলে আবার কখনও শুধু সিঙ্গেল ফটোও নেওয়া হয়েছে। যা হয় আর কি!
ইনশাআল্লাহ,,চলবে…..
#সুমাইয়া_ইসলাম_জান্নাতি(লেখনীতে)🍂
🍂