#প্রাপ্তি____(০৯)
______🍂_______________
বিষাদ, ভালোলাগা, ভালোবাসার মিশ্রণে এক অন্যরকম অনুভূতি অনুভব হচ্ছে হুমায়রার। এইতো দুদিন বাদেই অন্য ঘরে অন্য পরিবেশে যাবে নিজের পরিবার পরিজন ছেড়ে। প্রিয় মা-বাবা ভাইটাকে ছেড়ে যাবে পরের ঘরে তার জন্য স্বভাবতই হুমায়রারও বড্ড মন খারাপ। মন অম্বরে মাঝেমধ্যে ঘন কালো বিষাদের মেঘে ছেয়ে যাচ্ছে। চোখের পানি বৃষ্টি রূপে চিবুক গড়িয়ে পড়ছে। মন খারাপের সাথে মাঝেমধ্যে ভালোবাসা সুখময় দোলাও দিয়ে যাচ্ছে। হেমন্ত নামক সুদর্শন শুভ্র মানবটি তার জীবনসঙ্গী হবে। যে নিয়ে হুমায়রার হৃদমাঝারে ভালোলাগা ভালোবাসার বীজ বুনেছে। প্রেমময় এক মুহুর্ত সৃষ্টি হয় তখন।
দেখতে দেখতে সময় ঘনিয়ে এসেছে। একদিন বাদেই গায়ে হলুদ। তারপরও বিয়ে ইনশাআল্লাহ। মহা ব্যস্ত হুমায়রার পরিবার। একমাত্র মেয়ের বিয়ে বলে কথা। আয়োজনে ত্রুটি রাখতে চান না হামিদুর রহমান। হোক মধ্যবিত্ত কিন্তু মনটা তো আর মধ্যবিত্ত না। বাবার মন তো ছেলেমেয়ের জন্য আজীবন বিত্তশালী। সঞ্চয়ের বিশাল একটা এ্যামাউন্ট মেয়ের বিয়েতে খরচ করবেন বলে ঠিক করেছেন। বাসা থেকে দশ মিনিট দুরত্বের পরেই কমিউনিটি সেন্টার। সেখানেই বিয়ের যাবতীয় আয়োজন আয়োজিত হবে। হলুদ সন্ধ্যায় হেমন্ত ও হুমায়রার গায়ে হলুদ এক সাথেই হবে। ঠিক করেছেন পরিবারের বড়রা। এতে খরচের সাশ্রয় হবে হামিদুর রহমানের। তাই তিনিও তেমন আপত্তি জানালেন না।
নিকটবর্তী আত্মীয়েরা আজ থেকেই আশা শুরু করে দিয়েছেন। হুমায়রার বাবা চাকরিসূত্রে ঢাকায় থাকেন পরিবার নিয়ে। তার বাকি ভাইয়েরা বোনেরা সব গ্রামে ও অন্য শহরে যার যার সুবিধার্থে সেখানেই থাকেন। ভাইয়ের মেয়ের বিয়ের আমন্ত্রণে দল বেধে হাজির হয়েছেন ভাইয়ের বাসায়। আত্মীয় স্বজনে গমগম করছে চার রুমের ফ্ল্যাটটাই। হুমায়রা আজ দুঃখ বিলাশ করার জন্য নিরিবিরি কোন পরিবেশই পাচ্ছে না। কখনও কাজিনরা এসে সময় দিচ্ছে। কখনও চাচি, ফুফুরা এসে গল্প করছেন উপদেশ বানী শোনাচ্ছেন। বাড়িওয়ালার সাথে হামিদুর রহমানের ভালো সম্পর্ক। পাশের ফ্ল্যাটে আপাতত কোন ভাড়াটিয়া নেই। তাই বিয়ের কয়েকদিনের জন্য ফ্ল্যাটটি ব্যাবহারের সুযোগ করে দিয়েছেন ভদ্রলোক। হামিদুর রহমান যেন স্বস্তি পেলেন। যেহেতু বিয়ে, গায়ে হলুদ কমিউনিটি সেন্টারে হবে তাই বাড়িতে বিয়ের তেমন কোন আয়োজন নেই বললেই চলে। তবে হুমায়রার দাদু বাড়ি আর নানু বাড়ির আত্মীয়দের আপ্যায়নের জন্য খানা-পিনা তৈরির কাজে আপাতত বাড়ির মহিলারা ব্যাস্ত।
সন্ধার কিছু পরে হুমায়রার ননদ এসেছেন কিছু মাপ নিতে পোশাকের জন্য। তার জন্য ব্যাস্ত হয়ে পড়েছেন চা নাস্তা তৈরিতে হুমায়রার মা ফুফু।
“হুমায়রা, মন খারাপ বোন?”
হবু ননদের কথায় হুমায়রা একটু হাসার চেষ্টা করে। অথিতির সামনে বিষণ্ন মুখে বসে থাকাটাও তার মতে বেয়াদবি। মুখে ক্ষীণ হাসির রেখা ফুটিয়ে বলল, “না আপু, তেমন কিছু না। আপনি ভালো আছেন?”
“হ্যাঁ আলহামদুলিল্লাহ্ এখন বেশ ভালো আছি। তুমি ভালো আছো তো?”
“জি আপু আলহামদুলিল্লাহ্। বাবুকে নিয়ে আসতেন?”
“মামনির কাছে আছে বাবু। বাবার বাড়িতে অল্প দিনের জন্য আশা হয়। তাই ওরা সবাই সবসময় কোলে কোলেই রাখে। তুমি ও বাড়িতে গেলে দেখতে পাবে।”
“ইনশাআল্লাহ।”
“শোন বোন কয়েকটা কথা বলি, আমি জানি তোমার খুব মন খারাপ হচ্ছে পরিবার পরিজন ছেড়ে যাবে। তবে তুমি যে পরের বাড়িতে যাবে ও বাড়িতে কখনও পরের বাড়ি ফিল করতে পারবে না। আমার মামানি-বাবা, ভাইটা সবাই খুব ভালো মানুষ। হেমন্ত তোমাকে খুব পছন্দ করে আমি জানি। ও অবশ্য আমার কাছে স্বীকার করেনি তবে আমি জানি। মামনি খুব শখ করে পুত্রের বউ করে নিয়ে যাচ্ছেন তোমাকে। ইনশাআল্লাহ তুমি রানির মতো থাকবে ও বাড়িতে। তাই বলছি পরিবারের সাথে যে সময়টা আছো ইনজয় করো। মন খারাপ করে সুন্দর সময়টা নষ্ট করো না। বুঝেছো আমার কথা?”
“জি আপু বুঝেছি। ধন্যবাদ আপু এতো সুন্দর করে বলার জন্য।”
“ধন্যবাদ দিতে হবে না। পর নাকি আমি! শোন, আমি একটু সারপ্রাইজ দিতে চাই হেমন্তকে। আমি যে এ বাড়িতে এসেছি ও জানে না। ও গিয়েছে ব্যাচেলার পার্টিতে। ও ফ্রেন্ডসরা এ্যারেঞ্জ করেছে।”
“ওহ্ আচ্ছা।”_____হুমায়রার ইচ্ছে হল জিজ্ঞাসা করতে পার্টিতে কোন মেয়ে ফ্রেন্ড আছে কি না? কিন্তু অস্বস্তিতে আর বললো না। ব্যাপারটা কেমন দেখাবে!
হুমায়রার মূখশ্রী লক্ষ্য করেই ভাবগতি বুঝে ফেলেছে নাতাশা। মুচকি হেসে বলল, “ভয় নেই মেয়ে। আমার ভাই মেয়ে মানুষের সাথে খুব একটা প্রয়োজন ছাড়া মিশে না। তুমিই একমাত্র। যাইহোক একটা সাহায্য করো? না করতে পারবে না।”
“বলুন আপু, আমি যথাসম্ভব চেষ্টা করবো।”
“আচ্ছা। হেমন্তের সাথে একটু কথা বলো। আমার ভাইটা তৃষ্ণার্ত কাঁকের মতো তোমার জন্য প্রতি প্রহর অপেক্ষা করছে। একটু কথা বলে সারপ্রাইজ দাও। কি দিবে না?”
“আমি…মানে কি বলবো বুঝতে পারছি না।”
“কথা দিয়েছো কথা রাখবে। না করা যাবে না।”
“আচ্ছা।”
হুমায়রা নার্ভাস। প্রথমবার মানুষটার সাথে কথা বলবে। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না সে। এরমধ্যে হুমায়রার মা হালিমা খাতুন একগাদা খারাপ নিয়ে চলে এসেছেন। টুকটাক কথা বলছেন আর খাবারের এক একটা পদ নাতাশার সামনে এগিয়ে দিচ্ছে। এ পর্যায়ে নাতাশা বলল, “আন্টি আমাকে আর হুমায়রাকে একটু ফাঁকা প্লেস দেওয়া যাবে?”
হালিমা খাতুন ব্যতিব্যস্ত কন্ঠে বললেন, “অবশ্যই অবশ্যই। হুমায়রা নাতাশা মাকে নিয়ে যাও।”
“আপু আসেন আমরা ছাদে যায়। একটু সিড়ি ভাঙতে হবে। সমস্যা হবে কি?”
“আরে ধুর কিসের সমস্যা। চলো যাওয়া যাক।”
নাতাশা দ্রুত ফোন লাগাই হেমন্তের কাছে। ওপাশ থেকে রিসিভ করতেই নাতাশা গমগমে কন্ঠে বললো, “তোর জন্য বিশাল সারপ্রাইজ আছে ভাই।”
“কিসের সারপ্রাইজ আপা? তাড়াতাড়ি বল?”
“আমি হুমায়রাদের বাসায় এসেছি কিছু কাজে।”
“সত্যিই? তারপর?”
“হুমায়রা রাজি হয়েছে তোর সাথে কথা বলার জন্য। নে ধর!”
হুমায়রার নিষ্ঠুর হৃদপিণ্ড লাফালাফি করছে। যেন যেকোন মুহূর্তে বেড়িয়ে আসবে। আর বলে বেড়াবে হেমন্ত নামক ভয়ংকর সুন্দর পুরুষটির জন্য হৃদপিণ্ড অস্বাভাবিক লাফাচ্ছে। কি অদ্ভুত। হুমায়রা ফোন হাতে নিল। ওপাশ থেকে সম্পূর্ণ নিরব নিস্তব্ধ। কোন সাড়াশব্দ নেই। হয়তো পুরুষ তার বেসামাল অনুভূতি সামাল দিচ্ছে নিরবে।
কথোপকথনের শুরুটা হুমায়রাই করলো। অত্যন্ত কোমল নিচু কন্ঠে বলল, “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি অবা রকাতুহ্।”
“ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি অবারকাতুহ্। ভালো আছো?”
“জি আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো। আপনি?”
“আমিও। তবে এখন বেশি ভালো আছি। কে জানো?”
“উহু, না বললে জানবো কেমনে?”
“তা ঠিক। তুমি কথা বলছো যে তাই। আপা আমাকে সবচেয়ে বেস্ট সারপ্রাইজ দিলো হুমায়রা। আমি খুব খুশি।”
“আচ্ছা।”
“শুধু আচ্ছা? আর কিছু বলতে পারো না?”
“আমার ফোনে সেভাবে কথা বলার অভ্যাস নেই। আপনি বলেন আমি শুনছি।”
“সব শিখে যাবে সমস্যা নেই। আপা কোথায়?”
“আপু ছাদের অন্য কিনারে দাড়িয়ে আছে।”
“আচ্ছা। শোন, তোমার সাথে কথা বলার মুহূর্তে আমার হৃদপিণ্ড যে অস্বাভাবিক বিট করছে তা কি বুঝছো?”
——-
“নিশ্চয়ই তোমারও তাই না? সত্য স্বীকারে সমস্যা কোথায়? বলে ফেলো মেয়ে। যদিও আমি বুঝে ফেলেছি।”
“কিছু বিষয় অজানাই থাক। নিজে বুঝতে পারলে তো ভালো। স্পেশাল ইন্দ্রিয় দিয়ে বুঝে নেন। তাহলেই হয়।”
“বাহ্ তুমি তো দারুণ কথা বলো। আগে শুনিনি তো!”
“আগের আমি আর এখনের আমি অনেক পার্থক্য যে।………..”
ইনশাআল্লাহ,,,চলবে….
#সুমাইয়া_ইসলাম_জান্নাতি( লেখনীতে)
রিচেক দেওেয়া হয়নি।