#প্রাপ্তি___(০৮)
_______🍂______________
শ্যামবর্ণের মানুষকে পোশাক নির্বাচনে রঙের দিকটা বেশি খেয়াল রাখতে হয়। কারণ ফর্সা সুন্দর গায়ের রঙের মানুষদের যে কোন রঙেই সুন্দর লাগে এবং ফুটে ওঠে। কিন্তু শ্যামলাদের ক্ষেত্রে সেটা হয় না। গায়ের রঙটা একটু চা’পা থাকে বিধায় টকটকে রঙা পোশাকে তাদের বেশি কা’লো লাগে। তবে হালকা রঙা পোশাকে তাদের সুন্দর লাগে বেশি। গায়ের রঙ কিছুটা ফুটে ওঠে। যদিও সবাই সব কিছু প্রাধান্য দিয়ে পোশাক নির্বাচন করে না। যার যেমনটা ভালো লাগে তেমনই পরিধান করতে পছন্দ করে।
হুমায়রা ফর্সা না আবার শ্যামলাও না। তবে গায়ের রঙটা অনেকটা বাদামি রঙা। তার পছন্দ হালকা রঙা পোশাকগুলো। যেমন, হালকা নীল বা আসমানী রঙ; হালকা গোলাপি; সাদা ; হালকা বেগুনি। ধূসর রঙা পোশাকগুলোও ভালো লাগে। এদিক থেকে তার গায়েও ফুটে বেশি এসবই। হালকা রঙা কামিজ সেটে হুমায়রাকে আরেকটু ফর্সা লাগছে। গায়ের রঙের সাথে মিলেছে ভালো। দেখতেও সুন্দর লাগছে।
মেহমানরা এসে পড়েছেন। বড়রা অথিতি আপ্যায়নে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। হুমায়রা তৈরি। মনে কত কি ভাবনারা ঠাঁই নিচ্ছে। চিন্তাও হচ্ছে ভিষন। হুমায়রার চিন্তিত মুখশ্রী দেখে রওশানারা মুচকি হাসে। এমন একটা দিন সেও পার করে এসেছে। সুন্দর কারুকার্য খ’চিত একটা ব্রুজ চোখে পড়ে তার। হুমায়রাকে পড়ানোর জন্য এগিয়ে যায়। নিকটে গিয়ে একপাশে লাগিয়ে দেয়। চমকে ওঠে হুমায়রা। এত কাছাকাছি দুজন মানুষ অথচ একজনের মন পড়ে রয়েছে কোন দুরত্বে।
“হুমায়রা তুমি কিন্তু বেশিই চিন্তা করছো। এতো চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। বুঝলে?”
“ভাবি আমার খুব চিন্তা হচ্ছে। কি করবো বলুন?”
“চিন্তা হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু তুমি যেমন করছো এতে অসুস্থ হয়ে পড়বে তো।”
“চিন্তা কমছে না তো!”
হুমায়রার অসহায় চাহনী রওশানারার খারাপ লাগে। তবুও অভয় দিয়ে বলে, “শোন ননদিনী, এতো নার্ভাস ফিল করিও না। ওখানে যখন ডাকা হবে সুন্দর মতো সব প্রশ্নের জবাব দিবে। তারপর চলে আসবে শেষ। বুঝেছো?”
“বুঝেছি।”
মুহুর্তেই আগমন হুমায়রার ফুফুর। ব্যস্ত কন্ঠে বললেন, “রসনী হুমায়রাকে নিয়ে এসো বউ। ওনারা ওকে দেখতে চাইছে।”
“আম্মা, কে কে এসেছেন?”
“তেমন কাউকে দেখলাম না। আমাদের গ্রামে যেমন মেয়ে দেখতে গেলেই গাড়ি ভর্তি লোক গিয়ে হাজির হয়। এখানে তেমন দেখলাম না। ছেলের মা-বাবা, বোন বোনের ছোট মেয়েটা, ছেলে। আর গাড়ির ড্রাইভার। ওনারা আনতে চাইছিল না কিন্তু তোমার মামা জোর দিয়ে বললেন তিনিও আসুক। বাইরে থাকবে কেন?” _____হুমায়রার বড় ফুফুর স্বভাবই হচ্ছে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি কথা বলা। এবারও তাই করলেন। একসাথে এতগুলো কথা বলে বেচারা এখন হাঁফাচ্ছেন। শাশুড়ি মায়ের এমন কান্ড সম্পর্কে অবগত রসনী। তবুও মুখ চেপে হেসে ফেলে। সাথে হুমায়রাও। বলল, “থাক আম্মা! আর বলতে হবে না। বলছি ওকে নিয়ে যান। ও রেডি আছে।”
“ও কি বলছো বউ? তুমি যাবে না?”
“আমি? কিন্তু আমি গেলে ব্যাপারটা কেমন দেখাবে না?”
“ধুর তুমি কিছু মনে করিও না। তাছাড়া তুমি আমার পুতের বউ। আবিয়াত্তা আছো নাকি? ডর করতে হইবো না। ওরে নিয়ে আসো। হুমায়রা মা চিন্তা করিস না। ওখানে সবাই আছে তো।”
ড্রয়িং রুমের পুরো সোফাটাই মেহমানদের দখলে। তিনসেটের সোফাটাই বসেছে মা-বাবা আর বোন। পাশের সিঙ্গেল সোফাটাই বসেছে হেমন্ত। কোলে ভাগনি। ড্রাইভার বুদ্ধিমান মানুষ। বিব্রতকর অবস্থা হবে ভেবে, তাই পারিবারিক আলাপে থাকতে চাইলেন না। তিনি চলে গিয়েছেন। হেমন্ত হাত খরচ বাবদ পাঁচশ টাকা হাতে গুজে দিয়েছে।
গুটি গুটি পায়ে ভয়ে ভয়ে হাজির হলো ড্রয়িং রুমে। নজর মেঝেতে। যেন নজর এদিক সেদিক হলেই মহা বিপদ। সিঙ্গেল সোফার একটা হুমায়রার ফুফুর দখলে ছিল। তিনি উঠে গিয়ে ভাতিজিকে বসতে দিলেন। হুমায়রা আস্তে করে বসলো। বেহায়া নজর একবার উপরে উঠেছিল। কি সর্বনাশ! হেমন্ত বদ ছেলেটা তার দিকে তাকিয়েই মুচকি হাসছে। দুটো চোখে যেন হাজারো বিস্ময়, মুগ্ধতা। হেমন্তের এমন চাহনীতে হুমায়রার অস্বস্তি ফিল হচ্ছে। কেমন দম বন্ধ কর অনুভূতি। নব যুবতি যেন নতুন অনুভূতির মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলছে। হুমায়রা নেত্র পল্লব নিচু করে ফেলল। পণ করেছে ওদিক পানে আর তাকাবে না।
“কেমন আছো মামনি?”_____প্রথম প্রশ্নটা হেমন্তের মা মিসস সাহানা করলেন।
” আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো। কেমন আছেন?”
“আমিও আলহামদুলিল্লাহ্। তবে তোমাকে দেখার পর থেকে বেশি ভালো আছি।”____বলেই ভদ্রমহিলা মিষ্টি একটু হাসি উপহার দিলেন।
হুমায়রার বেশ ভালো লাগলো। কিছুটা ভয় কমলো যেন। বিনিময়ে সেও এক চিলতে হাসি ফিরিয়ে দিল। এদিকে তার এক চিলতে হাসি দেখে বিপরীতে বসা তার প্রেমিক পুরুষটা ঠোঁট প্রসারিত করে নিঃশব্দে হাসে। চোখে মুখে মুগ্ধতার মেলা বসেছে যেন তার।
একে একে প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে হুমায়রাকে নিয়ে রসনী রুমে ফিরে যায়। এখন বড়রা কথা বলবে। হুমায়রার কাজ শেষ।
“হুমায়রা? কেমন দেখলে?”
“কি ভাবি?”
“বুঝছো না বুঝি?”
“বুঝিয়ে বলেন?”
“নন্দাই’কে কেমন দেখলে?”
“যেমন দেখার তেমনই।”
“আমি তো দেখলাম সে তোমার দিকেই তাকিয়ে ছিল। কেমন..!”
“কেমন?”
“তার চাহনী আমার খারাপ লাগেনি। মুগ্ধতায় ঘেরা চাহনী। তোমাকে তার মনে ধরেছে বুঝলে?”
“ধুর, বাদ দাও ভাবি।”
“আচ্ছা দিলাম বাদ। লজ্জা পেতে হবে না। কিছু লজ্জা বাসর রাতের জন্য জমিয়ে রাখো।”
হুমায়রার লজ্জিত মুখশ্রী দেখতে ভালোই লাগছে রসনীর। এটা ওটা বলে লজ্জা দিচ্ছে। এদিকে হুমায়রা কখনও হেসে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছে। কখনও লজ্জায় মুখে রক্তিমাভা ছড়িয়ে পড়ছে। কখনও নিচু আওয়াজে ভাবিকে ধমকে দিচ্ছে।
___________________________________________
“ভাই সাহেব মেয়ে আমাদের খুবই পছন্দ হয়েছে। এখন আপনারা কি বলেন?”
“এমন প্রশ্ন করে আমাকে লজ্জা দিবেন না দয়াকরে। আমাদের কোন আপত্তি নেই।” _____হুমায়রার মায়ের দিকে ফিরে বললেন, “কি বলো হালিমা? কিছু বলবে?”
স্বামীর প্রশ্নে জবাব দিলেন না। ইশারায় বুঝিয়ে দিলেন তিনিও রাজী। এমন সোনার টুকরো ছেলে, পরিবার হাত ছাড়া করার প্রশ্নই উঠে না।
“তাহলে কি আমরা ধরে নিবো আপনারা মেয়ে দিতে রাজী?”
“ইনশাআল্লাহ্।”
“তাহলে তো হয়েই গেলো। বিয়ের দিন তারিখটা ঠিক করা হয়ে যাক আজ? আপনাদের আপত্তি আছে?”
“না, সেরকম কিছু নেই। আপনাদের যা ভালো মনে হয় করুন।”
“ক্ষমা নিবেন ভাইসাহেব। শুনেছি বিবাহ কার্যে বিলম্ব না করাই শ্রেয়। তাই আমরা চাইছি আগামী শুক্রবার হুমায়রা মাকে ঘরে তুলতে।”
ইনশাআল্লাহ,,চলবে….
#সুমাইয়া_ইসলাম_জান্নাতি(লেখনীতে) 🍂
🍂