#প্রাপ্তি____(০৬)
___🍂___________
“তোমার কি মাথা খা’রা’প হয়ে গেছে? মিডিল ক্লাস একটা ফ্যামেলির মেয়েকে তোমার ছেলে বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছে আর তাতে তোমার পূর্ণ সমর্থন। আমি কখনও চাইবো না আমার ছেলে এমন পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করুক। ঢাকায় একটা ফ্লাট পর্যন্ত নেই। ভাড়া বাড়িতে থাকে। তুমি জানো? আমাদের এই বাড়িটা দরদাম করলে কতটাকা দাম হবে। কি হলো? কথা বলছো না কেন?”
“ভাবছি।”
“আজব, এখানে ভাবাভাবির কি আছে? তোমাকে তো বললামই আমার কথা।”
“আছে অনেক কিছু আছে। তুমি শিক্ষায় অর্থে অনেক এগিয়ে তবে তোমার মধ্যে প্রকৃত শিক্ষার খুব অভাব।…”
“কিহ্! এ কথা আমাকে আমাকে বলতে পারলে সাহানা? আমার মধ্যে শিক্ষার অভাব!”
স্বামীর উত্তেজিত কন্ঠেও ভদ্রমহিলার মধ্যে কোন হেলদোল দেখা গেল না। নির্বিকার বসে আছেন তিনি। শান্ত কন্ঠে বললেন, “আহ্ রাখো। এতো উত্তেজিত হচ্ছো কেন? আমার কথাগুলো শোন। অর্থবিত্তের প্রাচুর্যে কখনও কোন মানুষকে বিচার করা উচিত নয়। হামিদুর সাহেব যথেষ্ট ভদ্রলোক। এবং তার স্ত্রী সন্তানেরাও। তাছাড়াও হেমন্ত আমার একটা মাত্র ছেলে। আমি কখনও চাইবো না ছেলের পছন্দে অসম্মতি জানিয়ে নিজের থেকে তার দুরত্ব বাড়ুক। হেমন্তের ওপর আমার ভরসা আছে। ও কখনও খারাপ কিছু নিজের জন্য নির্বাচন করবে না। তাছাড়া আমরা তো যাচাইবাছাই করবোই। মেয়েটাকে তোমার পছন্দে বিয়ে দিয়ে তার জীবন নর’ক করে দিয়েছো। আমি চাইবো না তোমার কতগুলো লেইম যুক্তি সমর্থন করে ছেলেকে হারাতে বা তাকে কষ্ট দিতে।”
স্ত্রীর কথায় ভদ্রলোকের তেজে ভাটা পড়েছে যেন। উচ্চবাচ্য করলেন না। অনুধাবন করলেন অর্থবিত্ত দেখেই মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু মেয়ে এখন এক সমুদ্র দুঃখের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে। বাচ্চাটা হওয়াই কিছুতেই তাকে সে সংসার থেকে বিচ্ছিন্ন করা গেল না।
“কি হলো? কথা বলছো না কেন?”
“কি বলব, সব তো ঠিক করেই ফেলেছো। নাতাশাকে জানানো উচিত। তার ভাইয়ের বিয়ের কথাবার্তা চলছে সে অনুপস্থিত থাকবে সে কি করে হয়?”
“তোমার কি মনে হয় আসতে দিবে? কু’কু’রের জাতের সাথে আমার মেয়েটাকে দিয়ে রেখেছো তুমি। ওরা কি আর মেয়েটার দুঃখ কষ্ট বুঝে!”______মেয়ের কথা উঠলেই ভদ্রমহিলার আখিদ্বয় অশ্রুতে টইটুম্বু হয় যায়। এবারও তাই। সন্তপর্ণে শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছে নেয়।
স্ত্রীর চোখের পানি ভদ্রলোকের মনে বিষাদ নামাতে যথেষ্ট। মেয়ে যে তার প্রাণ। তবুও তার হাত পা বাধা বলতে গেলে। চাইলেও কিছু বলতে পারে না। তার মনে কি কম দুঃখ! কিন্তু পুরুষ মানুষের তো এ সমাজে চাইলেও চোখের পানির বহিঃপ্রকাশ করে আবেগ ঝ’ড়া’তে না। প্রকৃতি তাদের অদৃশ্য শক্ত খোলসে আবৃত করে রেখেছে। প্রসঙ্গ কাটাতেই বলে উঠলেন,
“আমি দেখবো ব্যাপারটা। তুমি চিন্তিত হয়োও না। আর আমাদের মত থাকলে তো হবে না। মেয়ের বাবা-মা কে তো জানাতে হবে। যদিও অমত করার কোন কারণই আমার চোখে বাধছে না। আগে তাদের জানাও। নাতাশাকে আনার ব্যাবস্থা আমি করছি। অত ভেবো না।”
____🍂_________________
হুমায়রা মন দিয়ে হুমায়ুন আহমদের দেবী উপন্যাসটি পড়ছে। রানু চরিত্র তার কাছে বেশি কৌতূহলী লেগেছে। প্রধান চরিত্র মিসির আলীকেও খুব ভালো লেগেছে।
ধোয়া ওটা গরম দু-কাপ চা নিয়ে হাজির হালিমা খাতুন। হুমায়রা মাঝেমধ্যে মাকেও পড়ে শোনায়। তিনি এখন আগের মতো চোখ লাগিয়ে বই পড়তে পারেন না। তবে আগ্রহ প্রচুর। তিনিও এক সময় হুমায়ুন আহমদের দারুণ ভক্ত ছিলেন বলা যায়। মেয়ের দিকে এক কাপ চা এগিয়ে দিয়ে বিছানায় আয়েশ করে বসলেন। আগ্রহ নিয়ে শুধালেন, “কি পড়ছিস?
“দেবী, হুমায়ুন আহমদের। তুমি কি এটা পড়েছো?”
“না। সারসংক্ষেপ পড়ে শোনাস।”
“তবে এখনী শোন। অনেকটা পড়ে ফেলেছি।”
“আচ্ছা, বল।”
“এটা হুমায়ুন আহমদের মিসির আলী সমগ্রের একটি। মন দিয়ে না পড়লে উপন্যাসের অনেক কিছুই বুঝতে পারা যাবে না।………’
হামিদুর রহমানের উল্লসিত কন্ঠ। সবাইকে আগ্রহ নিয়ে ডেকে চলেছেন। মুখশ্রীতে খুশি খুশি ভাব। হুমায়রার আর বলা হলো না। মা-মেয়ে আগ্রহ, কৌতুহল নিয়ে বেড়োলেন রুম থেকে। দেখলেন, দুটো প্যাকেটে ছানার মিষ্টি আর জিলাপি রাখা। হুমায়রা জিলাপি ভালো খাই। সে অতি উৎসাহের সাথে জিলাপি খেতে বসে গিয়েছে। এদিকে তার বাবা মাকে নিয়ে জরুরি কথা বলবে বলে রুমে ঢুকেছে এ ব্যাপার সে খেয়ালই করেনি। অদ্ভুত সুন্দর দেখতে জিলাপি। খেতেও ভালো। কিন্তু ছানার থেকে বেশি সুস্বাদু নয়। তবুও হুমায়রার এটিই বেশি প্রিয়। যার যেমন রুচি।
“মেয়ে সামনে টেনে আনলে কেন? পরে বলা যেত না?”
“যেত বৈ কি। কিন্তু এত খুশির সংবাদ আমি বিলম্ব করে দিতে চাইনি যে।”
”কি হয়েছে? কিসের খুশির সংবাদ?”
“মেয়ের বিয়ের জন্য ভালো সম্বন্ধ এসেছে। ছেলে ভালো ঘর ভালো।”
“এর জন্য এত খুশির কিছু দেখছি না। মেয়ের জন্য প্রায় এমন সম্বন্ধ আসে।”
“ওগুলোর সাথে এটার তুলনা করো না। ওইযে মোড়ের মাথায় একটা ডুপ্লেক্স বাড়ি দেখেছো না? ও বাড়ি থেকেই এসেছে। ভদ্রলোক নিজে এসেছে বলেছেন আমায়।”
বিস্ময়ে কথা বলতেই ভুলে গিয়েছে যেন। কোনরকম বললেন, “কি বলছো তুমি? ঠিক শুনেছো তো? ওমন বাড়ি থেকে আমাদের মত একটা ঘরের মেয়ে নিতে চাইবেন কেন?”
”ভুল শুনবো কেন? ঠিকই শুনেছি। অফিস শেষে ভদ্রলোক দেখি দাড়িয়ে। আমি তো অবাক। ভালো-মন্দ জিজ্ঞাসা করার শেষে প্রস্তাবখানা রাখলেন।”
“তুমি কি বললে?”
” বাড়ি গিয়ে গিন্নির সাথে আলাপ করে জানাবো। আমাদের সম্মতি পেলে তারা দেখতে আসবেন মেয়েকে।”
“আমার কিন্তু এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না। মেয়ের আমার এতো সৌভাগ্য!”
আনন্দে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো চিবুকে হালিমা খাতুনের। পকেট থেকে রুমাল নিয়ে মুছে দিলেন হামিদুর রহমান। বড় আনন্দের খবর তাদের জন্য। কন্যা দায়গ্রস্ত পিতার নিকট এহেন উত্তম পাত্রের ও ঘরের সন্ধান পেলে আনন্দ তো হবেই। উভয়ই একত্রে বলে উঠলেন, “আলহামদুলিল্লাহ্ আলহামদুলিল্লাহ্।”
ইনশাআল্লাহ,,চলবে..
#সুমাইয়া_ইসলাম_জান্নাতি(লেখনীতে)🍂
🍂