প্রাপ্তি পর্ব-০৪

0
1747

#প্রাপ্তি___(০৪)
_____🍂________

সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে পুরোনো বছর শেষে নতুন বছরে পদার্পণ করেছে। হুমায়রার দিন এখন খুব একটা ভালো কাটে না। মন বিষণ্ণতায় ভরে থাকে। কি জন্য তার এতো মন খারাপ তার কারণ টাও খুজে পাই না। তবে মাঝেমধ্যে বুঝতে পারে কেন তার মনে মেঘের ন‍্যায় মন খারাপেরা ছেয়ে থাকে।

আজ এক সপ্তাহ পার হয়ে গেছে হেমন্ত হুমায়রার রাস্তা রোধ করে দাড়িয়ে থাকে না। বলে না ‘পাখি’ হুমায়রার পূর্বের কথা স্বরণে আসলেই দম আটকে আসে। হয়তো হেমন্ত নামক শুভ্র সুদর্শন পুরুষটার মায়ায় সেও পড়ে গিয়েছে। যদিও সে স্বীকার করতে নারাজ। কিন্তু সত‍্যটা তো মানতেই হবে। সে তো নিজেই হেমন্তের থেকে সরে এসেছে। এ সিদ্ধান্তে একটুও আফসোস হয় না হুমায়রার। ধর্ম ও সমাজ মেনে চলতে গেলে বহু আবেগ অনুভূতিকে পিছু হটিয়ে এগিয়ে যেতে হয়।

নতুন বছরকে বরণ করে নিতে বর্তমান জেনারেশনের মানুষগুলো কতগুলো অসুস্থ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে নিজেদের আবেগ আনন্দ প্রকাশ করে। রাত বারোটা বাজে নিউ ইয়ার উপলক্ষ্যে ফানুস, বাজি, জোড়েসোড়ে সাউন্ড বক্স বাজিয়ে জানান দেয় নতুন বছর এসেছে। তাদের এ বিকৃতমস্তিষ্কের হৈ হুল্লোড়ে অসুস্থ মানুষগুলো, ছোট বাচ্চারা, বোবা প্রাণীগুলো রাতে নিদ্রাযাপন করতে পারে না। কি এক অসহনীয় যন্ত্রনার মধ্যে দিয়ে পার করতে হয়।

হুমায়রার ভাই মিনহাজও বাজি পটকা ফাটাবে বলে সন্ধা পর্যন্ত লাফিয়েছে। কিন্তু বাবা আর বোনের কঠোর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ওসব করতে পারেনি। তবে তারা আজ মোরগ পোলাও খাবে। ছোট করে হলেও পারিবারিকভাবে নতুন বছর উদযাপন করবে। যদিও হুমায়রার অন‍্যবারের মতো উদ্দিপনা, উৎসাহ নেই। কেমন যেন ঝিমিয়ে গিয়েছে।
____🍂_______

হেমন্তের ফর্সা সুন্দর চেহারাই মলিনতা জায়গা করে নিয়েছে। কতরাত ঠিকমতো ঘুম হয় না তার। বড়লোক বাপের সন্তান তবুও না পাওয়ার আশঙ্কা, হতাশা, আফসোসে জর্জরিত। দুই তিন জায়গাই চাকরির জন্য ছোটাছুটি করেছে। অনার্স কম্পিলিট হলেও মাস্টার্স শেষ না হওয়ায় কাঙ্খিত জব পাচ্ছে না। তবুও ইন্টারভিউ দেওেয়া জায়গা থেকে মেইল আসতে পারে। এ নিয়েও দুশ্চিন্তার শেষ নেই।

নতুন বছরে দু প্রান্তের মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। পরিশেষে দুজন মানুষ মিলিত হবে কিনা আল্লাহ্ ছাড়া আর কে জানেন!
__🍂__

মোয়াজ্জিনের মিষ্টি কন্ঠে আজানের সুমধুর বাক‍্যগুলো শুনেই ধর্মপ্রান মুসলমানদের নিদ্রাচুত হয়। হুমায়রাও বিপরীত নয়। ফজরের সালাত শেষে কোরআন তেলওয়াত, জিকির দোয়া-দুরুদ পাঠ করে একবারে জায়নামাজ থেকে উঠে। তারপর ভোরের স্নিগ্ধ শীতল বাতাস, সূর্যদ্বয়ের হৃদয় জোড়ানো দৃশ্য উপভোগ করে। মনে মনে হাজারবার সৃষ্টিকর্তার শুকরিয়া আদায় করতে ভুলে না।

সত্যি তো! সৃষ্টি কর্তার অমূল্য সব সুন্দর সৃষ্টি দেখে যেকোনো মানুষের হৃদয় শীতল হতে বাধ্য। তবুও কি করে আমরা সেই রবের সৃষ্টি দেখেও তাকে অবিশ্বাস, অবমাননা করতে পারি! বুক কে’পে ওঠে না! হুমায়রা তার সৃষ্টিকর্তার নিকট তার আকুল আবেদন গভীরভাবে পেশ করেছে। এখন মহান আল্লাহ্ তায়ালা চাইলে সবকিছু ভালোই হবে ইনশাআল্লাহ।

নতুন বছরে হুমায়রা নতুন উদ্যোগ নিয়েছে। রান্নাবান্নার কাজ শিখবে। সেই কথা মনে পড়তেই, ভোরের সুন্দর দৃশ্য দেখার ইতি টেনে কিচেনে আসে চা বানাতে। আজ চা দিয়েই না হোক তার রান্না শেখার শুরুটা হোক। নিজের জন্য দুধ ও কড়া চিনি দিয়ে এক কাপ আর ভাই, মা-বাবার জন্য রঙ চা করে।

সকাল সকাল মেয়ের হাতের চা পেয়ে খুব খুশি হন বাড়ির কর্তা-কর্তি।

“আপা তো চা বানানো শিখেই গেছে, এবার বিয়ে দিয়ে দাও।”

“তারপর তুমি ইচ্ছেমতো রাজ করো তাই না!”

“তাতো বটেই।”

ভাইবোনের খুনশুটিতে মুচকি হাসে হালিমা খাতুন আর হামিদুর রহমান।

“বলছি, আম্মু সকালে খিচুড়ি রান্না করি? সাথে ডিম ভাজা আর শুকনো মরিচ পোড়া। মিনহাজের ফেবারিট।”

“আচ্ছা। আর কিছু…?”

“দুপুরে মুরগির রোস্ট করবে। এটা তো সবাই ভালো খাই। তারপর বিকালে সবাই মিলে ঘুরতে যাবো। ”

“বাবা…এতো আবদার!”

“তো?”

“আচ্ছা ঠিক আছে। যাওয়া হবে। রেডি থেকেও।”

হুমায়রা, মিনহাজ বাবার সম্মতি পেয়ে লাফিয়ে ওঠে। আনন্দে চকচক করে ওঠে আখিদ্বয়। ওড়নার আড়ালে মুখ লুকিয়ে লাজুক হাসেন হালিমা খাতুন।
অর্থাৎ সেও খুশী।

“আম্মু তাহলে সকালের খিচুড়িটা আমি রান্না করব তুমি একটু দেখিয়ে দিও শুধু।”

“তুই পারবি?”

“অবশ্যই কি মনে হয়?”

“করিসনি তো তাহলে পারবি কি করে?”

“ইউটিউবে ভিডিও দেখেছি আর তোমার রান্না তো দেখেছিই। তাছাড়া খিচুড়ি রান্না আহামরি কোন কঠিন কাজ না। আমি পারবো।”

“তুই পারলে করবি আমার সমস্যা নাই। এখন বয়স হয়েছে মেয়ের হাতের রান্না খাবো এতো সৌভাগ্যের। কর তাহলে।”

মাঝখান থেকে মিনহাজের গা জ্বালানো প্রশ্ন!
“ও রান্না করলে খাওয়া যাবে তো?”

“আম্মু এই মিনহাজ্জেরে থামাও মে’রে ফেলবে একদম।”

“আহ্ ওর কথায় এতো চ‍্যতস কেন,? ছোট ভাই বলছে তো কি হয়েছে! তুই ভালো রান্না করে দেখিয়ে দে! তাহলেই হয়।”

“আব্বু থাকলে ঠিক আমার পক্ষ নিত। তোমরা একটাও ভালো না।”___হুমায়রা আর দাড়ায় না। গটগট শব্দ তুলে কিচেনে চলে যায়। উদ্দেশ্য চায়ের কা’পগুলো ধোয়া আর সকালের রান্নার আয়োজন করা।

খিচুড়ি সাথে ডিম ভাজি আর শুকনো মরিচ পোড়ানো। সুন্দর করে প্লেটে সাজিয়ে ফেসবুকে স্টোরি’তে দিয়েছে। তার পূর্বে চায়ের ফটো তুলেও স্টোরিতে দেওেয়া শেষ। ক‍্যাপশনে দিয়েছে “এক কাপ চায়ে শুধু তোমাকে চাই, কিন্তু আমি তো তুমিহীনা মিশকিন।” হা হা রিয়াক্টই উঠেছে বেশি। একটা আইডি থেকে শুধু কমপক্ষে দশটা লাভ রিয়াক্ট এসেছে। হুমায়রার ফেসবুক ফ্রেন্ড বলতে চেনাজানা আত্মীয়, ফ্রেন্ডস এরাই। তবুও আইডিটা হুমায়রা চিনতে পারলো না। কোন খেয়ালে একসেপ্ট করেছে কে জানে!

হেমন্তের ফোনে মেইল এসেছে। একটা মাল্টি ন‍্যাশনাল কোম্পানিতে বেশ ভালো পদে চাকরি হয়ে গেছে। নিজ যোগ্যতাই চাকরি পাওয়া সুখ ও প্রাপ্তিটাই অন‍্যরকম মধুময়। হেমন্ত তা দারুণ ভাবে উপভোগ করছে। চাকরি না করলেও তার চলতো অথবা বাবা-মায়ের ক্ষমতাবলে বিনা ইন্টারভিউয়ে চাকরি হয়ে যেত। কিন্তু সে আল্লাহ্ ছাড়া কারো সাহায্য নিতে নারাজ। নিয়তিতে থাকলে এমনিতেই ধরা দিবে। হেমন্তের নিয়তি ভালো, তাই চাকরিটাও হয়ে গিয়েছে আলহামদুলিল্লাহ্। এখন মা-বাবাকে আসল বিষয় জানানো বাকি।

অনেকগুলো দিন হেমন্ত তার সখের প্রিয় মোটরবাইক নিয়ে বেড়োই না। ভেবেছে আজ বিকালে একটু ঘোরাঘুরি করবে।

হেমন্তের বাড়ির দোতলায় ছাদ বিহীন লনে দাড়িয়ে হেমন্ত। খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে বিরবিরিয়ে বলে উঠে, “আরশের আজীমের প্রভু! তোমার কাছেই আমার আশা আকাঙ্খা ব‍্যক্ত করেছি। নিশ্চয়ই তুমি তাকে আমার ভাগ‍্যে রাখবে। তোমার সিদ্ধান্তই আমার সিদ্ধান্ত। আলহামদুলিল্লাহ্।

ইনশাআল্লাহ…চলবে,,

#সুমাইয়া_ইসলাম_জান্নাতি (লেখনীতে)
___🍂____

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে