#প্রাণের_পুষ্পকুঞ্জ
লেখনীতে : তামান্না বিনতে সোবহান
পর্ব – ৬
একটা সময় ‘গিফট’ নিয়ে খুব বেশি আগ্রহী ছিল প্রাণেশা। সময়ের সাথে সাথে সেই আগ্রহ মন থেকে উবে গেছে। কেউ খুশি হয়ে দিলে সেটা খুব যত্নেই তুলে রেখে দেয়। পছন্দ হোক অথবা না, মুখফুটে মনের ভাব প্রকাশ করবে না। বহুদিন পর অনির্বাণের কথা শুনে ঠোঁটে চাপা হাসি ফুটিয়ে তুলে প্রাণেশা বলল,
‘কে বলল, আমি গিফটের আশায় এই কাজটা করেছি? আমার কোনো গিফট লাগবে না। খামোখা টাকা খরচ করো না।’
অনির্বাণ এত কথা কানে না নিয়ে স্পষ্টকণ্ঠে বলল,
‘কেউ খুশি হয়ে কিছু দিতে চাইলে সেটা সাদরে গ্রহণ করতে হয়, স্টুপিড। ফিরিয়ে দিতে হয় না। এখনও এই বোধটুকু জাগার বয়স হয়নি তোর?’
‘ওসব আমার মধ্যে ছিল না কি কোনোকালে?’
প্রাণেশার এই ত্যাড়ামি শুনে ফুঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে অনির্বাণ বলল,
‘কবে হবে?’
‘না হলে কী আসে যায়? একটু অবুঝ থাকা ভালো নয় কী?’
‘সময় থেমে থাকে না, প্রাণ। একটা সময় বয়স বাড়বে, চুল পেকে যাবে, বাচ্চা-কাচ্চা থেকে নাতি-নাতনীও আসবে, তারা যদি জানে তাদের নানী অথবা দাদী সেই কৈশোরের মতো অবুঝ, কী ভাববে?’
অনির্বাণের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা শুনে বড়ো বড়ো চোখে চেয়ে থেকে প্রাণেশা বলল,
‘বাহ্বা! আমাকে নিয়ে তুমি এইসব স্বপ্নও দেখো?’
‘ওমা, দেখব না কেন? বউ না তুই আমার? বউকে নিয়ে এমন আরও কত-শত স্বপ্ন আছে। সময়ের সাথে সাথে সব স্বপ্ন পূরণ হবে, ইনশা’আল্লাহ্।’
প্রাণেশা মুখ ভেংচিয়ে বলল,
‘কচু হবে। তোমার সাথে থাকলে তো আমি।’
‘তুই থাকবি, তোর ঘাড়ও থাকবে।’
‘এ্যাহ… বললেই হলো। জোর করবে না কি তুমি?’
অনির্বাণ চওড়া হাসি দিয়ে বলল,
‘না… যে গিফটটা দেব, এরপর তুই নিজেই বলবি, আমাকে ছেড়ে যেও না, অনি।’
শক্ত চোখে চেয়ে টি’শার্টের হাত গুটিয়ে কনুইয়ের কাছে আটকে রেখে এক’পা দু’পা করে অনির্বাণের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তাকে ভয় দেখাতে চাইল প্রাণেশা। ঘাবড়ে দিতে চাইল। কিন্তু অনির্বাণ অনড়। তার ঠোঁটের কোণে শয়তানি হাসি। প্রাণেশা সেই হাসি দেখেও দমে গেল না। একদম কাছে গিয়ে বলল,
‘মরার শখ জাগলে সিলিংফ্যানে ঝুলব তা-ও তোমার গলায় ঝুলব না। বুঝেছ?’
অনির্বাণ এই কথাকে পাত্তা না দেয়ার ভান করে কাঁধ নাচিয়ে বলল,
‘ঝোলাঝুলি আর বাকি রাখলি কই, সোনা? অলরেডি ঝুলে আছিস।’
দাঁত কিড়মিড় করে প্রাণেশা বলল,
‘কী বললে তুমি? আমি তোমার গলায় ঝুলেছি? তোমার মতো ঝগড়ুটের গলায় যে ঝুলবে সে পাগল, তার চৌদ্দগুষ্টির সবাই পাগল।’
‘কথাটা কিন্তু ঘুরেফিরে তোর দিকেই যাচ্ছে।’
ওদের এই অকারণ কথা কাটাকাটি আরও দীর্ঘক্ষণ চলত। কিন্তু খাবার চলে আসার কারণে কেউ আর কথা বাড়ানোর সুযোগ পেল না। মাইশা প্রায় টেনে এনে প্রাণেশাকে চেয়ারে বসিয়ে বলল,
‘বাচ্চা-কাচ্চা, নাতি-নাতনী নিয়ে প্লানিং পরে করো। আগে এখানকার ঝামেলা শেষ করো।’
চারপাশের পরিস্থিতি খেয়াল করে মেজাজের ওঠানামাকে সামলে নিল প্রাণেশা। চেয়ারে বসে বড়ো করে শ্বাস টেনে প্রথমে একটু শান্ত হওয়ার চেষ্টা করল। এরপর আস্তেধীরে পাশে বসে থাকা রামিশার দিকে তাকিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
‘কী খাবি?’
রামিশা ও রাদিন আইসক্রিম পছন্দ করে বেশি। কাচ্চির সাথে সবার পছন্দের স্যপু, জুস ও বাচ্চাদের জন্য আইসক্রিম অর্ডার দিয়েছিল নাহিয়ান। সবার প্লেটে সে-ই নিজেই কাচ্চি তুলে দিল। প্রাণেশা বলল,
‘তোরা শুরু কর, আমি ওকে খাওয়াচ্ছি।’
টেবিলে থাকা ন্যাপকিন তুলে রামিশার পায়ের ওপর রেখে নেককারচিফ গলায় ঝুলিয়ে চামচের সাহায্যে অল্পস্বল্প কাচ্চি বোনের মুখে তুলে দিল প্রাণেশা। যত রাগ দেখাক, বকাবকি করুক, দিনশেষে ওদেরকে নিজের আত্মারও আপন ভেবে যত্ন নেয় সে। তখন বাচ্চাদুটোও শাসনের দিক ভুলে গিয়ে আদরটাকে উপভোগ করে বেশি। খেতে খেতে মাথা দুলিয়ে কিছু একটা গল্প করছিল রামিশা। প্রাণেশা শুনছিল আর হাসছিল। বাকিরা সবাই খাওয়া শুরু করলেও অনির্বাণ চুপ হয়ে বসে দু’জনকে দেখছিল। পরপর কয়েকটা দৃশ্য আজকে তার চোখে বার বার মুগ্ধতা এনে দিচ্ছে। অথচ এই প্রাণেশাকে দেখে কোনোদিন মনে হয়নি, তার মধ্যে কিছু গুণ আছে, যেটুকু একটা মানুষকে প্রবলভাবে টানতে পারে। সবসময় মেয়েদের মধ্যে মেয়েলী গুণাবলী খুঁজে অভ্যস্ত হওয়া মানুষও হুট করে যদি মনের চোখ দিয়ে প্রাণেশাকে দেখে, বিস্ময়ের সাথে সাথে মুগ্ধতাও এসে ভর করবে চোখে। যেমনটা আজ তার হচ্ছে। নিজের বৈধ স্ত্রী বলেই হয়তো একটুবেশি দেখছিল সে। দেখতে দেখতে আবিষ্কার করল, তখনকার তুলনায় প্রাণেশা এখন যথেষ্ট প্রাণবন্ত। কিছুক্ষণ আগেও যে মেয়ে মনখারাপ ও গাম্ভীর্যের আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছিল, এখন সে শান্ত, চটপটে ও ফুরফুরে মেজাজে আছে। আর এসব ভাবনাই তার মনে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিল। উত্তর খুঁজতে গিয়ে আবিষ্কার করল, সব মানুষের নির্দিষ্ট একটা ‘কমফোর্ট জোন’ আছে। চলাফেরা, ব্যবহার ও নিজেকে মেলে ধরার আলাদা একটা বৈশিষ্ট্য আছে। যেটুকুকে ব্যবহার করে একটা মানুষ সাচ্ছন্দ্যে জীবন কাটাতে পছন্দ করে। এই বৈশিষ্ট্যের বাইরে ব্যক্তি চলে গেলে যেমন তার মনের পরিবর্তন ঘটে তেমনই মেজাজেও পরিবর্তন চলে আসে। প্রাণেশার ক্ষেত্রেও তেমনটাই ঘটেছে। এখন সে নিজের স্ব-রূপে আছে বলেই তাকে এত স্নিগ্ধ ও শান্ত লাগছে। আর এটুকুই তার সৌন্দর্য, তার ব্যক্তিত্ব। সব ভাবনাদের থামিয়ে সে ছুরি দিয়ে কাচ্চির ওপরে থাকা মাংসের পিস অল্প কেটে, চামচের সাহায্যে সেটা মুখে তুলে মুচকি হেসে বলল,
‘ওকে না খাইয়ে আমাকে খাওয়ালেও তো পারিস। সওয়াব হবে।’
সঙ্গে সঙ্গে হাতে থাকা ছুরিটা হাত দিয়ে ঘুরিয়ে প্রাণেশা বলল,
‘এটা দেখেছ?’
অনির্বাণ একই মেজাজে বলল,
‘হ্যাঁ দেখেছি।’
‘একদম গলায় বসাব।’
‘ক্ষতি তোরই হবে। নাতি-নাতনী আসার আগেই দাদাভাই অক্কা পাবে।’
‘সেটাই ভালো হবে।’
‘তুই যে বিধবা হয়ে যাবি। তার বেলা?’
‘আমাকে নিয়ে তোমার এত ভাবতে হবে না।’
‘না ভাবলে চলে? একটা মাত্র বউ আমার।’
প্রাণেশা বিরক্ত হলো। সুযোগ পেলেই বউ বউ করছে। কেমনটা লাগে? দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
‘বার বার বউ ডাকবে না। শুনলে মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।’
যখন-তখন যেকোনোকিছু নিয়ে এদের মধ্যে তর্ক শুরু হলে সে-ই তর্ক আর থামতে চায় না। ভাই-বোন এটা খুব ভালো জানে। ওদের থামাতে রাফিয়ান বলল,
‘দুলাভাই, খাবার মুখে নিয়ে আর একটা কথা যদি বলেছ…।’
কী বলবে ভেবে পেল না রাফিয়ান। অনির্বাণ বলল,
‘কী করবি রে, শালা?’
‘শালা…।’
রাফিয়ান ভাবল গালি দিয়েছে, শব্দটা উচ্চারণ করেই থেমে গেল। আইশা-মাইশা ও নাহিয়ান মিটমিটিয়ে হাসছে। নিজের পাতা ফাঁদে নিজে পড়ে রাফিয়ান বুঝল, শালা-দুলাভাই চক্করটা খুব একটা সুবিধার নয়। এই শালা শব্দটা বেশিরভাগ সময় আমজনতা গালি হিসেবে ব্যবহার করে। নিশ্চুপে যখন এসবই ভাবছিল, তাকে জব্দ করতে অনির্বাণ আবারও বলল,
‘কী ব্যাপার শালাবাবু, মুখটা বাংলার পাঁচ হয়ে গেল কেন? কাচ্চি ভালো হয়নি? আরেক প্লেট দেই? বাড়িতেও নিয়ে যাব। আগামী এক সপ্তাহ, দিন তিনবেলা দুলাভাই জপে জপে তুই শুধু এই কাচ্চিই খাবি। পারবি না?’
দুলাভাই ডাকটা যেমন-তেমন, শালা ডাক খুবই অস্বস্তিকর। এই ডাক শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে যাওয়াতে দ্বিতীয় কোনো কথা বলল না রাফিয়ান। মুখ নামিয়ে চুপচাপ কাচ্চি খাওয়ায় মনোযোগ দিল। আশ্চর্য! শালা ডাক শুনে তার মেজাজ এত খারাপ হচ্ছে কেন?
***
রাত এগারোটায় বাড়ি ফেরার পর প্রাণেশাকে ঘরোয়া পোশাকে দেখে বাড়ির সবাই যারপরনাই হতাশ। কণ্ঠে আফসোস ও দুঃখ। মেয়েটা আর মানুষ হলো না। সবার এত কথার মধ্যে রূপকথার ঠোঁটে স্বস্তির হাসি। অনির্বাণের ইচ্ছে শুনেই শাড়ি পরার জন্য জোর করেছিল সে। কিন্তু সে জানত, দিনশেষে প্রাণেশা যে পোশাকে কমফোর্টেবল সেটা পরেই স্বস্তি খুঁজতে চাইবে। এইজন্য টি’শার্ট ও জেগিংস্’এর উপরেই সেফটিপিন দিয়ে ফিটিং করে শাড়ি পরিয়ে দিয়েছিল সে। দলবেঁধে সবাই যখন ঘরে প্রবেশ করে যে যার রুমে চলে গেল, তখন প্রাণেশাও সবাইকে একনজর দেখে ধীরগতিতে ঘুমন্ত রামিশাকে কোলে নিয়ে ছোটো চাচ্চুর ঘরের দিকে পা বাড়াল। ড্রয়িংরুমে বসে চার ভাই গল্প জমিয়েছিলেন। প্রাণেশার বাবা শেখ সামিউল আলম ঘরে ফিরে শুনেছিলেন, মেয়ে শাড়ি পরে বাইরে গিয়েছে, তা-ও আবার অনির্বাণের ইচ্ছেতে। স্বস্তি পেয়েছিলেন। এখন মেয়েকে এই পোশাকে দেখে রাগান্বিত দৃষ্টিতে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে গলা উঁচিয়ে বললেন,
‘তুই কি সবসময় এমনই থাকবি? বাড়ির কারও কথা, কারও ইচ্ছের মূল্য দিবি না? কারও কথার কোনো দাম নেই কেন তোর কাছে? এটা কী ধরনের উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন, প্রাণেশা?’
সিঁড়িতে পা রেখে, ওখানেই দাঁড়িয়ে গেল প্রাণেশা। পিছন ফিরে বাবার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘এটা উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন? সুশৃঙ্খল জীবনযাপন কীভাবে হয় জানো তুমি? পারো তো শুধু দাম্ভিকতা ও গায়ের জোর দেখাতে স্ত্রীর শরীরে আঘাত করতে। যে পুরুষ নিজের স্ত্রীকে সম্মান দিয়ে কথা বলতে জানে না, তার কাছ থেকে সুশৃঙ্খল জীবনযাপন কীভাবে শিখব?’
সামিউল আলম প্রচণ্ড রেগে গিয়ে সোফা ছেড়ে মেয়ের মুখের সামনে দাঁড়িয়ে, কোমরে হাত রেখে শক্তকণ্ঠে বললেন,
‘বেয়াদব মেয়ে। মুখে-মুখে তর্ক করছিস? ঠ্যাং ভেঙে ঘরে বন্দী করে রাখব।’
এরপরই বড়ো ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,
‘দেখেছ, ভাইজান? আদর দিয়ে মাথায় তোলার পরিণাম কী?’
প্রাণেশাও দমে গেল না। মুখের ওপর বলল,
‘মিথ্যে বলো না, বাবা। আদর অন্য সবার বেলায় থাকলেও আমার বেলায় অত্যাচার ছিল। যা কিছু আমি পারি না, যা কিছু আমি চাই না, সবটাই তুমি আমার ওপর চাপিয়ে দিয়েছ। তবুও তোমাদের মন রক্ষা করে চলতে গিয়ে আমার নিজের ইচ্ছে-স্বপ্নগুলোকে গলাটিপে মেরে ফেলেছি। তা-ও তুমি খুশি হওনি?’
শাফিউল আলম ভাইয়ের এই রাগ ও মেজাজে ভীষণ বিরক্ত। অতিরিক্ত আদর ও শাসন কখনওই ভালো ফল বয়ে আনে না। আদর-শাসন নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে বেশি হয়ে গেলে ছোটোরা বখে যায়। তিনি বাবা-মেয়ের মাঝখানে প্রবেশ করতে চাইছিলেন না। শুধু দূর থেকে বললেন,
‘তোকে অনেকবার বলেছি, সন্তানদের সাথে এমন ব্যবহার করিস না। আদর দিয়ে বুঝালে যে কথা ওরা মেনে নিবে, সেটা তুই চড়-থাপ্পড় মেরে করাতে চাস্। মেয়ে বড়ো হয়েছে, বিয়েও হয়েছে। এখন আর তাকে এইভাবে শাসন করার প্রয়োজন দেখছি না। যদি ওর চলাফেরা নিয়ে কারও কিছু বলার থাকে, সেটা অনি বলবে। আর কেউ না।’
বাবা যে গুটি কেন তার দিকে দিলেন, প্রথমে সেটা না বুঝলেও বাবা-মেয়ের এই তর্কাতর্কি শেষপর্যন্ত তাহমিনা আহমেদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে, এইটুকু কেউ না বললেও বাবার নিশ্চুপ ও শান্ত-শীতল চাহনি দেখেই বুঝে নিল অনির্বাণ। খাবারের প্যাকেটগুলো টেবিলে রেখে মেজো চাচ্চু সামিউল আমলের সামনে এসে বলল,
‘তুমি ওকে কিছু বলো না, চাচ্চু। ও যদি এভাবে থেকে স্বস্তি পায়, থাকতে দাও। জোর করে তো অনেককিছুই করলে। লাভ তো কিছুই হলো না। উলটে ক্ষতি হলো। ও যেমন আছে, তেমন থাকুক।’
সামিউল আলম মেজাজী কণ্ঠে বললেন,
‘ওর এই আচরণ-চলাফেরা তোর কাছে স্বাভাবিক লাগছে? যেখানে-সেখানে মারামারি করে, শার্ট-প্যান্ট পরে ঘোরাঘুরি করে, বড়োদের মুখে-মুখে তর্ক করে, যেমন খুশি তেমন চলে। এভাবে তো জীবন চলে না, তাই না?’
‘কাউকে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে জোর করাটা অন্যায়, চাচ্চু। প্রতিটা মানুষ যেমন আলাদা, তাদের পছন্দ-অপছন্দ ও ইচ্ছেগুলো আলাদা। তবুও তুমি ওকে ভালো রেজাল্ট ও প্লাস টেনে আনার চেষ্টায়, প্রতিক্লাসে টপে থাকার জন্য যে টর্চার করেছ, সেসব ওর জন্য বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে। মেধা সবার সমান নয়। সবাই ভালো রেজাল্ট করতে পারে না।’
সামিউল আলম একইভাবে বললেন,
‘তুই আমাকে এসব উল্টাপাল্টা লজিক দেখাবি না। এই মেয়েকে আমার চোখের সামনে থেকে দূর হতে বল। বাড়ির সবকটাই মানুষ হয়েছে। শুধু ও হলো অমানুষ।’
‘চাচ্চু… এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হচ্ছে।’
‘আমাকে মেজাজ দেখাবি না। এখনও সময় আছে, ওকে বোঝা। মেয়ে হয়ে জন্মেছে, মেয়ে হয়েই থাকুক। বাহাদুরি সব জায়গায় খাটে না। যদি অন্য সবার মতো শান্তশিষ্ট জীবনে ফিরে না আসে আমি ওকে এই বাড়ি থেকে বের করে দেব।’
অনির্বাণ মেজাজ ধরে রাখতে না পেরে সমানতালে চেঁচিয়ে বলল,
‘এই বাড়ি তোমার একার নয়, চাচ্চু। এখানে আরও তিনজন পুরুষ আছে। তাদের ভাগ আছে। সন্তানদেরও ভাগ আছে। সেই হিসাবে এই বাড়িটা আমারও। আর আমার বাড়িতে আমার স্ত্রী থাকবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত শুধু আমার, তোমার নয়। দ্বিতীয়বার যদি এই কথা বলেছ, তাহলে বাবাকে বলব – মাঝখানে প্রাচীর তুলে দিয়ে প্রত্যেকের সংসার আলাদা করে দিতে।’
এতক্ষণ ধরে মেয়েকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছিল আরিয়ান। তা-ই এতসব কথার ভীড়ে সে আসতে চায়নি। এখন ছোট্ট আরুশি ঘুমানোর পর, চেঁচামেচি সহ্য করতে না পেরে রুমের বাইরে এলো সে। নিচে নামতে নামতে বলল,
‘তুই তোর রুমে যা, অনি। আমি চাচ্চুর সাথে কথা বলছি।’
ঝামেলা শুরু হয় একটা বিষয় নিয়ে, টার্ণ নেয় অন্যদিকে। মাঝেমধ্যেই এমন হয়। সব পরিস্থিতি সুন্দরমতো সামাল দেয় আরিয়ান। সামিউল আলম তার এই বড়ো ভাতিজার কথা একটু বেশিই শোনেন। যেমন বুদ্ধিমান, তেমন শিক্ষা-দীক্ষা। প্রতিক্লাসে রীতিমতো টপার ছিল সে। এই কারণে প্রতিবছর তিনি নিজে, রেজাল্টের পরপর ভাতিজাকে সঙ্গে নিয়ে মার্কেটে গিয়ে তার চাহিদা অনুযায়ী ‘গিফট’ কিনে দিতেন। শুধু আরিয়ান নয়, বাকিদের ক্ষেত্রেও এই নিয়ম ছিল। টপ রেজাল্ট সবার হলেও পিছিয়ে থাকত প্রাণেশা। প্রতিবছর সবাই যখন দারুণ দারুণ গিফট পেত। পছন্দের কম্পিউটার, ভিডিওগেইম, ল্যাপটপ, মোবাইলফোনসহ আরও অনেক দামীদামী উপহার পেত। তখন ঘরের এককোণে শূণ্যহাতে বসে থেকে শুধু চোখের পানি ফেলত প্রাণেশা। এই একটা গিফটের জন্য প্রতিবছর গাদার খাটুনি খেটেছে সে। এই স্কুল থেকে ওই স্কুল, এই টিচার থেকে ওই টিচার, এই বান্ধবী থেকে ওই বান্ধবী, এরকম করতে করতে কাছের-দূরের সবাইকে সে হারিয়ে ফেলেছে। সামিউল আলম সবসময় বেটার অপশন খুঁজে খুঁজে মেয়েকে অধিক মাত্রায় অত্যাচার করেছেন। যখন যে স্কুলে মন বসে যেত, তখুনি তিনি ট্রান্সফার করিয়ে অন্যত্র সরিয়ে নিতেন। শহরের নামী-দামী এমন কোনো স্কুল-কলেজ বাকি নেই, যেখানে টপ রেজাল্টের আশায় ছোটাছুটি করেনি প্রাণেশা। ছুটতে ছুটতে একসময় সে হাল ছেড়ে দিয়ে নিজের ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। সে মেনে নিয়েছে, তাকে দিয়ে এই টপ রেজাল্ট হবে না। সবার টপ রেজাল্ট ও গিফট দেখে সে যখন আবদারের সুরে বাবাকে বলত,
‘আমাকেও একটা গিফট দাও না, বাবা।’
সামিউল আলম তখন বলতেন,
‘যেদিন টপ রেজাল্ট করবি, সেদিন তুইও পাবি।’
প্রাণেশা এভাবেই আশায় আশায় দিন কাটাত। টপ রেজাল্টের চেষ্টা করত। কিন্তু যত চেষ্টা ও জোরাজুরি থাকুক না কেন, মেধার যদি সঠিক বিকাশ না থাকে, টপ রেজাল্ট হবে কী করে? সে যে একটা গাধী, অকর্মা, এটা সে বুঝে নিল। মেনেও নিল। মেনে নেয়ার পর গিফট নিয়ে কোনোদিন কোনো চাওয়াকে কারও প্রকাশ করেনি। দাঙ্গাহাঙ্গামা অশান্তি ভালো লাগে না এই বাড়ির কারও। সবাই মিলেমিশে হেসেখেলে দিন কাটিয়ে দিতে চায়। এতসব কথা ও তর্কবিতর্কের ইতি টানতে আরিয়ান নিজে মেজো চাচ্চুর হাত ধরে বাবা ও বাকি দুই চাচ্চুদের পাশে বসিয়ে নিজের মতো করে বুঝাতে লাগল। আর কোনো চিৎকার-চেঁচামেচি হবে না, এটা নিশ্চিত। কারণ আরিয়ান এসেছে। এখন সব ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। প্রাণেশা ততক্ষণে বোনকে কোলে নিয়ে সরে পড়েছে।
***
মেজাজ ঠাণ্ডা করতে, ফ্রেশ হয়ে বিছানায় পিঠ ঠেকাতেই লাফ দিয়ে বিছানা ছাড়ল অনির্বাণ। একটা গন্ধ নাকে এসে লাগল। সঙ্গে সঙ্গে চাদর তুলে দেখল, তার তোষকের মাঝখানে অনেকাংশে ভেজা। সেখান থেকেই গন্ধ আসছে। সে চাদর সরিয়ে ওয়াশরুমে রেখে আবারও হাত-মুখ ধুয়ে দরজার কাছে গিয়ে মাকে ডাকল। তার মা জোহরা খানম ছেলের সামনে এসে বললেন,
‘কী হয়েছে? ডাকছিস কেন?’
অনির্বাণ বলল,
‘আরুশি আমার রুমে এসেছিল?’
জোহরা খানম জিহ্বায় কামড় দিয়ে বললেন,
‘তোকে বলতে ভুলেছিলাম। তোরা যাওয়ার পর ও যখন সারাঘর জুড়ে ছোটাছুটি করছিল, একফাঁকে তোর বিছানায় এসে নাচানাচি করছিল। তখনই বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে।’
মায়ের বলার ধরনে হেসে ফেলল অনির্বাণ। বলল,
‘ওহ, আচ্ছা… তুমি দরজা আটকে দাও। আমি গেস্টরুমে যাচ্ছি।’
‘ইন্না-লিল্লাহ! গেস্টরুমে থাকবি কেন? আজকের জন্য প্রাণেশার রুমে যা। কাল আমি তোষক শুকানোর ব্যবস্থা করব।’
‘আমি গেস্টরুমেই যাচ্ছি, মা। তুমি এককাপ কফি পাঠাও। ভীষণ মাথা ধরেছে।’
প্রাণেশার রুমে থাকা অসম্ভব বলেই মায়ের কথা এড়িয়ে গেল অনির্বাণ। হাঁটতে হাঁটতে গেস্টরুমে গিয়ে, চোখের চশমা খুলে আধশোয়া হয়ে বালিশে পিঠ ঠেকাল। কয়েক মিনিট পর দরজায় নক হলো। চোখ মেলে সামনে তাকিয়ে দেখল, দরজার কাছে প্রাণেশা দাঁড়িয়ে আছে। স্বেচ্ছায় যে আসেনি, সেটা তার মুখ দেখেই বুঝল। অবাক হয়ে বলল,
‘তুই এখানে?’
প্রাণেশা উত্তর দিল,
‘তোমার বউয়ের রুমটা তো ফাঁকাই আছে। ওই রুম থাকতে গেস্টরুমে কেন ঘুমাবে?’
‘মানে কী?’
‘মানে হচ্ছে, বড়ো চাচীর কড়া আদেশ, শুধু আজকের জন্য তোমাকে যেন আমার রুমে নিয়ে যাই। তাতেই হবে না, তোমার মাথাটাও যেন টিপে দেই। এরকম একটা হুকুম এসেছে।’
‘মায়ের আদেশ ও হুকুম দেখে ডাকতে এসেছিস, নয়তো আসতি না?’
‘এত কথা জানি না। আসবে না কি দরজা আটকে দেব?’
‘তোর যা খুশি তুই তা-ই কর।’
এইবলে বালিশে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে রইল অনির্বাণ। সে যে যাবে না এটা বুঝতে পেরে দরজার মুখ থেকে সরে দঁড়াতেই জোহরা খানমের মুখোমুখি পড়ে গেল প্রাণেশা। তিনি তাকে দেখে কফি ও ঔষধ তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন,
‘যা মা, ওর একটু খেয়াল রাখ। এখন থেকে ওর দেখাশোনার দায়িত্ব তো তোকেই নিতে হবে। কাল আমার ছেলেটা চলে যাবে। ভালোমন্দ কিছু রান্না করে ওর সাথে দেব তো, রান্নাঘরে আমার আরও অনেক কাজ আছে, মা। তোর যদি কিছু লাগে, আমাকে বলিস। কেমন?’
অনির্বাণের মাইগ্রেনের সমস্যা আছে। মাঝেমধ্যে এই ব্যথা তাকে খুব ভোগায়। অসুস্থতার কথা ভেবেই হাতের কফি ও ঔষধ নিয়ে রুমে এলো প্রাণেশা। সেন্টারটেবিলে সবকিছু রেখে, পর্দা টেনে রুমের দরজা আটকে দিয়ে অনির্বাণের শিয়রে দাঁড়িয়ে বলল,
‘সোজা হয়ে বসো।’
প্রাণেশার গলার আওয়াজ শুনে আবারও চোখ মেলল অনির্বাণ। চোখমুখ কুঁচকে বলল,
‘বিরক্ত করিস না, প্রাণ। যা এখান থেকে।’
‘আমি এখানে তোমার আদর খেতে আসিনি। বড়ো চাচীর আদেশ পালন করতে এসেছি।’
বেহুঁশের তালে কী বলল, সেটা টের পেল কথা শেষ হওয়ার পর। ঠোঁট কামড়ে, উল্টোদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল প্রাণেশা। কীসব কথা বেরিয়ে এলো। ছিঃ… সে এত নির্লজ্জ কবে হলো? তখনও ড্যাবডেবে চোখে তার দিকে তাকিয়েছিল অনির্বাণ। প্রাণেশার কথা ও লুকোচুরি ভাবসাব দেখে বিছানা কাঁপিয়ে হেসে উঠল। বলল,
‘আপাতত আদর দেয়ার মুডে নেই। যন্ত্রণায় মাথা ছিঁড়ে যাচ্ছে, পারলে একটু চুল টেনে দে।’
হুকুম করে, বালিশ ঠিকঠাক করে, চোখ বন্ধ করল অনির্বাণ। প্রাণেশা বলল,
‘পারব না। তুমি কফি খাও, এরপর ঔষধ খাও। ঠিক হয়ে যাবে।’
চট করে চোখ খুলল অনির্বাণ। বলল,
‘কী বললি?’
‘পারব না বলেছি। শুনতে পাওনি?’
‘আবার বল।’
‘পারব না, পারব না, পারব না।’
‘এরপর যা হবে তারজন্য আমাকে দোষ দিবি না।’
কথা শেষ করে একপলক দরজার দিকে তাকাল অনির্বাণ। সেটা বন্ধ দেখে হাতের টানে প্রাণেশাকে একদম নিজের কাছে টেনে নিল। আচমকা টান খেয়ে অনির্বাণের বুকের কাছে হুমড়ি খেয়ে পড়ল প্রাণেশা। কী হলো, সেটা বুঝতে সময় লাগল তার। যখনই নিজেকে অনির্বাণের ওপরে আবিষ্কার করল, তখুনি রাগত্বস্বরে বলল,
‘এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না।’
দু’হাতের বাঁধনে তাকে আটকে নিয়ে অনির্বাণ বলল,
‘সবটাই ঠিক। বেগানা কোনো নারীকে ছুঁইনি আমি। আমার বউকে ছুঁয়েছি।’
‘ধুর… ছাড়ো তো। তোমার বউ হতে বয়েই গেছে আমার।’
‘উঁহু… ছাড়াছাড়ি নাই। মাথা টিপে দিসনি, এখন এই কঠিন মাথাব্যথা সারানোর দায়িত্ব নে। নয়তো…।’
‘আশ্চর্য! আমি কীভাবে মাথাব্যথা সারানোর দায়িত্ব নেব। ছাড়ো প্লিজ…।’
অনির্বাণ ছাড়া তো দূর, প্রাণেশার কথা কানেই নিল না। ফট করে একপাশ দিয়ে সরে গিয়ে, অন্যপাশের বালিশে প্রাণেশাকে শুইয়ে দিল। ঠোঁটের নিচে থাকা কালো তিলটায় বুড়ো আঙুল ছুঁইয়ে বলল,
‘আমার এখন মাথাব্যথা। তুই তার প্যারাসিটামল। বিবাহিত পুরুষদের জীবনে বউ-ই সর্বরোগের ঔষধ। আমি এখন তোকে আদর করে আমার মাথাব্যথা সারাব। বাধা দিস না, প্রাণ।’
‘ছিঃ কী ভয়ংকর কথা।’
‘ভয়ংকর হতে যাবে কেন? রোমান্টিক কথা এটা। আদর-আদর কথা। প্রেম-প্রেম কথা।’
প্রাণেশা নড়েচড়ে শক্ত হাতের বাঁধন থেকে মুক্তি নিতে চাইল। পারল না। পালোয়ানের শক্তির সাথে পারা যায় না কি? সে অসহায় কণ্ঠে বলল,
‘আই থিংক, তুমি হুঁশে নেই। সরো…। আমরা কিন্তু কেউ কাউকে ভালোবাসি না। আর ভালোবাসা ছাড়া এভাবে কাছে আসাটা অনুচিত।’
একইভাবে আলতোস্পর্শে বারংবার কালো তিলে আঙুল ছুঁয়ে গেল অনির্বাণ। বলল,
‘একসাথে থাকতে থাকতে ভালোবাসা ঠিকই হয়ে যাবে, প্রাণ। বউ হয়েছিস তুই আমার। বউকে ঘিরে আমার যত শখ-আহ্লাদ, সব একদিন পূরণ করে ছাড়ব। দেখিস…।’
নিজেকে বাঁচানোর আর কোনো উপায় খুঁজে পেল না প্রাণেশা। তবুও হাতের ঠেলায় অনির্বাণকে দূরে সরানোর চেষ্টায় বলল,
‘আমি কিন্তু ডিভোর্স…।’
বিপদ কাকে বলে, কত প্রকার ও কী কী, এরপরই টের পেল প্রাণেশা। মুখের কথা মুখেই আটকে গেল। অধরোষ্ঠে খুব অচেনা অথচ ভীষণ সুখের একটুকরো স্পর্শ এসে ছুঁয়ে গেল। না চাইতেও সেই সুখকর মুহূর্তটাকে নারী জীবনের স্বার্থকতা হিসেবে গ্রহণ করে নিল সে। কখন যে দু’হাতে অনির্বাণের পিঠ খামচে ধরল, টেরই পেল না। দীর্ঘ সময়ের প্রণয় চুম্বন শেষে, অনির্বাণ তার ঠোঁটের তিলে আলগোছে ঠোঁট ছুঁইয়ে, নাকে নাক ঘষে বলল,
‘তুই যে আধা ব্যাটাছেলে নোস্ এইটুকু নিশ্চয়তা দেয়ার জন্য থ্যাংকস্। এটা শুধু প্রথম স্পর্শ ছিল না, আমার পক্ষ থেকে প্রথম কোনো স্পেশাল গিফটও ছিল। একে যত্নে রাখিস।’
প্রাণেশা কোনো কথা বলতে পারল না। অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছে। বুঝাতে পারছে না আবার এড়াতেও পারছে না। তার নীরবতা দেখে অনির্বাণ বলল,
‘এইটুকু স্পর্শ দিয়ে অন্তত এতটুকু তো বুঝাতে পেরেছি যে, যেকোনো সম্পর্ককে এত তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে নেই? প্রত্যেকটা সম্পর্ক তার নিজ নিজ জায়গায় এমনিভাবেই সুন্দর। এজন্য প্রত্যেকটা সম্পর্ককে শ্রদ্ধা, সম্মান ও পর্যাপ্ত ভালোবাসা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করতে হয়। গোড়াতেই ভেঙে ফেলার মতো ভুল সিদ্ধান্ত নিতে হয় না, প্রাণ।’
এইটুকু বলে প্রাণেশাকে ছেড়ে সোজা হয়ে বসে ঔষধগুলো চেক করে নিল অনির্বাণ। প্রাণেশা বিছানা ছেড়ে নেমে রেগেমেগে অস্থির হয়ে পিছনে দাঁড়িয়ে গতকালকের মতো আজও অনির্বাণের চুলগুলো মুঠোবন্দী করে জোরেশোরে ঝাঁকুনি দিয়ে বলল,
‘তুমি একটা অসভ্য, অভদ্র, সুযোগসন্ধানী। এইভাবে কেউ কারও সাথে শয়তানি করে?’
আবারও হাতের তালুতে ছোটো ছোটো চুল নিয়ে, দরজা খুলে দৌড় দিল প্রাণেশা। ঔষধ মুখে নিয়ে সেদিকে তাকিয়ে অনির্বাণ বিড়বিড়াল,
‘নিশ্চিত থাক… যতবার ডিভোর্স শব্দটা উচ্চারণ করবি, ততবারই এইরকম শাস্তি দেব। সম্পর্কে ভাঙন টেনে আনা কি এতই সহজ? আমি বেঁচে থাকতে সে-ই সুযোগ তোকে দেব? মাথামোটা কোথাকার।’
***
চলবে…