প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব-২০+২১+২২

0
2367

#প্রয়োজনে_প্রিয়জন
#পর্ব_২০
#তানজিলা_খাতুন_তানু

– আমি আর এই বাড়িতে থাকতে পারব না।

আদৃত চমকে উঠল অতসীর কথা শুনে। আদৃত কিছু বলতে যাবে তার আগেই অতসী বলল…

– আরুর প্রতি আমি একটু দূর্বল, সেই কারনেই এই বাড়িতে থাকা নিয়ে আমি বেশি জোর করিনি। নিজের ইচ্ছাতেই এই বাড়িতে থাকতে রাজি হয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু আমার মনে হচ্ছে বিষয়টি আমার ভুল হয়েছে।
– ভুল মানে?
– দেখুন, আমি একজন অবিবাহিত মেয়ে। আর আপনাদের বাড়িতে আমার থাকাটা সকলে ভালো চোখে দেখছে না। আমি আর থাকতে পারব না, প্লিজ জোড় করবেন না।

আদৃত কিছু বলল না। প্রতিটা মানুষেরই নিজস্ব কিছু মতমত থাকে, জোর করে চাপিয়ে দেওয়াটা ঠিক নয়।

– কি হলো চুপ করে গেলেন কেন?
– না কিছু না। ঠিক আছে তোমার সমস্যা হলে তুমি চলে যেতে পারো। আমি জোর করবো না।

অতসী আর কিছু বলল না। আরো কিছুক্ষণ কেটে যায়, আদৃত নিজে থেকেই বলল…

– রাত তো অনেক হলো, চলো নীচে চলো।
– হুম, আপনি যান আমি আসছি।
– ওকে।

আদৃত নিচে চলে যেতে, অতসী আরো কিছুক্ষণ থেকে তারপরে নিজের ঘরে কান্নায় ভেংগে পড়ল। কষ্টগুলো পুনরায় নাড়া দিয়ে উঠছে, পুরানো ক্ষতগুলো তাজা হয়ে উঠছে অতসী কি পারবে সবকিছু সহ্য করে টিকে থাকতে।

আদৃত নিজের ঘরে গিয়ে আরুর কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল…

– মারে আমাকে মাফ করে দিস। তোর আন্টিকে তোর কাছে রাখতে পারলাম না আমি।

পরেরদিন…

অতসী নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যেতে যায়। আরু তো কিছুতেই ওকে বাড়ি থেকে যেতে দিতে রাজি নয়, কান্না করে চলেছে।

– মিষ্টিবুড়ি কান্না করো না সোনা। আমি তো প্রতিদিন তোমাকে পড়াতে আসব, আর তুমি যদি কান্না করো তাহলে কিন্তু আর আসবো না।
– সত্যি আসবে তো।
– হুম।

মিতু আরুকে সামলে নিয়ে বলল…

– অতসী বাড়ি থেকে না গেলেই পারতে।

অতসী কিছু বলল না, শুধু হাসলো। অতসীর বাড়ি ছাড়ার সময়ে আদৃত বাড়িতে ছিল না। অতসী নিজের ঠিকানার উদ্দেশ্য রওনা দিলো। যাবার আগে বাড়ির দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলল…

– যদি আমার সামর্থ্য থাকত তাহলে এই মানুষগুলোর জীবনে আর ফিরে আসতাম না। কিন্তু কিছু একটা বড্ড টানে আমাকে, এই বাড়িটা আমাকে বড্ড বেশি টানে। একটা আবেগ কাজ করে, সবটাই কি আরুর জন্য নাকি অন্য কোনো কারন?

অতসী আগের বাড়িতে ফিরে গেছে। অনেকেই অনেককিছু বলছে সেগুলোকে অতসী পাত্তা দেয়নি। বিট্টু আর বাড়িওয়ালা প্রচন্ড রকমের খুশি হয়েছে অতসী ফিরে আসাতে। অতসী সকলের খুশি দেখে মৃদু হাসলো।

দুইদিন পর…

অতসী কলেজে যাবার পরেই শাহানার মুখোমুখি হলো। শাহানা বাঁকা হেসে বলল…

– কিরে খবর শুনেছিস।
– কি খবর।
– মিহান আর জিনিয়ার তো বিয়ে।

অতসীর মাঝে কোনো চঞ্চলতা ফুটে উঠলো না। বরং ওর মুখের কোনে হাসি ফুটে উঠল..

– এটা তো খুব ভালো খবর।
– মানে?
– মানে আবার কি?
– মিহানের বিয়ে তোর মাঝে কোনো ভাবাবেগ দেখা গেল না কেন?
– আমি চাই জিনিয়া আর মিহান ভালো থাকুক। আর একটা কথা বলি, কূটনীতি না করে মানুষের ভালো চাও দেখবে সবাই ভালো বাসবে তোমাকে।

অতসী আর কিছু না বলে চলে গেল। শাহানার মাথাতে কথাগুলো ঘুরতে লাগল…

– মিহান আর জিনিয়া অতসী কে ঠকানোর পরেও অতসী ওদের ভালো চাইছে। অথচ আমি বিনা কারনে মানুষের সাথে ঝামেলা করছি। সত্যি অনেকটা নীচে নেমে গেছি আমি!

শাহানার মধ্যে এই প্রথম অনুশোচনা বোধ হচ্ছে। অতসীর কথাগুলো শুনে নিজের মাঝে অনেক গুলো অনুভূতি হচ্ছে। তাহলে কি শাহানাও বদলে যাবে?

অতসীর সাথে সেইদিন জিনিয়ার আর দেখা হয়নি। পরেরদিন কলেজে গিয়ে অতসী নিজে থেকেই জিনিয়ার মুখোমুখি হলো।

– অভিনন্দন।
– কিসের জন্য?
– তোর আর মিহানের নতুন জীবনের জন্য।
– ধন্যবাদ।

অতসী মিষ্টি একটা হাসি দিলো। জিনিয়া ওর হাসির দিকে তাকিয়ে বলল…

– অতসী তুই কি সত্যি আমার ভালো চাস।
– কোনো সন্দেহ‌! আমি মন থেকে চাই তুই আর মিহান সত্যি ভালো থাক।

জিনিয়া কোনো কথা না বলে অতসী কে জড়িয়ে ধরলো।

– আরে কি করছিস?
– আমাকে মাফ করে দিস অতসী। আমি তোর সাথে অনেক অন্যায় করে ফেলেছি।

অতসী নিজের থেকে জিনিয়াকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল..

– আমি কিছু মনে করিনি। তুই মিহান কে নিয়ে ভালো থাকিস তাতেই আমি খুশি।
– হুম। আমার বিয়ের সমস্ত অনুষ্ঠানে তোকে কিন্তু আসতেই হবে।
– অবশ্যই যাবো।
– ধন্যবাদ।

অতসী জিনিয়ার দিকে তাকিয়ে নিজের মনে মনে বলল…

– তোর‌ বিয়েতে তো আমাকে যে যেতেই হবে। মিহানের এলোমেলো জীবনটার সবকিছু আমাকে জানতে হবে, আর তার জন্য তোদের বিয়েতে আমার উপস্থিত থাকাটা খুব জরুরী।

দিন নিজের গতিতে এগিয়ে চলেছে। জিনিয়ার সাথে অতসীর সম্পর্কটা আগের থেকে কিছুটা স্বাভাবিক। সেইদিনের পর মিহান আর কলেজে আসেনি। শাহানাও কিছুটা বদলে গেছে, অতসী সহ বাকিদের সাথেও আর ঝামেলা করেনা, নিজের মতো কলেজে আসে আবার চলে যায়। শাহানার পরির্বতন ওর বন্ধুদের ভাবিয়ে তুললেও অতসী স্বাভাবিক ছিল। ওহ বুঝেছিল, সেইদিনের কথাগুলো শাহানার আত্মসম্মানে আঘাত করেছে। তাই তো বদলে যেতে শুরু করেছে।

– অতসী।

নিজের নাম শুনে অতসী পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখল শাহানা দাঁড়িয়ে আছে।

– হ্যাঁ বলো।
– সরি।

অতসী মৃদু হাসলো, তারপর শাহানার কাঁধে হাত দিয়ে বলল…

– তুমি নিজেকে শুধরে নিতে শুরু করেছো এর থেকে আনন্দের আর কি হতে পারে। এইরকমই থেকো।

শাহানা অতসীর দিকে তাকাল, সত্যি মেয়েটা অন্য সবার থেকে আলাদা।

– আচ্ছা আমরা কি ফ্রেন্ড হতে পারি।

অতসী কিছু বললো না, বন্ধুত্ব নামক বস্তুটার প্রতি ওর আর একটুও বিশ্বাস নেই। অতসীর মনোভাব কিছুটা আন্দাজ করে শাহানা বলল…

– আমাকে বিশ্বাস করতে পারছ না তাই তো?
– আরে না। আচ্ছা ঠিক আছে,আজ থেকে আমরা বন্ধু।

শাহানার মুখে হাসি ফুটে উঠল। অতসীও হাসলো।

অন্যদিকে…

আরুকে নিয়মিত পড়াতে গেলেও আদৃতের মুখোমুখি হয়নি। আদৃত ইচ্ছা করেই অতসীর সামনে আসেনি সেটা ভালো করেই বুঝতে পারছে অতসী। অতসী নিজে থেকে আর কিছুই বলেনি।

অতসী ক্যান্টিনে গিয়ে বসার কিছুক্ষণের মধ্যে জিনিয়া ওর‌ সামনে এসে বসল।

– ওই তোর সাথে আমার একটা কথা আছে।
– কি কথা।
– আমার বিয়ে সামনের রবিবার। তোকে কিন্তু বৃহস্পতিবার থেকে আসতে হবে।
– বৃহস্পতিবার এতদিন আগে থেকে গিয়ে আমি কি করব।
– প্লিজ, প্লিজ।
– আচ্ছা ভেবে দেখছি।

জিনিয়ার সাথে অতসী কিছুক্ষণ কথা বলে , তারপর আদৃতের বাড়িতে যায় আরুকে টিউশনি পড়াতে।
আরুকে পড়ানোর মাঝে অতসী বারবার আনমনা হয়ে যাচ্ছে, মিতু আরুর ঘরে উঁকি নিয়ে দেখল অতসী আনমনা হয়ে বসে আছে। অতসীর কাঁধে হাত দিয়ে মিতু বলল…
– কোনো সমস্যা অতসী।
– না কিছু না।
– আমাকে বলতে পারো।

অতসী চোখের ইশারায় বোঝাল, আরুকে পড়ানোর পর বলছে। মিতু মাথা নাড়িয়ে চলে যায়। আরুকে পড়ানো শেষ করার পর অতসী মিতুকে বলল…

#চলবে…

#প্রয়োজনে_প্রিয়জন
#পর্ব_২১
#তানজিলা_খাতুন_তানু

-মিতু তোমার দাদা কোথায়!

অতসীর মুখে আদৃতের খোঁজ শুনে মিতু একটু চমকে উঠল। তবে সেটা প্রকাশ না করেই অতসীকে বলল…
– নিজের ঘরেই আছে। কোনো দরকার!
– হুম একটা দরকার ছিল আমার।
– আচ্ছা তুমি যাও।
– হুম।

অতসী ধীর পায়ে আদৃতের ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে দরজায় টোকা মারল। আদৃত অফিস থেকে ফিরে ফোন নিয়ে বিছানাতে শুয়ে ছিল, দরজায় টোকা মারার শব্দ পেয়ে বসে দেখল অতসী দাঁড়িয়ে আছে।

– ভেতরে আসব।
– হুম।

অতসী ঘরে ঢুকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। কি বলতে এসেছিল, আর কি করছে। অতসী ভালো করেই বুঝতে পারছে, আদৃত ওর দিকে তাকিয়ে আছে যেটা ওর জড়তাকে আরো গভীর করে তুলেছে।

– কিছু কি বলবে।
– হুম।
– কি বলো।

– আপনি আমার সাথে কথা বলেন না কেন?
কথাটা অতসী চট করে বলে উঠল, আদৃত অবাক চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। অতসী নিজেই কথাটা বলে জিভ কাটল, উত্তেজিত হয়ে কি না কি বলে দিয়েছে।

– মানে টা কি?

অতসী কিছু বলল না। আদৃত আবারো বলল..
– তুমি কি চাও আমি তোমার সাথে কথা বলি?

অতসী চুপ করে থাকল। কথাটা বলে নিজেই অস্বস্তিতে পড়ে গেছে, এখন কি উত্তর দেবে?

– কি হলো চুপ করে গেলে কেন? বলো।

অতসীর নিরবতা দেখে, আদৃত বলল…
– বাদ দাও এইসব কথা। কি বলতে এসেছে বলে ফেলো।
– কিছু না। আমি গেলাম।

অতসী একপ্রকার দৌড়ে পালিয়ে যায়। আদৃত অতসীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল..
– পাগলী একটা।

অতসী কাউকে কিছু না বলেই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়ে। আদৃত কে কি বলতে গিয়ে কি বলে দিয়েছে, নিজেই জানে না। হঠাৎ করেই, মানুষটির‌ কাছে এতটা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে কেন?

পরেরদিন কলেজে এসে অতসী জিনিয়াকে বলল..

– আমি বৃহস্পতিবার যেতে পারব না। শনিবার ঠিক যাবো।
– সত্যি তো।
– হুম।

কলেজে আর কারোর‌ সাথেই শাহানার ঝামেলা হয়নি। শাহানা অতসীর সাথে ভালো বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি করে ফেলেছে। ক্যান্টিনে বসে দুইজনে আড্ডা দিচ্ছিল, তখনি শাহানা‌ বলে উঠল..

– এই অতু, জিনিয়ার বিয়েতে কি উপহার দিবি কিছু ভাবলি।

কথাটা বলতেই অতসীর মুখটা ছোট্ট হয়ে গেল। সত্যি এই কথাটা সবকিছুর মাঝে বেআলুম ভুলে গিয়েছিল। অতসীর মুখের দিকে তাকিয়ে জিভ কাটল শাহানা, তারপর মেকী হাসি ফুটিয়ে বলল…

– সরি মাফ করে দিস। আমি উত্তেজিত হয়ে বলে ফেলেছি। আচ্ছা বাদ দে এইসব, আমার সাথে কেনাকাটা করতে যাবি?
– না তুই যা।
– আচ্ছা আমি তাহলে গেলাম।‌

শাহানা কেনাকাটা করতে চলে যায়। অতসী ভাবনাই পড়ে গেল জিনিয়াকে দেওয়া উপহার নিয়ে। অতসী টিউশনি পড়িয়ে বাড়ি ফিরতেই বিট্টু বলল..

– দিদি তোমার জন্য কিছু জিনিস এসেছে।
– আমার জন্য।
– হুম।
– কে দিয়ে গেল।
– একটা মেয়ে, বললো তোমাকে দিয়ে দিতে।
– আচ্ছা তুই ঘরে রেখে যা। আমি দেখে নেব।
– আচ্ছা।

বিট্টু প্যাকেটগুলো বিছানাতে রেখে চলে গেল। অতসী ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় রাখা প্যাকেটগুলো খুলে দেখতে লাগল। একটা শাড়ি, একটা লেহেঙ্গা, দুটো গাউন আর তার সাথে মানানসই কসমেটিক ও জুয়েলারি। অতসীর কপাল কুঁচকে গেল, কে পাঠিয়েছে সেটা বুঝতে পারল না। প্রথমেই মিতুর মুখটা ভেসে উঠল, পরক্ষনেই মনে হলো …

মিতু তো কয়েকদিন কলেজে যায়নি ওর জানার কথা নয় যে, জিনিয়ার সাথে ওর সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে। তাহলে কে!

রাতে বিট্টু অতসীর কাছে পড়তে আসলে, ওহ বিট্টুকে জিজ্ঞেস করল…

– হ্যাঁ রে, যে মেয়েটা তোকে প্যাকেটগুলো দিয়ে গেছে তাকে দেখলে তুই চিনতে পারবি।
– হুম।

অতসী কলেজের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে গিয়ে মিতুর ছবিটা দেখিয়ে বলল…
– এই মেয়েটা?
– না।

অতসী তারপর জিনিয়ার ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল…
– এই মেয়েটা?
– না।
– এটাও না। তাহলে কে? আচ্ছা তুই পড়।

অতসী ভাবনায় ডুবে গেল, কে দিয়েছে সেটাই বুঝে উঠতে পারছে না। ভাবনার মাঝে হঠাৎ করে উঠে একটা ছবি দেখিয়ে বলল…
– এটা কি?
– হুম, এই মেয়েটাই আমাকে প্যাকেটগুলো‌ দিয়েছিল।

বিট্রুর কথা শুনে অতসীর মুখ গম্ভীর হয়ে গেল।
– দিদি কিছু কি হয়েছে?
– না তুই পড়।

পরেরদিন কলেজে,

শাহানা একা ক্লাসে বসে ছিল, এই ক্লাসটা হবে না তাই সকলেই বেড়িয়ে গেছে। ওহ কিছু কাজ করছিল ক্লাসে বসেই। হুট করেই ওর সামনে অনেকগুলো প্যাকেট পড়াতে চমকে উঠল। সামনে তাকিয়ে দেখল, অতসী রাগী চোখে তাকিয়ে আছে। শাহানা কিছু বলতে যাবে তখনি অতসী গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠল…

– এইসব কি শাহানা?

অতসীর রাগ দেখে শাহানা একটা ঢোক গিলে বলল…
– আসলে,
– কি আসলে নকলে করছিস, বল।
– আমি ভাবলাম তোর ভালো ড্রেস নেয় তাই।
– বাহ্। আমাকে না জানিয়েই পাঠিয়ে দিল, কেন তোর কি আমাকে এতটাই অসহায় মনে হয় যে অন্যের দেওয়া ড্রেস দিয়ে আমাকে একটা অনুষ্ঠানে যেতে হবে।
– রাগ করছিস কেন? আমি এইভাবে
– তুই কিভাবে পাঠিয়েছিস আমি জানি না। আমি এই জিনিসগুলো নিতে পারব না, আমাকে মাফ কর।
– কিন্তু অতসী।
– কোনো কিন্তু নয় আমি নেব না মানে নেব না।
– কিন্তু আমি এতগুলো টাকা দিয়ে জিনিসগুলো নিলাম, তুই না দিলে টাকাগুলো তো‌ পানিতে পড়বে।
– ফেরত দিয়ে দিবি।
– ওই শপিং মলে ড্রেস রির্টান হয়না।
– যদি ড্রেসগুলো ফেরত দিতে না পারিস তাহলে অন্য কাউকে দিয়ে দিস। আর বিলটা আমিই দিয়ে দেব।
– তুই বিল দিবি! (বিদ্রুপ করে বলল শাহানা)

অতসী কিছু বলল না। শাহানা আবার বলল…

– একেকটা ড্রেসের দাম জানিস। তোর কি মনে হয় এইগুলোর একটা ড্রেসের ওহ দাম দিতে পারবি তুই? পড়িস তো ওই সস্তা দামের কয়েকটা সালোয়ার কামিজ। পারবি এতগুলো টাকা দিতে।

শাহানা সরাসরি অতসী কে অপমান করল, সেটা বুঝেও অতসী চুপ করে ফোনে কিছু একটা করতে থাকে।
– কিরে এখন চুপ করে গেলি কেন? উত্তর দে!

তখনি শাহানার ফোনে একটা মেসেজ আসলো। অতসী ওর দিকে তাকিয়ে বলল…
– ফোনটা একবার চেক কর।

শাহানা কিছু না বুঝে, মেসেজটা সিন করে চমকে উঠল। ওর ব্যাংকে ৩০হাজার টাকা ঢুকেছে ‘অতসী খাঁন’ নামক একাউন্ট থেকে। অতসীর ঠোঁটের কোনে বাঁকা হাসি। শাহানা অবাক হয়ে একবার ফোনের দিকে আর একবার অতসীর দিকে তাকাচ্ছে। অতসী মুখের হাসিটা আর একটু চওড়া করে বলল..

– কি হলো, চমকে গেলি যে!
– তুই এতগুলো টাকা….

শাহানাকে পুরোটা বলতে না দিয়ে অতসী বলল..
– তোর দেওয়া ড্রেসগুলোর দাম আমি আগেই দেখেছি। আর যে টাকাটা দিয়েছি তাতে ওইরকম আরো চারটে ড্রেস হয়ে যাবে তাই না। বাকি টাকাটা দিয়ে, নিজের জন্য কিছু কিনে নিস কেমন।

অতসী কথাগুলো বলে চলে যায়। শাহানা অবাক চোখে তাকিয়ে রইল, অতসীর কাছে এতগুলো টাকা কিভাবে আসলো সেটা বুঝে উঠতে পারল না। অতসী বেড়িয়ে যেতেই শাহানার বন্ধু ওর‌ সামনে এসে দাঁড়াল…

– কি হলো‌ শাহানা।
– সব ড্রেস ফেরত দিয়ে গেছে।
– তাহলে তো তোর সব প্ল্যান পানিতে পড়ল,সাথে টাকাগুলো ও।
– টাকাগুলো দিয়ে গেছে।
– মানে?
– ৩০ হাজার টাকা আমার ব্যাংকে পাঠিয়েছে।
– ওহ এতগুলো টাকা পেল কোথায়?
– সেটা তো আমার ওহ প্রশ্ন। আর আমার ব্যাংক একাউন্ট কিভাবে পেল সেটাই বুঝতে পারছি না।

মেয়েটি শাহানার কাঁধে হাত রেখে বলল…
– তাহলে এখন কি করবি।

শাহানা ভাবুক হয়ে উত্তর দিলো…
– জানি না। তবে অতসীর মাঝে অনেক অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে। কিন্তু সেইগুলো কি?

#চলবে…

#প্রয়োজনে_প্রিয়জন
#পর্ব_২২
#তানজিলা_খাতুন_তানু

অতসী ভালো করেই বুঝে গেছে, শাহানার আসল রূপ। মন খারাপ করে ক্যান্টিনে গিয়ে বসল, এখন করে ছোট্টুও ক্যান্টিনে থাকে না নিয়মিত স্কুলে যায় তাতে অবশ্য অতসী খুব খুশি।

অতসী কে মন খারাপ করে বসে থাকতে দেখে মিতু ওর পাশে বসে বলল…
– কি হয়েছে। এইভাবে বসে আছো কেন?
– না একটা কথা ভাবছি।
– কি কথা।
– কিছু মানুষ থাকে যারা কখনোই বদলে যাবার নয়।
– হঠাৎ এই কথা
– না এমনিতেই।

মিতু আর কথা বাড়ালো না। ক্লাস থাকাতে ওহ বেড়িয়ে যেতেই অতসী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া আর কিছুই করার নেয় ওর।

সন্ধ্যাবেলা,

অতসীর মনটা ভীষন রকমের খারাপ, আজকে পড়াতে ভালো লাগছে না।

– মিষ্টি বুড়ি চলো আজকে দুইজনে আড্ডা দেব।
– সত্যি।
– হুম। আচ্ছা বইগুলো আগূ গুছিয়ে নাও তারপরে গল্প করব ওকে।
– ওকে।

আরু তাড়াতাড়ি সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে বলল…
– আন্টি এইবার বলো।
– তোমার পছন্দের রং কি!
– আমার তো সবকিছু রং-ই ভালো লাগে। তোমার কোন রংটা ভালো লাগে?
– আমার নীল।
– আমার বাপির ওহ নীল রঙ খুব পছন্দ।
– তাই
– হুমম। আচ্ছা আন্টি তোমার সবথেকে প্রিয় মানুষ কে?
– আমার প্রিয় মানুষ!
– হুম বলো।

অতসী ভাবনায় পড়ে গেল, চোখের সামনে পুরানো কিছু স্মৃতি ভেসে উঠতে লাগল। চোখের কোনে পানি চিকচিক করতে শুরু করেছে,

– আন্টি কি হলো? তোমার চোখে পানি কেন?
– না সোনা কিছু না। তা তোমার প্রিয় মানুষ কে?
– বাপি, দিদুন, মনি আর তুমি।
– আমি!
– হুমম, তোমাকে আমি খুব ভালোবাসি 😘
– তাই।

অতসী আরুকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে লাগল। নিজের রুমের দিকে যাবার সময়ে, আদৃত খেয়াল করল অতসী আর আরু একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আছে। কি অপরূপ দৃশ্য, আদৃত নিজের লোভ সামলাতে পারল না পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে দৃশ্যটা ক্যামেরা বন্ধী করে নিলো।

অতসী আরো কিছুক্ষণ আরুর সাথে সময় কাটিয়ে বাড়ি ফিরতে যাবে বলে বের হবে তখনি আদৃত পেছন থেকে বলে উঠল…
– শুধুমাত্র মেয়েকে আদর করলে হবে? মেয়ের বাবাকেও তো করতে হবে!

অতসী চোখ বড়ো বড়ো করে তাকাল আদৃতের দিকে।

– আপনি কি সব বলছেন?
– না কিছু না। তবে একটা জিনিস দেখবে!
– কি?

আদৃত অতসীকে নিজের ফোনে তোলা ছবিটা দেখাল, অতসী আরুকে জড়িয়ে ধরে আছে। অতসী দৃশ্যটা দেখে মুগ্ধ হলো।

– কি সুন্দর।
– ভালো লাগছে!
– হুম।
– আমি যে এত সুন্দর ছবি তুললাম তার জন্য কোনো ট্রিট দেবে না।
– কি চান আপনি?
– আমার মেয়ের দায়িত্ব নিতে পারবে!

অতসী চমকে উঠল আদৃতের কথা শুনে। কি বলবে কিছুই বুঝে উঠতে পারল না।

– এত টেনশান নেবার কোনো কারন নেয়, আমি এমনি কথাগুলো বললাম। তুমি ভালো করে বাড়ি ফিরবে কেমন।
– হুমম।

অতসী বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেল। আদৃত অতসীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলল…

– সত্যি কি কখনো তুমি আমার মেয়ের দায়িত্ব নেবে না অতসী! আমার মেয়েটাকে যে তুমি ছাড়া আর কেউ ভালো রাখতে পারবে না।

অতসী বাড়ি ফিরে রান্না বসালো, পেটে ছুঁচো দৌড়াচ্ছে। রান্না বসিয়ে নোটস গুলো একটু খুলে‌ দেখছিল তখনি ফোন বেজে উঠল।‌ অতসী ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল, জিনিয়া কল করছে।

– হ্যালো বল।
– তুই কবে আসছিস?
– শনিবার যাবো।
– সত্যি আসবি তো।
– হুম।
– আচ্ছা শোননা আমাদের রির্সোটে বিয়ে হচ্ছে।
– ওহ।
– আমি তোকে ঠিকানাটা পাঠিয়ে দেব। তুই তাড়াতাড়ি চলে আসবি কিন্তু।
– হ্যাঁ রে।
– হুম।আচ্ছা তাহলে রাখছি।
– ওকে।

অতসী ফোনটা কেটে দিয়ে রান্নায় মনোযোগ দিলো। তবুও মন সেইদিকেই পড়ে আছে, অনেককিছু প্রশ্নই মনে কড়া নাড়ছে,তার উত্তর কি আদৌও পাবে!

অন্যদিকে…

রাতে খাবার টেবিলে আদৃতের মা আদৃত কে বললেন…

– আদৃত খাওয়া শেষ করে একবার আমার ঘরে আসবে।
– আচ্ছা।

খাওয়া শেষ করে আদৃত নিজের মায়ের ঘরে গিয়ে বসল।

– মা কিছু বলবে।
– হুম। তোমার সাথে আমার একটা কথা আছে।
– কি কথা।
– আমি আবারো বলছি, নিজের ভবিষ্যতের কথা একবার চিন্তা করো। তোমার একজন সঙ্গীর‌ প্রয়োজন, আরু দিদিভাইয়ের একজন মা দরকার। আমি আজ আছি কাল নেয়,মিতুর ওহ বিয়ে হয়ে যাবে। একজনের দরকার খুব।
– হুমম।
– আমি চাই তুমি বিয়ে করো।
– আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি বিয়ের ব্যবস্থা করো। আমি বিয়ে করব, তবে একটা শর্তে আমার মেয়ের দায়িত্ব নিতে‌ হবে তাকে।
-আচ্ছা। তোমার কি কাউকে পছন্দ আছে?

আদৃত একবার ভাবল, নিজের চোখের সামনে আরু আর অতসীর জড়িয়ে ধরার দৃশ্যটা ভেসে উঠল। তবুও বলে উঠল..

– না। তুমি মেয়ে দেখো।
– আচ্ছা।

আদৃত চলে যায়। আদৃত বেড়িয়ে যাবার পরেই মিতু ঘরে ঢুকল,

– মা দাদাভাই কি বলল।
– রাজি।
– সত্যি।
– হুম।

মিতুর মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠল কিন্তু আদৃতের মায়ের মুখটা গম্ভীর হয়ে আছে। বড্ড চিন্তিত হয়ে আছেন উনি।

২দিন পর…
অতসী হলুদ রঙের একটা গাউন পরে রেডি হয়ে দরজায় তালা দিতে লাগল, তখনি বিট্টু বলল…
– দিদিভাই তোমাকে কি সুন্দর লাগছে। তুমি কি কোথাও যাচ্ছে।
– হুম একটা বিয়ে বাড়ি আছে।
– ওহ।
– কয়েকদিন পর চলেই আসব।‌তুই নিজের‌ খেয়াল রাখিস কেমন!
– হুমম।

বিট্টুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে অতসী বেড়িয়ে পড়ল। জিনিয়ার বিয়ে রির্সোটে হচ্ছে, সেইখানে মিহানও থাকবে। অতসী ভালো করেই জানে, ওকে মিহানের মুখোমুখি হতেই হবে।

জিনিয়ার দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী অতসী পৌঁছে গেল। বিরাট বড়ো রির্সোটটা ওর যে বড্ড চেনা, নিমিষেই চোখের কোনে পানি জমা হতে লাগল। নিজের মন অতসী কে একটা কথাই বলে চলেছে,

– অতসী ফিরে যা। এইখানে থাকলেই তোর অতীত আবারো তোর চোখের সামনে চলে আসবে!

পরক্ষনেই আবার অতসীর মস্তিষ্ক বলছে,

– অতসী ফিরে যাওয়া মানেই হেরে যাওয়া। ফিরে গেলে মিহানের জীবন সম্পর্কে আর কিছুই জানতে পারবি না। যাই হয়ে যাক তুই পিছিয়ে পড়িস না।

মন-মস্তিষ্কের লড়াইয়ে অতসী কি করবে বুঝে উঠতে পারল না। নিজের মনকে গুরুত্ব দেবে না মস্তিষ্ককে। ভয়কে জয় করবে না ভয়ে পিছিয়ে যাবে?

শেষে অতসী সিদ্ধান্ত নিলো, না পিছিয়ে যাবে না। ওকে সবটা জানতেই হবে। অতসী ধীর পায়ে রির্সোটের গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করল। এইখানে কাউকেই চেনে না, কাকে কি বলবে সেটাই বুঝে উঠতে পারল না। অতসী এদিক ওদিক জিনিয়া বা মিহান কে খুঁজে চলার চেষ্টা চালাচ্ছে, কিন্তু কাউকেই পাচ্ছে না। অতসী কে এদিক ওদিক তাকাতে দেখে একজন এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল..

– কাউকে খুঁজছেন আপনি?

কারোর কন্ঠস্বর শুনে অতসী পেছনে ফিরে তাকাতেই সামনের মানুষটি চমকে উঠল…

– অতসী!

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে