#প্রয়োজনে_প্রিয়জন
#তানজিলা_খাতুন_তানু
#পর্ব_২+৩
অতসীর শরীরটা ঠিক ভালো লাগছে না, সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে জীবনটাই কিরকম একটা গোলক ধাঁধার মাঝে রয়েছে, মাঝে মধ্যে নিজেকে শে’ষ করে দিতে মন করে কিন্তু কিছু একটার জন্য পারে না।
জিনিয়ার মেজাজ খুব হাই হয়ে আছে, অতসীর কাছে থাপ্পর খাওয়াটা ঠিক হজম করে উঠতে পারেনি। অতসীর সাথে প্রায় একবছর আছে কখনোই ওকে এইভাবে রেগে যেতে দেখেনি যদিও আজকের মতো ঘটনা পূর্বে ঘটেনি। অতসীর দেওয়া চড়টা জিনিয়ার ইগোতে লেগেছে।
পরেরদিন, অতসীকে কলেজে আসতে দেখে অনেকেই খুব অবাক হল। অতসী কোনো কিছুকে পাত্তা না দিয়ে ক্যান্টিনে গিয়ে চা অর্ডার করল। এদেরকে পাত্তা দেওয়া মানেই ছোট হওয়া,তাই সোজাসুজি ইগনোর কর।
ক্যান্টিনের ছেলেটা অতসীকে চা দিয়ে গেল, অতসীর সেইদিকে খেয়াল নেয়, চুপচাপ ফোনের ভেতরে মাথা ঢুকিয়ে আছে।
– এক্সকিউজ মি।
কারোর কন্ঠস্বর শুনে অতসী মাথা তুলে তাকিয়ে দেখল একজন সুন্দরী মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
– জ্বি আমাকে বলছেন?
– হ্যা। আমি কি এইখানে বসতে পারি।
– শিওর।
মেয়েটা অতসীর পাশে বসল। অতসী ফোন থেকে মাথা তুলে নিজের অর্ডার করা চায়ের কাপটা মুখে দিতে যাবে তখনি ওইপাশের মেয়েটা বলল…..
– আমি মিতু তোমার কি ফ্রেন্ড হতে পারি।
অতসীর কাছে কথাটা একটু অবাক লাগল। হুট করেই একজন এসে ফ্রেন্ডশীপ করার মানেটা বুঝে উঠতে পারল না। এর পেছনে মেয়েটার কি স্বার্থ লুকিয়ে আছে কে জানে?
– কি হলো কিছু বলছ না কেন?
– কিছু মনে করবেন না,,তবে নতুন করে কাউকে বন্ধু করে ছ্যাকা খাওয়ার কোনো ইচ্ছা আমার নেয়।
– তুমি হয়ত আমাকে চেনো না, কিন্তু আমি তোমাকে চিনি আর কালকের ঘটনাটা সবটাই আমি দেখেছি।
অতসী কিছু বলল না। কলেজে আসলেও ক্লাস, লাইব্রেরীতেই সময় কেটে যায়, বাইরের কারোর সাথেই তেমন কোন একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেনি জিনিয়া ব্যতিত।
– আমিও সেকেন্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট তবে তোমার আর আমার ডির্পামেন্ট আলাদা তাই হয়ত তুমি আমাকে চেনো না।
– হয়ত।
– কি আমার সাথে বন্ধুত্ব করবে?
– সত্যি কথা বলছি কিছু মনে করবেন না দয়া করে, আমি আর ক্ষত বিক্ষত হতে চাই না। আপনি যখন কালকের ঘটনাটা দেখেছেন,হয়তো ঘটনা সম্পর্কে কিছুটা হলেও জানেন। মানুষের প্রতি বিশ্বাসটা না আমার উঠে গেছে।
অতসীর এইরকম কথা শুনে মিতুর মুখে আঁধার নামল। এইরকম কিছু আশা করেনি,হ্যা সে জানত অতসীর মন ভেঙেছে কিন্তু ভেঙে যে শক্ত হয়ে গেছে এটা বুঝে উঠতে পারেনি।
তবুও মুখের কোনে হাসি ফুটিয়ে বলল…
– সবাই কি এক হয়।
এইরকম কথা শুনে অতসীর মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠল, নিজের ঠোঁটের কোনে অদ্ভুত হাসিটাকে বজায় রেখেই বলল…
– আলাদা আর কজন মানুষ হয় দিনশেষে তো আমরা সকলেই স্বার্থপর। নিজের স্বার্থ ছাড়া এক মুহুর্ত চলতে পারি না, শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থে অপর একজন মানুষকে “প্রয়োজনে প্রিয়জন” করি। প্রয়োজন মিটে গেলেই ছুঁড়ে ফেলে দিতে দুইবার ভাবি না। আমি আর কারোর প্রয়োজন বা প্রিয়জন কোনটাই হতে চাই না একা একটু ভালো করে বাঁ’চতে চাই প্লিজ আমাকে বাঁ’চতে দিন নিজের মতো করে।
কথাগুলো মিতুর কাছে কটু লাগলেও অতসী ঠিক কতটা আঘাত থেকে কথাগুলো বলেছে সেটা একমাত্র সেই জানে। প্রতিটা মানুষই নরম থাকে, পরে আঘাতে আঘাতে কঠোর হয়ে যায়।
– ঠিকাছে আমি তোমাকে জোর করব না। তবে কখন যদি তোমার মনে হয়, এই মিতু তোমার বন্ধু হবার যোগ্য। তাহলে একবার আমার কাছে এসে বলো, আমি বিনাবাক্যে তোমাকে নিজের বোন,বন্ধু করে নেব। আমার জীবনে তোমার জায়গাটা সারাজীবনের জন্য খোলা আছে। নিজের খেয়াল রেখো অতসী।
মিতু চলে যায়। অতসী মিতুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবল.. কতরকমের মানুষ হয়,কেউ স্বার্থে ব্যবহার করে আর কেউ নিঃস্বার্থ ভাবে করে যায়। আচ্ছা অতসীর জীবনে কি কেউ আসবে না যে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসবে ওকে।
জিনিয়া আর অতসীর ডিপার্টমেন্ট এক। তাই ওদের দুজনকে দুজনের মুখোমুখি হতেই হবে। অতসী সেইসব কথা পাত্তা না দিয়ে ক্লাসরুমে ঢুকতেই দেখল, সকলেই অদ্ভুত দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। প্রথমে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে থাকলেও,
পরে প্রচন্ড অস্বস্তি বোধ হচ্ছে সবার চাহনীতে। অতসীর চোখ পড়ল ফার্স্ট বেঞ্চে, জিনিয়া একা বসে আছে। একটা মেয়ে অতসীকে দেখা মাত্রই টিস করে বলে উঠল…
– আরে দ্যাখ দ্যাখ আমাদের ক্ষ্যাতমার্কা অতসী চলে এসেছে। (কথাটা বলে হেসে উঠল সকলে মিলে) এতদিন অনেক দেমাগ ছিলো না জিনিয়ার সাথে বন্ধুত্ব ছিলো বলে, এখন কি করবি! এখন তোকে কে বাঁ”চাবে আমাদের হাত থেকে। ( শেষের অংশটা কিছুটা রাগ দিয়েই বলল)
জিনিয়া বড়লোক বাবার মেয়ে হবার জন্য ক্লাসের কেউই ওর সাথে লাগত না। অতসী জিনিয়ার বন্ধু হওয়াতে ওর সাথেও সকলেই ভালো ব্যবহার করত।বর্তমানে ওদের মাঝে সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাওয়াতে, সকলেই সুযোগ পেয়ে গেল অতসীকে নিয়ে মজা করার।
এইসব কথা শুনে অতসীর জন্য জিনিয়ার খারাপ লাগলেও, অতসীর দেওয়া চড়ের বদলা নেয়ার জন্য চুপ করে থাকল।
– এই অতসী আজ থেকে আমরা যা বলব তাই করবি। ঠিক যেমনভাবে এই হলের সকলে আমাদের কথা শুনে চলে ঠিক এইভাবেই।
অতসী কথাটা শুনে সকলের দিকে একবার তাকাল। এইসব কথা বলা মেয়েটির নাম শাহানা। আরেক বিগড়ে যাওয়া সন্তান, মোট ৭ জন ছেলে মেয়ে নিয়ে ওদের গ্যাং। ক্লাসের সকলকেই ভয়ে তটস্থ করে রাখে, যা ইচ্ছা কাজ করে বেড়ায়। অতসীর চোখে খুব একটা এই বিষয়গুলো পড়েনি। ক্লাস শেষে কলেজে আড্ডা দেবার মত সময় ওর হাতে থাকত না,হয় টিউশনি করতে আর না হয় লাইব্রেরীতে গিয়ে পড়াশোনা করত। আর যেটুকু সময় থাকত সেটাতে জিনিয়ার সাথে থাকত।
শাহানার সাথে থাকা একটা মেয়ে বলল..
– এই অতসী যা তো আমাদের জন্য ক্যান্টিন থেকে কফি নিয়ে আয়।
– আমি কী তোদের কেনা গোলাম নাকি?
অতসীর কথা শুনে শাহানার মাথা গরম হয়ে গেলো।
– অতসী আমাদের সাথে লাগতে আসিস না, চুপচাপ যেটা বলছি সেটা কর।
– লাগতে আমি আসিনি তোরা এসেছিস তাই শেষটা আমিই করব। আর কি বললি , তোরা যেটা বলছিস সেটা করব,ওকে ওয়েট আমি কফি নিয়ে আসছি।
অতসী কাউকে কিছু বলতে না দিয়ে ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে গেল। সকলে চুপচাপ অতসীর কান্ড দেখতে লাগলো। অতসী ক্যান্টিনে গিয়ে বলল…
– ছোটু ৭ টা স্পেশাল কফি করে তো।
– স্পেশাল কফি মানে কিরকম দিদি?( ছোটু সরল মনে প্রশ্ন করল)
– কফি,দুধ,চিনির সাথে লবন আর লঙ্কাগুড়োর মিক্সড।
– কী? ( চমকে উঠে)
– হ্যা যেটা বলছি কর না।
– না দিদি আমি পারব না,আমার ভয় লাগছে খুব।
– আরে পাগলা তোর দিদি থাকতে তোর চিন্তা কিসের, আমি আছি না কিছু হবে না। তোকে যেটা বলছি সেটা কর।
– আচ্ছা।
ছোটু অতসীর কথামতো ৭ টা স্পেশাল কফি নিয়ে হাজির হল ওর সামনে।
– সাব্বাশ ছোটু। চল আমার সাথে।।
– আমি ( ভয় পেয়ে)
– হ্যা চল।
ছোটু অতসীর সাথে এসে, ওর কথামতো সকলের হাতে কফির গ্লাসগুলো ধরিয়ে দিল।
– নাও খাও কফি।( বাঁকা হেসে অতসী বললো)
সকলে কফি গালে দিতেই চোখ মুখ কান দিয়ে ধোঁয়া বের হবার জোগাড়। পানি খাবার জন্য সকলে ছটফট করছে, ক্লাসের সকলেই অবাক হয়ে দেখছে ওদের কান্ড, কিন্তু কেউ কিছু বুঝতে পারছে না।
শাহানা খুব রেগে গেলো, ওর বুঝতে অসুবিধা হলো না কাজটা কে করেছে।
– তোর সাহস কিভাবে হল আমাদের কফিদের লবন,লঙ্কা মেশানোর।
– স্পেশাল কফি তো এইরকমই হয়।
– তোর বড্ড সাহস বেড়েছে, দেখিস তোর হাল আমি কি করবো। তোকে না যদি কলেজ থেকে বের করেছি আমার নাম শাহানা নয়।
– যা ইচ্ছা তাই কর। আর হ্যা আমাকে দূর্বল ভাবার মতো ভুল করিস না ,, আগুন নিয়ে খেলা করলে নিজের হাতটা কিন্তু আগে পুড়ে যায় কথাটা মাথায় রাখিস।
অতসী ছোটু কে নিয়ে ক্লাসের বাইরে চলে গেল ক্লাসের সকলের অতসীর নতুন রূপ দেখে অবাক হচ্ছে। জিনিয়াও হতবাক অতসীর এইরকম রূপ দেখে, নিজের মনেই বিরবির করে বলে উঠল…
– এ কোন অতসীকে দেখছি আমি?
#চলবে…..
সকলের রেসপন্স চাই। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
#প্রয়োজনে_প্রিয়জন
#তানজিলা_খাতুন_তানু
#পর্ব_৩
অতসী ছোটু কে বাইরে নিয়ে এসে হাসতে শুরু করল। আচ্ছা করে শাহানাদের জব্দ করতে পেরে ও খুব খুব খুশি। এর পরে ঠিক কি কি হবে সবটাই ওর জানা। তাই ক্লাসরুমে না গিয়ে চুপচাপ ক্যান্টিনে বসে থাকল।
৩০ মিনিটের মধ্যেই পিয়ন এসে অতসী আর ছোটু কে বলল.
– প্রিন্সিপাল স্যার তোমাদের ডেকেছেন তাড়াতাড়ি যাও।
অতসী যেন এটারই অপেক্ষা করছিলো,পিওনের কথা শুনে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ছোটু কে ইশারা করলো যাবার জন্য কিন্তু ছোটু কিছুতেই রাজি হচ্ছিল না যাবার জন্য।
– আহ ছোটু বলছি তো যেতে।
– না দিদি আমি যাবো না আমার ভয় লাগছে।
– তুই তোর এ দিদিকে বিশ্বাস করিস তো।
– হুম।
– তাহলে চল।
ছোটু অতসীর হাতটিকে জড়িয়ে ধরল। ছোটুর বয়স ১৩+, কলেজ ক্যান্টিনে বেয়ারার কাজ করে। বাবা হারা, মা আর ছোট দুই ভাই বোনকে নিয়ে পরিবার। মা সংসার চালানোর জন্য লোকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করে,আর ছোটু ক্যান্টিনে বেয়ারার কাজ করে সংসার চালায়। স্কুলেও যাওয়া হয়ে উঠে না।
অতসী প্রিন্সিপালের রুমে পারমিশন নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে দেখল, শাহানার গ্রুপ একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। প্রিন্সিপাল স্যার ওর দিকে তাকিয়ে বললেন….
– শাহানা’রা যেই গুলো বলছে সেইগুলো কি সত্যি অতসী?
ছোটু ভয়েতে অতসীর হাতটাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। অতসী ছোটুর দিকে তাকিয়ে, শাহানার দিকে একপলক তাকাল,শাহানার চোখে মূখে শয়তানির হাসি। ও সাধারণ ভাবেই বলে উঠল….
– কি কথা স্যার।।
– শাহানা বলছে তুমি নাকি ওদেরকে লবন আর লঙ্কাগুড়োর মিক্সড কফি খাইয়েছ।
– স্যার আপনি আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দেবেন
– কি প্রশ্ন(ভ্রু কুঁচকে)
– আমি এই কলেজের কে হয়?
এইরকম প্রশ্ন শুনে শাহানা, প্রিন্সিপাল স্যার সহ বাকি স্যারগুলো অবাক হল।
– এইটা আবার কি ধরনের প্রশ্ন অতসী।( অন্য একটা স্যার)
– প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে অন্য দিকে কথা চলে যাচ্ছে, এতে কিন্তু কোনো কিছুই পরিস্কার হবে না স্যার। তাই আমি অনুরোধ করছি আমার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার।
অন্য একটা স্যার কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু প্রিন্সিপাল স্যার বলতে না দিয়ে বললেন…
– অবশ্যই তুমি এই কলেজের একজন স্টুডেন্ট।
– স্যার আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন। এই কলেজটা কি কারোর পারিবারিক সম্পত্তি?
– কখনোই না এটা একটা সরকারী প্রতিষ্ঠান এইখানে সবার সমান অধিকার।( প্রিন্সিপাল স্যার উত্তর দিলেন)
– তাহলে স্যার কি দাঁড়ালো, আমি একজন সরকারী কলেজের স্টুডেন্ট। যেখানে একজন স্টুডেন্ট স্বাধীনভাবে পড়াশোনা করতে পারবে তাই তো।
– হ্যা।
– তাহলে স্যার শাহানা কিভাবে আমাকে দিয়ে নিজের পার্সোনাল কাজগুলো করানোর অধিকার পাই?
অতসীর এইরকম কথা শুনে শাহানার মুখটা থমথমে হয়ে যায়। প্রিন্সিপাল স্যার কিছুই বুঝতে পারলেন না,তাই প্রশ্ন করলেন…
– মানে?
– শাহানা আর তার গ্রুপ ক্লাসের প্রত্যেকটা স্টুডেন্টকে প্রতিদিন নানান ভাবে অপদস্থ করতে থাকে, আজকেই আমাকে নিজেদের জন্য ক্যান্টিন থেকে কফি নিয়ে আসতে বলেছিলো,আমি শাহানার কেনা কোনো গোলাম নয় আর না ওর কথা শুনতে বাধ্য তাই আমি ছোটুর সাহায্য নিয়ে স্পেশাল কফি খাইয়েছি ওদের।
শাহানা ভয়ে শেষ এইভাবে হাটে হাঁড়ি ভেঙ্গে যাবে এটা আন্দাজ করতে পারেনি।। প্রিন্সিপাল স্যার রাগী কন্ঠে বললেন…
– এসব কি সত্যি?
– স্যার আপনি চাইলে যে কাউকে জিজ্ঞেস করতে পারেন। ওদের হাতে অপদস্থ হবার ভয়েতে কেউই এই কথাটা আপনাদের কাছে বলতে পারেনি। টাকার অহংকারে এরা অন্যদের মানুষ মনে করতে ভুলে গেছে।
প্রিন্সিপাল স্যার ক্লাসের কয়েকজনকে ডেকে পাঠালেন,প্রথমে তারা কিছু না বললেও পরে সত্যি গুলো বলে। শাহানা কিভাবে ওদের উপরে টর্চার করতো, সবটাই বলে দেয়। সবটা শুনে প্রিন্সিপাল স্যার খুব রেগে যায় এবং ওদের বাড়ির লোককে আস্তে বললেন।
– অতসী আমি সবটাই মানলাম। কিন্তু তুমি আর ছোটু যে কাজটা করেছো সেটা একদম ঠিক করনি। এইভাবে কিছু না করে আমার কাছে আসলেই পারতে।
অতসী তাচ্ছিল্যের হাসল। মুখের কোনাতে রহস্যময়ী হাসি ফুটিয়ে তুলে বলল…
– তাহলে কখনোই এইকথাগুলো আপনি কানে তুলতেন না,আর না সবটা ক্লিয়ার হতো।
– মানে কি সব বলছো তূমি।
– আমার মতো সাধারন একটা মেয়ের কথা আপনারা কেউই বিশ্বাস করতেন না, আর না শাহানাদের আসল সত্যিটা প্রকাশে আসত। শাহানাদের সাথে আমি কাজটা করেছিলাম বলেই, ওরা আমার নামে বিচার দিয়েছে আর আমি আর ওরা মুখোমুখি হয়েছি। এই একই কাজটা যদি আমি করতাম তাহলে ওদের দলের কাছে আমাকে হার মানতেই হতো অর্থ আর শক্তির কাছে সত্যিটা হেরে যেত।
সকলেই চুপ করে গেছে। কেউ একটাও কথা বলছে না। অতসী একটু চুপ করল, তারপরে ছোটুর দিকে তাকিয়ে বলল…
– স্যার আপনারা তো আমাদের শিক্ষাদান করেন। সমাজের বুকে নানা প্রতিবাদ চলছে, ১৮ বছরের আগে কোনো বাচ্চাকে দিয়ে কাজ করানো আইনগত অপরাধ। সেখানে ছোটু কেন এই অন্যায়ের স্বীকার হচ্ছে। স্যার ছোটুর বাবা নেয়,, মা লোকের বাড়িতে কাজ করে, ছোট ভাই বোনদের নিয়ে সংসার। অর্থের অভাবে এই ১৩ বছরের বাচ্চাটা আমাদের কলেজ ক্যান্টিনে কাজ করছে এইখানে কি শিশুশ্রম হচ্ছে না?
সকলেই হতবাক। অতসী সকলের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল ভুলটা। প্রিন্সিপাল স্যারের মাথাটা লজ্জায় নীচু হয়ে গেলো। ওনারাই তো সমাজের অগ্রদূত,সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাবার কাজ তো শিক্ষকদের সেটা আবারো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল অতসী।
ছোটুর চোখের কোনে পানি জমা হয়েছে। কলেজ ক্যান্টিনে অনেক মানুষের আনাগোনা কিন্তু অতসীর মতো মানুষ খুব কমই দেখেছে। ও ছোটুকে ভাইয়ের্ মতো ভালোবাসে। আর অতসীর প্রতিও ছোটুর একটা আলাদা রকমের ভালোবাসা কাজ করে, মানুষটাকে বড্ড বেশি বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করে ছোটুর।
– স্যার আমি চাই না, কেউ আমাদের কলেজের দিকে আঙুল দেখিয়ে বলুক ওই কলেজে শিশুশ্রম করানো হয়। আমাদের কলেজে এতগুলো টিচার তারা যদি প্রতিমাসে মাত্র ১০০ টাকা করে এই ছেলেটার হাতে তুলে দেয় তাহলে আর ওকে এই কাজ করতে হবে না,ক্যান্টিনে থাকা সময়টা স্কুলে দিতে পারবে,সমাজের বুকে আরো একটা ভবিষ্যত তৈরি হবে।
প্রিন্সিপাল স্যার মুগ্ধ হলেন অতসীর চিন্তাভাবনা দেখে। সত্যি এই যুগে কতজন মানুষ এইভাবে ভাবে।
– অতসী তুমি আজকে আমার চোখ খুলে দিয়েছ। সত্যি প্রকৃত শিক্ষা বইয়ের পাতাতে নয় বিবেকে থাকে, সেটা আবারও তুমি প্রমান করে দিলে। আমি তোমার থেকে বয়সে অনেক বড়ো হলেও,আমার বলতে কোনো অসুবিধা নেয় তুমি কোথাও না কোথাও আমার থেকে বেশি শিক্ষিত। তোমার বাস্তব জীবনের শিক্ষাটা আমার থেকে কয়েকগুণ বেশি।
– স্যার এইভাবে আমাকে লজ্জা দেবেন না।আমার যেটা মনে হয়েছে আমি সেটাই করেছি ঠিক কি ভুল আপনারাই ঠিক করুন।
– শাহানা তোমাদের অভিভাবকদের শীঘ্রই আমার সাথে দেখা করতে বল। আর তারা যদি দেখা না করে আমার সাথে কথা বলে, তাহলে আমি তোমাদের কলেজ থেকে বের করে দেব কথাটা মাথাতে রেখ। তোমরা এখন আসতে পারো, যাও।
শাহানার দলবল স্থান ত্যাগ করলো, যাবার আগে অতসী কে নিজেদের চোখ দিয়ে আগুনে দগ্ধ করতে ভুলল না। অতসী ওদের দৃষ্টির মানে খুব ভালো করেই বুঝতে পারল, ওর জীবনটা ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে সেটা ভাবতেই একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসলো ভেতর থেকে।
প্রিন্সিপাল স্যার ছোটুর দিকে তাকিয়ে বললেন…
– ছোটু ক্যান্টিন থেকে যে টাকাটা পাই ওই টাকাটাই পাবে তবে তার জন্য ওকে আর কাজ করতে আসতে হবে না। ক্যান্টিনের বদলে ছোটুর জায়গা হবে স্কুল। আর কোনো শিক্ষক যদি আলাদা ভাবে ছোটুকে সাহায্য করতে চাই তাহলে করতে পারে সমস্যা নেয়। আমি ওর সহ ওর ভাইবোনের পড়াশোনার খরচ বহন করবো কথা দিলাম।
ছোটু আর অতসী দুজনেই খুব খুশি হয়ে যায়। আনন্দে আত্মহারা হয়ে ছোটু অতসীকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়। ছোটুর আনন্দ মাখা চোখের পানি দেখে উপস্থিত সকল শিক্ষকদের চোখের কোনাতে পানি জমা থাকল। ছোটু প্রিন্সিপাল স্যার কে সালাম করতে যায় কিন্তু উনি করতে দেন না।
– বাবু না, কখনও নিজের মাথা নীচু করবে না। আর কেন করবে বলো তো, যার এইরকম একটা দিদি আছে সে কি আর কারোর কাছে ছোট হতে পারে।
প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে সহমত হয়ে একজন হরতাল বললেন…
– অতসী সত্যি একজন ভালো মনের মানুষ।
– কিন্তু অতসী অন্যায় করেছে এর শাস্তি তো ওকে পেতেই হবে।( প্রিন্সিপাল)
– স্যার আমার কোন ভুল হলে আমি শতবার শা’স্তি পেতে নিতে রাজি। আমি সত্যি ভুল করেছি তাই আপনি আমাকে যা শাস্তি দেবেন তাই মেনে নেব।
#চলবে….
#প্রয়োজনে_প্রিয়জন
#তানজিলা_খাতুন_তানু
#পর্ব_৪
-স্যার আপনি আমাকে যা শা”স্তি দেবেন সেটাই আমি মাথা পেতে নেব।
প্রিন্সিপাল স্যার সকলের দিকে একপলক তাকালেন। প্রফেসররাও প্রিন্সিপাল স্যারের দিকে তাকিয়ে আছে,স্যার কি শা’স্তি দেবে সেটাই খুঁজে পাচ্ছে না। প্রিন্সিপাল স্যার হেসে উঠে বললেন…
– তোমার মতো এত মিস্টি একটা মেয়েকে কি কেউ শা”স্তি দিতে পারে। তুমি এই সমাজের সমস্ত ধুলোবালি কে পরিস্কার করার জন্য এসেছ। আমি তোমার মাঝে অন্যরকম একটা স্পিরিট দেখছি তুমি অনেক দূর যাবে।
– দোয়া করবেন স্যার। আপনাদের দোয়া আমার জন্য অনেক প্রয়োজন।
অতসী ওর কাজের মাধ্যমে প্রতিটা টিচারের মনকে জয় করে নিল। টাকা- পয়সা, সম্পত্তির জন্য তুমি অনেকের কাছেই সম্মান পেতে পারো, কিন্তু সেটা কখনোই মন থেকে আসে না। একে অপরের প্রতি সম্মান আসে তার ব্যবহারের প্রতি মুগ্ধ হয়ে।।
– ক্লাসে যাও আর কোনরকম প্রয়োজন হলে আমাকে বলতে পারো।
– ওকে স্যার।
অতসী ক্লাসে ফিরে এসে দেখল শাহানা মুখ লাল করে বসে আছে,দেখে বোঝা যাচ্ছে প্রচন্ড রকমের রেগে আছে। ওহ ক্লাসের সকলের দিকে তাকাল সকলেই অদ্ভুত দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে আসলে ঠিক কি হয়েছে।
– শাহানা।
অতসীর মুখে নিজের নাম শুনে শাহানা রেগে গেলো।
– এই খবরদার তুই আমার নাম উচ্চারণ করবি না।
অতসী হাসল শাহানার কথা শুনে। ওর মুখের হাসি দেখে শাহনার রাগটা আরো তরতর করে বেড়ে উঠছে।
– আমার উপরে বেকার রাগ দেখিয়ে কোনো লাভ নেয়,, আমার কিছুই করতে পারবে না তুমি। তাই বলছি ঝামেলা না করে শুধরে যাও এটাই তোমার জন্য ভালো হবে।
– তোকে আমি দেখে নেব।
– দ্যাখো শাহানা তোমার সাথে আমার কোনো শত্রুতা নেয়, এমনকি এই কলেজের এই ডির্পামেন্টের কোনো স্টুডেন্টই তোমার সাথে কোনো শত্রুতা নেয়। শুধু শুধু বিনা কারনে এই মানুষগুলোর সাথে তুমি অন্যায় করছিলে।
শাহানা চুপ করে আছে,কিছুই বলছে না।
– শাহানা আজকে কোনো কারনে তুমি যখন বিপদে পড়বে। তখন এই মানুষগুলো তোমাকে দেখেও এগিয়ে আসবে না, সাহায্য করবে না কারনটা কি জানো। তুমি ওদের সাথে অন্যায় করেছো, তোমার প্রতি ওদের একটা রাগ আছে। তাই সাহায্য তুমি পাবে না। কি লাভ সকলের কাছে অপ্রিয় পাত্র হিসাবে থাকার। জানি কথাগুলো খারাপ লাগবে তবুও মন থেকে একবার ভেবে দেখো।
অতসী কথাগুলো বলে একমুহুর্ত ওইখানে দাঁড়াল না। ক্লাস থেকে বের হয়ে গেল আজকে ক্লাস করার ইচ্ছা নেয় একটুও।
জিনিয়া অতসীর দিকে তাকিয়ে ছিলো পুরোটা সময়। অতসীর প্রতিটা কথাতে রহস্যের গন্ধ পেয়েছে। এতদিন ওর সাথে থাকাকালীন ওকে শান্ত, চুপচাপ কোমল প্রকৃতির বলেই সকলে জানত, কিন্তু জিনিয়ার সাথে বন্ধুত্ব নষ্ট হবার পর থেকে প্রতিদিনই ওর নতুন নতুন রূপ সকলের সামনে আসছে, প্রতিনিয়ত অতসী রহস্যময়ী হয়ে উঠছে সকলের কাছে।
অতসী কলেজ থেকে বের হয়ে কাছেই একটা পার্কে গেল। দুপুরের দিক হওয়াতে পার্কটা ফাঁকাই ছিল, তাই পার্কের একটা বেঞ্চে বসল। একমনে সামনের দিকে তাকিয়ে গভীর চিন্তায় চিন্তিত হতে হতেই যে কখন চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়েছে তার খেয়াল নেয়।। চোখের পানিটা মুছে নিয়ে বিরবির করে বলল…
– প্রতিনিয়ত নিজের সাথে যু”দ্ধ করতে করতে আমি ক্লান্ত। প্রিয়জনদের আ’ঘা’তে আ’ঘা’তে আমি প্রতিনিয়ত একটু একটু করে শে’ষ হয়ে যাচ্ছি। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আমার। এই পৃথিবীটা বড্ড বেশি অসহ্যকর হয়ে উঠছে।
তখনি কেউ একজন ওর সামনে গোলাপ ফুল ধরল। ও সামনে তাকিয়ে দেখলো একটা বাচ্চা মেয়ে, গোলাপি রঙের ফ্রক পড়ে আছে, মাথায় চুলগুলো ঝুটি করা, ইশ কি মায়াবী দেখতে। মেয়েটি বলে উঠল…
– আন্টি তোমার কি হয়েছে কাঁদছো কেন?
বাচ্চাটার এইরকম কথা শুনে অতসী মুচকি হেসে উত্তর দিলো…
– না মামণি দ্যাখো আমার কিছুই হয়নি আমি হাসছি।
– এই তো গুর্ড গার্ল,এই নাও এই রোজটা তোমার। আমার বাবাই বলে ফুল দিয়ে নাকি যে কারোর মন ভালো করা যায়।
– তাই বুঝি।
– হুম।
– আচ্ছা মামনি তোমার নাম কি?
– আমার তো অনেক নাম, কোনটা বলবো।
– তোমার যে নামটা বেশি ভালোলাগে সেটাই বলো।
– মিস্টি বুড়ি।
বাচ্চাটার বলার ধরন দেখে অতসীর হাসি পেয়ে গেল হা হা করে হেসে উঠল। বাচ্চাটা ওর দিকে পিটপিট করে তাকিয়ে বলে উঠল….
– তোমার হাসিটা কি সুন্দর।
বাচ্চাটির কথা বলার ধরন দেখে অতসীর খুব ইচ্ছা করল,বাচ্চাটিকে আদর করতে তাই বাচ্চাটির গালে চুমু দিল। বাচ্চাটির প্রতিটা কাজই ওকে বারে বারে মুগ্ধ করছে,অসম্ভব মিস্টি একটা মেয়ে ।
– মিস্টি বুড়ি তোমার ভালো নাম কি?
– আরাধ্যা।
– ভারি মিষ্টি নাম তবে আমিও তোমাকে মিস্টি বুড়ি বলেই ডাকব ঠিকাছে।
– আচ্ছা। গোলাপটা নেবে না।
– হ্যা নেবো তো, দাও।
আরাধ্যার হাত থেকে গোলাপটা নিয়ে অতসী অরাধ্যাকে প্রশ্ন করল….
– তুমি এইখানে কার সাথে এসেছো।
– মনির সাথে।
– তা তোমার মনি কোথায় কাউকেই তো দেখতে পারছি না।
আরাধ্যা কিছু বলতে যাবে তখনি একজন লোক এসে বলল…
– মামনি চলো দিদিমনি তোমাকে নিয়ে যেতে বলল।
– আচ্ছা আন্টি আজকে তাহলে আমি আসি। বাই।
আরাধ্যা অতসীর গালে একটা হামি দিয়ে চলে যায়। আরাধ্যার যাবার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো অতসী। মেয়েটা কি মায়াবী,অল্পতেই কি সুন্দর কয়েক মিনিটেই অতসীকে আপন করে নিল। ওহ নিজের অজান্তেই একটা অন্যরকম টান অনুভব করলো আরাধ্যার প্রতি। তারপর একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলে রওনা দিলো নিজের ঠিকানায়।
আরাধ্যাকে কোলে নিয়ে মেয়েটা বলল..
– মাম্মাম কেমন লাগলো আন্টিটার সাথে কথা বলে।
– খুব ভালো,আন্টিটা খুববব ভালো।
– পছন্দ হয়েছে?
– হূম।
– আমার ভালো মাম্মাম।
আরাধ্যার গালে চুমু খেয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
নিত্যদিনের মতোই সারাটা দিন সবকিছু নিয়ে অতসী ব্যস্ত থাকলেও রাতের দিকে সম্পূর্ণ রূপে একা হয়ে পড়ে। খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না ওর।
পরেরদিন…
অতসী কলেজ করার পর অজানা কিছু কারনে ছুটে যায় সেই পার্কে যেই পার্কে আগের দিন আরাধ্যার সাথে দেখা হয়েছিল, আরাধ্যাকে কিছুতেই ভুলতে পারছে না। একটা অজানা আকর্ষন অনুভব করছে আরাধ্যার প্রতি।
অতসী পার্কে ঢুকে এদিক ওদিক দেখতে লাগল। কিন্তু কোথাও আরাধ্যাকে দেখতে না পেয়ে একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেঞ্চে বসে পড়ল।
– আন্টি
চেনা কারোর কন্ঠস্বর শুনতে পেয়ে অতসী সামনে তাকিয়ে দেখল, ছোট আরাধ্যা দাঁড়িয়ে আছে।
– মিস্টিবুড়ি।
অতসীর মুখে ডাকশুনে আরাধ্যা দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরল। অতসীও পরম আবেশের সাথে আদর করতে লাগল, কেউ দেখলে ভাববে কতদিনের সম্পর্ক, কিন্তু পরিচয়টা যে শুধুমাত্র একদিনেরই।
– কেমন আছো মিস্টি বুড়ি।
– ভালো আছি তুমি।
– হুম আমিও ভালো আছি।
আরাধ্যা অতসীর সাথে গল্প করতে শুরু করে, আরাধ্যা বলে চলেছে আর ও মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে দেখছে ওকে। এই বাচ্চা মেয়েটার প্রতি এত মায়া কেন জন্মাচ্ছে জানা নেয় অতসী ।
– ওহ আন্টি কি ভাবছ?
– কিছু না সোনা। বলো তোমার বাড়িতে কে কে আছে?
– আমি বাবাই, মনি, দাদু আর দিদুন।
– আর কেউ নেয়?
– না, বাবাই বলে আমার মা নাকি ওই আকাশের তারা হয়ে গেছে।
অতসীর বড্ড মায়া হলো মেয়েটার কারনে এইটুকু একটা মেয়ের মা নেয়,কিভাবে বড়ো হচ্ছে বাচ্চাটা।
– মায়ের জন্য তোমার মন খারাপ হয়।
– না একদম না।
– কেন? (ভ্রূ কুঁচকে)
– আমি মন খারাপ করলে বাবাই কষ্ট পাই আর আমি আমার বাবাইকে খুব ভালোবাসি, আর আমার বাবাইয়ের কষ্ট আমার দেখতে ভালো লাগে না।
এইটুকু মেয়ের বোঝার ক্ষমতাটা দেখে বর্ষা না অবাক হয়ে পারল না।
– তাই তাহলে আমার মিস্টি বুড়ি তো খুব বুঝদার।
– হুমমম আমি গুড গার্ল।
– একদম।
এইভাবেই কয়েকটা দিন কেটে যায়। প্রতিদিন বিকালেই আরু অর্থাৎ আরাধ্যার সাথে অতসীর দেখা হয় আর দুজনেই গল্পতে মেতে থাকে সারাক্ষণ। অতসীর মন খারাপের ওষুধ হয়ে উঠেছে ওই আরাধ্যা নামক ছোট মেয়েটা।
অতসী পার্কে এসে অপেক্ষা করছে আরুর জন্য কিন্তু অনেকক্ষণ হয়ে যাবার পরেও কেউ আসলো না। মন খারাপ করে বেঞ্চে বসে পড়তেই, কারোর মুখে নিজের নাম শুনে সামনে তাকালো।
– অতসী।
#চলবে….