প্রভুভক্তি | গল্প পোকা ছোট গল্প

0
1138

#গল্পপোকা_ছোটগল্প_প্রতিযোগিতা_নভেম্বর_২০২০

প্রভুভক্তি
লেখা : সাইক শিবলী

গ্রামের নাম মেঘলাপুকুর।
একদিন সকালে গ্রামের একটি কাঁচা রাস্তার পাশে ঝোপের পিছনে একটি কুকুরছানা ব্যথায় ছটফট করছিল। তার সেই মর্মভেদী আর্তনাদে যেন আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠল। সেই রাস্তা দিয়ে একের পর এক লোকজন যাচ্ছে আর আসছে কিন্তু সেই কুকুরছানাটির মর্মভেদী আর্তনাদ কারো কর্ণকুহরে প্রবেশ করল না।

তুষার সেই রাস্তা দিয়ে তখন স্কুলে যাচ্ছিল। সে কুকুরছানাটির কাতরানোর আওয়াজ শুনতে পেল। আশেপাশে খুঁজতেই দেখতে পেল রাস্তার ধারে ঝোপের পিছনে একটি কুকুরছানার সামনের বাঁ পায়ে কাঁটা ফুটেছে এবং সেখান দিয়ে অঝোরে রক্ত ঝরছে। এটা দেখে কুকুরছানার প্রতি তার শিশুসুলভ কোমল হৃদয়ে যেন দয়া সঞ্চারিত হল। সে কুকুরছানাটির পায়ে বিদ্ধ হওয়া কাঁটাটি দ্রুত তুলে ফেললো কিন্তু তারপরও রক্ত ঝরা বন্ধ হল না। তাই সে কাল বিলম্ব না করে তড়িৎ গতিতে তাকে নিয়ে একজন পশু চিকিৎসকের শরণাপন্ন হল। ডাক্তার তার ক্ষতস্থানে এন্টিসেপ্টিক লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিল। এরপর তুষারের নিবিড় শুশ্রূষায় কুকুরছানাটি সুস্থ হয়ে গেল।
এরপর সে তাকে তার কাছেই রেখে দিল।
সে যে খাবার খেত, তাকেও তাই খেতে দিত। মাঝেমধ্যে বাজার থেকে তার জন্য বিশেষ খাবার কিনে আনত। সময় পেলে তার সাথে খেলা করত, তাকে নিয়ে আশেপাশে ঘুরতে যেত। এভাবে, কুকুরছানার প্রতি অকৃত্রিম মমতায় তার নিষ্পাপ হৃদয় আচ্ছাদিত হয়ে উঠল।

কুকুরছানাটির গায়ের রং ছিল কালো, তাই আদর করে তার নাম রাখল কালু। কালুর সেবাযত্নের কোনো ত্রুটি সে করত না। তাই তো কালুও ধীরে ধীরে তার অন্ধ অনুরাগী হয়ে উঠল।
তুষার কালুকে কালু বলে ডাক দিলেই সে লেজ নাড়তে নাড়তে চলে আসত।
কখনো হয়ত তুষার তীব্র অসুখে আক্রান্ত হয়েছে, বিছানা ছেড়ে উঠতে পারছে না। তখন কালু দূরে একটি গাছের নিচে চুপ করে বসে থাকত আর তার চোখ দুটি থাকত জলে ভেজা।
তুষার ছাড়া আর কেউ যদি তাকে খাবার খেতে দিত, সে সেই খাবার ভক্ষণ করত না।
এভাবে কয়েক বছর কেটে গেল।
তুষার শিশু থেকে কৈশোরে পদার্পণ করল। অন্যদিকে কালু কুকুরছানা থেকে একটি পূর্ণ বয়স্ক তরতাজা কুকুরে পরিণত হল।
যেমন তার দৌড়ানোর ক্ষিপ্রগতি, ঠিক তেমন তার শরীরে ব্যাঘ্রসম শক্তি।
হঠাৎ এক গভীর রাতে, ডাকাত পড়ল তুষারদের বাড়িতে। তাদের সর্বাঙ্গ ছিল কালো কাপড়ে ঢাকা, শুধু তাদের পটলচেরা চোখদুটি ছিল উন্মুক্ত। তাদের কাছে ছিল ভারি অস্ত্রশস্ত্র ও পিস্তল।

ডাকাতরা যখন কুকার্য সিদ্ধি করতে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করবে, ঠিক তখনই কালু উচ্চস্বরে ঘেউঘেউ করতে করতে তাদের একজনকে কামড়ে রক্তাক্ত করে দিলো। কালুর চিৎকার শুনে আশেপাশের লোকজনের ঘুম ভেঙে গেল, তারা দ্রুত চলে আসতে লাগল।
এমতাবস্থায়, ডাকাতরা কালুকে গুলি করে পালিয়ে গেলো।

কালু গুলি খেয়ে ছিটকে লুটিয়ে পড়ল। তার বুক থেকে অবিরত রক্ত ঝরতে লাগল। কিছুক্ষণ হাত পা ছোড়াছুড়ি করল, তারপর থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে তার সামনে ও পিছনের পা দুটি যতদূর যায় প্রসারিত করে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করল।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে