#প্রনয়
#নুসরাত সুলতানা সেজুথি
পর্ব-২৩
বিকেলের নরম আলো চারপাশে।সামনের নদীটায় কপোত কপোতির ভীর।নৌকা ভ্রমনে কী উচ্ছ্বাস তাদের!পরিবারের সাথে এসেছে অনেকে।ছোট ছোট বাচ্চাও রয়েছে কতকের।পার্কটির চারপাশে ঘিরে বাউন্ডারির মতো সৌন্দর্য বর্ধক গাছ লাগানো।তাতে ফুটেছে নাম না জানা বাহারি ফুল।মনোরম এই পার্কটির সৌন্দর্যে এতক্ষন মুদে ছিলো সেঁজুতি। অথচ সব ভালো লাগা তার বিদেয় নিলো রুদ্রর কথা শুনতেই।
সেঁজুতি কপাল কুঁচকে চেয়ে আছে।রুদ্রর নিরুদ্বেগ ভাবমূর্তি নিখুঁত চোখে অবলোকন করছে।
কী এমন কথা জানতে চাইবেন?আওয়াজ শুনে তো মনে হয়নি হালকা পাতলা কিছু।ভয়টা সেখানেই সেঁজুতির।রুদ্রকে এ ক’দিনে বেশ চিনেছে।কারনবিহীন একটা কাজ করেনা এ লোক।ব্যাবসায় যতটুকু দেখলো,” যেখানে লাভ নেই সেখানে রুদ্র নেই।যেখানে লোকসান সেখানে তো তার ছাঁয়াও খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
মনের মধ্যে হাজার প্রশ্নের ঝুড়ি সাজালো সেঁজুতি। কিন্তু সেসব করা হলোনা রুদ্রর থম ধরে থাকা চেহারা দেখে।
— ককি জা..জাননতে চচান?? অজান্তেই গলা কাঁপলো সেঁজুতির।
রুদ্র তেমনি শান্ত কন্ঠে বলল
‘এতো তোঁতলানোর কিছু হয়নি।শুধু শুধু ভয় পাবেন না।
সেঁজুতি মেকি ভাব দেখিয়ে বলল,
‘ আমি ভয় পাচ্ছিন।আপনি কি জানতে চান?
‘ আপনি দেখছি বলার জন্যে বড্ড অধৈর্য!
এবার বিরক্ত হলো সেঁজুতি। সত্যিই সে অধৈর্য। কিন্তু তাতো আর ওনাকে জানানো যাবেনা।চুপ করে অন্যদিকে তাকালো। এমন লোকের সাথে কথা না বাড়ানোই ভালো,সুযোগ পেলেই খোঁচা মারে।
“সেদিন রাতে আমার হোটেলে কেনো এসেছিলেন?
সেঁজুতি তখন অন্যদিক ফিরে।ভুলে গেলো রুদ্রর কথা।চারপাশ যখন নিরিবিলিতে ক্ষনিকের মত রুপ নিলো,ঠিক তখনই একটা প্রশ্নবজ্র ফেলল রুদ্র।সেঁজুতি বিস্মিত,স্তব্ধ হলো কথাটুকু কানে যেতেই।রুদ্র উদ্বেগহীন।সেঁজুতি প্রচন্ড চমকালো।প্রশ্নবিদ্ধ চোখে ফিরতেই রুদ্র বলল,
” বলুন!
সেঁজুতি নিশ্চুপ।তার উত্তর নেই।সে বিমুঢ় হয়ে চেয়ে আছে।চোখে পলক অব্দি ফেলছেনা।নিশ্চল দৃষ্টিতে খেলছে সহস্র প্রশ্ন,লক্ষ্য কৌতুহল।কেন জানতে চাইছেন উনি এসব?কেন তাঁজা করছেন ঐ পুরোনো নোংরা ঘা!
নিরুত্তর সেঁজুতি কে দেখে ফোস করে নিঃশ্বাস ফেলল রুদ্র।সেঁজুতি অাপোসে কিছুই বলবেনা সে জানতো।রুদ্র নিজেই বলল,
‘দেখুন সেঁজুতি!অলরেডি,ড:হোসাইনের থেকে আমার অনেকটা জেনে নেয়া শেষ।আপনি যেদিন আমার হোটেলে এসেছিলেন তার একদিন পরেই আপনার বাবার অপারেশন হয়।তার কস্টিং ও প্রায় ছয় লাখের মতোন।আমি কি তবে ধরে নেবো, যে এইজন্যেই আপনি….
“তার মানে আমার পেছনে আমারই ব্যাপারে তদন্ত চালিয়েছেন আপনি?
সেঁজুতির কঠিন স্বর।শক্ত মুখ।রুদ্র সূক্ষ্ণ হাসলো।সেই অফিসের প্রথম দিনের সেঁজুতিই যেন বসে আছে আজ।তর্কে তর্কে বিদ্ধ হবে,তবুও হারবেনা।রাগি রুদ্র নিজেকে আজ বড্ড শীতল রাখছে।কেন যেন এই মেয়ের কাছে এলে তার রাগের বদলে অন্য কিছু বের হয়।একদম আলাদা কিছু।রুদ্র একিভাবে জবাব দেয়,
“ঠিক তদন্ত নয়।অনেক টা গোলক ধাঁধায় আটকে ছিলাম আমি।কী?কেন?কীভাবে?কী করে?এসব প্রশ্নের যাতাকলে অনবরত পিষে যাচ্ছিলাম।যাস্ট সেখানে থেকেই নিজেকে মুক্ত করার ক্ষুদ্র প্রয়াস বলতে পারেন।ওসব ছাড়ুন,যেটা জানতে চাইছি তার উত্তর পাইনি এখনও।
সেঁজুতির চোখের কোটর ভরে উঠলো।অথচ গড়ালো না।কাট গলায় বলল,
” আমার ব্যাক্তিগত ব্যাপার ব্যাক্তিগত রাখতেই পছন্দ করি আমি। আপনাকে আমি কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নই।
সেঁজুতি এতটা কঠোরভাবে বলতে চায়নি।কিন্তু এই বিষয়ে রুদ্রকে প্রশ্রয় দিতেও মন স্বায় দেয়নি।যে জিনিসটা সে খুব গোপনে শুধুমাত্র নিজের মধ্যে রেখেছে, কেন অন্যকে বলবে সেসব? কে রুদ্র?শুধুই অফিসের মালিক।তার বস।আদৌ এসব শেয়ার করার মতোন সম্পর্ক তাদের নয়।কখনও হবেওনা।তাহলে কেন অন্যের কাছে ছোট হবে সে?সেঁজুতি উঠে দাঁড়ায়।এগোতে গেলেই পেছন থেকে এক হাত টেনে ধরলো রুদ্র।সেঁজুতি ফের চমকায়।ঘাঁড় ঘুরিয়ে রুদ্রকে কিছু বলার পূর্বেই
টান মেরে নিজের পাশে বসিয়ে দিলো রুদ্র।হাত ছাড়লোনা।সেঁজুতি হাত মোঁচড়াতে মোঁচড়াতে বলল,
“ছাড়ুন বলছি…
রুদ্রর স্থির জবাব,
‘ উত্তর না পাওয়া অব্ধি ছাড়ছিনা।
সেঁজুতি চেঁতে বলল,
‘আপনার প্রশ্নের কোনও উত্তর ই দেবোনা আমি।এতো কিছু জানতে পেরেছেন তো বাকিটাও নিজের মতো করে জেনে নিন।আমাকে বিব্রত করে কি লাভ হচ্ছে আপনার?
রুদ্র বাঁকা হাসলো। এমন হাসি অনেকদিন পর দেখলো সেঁজুতি। সেই প্রথম দিনের মতো ক্রুর হাসি এটা।যাতে মিশে থাকে চূড়ান্ত অহংবোধ।রুদ্র বলল
‘আমি চেষ্টা করলে সব টাই পানির মতো স্বচ্ছ করে জেনে নিতে পারতাম।কিন্তু আমি পুরোটা আপনার থেকে শুনতে চাইছি।ইটস কোয়াইট ইম্পরট্যান্ট ফর মি।
সেঁজুতি ভ্রু কোঁচকালো,
“কিসের ইম্পরট্যান্ট?
রুদ্র সামনে তাকালো,
” সেটার উত্তর না হয় পরে দেই?আর হাত এতো মোঁচড়ামুঁচড়ি করবেন না।ছাড়াতে তো পারবেন ই না,উলটে ব্যাথা পাচ্ছেন। মচকেও যেতে পারে।তাই শান্ত হয়ে বসুন।আর যেটা জিজ্ঞেস করছি উত্তর দিন।
সেঁজুতি ক্ষুব্ধ হলো এবার।
‘আর কতবার একী কথা বলব আপনাকে?আমি কী করেছি,কী করব সেসব জানারই বা আপনি কে?আপনি কী বুঝতে চাইছেন না!এ নিয়ে আমি কথা বাড়াতে চাইনা আপনার সাথে?আপনি আমার বস।এর বাইরে আপনার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।নিজের পার্সোনাল লাইফ নিয়ে কথা বলার মতো তো নয়ই।
রুদ্র খেই হারালো মেজাজের।হাতের বাঁধন শক্ত করলো।সেঁজুতি ব্যাথায় চোখ বুজে ফেলতেই রুদ্র ঢিলে করলো আবার।আরেকদিক ফিরে মুখ ফুলিয়ে শ্বাস নিয়ে শান্ত করলো নিজেকে।সময় দিলো।বুঝতে পারলো,
এভাবে জিজ্ঞেস করলে কাজ হবেনা।শুধু শুধু কথা খরচা হবে, কিন্তু উত্তর পাওয়া যাবেনা।
মুঠোয় রাখা সেজুতির হাত ছেড়ে দিলো রুদ্র।সেঁজুতি বুকের কাছে গুটিয়ে আনলো সেটা।লাল হয়ে গিয়েছে যেখানে ধরেছিলো।সেঁজুতি মাথা নামিয়ে নেয়।একমনে পাথরের মেঝেটা দেখতে থাকে। ভীষণ কান্না পাচ্ছে।চোখ জ্বলছে।না হাত ব্যাথায় নয়।বুকের ব্যাথায়।চোখের সামনে ভাসছে সেদিন রাতের গল্প।নিজের সতীত্ব বিলিয়ে দেয়ার দৃশ্য।গায়ে কাঁটা দিচ্ছে রুদ্রর হিংস্র স্পর্শের অনুভূতিতে।লজ্জ্বা-ঘৃনায় নেতিয়ে, অবশ হয়ে আসছে গোটা দেহ।কীভাবে যে নিজেকে সংবরন করছে সেই জানে শুধু।রুদ্র উঠে দাঁড়ায় হঠাৎ।টের পেয়ে মুখ তুললো সেঁজুতি।সেঁজুতিকে অবাক করে দিয়ে হাটু মুঁড়ে ওর সামনে বসলো রুদ্র।সেঁজুতি ব্যাস্ত কন্ঠে বলল
“কি করছেন??
কথাটায় কান দিলোনা রুদ্র।সেজুতিকে আরো একধাপ বিস্মিত করতে ওর এক হাত নিজের মূঠোয় নিলো।এতোই কোমল ভাবে ধরলো যেন কিয়ৎ পরিমান ও ব্যাথা না লাগে।লাল হওয়া জায়গাটায় আঙুল বুলিয়ে সেঁজুতির চোখের দিকে তাকালো।হালকা ঢোক গিলে স্পষ্ট বলল ‘ আই এ্যাম স্যরি।
সেঁজুতি বিস্ফোরিত নয়নে চেয়ে থাকলো।গত রাতে রুদ্র নেশার ঘোরে স্যরি বলেছিলো।আজ একদম সজ্ঞানে বলছে?রুদ্র রওশন চৌধুরী কীনা তার একজন সামান্য এসিস্ট্যান্ট কে স্যরি বলছে? সেঁজুতির ভেতর থেকে একটা কথাই বার হয় ” এ অসম্ভব,অবিশ্বাস্য।
কিন্তু সে আজ বিশ্বাস করতে বাধ্য।সুগভীর ভাবনার সুতোতে টান পরে রুদ্রর আওয়াজে।রুদ্র ভীষণ কোমল কন্ঠে বলল,
“আমি জানি আপনি অবাক হচ্ছেন। আমাকে এভাবে দেখে।সব সময় আপনাকে বকাঝকা করা,মেজাজ দেখানো, ইগোয়িস্টিক, বদ রাগী, রুদ্রর ব্যাবহার যে এরকম হতে পারে সেটা সত্যিই আশ্চর্যের!আমিও মানছি।কিন্তু কি জানেন? আমি নিজেও কিন্তু আপনার মতোই রক্ত মাংস দিয়ে তৈরী একজন মানুষ। আমার মধ্যেও খারাপ লাগা, ভালো লাগা, দুঃখ পাওয়া, এসব অনুভূতি রয়েছে।অথচ সবাই যেভাবে খুব সহজে প্রকাশ করতে পারে,আমি সেভাবে পারিনা।এটা আমার ব্যার্থতা,দূর্বলতা আপনি যা ভাববেন সেটাই।
(একটু থেমে)
আপনি আমার পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট,আর আমি আপনার বস।আমাদের মধ্যে এই একটাই সম্পর্ক।যেটা একটু আগে আপনি বললেন।সেই সম্পর্কের ভিত্তিতে আমি আপনার থেকে আপনার ব্যাক্তিগত জীবন নিয়ে কোনও প্রশ্ন করতে পারিনা এটা সত্যি। উত্তর পাবোনা এটাও স্বাভাবিক।
কিন্তু আমি যদি বলি, যে এই মুহুর্ত থেকে আমি আপনার আর আপনি আমার খুব ভালো বন্ধু হবো? তাহলে সেটা কি খুব একটা ভুল হবে??
আমার দাদু বলতেন,বন্ধুত্বের সম্পর্ক পৃথীবিতে সব চেয়ে মিষ্টি সম্পর্কের মধ্যে একটি।
কিন্তু আমার কোনও বন্ধু ছিলোনা।ছোট বেলা থেকেই ছিলোনা।এখনও নেই।কেউ করতে চায়নি তা নয়।আসলে আমিই চাইনি আমার জীবনের তিক্ততা কমিয়ে কোনও মিষ্টি সম্পর্কে নিজেকে জড়াতে।তাই হয়তো কখনও প্রেম ও হয়নি।
কিন্তু আজ চাইছি।চাইছি আমার একজন বন্ধু হোক।যার কাছে আমি নিজেকে তুলে ধরব, যে তাকে তুলে ধরবে আমার কাছে।কোনো পর্দা থাকবেনা সেখানে।আপনি বলেছিলেন না? আমার জীবন বাঁচানোর বিনিময়ে টাকা দিয়ে আপনাকে ছোট করতে চেয়েছি আমি?সেই ভুল শুধরে নিয়ে যদি আপনার বন্ধুত্ব চাই, দেবেন?বলুন না সেঁজুতি, দেবেন?হবেন এই বদমেজাজি রুদ্রর বন্ধু?
সেঁজুতি কিংকর্তব্যবিমুঢ়! নিষ্পলক তার দৃষ্টি। চোখের পাতা ভারী হয়ে আসছে।হা করে রুদ্রর দিকে তাকিয়ে থাকলো।মুগ্ধতায় ছেয়ে যাচ্ছে তার দুই চোখ।রুদ্রর বলা প্রত্যেকটি কথা মধুর বানীর মতো লেগেছে।এইতো,এখনও বেজে যাচ্ছে কানে। এতো সুন্দর করে কেউ বন্ধুত্ব করতে চায়?তাও এমন একগুয়ে একটা লোক?
আদৌ কি সে সঠিক শুনলো?নাকি কানদুটো খারাপ হয়ে গেলো?
রুদ্র মোলায়েম কন্ঠে শুধালো,
” হবেন না আমার বন্ধু?
ঠোঁট দুটো প্রসস্থ করে হাসলো সেঁজুতি। ওপর নিচে আলতো করে মাথা ঝাঁকালো। চোখ বুজে স্বায় বোঝালো। হ্যা হবে।হবে সে রুদ্রর বন্ধু।
রুদ্র প্রশান্ত হাসলো।মুঠোয় রাখা সেঁজুতির নরম হাতের দিকে একবার চাইলো।বলল,
“বন্ধুত্বের জোরেই নাহয় আমাকে বলুন।যেটা আপনি কাউকে বলেননি বা বলতে পারছেন না,এমন কি আপনার বাবাকেও নয়।
সেঁজুতি অবাক কন্ঠে বলল,
” আপনি এটাও জানেন?
“জানি।
” কীভাবে?এ কথাতো হোসাইন আঙ্কেল ও জানেননা।
রুদ্র মৃদূ হাসলো,
” আন্দাজ করেছি।আপনাকে যতদূর চিনলাম তাতে খুব কঠিন হয়নি। আমার কথা ছাড়ুন,এবার বলুন তো কি ঘটেছিলো?
এতক্ষন রুদ্রর এমন সহজ-সাবলীল আলাপে সেঁজুতি নিজেও সহজ হলো।
বন্ধু যখন হয়েইছে তখন বলাই যায়।অর্ধেকের বেশিই তো জানেন উনি।সেঁজুতি দীর্ঘশ্বাস ফেলল।শুধুই দীর্ঘশ্বাস ছিলোনা এটা।ছিলো ভেতরে লুকোনো অনেক ব্যাথা প্রকাশের প্রস্তুতি।
সেঁজুতি রুদ্রর দিকে তাকায়নি।চোখ কোলে রাখা অন্যহাতের দিকে রেখে ভাঙা গলায় বলতে শুরু করলো,
” সেদিন আমি ভার্সিটি থেকে মাত্র ফিরেছি।দরজায় তালা লাগানো নেই দেখে বুঝলাম “বাসায় বাবা ফিরেছেন।দরজাও খোলা,ভেজানো ছিলো শুধু।ভেতরে ঢুকতেই দেখলাম বসার ঘরে অনেক লোক।সবাই আমাদের বিল্ডিংয়ের ভাড়াটিয়া।রুমের মধ্যে ঢুকতেই আমার মাথা ঘুরে এলো বাবাকে অচেতন অবস্থায় দেখে।বাবা বিছানায় শুয়ে ছিলেন।আর পাশে অনেকে দাঁড়ানো। অনেক কে চিনি অনেককে না।বাবা একটা প্রাইভেট ব্যাংকে জব করতেন।কাজেরমধ্যে হুট করে অসুস্থ হন ।বুকেহাত চেপে বসে পরেন ।কয়েক জন ধরাধরি করে হাসপাতালে নেয়।আর তারপর বাড়িতে আনেন।রিপোর্ট দেবে কদিন পর।এরকমটাই আমাকে বলেছিলেন বাবার এক সহকর্মী ।আমি প্রচন্ড ঘাঁবড়ে গেলে সবাই আমাকে আস্বস্ত করলেন।এটা সিরিয়াস কিছু নয় বোঝালেন ওনারা।আমি মেনে নিলাম।
সেদিনের মতো বাবা সুস্থ হলেন।রাতে ঠিকঠাক খাবার খেলেন।ঘুমোতে যাওয়ার আগে আমরা গল্প করলাম নিত্যদিনের মতো।কিন্তু সেসব ক্ষনিকের আনন্দ।পরেরদিন সকালে আমি বাবা দুজনেই তৈরি। আমার উদ্দেশ্য ভার্সিটি। বাবার অফিস।বাবা আগে বের হতে যান।কিন্তু দরজা অব্দি যাওয়ার আগেই আাবার বুকে হাত চেপে নিচে বসে পরেন।
আমি তখন ক্লাশের বই ব্যাগে ভরছি।বাবার চিৎকার শুনে দৌড়ে যাই।আঁতকে উঠলাম বাবাকে অজ্ঞান হয়ে পরে থাকতে দেখে।আমার চিৎকারে গোটা বাড়ির ভাড়াটিয়ারা হাজির।বারবার বাবার চোখে মুখে পানি ছিটানোতেও লাভ হচ্ছিলোনা।,ভাবলাম সিভিয়ার কিছু হলো কিনা!হোসাইন আংকেল তখন দেশের বাইরে। ওনার থেকে যে একটু সাহায্য পাবো তার ও উপায় নেই।বাড়ির কজন বাবাকে হাসপাতাল অব্ধি নিয়ে গেলেন।
কিন্তু তাতে অনেক দেরি হয়ে যায়।ততক্ষনে বাবার এট্যাক ব্রেন অব্ধি এফেক্ট ফেলে।ডাক্তার মেহরাব জানালেন ইমিডিয়েট অপারেশনের ব্যাবস্থা করতে হবে।যত সময় যাবে তত বাবার বাঁচার আশা কমবে। বাবা আর বাঁচবেন না।অলরেডি তার ডান পা প্যারালাইজড হয়ে গিয়েছে।এরপর পুরো বডি ধরে যাওয়ার আসঙ্কা রয়েছে।আমি এক কথায় বলি “আপনারা ব্যাবস্থা করুন। কিন্তু অপারেশনের এমাউন্ট শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো।দুচোখে নেমে এলো অন্ধকার।এতো টাকা তাও একদিনে? কিভাবে জোগার করবো আমি? আমার মাথায় কিচ্ছু আসছিলোনা।মাথায় হাত দিয়ে কতক্ষন বাবার কেবিনের সামনে বসেছিলাম জানিনা।হুশ ফিরতেই ছুটে বাসায় যাই।
মায়ের রেখে যাওয়া ছোট খাটো স্বর্নের চেন,কানের দুল, বাবার তুলে রাখা বাসা ভাড়ার টাকা, আমার জমানো টাকা সব মিলিয়ে এক লাখের মতো হলো।কিন্তু এটাতো ওই টাকার ধারে কাছেও ছিলোনা।
টিউশনি দুটো থেকে যা বেতন পেয়েছি তার সিংহভাগ বাবাকে ভর্তি করতেই চলে যায়।আমি বাবাকে নিয়ে রিস্ক নেইনি।ওই এরিয়ার ভালো হাসপাতালেই বাবাকে নিয়েছিলাম।ভর্তি ফি, কেবিন ফি কোনোটাই কম ছিলোনা। হুট করে মাথায় এলো বাবার ব্যাংক থেকে লোন নেবো। সেখানে গিয়েও হতাশ হই। ম্যানেজারের থেকে জানতে পারি কিছুদিন আগেই বাবা এখানে জয়েন হওয়ায় ওনারা নতুন এম্পলোয়িকে এতোগুলো টাকা কোনও ভাবেই ঋন দেবেন না।
রুদ্র মাঝপথে প্রশ্ন ছোড়ে,
“নতুন এম্পলোয়ি ছিলেন??
“হ্যা। আগে যেখানে কাজ করতেন তার থেকে এখানে বেতন ভালো। তাই বাবা অাগের চাকরিটা ছেড়ে দেন।
‘ তারপর?
সেঁজুতি নাক টেনে বলল
‘বাবাকে ছাড়া আমার আর কেউ নেই।বাবার কিছু হয়ে গেলে আমি একেবারে নিঃস্ব হয়ে যেতাম।হয়তো মরেই যেতাম।,আমার জন্মের এক মাস পরেই আমার মা মারা যান।তার চেহারাও আমি দেখিনি।আমার অবহেলা হবে ভেবে, বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন নি।সব সময় বুকে আগলে রেখেছেন।,আর সেই বাবা মৃত্যূর মুখে এটা আমি কিভাবে মেনে নিই?আপনিই বলুন!
সেঁজুতি ডুঁকরে কাঁদলো।রুদ্র শান্ত কন্ঠে বলল ‘ তারপর?
‘কিন্তু আমার তখন চোরাবালিতে ডুবে মরার অবস্থা।এতোগুলো টাকা কে দেবে আমায়?হোসাইন আংকেলের সাথেও কোনও ভাবেই যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। কাউকে চিনতাম ও না।যার থেকে একটু সাহায্য পাব।বন্ধুদের মধ্যে এক তোহা ছিলো।কিন্তু মেয়েটা নিজেই অন্যের বাড়িতে দত্তক কন্যা।সেখানে আমি কী করে ওকে বলি?
সব দিক থেকে শূন্য পেয়ে আমি যখন ক্লান্ত, তখন হুট করেই তোহার বলা একটা কথা মাথায় আসে।আপনি ওর ক্রাশ।মেয়েটার ভীষণ পছন্দ আপনাকে।আপনার ব্যাপারে এমন কোন নিউজ বের হবে তার তোহা জানবেনা কোনো দিন হয়নি এরকম।ওর ফোনের গুগলেও আপনার নাম সার্চ লিস্টের প্রথমে থাকে।সারাদিন আপনার সমন্ধে বলে বলে কান পঁচিয়ে দিতো আমার।কথায় কথায়
একদিন বললো আপনার কাছে যাওয়া মেয়েদের ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড এ পাঁচ লাখ করে দেয়া হয়।আমি ওইদিন বিশ্বাস করিনি।এত টাকা কার হয়? ওয়ান নাইট স্ট্যান্ডে পঁাচ লাখ দেবে!আলাদিনের চেরাগ আছে নাকী?হেসে উড়িয়ে দেই এসব বলে।কিন্তু বাবার অসুস্থতায় আমার সেদিন সব বিশ্বাস যোগ্য মনে হলো।মনে হলো বাবাকে বাঁচানোর এই একটাই রাস্তা।আর কোনও কিছু ভাবিনি।আর -আর -সি হোটেলের এড্রেস জোগার করে বেরিয়ে পরি।
ওখানে গিয়েও আমি আশাহত।মিস সুভা জানালেন টাকার ব্যাপার আপনার মন মর্জি মোতাবেক।আপনার মুডের ওপরে নির্ভর করে ওটা।যাকে আপনার মনে ধরবে শুধুমাত্র তাকেই খুশি হয়ে পাঁচ লাখ দিয়ে থাকেন।কিন্তু যাকে ভালো লাগেনা তাকে কোনো রকম কিছু।আমার অবস্থা তখন অভাগির সাগর শুকানোর মতো।কিন্তু আশা আমি ছাড়িনি।উপায় ও নেই যে।মেহরাব আঙ্কেল কে বলে একদিনের সময় চেয়েছি।উনিও বলেছেন ওই রাতটা বাবাকে দেখে রাখবেন।নিজ দায়িত্বে। উনি ভালো মানুষ ছিলেন।
কিন্তু মিস সুভা আমাকে কিছুতেই নেবেন না।অন্য মেয়ে নিয়েছেন উনি।আজ রাতে সেই যাবে।কিন্তু আমারও যে আজ রাতটাই হাতে আছে।আমি ওনার পা চেপে ধরি।ভেঙে পরি কান্নায়।উনি খুব অবাক হন।আমার চোখের পানি দেখে দয়া হয়েছিলো ওনার।ঠিক করা মেয়েটিকে বাদ দিয়ে ওই রাতে আপনার রুমে পাঠাতে আমাকে সিলেক্ট করলেন।আমি শুধু একটা কলের পুতুলে পরিনত হই তখন।মনে মনে প্রার্থনা করি একটা ম্যাজিক হোক,সতিত্ব বিলানো ছাড়াই টাকা টা ম্যানেজ হোক।ওদিকে চিন্তায়ও ছিলাম।আপনি কী আমাকে পছন্দ করবেন? আমি পাবোতো পাঁচ লাখ টাকা?অনেক অপেক্ষা শেষে আপনি এলেন।তারপর সকালে যখন টেবিলে রাখা চেক টায় পাঁচ লাখ টাকা লেখা পাই আমার আনন্দের সীমা ছিলোনা।রাতের সব দুঃখ কষ্ট এক নিমিষে ভুলে যাই আমি।ছুটে যাই হাসপাতালে। বাবার অপারেশন হয়।বাবা বেঁচে ফেরেন।চোখ খুলে আমাকে অস্পষ্ট আওয়াজে যখন ডাকেন ‘ সেঁজুতি, আম্মা, বলেন আমার সমস্ত যন্ত্রনার মলম ছিলো সেই ডাক।আমার আর কোনো দুঃখ ছিলোনা।কোনো দুঃখ না।বাবা সুস্থ হতেই বারবার জিজ্ঞেস করতেন,এত টাকা কোথায় পেলাম।আমিও মিথ্যে উত্তর দেই,লোন নিয়েছি তোহার থেকে। বাবা মেনে নেন।আজ অব্দি এই সত্যিটা কেউ জানেনা।বাবা জানলে হয়তো ঘৃনায় আমার মুখ দেখবেন না।অনেক বড় আঘাত পাবেন।আত্মহত্যাও করতে পারেন।এসব ভেবেই প্রতিনিয়ত গুমরে মরছি আমি।এই কষ্টটা শুধুমাত্র নিজের মধ্যে রেখেছি।বিশ্বাস করুন আমি চাইনি ওইরাতে ওরকম রাস্তা বেছে নিতে।কিন্তু বাবার মুখ চেয়ে আর থাকতে পারিনি।টাকার কাছে বিলিয়েছি নিজেকে।আমার উপায় ছিলোনা।সত্যিই ছিলোনা।
সেঁজুতি দুহাতে মুখ ঢেকে হুহু করে কেঁদে ওঠে।কথাগুলো বলতে অনেক সময় লেগেছে।বারবার থেমে থেমে বলেছে।কখনও লম্বা করে নিঃশ্বাস নিয়ে বলেছে।পুরোটা সময় রুদ্র ধৈর্য ধরে বসেছিলো।একিভাবে।হাটুমুড়ে।অবশেষে সব কৌতুহলের অবসান হলো।কিন্তু এখন মনে হচ্ছে না শুনলেই ভালো হতো।এত কেন ভারী লাগছে বুকটা?যেন কয়েকশ মন ওজনের পাথর রেখেছে কেউ।
একটা মেয়ে কতোটা অসহায় হলে এমন একটা সিদ্ধান্ত নেয়!তার চারদিক ঘিরে এতো এতো প্রপার্টির ছড়াছড়ির জন্যে আদৌ টাকা কোনও বড় ব্যাপার মনে হয়নি কোনও দিন।অথচ যে টাকা মেয়েদের সাথে এক রাত কাটাতে খরচ করে আসছে সেই টাকার জন্যে কোনো সন্তান হাহাকার করে।বাবার জীবন বাঁচাতে কোনো মেয়ে তার সতীত্ব বিলিয়ে দেয়?
এই বুঝি টাকার মূল্য,,??
সেজুতি তখনও কাঁদছে।ফোঁপাচ্ছে।মেয়েটা দুঃখ পাচ্ছে ওইসব মনে করে।কিন্তু এই কথাগুলো রুদ্রর জানা যে খুব দরকার ছিলো।রুদ্র ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে সেঁজুতির দুহাত মুখ থেকে সরালো।সেঁজুতির চোখমুখ টকটকে লাল তখন।এই মুখটা দেখলেই স্পন্দন বেড়ে যায় রুদ্রর বুকের।উফ! মহা ঝামেলা তো।
রুদ্র ন্যানো সেকেন্ডে নিজেকে সামলায়।সেজুতির দুচোখের কার্নিশ বেয়ে গড়ানো পানি টুকু নিজের দু আঙুল দিয়ে মুছে দেয়।বরফ কন্ঠে বলে,
” কেঁদে নিন সেঁজুতি।এটাই যেন আপনার জীবনের শেষ কান্না হয়।এরপর সব টা হোক সুখ আর শান্তির!
সেঁজুতি নিশব্দে কাঁদছিলো।রুদ্র উঠে দাঁড়িয়ে হঠাৎই উৎফুল্ল কন্ঠে বলল ” চলুন,আপনাকে আপনার প্রিয় হাওয়াই মিঠাই খাওয়াব।
সেঁজুতির কান্না থেমে গেলো তাৎক্ষণিক। হা করে বলল,
‘ এখানে হাওয়াই মিঠাই কোথায় পাব?
রুদ্র অনিশ্চিত,
‘ পাওয়া যাবেনা?
‘ আমি তো জানিনা।
‘না গেলে না। অনলাইনে অর্ডার করব।
সেঁজুতি চোখ বড় করে বলল
” আপনি অনলাইনে হাওয়াই মিঠাই অর্ডার করবেন?
” হ্যা।কেন? করা যায়না?
সেঁজুতি ফিক করে হেসে ফেলল। চোখে তখনও জল।এই সময়ে মেয়েটাকে কী সুন্দর লাগছে ওকী জানে?রুদ্র সেঁজুতির হাসি দেখেই বুঝলো সে বোঁকা বোঁকা কথা বলেছে।ঘাঁড় চুলকে বলল,
‘ ঠিক আছে চলুন।সন্ধ্যা হচ্ছে। ফিরতে হবে।
সেঁজুতি মাথা দোলায়।রুদ্র আজ আর সামনে হাটে না।সেঁজুতির সাথে ধীরে সুস্থে পা মেলায়।পার্ক থেকে বের হতেই চোখে পরে ফুচকার ছোট খাটো দোকান।রুদ্র দাঁড়িয়ে পরলে সেঁজুতিও দাঁড়ালো।কৌতুহলে শুধালো ” কী হয়েছে?
‘ মেয়েদের নাকী ফুচকা অনেক পছন্দ!খাবেন ?
‘ আমার তো পানিপুরী বেশি পছন্দ।ফুসকা নয়।
রুদ্র মুখ বিকৃত করে চেষ্টা করলো নামটা বলতে।এ নাম সে জন্মে শোনেনি।রুদ্রর চেহারা দেখেই সেঁজুতির প্রচন্ড হাসি পেলো।হেসেও ফেলল শব্দ করে।রুদ্র মনে মনে স্বস্তি পেলো।যাক! মেয়েটার মন ভালো হলো।
তারপর পুরো বিশ মিনিট খোঁজ করে পানি পুরির দেখা মেলে।রুদ্রতো চেনেনা।সেঁজুতিই পেলো।রুদ্র দেখেই জিজ্ঞেস করলো ‘ এটাতো ফুসকার মতই দেখতে।নাম আলাদা কেন?
সেঁজুতি বলল ‘ সেটা মুখে দিলে বুঝবেন।
রুদ্র মেনে নিলো।তবে সে খাবেনা।এসব রাস্তার খাবার খেলে আজ আর সুস্থ থাকতে হবেনা।কয়বার ওয়াশরুমে আউট-ইন করতে হবে গুনেও মনে রাখা যাবেনা।সেঁজুতি একাই খেলো।পুরো তিন প্লেট।রুদ্রকে অনেকবার বললেও খায়নি।শুধু মন দিয়ে সেঁজুতির পানিপুরি মুখে পুরে চোখ বন্ধ করে ফেলার সময় টা দেখেছে।
ফিরতে ফিরতে রাত আটটা বাজলো ওদের।সেঁজুতির কয়েক রুম পরে আবিরের রুম।রুদ্র আগে আগে হেটে এসেছে
সেঁজুতি রুমে ঢুকতে গিয়ে হঠাৎ ইলেক্ট্রিসিটি চলে যায়।জেনারেটর চালু হবে সেকেন্ড খানেকের মধ্যে।তবে সেঁজুতি তো সেঁজুতিই। ওইটুকু সময়েই একজনের সাথে ধাক্কা লাগলো।দুইজন দুইদিকে ছিটকে পরলো।তখনি জেনারেটর চালু হলো।সেঁজুতি ভয়ে চিৎকার করে দিয়েছিলো।অন্যজনের হাতে কিছু একটা ছিলো যা পরতেই বিকট শব্দ হয়।রুদ্র সেঁজুতির চিৎকার শুনেই রুমে থেকে মাথা বের করে তাকায়।জেনারেটরের আলোতে দেখলো সেঁজুতি উঠছে মেঝে থেকে।ধাক্কা লাগা ব্যাক্তিটি একজন সার্ভেন্ট।হাতে শুকনো খাবারের ট্রে আর ওষুধ ছিলো। সেগুলোই পরেছে ফ্লোরে।রুদ্রর রাগ হলো, ‘ এই মেয়ে এত্ত ধাক্কা খায়।ধাক্কা খেলেই মেঝেতে চিৎ হয়ে পরে।একে জাদুঘরে রাখা উচিত না?
সার্ভেন্ট লোকটি সেঁজুতি কে স্যরি বলল।সেঁজুতির সেদিকে মন নেই।তার মুখ কালো খাবার পরে যাওয়ায়।এ জন্যে লোকটা আবার বঁকা খাবেনাতো?দোষ তো তারই।ওমন হুটোপুটি করে আসার কী দরকার ছিলো?
সার্ভেন্ট লোকটি যেতে নিলে সেঁজুতি ডাকলো।রুদ্র দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ। সেঁজুতি ব্যাগ থেকে টাকা বের করে সার্ভেন্ট লোকটির হাতে দিয়ে নম্র কন্ঠে বলল ‘ আমি ভীষণ দুঃখিত।আপনাকে দেখতে পাইনি।
লোকটি অবাক হয়েছে।।ইতস্তত করে বললেন “থ্যাংক ইউ ম্যাম।তবে এটার দরকার নেই।
‘ কেন?আরে রাখুন না।যাদের খাবার নষ্ট হলো তারাতো…
লোকটি মাঝপথে বলে ওঠে,
‘ ম্যাম আমি বুঝতে পেরেছি।আপনি ভীষণ ভালো মনের মানুষ। তবে এটার প্রয়োজন নেই।কারন আবির স্যারও অনেক ভালো মানুষ। উনি কিছু বলবেন না।
সেঁজুতি ভ্রু কোঁচকালো।রুদ্র এত সময় চুপ ছিলো।আবিরের নাম শুনে দেহ পুরো বার করে বাইরে এলো দরজার।এতক্ষনে ওকে দেখতে পেলো সেঁজুতি।একবার রুদ্রকে দেখে সার্ভেন্টকে জিজ্ঞেস করে,
” এত ওষুধ? ওনার?কি হয়েছে ওনার?
‘ আমি ঠিক জানিনা ম্যাম।উনি সকালে আহত হয়ে ফিরেছেন।যতটুকু শুনলাম ওনাকে ছিনতাইকারী ধরেছিলো।গাড়ির গ্লাস ফেটেছে আর ওনাকেও আঘাত করেছে হাতে পায়ে।এইটুকুই।
আমি এখন আসি ম্যাম?
‘ জ্বি?আচ্ছা আসুন।
লোকটি চলে যেতেই সেঁজুতি রুদ্রর দিকে ফিরলো।রুদ্র তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে আছে। সেঁজুতি চিন্তিত কন্ঠে বলল,
‘ আবির অসুস্থ।ওনাকে দেখতে যাওয়া উচিত না?
রুদ্র কঁড়া কন্ঠে বলল, ‘ কেন? আপনার কাজ নেই?এখানে আপনাকে আমি অফিসের কাজে এনেছি।অন্য কোথাও মন না দিয়ে কাজে ফোকাস করুন।কাল ফিরব আমরা।সব রেডি করুন যান।
‘ আমার তো সব রেডি স্যার।ব্যাগ গুছিয়েছি আমি।সকালেই।
রুদ্র সময় নিয়ে বলল,
‘ আমার টা গুছিয়ে দিয়ে যান তাহলে । উম, ফ্রেশ হয়ে আসুন আগে।
সেঁজুতি মাথা দুলিয়ে রুমে ঢুকলো।রুদ্র ও ধড়াম করে দরজা লাগালো।মুখে মিটিমিটি হাসি।
‘ বলেছিলাম না মিস্টার আবির?
আমার জিনিসে সামান্য হস্তক্ষেপ ও বন্ধ!হাত পা ভেঙে কেমন লাগছে এখন?
চলবে,