প্রনয় পর্ব-২+৩

0
680

#প্রনয়
# নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি
পর্ব-২+৩
ভ্যাপসা গরম।বাইরে তেজী সূর্য থাকলেও এখানে প্রচন্ড অন্ধকার।হাত খুঁজে পাওয়াও মুশকিল।মাথার ওপর জ্বলছে হলদে লাইট।হাত মুখ বাঁধা অবস্থায় চেয়ারে পরে আছে আলতাফ।চারপাশে কালো পোশাকের বন্দুকধারী লোক সব।এদের দেখতেই ভয়ে জড়োসড়ো সে।এত কাহীনি করে পালিয়েও বাঁচা গেলোনা।রুদ্রর লম্বা হাতের সামনে নিজেকে এখন চুনোপুঁটি বলতেও দ্বিধা হচ্ছে।ঠিক লোকটা খুঁজে নিলো তাকে।ধরেও ফেলল।আর শেষ মেষে এখন সে জান হাতে নিয়ে বসে আছে এখানে।যে কোনো সময় রুদ্র আসবে আর দ্যা এন্ড করে দেবে তার।
আলতাফের ভাবনার মধ্যেই কতক পায়ের আওয়াজ ভেসে এলো কানে।রুদ্রকে দেখতেই ভয়ে কলিজা হাতে চলে এলো তার।লোকটা আজ তাকে মেরেই ফেলবে।পেছনে অভ্র আছে।রুদ্র এসেই ঠিক তার উল্টোদিকের চেয়ারে বসলো।তাকালো।আলতাফের দিকে। এইতো, এই দৃষ্টি দেখলেই আলতাফের পানি শুকিয়ে আসে দেহের।রক্তশূন্যতায় মাথা ঝিমঝিম করে।কি কুক্ষনে যে রুদ্রর বিরোধিতা করতে গিয়েছিলো বুঝে পেলোনা। রুদ্র তাকিয়েই থাকলো।ছোট ছোট চোখ দুটো ধারালো অস্ত্র যেন।হুট করে এক টান দিয়ে আলতাফের মুখে লাগানো স্কচটেপ টা টেনে খুলল।ঠোঁটের চামড়া যেন ছিড়ে নিলো মনে হলো আলতাফের।তবে কথা বলার সুযোগ পেয়েই হাসফাস করে উঠলো সে। আর্তনাদ করে বলল,
‘ স্যার আমার ভুল হয়ে গিয়েছে আমাকে ক্ষমা করে দিন।আর জীবনে এই ভুল করবনা আমি।
রুদ্র যেন এই অপেক্ষাতেই ছিলো।আলতাফ শেষ করতেই হেসে উঠলো সে।আলতাফের ভয় গাঢ় হলো আরো।শরীরের পশম দাঁড়িয়ে গেলো।রুদ্র ভ্রু উঁচিয়ে বলল,
‘ ভুল? আচ্ছা? ওকে ফাইন,আজকে তোমাকে ক্ষমা করলাম।তারপর আলতাফ? তারপর তুমি আবার আমার গোপন খবর কালেক্ট করে রওনাফ কে দিয়ে আসবে তাইতো?
আলতাফ শুকনো জ্বিভ নেড়ে উত্তর দিতে পারলোনা।চোখ দিয়ে আকুতি ঝরালো।দুদিকে মাথা নাড়লো ঘনঘন।এই কাজ ভুলেও সে আর করবেনা।বহু কষ্টে আওড়ালো,
‘ সেকেন্ড চান্স স্যার…

‘ রুদ্রের ডিকশোনারীতে সেকেন্ড চান্স বলে কিছু নেই।

ঠান্ডা স্বরে বলল রুদ্র।যে স্বরে হিম হয়ে এলো প্রত্যেকের গা।রুদ্র হাত পাতলো। মুহুর্তেই হাতের তালুতে কেউ একজন হাজির করলো কালো গান।যেটা দেখতেই আলতাফের চোখ উঠে এলো আকাশে।হৃদপিণ্ড ছলাৎ করে বার হলো যেন।রুদ্র সময় নিলোনা।একেবারে শ্যুট করলো আলতাফের বুক বরাবর। আলতাফ উল্টে পরলো মেঝেতে।গলা কা/টা মুরগীর মতো ছটফট করলো খানিক ক্ষন।এরপর ঝিমিয়ে পরলো।রুদ্র হাতের রিভলবার আলতাফের ব/ডির পাশে ছুড়ে ফেলল।গ্লাভস দুটো খুলে অভ্রর দিকে তাকালো।কপাল জুড়ে ঘামে জুবুথুবু ছেলেটা।রুদ্র বডি দেখিয়ে ইশারা করলো,

‘ এটার যেন কোনও চিহ্ন না থাকে।

– ওকে ভাই,,ওর টিকিটাও কেউ খুজে পাবেনা।

– গুড..
– কথা শেষ করে পকেটে হাত ঢুকিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো রুদ্র।হঠাৎই একটি গুলির শব্দ। কান ঝাঝিয়ে উঠলো অভ্রর।ওদিকে প্রচন্ড পিঠ ব্যাথায় কাত/রে উঠলো রুদ্র।ব্যাপারটা বোধগম্য হতেই পেছনে ফিরে তাকালো রুদ্র।উপস্থিত সকলে হতচকিত, হতভম্ব তখন।বুঝে ওঠার আগেই পরপর আরো দুইটা গু/লি ছুড়লো আলতাফ।রুদ্র কুকড়ে উঠে পিছিয়ে গেলো দুপা।চেপে ধরলো বুক।আলতাফ কুটিল হেসে বলল,

-কি ভেবেছিস আমাকে মা/রবি?আমিতো মর/বো জানি,কিন্তু তার আগে তোকে মেরে যাব।তোকে তো শেষ করাই লক্ষ্য ছিলো আমাদের।কিন্তু সেটা economically,,, এবার ফিজিক্যালিও করে দিলাম আমি।
-ব্যাপার টা এতোটাই দ্রত ঘটে গেছে যে অভ্র সহসবাই বেশ ভড়কে গিয়েছিলো।
হুশ আসতেই কালো পোশাকের একজন গিয়ে মাথা বরাবর লা/থি বসালো আলতাফের।ব্যাথায় আর্তনাদ করে হাত থেকে রিভলবার ফেলে মাথা চেপে ধরলো..আলতাফ।লোকটা আরো কয়েকটা লাথি মারলো একিজায়গায়।সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত প্রত্যেকে আলতাফ কে গু/লি করতেই শার্ট ছিড়ে ঝা/ঝ/ড়া হলো তার বুক।এদিকে বুকে হাত দিয়ে মেঝেতে বসে পড়লো রুদ্র।ভাই বলে এক গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে ছুটে গেলো অভ্র।

– রেহান গাড়ি বের করো ফাস্ট।

গাড়িতে রুদ্রর মাথা কোলে নিয়ে বসে আছে অভ্র।গায়ের জামা র/ক্তে মাখামাখি তার।পাগলের মতো কতক্ষন হাত ডলছ্ব রুদ্রর কতক্ষন হাত বোলাচ্ছে মাথায়।যত দ্রুত সম্ভব ড্রাইভ করছে রেহান।বয়স কম লোকটার।প্রথমে তার বাবা ড্রাইভার ছিলেন রুদ্রদের।এখন সে।কিন্তু এরকম অবস্থায় আজ প্রথম পরলো। রুদ্র কে কখনও রক্তারক্তিতে সরাসরি অংশ নিতে দেখেনি সে।হ্যা আন্ডারওয়ার্ল্ড-এ রুদ্রর আনাগোনা আছে।কিন্তু সেটাত প্রত্যক্ষ ভাবে নয়।

‘স্যার,,এই মুহুর্তে ভালো ক্লিনিকে নিতে গেলে স্যার কে বাচানো যাবেনা,,কাছের কোনও হাসপাতালে নেই?

রেহানের কথায় অভ্র আরো ভয় পেলো।
– যেটা ভালো হয় করো,কিন্ত তাড়াতাড়ি করো প্লিজ,,ভাইয়ের সেন্স চলে যাচ্ছে…

______
স্ট্রেচারে করে দুজন নার্স রুদ্র কে অপারেশন থিয়েটারের ভেতরে নিয়ে গেলো।অভ্র পায়চারী করত্ব শুরু করলো সমানে।চিন্তায় রুহু কাঁপছে তার।তার মাথার ওপর এই একজনই আছে।যাকে বলে বটবৃক্ষ। এই ভাই-ই তার সব,,ভাইয়ের কিছু হলে সে যে একদম একা।

টানা এক ঘন্টা পর ওটি থেকে ডা: হোসাইন বের হয়।লম্বায় ছয় ফুট লোকটা।দেহের গড়ন প্রসস্থ বেশ।চেহারার আদলে একটা শ্রদ্ধা ভাজন ভাব আছে।ওনাকে দেখতেই এগিয়ে এলো অভ্র,,

‘ভাইয়ের কি অবস্থা ডক্টর,,?
দৈণন্দিন এমন হাজার পেশেন্ট আসে দোরগোড়ায়। এতে অভ্যস্ত হোসাইন।তবুও অভ্রের ব্যাকুলতা দেখে উনিও বেশ চিন্তিত কন্ঠে বললেন,
– অনেক টা ব্লি/ডিং হয়ে গিয়েছে,, এমার্জেন্সী ব্লা/ড লাগবে…

– তো অপেক্ষা করছেন কেনো?

– দেখুন ও -নেগেটিভ একটি রেয়ার ব্লা/ড গ্রুপ,,সচরাচর পাওয়া যায়না,,আর আমাদের এখানেও সংগ্রহ করা নেই এখন।প্রতিনিয়ত এমন অনেক পেশেন্ট আসে যাদের ব্লাড দিতে হয়।সব সময় হাসপাতাল মজুদ রাখতে সক্ষম হয়না।
অভ্র জ্বিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজালো,
– বুঝেছি,,আমি ব্লাড ব্যাং/ক থেকে আনানোর ব্যাবস্থা করছি

‘ তাড়াতাড়ি করবেন।অবস্থা ভালো না।

‘শুনুন।
পাশ থেকে মেয়েলী আওয়াজে যেতে যেতে ফিরে তাকালো অভ্র।হোসাইন ও তাকালো একিভাবে।অভ্র বলল,
‘ আমাকে বলছেন?

– আমি একটু আগে আপনাদের সব কথা শুনেছি।আসলে
আমারও সেইম ব্লা/ড গ্রুপ,আমি র/ক্ত দিতে চাই।.

– পেশেন্ট কে তুমি চেনো?

হোসাইন অতি আগ্রহে করে ফেলল প্রশ্নটা।সেঁজুতি সহজ কন্ঠে বলল
– আব,না…কিন্তু তোমাদের কথায় বুঝলাম ব্যাপার টা অনেক সিরিয়াস,,,ইমিডিয়েট র/ক্ত প্রয়োজন।

অভ্রর বিষয়টা ভালো লাগেনি।সে তিরিক্ষ মেজাজে বলল,
– আপনাকে র/ক্ত দিতে হবেনা,আমি র/ক্ত নিয়ে আসার ব্যাবস্থা করছি,,আমার একটা ফোন কলেই এখানে ব্লা/ড ব্যাংক বসে যাবে।

সেঁজুতি ভ্রু কোঁচকালো। কিন্তু শান্ত কন্ঠে বলল,
– দেখুন আমি জানি,,আপনাদের টাকা আছে তাই এইগুলো হতেই পারে।কিন্তু এই হস্পিটালের ব্লা/ড ব্যাংক গুলো অনেকটা দূরে।,ব্লা/ড নিয়ে আসতে আসতে ঘন্টা খানেকতো লেগেই যাবে,
এতক্ষনে যদি পেশেন্ট এর ভালো মন্দ কিছু একটা হয়ে যায়?তখন আপনার বসানো ব্লা/ড ব্যাংক কোনও কাজেই লাগবেনা আপনার,তাই বলছিলাম ব্যাপারটা ভেবে দেখুন,,
হোসাইন বললেন,

– মি, অভ্র.. মেয়েটা ঠিকই বলছে,পেশেন্ট এর তিনটি গুলি লেগেছে এবং একই জায়গায়,,বুঝতে পারছেন সিচ্যুয়েশন কতটা ক্রিটিকাল? হাতে কিন্তু বেশি সময় নেই,
অভ্র সময় নিলো।ভাবলো।দুজন মানুষ চেয়ে আছে তার দিকে।ওদিকে রুদ্রর অবস্থাও ভালো না।তাই বলল,
– আচ্ছা বেশ,,প্লিজ যা করার তাড়াতাড়ি করবেন,,
ভাইয়ের যেনো কিছু না হয়

– আমি আমার বেস্ট টা দিয়ে ট্রাই করবো,,সেজুতি মা আমার সাথে এসো।

ওনারা যেতেই অভ্র পায়চারী শুরু করলো আবার।
মেয়েটার থেকে র/ক্ত নেয়া কি ঠিক হলো?
কোনও মেয়ের র/ক্ত ভাইয়ের শরীরে,এটা শুনলে ভাই যদি রেগে যায়??কিন্তু করারতো কিছুই ছিলোনা।
ভাই নাহয় দুটো ধমক দেবে।
ভাইকে বাচাতে এটুকু সহ্য করে নিতে পারবো আমি,,

– হয়ে গেছে,
– হাতের স্ট্রিপ খুলতে খুলতে বললেন হোসাইন।

সেঁজুতি আস্তে করে উঠে বসলো।
– ঠিক আছে তবে আমি আসছি।
– যেতে নিতে আবার ফিরে এলো। মনে করার ভঙিতে বলল,
ওহ হ্যা,,বাবার সামনে ভুলেও বলতে যেওনা,,খুব বকবে..
হোসাইন মাথায় হাত বোলালো ওর,
– আচ্ছা বেশ বলবোনা,,

– আচ্ছা..
সেঁজুতি চলে গেলো।হোসাইন দম ফেলল বড় করে।
‘মেয়েটা বড্ড বেশি ভালো,,আমির তুই বড্ড ভাগ্যবান এমন হীরের টুকরো মেয়ে পেয়েছিস।

সেঁজুতি বের হতেই হাতে থাকা চেক টা ওর দিকে এগিয়ে দিলো অভ্র।’নিন
সেঁজুতি কপাল কুঁচকে বলল
– কি এটা?

– এখানে দু লাখের এমাউন্ট দেয়া আছে,কম হলে বলবেন,,বাড়িয়ে দেয়া হবে।
শত হলেও আপনি আমার ভাইকে বাচিয়েছেন।

সেঁজুতির এতক্ষনের ভালো মেজাজ তেঁতে গেলো মুহুর্তেই।
– আমি কি আপনার কাছে র/ক্ত বেচেছি?
অভ্র হাত গোটালো।বলল।
– না তা কেন হবে?আমি তো তা বলিনি।

সেঁজুতি কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়ালো।
– তবে কি এটা বোঝাতে চাইছেন আপনারা অনেক বড়লোক?আপনাদের অনেক টাকা? শুনুন,
আমি আপনার ভাইকে টাকার বিনিময়ে বাচাইনি।বাঁচিয়েছি নিজের বিবেক থেকে। এই এটা,দেখিয়ে আপনি আমাকে অপমান বৈ কিছুই করলেন না।আর সত্যি বলতে আপনাদের বড়লোক দের এমন স্বভাবের জন্যেই বিপদ এর সময়ে আপনারা কাউকে পাশে পান না। প্রত্যেক টা মানুষেরই আত্বসন্মান আছে জেনে রাখবেন।টাকা দিয়ে সব সময় সেটাকে পরিমাপ করতে কেন যান? এছাড়া আপনাদের আর কাজ নেই নাকী?যত্তসব!

.সেঁজুতি মুখ ঝামটা মেরে চলে গেলো।অভ্র এতক্ষন হা করে তাকিয়ে ছিলো ওর দিকে।
সেজুথির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে অভ্র বিড়বিড় করে বলে উঠলো..

– বাপরে,,মেয়ে তো নয়,,একেবারে ঝাল মরিচ
_____

প্রায় তিন দিন লেগে গেছে রুদ্রর,,পুরোপুরি সুস্থ হতে।বুকের ব্যান্ডেজ ও খোলা হয়েছে।কদিন বেড রেস্টে থাকতে হবে এখন।অভ্র একটা মস্ত বড় ফুলের বুকে নিয়ে ঢুকলো কেবিনে।হাসি হাসি মুখ করে বলল,

– ভাই এখন কেমন আছো?
রুদ্র ছোট করে বলল,
– ঠিক আছি

– যাক।জানো কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি।
কত ব্লিডিং হয়ে ছিলো তোমার।ডক্টর তো আমাকে রীতিমতো ঘাবড়ে দিয়েছিলেন।
ব্লা/ড ব্যাংক গুলোও এখানে অনেক দূরে দূরে,,টাইমলি যে হাতের কাছে পাওয়া যাবে সেরকম কোনও সুযোগ ই নেই জানো?এটার কোনো মানে হয় বলো?
ভাগ্যিস ওই মেয়েটা সময় মতো র/ক্ত দিয়েছিলো নাহল
রুদ্র মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বলল

– কোন মেয়ে?

হুশ আসতেই জ্বিভ কাটলো অভ্র,
‘এইরে যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই কেনো সন্ধ্যা হয়,ভাইয়ের সামনেই বেফাস কথা বলে দিলো…এবার কি হবে???

রুদ্র গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
– কিছু জিজ্ঞেস করেছি অভ্র,,
অভ্র উশখুশ করলো খানিকক্ষন।ধমক শোনার জন্যে প্রস্তুতি নিলো।আমতাআমতা করে বলল,
– একটা মেয়ে র/ক্ত দিয়েছে ভাই,আমি চিনিনা তাকে,, ঢোক গিলে)আ,আমি নিতে চাইনি..কিন্তু তোমার যা অবস্থা ছিলো এছাড়া কোনও ওয়ে ছিলোনা,,

রুদ্র শান্ত ভাবে প্রশ্ন ছুড়লো,
– ,,কত এমাউন্ট দাবি করলো?

রুদ্রর কথায় অভ্র শতাধিক আগ্রহ পেলো। উদ্বেগ নিয়ে বলল,
– একটা টাকাও নেয়নি ভাই,,উল্টে আমি টাকা দিতে যাওয়ায় আমাকে কত গুলো কথা শুনিয়ে দিয়েছে…

রুদ্র অবাক চোখে তাকালো।পরমুহূর্তেই কিছু একটা ভেবে বলল,
‘ওকে ফাইন,, মেয়েটার এড্রেস কালেক্ট কর।আর টাকা পাঠিয়ে দে।ইউ নো না?রুদ্র রওশন চৌধুরী কারো ঋন রাখেনা…

– ওকে ভাই,,আমি পাঠিয়ে দেবো…

– হুম চল।
– .রায়জাদা কোম্পানির সাথে ডিল টা আজকেই ফাইনাল করতে হবে..
অভ্র চোখ দুটো বড় বড় করে বলল,
– সেকি? এই অবস্থায়?? আমি বলিকি আজ ছেড়ে দাও…
– রুদ্র ঠান্ডা স্বরে বলল,
– বিজনেসে আমি কখনও আপোস করিনি..অভ্র।.আর না করবো..

অভ্র বুঝলো তার বলে লাভ নেই।রুদ্র কী কথা শোন্র লোক?মাথা নেড়ে বলল
– ঠিক আছে।

করিডোরের কাছে এসে অভ্র দাঁড়ালো।রুদ্রর দিক ফিরে বলল,

– ভাই,তুমি একটু দাড়াও,,আমি বিল আর বাকী ফর্মালিটিস গুলো সেড়ে আসছি…
রুদ্রর ছোট উত্তর,
– হুম…
অভ্র রিসপশনের দিক হেটে গেলো হেলেদুলে।
রুদ্র করিডোরে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।,চারপাশে কত লোকজন , কেউ কাদছে,কেউ মূর্তির মতো বসে আছে নিরবে।আচ্ছা, এরা তো কোনও না কোনও রোগীর ফ্যামিলি।তীব্র অপেক্ষায় তাদের কাছের মানুষ, আপনজন কবে সুস্থ হবে তার। আজ যদি সে মরে যেত এভাবে কেউ কি কাঁদতো?
কি অদ্ভূত.. তার মত হয়তো একেবারে একা কেউ নেই…সে মরে গেলে দুফোটা চোখের জল ফেলার ও কেউ নেই।এরকম শাস্তিও হয়?টাকার কুমির লোকটা নিতান্তই একা।

ভাবার একফাকে রুদ্রর চোখ পড়লো কিছুটা দূরে। সাদা ড্রেস পরিহিতা একটি মেয়ে।মেয়েটিকে খুব সম্ভবত একজন ডাক্তার প্রেস্ক্রিপশন দেখিয়ে কিছু একটা বুঝিয়ে দিচ্ছেন।মেয়েটিও মাথা নেড়ে নেড়ে বুঝে নিচ্ছে।
ব্যাপার টা আহামরি কিছু নয় হয়ত।.
কিন্তু তবুও রুদ্র কিছুক্ষন তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তে তাকিয়ে রইলো মেয়েটার দিকে।তার মনে হচ্ছে মেয়েটিকে সে কোথাও একটা দেখেছে।
– এটা তো সেই মেয়ে যে লাস্ট নাইট আমার বেড পার্টনার ছিলো…..

চলবে…

# প্রনয়
নুসরাত সুলতানা সেজুতি
পর্ব – ৩

কথাটা মনে পড়া মাত্রই মুখ ঘুরিয়ে নিলো রুদ্র।অদ্ভূত ঘৃনা লাগলো তার।এসব মেয়েদের প্রতি তার ইন্টারেস্ট ওই রাত অব্দিই।এরি মাঝে হাজির হলো অভ্র।

— ভাই হয়ে গেছে চলো

— হুম..

সেঁজুতি কেবিনে ঢুকলো।বেডের ওপর একজন পৌঢ় বসে আছেন।সেঁজুতি ঢুকতেই জিজ্ঞেস করলেন,
কিরে মা কোথায় গিয়েছিলি?

— ডাক্তারের থেকে সব ওষুধ বুঝে নিলাম বাবা,,আজকে তোমার রিলিজ হয়ে যাচ্ছে কিনা..

আমির দম ছেড়ে বলল
— যাক,, এবার অন্তত বাড়ি ফিরতে পারবো,,এতদিন এই চার দেয়ালে দম আটকে আসছিলো একেবারে
তখনি কেবিনে ঢুকলেন হোসাইন।আমিরের কথা কানে যেতেই বললেন,
— কেনো রে শালা,, এখানে আদর যত্ন কম পড়ে গেছিলো নাকি?

আমির বিস্ময়ে হতবাক হলো যেন।
— হোসাইন!তুই এখানে?কখন এলি?
হোসাইন আমিরের পায়ের কাছে বসলেন,
— কাল রাতেই এলাম,,সিভিয়ার কেস ছিলো একটা,, আর এসেই একটার পর একটা সামলাচ্ছি,,তবে তুই যে এত টা অসুস্থ সেটা কিন্তু জেনেছি এখানেই এসেই…

— সেজুথি বলেছে?

— হ্যা ওর থেকেই না শুনলাম,,যাক আল্লাহ বাচিয়েছেন,এরকম মেজর এট্যাক হলে রোগীর বাচার চান্স কিন্তু খুবই কম থাকে।
আমির মলিন হাসলো,

— ওই আর কি,,একটা পা খুয়িয়েছি,এখন তো বেচেও মরার মত থাকতে হবে.. এই যা..

সেঁজুতি ওষুধ পত্র গোছগাছ করছিলো এতক্ষন।কথাটা শুনতেই কপট রাগ নিয়ে বলল,
— বাবা? তুমি আবার এসব বলছো?

আমির হাসলো।
— আচ্ছা বাবা,,আর বলবোনা,,

— মনে থাকলেই হলো।
আচ্ছা, আমার কিন্তু সব গুছিয়ে নেয়া শেষ, বিল ও পেইড হয়ে গেছে,,এবার আমরা যেতে পারি..
ডক্টর আংকেল তুমিও চলো।

হোসাইন ফোস করে নিঃশ্বাস ফেলল,
— নারে মা,,সে সুযোগ কি আর আছে,,এখন আবার পেশেন্ট দেখতে হবে।
তবে আমির.. ডাক্তার মেহরাবের সাথে আমার কথা হয়েছে তোকে কিন্তু ফুল বেড রেস্টে থাকতে হবে,,ওকে??

— সে আর বলতে,এই যে আমার মা আছে না( সেজুথির দিকে তাকিয়ে),,খুব শাসন এ রাখে আমাকে..

— ঠিক আছে, তবে আমি এখন উঠি.. পরে গিয়ে দেখে আসবো তোকে।
সেজুথী মামুনি.. বাবার সাথে সাথে নিজের ও খেয়াল রাখবে কেমন ( মাথায় হাত বুলিয়ে)

— আচ্ছা..
সেঁজুতি হাল্কা হেসে মাথা এলালো।
_____

রুদ্র রওশন ইন্ডাস্ট্রিজ এর ভেতর থেকে বের হলো অভ্র আর রুদ্র।প্রখর রোদে গা পুড়ে যাওয়ার জোগাড়।অভ্র রুদ্রর দিক চেয়ে হাফ ছেড়ে বলল,

যাক বাবা এট লাস্ট ডিল টা ফাইনাল হলো,,কত দিন ধরে ঝুলে ছিলো আল্লাহ।

— তোর ওপরে দায়িত্ব দিলে এটাই নরমাল
অভ্র মুখ হা করে বলল,
— আমি? আমি আবার কি করলাম?তাছাড়া নতুন চাল কি ভাতে বাড়ে নাকি . এই জন্যেই না।আমিতো এখনও তোমার থেকে শিখছি..

অভ্রর বকবক রুদ্র শুনলোনা কীনা কে জানে! বলল,
‘রেহান কে গাড়ি গেটের সামনে নিয়ে আসতে বল..

মিনিট পাচেকের মধ্যেই গাড়ি নিয়ে হাজির হলো রেহান।ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে গাড়ি থেকে নেমে ব্যাক সিটের দরজা খুললো সে।
— উঠুন স্যার..

-গাড়িতে উঠতে গিয়ে রুদ্র হঠাৎ লক্ষ্য করলো রেহান কে স্বাভাবিক লাগছেনা।দুশ্চিন্তায় মুখটা ছোট হয়ে আছে।রুদ্র ভ্রু কোঁচকালো,

— তোমার কিছু হয়েছে রেহান?

রেহানের মন আরো খারাপ হলো এতে।এবার নিশ্চুপ হয়ে মাথা নিচু করে রইলো।

‘আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি তোমাকে?

রেহান মুখ ভার রেখেই বলল,
‘আসলে স্যার,,আমার মা আর আমার মেয়ে দুজনারই জন্ডিস হয়েঁছে.. বাবাও বেচে নেই,আর বাড়িতে পুরুষ মানুষ আমিই একা,,এই মুহুর্তে আমার ওখানে থাকা টা খুব দরকার,,যদি আমাকে কদিনের ছুটি দিতেন।
রেহান অসহায় মুখ করে তাকালো।
মা অসুস্থ কথা টা শুনে রুদ্রর চোখ মুখ শক্ত হয়ে এলেও মেয়ের কথা শুনে পরক্ষনেই নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,

— কদিনের ছুটি লাগবে তোমার?

— দিন চারেকের স্যার..

— হুম…………….অভ্র?

পাশ থেকে অভ্র জবাব দেয়,
হ্যা ভাই,,

—ওকে এ মাসের এডভান্স সহ এক সপ্তাহের ছুটি দিয়ে দে

আর হ্যা,( রেহানের দিকে তাকিয়ে)
তোমাকে তোমার মায়ের জন্যে ছুটি দিচ্ছিনা আমি,,
দিচ্ছি তোমার মেয়ের জন্যে,গট ইট??

রুদ্রর উদারতায় রেহানের চোখে পানি এসে গেছিলো।এইতো এক মাস আগেই ঈদের ছুটি ছিলো তার।আজ তাই আবার ছুটি চাইতে ভীষণ অস্বস্তি আর ভয় লাগছিলো।কিন্তু রুদ্র এত সহজে ছুটি দিলো সাথে না চাইতে টাকাও।লোকটা আসলেই নারকেলের মতো।ওপর টা শক্ত ভেতরটা তুলতুলে হয়ত।কী জানি! দেখা হয়নি কখনও।

গাড়িতে উঠে বোসলো রুদ্র,আর তার পাশে অভ্র।
অভ্র খেয়াল করলো রুদ্র গাড়ির জানালা দিয়ে ভাবলেশহীন ভাবে বাইরে তাকিয়ে আছে।মুখে রা নেই।এই মুহুর্তে রুদ্রর মনে কি চলছে অভ্র হয়তো আচ করতে পারলো।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে ভাবলো

— ভাই যে তার মা কে কেন এত ঘৃনা করে কে জানে!

রাতের বেলা,
রুমে বসে পড়ছিলো সেজুতি।পড়ায় নাক মুখ ডুবে আছে তার।এতদিন অনেক পড়া মিস হয়ে গিয়েছে। আর সামনেই ফাইনাল।কি করবে! কোন দিক যাবে।পাশ হবে কীনা আল্লাহ জানেন।

কিছু সময় পর,হাতে করে এক গ্লাস গরম দুধ এনে টেবিলের ওপরে রাখলো আমির।বড় আহ্লাদী স্বরে বললেন,
‘দুধ টা খেয়ে নাও তো মা.

সেঁজুতি যেন আঁতকে উঠলো বাবাকে দেখে।
— সেকি? তুমি এ অবস্থায় কেনো নিয়ে আসতে গেলে.. আমাকে ডাকলেই পারতে বাবা।

আমির হাসলেন,
— আমি ঠিক আছি রে মা,
সেঁজুতি রেগে গেলো।
— বাবা! ডক্টর আংকেল কি বললেন শোনোনি,এখন ফুল বেড রেস্ট।আর তুমি কীনা এভাবে হাটাহাটি করছো? পা ব্যাথা করবেনা?

আমির বিছানার ওপর বসতে বসতে বললেন,
— ডাক্তার রা ওরকম বলে।সারাদিন শুয়ে থাকা যায় নাকি…তাছাড়া আমি এক দম সুস্থ..এখন।পায়ে একটুও ব্যাথা নাই।

— আচ্ছা মেনে নিলাম তুমি সুস্থ,কিন্তু এই গ্লাস টা নিয়ে আসতে তোমার কত কষ্ট হয়েছে আমি জানিনা?

— আমার একটুও কষ্ট হয়নি,,পা গিয়েছে তো কি হয়েছে.. হাত দিয়ে কাজ করতে তো অসুবিধে নেই তাইনা,,আর তুই ওত ভাবিস না তো.. নে খেয়ে নে।।

পরমুহূর্তেই আমির অসহায় কন্ঠে বললেন,
‘হ্যারে মা? আমার জন্যে তোর পড়াশুনায় অনেক ক্ষতি হয়ে গিয়েছে তাইনারে?

সেঁজুতি উদ্বেগ নিয়ে বাবার পায়ের কাছে বসে বলল,
— না বাবা,,এরকম কেন হবে?
আমির মেয়ের মাথায় হাত বোলালেন,
— এই যে দিন রাত হাসপাতালে ছিলিস,,পড়তে পারিস নি,ঠিক মতো ক্লাসে যেতে পারিস নি..

সেঁজুতি হাসলো,
— বাবা! এটা আর এমন কি,,ক্লাসের নোটস আমি তোহার থেকে নিয়ে নেবো,,আর পড়াগুলো আগেই এগিয়ে রেখেছিলাম তো,,তাই অসুবিধে হবেনা..

— ঠিক আছে,,,নে পড়,,আমি বরং তোর পাশে বসি..

সেঁজুতি অবাক চোখে তাকালো,
— সেকি আমিতো রাত জাগবো,,তোমাকে ঘুমোতে হবে বাবা।

— সারাটা দিনই ঘুমিয়েছি,,এখন আর পারছিনা,,তুই পড় আমি বসে থাকি..তোর কিছু লাগলে আমি দেবো,,একদম আমাকে মানা করবিনা..

বাবার দিকে মুচকি হেসে তাকিয়ে রইলো সেজুথি..চোখের কোনা গুলো চিকচিক করে উঠছে তার,,
বাবা তাকে কত ভালোবাসে,এমন বাবাকে কি হারিয়ে যেতে দাওয়া যায় নাকি? উহু…উলটে নিজের সর্বস্ব দিয়ে হলেও নিজের কাছে রেখে দিতে হয়…
….আর সেটাই তো করেছে সে।
__<<< ভাই আসবো? -- আয়.. অনুমতি পেয়ে অভ্র দরজা ছেড়ে ভেতরে এলো।রুদ্র আধশোয়া হয়ে ছিলো বিছানায়। --- ভাই বলছিলাম যে,,মিস সুভা আমাকে কল করেছিলো,একটা মেয়ে এসেছে। তোমার তো আজ শরীর টা ঠিক নেই,, আজ কে কি থাকবে? রুদ্র ঘাড়ে হাত বোলালো।সদ্যশান্ত কন্ঠে বলল, -- অভ্র... অভ্যাস বদলানো যায়,কিন্তু কু অভ্যাস কখনই নয়,, কথাটা শুনেছিস?আই থিংক এর বেশি কিছু বোঝাতে হবে না তোকে.. অভ্র মিটিমিটি হাসলো। -- ওকে ভাই বুঝে গিয়েছি,,মেয়েটাকে পাঠাতে বলছি আমি.. চলবে....

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে