#প্রনয়
#নুসরাত সুলতানা সেজুথি
পর্ব–২২
রুদ্র ঘুমিয়েছে অনেক ক্ষন।রাত গড়িয়ে প্রায় ভোর হওয়ার জোগাড়।রুদ্রর মাথাটা এখনও ওইভাবে সেঁজুতির কোলে রাখা।সেঁজুতি উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে থাই জানলার কাঁচ গলিয়ে অদূরে
।অন্ধকারে আকাশটাও পরিষ্কার নয়। রুদ্রর মাথায় একিভাবে হাত বোলাচ্ছে সেঁজুতি। এমন নয় যে রুদ্র জোর করেছে।সেতো গভীর নিদ্রায়।সেঁজুতি অজান্তে,নিজের ইচ্ছেয় করছে। মনের মধ্যে কেমন অস্থির লাগছে।
গল্পের শেষ টুকু আর শোনা হলোনা।যত টুকু শুনেছে তাতেই তার চোখ গুলো ভিজে উঠছে। ফুঁপিয়ে কান্নাও করেছে কিয়ৎক্ষন।
গল্প বলার সময় রুদ্রর গলা ধরে আসছিলো।যেনো সেই রাজপূত্রের সহিত তার কোনো সংযোগ রয়েছে।কষ্ট ওই রাজার ছেলের নয়,হচ্ছে তার।
আচ্ছা,রাজপূত্রের কী হলো তারপর? কী হলো তার বাবার?সে কেন ফিরে এলোনা? রাজপুত্র কীভাবে নিজেকে সামলালো?ওইটুকু ছোট বাচ্চা কীভাবে বড় হলো?কে-ই বা ছিলো ওই রাজপূত্রের আড়ালের সত্যি মানুষটি?সেসব জানতে ভীষণ ইচ্ছে করছে সেঁজুতির।রাজপূত্রের জীবনের শেষ টা জানার আগেই রুদ্র ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো।
এমন নিষ্পাপ মুখ করে ঘুমোচ্ছে রুদ্র, সেজুথির আর জাগাতে ইচ্ছে হলোনা।সুযোগ পেলে কখনও জেনে নেবে না হয়!
কিন্তু কিভাবে জানবে?আজ না হয় ড্রিংক করেছে বলে নিজের মধ্যে ছিলেননা।এতোটা বাচ্চামো করছিলেন।কিন্তু হুশে আসলে এর মতো বদ মেজাজী,ইগোয়িস্টিক আর দুটো খুজে পাওয়া মুশকিল।সেঁজুতি বোঁকার মতো চাইলো রুদ্র আরেকবার এমন করুক , আর গল্পের শেষ টুকু বলে দিক।পরক্ষনেই,নিজের মাথায় চাটি মারলো।রুদ্র আজ যা করলো,প্রথমে তো ভয়ে প্রান বেরিয়ে গেছিলো তার।সেঁজুতির মনে পড়লো রুদ্রর বুকের ওপর পরে যাওয়ার কথাটা।মুহুর্তেই শিরদাঁড়া বেয়ে এক ঠান্ডা শীতল স্রোত গড়ালো।
____
জানলার পর্দা ভেদ করে সকালের মিষ্টি রোদ হুটোপুটি খেলো রুমের ভেতর। হাল্কা বাতাসে রুদ্রর ধূসর চোখে আছড়ে পরলো সূর্যের রশ্নি।রুদ্র চোখ কুঁচকে নিলো।কিঞ্চিৎ নঁড়েচড়ে উঠে বসলো।মাথা ভার লাগছে।ঝিমঝিম করছে। হঠাৎ
রুমটা খেয়াল পরতেই ঘুম ছুটে পালালো রুদ্রর। বিষ্ময়ে মুখ হা হয়ে এলো।
“এটা,এটাতো সেঁজুতির রুম,আমি এখানে কি করছি? আমি কী এখানেই ঘুমিয়েছি?উনি কোথায়?
রুদ্রর মনে পড়লো কালকে রাতের কথা।সেঁজুতিকে উল্টোপাল্টা বলার পর অনেকবার স্যরি বলতে এসেছিলো।অথচ ইগোর কারনে দরজা অব্দি এসে ফিরে গিয়েছে।নিজের প্রতি ক্ষোভে,রাগে -শোকে প্রচুর পরিমান মদ্যপান করেছে তারপর। কিন্তু এরপরে কী হলো তাতো মনে নেই।না মনে পড়ছেওনা।রুদ্রর হাসফাস লাগছে এখন।মদ খেয়ে সেঁজুতির সাথে খারাপ কিছু করেনি তো?সেঁজুতি তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে নাকী?রুদ্রর কলিজা ছলাৎ করে উঠলো ভয়ে।এই প্রথম, এই প্রথম, ভয় লাগলো তার।কাউকে পাওয়ার আগেই হারানোর ভয়ে গোটা শরীর অবশ হলো।
হঠাৎ ঘাঁড় ঘোরাতেই রক্তশূন্য চেহারাটা চকচকে হয়ে এলো রুদ্রর। নিথর দেহে যেন প্রান সঞ্চয় পেলো। সোফার ওপর গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে সেজুতি।
এসির ঠান্ডা হাওয়ায় শীতে অল্প অল্প কেঁপে উঠছে।
বুকে হাত দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো রুদ্র।
নিশ্চল চোখে সেঁজুতির ঘুমন্ত মুখ দেখলো।
বিছানা ছেড়ে নেমে ব্লাঙ্কেট নিয়ে সোফার কাছে এলো।গায়ে জড়িয়ে দিতেই নঁড়ে উঠলো সেঁজুতি।শীতের মধ্যে ব্লাঙ্কেটের উষ্ণ স্পর্শ পেয়ে নিজের সাথে শক্ত করে পেঁচিয়ে ধরলো সেটা।রুদ্র দাঁড়িয়ে থাকলো। অপেক্ষা করলো সেঁজুতির ঘুম গাঢ় হওয়ার।অল্প সময় পর
হাটু ভাঁজ করে ফ্লোরে বসলো। ঘুমে জুবুথুবু সেঁজুতির পাশে। নিষ্পলক চোখে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে শুরু করলো সামনে এলোমেলো চুলের ফর্সা মেয়েটিকে।কালকের মতোই অপরুপ লাগছে সেঁজুতিকে।কিন্তু কাল ধরা পরার ভয়ে দেখতে পারেনি ঠিক করে।সেই তৃষ্ণা এখন মেটাবে রুদ্র।সেঁজুতিকে দুচোখ ভরে দেখার অমোঘ তৃষ্ণা!
সেঁজুতি দুচোখ হালকা ফাঁকা রেখে ঘুমায়।মেয়েটা কী তাকে দেখছে?ঘুমের ভান করে নেইতো?
না, না,দেখলে এতক্ষনে ছিটকে দশ হাত দূরে সরে যেত।রেগেমেগে আগুন হয়ে বলতো ‘ চরিত্রহীন, অসভ্য!
রুদ্র ঠোট বেঁকিয়ে হাসলো।সেঁজুতির গালি গুলো ইদানীং শুনলে রাগ হয়না।কেন হয়না?তারতো রাগ করা উচিত! ভয়ানক রাগে লাল হওয়া উচিত।যে রাগে তার গোটা অফিস,ইন্ডাস্ট্রিজের লোকজন সিটিয়ে থাকে।
রুদ্র ঝুঁকে এলো সেঁজুতির মুখের ওপর। সেঁজুতির শুকনো ঠোঁট দুটোও কেমন টানছে।যেন সুপ্ত আহব্বান দিচ্ছে তার সাথে মিশে যেতে।রুদ্র চোখ বুজে ঢোক গিললো।নিজেকে সামলালো।সেঁজুতির ওই উষ্ণ ঠোঁটের আস্বাদন সেদিন নেবে,যেদিন সেঁজুতি চাইবে।আদৌ কী আসবে ঐদিন?অতো সুন্দর মুহুর্ত বেঁচে থাকতে দেখবেতো রুদ্র?
রুদ্র ছোট্ট করে ফু দিলো সেজুথির কপালে। সাথে সাথেই ঈষৎ উড়ে উঠলো কপালের ছোট ছোট চুল।রুদ্রর ওদের প্রতি ভীষণ হিংসে হয়।ওরা সেঁজুতি কে ছুঁতে পারে দিনরাত।সেঁজুতি কিচ্ছু বলেনা।কেন সে চুল হলোনা?তাহলে প্রত্যেক সেকেন্ড সে ঝাপটে পরতো সেঁজুতির চোখে,ঠোঁটে,গোলাপি দু গালের ওপর। ইশ! মিস হয়ে গেলো।
রুদ্র অতি সন্তর্পনে নিজের অধরের ছোট্ট একটা পরশ এঁকে দিলো সেজুতির কপালের ঠিক মাঝখানে।হৃদপিণ্ড ধড়াস ধড়াস করে লাফাচ্ছে তার।এ নতুন নয়।সেঁজুতি আশেপাশে থাকলেই তো এমন হয় আজকাল।সে শুধু খুব কষ্ট করে সামলায় সেসব।বোঁকা মেয়েটা বুঝতেও পারেনা।
রোদের আলোতে সেজুতির কোঁচকানো ভ্রু দেখে উঠে গিয়ে জানলার পর্দা ভালো করে টেনে দিলো রুদ্র।আরেকবার সেঁজুতি কে দেখে রুম ছেড়ে দ্রুত পায়ে বের হলো।
____
ফোনের রিংটনের শব্দে বিরক্ত হচ্ছে সেঁজুতি।এমন গগন বিদারী চিৎকার সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছেনা।তার এতো সাধের ঘুম নষ্ট করতে যথেস্ট এই চিৎকার।সেজুতি হাঁতড়ে হাঁতড়ে ফোন খুজছে।ঘুমের মধ্যেই বালিশের নিঁচ, নিজের দুপাশ, হাঁতড়াচ্ছে।হাত এগোতে এগোতে, এগোচ্ছে নিজেও।
আর ওমনি ধপাস করে সোফা থেকে মেঝেতে পরলো।ভয়ে, চমকে লাফিয়ে উঠলো সেঁজুতি। ব্যাথায় মুখ বিকৃত করে বলল,
” উফ বাবা! ,কি কুক্ষনে যে সিলেট এসেছি?এসে থেকে খালি পরেই যাচ্ছি আমি।রাতে যে সোফায় শুয়েছি মনেই ছিলোনা ।
সেঁজুতির চোখ দুটো হঠাৎ বড় হয়ে এলো।রুদ্রর কথা মনে পড়েছে।ফ্লোরে বসে থেকেই তড়িৎ গতিতে বিছানার দিক তাকালো।
বিছানা ফাঁকা।রুদ্র কোথাও নেই।
‘ উনি চলে গিয়েছেন?
সেঁজুতির গায়ের ব্লাঙ্কেটের দিক চোখ পরলো।এটাতো গতকাল রুদ্রর গায়ে ছিলো। ওর গায়ে কী করে এলো? উনি দিয়ে গিয়েছেন?
সেঁজুতির ফোন বাজলো আবার।তড়িঘড়ি করে উঠে ছুটে গেলো সে।ফোন হাতে নিতেই ছোট্ট করে অ্যাটাক হলো সেঁজুতির।চোখ উঠলো কপালে।রুদ্রর ফোন।সেঁজুতি মাথায় হাত দিয়ে বলল,
৩২ টা মিসড কল??ইয়া আল্লাহ!তাও আবার ওনার?
ফোনের ওপরে ছোট্ট করে লেখা সময়টায় চোখ যেতেই আবারও একদফা বিস্মিত সেঁজুতি।
বেলা ১২ টা অব্ধি ঘুমিয়েছে?
তার ইতিহাসে এই প্রথম।
কাল সারারাত একটুও ঘুমোয়নি। কেনো ঘুমায়নি নিজেও জানেনা।ওই ভাবেই রুদ্রর মাথা কোলে নিয়ে বসে ছিলো।অথচ সেটা কিন্তু না করলেও হতো।
শেষ রাতে আর ঘুমের কাছে টিকতে না পেরে রুদ্রকে শুইয়ে দিলো বিছানায়।নিজে গিয়ে শুলো সোফায়।কিন্তু তাই বলে এতো বেলা হয়ে যাবে বোঝেনি।আজ তো তার সেকেন্ড প্রেজেন্টেশন। তাও ছিলো সকাল দশটায়।এখন বাজে বারোটা।কী হবে এখন?সেঁজুতির বুক কাঁপছে। ডিল হাত ছাড়া হলে রুদ্র তাকে আস্তো রাখবেনা।
হাতের মুঠোতেই ফোন কেঁপে উঠলো আবার।
ধড়ফড় করে রিসিভ করলো সেঁজুতি। ওপাশ থেকে ভেসে এলো রুদ্রর কঠিন স্বর।
‘কটা বাজে মিস সেঁজুতি? আপনি কি এখানে ঘুমোতে এসছেন?? ১২ টা বেজে গিয়েছে অথচ আপনার দেখা নেই।চাকরী করার ইচ্ছে নেই? তাহলে বলুন তার ব্যাবস্থা করছি আমি।
সেঁজুতি ভয়ে ভয়ে বলল ‘ স্যরি স্যার!আমার জন্যে অনেক বড় ক্ষতি হলো আপনার। আমি একদম জেনেবুঝে করিনি।
সেঁজুতির কন্ঠ কাঁদোকাঁদো। রুদ্র বলল,
‘ ফাইল সমেত পাঁচ মিনিটের মাথায় ,
আপনাকে নিচে দেখতে চাই আমি।যাস্ট ইন ফাইভ মিনিটস ওকে?
সেজুতিকে কিছু বলার সুযোগ দিলোনা রুদ্র। নিজের মত এক দমে কথা বলে লাইন কাটলো। সেঁজুতি পিটপিট করলো চোখ।প্রেজেন্টেশন এর সময় নেই,তাহলে এখন ফাইল নিয়ে কেন যাবে?
আর কতোগুলো কথা শোনালো!আরে ইচ্ছে করে এতো ঘুমিয়েছি নাকি? আমার ঘুমের বারোটা বাজিয়ে নিজে তো হাত পা ছড়িয়ে আরামসে ঘুমিয়েছেন।ওনার জন্যে আমার ঘুম হলোনা আর এখন উনিই আমাকে কথা শোনাচ্ছেন?এই জন্যেই বলে উপকারিকে বাঘে খায়।
___
ঠিক পাঁচ মিনিটের মাথায় নিচে নামলো সেঁজুতি।এক সেকেন্ড এদিক ওদিক হয়নি।গাড়ি ঘেঁষে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রুদ্র।সেঁজুতিকে প্রথমে দেখে অবাক হয়েছে।এত পাংকচ্যুয়াল কবে হলো মেয়েটা?সেঁজুতি কাছে আসতেই রুদ্রর মুখ অটোমেটিক্যালি হা হয়ে এলো। হাতে ফাইল নিয়ে হন্তদন্ত পায়ে ছুটে এসে রুদ্রর সামনে দাড়িয়েছে সেঁজুতি। অনেক টা ভ্যাবাচেকা খাওয়ার মতো মুখ করে সেজুতির পা থেকে মাথা অব্ধি দেখে নিলো রুদ্র।সেঁজুতি শ্বাস টেনে বলল,
‘পাঁচ মিনিটে এসে গিয়েছি স্যার।কোথায় যাবেন
চলুন।
রুদ্রর জবাব এলোনা।সে চেয়েই আছে।সেঁজুতি ভ্রু কোঁচকালো। এভাবে কী দেখছেন উনি? রুদ্র গলা ঝেড়ে অন্যদিকে তাকালো।গম্ভীর কন্ঠে বলল,
“মিস সেজুতি!আপনি জামা উলটো পরেছেন….
সেঁজুতির চোয়াল ঝুলে পরলো,
‘এ্যা?
রুদ্র এবার ওর দিক তাকিয়ে বলল,
‘এ্যা নয় হ্যা,,
পড়নের জামার দিকে তাকাতেই লজ্জ্বায় কুঁকড়ে গেলো সেঁজুতি।নিচু মুখ কিছুতেই উঁচু করতে পারলোনা।,সত্যিই জামা উলটো পরেছে।ইশ! এভাবেও বেইজ্জতি লেখা ছিলো কপালে?তাও ওই লোকের সামনে।ছি!
” ঠিক করে পরে আসুন যান।
রুদ্র ভাবলেশহীন। এতে যেন লজ্জ্বা আরো দশগুন বাড়লো সেঁজুতির। একদম মিইয়ে গেলো।
কোনও রকম মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যা বোঝালো।ঘুরে হোটেলের দিকে পা বাড়াতেই রুদ্র ডেকে বলল,
” কাকের বাসা গুলোও আঁচরে আসবেন।,রুমে নিশ্চয়ই চিরুনির অভাব পরেনি।
সেজুতির এবার অজ্ঞান হওয়ার উপক্রম। এক দৌড়ে ঢুকে গেলো ভেতরে।লজ্জ্বা পেয়েই প্রথমবার কেউ শহীদ হবে দুনিয়ায়।আর সেই কেউটা হবে স্বয়ং সে-ই। কিন্তু এই মৃত্যুর জন্যে দ্বায়ী করবে কাকে? রুদ্রকে?
সেজুতি যাওয়া মাত্রই হেসে উঠলো রুদ্র। দ্বিতীয় বারের মতো প্রবল হাসিতে মাতলো তার ওষ্ঠ।
হাসি থামছেইনা।পাঁচ মিনিটে রেডি হতে গিয়ে কতোটা নাকানী চোবানী খেলো মেয়েটা।
____
রুদ্রদের সেকেন্ড প্রেজেন্টেশনের সময় ছিলো সকাল দশটা।কিন্তু সেঁজুতি ঘুমোচ্ছিলো দেখে রুদ্র সময়টা চেয়েছে দুপুরে।রুদ্র যেহেতু সফল ব্যাবসায়ী,ভালো নাম ডাক রয়েছে, প্রতিটি প্রোডাক্ট তার চাহিদাসম্পন্ন হয় তাই বিদেশী ক্লায়েন্টরা বিনাবাক্যে মঞ্জুর করলেন।সময় নির্ধারিত হলো দুপুরে।সাড়ে বারোটায়।বারোটা বাজলেও যখন সেঁজুতি উঠছেনা তখন আর উপায় পেলোনা রুদ্র।কয়েকবার দরজা ধাক্কিয়ে,ফোন করেও মেয়েটার সাড়া নেই।শেষে যখন কল রিসিভ হলো তখন ইচ্ছে করেই কাট গলায় কথা বলল।নাহলে তৎক্ষনাৎ সেঁজুতি সিরিয়াস হতোনা।মেয়েদের তৈরি হতে এমনিতেও দেরি হয়।তাই জন্যেই ওভাবে কথা শুনিয়েছে।এবারেও সেঁজুতি ভালো ভাবে প্রেজেন্ট করেছে প্রোডাক্টের সমস্ত ডিটেইলস।বরাবরের মতো আজকেও ডিল এগিয়েছে।সেখান থেকে বেরিয়ে লাঞ্চ করেছে দুজন।এরপর তো হোটেলে ফেরার কথা!অথচ রুদ্র কোথায় একটা নিয়ে এলো সেঁজুতিকে।পার্কের মতোন।জায়গাটা ভীষণ সুন্দর,নিরিবিলি।একদম নদী ঘেঁষে। সেখানেই একটা বেঞ্চের ওপর রুদ্র তাকে বসতে বলল।নিজেও বসলো সচেতন দুরুত্বে।
সেঁজুতি ভাবলো রুদ্র হয়ত আজকেও তাকে ঘুরতে এনেছে।ওইদিনের মতোন।
রুদ্র চুপচাপ বসে ফোন ঘাটছে।তার মনে ঠিক কি চলছে সেই জানে।এদিকে সেঁজুতি বসে থাকতে থাকতে অধৈর্য। উঠে আশপাশটা ঘুরতে চেয়েছিলো,রুদ্র বারন করেছে।বলেছে চুপচাপ বসে থাকুন।অনেকক্ষন পর সেঁজুতি আবার রুদ্রর দিকে ফিরলো,নরম কন্ঠে বলল,
— স্যার।অনেকক্ষন তো হলো,এবার উঠি,,,?
রুদ্রর জবাব,
‘না
‘তাহলে একটু সামনেটা দেখে আসি?
রুদ্র একিভাবে বলল ‘ না।
সেঁজুতি অসহায় কন্ঠে বলল ‘ বসে থাকব এভাবে?
রুদ্র ঘাঁড় বেঁকে তাকালো। ফোন পকেটে ভরে পায়ের ওপর তোলা পা টা হালকা নেঁড়ে সামনের দিকে ফিরলো।শান্ত স্বরে বলল,
‘আপনার থেকে আমার কিছু জানার আছে সেঁজুতি।আমি,আশা করব,শুধু মাত্র সত্যি টাই বলবেন আপনি।
চলবে,