প্রনয় পর্ব-১৭+১৮

0
564

প্রনয়
#নুসরাত সুলতানা সেজুথী
পর্ব-১৭
হোসাইন তব্দা খেয়ে তাকিয়ে আছেন।পুরু ঠোঁট দুটো নিজ শক্তিতে আলাদা হয়ে আছে অনেকক্ষন হলো।সেঁজুতি কে সেই ছোট্ট বেলা থেকে চেনে।দুর্দান্ত ছিলো পড়াশুনায়।একেতো বন্ধুর মেয়ে, সাথে সেঁজুতির এই পড়াশুনায় মনোযোগী ভাবের জন্যেই তিনি অতি মাত্রায় স্নেহ করতেন মেয়েটাকে।নিজে থেকেই খেলনা থেকে শুরু করে সেঁজুতি কে টুকিটাকি যা পারতেন কিনে দিতেন ভালোবেসে।মেয়েটির সিক্সথসেন্স ও ভালো।হুটহাট সিদ্ধান্ত নেয়ার মতো মেয়ে কোনো কালেই ছিলোনা।হোসাইনের বিচারে সেজুতি নিঃসন্দেহে বুদ্ধিমতি। সেই ঠান্ডা মস্তিষ্কের মেয়েটি প্রেমে পরলো কীনা রুদ্র রওশন এর মতো বদমেজাজি, অহংকারী লোকের? যে প্রত্যেকটা কথা দাঁড়িপাল্লায় মেপে বলে।নিঃশ্বাস ও ফেলে হিসেব করে? চেহারার সৌন্দর্য আর টাকায় ভোলার মতো মেয়েতো সেঁজুতি নয়।সে প্রচুর আত্মসন্মানী।হোসাইনের মস্তিষ্ক তখন ভাবতে ব্যাস্ত।তার বিস্ময় ভাব কাটেনি।কথাটা কী বিশ্বাস যোগ্য? নাকী নয়? এ নিয়েই ভাবছে।আবার সেদিক থেকে দেখতে গেলে রুদ্রর এমন নিরদ্বেগ স্বীকারোক্তিতে সন্দেহের কোনো অবকাশই নেই।
‘ মুখ টা বন্ধ করুন ডাঃ হোসাইন। এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই।
রুদ্রর শান্ত স্বরে হোসাইন সম্বিৎ ফিরে পাওয়ার মতোন নঁড়ে ওঠেন।সন্দেহী কন্ঠে বললেন,
‘আপনি সেজুথির বয়ফ্রেন্ড?ইয়ে- মানে এটা কি করে সম্ভব??
রুদ্র ভ্রু কোঁচকালো ” এখানে অসম্ভবের ঠিক কী দেখলেন?
হোসাইন ইত্তস্তত করে বললেন,
— না মানে ,আমি যতদূর সেঁজুতি কে চিনি ওর এসব প্রেম ট্রেমে আগ্রহ দেখিনি কখনও। বই, বাবা, দায়িত্ব এসব নিয়েই ব্যাস্ত ছিলো সব সময়।ও আবার এগুলোকে কবে থেকে…মানে আমিতো কিছুই জানতে পারলাম না।
রুদ্র বিস্ময়ের ভান করে বলল ‘
‘কি অদ্ভূত!প্রেম করলে কি আপনাকে জানিয়ে করবে?

হোসাইন লজ্জ্বা পেলেন রুদ্রর সোজা সোজা কথায়।রুদ্র ধৈর্য হীন কন্ঠে বলল,
‘ ডঃ হোসাইন!ওসব কথা ছাড়ুন।আমি যে কাজে এসেছি আগে সেটা সাড়ি বরং?
‘ জী।নিশ্চয়ই!

রুদ্র ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে টেবিলের ওপর দুহাত রাখলো।একটার ভাঁজে আরেকটার আঙুল।প্রশ্ন ছুড়লো,
‘ আচ্ছা ড: হোসাইন,যেদিন সেঁজুতি আমাকে ব্লাড ডোনেট করেছিলো,সেদিন উনি ঠিক কি কাজে হসপিটালে এসেছিলেন?

হোসাইন পালটা কপাল কুঁচকে বললেন,
‘ কেনো আবার?আমির,মানে ওর বাবার অপারেশনের জন্যে।কিন্তু আপনি যদি ওর কাছের কেউ হন তাহলে এসব তো আপনার জানার কথা।আমাকে কেন জিজ্ঞেস করছেন মিস্টার চৌধুরী?

রুদ্র মেজাজ হারালো।পরমুহূর্তে নিজেকে সামলালো।রাগ দেখালে চলবেনা। কিছুই জানা যাবেনা।ঠান্ডা রাখতে হবে নিজেকে।মৃদূ হাসার চেষ্টা করে বলল,
‘ করছি তার কারন আছে অবশ্যই। আমাদের সম্পর্ক তো মাত্র কদিনের। এতো তাড়াতাড়ি কি দুজন দুজনের কাছে সব কিছু শেয়ার করা যায় বলুন?তাছাড়া সেজুতিকে তো আপনি ছোট থেকেই চেনেন।নিজের দূর্বলতার কথা সে কাউকে বুঝতে দেয়না।আপনিই ওর বাবার পরে আরেকজন কাছের মানুষ।তাই আমি এসেছি আপনার থেকে জানতে। বুঝলেন এবার??

হোসাইন মাথা নাঁড়লেন।সত্যিই বিষয় টা পরিষ্কার হলো।এতক্ষন তাহলে মিছিমিছি সন্দেহ করছিলেন।হোসাইন অল্প সময়ে বিস্তর হিসেব কষলেন।সেঁজুতি রুদ্রকে দুবার যেঁচে প্রানে বাঁচিয়েছে।শেষ বার সেঁজুতিদের বাসায় রুদ্রকে দেখেছেন।আমিরের থেকেও শুনলেন রুদ্রর অফিসে সেঁজুতির ভালো পোস্টে চাকরী পাওয়ার কথা।দুইয়ে দুইয়ে চার মেলালেন হোসাইন।দুজনের মধ্যে তাহলে মাখোমাখো সম্পর্ক। সেজন্যেই সেঁজুতি ইজ্যিল্যি চাকরী পেলো।রুদ্রই দিয়েছে।নাহলে গ্রাজুয়েশন ছাড়া একটা মেয়ে কী করে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরীর সুযোগ পায়? তাও মালিকের ব্যাক্তিগত সহকারী হিসেবে? এটাতো চোখ বন্ধ করে যে কেউ বলতে পারবে।সেই শুধু বুঝতে পারেনি।আসলে এরকম তো পেঁচিয়ে ভাবেইনি বিষয় টা।হোসাইনের চিন্তায় ব্যাঘাত ঘটালো রুদ্র।পরবর্তী প্রশ্ন ছুড়লো সে,

‘ ওনার বাবার অপারেশনের ডেট কবে ছিলো?
হোসাইন একটু ভেবে উত্তর দিলেন,
‘ উমম..গত মাসের ২৬ তারিখে মেইবি।কারন আমি এখানে ২৭ তারিখ সকালে এসেছিলাম।
রুদ্র মনে মনে ভাবলো,
‘আর উনি আমার হোটেলে এসেছিলেন ২৫ তারিখ রাতে।
তৃতীয় প্রশ্ন করলো রুদ্র,
‘আচ্ছা ওনার বাবার ঠিক কি হয়েছিলো?
হোসাইন দীর্ঘশ্বাস ফেলে জবাব দিলেন,
‘মেজর এট্যাক। বাচার চান্স খুব কম ছিলো।আর এ ধরনের এট্যাকে পেশেন্টের শরীরের যেকোনো অংশ প্যারালাইজড হয়ে যেতে পারে।যেমন আমিরের ডান পা অবশ হয়,আর লাস্ট মোমেন্ট এ সেটা কেটে আলাদা করতে হয় নাহলে পুরো বডি ধরে যাওয়ার চান্স ছিলো।
” oh I see! তো ওনার অপারেশনের জন্যে নিশ্চয়ই অনেক টাকার প্রয়োজন পরেছে?

” তাতো লেগেছেই।এক দু লাখ হলেও হয়ত কথা ছিলো।পুরো ছয় লক্ষ টাকা জোগাড় করতে হয়েছে মেয়েটাকে। কীভাবে কী করেছে জানতেও পারিনি।আমারও এমন দূর্ভাগ্য! প্রিয় বন্ধুর বিপদে দেশের বাইরে ছিলাম আমি।থাকলে হয়ত কিছু সাহায্যে লাগতাম।কিন্তু তা আর হলো কই? মেয়েটাকে অহেতুক এর -ওর কাছ থেকে ঋন করে বাবার চিকিৎসা করাতে হলো।আর সেই ঋন চোঁকাতেই তো গাঁধার খাঁটুনি খাঁটছে।ওইটুকু মেয়ে,বয়সই বা কত বলুন।মুখ দেখলেই মায়া হয় ভীষণ।কোনো কিছু দরকার পরলে আমাকে বলেওনা।এত সংকোচ মেয়েটার।কারো থেকে হাত পেতে কিছু নিতেই ওর রাজ্যের অস্বস্তি।আমির ও এমন ছিলো।পুরো বাবার কার্বন কপি মেয়েটা।
হোসাইন থামলেন।রুদ্র চুপচাপ শুনছে।ভাবুক তার দৃষ্টি।সব উত্তর সে পেয়েছে।এতদিন শুধু আন্দাজের ভিত্তিতে এগিয়েছে।আজ যেন কাঁচের মতোন স্বচ্ছ হলো।হোসাইন নরম কন্ঠে বললেন
‘ আমার আপনার কাছে একটা অনুরোধ থাকবে মিস্টার চৌধুরী।
রুদ্র তাকালে হোসাইন টেবিলে রাখা রুদ্রর হাত মূঠোতে নিলেন।বললেন ‘ মা মরা মেয়ে।বাবাকেই যতটুকু কাছে পেয়েছে।ভীষণ সংগ্রামী জীবন ওর।ভালো রাখবেন ওকে।

রুদ্র উত্তর দিলোনা অনেকক্ষন।সময় নিয়ে ছোট্ট করে বলল ‘ ওকে।
হোসাইন নিশ্চিন্তে হাসলেন।রুদ্র বলল,
“আরেক টা কথা!আমার এখানে আসার ব্যাপার টা সেজুথির কান অব্ধি যেনো না পৌছায় সে দায়িত্ব আপনার।আর আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারটাও ওর বাবাকে জানানোর দরকার নেই।সময় হলে আমিই জানাবো।কথাটা যদি রাখতেন উপকৃত হতাম ড:।

হোসাইন আস্বস্ত করে বললেন ” নিশ্চয়ই!
” thanks!
রুদ্র বেরিয়ে গেলো।হোসাইন নির্নিমেষ তাকিয়ে রইলেন।ডুব দিলেন গভীর ভাবনায়।
____

ব্যাস্ত রাস্তায় ড্রাইভ করছে রুদ্র।ঠোঁট যুগলে বিজয়ের হাসি ঝোলানো।যা বোঝার ছিলো বুঝলো অবশেষে। হোক তাতে কাঁড়ি কাঁড়ি মিথ্যে বলার প্রয়োজন।অজানা তো আর কিছুই রইলোনা।
‘ আপনার আর আমার মাঝে আর কোনো পর্দা নেই সেঁজুতি। আপনাকে পুরোটাই আমি চিনে ফেললাম।এবার আমাকে আপনার চেনা উচিত।
রুদ্র সিগারেট ধরালো।গাড়ির কাঁচ নামিয়ে ধোয়া ছাড়লো বাইরে।তখনি রাস্তার ওইপাশে চোখ যায়।চেনা সেই মুখ দেখতেই রুদ্রর গাড়ির গতি কমে।সিগারেট এস্ট্রে তে ফেলে ইউটার্ন নিয়ে এগোয় সেদিকে।
একটা চকলেট কালারের থ্রিপিস পরেছে সেঁজুতি। কাঁধে ব্যাগ।মাথায় জর্জেটের ওড়না দিয়ে ঘোমটা টানা।সামনের চুল গুলো অল্প বাতাসে দুলছে।পাশেই স্ক্র‍্যাচ হাতে দাঁড়িয়ে আমির।দুজনেই উৎসুখ চোখে কিছু খুঁজছে।অপেক্ষা করছে।
সেঁজুতি বিরক্তি নিয়ে বলল ‘ আজ বোধ হয় সবকটা সি এন জি ওয়ালা নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে বাবা।এভাবে রোদের মধ্যে কতক্ষন দাঁড়ানো যায় বলোতো? তোমারও তো কষ্ট হচ্ছে।
আমির ও একিরকম বিরক্ত।তাও মেয়েকে শান্ত করতে বললেন ‘ এসে যাবে রে মা। আরেকটু দেখি।একটা না একটা তো পাবোই।

তক্ষুনি ওদের সামনে রুদ্র গাড়ি ব্রেক করলো।সেঁজুতি দেখেই চিনে ফেলল এটা কার গাড়ি।সেঁজুতি কে ঠিক প্রমান করে একটু পর রুদ্রর মুখটা দৃশ্যমান হলো গাড়ির জানলা দিয়ে।রুদ্র কে দেখে আমির ও চিনলেন।সেঁজুতি কৌতুহল নিয়ে শুধালো ‘ স্যার?আপনি এখানে?

রুদ্র গাড়ি থেকে নামেনি।বসে থেকেই উত্তর দিলো, ‘একচ্যয়েলি আমি এখান থেকেই যাচ্ছিলাম।তা কোথাও যাচ্ছিলেন আপনি?

সেঁজুতি সহজ কন্ঠে বলল ‘হ্যা।কিন্তু যেতে আর পারিনি।সেই কতক্ষন ধরে দাড়িয়েই আছি।একটা রিক্সা, সি এন জি কিচ্ছু পাচ্ছিনা।
রুদ্র জ্বিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল,
‘এক কাজ করুন।গাড়িতে উঠে বসুন,আমি পৌঁছে দিচ্ছি…

সেঁজুতির চোখ দুটো বড় বড় হয়ে এলো।রুদ্র নিজে থেকে পৌঁছে দেবে বলছে? ঠিক শুনলো?আমিরও একিরকম বিস্মিত।রুদ্রর সেদিনের ব্যাবহারের সঙ্গে আজকে মিল পেলেন না।ভাবলেন,
— এই ছেলেটা সেদিন কি ভাব টাই না দেখিয়েছিল।হঠাৎ এত পরিবর্তন?

সেঁজুতি ব্যাস্ত কন্ঠে বলল,
‘না না আপনাকে যেতে হবেনা।শুধু শুধু আমাদের জন্যে আপনি কেনো কষ্ট করবেন?
রুদ্রর কাটকাট জবাব,
‘ আমার কষ্টের কথা আমাকে ভাবতে দিন। আমি জানি এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে আপনার বেশ মজা লাগছে।কিন্তু আপনার বাবার?? ওনার তো কষ্ট হচ্ছে।নিজেকে ছেড়ে ওনার কথা টা ভাবুন।সব সময় আপনার জেদ দেখানো জরুরি?
যেটা বলছি করুন,উঠে বসুন গাড়িতে।

সেঁজুতি চোখ নামিয়ে নেয়।একবার বাবার দিকে তাকায়।আমির ও মেয়ের দিকে চেয়ে।মেয়ে যা বলবে সে করবেন।তবে রুদ্র ওনার কথা ভাবায়,ভালো লেগেছে আমিরের। সেঁজুতি ভাবলো
‘আর যাই হোক কথা তো আর ভুল বলেননি উনি। সত্যিই বাবার এতো রোদের মধ্যে এভাবে স্ক্র‍্যাচে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।ওনার কথাটাই বরং শুনি।
বাবাকে গাড়ির পেছনের সিটে বসালো সেজুতি।নিজে বসতে নিতেই রুদ্রর সেদিনের বলা কথা মনে পড়লো।আজও যদি ইগোতে লাগে লোকটার? লাগে কী ? লাগবেই।নিশব্দে এসে রুদ্রর পাশের সিটে বসলো সেঁজুতি।

রুদ্র ড্রাইভ করতে করতে বলল ‘ কোথায় যাবেন?
‘ কল্যানপুরে।ওখানে একটা শিশুপার্ক আছে।সেখানেই, আপনি চলতে থাকুন,আমি দেখিয়ে দিচ্ছি।
রুদ্র ভ্রু বাঁকালো,
‘ শিশুপার্ক?

সেঁজুতি মিহি কন্ঠে বলল” আসলে, ছোট বেলা থেকে বাবার প্রত্যেকটা ছুটির দিনে আমরা দুজন সেখানে ঘুরতে যেতাম।পার্কটা আমার এত্ত পছন্দ ছিলো যে বড় হওয়ার পরেও যেতাম।বাবার হাত ধরে ঘুরলে নিজেকে সেই ছোট্টোটিই মনে হয়।গত কয়েক মাস যাবত বাবা ঘরবন্দী। আমিও ব্যাস্ত।আগের মতো কিছুই নেই আর।তাই আমি আর বাবা ওখানেই যাচ্ছি। বলতে পারেন শৈশব বিলাস করতে!

সেঁজুতির এত্তগুলো কথার পিঠে আমির উদাস রইলেন।পুরোনো অনেক দৃশ্যপট চোখের সামনে ভেসে এলো। একবার কাটা পায়ের দিকে তাকালেন।মুহুর্তেই ভিঁজে উঠলো চোখ দুটো। মেয়ের চোখে পরার আগেই মুছে নিলেন তাড়াহুড়ো করে।রুদ্র উত্তরে ছোট করে বলল ‘ ওহ”
পুরো রাস্তায় আর কেউ কথা বলেনি।মাঝে মাঝে শুধু আমিরের দু একটা শুকনো কাশির শব্দ ছিলো।
গন্তব্যে এসে পৌছাতেই আগে নামলো সেঁজুতি।এরপর বাবাকে নামালো।জানলার কাছে ঝুঁকে কৃতজ্ঞ হেসে বলল ‘ অনেক ধন্যবাদ স্যার।

সেঁজুতি আমির কে নিয়ে এগোতে নিলো।হঠাৎ পেছন থেকে রুদ্র ডাকলো। ‘ মিস সেঁজুতি?

সেঁজুতি ফিরে তাকালো ‘ জ্বি!
রুদ্র স্টিয়ারিংএ হাত ঘষে বরফ কন্ঠে বলল,
“আপনি দেখছি একদম ই ম্যানার্স জানেন না।ঘুরতে যাচ্ছেন অথচ আমাকে একবার ও সাথে যেতে বললেন না?
রুদ্রর কথায় জ্বিভ কাটলো সেজুতি।আসলেই তো।উনিতো ঠিক বললেন। ইশ! এটা একদম বাজে দেখালো না? উনি না চাইতেই উপকার করলেন আর ও কিনা একটা ধন্যবাদ দিয়েই চলে যাচ্ছিলো!কিন্তু ওরই বা কী দোষ?এমন নাক উঁচু লোক কী এরকম একটা সস্তা জায়গায় যেতে চাইবেন?যে লোক তাকে পদে পদে হেনস্তা করেন সে কী চাইবেন ওদের সাথে ঘুরতে? এসব ভেবেই তো বলেনি। এ পর্যায়ে আমির মুখ খুললেন। হেসে বললেন ‘ আপনিও আসুন মিস্টার চৌধুরী। সেঁজুতিও তাল মেলালো।সাথে স্যরিও বলল।রুদ্র ভ্রু নাঁচিয়ে জবাব দিলো
“আমি বলার পরে সাধছেন?
সেঁজুতি নিচু কন্ঠে বলল,
— আসলে বাবাকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম তো তাই আর!প্লিজ কিছু মনে করবেন না।আপনি আমাদের সাথে আসলে আমরা খুশিই হবো।

রুদ্র গাড়ি থেকে নেমে এলো।সানগ্লাশ টা চোখে পরে পকেটে হাত গুঁজে হাটা ধরলো। সেঁজুতি তিনটে টিকিট কাটলো কাউন্টার থেকে।গেট পেরিয়ে ভেতরের দিকে এগোচ্ছে ওরা।মধ্যিখানে আমির।দুপাশে সেঁজুতি আর রুদ্র।রুদ্র চারপাশ টা দেখছিলো।সে এখানে প্রথম এলো।অথচ সেজুতির মনোযোগ রুদ্রর দিকে।ওকে দেখতে দেখতেই ভাবছিলো”
লোকটার হাবভাব বড্ড অদ্ভুত।মাঝে মাঝে এতোটা অহংকারী মনে হয় বলার বাইরে।অথচ আজ?? আজ একটুও মনে হচ্ছেনা।নিজে থেকে আমাদের লিফট দিলেন।আবার এখন আমাদের সাথে পায়ে পা মিলিয়ে হাটছেন।এত রহস্যময় কেন উনি?

আমির কে ধরে গাছের ছায়ায় আচ্ছাদিত একটি বেঞ্চীতে বসালো সেজুতি।রুদ্রর মনোনিবেশ অন্য কোথাও।পরিবার সহ আসা বাচ্চাগুলোকে এক ধ্যানে দেখছে সে।বাচ্চাগুলোর নিষ্পাপ ছোট ছোট চোখ গুলোয় খুশি উপচে পরছে।বাবা মায়ের সাথে পার্কে আসার আনন্দ যেন ধরছেনা ছোট্ট মনে।রুদ্র আনমনেই অল্প হাসলো।বুকটা ভীষণ ব্যাথায় কাতরে উঠলো।এই ব্যাথা কমবে না। সারাজীবনেও না।সব থেকেও তার একটা জিনিস নেই।নেইতো নেই,এমন অমূল্য জিনিসটাই নেই যেটা কোটি টাকা দিলেও পাওয়া অসম্ভব।রুদ্র সানগ্লাশ ভেদ করে দূর আকাশে চোখ রাখলো ‘ ওপারে কেমন আছে তার পরিবার?

সেঁজুতি দের পাশেই চঁড়কি ঘুরছে।কয়েকটি বাচ্চা খিলখিল করে হাসছে।অনেকে আবার ভয়ে মাকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে।থামানোর জন্যে চিৎকার করছে। আমির সেদিক থেকে চোখ ফিরিয়ে মেয়ের দিকে তাকালেন।আদুরে কন্ঠে বললেন ‘ আজকে চঁড়কিতে উঠবিনা আম্মা?

সেঁজুতি নীচের দিক চেয়ে বলল ‘ না।
‘ কেনো? চঁড়বিনা কেনো? আগে তো ওঠার জন্যে বায়না ধরতিস খুব।
সেঁজুতির ভেতরটা কেঁদে উঠলো ‘ আজ তো তুমি পাশে বসতে পারবেনা বাবা।ভয় পেলে কাকে শক্ত করে ধরব বলো?
মুখে বলল
— আজ ভালো লাগছেনা বাবা।
আমির চুপ করে গেলেন।মেয়ের না উঠতে যাওয়ার কারন বুঝলেন হয়ত।একটা পা নেই তাই চঁড়কি তে ওঠাও তার সম্ভব নয়। সে না হয় আর কখনও পারবেনা মেয়েকে চঁড়কিতে চঁড়ার সময় হাত আঁকড়ে বসতে।কিন্তু যেদিন তার মেয়েটার হাত আঁকড়ে ধরার লোক আসবে, সেদিনই উঠবে না হয়।
রুদ্র মুখ খুলল এতক্ষন পর।আগ্রহী হয়ে জানতে চাইলো,
‘ চঁড়কী কী?
সেঁজুতির হাসি পেলো রুদ্রর বাচ্চা বাচ্চা প্রশ্নে।ঠোঁট টিপে হাসলোও।আঙুল উঁচু করে দেখালো,
‘ওই যে ওটা।অনেকে নাগরদোলাও বলে।আমি অবশ্য চঁড়কীই বলি।
জিনিসটা দেখতেই রুদ্রর মাথা ঘুরে এলো।বিড়বিড় করে বলল ‘ এটা এরকম ঘুরছে কেন?দেখেইতো মাথায় চক্কর কাটছে।আর এই মেয়ে কীনা এরকম অদ্ভূত জিনিসে ওঠার বায়না ধরতো?
রুদ্র একবার মনে মনে ভাবলো সেঁজুতি কে নিয়ে উঠবে ওটাতে।কিন্তু সেঁজুতি কী রাজি হবে? আর সেও কী সামলাতে পারবে? ওটা অত উঁচু! সেতো এমনিতেই লো প্রেশারের রোগী।চিৎ কাৎ হয়ে পরবে নাতো?অনেক ভেবে রুদ্র ঠিক করলো সেঁজুতি কে জিজ্ঞেস করবে উঠবে কীনা! পরমুহূর্তে ভাবলো,” না থাক! যদি মুখের ওপর না বলে? তার ইগোতে লাগবে।রুদ্রর ভাবনার মাঝেই সেঁজুতি চেঁচিয়ে উঠলো,
‘হাওয়াই মিঠাই। বাবা দেখো…
আমির, রুদ্র দুজনেই ফিরলো সেদিকে।বাচ্চা একটি ছেলের কাঁধে বিশাল বড় লাঠি।তার মাথায় ফুলের মতো সাদা,গোলাপী রংয়ের কী একটা বাঁধা! রুদ্র বুঝতে পারলোনা ওটা কী।অনেকক্ষন দেখেও পলিথিনের ভেতরে আটকানোর জিনিসটার রহস্য উদঘাটন সম্ভব হলোনা।
ওদিকে হাওয়াই মিঠাই দেখে ছুটে গেলো সেজুতি।রুদ্রর প্রচন্ড কৌতুহল হলো।সেঁজুতির উৎসাহ দেখেই মূলত।সেঁজুতি সাদা রঙের দুটো মিঠাই নিলো হাতে।রুদ্র পাশে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‘এটা কী?লাঠির মতোন।মাথায় আবার কেমন প্যাকেট মোড়ানো?
রুদ্রর প্রশ্নটা সেঁজুতির বোঁকা বোঁকা মনে হলো।তখন হাসি আটকে রাখলেও এখন হেসে ফেলল শব্দ করে।
‘আপনি এটা চেনেন না?? কোন গ্রহে থাকেন?
রুদ্র চোখ পাঁকাতেই সেঁজুতি চুপ হয়ে যায়।পরমুহূর্তে আবার খিলখিল করে হেসে ওঠে।রুদ্রর মুখটা ছোট হয়ে এলো।লজ্জ্বা পেয়েছে বোধ হয়।
‘কিছু জিজ্ঞেস করলে কাউকে নিয়ে এভাবে হাসা উচিত?
সেঁজুতি কোনো রকমে হাসি থামালো।হাসতে হাসতে চোখে জল এসেছে। বলল,
‘স্যরি! স্যরি!আসলে আপনি এমন ভাবে বললেন যে না হেসে পারিনি।আচ্ছা আমি বলছি, এটার নাম হাওয়াই মিঠাই।আমার ভীষণ ভালো লাগে।
‘ এটা আবার কেমন নাম?
‘ এটার বিশেষত্ব কি জানেন?
‘ কী?
‘ এটা এত্তগুলো হাতে নেবেন।অথচ মুখে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাওয়া হয়ে যায়। ট্রাই করে দেখবেন??দাঁড়ান…
রুদ্রর কথাটা বিশ্বাস হলোনা।এরকম আবার হয় নাকী? সেঁজুতি একটা হাওয়াই মিঠাই ওর হাতে দিলো।খাবেনা খাবেনা ভেবেও নাক মুখ কুঁচকে মুখে দিলো রুদ্র।তাৎক্ষণিক মুখের ভঙিমা পালটে গেলো।বিগলিত কন্ঠ বলল,
‘ বেশ ইন্টারেস্টিং তো!
‘ তবে আর বলছি কি? এটা এত ইন্টারেস্টিং বলেই না আমার এত্ত পছন্দ।
আচ্ছা কত হলো তোমার?( ছেলেটির দিকে তাকিয়ে)
রুদ্র পাশ থেকে বলল,
” আমি দিচ্ছি।কত এসছে?
ছেলেটি বলল
‘তিনটা নিয়া মোট ৩০ টাকা।
রুদ্র চোখ পিটপিট করলো।মানিব্যাগ চেক করে দেখলো আস্ত টাকার নোট।সেঁজুতি হেসে বলল,
‘ থাক। আপনার আর দিয়ে কাজ নেই।আপনার পকেটে ৩০ টাকা নেই আমি জানি।অবশ্য থাকার ও কথা না।আপনার মতো লোক কী আর পকেটে খুচরো নিয়ে ঘোরে ??
রুদ্র কপট রাগ দেখিয়ে বলল
‘ বেশি কথা বলেন আপনি।
‘সেটা আমিও জানি।নতুন কিছু নয়।সরুন, আমি দিয়ে দিচ্ছি…
রুদ্র তীব্র আপত্তি জানালো,
আপনার টাকায় আমি কেনো খেতে যাবো?আমিই দেব।
মানিব্যাগ থেকে ৫০০ টাকার নোট বের করে এগিয়ে দিলো রুদ্র।ছেলেটা মাথা দুলিয়ে জানালো,
‘ ভাঙতি নেই।
রুদ্র বলল
— পুরোটাই রেখে দাও।
ছেলেটির মুখ চকচক করে উঠলো।অন্যদিকে সেঁজুতি বিমুঢ় হয়ে চেয়ে আছে।কটমট করছে চোয়াল
‘ আচ্ছা শয়তান লোক তো!আমার টাকায় কিনবো বলে ৩০ টাকার জায়গায় ৫০০ টাকা দিয়ে দিলো?আর আমি কিনা এই একটু আগে ভাবলাম লোক টা ভালো হয়ে গিয়েছে? অসম্ভব! এই লোক জন্মেও শুধরাবে না।উহু!
____
ঘোরাঘুরি শেষ হলো সন্ধেবেলা। রুদ্র এই সময়টায় অনেক কিছু দেখেছে।সেঁজুতি কে প্রশ্ন করতে করতে নেতিয়ে ফেলেছে প্রায়।এটা কী! ওটা কী! এটা এরকম মেন? ওরকম কেন? আর সেঁজুতিও খুশি মনে আগ্রহ নিয়ে উত্তর দিয়েছে। একটুও বিরক্ত হয়নি।সেঁজুতি দের বাসায় পৌঁছে দিয়ে মাত্রই ফিরল রুদ্র।সেঁজুতি আমির দুজনেই বাসায় ঢোকার জন্যে বলেছিলো কিন্তু সে শোনেনি।ক্লান্তি তার চুলের ডগায়।আজকাল অজানা কারনে ঘুম হচ্ছেনা।আগে রাতে মেয়ে নিয়ে মেতে থাকতো।এখন একা বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে ঘুমোলেও ঘুম আসেনা।মাথার মধ্যে সেঁজুতি ঘোরে।ওর হাসি,কান্নামাখা মুখ,রাগে ফুলে ওঠা নাকের ডগা সব কেমন চক্রাকারে চোখের সামনে ঘোরে।রুদ্র তখন চোখ খিঁচে বালিশ চেপে ধরে মুখের ওপর।
তাই এখন তার প্রচুর ঘুম পাচ্ছে।রুমে এসেই বিছানার ওপর সটাং হয়ে শুয়ে পরলো রুদ্র। চেহারাটা টসটসে স্ট্রবেরি হয়ে আছে। রোদের মধ্যে এতো কিভাবে ঘোরে মানুষ?অভ্র তখন রুমে ঢুকলো।রুদ্রকে ক্লান্ত পায়ে ফিরতে দেখেই পেছন পেছন এসেছে।এসেই দেখলো রুদ্র বিছানায় দুহাত মেলে চিৎপটাং। উদ্বিগ্ন হয়ে বলল
“ভাই কি হয়েছে? শরীর খারাপ??
“একটু ক্লান্ত লাগছে,,

” ভাই রেহান তো সেই কবেই ফিরেছে।তুমি ওকে নিয়ে যাচ্ছোনা কেনো?নিজে নিজে ড্রাইভ করছো। একটা কিছু হলে?হলে মানে কী? একবার তো হতেই যাচ্ছিলো।ভাগ্যিশ সেবার বেঁচে গেলে।তোমারতো ড্রাইভ করার অভ্যেস নেই।এইজন্যেই ক্লান্ত হয়ে পরছো।

রুদ্র সব কথা চোখ বুজেই শুনলো।তার কানে সেঁজুতির খিলখিল হাসিটা বারি খাচ্ছে যেন।আচ্ছে মেয়েটাকে কখন বেশী সুন্দর লাগে? হাসলে? নাকী কাঁদলে? নাকী জেদ দেখালে? না। রাগলে বোধ হয়।রুদ্র কোনো সিদ্ধান্তই নিতে পারলোনা।মন দিলো অভ্রর কথায়।বলল” আমার আর ড্রাইভার প্রয়োজন পরবে না অভ্র।

অভ্র জিজ্ঞাসু চেহারায় তাকিয়ে আছে ।রুদ্র চোখ খুলে মাথার পেছনে এক হাত রেখে শুলো।দেয়ালে লাগানো এসিটার দিকে চেয়ে বলল ‘ ইদানীং ড্রাইভ করতে ভালো লাগে।ড্রাইভার থাকলে নিজেকে যন্ত্র যন্ত্র মনে হয়।আর একা থাকলে?সেরকম লাগেনা।

অভ্র বিহ্ববল হয়ে শুনছে।বিশ্বাস হচ্ছেনা এসব রুদ্র বলল।”ভাইতো ড্রাইভার ছাড়া এক পাও বাইরে রাখতোনা আগে। হঠাৎ এত পরিবর্তন? বিড়বিড়িয়ে বলল,
“কি যে হলো তোমার কে জানে!ইদানিং বড্ড মিস্টেরিয়াস লাগে তোমাকে।যার সবটা শুধু রহস্য আর রহস্য,।রুদ্রর কানে পুরো কথাটাই গেলো।
জবাবে মৃদূ হাসলো। বলল,
‘আগে আমার রহস্য ভেদ হোক,তারপর না নয় তোর টার ও একটা ব্যাবস্থা করবো আমি।
রুদ্র চট করে উঠে টাওয়াল নিয়ে বাথরুমে ঢুকলো।অভ্র বন্ধ দরজার দিকে চেয়ে থাকলো।অবশ্যই বোকাঁ বোঁকা চাউনীতে।
___
ঘড়ির কাঁটায় যখন দশটা,রুদ্র অফিসে ঢুকলো তখন।এক সেকেন্ড ও দেরী হয়না এতে।এসেছিলো তিক্ত মেজাজে।মধ্য রাস্তায় কতগুলো হিজরার খপ্পরে পরেছিলো আজ।রেহান সাথে ছিলো ।এমনিতে একা হলেও, অফিস আসার সময় ড্রাইভার নিয়ে আসতে ভোলেনা রুদ্র। হিজরা গুলো টাকা চাইতে এসেছে ভালো কথা,রুদ্র এক কথায় দিয়েছে। ওদের চাহিদার থেকেও বেশি দিয়েছে।কিন্তু ওরা যাওয়ার সময় রুদ্রর চেহারা নিয়ে এমন প্রশংসা করলো রুদ্র রীতিমতো রেহানের সামনে অপ্রস্তুত হয়ে পরলো।অপ্রকাশিত লজ্জ্বা ও পেলো।একিরকম লজ্জ্বা রেহান ও পেয়েছে। প্রসংশার বহর যে এমনও হয় রুদ্র আজই প্রথম জানলো। আর সেই থেকেই তার মেজাজ খারাপ।কিন্তু ওই খারাপ মেজাজ ভাল হলো মুহুর্তেই।অফিসে ঢুকতেই তার এতদিনের ইচ্ছে পূরন হলো।আজ সেঁজুতি আগেই হাজির।সবার সঙ্গে দাঁড়িয়েছে মেয়েটা।সুন্দর করে সমস্বরে বলেছে “শুভ সকাল।রুদ্রর খুব ভালো লাগল।কিন্তু এটাতো প্রকাশের সময় নয়।গটগট করে হেটে গেলো কেবিনে। সেঁজুতি যেন অপেক্ষাতেই ছিলো রুদ্রর ডাক আসার।এই এক মাসে অভ্যেস হয়ে গিয়েছে। ইদানীং রুদ্রর সাথে কথাবার্তাও সহজ হচ্ছে।প্রথম দিনের মতো হিংস্র আলাপ বিলুপ্ত প্রায়।তবে মনে মনে রুদ্রকে দেখতে পারেনা সেঁজুতি। সেটা সে প্রকাশ ও করেনা।চেষ্টা করে ভদ্র ভাবে থাকতে।আর যাই হোক,এটাতো সত্যি,তিন বছরের জন্যে এখানেই শিকড় আটকে পরলো তার।
বশীর এসে হাঁক পারলেন।রুদ্র ডাকছে।সেঁজুতি উঠে গেলো।নক করে কেবিনে ঢুকলো।রুদ্র তখন জানলার পাশে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে।সেঁজুতি আসার আরো চারমিনিট পর কথা শেষ হয়।সেঁজুতি ঠাঁয় দাঁড়িয়ে। রুদ্র পেছন ঘুরলো ফোনের লাইন কাটতে কাটতে।ওমনি গলা শুকিয়ে এলো তার।সেঁজুতির পিঠ সমান খোলা চুল গুলো থেকে পানি চুইয়ে চুইয়ে পরছে।পড়নে সাদা থ্রিপিস।তাতে সুতার হাল্কা কারুকাজ।মুখে কোনো প্রসাধনী নেই।শুধু চিকন ঠোঁটে চিকচিক করছে লিপবাম।রুদ্রর মাথায় একটাই কথা এলো,”সদ্যস্নাত পদ্ম’

‘ ডেকেছেন স্যার?
সেঁজুতি প্রশ্ন ছুড়লো।অতি দ্রুত রুদ্র সামলালো নিজেকে।কোনো ভাবেই অন্য কারো সামনে নিজের দূর্বলতা তুলে ধরেনা সে।সেঁজুতির সামনে তো আরোই না।চেয়ারে এসে বসে ধীরু হাতে পানির গ্লাশ তুলে পানি খেলো।টিস্যু দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বলল, ‘ কফি দিন।

সেঁজুতি ভুলেই বসেছিলো কথাটা।গত পরশু আগ বাড়িয়ে এই দায়িত্ব নিয়েছিলো সে।চুপচাপ কফি মেকারের দিকে এগোতে ধরলে রুদ্র হঠাৎ গম্ভীর আওয়াজ তোলে।বলে ওঠে..
‘ এটা অফিস। আর কতবার আপনাকে মনে করাতে হবে মিস সেঁজুতি?
সেঁজুতি বুঝলোনা।তবে প্রশ্ন ও করলোনা।চেয়ে থাকলো জিজ্ঞাসু চোখে।রুদ্র নিজেই বলল ‘ আপনি খোলা চুলে এসেছেন কেন? তাও এরকম ভেজা চুল নিয়ে?

সেঁজুতি চোখ নিঁচে নামিয়ে নিলো।আজ অফিসে আগে এসেছে সে।কিছুতেই জ্যামের কবলে পরবেনা,বড় মুখ করে বলেছে দেরিও করবেনা। সে জন্যেই এত পায়তারা করে আসা।সকাল সকাল গোসল করে আজই প্রথম এলো।এতদিন তো সময় ই পেতোনা।অত রাতে গিয়ে করতে হতো।প্রায়সই ঠান্ডাও লাগতো। আগে আগে আসবে ভেবে তাড়াহুড়ো করে চুল শুকায়নি।ভেবেছিলো যেতে যেতে বাতাসে শুকাবে।তাও হয়নি।চুল থেকে পানি পরছিলো বলে বাঁধেওনি।ভাবেনি রুদ্র খেয়াল করবে।লোকটাতো সব সময় কাজে ডুবে থাকে।ইশ! ব্যাপারটা কি বিচ্ছিরি দেখালো! বস কীনা চুল বাঁধতে বলছে? এইদিন দেখার আগে অল্প করে মরে যাওয়া দরকার।রুদ্রর অফিসের রুলস রেগুলেশনের মধ্যে পরিপাটি করে আসাও একটা। সেঁজুতি দেরি না করে চুল গুলো হাত খোপা করে ফেলল।আস্তে করে বলল ‘ স্যরি স্যার।এরকম আর হবেনা।

রুদ্র কিছু বলেনি।চেহারা গম্ভীর রেখেই কাজে মন দিয়েছে।সেঁজুতিও নরম হাতে কফি বানাচ্ছিলো।রুদ্র আঁড়চোখে দেখে নেয় কয়েকবার।নিজে নিজে আঁওড়ায়
‘ মেয়েটা কি জানে, ওকে খোলা চুলে কেমন বাজে দেখতে লাগে?এমন বাজে রুপেও যে কারো ঘুম উড়ে যাওয়ার জোগাড়!
চলবে,

#প্রনয়
#নুসরাত সুলতানা সেজুথী
পর্ব-১৮

বাইরে ঝিরঝিরে বৃষ্টি। অল্প অল্প মেঘ ও ডাকছে।সেঁজুতি বৃষ্টিতে ভেঁজেনি।অফিস থেকে বেরিয়ে ডিরেক্ট সি এন জি তে উঠেছে। কিন্তু মন ভীষণ খারাপ।যতটা খারাপ হলে নিজের চুল খামচে ছিড়তে মন চায়,ততটাই খারাপ।এর কারণও ঘুরেফিরে সেই রুদ্র।আজকের গোটা দিনটাকে অপয়া বলে ঘোষণা করেছে সেঁজুতি। সকালবেলা চুল নিয়ে রুদ্রর ঝাড়ি শুনলো।এরপর রুদ্র বলেছিলো এসির পাওয়ার বাড়াতে।সেঁজুতি বেখেয়ালে কোথায় চেপেছে কে জানে! এসিটাই বন্ধ হয়ে গেছিলো।সেঁজুতির তখন রুদ্রর ধমকের ভয়ে প্রান যায় আর আসে।এমন ভুল কেন করলো কিছুতেই বুঝলোনা।সেতো এসি চালাতে জানে।হয়ত নিজেদের বাসায় নেই কিন্তু তবুও জানে।অথচ, রুদ্র ধমকাতে চেয়েও ধমকায়নি।কি মনে করে ধমকায়নি সে-ই জানে।চুপচাপ সার্ভিসিংয়ের লোক এনে ঠিক করিয়েছে।সেঁজুতির মুখটা তখন দেখার মতো ছিলো।চোর চুরি করেছে, ধরাও পরেছে, অথচ বাড়ির লোক না পিটিয়ে চোখের সামনে রেখে বলছে’ দাঁড়িয়ে থাকো।এভাবেই।তারপর সবাই শান্ত,ঠান্ডা। কিছু বলছেওনা , করছেওনা।ওই পরিস্থিতিতে চোর বাবাজির যেমন অবস্থা হবে,সেঁজুতির ও ঠিক তাই হলো।রুদ্রর ধমক শুনে অভ্যস্ত সে কিছুতেই শান্ত রুদ্রকে মেনে নিতে পারলোনা।
তারপর যখন ডেস্কে এলো মন একটু ঝরঝরা হচ্ছিলো আস্তে আস্তে।সারাদিনে রুদ্র আর ডাকেনি কেবিনে।অফিস ছুটির এক ঘন্টা আগে আবার ডাকলো।সেঁজুতি গেছিলো ভালো মনে,ঠিকঠাক মেজাজে।অথচ এরপরের রুদ্রর কথা শুনতেই মাথা ভোঁ ভোঁ করে ঘুরে এলো তার।কথাই বন্ধ হয়ে গেছিলো অল্প সময়ের জন্যে।রুদ্র মুখের সামনে হাত না নাঁড়লে তো, সম্বিৎই ফিরতো না।
রুদ্র তার নতুন প্রজেক্ট রেখেছে সিলেটে।কয়েকটা কনফারেন্স, মিটিং প্রেজেন্টেশন এখন খুব দরকার।বড় মাপের ডিল সাইন হবে।অতি দ্রুত সেখানে যেতে হবে তাকে।সব সময় রুদ্র আর তার এসিস্ট্যান্ট যায়।আর তখন গোটা অফিসের দায়িত্ব অভ্রর কাঁধে।এবারেও এর হেরফের হবেনা। কিন্তু এসিস্ট্যান্ট যেহেতু মেয়ে, তাই রুদ্র হেজিট্যেট করছিলো।সেঁজুতিকে বলতেও কেমন সঙ্কোচ হচ্ছিলো।অন্য মেয়ে হলে এক কথা,কিন্তু সেঁজুতির সাথে তার প্রথম সাক্ষাৎ তো অত সুমধুর নয়।মেয়েটা রাজী হবেতো? এসব ভেবে ভেবেই অফিসের পুরো দশ ঘন্টা রুদ্র হাসফাস করেছে।কিন্তু কিছু করার ও নেই।অগত্যা কোনো উপায়ন্তর না পেয়েই সেঁজুতি কে সিলেট যাওয়ার কথা জানালো রুদ্র।সেঁজুতি একটা প্রত্যুত্তর ও করেনি।এক পাশে ঘাঁড় হেলে স্বায় দিয়েছে।তার মতে,সে না বললেই কী লোকটা শুনবে? অফিসের কাজ,যেতে তো হবেই।কিন্তু এভাবে রুদ্রর সাথে একা যাওয়াটাও মেনে নিতে পারছেনা।কেমন খচখচ করছে।সেঁজুতির মুখের অন্ধকার রুদ্রর চোখ এড়ালোনা।কিন্তু সে ধরা দেয়নি।সেঁজুতি যেতে রাজী, এটাই অনেক। এই সুযোগে আরেকটু কাছাকাছি থাকা হবে।রুদ্র মনে মনে খুশিই হলো যেন।

বাড়ি ফেরা থেকেই সেঁজুতি মাথায় হাত দিয়ে ফ্লোরে বসে আছে।আমির প্রথমে ভয় পেয়েছেন।পরে তার মাথায় এলো এটা সেঁজুতির স্বভাব।একটু কিছু নিয়ে মন খারাপ, বা দুঃখ পেলেই সে স্ট্যাচুতে পরিনত হয়।দুনিয়ার সবাই বুঝতে পারবে মেয়েটির মন ভালো না থাকার খবর। আমির কয়েকবার সেঁজুতি কে ফ্রেশ হতে বললেন।সেঁজুতি নঁড়লোনা।শেফালী এসে চা দিলো।সেঁজুতি খেলোনা।সে থম ধরে আছে।আমির বুঝলেন ব্যাপারটা অত সিরিয়াস কিছু নয়।সিরিয়াস কিছু ঘটলে তার মেয়ে একদম স্বাভাবিক থাকবে।কেউ বুঝতেই পারবেনা ভেতরে কি চলছে?বাড়িতে নাওয়া খাওয়া বাদে আমিরের তিনটি কাজ, পত্রিকা পড়া,টিভি দেখা আর মাঝেমধ্যে সেঁজুতির পছন্দের নাস্তা বানানো।আমির এখনও পত্রিকাই পড়ছিলেন।ঘরবন্দী থাকতে থাকতে দিনের একটা পত্রিকাই দশ বার পড়ে সে।সময় কাটে।ভালোও লাগে।একটা দাঁড়ি কমাও বাদ পরেনা পড়া থেকে।আমির পত্রিকার কাগজটাকে ভাঁজ করে টি টেবিলের নিঁচের তাকে রাখলেন।মেয়ের দিকে চেয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।সেই কখন থেকে সেঁজুতি একভাবে বসে আছে।যেন বিয়ের গয়না চুরি করেছে কেউ।আমির আর ধৈর্য ধরতে পারলেন না।প্রশ্ন করেই ফেললেন,
‘ আমার আম্মা!এসে থেকেই মুখ টা ওমন করে রেখেছেন কেন?
সেঁজুতি উত্তর না দিয়ে বাবার দিক ফিরলো।মাথা থেকে হাত নামিয়ে বাবু হয়ে বসলো।পরমুহূর্তে আবার মাথায় হাত দিলো।আমির অধৈর্য কন্ঠে বললেন,’ আহহা! এসবের কোনো মানে হয়? কিছু বলছিস না।ফ্রেশ হচ্ছিস না।চা টাও তো ঠান্ডা হয়ে গেলো।
সেঁজুতি একবার শরবত রুপী চায়ের দিকে তাকালো।আমির হাক পারলেন শেফালীকে।সে তখন রান্নায় ব্যাস্ত।বললেন চা টা আবার একটু গরম করে দিতে।
শেফালী যেতে যেতে বলল ‘ আফার মনে হয় জামাই মরছে।আমির শেফালী কে ছোট্ট করে ধমক দিলেন।এরপর একই প্রশ্ন আবার করলেন।সাথে একটু মিথ্যে মেজাজ নিয়ে বললেন ‘ সেঁজুতি! বাবা কিন্তু এবার রেগে যাচ্ছি।কি হয়েছে বলবি?

সেঁজুতি হা হুতাশ করতে করতে বলল
‘ আমি শেষ বাবা! আমি শেষ!
আমির আর্তনাদ করে বললেন ‘এসব আবার কী কথা?

সেঁজুতি দুঃখী দুঃখী মুখে বাবার দিকে তাকালো। আমির উদ্বিগ্ন হয়ে বললেন
‘কি হয়েছে?
সেঁজুতি এতক্ষনে বলার জন্যে মুখ খুলল,
“কি হয়নি তাই বলো!অফিসের কাজে আমাকে এখন সিলেট যেতে হবে। তাও ওই বদমেজাজী,বদমাশ, বিভৎস, বেপরোয়া লোকটার সাথে।ভাবতে পারছো?? ওইরকম একটা লোকের সাথে আমি একা কাজে যাবো?ব্যাপার টা অনেকটা বাঘের গুহায় ঢুকে বাঘের সামনেই ঘুমানোর মতনা?
কখনও কোন কাজে ভুল হলেই আমাকে খপাৎ করে গিলে ফেলবে।

আমির হেসে ফেললেন,
‘এই জন্যে তুই এতো চিন্তায় ছিলি এতক্ষন?
সেঁজুতি দুই ভ্রু উঁচিয়ে বলল
‘ তুমি হাসছো? এটা চিন্তার বিষয় নয়??

আমির দুইদিকে মাথা নেঁড়ে বললেন “একদম ই নয়।আরে বাবা অফিসের কাজে বাইরে যাবি এটা আর এমন কি?উল্টে তোর জন্যেই ভালো।নতুন নতুন এক্সপেরিয়েন্স হবে,অনেক কিছু শিখবি,তাছাড়া সিলেট তো কখনও যাসনি একবারে দেখেও আসলি!আর কাজ ঠিক ভাবে করলে কার সাধ্য আছে ভুল ধরার.
(একটু থেমে)তাছাড়া, সেদিন রুদ্র রওশন কে দেখে আমার অনেক অবাক লেগেছে।আমাদের বাড়ি এসে শাসিয়ে যাওয়া সেই লোকের সাথে সেদিনের ওনার কোনও মিল পাইনি।ওইদিন পার্কে ওনাকে আমার একটুও মনে হয়নি আদৌ এই লোকটা এতো টা অহংকারী।কি সুন্দর মিশলেন আমাদের সঙ্গে!ঘুরলেন,কথা বললেন।অহংকারী হলে কেউ অফিসের কর্মচারীর সঙ্গে এভাবে মেশে বলতো?
আমার মনে হয় ওনাকে আমরা যেমন টা ভাবি উনি আসলে তেমন নন।আর বাইরে থেকে একটা মানুষকে দেখলে কি আর বোঝা যায়?বুঝতে হলে তাকে অনেক কাছ থেকে দেখতে হয়। তার পাশে থেকে তাকে চিনতে হয়।তার সাথে মিশে তার ভেতর টা জানতে হয়।তবেই না বোঝা যাবে মানুষ টা কেমন?
সেঁজুতি মন দিয়ে শুনছিলো।মানস্পটে ভাসছিলো রুদ্রর সেদিনের উচ্ছ্বল মুখটা।বোঁকা বোঁকা প্রশ্ন গুলি।আর উত্তর পেয়ে কেমন বাচ্চা বাচ্চা চাউনি।সত্যিই লোকটাকে তার খারাপ লাগেনি ঐদিন।বরং অন্য রকম লেগেছে।একদম আলাদা।কিন্তু সেই লাগা দিয়ে কাজ হবে? কাজের বেলায় রুদ্র ভীষণ স্ট্রিক্ট। কোনো ছাড় দেবেনা।
আমির মেয়ের মাথায় হাত বোলালেন,
তুই এতো ভাবিস না,আর ভয়ও পাসনা।দেখবি, যা হবে ভালোই হবে।

“কিন্তু সমস্যা তো আরও একটা আছে বাবা।
‘ আবার কী?
সেঁজুতি মায়া মায়া চোখে চেয়ে বলল,
“আমি গেলে তুমি একা কিভাবে কি করবে?
আমির এবারেও হাসলেন,
‘আরেহ পাগলী মেয়ে!শেফালী আছেনা?ওতো সব কাজ ই এগিয়ে দিয়ে যাবে।

” কিন্তু রাতে?

আমির কপাল চাঁপড়ে বললেন,
— উফফ! এই মেয়েটা কে নিয়ে আমি আর পারিনা।একটা পা গিয়েছে বলে কি তোর বাবার সব ক্ষমতাই চলে গিয়েছে নাকি?অন্য পা দিয়ে এগোতে তো পারি নাকি? তাছাড়া তুইতো আমার জন্যে স্ক্র‍্যাচ এনেছিস।আমার একা একা বিছানা থেকে নামতে কোনো অসুবিধাই হয়না এখন।তুই নিশ্চিন্তে যা তো…
আর এখনি আমাকে অভ্যেস করতে হবেনা? তোর বিয়ে হয়ে যখন শ্বশুর বাড়ি চলে যাবি তখন তো আমাকে একাই…
সেঁজুতি বাবার হাটু আঁকড়ে ধরলো তৎক্ষনাৎ। মাথা গুঁজে বলল ‘ আমি কখনও বিয়েই করবনা।
আমির মৃদু হাসলেন।কিছু বললেন না।মেয়েকে ছেড়ে থাকার কথা ভাবলেই বুক ভারী হয়ে আসে।কেন যে দুনিয়ার এই নিয়ম!
___

সেঁজুতি চটপট তৈরি হচ্ছে।রাতেই ব্যাগ গুছিয়ে রেখেছিলো।হাত পায়ে লোশন মাখছে এখন।ভেবেছিলো তাকে বাসে করে যেতে হবে।একা একাই।এরকম হলেই হয়ত বেঁচে যেত।কিন্তু হঠাৎ রুদ্র রাত বারোটার দিকে কল দিলো।প্রথমে তো সেঁজুতি বিশ্বাসই করতে পারেনি। যবে থেকে অফিস জয়েন করলো,রুদ্র কল দিলো এই প্রথম। সেঁজুতি দেরী করেনি।ফটাফট রিসিভ করেছে।রুদ্র তখন কড়া হুকুম জারি করে বলেছে ‘ সেঁজুতি কে তার সাথে গাড়িতে যেতে হবে।ওমনি সেঁজুতির মুখ চুপসে যায়।রুদ্র গাড়ির কাঁচ একদম খুলতে দেয়না।সেঁজুতির আদবকায়দাহীন চুল তার মুখের ওপর পরে নাকী! দ্বিতীয়ত সে এসির বাতাস ছাড়া চলতে পারেনা।তৃতীয়ত, এসিতে সেঁজুতির দম আটকে আসে।রুদ্রর সামনে নঁড়াচড়া করতে গেলেও হিসেব করতে হয়।সে নিশ্চয়ই রুদ্রর সামনে কানে হেডফোন গুঁজে গান শুনতে পারবেনা?বসের সাথে বেয়াদবি করা হবেতো! সিলেট তো আর বাড়ির কাছে নয়। অতটা রাস্তা কী তাহলে রোবটের মতোন বসে যাবে? ঘুমোতেও পারবেনা।বাই এনি চান্স যদি রুদ্রর কাঁধে মাথা পরে যায়? ভাবতেই সেঁজুতির গা ঠান্ডা হয়ে আসছে।একেতো লজ্জ্বায় দুইয়ে ভয়ে।রুদ্র যদি রাগে তাকে ছুড়ে মারে গাড়ি থেকে? কী হবে?সেঁজুতির অকূল ভাবনার ইতি ঘটলো কানের মিধ্যে উৎকট হর্নের শব্দে।নিশ্চয়ই রুদ্র এসেছে।সেঁজুতি তড়িঘড়ি করে ব্যাগ নিয়ে বাবার ঘরের দিক ছুটলো।

বাসার সামনে গাড়ি এসে দাঁড়িয়ে আছে।কিন্তু সেজুতি আসার নাম নেই। গাড়ির হর্ন আরো জোরে বাজালো রুদ্র।বিড়বিড় করলো,
“এই মেয়েটা আর শুধরালো না।সব কিছুতে লেট আর লেট! লেটুস পাতা একটা।
তখনি সেঁজুতি দৌড়ে আসতে আসতে বলল,
‘আরে আসছি আসছি, হর্ন বাজিয়ে মাথা খারাপ করে দিলো।
গাড়ির কাছে এসে থামলো সেঁজুতি।কাঁচ নামালো রুদ্র।সেঁজুতি মুখ দেখেই বুঝলো রুদ্র চঁটেছে বেজায়। হাপাতে হাপাতে বলল ‘ স্যরি স্যার।
রুদ্রর জবাব ‘ গাড়িতে উঠুন।
-‘ও হ্যা হ্যা।
সেঁজুতি উঠে বসতেই রুদ্র কিছু বলার জন্যে হা করলো।সেঁজুতি ধড়ফড় করে বলল,
‘ আপনি একদম আমাকে বকবেন না। আমি কিন্তু মাত্র ৪ মিনিট দেরি করেছি।

রুদ্র দাঁত চিবিয়ে বলল’ লিসেন?
( একটু থেমে)
না।আপনাকে কিছু বলে মুখে ব্যাথা বানিয়ে লাভ নেই।আপনি শুধরাবার পাত্রী নন।
রুদ্র গাড়ি স্টার্ট দিতেই সেঁজুতি জানলার দিক ফিরে মুখ ব্যাঁকালো।মনে মনে আওড়ালো ‘ নিজে যেন শুধরে উলটে দিয়েছে।

___
সেঁজুতির এখন সত্যিই মাথা ঘুরছে।একেতো সকালে খায়নি।দুইয়ে বন্ধ গাড়ি।এর ষোলকলা পূর্ন হচ্ছে যখন বাইরের দিকে তাকাচ্ছে।অন্যান্য দিনে গাছগুলোর ছোটাছুটি তার ভীষণ ভালো লাগে।অথচ এখন কেমন গা গোলাচ্ছে।বমি আসবে নাকী?ইয়া আল্লাহ! এই লোকের গাড়ি যদি বমি করে ভাসায়,তবেতো বিপদ।মহাবিপদ। লোকটা তাকে ভৎস করে দেবে। রুদ্র হঠাৎ বলে ওঠে,
‘ পেছনের সিটে খাবার আছে। খেয়ে নিন।
সেঁজুতি তড়িৎ গতিতে তাকালো।তখনও বোঝেনি রুদ্র কী বলল মাত্র।রুদ্র ড্রাইভ করছে মনোযোগ দিয়ে।সেঁজুতি বোঁকার মত চেয়ে আছে দেখে আবার বলল একী কথা।সাথে একটু ঝাঁঝ নিয়ে বলল ‘ কানেও কম শুনছেন। বাহ! আর কি কি গুন আছে আপনার?

সেঁজুতির উত্তর দেয়ার সময় নেই। তার খিদে পেয়েছে।তাও অতিমাত্রায়। চটপট পেছনের সিট থেকে পাউরুটি আর জেলি নিয়ে খেতে শুরু করলো।রুদ্র গাড়িতে ওঠার আগে কিনে ছিলো এসব।সাথে জুস,কলা, আরও অনেক শুকনো খাবারও আছে।মাঝ রাস্তায় তো অতবার গাড়ি থামানো যাবেনা।বিকেল তিনটায় মিটিং আছে।গিয়ে বিশ্রাম ও নিতে হবে।হাল্কা ক্ষুধা লাগলে খাওয়া যাবে। রুদ্র
কিয়ৎ হাসলো।ঠিক বুঝেছে সেঁজুতি খায়নি। সাথে অবাক ও হচ্ছে ‘ মেয়েদের মুখ দেখে মন বোঝার ক্ষমতা কবে হলো তার?
সেঁজুতি খেতে খেতে জিজ্ঞেস করলো ‘ আপনি খাবেন না?
রুদ্র ছোট করে বলল ‘ না।
সেঁজুতি আবার বলল
‘একটা কথা বলবো?
‘ হু।
সেঁজুতি মুখ কাঁচুমাচু করে বলল’ এসি টা বন্ধ করে দিন না।আমি একিটু জানলাটা খুলি?
রুদ্র মুখের ওপর বলল ‘ না।
‘ প্লিইইইইইজ!
‘ No
‘আর কক্ষনও লেট করবোনা।প্রমিস!
রুদ্র ভ্রু কুঁচকে তাকালো,
‘ আপনার মনে হয়,আপনি লেট করে এসেছেন বলে আমি না করছি?
সেঁজুতি অসহায় কন্ঠে শুধালো,
‘তাহলে?
রুদ্র ফোঁস করে এক নিঃশ্বাস ফেলল ‘ জানলা খুললেই আপনার চুল আমার মুখে এসে পরে।আমার যে তখন কী হয়,আপনি কীভাবে বুঝবেন!কোনো রিস্ক আমি নেবনা।

‘ কি ভাবছেন? খুলব জানলা?
‘ না বললাম তো!
সেঁজুতি ঠোঁট উলটে বলল ‘ এমন করছেন কেন? আমিতো বললাম আর দেরী হবেনা।কক্ষনও না।

রুদ্র বিদ্রুপ করে বলল ‘ আপনার মাথায় বেশ বুদ্ধি।টের পাচ্ছি আমি।
সেঁজুতি সন্দিহান কন্ঠে বলল
‘ প্রশংসা করলেন?
‘ এবারতো আরো ক্লিয়ার হলো।বুদ্ধির নমুনা।

সেঁজুতি নাক মুখ ফোলালো।লোকটা তার বুদ্ধি নিয়ে কথা তুলে অপমান করলো?এর একটা জবাব দেয়া উচিত না? ঝগড়ার কঠোর প্রস্তুতি নিয়ে বলল,
‘শুনুন আপ…
রুদ্র থামিয়ে দিয়ে গম্ভীর স্বরে বলল,
‘ আপাতত কিছু শুনতে চাইছিনা।আপনার যদি কিছু বলতেই হয় তবে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিচ্ছি রাস্তায় দাঁড়িয়ে বলবেন।

সেঁজুতির মুখটা এবার থমথমে হয়ে এলো।চোখ কপালে তুলে বলল,
“আবার অপমান? আপনার গাড়িতে উঠেছি বলে আমাকে কথা শোনালেন? এই ছিলো আপনার মনে?আমিতো বলেইছিলাম আমি বাসে চলে যাবো,কেনো এলেন আপনার এই গাড়ি নিয়ে? আমি কী যেঁচে উঠেছি? এর আগেও একবার গাড়ি নিয়ে খোঁটা দিয়েছেন।গাড়িকে কী মনে করেন? পঙ্খিরাজ ঘোড়া?
সেঁজুতি মুখ কুঁচকে বলল ‘ এটা একটা গাড়ি হলো?কি কালো?? দেখলেই মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব থেকে অন্ধকার রাজ্যের মধ্যে প্রবেশ করেছি।এমন গাড়িতে চড়ার থেকে পায়ে হাটাও ভালো।এক্ষুনি নষ্ট হয়ে যাক এটা।আমাকে খোঁটা দেয়া না?দেখবেন গরীবের অভিশাপ ফল….
পুরোটা শেষ করার আগেই গাড়িটা ঢুলতে ঢুলতে অফ হয়ে গেলো।সেঁজুতির কথা বন্ধ হয়ে গেলো সাথে সাথে।রুদ্র গাড়ি স্টার্ট দিচ্ছে লাভ হচ্ছেনা।সেঁজুতি মিনমিনিয়ে বলল,
‘ কী হলো এটার??আমিতো এমনি এমনি বলেছি,ওকী সিরিয়াসলি নিয়ে নিলো?সত্যি সত্যিই খারাপ হয়ে গেলোনাতো?

সেঁজুতি চোখ বড় করে রুদ্রর দিকে তাকালো ওর উত্তরের আশায়।রুদ্র চুপচাপ দরজা খুলে বের হলো।এতটা পথ এই প্রথম ড্রাইভ করছে।সাথে এত গরম।তাও জার্নি টা খারাপ লাগছিলোনা।বরং মনে হচ্ছিলো জীবনের সব থেকে সুন্দর জার্নি এটা।অথচ এখন গাড়িটাই খারাপ হয়ে গেলো? পথ তো আর বেশি নেইও।অলমোস্ট সিলেটে তারা।এতক্ষন সেঁজুতির বকবকে বিরক্ত না হলেও এখন মেজাজ প্রচন্ড তেঁতে আছে।ফোন করে রেহান কে ঝাঁড়লো কিছুক্ষন।কেন সে গাড়ি চেক করে দিলোনা? তাতেও রাগ মিটলোনা যখন,গাড়ির সাইডে সজোরে একটা লাথি মারলো।সেঁজুতিও বেরিয়েছে ততক্ষনে।রুদ্রকে গাড়িতে লাথি মারতে দেখে চুপসে গিয়ে বলল,
‘বেচারা গাড়িতে লাথি মেরে কি লাভ!
রুদ্র চোখ পাঁকাতেই সেঁজুতি নিঁচু কন্ঠে বলল,

— এ..এভাবে তাকাচ্ছেন কেনো,আমি কি করেছি?
অন্যদিকে মুখ ঘোরালো রুদ্র।সেঁজুতি চিন্তিত কন্ঠে শুধালো,
“গাড়িতো খারাপ হয়ে গেলো। এবার কি করবো আমরা?
রুদ্র হঠাৎই চেঁতে বলল,
— নাঁচতে ইচ্ছে করলে নাঁচুন,বাট ডোন্ট ডিস্টার্ভ মি।
সেঁজুতি অবাক হয়ে বলল
— আমি আবার আপনাকে কখন ডিস্টার্ভ করলাম?
‘আপনার এই বকবকানি গুলোই আমার বিরক্তির মূল কারন।
‘ওকে নিন চুপ করলাম।
ঠোটে আঙুল দিয়ে অন্যদিকে তাকালো সেঁজুতি। মুখটা হা হয়ে এলো একটু দূরে চোখ যেতেই।ঠোঁট গোল করে বলল,
‘ওয়াও!কি সুন্দর!

রুদ্র সেঁজুতির চোখ অনুসরন করে চাইলো। সাড়ি সাড়ি সবুজ চা বাগান, আর পাহাড় ছাড়া তার চোখে কিছুই পরলোনা।এই মেয়ে এত খুশি হলো কীসে?সেজুতির চেহারায় একরাশ উচ্ছ্বাস।দৃষ্টিতে মুগ্ধতা।আর ঠোঁটে এক চিলতে হাসি।
এতক্ষনের জমে থাকা বিরক্তিটা নির্নিমেষ কেটে গেল রুদ্রর।সঙ্কুচিত ভ্রু জোড়া সোজা হলো। ভ্রু নাঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‘সিলেটে প্রথম বার?
‘ হু
‘চলুন..
‘ কোথায়?
‘ এলেই বুঝবেন।
রুদ্র লম্বা পা ফেলে এগোলো।কথা না বাড়িয়ে পিছু নিলো সেঁজুতি।
___
দুপাশে চা বাগান।মাঝখানে সরু রাস্তা।অনেকটা ক্ষেতের আঈলের মতো আঁকাবাঁকা, উঁচু নিঁচু।সেই রাস্তা ধরে রুদ্রর পাশে পাশে হাটছে সেজুতি।উৎসুক চোখে এদিকে ওদিক তাকাচ্ছে।মন দিয়ে অবলোকন করছে সিলেটের অন্যতম প্রধান সৌন্দর্য।

রুদ্রর এসবে আগ্রহ কোথায়?সে মহাব্যাস্ত ফোনের নেটওয়ার্ক পেতে।অনবরত কারো নাম্বার ডায়াল করছে।কিন্তু এক দাগ নেটওয়ার্ক যদি উঁকি দিতো ফোনে।
সেঁজুতি যখন সবটা মনোযোগ দিয়ে উপভোগ করছে তখনি বাগানের পাশ ঘেষে একটা সাপ বের হলো।মূলত চা বাগানের ভেতর থেকেই বেরিয়েছে।সেঁজুতি দেখতেই আকাশে উঠে এলো চোখ।গলা ফাঁটিয়ে চিৎকার ছুড়লো,

“সাপ, সাপ, স্যার সাপ
গলার সব টুকু জোড় কাজে লাগিয়েছে সেঁজুতি। শুধু কী তাই? উত্তেজনায় পাশে হাটতে থাকা রুদ্রর এক বাহু শক্ত করে চেপেও ধরলো।রুদ্রর কানে তালা ঝুলে গিয়েছে সেঁজুতির চিৎকারে।উদগ্রীব হয়ে বলল
‘ কোথায় সাপ?কোথায়?
সেঁজুতি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল
‘নেই।
চলে গিয়েছে,ওদিকে।
রুদ্র চিন্তিত কন্ঠে শুধালো, ‘ আপনি ঠিক আছেন?
সেঁজুতি হাসলো। নাকী হাসার চেষ্টা করলো? নিজেকে ভীতু প্রমান করার হাত থেকে রক্ষা করতে বলল,
— আরে সাপ টা তো আমার কাছেই আসেনি।ওদিকে থেকে ওদিকে গিয়েছে( আঙুল দিয়ে দেখালো)হয়তো ভয় পেয়েছে।

রুদ্র স্পষ্ট কন্ঠে বলল,
‘ আসল ভয়টা কে পেয়েছে, সেটা চিৎকার শুনেই বুঝতে পেরেছি।
সেঁজুতি মুখটা ছোট করে ফেলল।
রুদ্রর হঠাৎ খেয়াল পরলো নিজের হাতের দিকে।যেটা সেঁজুতি আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে এখনও। রুদ্র একবার সেঁজুতির দিকে তাকালো,একবার ওর ধরে রাখা হাতের দিকে। সেঁজুতির ভ্রুক্ষেপ নেই ওদিকে।ভয়ে ভয়ে বাগানের চারপাশে তাকাচ্ছে। এক কথায় সাপ খুজছে সে।রুদ্র আস্তে করে সেঁজুতির হাতটা সরিয়ে দিলো।হঠাৎ ঘটায় চমকে তাকালো সেঁজুতি। পরমুহূর্তে পুরো বিষয়টা মাথায় ঢুকলো তার।এতক্ষন ওনার হাত জড়িয়ে রেখেছিলাম আমি?ছি! কি ভাবলেন উনি? সেঁজুতি লজ্জ্বায় মাথা যে নিচু করলো, তুললোইনা আর।
সেজুতি লজ্জ্বাটা বুঝলো রুদ্র। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে গলা খাঁকারি দিয়ে কেশে নিলো।সেঁজুতির দিকে তাকাচ্ছেনা।সেঁজুতিও তাকিয়ে নেই।রুদ্র সহজ কন্ঠে বলল,
‘আমি একটা কল করে আসছি,এখানে নেটওয়ার্ক এমারজেন্সি হয়ে আছে।আপনি এখানেই দাড়ান।আর হ্যা বেশি নঁড়াচড়া করবেন না।সাপ কিন্তু একটা নেই এখানে, থাকলে অনেক গুলোই আছে।
শেষ কথাটা সেঁজুতি কে ভয় দিতে বলল।সেঁজুতি ভয় পেলোও।চোখ গোল করে ভয়ে ভয়ে বলল,

‘ সস্যতি?
রুদ্র মুখটা গম্ভীর রেখে হাটা ধরলো।উলটোপথে চলতেই মিটিমিটি হাসলো।
___
” স্যার আপনি লোকেশন পাঠান।আমি এক্ষুনি আপনাদের পিক করতে গাড়ি পাঠাচ্ছি।
‘হু।আপনার গাড়ি যেন বিশ মিনিটের মধ্যে আসে।
‘ জ্বী স্যার।একদম লেট হবেনা।
‘ রাখছি।
লাইন কেটে লাইভ লোকেশন পাঠিয়ে রুদ্র আগের জায়গায় এসে দাঁড়ালো।
সেঁজুতি কোথায়? এদিক ওদিক তাকালো রুদ্র।আশেপাশে দেখা যাচ্ছেনাতো।গেলেন কোথায়?
একটু সামনে এগিয়ে নাম ধরে ডাকলো রুদ্র।সাঁড়া এলোনা।রুদ্র অনেকবার ডাকলো।গলার সব টুকু জোর দিয়ে।সাড়া নেই।এবার টেনশন হচ্ছে রুদ্রর।অচেনা জায়গা কোথায় গেলো এই মেয়ে?
রীতিমতো ঘাম ছুটলো।বুকের মধ্যে ধুকপুক শব্দ হচ্ছে।ভয়ে ঢিপঢিপ করছে।কিছু হারিয়ে ফেলল সে।অনেক দামী কিছু।এমন ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে পরছে গোটা প্রসস্থ দেহ।

‘সেজুতি! সেঁজুতি? কোথায় আপনি?? এট লিস্ট সাড়া তো দিন….
জোরে ডাকাডাকি করেও লাভ হচ্ছেনা।প্রকৃতি নিশ্চুপ হয়ে আছে।মাঝে মাঝে কটা বুনো পাখির ডাক ছাড়া কোনো শব্দ নেই। রুদ্রর গলা শুকিয়ে এলো।ছুটতে ছুটতে অনেকটা পথ এসেছে।রুদ্র হাপিয়ে গেলো।থেমে গিয়ে মাথায় হাত দিয়ে চারপাশে তাকালো,
‘কোথায় গেলেন আপনি?কেনো আপনাকে একা রেখে গেলাম!এখন যদি আপনার কোনও ক্ষতি হয় আমি যে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবোনা।
আচ্ছা আপনি ইচ্ছে করে লুকিয়ে নেইতো? লুকোচুরি খেলছেন আমার সাথে?খুব খারাপ হয়ে যাবে তাহলে।খুব খারাপ,,
নিজের সাথে বিড়বিড় করলো রুদ্র।মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। এক হাত কোমড়ে রেখে অন্য হাত দিয়ে মাথার চুল খাঁমচাতে শুরু করলো চিন্তায়।
কন্ঠ খাঁদে নামিয়ে আঁওড়ালো,
‘প্লিজ আসুন,,,প্লিজ,প্লি….
বলতে বলতে হাতের ডান দিকে তাকালো রুদ্র। একটু দূরে গাছের আঁড়াল থেকে হলুদ রংয়ের কিছু উড়তে দেখে চোখ আটকালো।হন্তদন্ত হয়ে সেদিকে ছূট লাগালো রুদ্র।যা ভেবেছিলো ঠিক তাই।
নীল রঙয়ের একটা প্রজাপতি বসেছে গাছের ডালে।সেঁজুতি পা টিপে টিপে এগোচ্ছে ধরার জন্যে।
রাগে চোখ লাল হয়ে এলো রুদ্রর।
‘এই মেয়েটা তার মাথা খারাপ করে দিয়ে এখানে প্রজাপতি ধরছে?এতটা বাচ্চামো একটা ম্যাচিউরড মেয়ের থেকে রুদ্র আশা করেনি।এত দিনকার সেঁজুতির সঙ্গে যেন এর আকাশ পাতাল তফাৎ। কত বড় সাহস এই মেয়ের!কোনও ধারনা আছে ঠিক কতোটা ইরেসপন্সেবলের মতো কাজ করেছে?
দাঁতে দাঁত খিচিয়ে এগিয়ে গিয়েই সেজুতির এক হাত ধরে নিজের দিকে ফেরালো রুদ্র। সেঁজুতি কেঁপে উঠলো হঠাৎ কেউ এভাবে ধরায়।এবার তাকে পৃথিবীর সব থেকে বড় চমক উপহার দিয়ে রুদ্র ঠাস করে একটা চঁড় বসালো গালে।সেঁজুতির চোখ ঘোলা হয়ে এলো।মাথা চক্কর দিলো।গাল ঝিমঝিম করে উঠলো।কান গরম হয়ে এলো। পা দুটো টলছে।এক্ষুনি পরে যাবে।মরে যাবে হয়ত,
তারপর নিউজ বের হবে ‘ চঁড় খেয়ে এক অবলা তরুনীর মৃত্যু!

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে