#প্রথম_প্রেম
পর্ব-০৪(বোনাস)
লেখিকা-#খেয়া
তখনই বাকি সবাই চলে আসায় কথার প্রসঙ্গ পাল্টে যায়।
সবার সাথে বাবা পরিচয় করিয়ে দিলো।নিবির ভাইয়ের মামামামি বেশ ভালো মানুষ।
কিছুক্ষণ গল্প-গুজব করে সবাই খাওয়া দাওয়ার পর্ব সেরে নিলো।
একটা জিনিস বেশ খেয়াল করছি যে এই প্রহর মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে মুচকি হাসছে।ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত লাগল।এই লোকটাকে আমার খুব সন্দেহ হচ্ছে।
সবাই মিলে আবার গল্পে বসেছে।এত গল্প কই থেকে আসে কে জানে। আমার তো প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে।তবুও ভদ্রতার খাতিরে মুখে একফালি হাসি ঝুলিয়ে বসে আছি।তখন নিবির ভাইয়া বললেন
—- সামনে তো রেজাল্ট দিবে, আফরা।এডমিশন কোথায় দিবি কিছু ভেবেছিস।
“নিবির ভাইয়ার কথায় যেন আকাশ থেকে পড়লাম।জীবনে প্রথম নিবির ভাইয়া আমার সাথে এত ভালো করে কথা বলেননি।আমি কিছু বলব তার আগেই ভাইয়া বলল”
—- ওর তো ভালো একটা ভার্সিটিতে এডমিশন চায়।
—- আমিও বলেছি ওকে ঢাকা ভার্সিটিতে ই পড়তে হবে।(আম্মু)
—- কিন্তু ফুফু ঢাকা ভার্সিটিতে শুধু পড়ব বললেই তো হয়না,সেজন্য পড়াশোনাও করতে হয়।আর এজন্য আফরার আটো আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত ছিল।
আচ্ছা আফরা তুই আমার সাথে ওপরে চল।তোকে কিছু বই সাজেস্ট করি।এডমিশনে কাজে লাগবে।
” নিবির ভাইয়ার কথায় আমি একটা শুকনো ঢোক গিললাম।যদি রুমে গিয়ে আমায় গলা টিপে মেরে ফেলে।আমি করুন মুখ করে ভাইয়ার দিকে তাকালাম যার অর্থ আমি যাবোনা।
ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে যেতে বলল।”
————–
রুমে গিয়ে দেখি নিবির ভাইয়া বিছানায় বসে ফোন টিপছে।আমি চুপচাপ গিয়ে উনার সামনে দাড়ালাম।
উনি ফোনের দিকেই তাকিয়ে বলল
—- প্রহরের সাথে তোর কী চলে, আফরা?
—- উনার সাথে আবার আমার কী চলবে?
—- তাহলে ও বারবার তোর দিকে তাকিয়ে হাসছিল কেন?
—- আমি কী করে জানব সেটা।বায় দ্যা ওয়ে,আপনি কী জেলাস ভাইইইয়া,,,
” আমার এমন কথা শুনে নিবির ভাইয়া তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল।”
—- একটা থাপ্পর মারব ফাজিল মেয়ে।আমি কেন জেলাস হতে যাবো।তোর এখন পড়াশোনার বয়স তার তা করে তুই এসব আজাইরা চিন্তা করিস।
আবার যদি এসব কান্ড আমার আমার চোখে পড়ে তাহলে ফুফুকে বলব একদম ধরে বিয়ে দিয়ে দিতে।
বলেই উনি চলে গেলেন।যাহ বাবা,আমি করলাম টা কী।যাইহোক উনি কি আমায় নিয়ে জেলাস নাকি বিরক্ত!
সন্ধ্যেবেলা সবাই চলে গেলে রুমে এসে ফোন নিয়ে বসলাম।দেখি নিবির ভাইয়া কতগুলো বইয়ের নাম মেসেজ করছে।আমিও ভাইয়াকে ফোন করে বলে দিলাম আসার সময় বইগুলো নিয়ে আসতে।
হঠাত নিবির ভাইয়ার এত পরিবর্তন যেন হজম হচ্ছেনা।
একটুপর নিবির ভাইয়ার আরেকটা মেসেজ
” বইগুলো শুধু কিনে ঘরে সাজিয়ে রাখিস না।ঢাবিতে চান্স পেতে হলে পড়তেও হবে।”
আমিও খুব ভেবেচিন্তে একটা রিপ্লে দিলাম
“আমি ঢাবিতে চান্স পেলে আপনার কষ্ট হবেনা।না মানে আপনার তো আবার আমার থেকে এলার্জি আছে।”
মেসেজটা দিয়ে আমি ফোনটা রেখে এশার নামাজটা পড়ে এলাম।
এসে ফোন হাতে নিয়ে দেখি নিবির ভাইয়া আমাকে ব্লক মেরে দিয়েছে।হয়ত আমার কথাটা তার হজম হয়নি।এটা অবশ্য আমার জন্য নতুন কিছুনা। বছরে বেশিরভাগ সময় আমি ভাইয়ার ব্লকলিস্টেই থাকি।
তার মনে জায়গা করে নিতে না পারলেও তার ব্লকলিস্টে আমার জায়গাটা খুব সহজেই হয়।
একটু পরে দেখি ভাইয়া একগাদা বই নিয়ে রুমে ঢুকছে।এক-একটা বইয়ের সাইজ দেখেই আমার পড়ার ইচ্ছে মাটিচাপা সরি বইচাপা পড়ে গেছে।
—- এভাবে কী দেখছিস।
—- আচ্ছা ভাইয়া,আমি তো একটা ভার্সিটিতে এডমিশন নিব তার জন্য কী দেশের অর্ধেক বই পড়া দরকার।
—- এমনভাবে বলছিস যেন আগে কখনো এত বই পড়িসনি।
—- আরে,আমি তো এমনি বললাম তুই সিরিরাস হচ্ছিস কেন।
—- আচ্ছা বনু তুই নিচে গিয়ে আম্মুকে খাবার দিতে বল। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।প্রচুর ক্ষিদে পেয়েছে।
—- আচ্ছা যাচ্ছি, তুই আয়।
————–
সবাই একসাথে খেতে বসেছি।তখন আব্বু ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল
—- তা আবির, তোমার তো যথেষ্ট বয়স হয়েছে।নিজের পায়েও দাড়িয়েছো।তো বিয়ে সাদী নিয়ে কিছু ভেবেছো।
—- না আব্বু। আমি তো সবে চাকরিটা জয়েন করেছি।আগে নিজের একটা ভালো পজিসন বানাতে চায়, তারপর বিয়ে নিয়ে ভাববো।
—- গুড।আচ্ছা তোমাদের মনে হয়না আফরা ইদানিং আমাদের সাথে একদম কথা বলেনা। ওর মনে হয় এবাড়িতে থাকতে ভালোলাগেনা।ওকে বরং বিয়ে দিয়ে শ্বশুড়বাড়ি পাঠিয়েদি।
—- মোটেও না।তুমি আর ভাইয়া তো সারাদিন বাইরেই থাকো শুধু এই রাতেই তোমাদের দেখা পাওয়া যায়।আর আম্মুর সাথে কথা বলতে গেলেই তো কাজের বাহানা করে চলে যায়।
” আমার কথা শেষ হতেই দেখি আম্মু আমার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে।যেন এখনই আমার বারবিকিউ বানিয়ে খেয়ে ফেলবে।
—- এটা কিন্তু একদম ঠিকনা আবিরের মা।
—- হ্যা সেই তো।আমার কাজ তো শুধু বাহানা লাগে তোমার মেয়ের তাইনা।
————
গল্পে পল্পে খাওয়া দাওয়া শেষ করে রুমে এলাম।মাত্র দশটা বাজে এখন আমার ঘুম ধরবেনা।
কী আর করার আবার ফোন নিয়ে বসলাম।বেলকনির দরজাটা খোলা রেখেছি।হালকা হালকা ঠান্ডা বাতাস আসছে।আরশিদের বাড়ির শিউলি গাছের ফুলের গন্ধ রুম পর্যম্ত এসে গেছে।সবমিলিয়ে বেশ সুন্দর একটা পরিবেশ।
খানিকক্ষন ফেসবুক স্ক্রলিং করার পর দেখি নিবির ভাইয়া মেসেজ পাঠিয়েছে।উনি এবার এত দ্রুত আমায় আনব্লক করলেন।
মেসেজটা ওপেন করলাম
“এতরাতে অনলাইনে কী,আফরা।”
উনি আমাকে এরকম একটা মেসেজ দিয়েছেন।মাত্র সাড়ে দশটা বাজে।তবুও ঠিক।আগে তো পড়াশোনার ফাকে বেশি সময় পেতাম না অনলাইনে থাকার।তারপর অবশ্য সারাদিন রাত নিবির ভাইয়ার চিন্তায় কেটে যেতো।ইদানিং অবশ্য নিবির ভাইয়াকে নিয়ে ওতো চিন্তা আমি করিনা।তার চিন্তা যে আমার মাথায় আসেনা তা নয়।তবুও চেস্টা করি এরিয়ে চলার।
আমি নিবির ভাইয়ার মেসেজের রিপ্লাই না দিয়েই ঘুমিয়ে পড়লাম।
—————
আজ সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেছি।মানে আম্মু ডেকে তুলেছে।আজ নাকি আমরা নানার বাড়ি যাবো।হঠাত করেই নাকি নানীর শরীরটা খারাপ হয়ে পড়েছে।
সকাল সকাল ফ্রেশ হয়ে আমি একটা লং টপস আর জিন্স প্যান্ট পড়ে নিলাম।
—- এগুলা কর পড়েছিস তুই।জানিস না ওখানে কেউ এগুলো পছন্দ করেনা।
—- উফ,,,আম্মু এখন আমি আর চেন্জ করতে পারবোনা। যাও তো।
” আমার নানা বাড়ি গ্রামে।সেখানে শহুরে ছোয়া লাগলেও তা খুব কাম।আমরা,মামারা সবাই শহরে থাকা সত্তেও নানা – নানিকে কেউ শহরে আনতে পারেনি।তাদের কাছে তাদের গ্রামই ভালো।অবশ্য ওখানে আমার এক খালামনিও থাকে।
নানার বাড়ি আমরা খুব কমই যায়।আমার আঠারো বছরের জীবনে আমি মাত্র দুবারই ওখানে গেছি।”
নিবির ভাইয়ারাও চলে এসছে।এখান থেকে সবাই একসাথে রওনা দিবো।আমরা আমাদের গাড়ি আর নিবির ভাইয়ারা তাদের গাড়িতে করে যাবেন।প্রায় সাত-আট ঘন্টা লেগে যাবে ওখানে পৌছাতে।আমার অবশ্য জার্নি করতে সমস্যা হয়না।কিন্তু আম্মুকে নিয়ে যত টেনশন।
প্রায় সাতঘন্টা জার্নি করে নানাবাড়ি এসে পৌছোলাম।আমরা খালামনিদের বাসায় উঠেছি।নানা- নানীও এখানেই আছে।আম্মু আর মামাতো কান্নাকাটিতে ব্যস্ত।জানি তাদের মা তবুও অসুস্থ মানুষের সামনে এভাবে কান্না করা উচিত না।
খালামণি আমাকে একটা রুম দেখিয়ে দিলো।আমিও ফ্রেশ হতে গেলাম।খালামনির দুই ছেলে।এবংশে অবশ্য আমি একাই মেয়ে।
ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় বসলাম।এখন আমার একটা লম্বা ঘুম দরকার। তাই ঘুমিয়ে পড়লাম।
জানও এসময় কেউ ডাকবেনা আমায়।আমার ঘুম পুরো হওয়ার আগে ভেঙে গেলে খুব মাথা ব্যাথা করে আমার।এটা সবাই জানে
একেবারে সন্ধ্যার আগে ঘুম ভেঙে গেল।প্রচন্ড ক্ষিদে পেয়েছে যেন এখন না খেতে পেলে মরেই যাবো।
ফ্রেশ হয়ে নিচে এলাম কিন্তু কাউকে খুজে পেলাম না।তখন দেখি আবার ভাইয়া বাসায় ঢুকছে।আরাব ভাইয়া হলো মামনির বড়ছেলে।আমার থেকে বছর সাতেকের বড়।
—- কাউকে খুজছিস, আফরা।
—- হুম।সবাই কোথায় গেছে,ভাইয়া।
—- সবাই তো নানার ঘরে।তোর কী কিছু লাগবে।
—- আমার না খুব ক্ষিদে পেয়েছে।
—- আচ্ছা তুই দাড়া আমি আম্মুকে পাঠাচ্ছি।
—- আচ্ছা।
—————
একা একা খালামনিদের ছাদে বসে আছি।খুব বোর হচ্ছি। সবাই ব্যস্ত।আরাব ভাইয়া থাকলেও হতো।কিন্তু নিবির ভাইয়া নাকি তাকে নিয়ে কোথায় বেরিয়েছেন।রাদিফ ও নেই।রাদিফ হলো খালামনির ছোটো ছেলে।আমার সমবয়সী।আমাদের মাঝে সম্পর্কটা বেশ ভালো।একদম বন্ধুর মতো।ও নাকি ওর বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গেছে।কী আর করার একা একা মোবাইল নিয়ে বসে আছি।ঠিকমতো নেটও পাচ্ছেনা।তাই ফোনটাকে এদিক সেদিক করছিলাম।
হঠাতই কেউ ” ভাউ” বলে চিৎকার দিলো।সাথে সাথে আমার ফোনটা হাত থেকে পড়ে গেল।
পিছনে তাকিয়ে দেখি,,,,,
(চলবে)