প্রথম প্রেম পর্ব-০২

0
1585

#প্রথম_প্রেম
পর্ব-০২
লেখিকা-#খেয়া

এসব ভাবছিলাম তখনই কেউ মানে নিবির ভাইয়া আমার হাত টেনে আমার ঘরে নিয়ে যেতে লাগল।

যাহ বাবা উনি আবার কখন নিচে এলো।

—- কী বলবেন ভাইয়া।

—-তোর জ্বর এলো কী করে?

—-মানে।

—- কাল তুই আমাকে আর কথাকে একসাথে দেখেছিলি তাই বাড়ি এসে কেদে কেদে জ্বর বাধিয়েছিস তাইনা।

—- আপনি কি করে জানলেন ভাইয়া?

—- সেটা তোর নাজানলেও চলবে।কেন কটিস তুই এসব

—- আমি আপনাকে ভালোবাসি ভাইয়া।আপনার সাথে অন্যকাউকে সহ্য করতে পারিনা আমি।

—- থাপরে তোর গাল লাল করে দিবো আমি।তোকে ভালোবাসি না আমি বুঝেছিস।

—- আপনি কথা আপুকে ভালোবাসেন, তাইনা।

—- হ্যা,আমি ভালোবাসি ওকে।হয়েছে শান্তি।

“কথাগুলো বলেই নিবির ভাইয়া চলে গেলো।আমিও দৌড়ে ছাদে চলে গেলাম ”

আজ আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।ভালোবাসা কেন এত কষ্ট দেয়।
ছাদ থেকেই দেখলাম নিবির ভাইয়ারা চলে গেলো।একটু পরেই বেশ জোড়ে বৃষ্টি শুরু হলো।আজ আমার চোখের জলের মতো বৃষ্টির পানিও বাধ মানছেনা।

একেই জ্বর তারওপর বৃষ্টিতে ভেজায় শরীরটা বেশ দুর্বল লাগছে।দাড়িয়ে থাকারও শক্তি পাচ্ছিনা।হঠাতই মাথা ঘুরে ছাদেই পড়ে গেলাম।

—————

জ্ঞান ফিরতেই ফিনাইলের কড়া গন্ধ নাকে এলো।বুঝতে বাকি রইল না যে আমি হাসপাতালে।চোখ খুলতেই মায়ের মলিন মুখটা চোখে পড়ল।পাশে ভাইয়া আর মামি বসে ছিলো।

আম্মু আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার মাথায় হাত রেখে বলল

—-এরকম পাগলামি কেউ করে।তোর মাথায় কী একটুও বুদ্ধি নেই।মরার শখ হয়েছে।

—- আম্মু চুপ করো তো।

ভাইয়া আম্মুকে চুপ করতে বলে আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল

—-এরকম কেউ করে।জানিস আমরা কত টেনশনে ছিলাম।নিজের সাথে সাথে আমাদের ও কষ্ট দিলি তো।আমরা তো ভেবেছিলাম আজ রাতে তোর জ্ঞান ফিরবেই না।

“ভাইয়ার কথা শুনে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম রাত দেড়টা বাজে।আমি যখন ছাদে ছিলাম তখন ১০ টা বেজে ছিল।আমি এতক্ষণ অঙ্গান ছিলাম।আমি কি নিবির ভাইয়ার জন্য নিজেকে একটু বেশি কষ্ট দিচ্ছি। ”

আম্মু খাবার খাইয়ে ওষধ খায়িয়ে চলে গেল।বাকি সবাইকেও ভাইয়া বাসায় পাঠিয়ে দিলো।

একটুপর ভাইয়া আমার কাছে এসে আমার হাত ধরে বলল

—- কী হয়েছে বনু।তুই কোন কোন ব্যাপারে এত কষ্ট পেয়েছিস, আমায় বল।

“আমি আর না থাকতে পেরে ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে কেদে দিলাম।”

—- আমি নিবির ভাইয়াকে অনেক ভালোবাসি। তাকে ছাড়া আমি বাচব না।

—- তুই সত্যি নিবিরকে ভালোবাসিস।আমায় আগে কেন বলিসনি।

—- আমি চাইনি এটা নিয়ে তোদের মধ্যে কোনো ঝামেলা হোক।

—- ঝামেলা কেন হবে?

—- নিবির ভাইয়া যে অন্য কাউকে ভালোবাসে।

—- আচ্ছা তুই এগুলা আমার ওপর ছেড়েদে।আমি দেখে নেবো।তুই এখন ঘুমিয়ে পড়।

————-

দুইদিনপর হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরলাম।এই দুইদিন নিবির ভাইয়া একবারও আমার খবর নেয়নি।আমি কি এতই ফেলনা।

আমি এবার এইচএসসি দিয়েছি।এখনো রেজাল্ট দেয়নি।তাই পড়াশোনার চাপও নেই।সারাদিন শুয়ে-বসেই কাটে।আম্মু রান্না করে,আব্বু অফিসে আর ভাইয়া হাসপাতালো আর আমি একা বসে বসে বোর হচ্ছি।

টাইম পাস করার জন্য মোবাইল নিয়ে ফেসবুকে ঢুকলাম।এই দুদিন ফোনের কোনো খবরই ছিল না।ফেসবুকে ঢুকেই চোখে পড়ল নিবির ভাইয়ার হাস্যজ্জল ছবি।তাদের ফ্রেন্ডস গ্রপের সবাই মিলে ট্যুরে গেছে।সবার গ্রুপ ছবি হলেও ভাইয়া তার আর কথা আপুর দুটো ক্লোজ ছবিও পোস্ট করেছে।ছবি গুলো দেখতেই চোখ দিয়ে দুফোটা জল গড়িয়ে পড়ল।

মোবাইলটা রেখে বাইরে চলে গেলাম।

বিকেলে ভাইয়া এসে বলল আজ নাকি আমায় নিয়ে শপিং এ যাবে।কথাটা শুনেই মনটা ভালো হয়ে গেলো।

————-

সন্ধ্যায় ভাইয়ের সাথে শপিং এ গেলাম।ভাইয়া আমার পছন্দ মতো সবকিনে দিল।
রাতে বাইরে খাওয়ার কথা থাকলেও ভাইয়ার একটা ইমার্জেন্সি আসায় ভাইয়া আমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে হাসপাতলে চলে গেলো।

বাসায় এসে দেখি মামি আর নিবির ভাইয়া এসেছে।
আমাকে দেখে মামি বলল

—- এই তিনদিনে আমার মেয়েটা কতটা শুকিয়ে গেছে।এই কদিন হাসপাতালে নিশ্চয় ভালো খাওয়া হয়নি।তোর পছন্দের সব রান্না করে নিয়ে এসেছি।

মামির কথা শুনে নিবির ভাইয়া মামিকে প্রশ্ন করল

—- ওযে হাসপাতালে ছিল আমাকে তো বলোনি।

—- তুমি বিজি মানুষ, তোমাকে তো সেদিন কত ফোন করলাম তুই বিজি বলে কেটে দিলি।তারপর তো ট্যুরে চলে গেলি।

ভাইয়া কিছু বলবে তার আগেই আম্মু এসে ভাইয়াকে খেতে নিয়ে গেলো।আর আমাকে বলল

—- ফ্রেশ হয়ে আয় আফরা খাবার দিচ্ছি।

আমি একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে চলে এলাম।নিবির ভাইয়া তাহলে এতটাই বিজি ছিল কথা আপুর সাথে।

ফ্রেশ হয়ে এসে মোবাইলটা হাতে নিয়েই দেখলাম অনেকগুলো মেসেজ এসেছে।একটা মেসেজ ওপন করতেই আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল।

মেসেজে লেখা ছিল-“তুমি কী জনো শুভ্রপরী তোমার শুভ্রতায় আমি প্রতিনিয়ত ডুবে মরছি”

আমাকে এমন মেসেজ কে পাঠাবে।তখনই আম্মুর ডাকাডাকিতে নিচে গেলাম।বাকি মেসেজগুলো আর দেখা হলোনা।

টেবিলে নিবির ভাইয়ের থেকে যথেষ্ট দুরত্ব বজায় রেখে বসেছি।

—- এডমিশনের ব্যাপারে কী ভাবলি,আফরা।

নিবির ভাইয়ার কথায় তার দিকে তাকিয়ে বললাম

—- এখনো কিছু ভাবিনি ভাইয়া।

—- মাথা থেকে উল্টোপাল্টা সব চিন্তা ঝেরে ফেলে পড়ায় মনোযোগ দে।

ভাইয়ার কথার কোনো উওর দিলাম না।ভাইয়া যে আমাকে তার কথা ভুলে যেতে বলছে সেটা আমি ভালোই বুঝেছি।
চুপচাপ খাওয়া শেষ করে রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম।

মাঝরাতে হঠাতই ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল।এতরাতে আমায় কে ফোন করল।

ফোনটা ধরতেই কেউ একজন বলল

—- কেমন আছো শুভ্রপরী।

—- কে আপনি আর আমার নাম্বার কই পাইছেন আর এত রাত ফোন করেছেন কেন?

—- আমি তোমার খুব পরিচিত একজন।

—- মানে?

—- গেস কর আমি কে?

—- প্লিজ বলবেন কে আপনি?

—- আমি হলাম তোমার,,,,,,,

(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে